#হৃদয়_দিয়ে_ভালোবাসিব,পর্বঃ- ৫
#লেখকঃ- Tamim
তামিম চোখ বড় বড় করে মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মায়ার চেহারায় ভয়ের সাথে বিন্দু বিন্দু ঘামও দেখা যাচ্ছে। মায়ার এ অবস্থা দেখে তামিম বললো…
তামিমঃ আপনার চেহারা এমন দেখাচ্ছে কেন কি হয়েছে আপনার.?
তামিমের প্রশ্নের উত্তরে মায়া কিছুই বললো না শুধু কাঁপা কাঁপা হাতে আঙুল দিয়ে সামনের দিকে ইশারা করল। তামিম ঘাড় ঘুরিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই দেখল একটা পাগল তাদের থেকে ১০ হাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে। তামিম এবার বুঝতে পারলো মায়ার চেহারায় ভয়ের চাপ কেন দেখাচ্ছে। নিশ্চয়ই এই পাগলটা তাকে রাস্তার মধ্যে একা পেয়ে ওকে ভয় দেখাচ্ছিল। তামিম পাগলটাকে একটা ধমক দিল আর ওমনি পাগলটা দৌড়ে সেখান থেকে চলে গেল। তামিম এবার মায়ার দিকে তাকিয়ে বললো…
তামিমঃ ওই পাগলটাকে দেখে ভয় পেয়েছেন.?
মায়াঃ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল।
তামিমঃ আপনি এতো রাতে কোথায় গেছিলেন.?
মায়াঃ ফার্মেসীতে।
তামিমঃ কেন.? (কপাল কুচকে)
মায়াঃ সন্ধ্যার সময় হঠাৎ আব্বুর শরীরে জর চলে আসে। অন্য সময় জর হলে একদিন পর সেটা বেড়ে যেত তাই ভাবলাম এইবারও এমনটাই হবে তাই আর ঔষধ খাওয়ানোর প্রয়োজন মনে করি নি। ভেবেছিলাম সকাল হলে ভার্সিটিতে যাওয়ার আগে ঔষধ কিনে দিয়ে যাব। কিন্তু রাতে খাওয়ার সময় আব্বুকে ডাক দিতেই দেখলাম উনি কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছেন। আমি উনার পাশের গিয়ে শরীরে হাত দিতেই দেখলাম ভিষণ জর এসেছে। এই শরীর নিয়ে তো আব্বু উঠতেই পারছিল না আর বাসায়ও জরের কোনো ঔষধ ছিল না তাই আমিই আব্বুর জন্য ঔষধ কিনতে বেরিয়ে পরলাম। ঔষধ কিনে বাসার আসার মাঝ পথেই হঠাৎ ওই পাগলটার সামনা-সামনি পরে যাই। আমাকে দেখেই সে আস্তে আস্তে আমার দিকে এগুতে লাগলো আমিও তাই দ্রুত পা চালাতে লাগলাম সাথে সেও আরও দ্রুত আমার দিকে আসতে লাগলো তাই ভয়ে দৌড়াতে শুরু করি আর দৌড়াতে দৌড়াতে এই পর্যন্ত চলে আসি (কথাগুলো বলেই মায়া থামলো)।
তামিমঃ বাসায় কি আর কোনো পুরুষ মানুষ নেই আপনার বাবা ছাড়া.? মানে আপনার কোনো ভাই নেই.?
মায়াঃ না আমি একাই।
তামিমঃ আপনার বাসার আশেপাশের বাসাগুলোতেও কি কোনো পুরুষ মানুষ নেই.? যাদের সাথে আপনার পরিবারের খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে.?
মায়াঃ এতো রাতে তাদেরকে গিয়ে ঔষধ আনতে বলবো এটা আমার কাছে ভালো লাগেনি তাই আমিই ঔষধ নিতে চলে আসি।
তামিমঃ ঔষধ আনার কথা বলতে কে বলেছে, তাদেরকে একবার জিজ্ঞেস করে দেখতেন যে তাদের কাছে জরের ঔষধ আছে কি না।
মায়াঃ আসলে তখন আমার মাথায় এসবের কিছুই আসেনি তাই জিজ্ঞেস করি নি।
তামিমঃ সাথে মোবাইল আছে আপনার.?
মায়াঃ জী আছে।
তামিমঃ দেন তো দেখি।
মায়াঃ কেন কি করবেন.?
তামিমঃ দিতে বলছি দেন বাড়তি কথা বলেন কেন.? (কিছুটা রাগ দেখিয়ে)
মায়া আর কিছু না বলে ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে তামিমের দিকে এগিয়ে দিল। তামিম মায়ার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে তার ফোন নাম্বার উঠিয়ে একটা কল দিল। পকেটে থাকা ফোনটা বেজে উঠতেই তামিম কল কেটে দিয়ে মায়ার ফোনটা আবার তার কাছে দিয়ে দিল।
তামিমঃ এই নেন আপনার ফোন। আমার নাম্বার সেভ করে দিলাম আপনার ফোনে। নেক্সট টাইম রাতেরবেলা যদি কোনো ইমার্জেন্সি প্রয়োজন হয় তাহলে আমাকে একটা কল দিবেন আমি আপনাদের বাসার কাছে চলে আসবো।
মায়াঃ অচেনা একজনকে তুমি করে বলতে চান না অথচ তাকে নিজের ফোন নাম্বারটা দিয়ে দিলেন আর তার ইমার্জেন্সি প্রয়োজনে এতো রাতে তাকে হেল্প করতে চলে আসবেন.! আমি তো আপনার কিছু হইনা তাহলে কেন আমার জন্য এতোকিছু করবেন.?
তামিমঃ আপনি জান্নাতের খুব ভালো বন্ধু আর জান্নাত আমার বোনের মতোই। সেই সুবাদে আপনাকে হেল্প করবো।
মায়াঃ ওহ
তামিমঃ জী এবার চলেন আপনাকে আপনার বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি।
মায়াঃ না না আপনাকে এতো কষ্ট করতে হবে না, আমি একাই বাসায় চলে যেতে পারবো (যদিও তার একটু আগের ভয়টা এখনো কাটেনি তবুও কথাটা বললো)।
তামিমঃ আপনার চেহারাই বলে দিচ্ছে আপনি একা যেতে পারবেন কি না। চলেন আর দাঁড়িয়ে থাকা লাগবে না, আপনাকে আপনার বাসায় দিয়ে আসি।
মায়াঃ আচ্ছা চলেন।
তারপর তামিম মায়াকে নিয়ে তার বাসায় দিকে হাটা ধরলো। রাস্তার মধ্যে তাদের আর কোনো কথা হয়নি। প্রায় কিছুক্ষণ পর মায়াদের বাসার কাছে তাঁরা চলে আসলো।
তামিমঃ আচ্ছা তাহলে আপনি এবার বাসায় যান আমিও নিজের বাসায় যাই।
মায়াঃ বাসায় ঢুকবেন না আমাদের.? না মানে আমায় এতোটা পথ এগিয়ে দিলেন একটু চা-পানি খেয়ে যান।
তামিমঃ না থাক অন্য একদিন আসলে খাব নে, আজ না।
মায়াঃ সেই দিনটা কি আর আসবে.?
তামিমঃ ভাগ্য যেহেতু আমাদের এতবার দেখা করাচ্ছে তাহলে এটাও ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেন (মুচকি হেসে)।
মায়াঃ যদি এটা ভাগ্যে না থাকে.?
তামিমঃ তাহলে তো আর কিছু করার নেই। আচ্ছা এখন বাসায় যান আমিও গেলাম।
মায়াঃ আচ্ছা বলে বাসার ভিতরে চলে গেল।
মায়া চলে যাওয়ার পর তামিমও ওইখান থেকে তাঁর বাসায় চলে আসলো।
এদিকে মায়া বাসায় এসে ঢুকতেই তাঁর আম্মু তাকে দেখে দৌড়ে এগিয়ে আসলেন আর বললেন, কিরে মা সেই কখন বাসা থেকে বেরিয়ে গেলি আর এখন আসলি.! রাস্তায় কি কোনো সমস্যায় পরেছিলি.?
মায়াঃ না আম্মু তেমন কিছু না, আসলে ফার্মেসীওয়ালা ঔষধ খুজে পাচ্ছিল না তাই একটু দেড়ি হয়ে গেছে।
মায়ার আম্মুঃ ও এই ব্যাপার, আচ্ছা এখন যা তোর আব্বুকে গিয়ে ঔষধ গুলো খাইয়ে দে।
মায়াঃ হে যাচ্ছি।
তারপর মায়া ঔষধগুলো নিয়ে তার আব্বুর রুমে গিয়ে উনাকে ঔষধ খাইয়ে দিল। ঔষধ খাইয়ে দিয়ে মায়া তার রুমে চলে আসলো। রুমে এসে বোরকা খুলে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিল। কিন্তু হঠাৎ মায়ার একটু আগের কথা মনে পরে গেল। উনি তো আমার ফোনে নিজের নাম্বার সেভ করে দিয়েছে দেখি তো কি নামে সেভ করেছে। মায়া তার ফোনের কন্টাক্টে ঢুকে দেখল তামিম ভাই নামে নাম্বারটা সেভ করা হয়েছে। তামিমের নামের সাথে ভাই শব্দটা দেখে মায়ার কেন জানি একটু রাগ হলো তাই সে এডিট অপশনে ক্লিক করে তামিমের পাশে ভাই শব্দটা কেটে দিয়ে সেভ করে নিল আর মনে মনে বললো, উনি আমার কোন জন্মের ভাই লাগেন যে উনার নামের সাথে ভাই শব্দটা এড করে দিছেন.? নাকি জান্নাতের একরকম ভাই হোন বলে আমারও ভাই.? এহ আমার ঠেকা পরছে উনাকে ভাই বানানোর। থাকুক উনার নাম এইভাবেই, উনি তো আর আমার ফোন নিয়ে চেক করবেন না যে উনার নাম চেঞ্জ করেছি নাকি। উফফ অনেক রাত হয়েছে এবার ঘুমিয়ে পরি, কাল তো আবার ভার্সিটিতেও যেতে হবে।
–––––––
–কিরে মায়া তুই তামিম ভাইয়ার নাম্বার পেলি কোথায়.? তোর ফোনে তো দেখছি তামিম ভাইয়ার নাম্বার সেভ করা, তাও শুধু তামিম নাম দিয়ে.!
টিফিন পিরিয়ডে মায়া আর জান্নাত ভার্সিটির কেন্টিনে নাস্তা করতে আসে। জান্নাতের ফোনে ব্যালেন্স নেই তাই সে মায়ার থেকে তার ফোনটা চেয়ে নেয় ফারহানকে কল দেওয়ার জন্য। কিন্তু কল লিস্টে তামিমের নাম্বার দেখে জান্নাত কিছুটা চমকে উঠে সাথে সাথে সে নাম্বারটা ভালো করে দেখে অতঃপর মায়াকে প্রশ্নটা করে। জান্নাতের কথা শুনে মায়া কিছুটা চিন্তায় পরে যায় এটা ভেবে যে সে এখন জান্নাতের করা প্রশ্নের জবাবে কি বলবে। তামিম তার থেকে ২ ক্লাস সিনিয়র, বয়সের দিক দিয়েও অনেক বড় আর সে কি না ওর নাম্বার শুধু তামিম নামে সেভ করে রেখেছে.! মায়া তবুও স্বাভাবিক থেকেই বললো…
মায়াঃ আসলে হয়েছে কি শুন (তারপর সে জান্নাতকে গতকাল রাতের ঘটনাটা বললো)। এই কারণে উনি উনার নাম্বার আমার ফোনে সেভ করে দিয়েছেন যাতে নেক্সট টাইম কোনো ইমার্জেন্সি প্রয়োজনে উনাকে কল দিয়ে বলি।
জান্নাতঃ সবই বুঝলাম কিন্তু উনার নাম্বার শুধু তামিম নামে সেভ করা কেন.? উনি কি নিজ থেকে এই নামে সেভ করে দিয়েছেন নাকি তুই করেছিস.?
মায়াঃ আমি কেন করবো, উনিই করেছেন (মিথ্যা বললো নাহলে সে ঝামেলায় পরে যাবে)।
জান্নাতঃ তুই সত্যি বলছিস তো, উনিই তোকে উনার নাম্বার দিয়েছেন.? উনি তোর থেকে বড় হওয়া সত্তেও এইভাবে উনার নাম্বার তোর ফোনে সেভ করে দিয়েছেন.! বিষয়টা মাথায় ঢুকছে না আমার।
মায়াঃ আরে মিথ্যা বলবো কেন.? তোর বিশ্বাস না হলে উনাকেই জিজ্ঞেস করিস যা। আর ঢুকা লাগবেও না ফোন যে কারণে নিয়েছিস সেই কাজটা করে শেষ কর আর এই খাবারগুলো তোর পেটে ঢুকা তাহলেই হবে।
জান্নাতঃ দ্বারা এক মিনিট বলেই সে ফারহানের নাম্বারে একটা মেসেজ দিয়ে বললো, আমি জান্নাত আমার ফোনে ব্যালেন্স শেষ, আপনি ফ্রি থাকলে আমার ফোনে একটা কল দিয়েন, আপনার সাথে কথা আছে আর এটা আমার এক বান্ধবীর ফোন তাই এই ফোনে কল দিয়েন না।
মেসেজটা দিয়েই সে মায়ার কাছে তার ফোনটা দিয়ে দিল। তারপর দুজনে নাস্তা খেয়ে আবার ক্লাসে চলে আসলো। এইভাবেই কেটে প্রায় ১৫ দিন। এখন তামিম আর মায়ার একে অন্যের সাথে দেখা হলে দুজনেই একে অন্যের সাথে ভালো মন্দ কথা বলে, এই যেমন কেমন আছেন.? পড়াশোনা কেমন হচ্ছে এইটুকুই। এইভাবেই চলছিল তাদের দিনকাল।
.
.
.
.
.
Loading…….