হৃদয়_দিয়ে_ভালোবাসিব,পর্বঃ- ৪

0
1142

#হৃদয়_দিয়ে_ভালোবাসিব,পর্বঃ- ৪
#লেখকঃ- Tamim

–Thank You.

তামিম পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখল মায়া দাঁড়িয়ে আছে তার সাথে জান্নাতও।

তামিমঃ Thank You কেন.?

মায়াঃ যেই ছেলেগুলোকে আমাকে টিজ করেছিল তাদেরকে শায়েস্তা করার জন্য।

তামিমঃ আমি কখন তাদেরকে শায়েস্তা করলাম.?

মায়াঃ সেটা তো আমি দেখি নি তবে এটা জানি আপনি ওদেরকে শায়েস্তা করেছেন বিধায় ওরা সকালের ঘটনার জন্য আমার কাছে এসে মাফ চেয়েছে।

তামিমঃ আপনাকে কে বলেছে যে আমি ওদেরকে শায়েস্তা করেছি.?

মায়াঃ জান্নাত নিজেই তো বললো।

তামিমঃ কিরে তুই নিজ চোখে দেখেছিস আমি ওদেরকে

জান্নাতঃ দেখার কি আছে, আমি তো জানি এইসব কাজ একজনই করতে পারে আর সেটা হলে তুমি।

তামিমঃ যাকে চিনি না, জানি না তার জন্য কেন আমি ওদেরকে শায়েস্তা করবো.? হয়তো উনার বয়ফ্রেন্ড এই কাজটা করেছে।

মায়াঃ আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই।

তামিমঃ তাহলে আপনার কোনো পাগলা আশিক এই কাজটা করেছে মেবি।

জান্নাতঃ হে এটাও হতে পারে, মায়ার তো আবার আশিকের অভাব নেই। কলেজে থাকাকালীন ছেলেদের থেকে কতো প্রপোজাল যে সে পেয়েছে.! তাদের মধ্যে থেকে কেউ একজন মেবি এই কাজটা করেছে।

তামিমঃ হুম ওদের মধ্যে থেকেই কেউ একজন হবে। হয়েছে এখন বাসায় যা (চেহারায় কিছুটা রাগ এনে)।

জান্নাতঃ হু যাচ্ছি যাচ্ছি, চল মায়া।

তারপর জান্নাত আর মায়া সেখান থেকে চলে গেল। কিছু পথ যাওয়ার পর মায়া বললো…

মায়াঃ কিরে তুই না বললি এই কাজটা উনি করেছেন। তাহলে উনার সামনে বললি কেন যে আমার কোনো আশিক হয়তো এই কাজটা করেছে.?

জান্নাতঃ আরে এমনি বলেছি, এই কাজটা তামিম ভাইয়াই করেছেন কিন্তু উনি এটা স্বীকার করবেন না আমি জানি। তাই তখন উনার সামনে এই কথাটা বললাম।

মায়াঃ ওহ।

জান্নাতের ধারণাটাই ঠিক, তামিম ই এই কাজটা করেছে। ভার্সিটিতে ছেলেরা যদি অকারণে কোনো মেয়েকে টিজ করে তাহলে তামিম তাদেরকে উচিত শিক্ষা দেয়। আজকে যে ছেলেগুলো মায়াকে টিজ করেছিল তারা মায়ার এক ক্লাস সিনিয়র। তামিমকে তাঁরা খুব ভালো করেই চিনে সাথে অনেক মানেও তাই তামিমের বলা মাত্রই ওরা মায়ার কাছে এসে পা ধরে মাফ চেয়েছে। তবে তামিম এইসব কাজ করে কখনো প্রকাশ করতে চায়না যে সে-ই এইসব করেছে।

রাতেরবেলা…

রুমে বসে বসে তামিম ফেসবুকিং করছিল এমন সময় তার ফোনে একটা মেসেজ আসে। মেসেজটা ওপেন করতেই তামিম বেশ অবাক হলো। সেদিনের অচেনা নাম্বার থেকে আজকেও মেসেজ এসেছে। মেসেজটা পড়ে তামিম আরও অবাক হয় কারণ আজকের মেসেজের লিখাটা হলো ‘আপনাকে খুব মিস করছি’। গতকালের মেসেজটা সে ফান হিসেবে নিলেও আজকের মেসেজটা নিতে পারল না। একটা অচেনা নাম্বার থেকে পর পর ২ দিন মেসেজ আসাটা স্বাভাবিক ব্যাপার না আর আজকের মেসেজটা ফান হিসেবেও নেওয়ার মতো না। কে এই মেসেজটা দিয়েছে এটা জানার জন্য তামিম ওই অচেনা নাম্বারে ফোন দেয়। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো ওই নাম্বারটায় কল যাচ্ছে না অথচ একটু আগেই কেউ এই নাম্বার থেকে মেসেজটা দিয়েছে। তার মানে ওই ব্যক্তি মেসেজটা দিয়েই তার নাম্বারটা ব্লক করে রেখেছে যাতে সে এই নাম্বারে কল দিতে না পারে।

তামিম কিছুতেই বুঝতে পারছে না তাকে এই মেসেজটা কে দিতে পারে। তামিম এক গভীর ভাবনায় পরে গেল এই মেসেজ দেওয়ার বিষয়টা নিয়ে। কিছুক্ষণ ভাবার পর তামিমের মনে হলো এই মেসেজটা ওই মায়া মেয়েটা দেয়নি তো.? কিন্তু ও আমার নাম্বার কই পাবে.? হতেও পারে জান্নাতের থেকে নিয়েছে। কিন্তু আমি কীভাবে শিওর হব যে মেসেজটা মায়া দিয়েছে.? সে যদি দিয়েই থাকে তাহলে নিশ্চয়ই জান্নাতের থেকে আমার নাম্বারটা নিয়েছে। দেখি তো জান্নাতকে জিজ্ঞেস করে ও কিছু বলে কি না। তামিম আবার ফেসবুকে ঢুকে জান্নাতকে একটা মেসেজ দিল যে, সে কাউকে তার নাম্বার দিয়েছে কি না।
জান্নাত তখন ফেসবুকেই ছিল তাই সাথে সাথে রিপ্লাই দিয়ে বললো, না দেইনি। তামিম আর কিছু বললো না। জান্নাত আবার মেসেজ দিয়ে বললো, কেন কি হয়েছে হঠাৎ এই প্রশ্ন.?
কিছু হয়নি এমনি জিজ্ঞেস, করলাম বলেই তামিম অনলাইন থেকে বেরিয়ে আসলো। অতঃপর এই বিষয়ে ভাবা বাদ দিয়ে ঘুমিয়ে পরল।

এদিকে সেই অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ দেওয়া মানুষটা নিজেই নিজেকে বলতে লাগলো, উফ কেন যে তুই উনাকে আজ মেসেজ দিলি, উনি হয়তো প্রথমদিনের মেসেজটা ইগনোর করেছিলেন তাই সেদিন কোনো মেসেজ বা কল দেননি, বাট আজকে উনি ডাইরেক্ট কল দিয়ে বসলেন.! এই নাম্বারটা কার আর আমিই বা উনার নাম্বার কীভাবে পেলাম হয়তো এটা জানার জন্য উনি কল দিয়েছিলেন কিন্তু আমি তো উনার সাথে কথা বলতে পারবো না আমার লজ্জা করে। আমি জানতাম উনি আজ মেসেজটা পড়লে কল দিবেন ই দিবেন তাইতো মেসেজটা দিয়েই উনার নাম্বারটা ব্লক করে ফেলি। ইশ কবে উনাকে আমার মনের কথাটা বলবো.! আমার মনের কথাগুলো শুনে উনি আমায় ফিরিয়ে দিবেন না তো.? দূর এইসব নেগেটিভ চিন্তাভাবনা না করাই ভালো। যেদিন উনাকে সামনা-সামনি দেখবো সেদিনই উনাকে নিজের মনের কথাগুলো বলে দিব। তারপর যা হবার হবে। আপাতত এখন উনার এই ছবিটাকে নিয়েই ভবিষ্যতের চিন্তা করি, বলেই মেয়েটা তামিমের ছবিতে একটা চুমু খেয়ে ছবিটা তার বুকের মধ্যে চেপে ধরলো আর ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিল।

সকালবেলা…

মায়া ভার্সিটিতে ঢোকার সময় এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো। তার তাকানো দেখে পাশ থেকে জান্নাত বললো…

জান্নাতঃ কিরে এইভাবে তাকিয়ে কাকে খুজছিস.?

মায়াঃ আরে গতকালকে যে কিছু ছেলেরা আমায় টিজ করেছিল তাদেরকে তো আজকে কোথাও দেখছি না.!

জান্নাতঃ আর কখনো দেখবিও না।

মায়াঃ কেন.?

জান্নাতঃ গতকাল তামিম ভাইয়া হয়তো বলে দিয়েছে আর যেন কাউকে টিজ না করে তাহলে এখানে আর থেকে কি করবে.? তাই হয়তো সবকটা ক্লাসে গিয়ে বসে আছে।

মায়াঃ ছেলেগুলো উনাকে এতো ভয় পায়.!

জান্নাতঃ হ্যাঁ।

মায়াঃ কিন্তু কেন এতো ভয় পায়.?

জান্নাতঃ কি জানি।

জান্নাত আর মায়া এই প্রসঙ্গে কথা বলতে বলতে ক্লাসে চলে আসলো। ক্লাসে আসার কিছুক্ষণ পর স্যার ক্লাসে এসে ক্লাস শুরু করে দিলেন।

এইভাবেই কেটে গেল বেশ কিছুদিন। এই কয়দিনে তামিমের সাথে মায়ার অনেকবার দেখা হয়েছে, দেখা হওয়ার পাশাপাশি একে অন্যের সাথে দুজনের কথাও হয়েছে। তবে তামিম এখনো মায়াকে আপনি করেই বলে।
এদিকে সেই অচেনা নাম্বার থেকে এই কয়দিনে তামিমকে আর মেসেজ দেওয়া হয়নি তাই তামিমও অচেনা নাম্বারটা নিয়ে আর কিছু ভাবে নি।

–––––––

রাত প্রায় ১০ টা বাজে, তামিম তখন এক জায়গা থেকে বাসায় ফিরছিল। চার রাস্তার মোড়ে আসতেই তার কানে কিছু মানুষের দৌড়ানোর আওয়াজ এসে পৌছাল। আওয়াজটা পিছন থেকে আসছে আর কিছু মানুষ এদিকেই দৌড়ে আসছে। তামিম শরীরটা ঘুরিয়ে পিছনে ফিরে তাকাতেই একটা কালো বোরকা পরিহিতা মেয়ে তার পিছনে এসে দাঁড়িয়ে পরলো। মেয়েটার পুরো শরীর এক অজানা ভয়ে কাঁপছে। হয়তো মেয়েটা কোনো খারাপ মানুষের পাল্লায় পরেছিল আর সেখান থেকে দৌড়ে এইখানে এসেছে।

তামিমঃ এই মেয়ে কে আপনি আর আমার পিছনে এসে লুকিয়েছেন কেন.?

মেয়েটা তামিমের দিকে একবার তাকাল অতঃপর তার বোরকার নেকাবটা খোলে ফেললো। মেয়েটাকে দেখেই তামিম চমকে উঠলো আর বললো, মায়া আপনি.!
.
.
.
Loading…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here