অদ্ভুত_মেয়ে (season 2) Part- 44

0
4049

অদ্ভুত_মেয়ে (season 2)
Part- 44
Writer: #Nur_Nafisa
.
.
নাফিসা হাতমুখ ধুয়ে নিজেকে যথেষ্ট ফ্রেশ করলো। দরজা খুলে বের হতেই মা সামনে দাড়িয়ে।
মা- কি হয়েছে তোর? কান্না করছিলি কেন?
নাফিসা- কিছু হয়নি। তোমার কথা খুব মনে পড়ছে তাই চলে এলাম। আমি ছাদে যাই একটু।
মা- চল ভাত খাবি।
নাফিসা- না, আমি শান্তা আপুর বাসায় গিয়েছিলাম। খেয়েছি সেখানে।
নাফিসা আর অপেক্ষা না করে ছাদে চলে গেলো। কয়েকটা ফুলগাছ ছিলো সব মরে শুকিয়ে গেছে। গাছ ভেঙে ঝড়ে পড়েছে। একসময় খুব সুন্দর ছিলো এখন যত্ন নেয় না কেউ। কে ই বা নিবে! রেলিংয়ের একপাশে এসে দাড়িয়ে আছে নাফিসা। ফুলগাছ গুলোর মতো তার জীবন ও তো আজ ঝড়ে পড়লো! একসময় সে রানী আর আজ হয়ে গেছে দুশ্চরিত্রা! মেঘলা আকাশ পানে তাকিয়ে আছে নাফিসা। সাদাকালো মেঘ পাল্লা দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে! সাদার তুলনায় কালো মেঘই বেশি আজ। বৃষ্টির বদলে তার চোখ থেকে টুপটাপ পতন হচ্ছে অশ্রু! চোখ মুছতে মুছতে ক্লান্ত, এখন আর অশ্রু স্পর্শই করে না। যে লোকটাকে সে এতো ভালোবেসে ফেলেছে আজ সে লোকটা তাকে এতো বড় অপবাদ দিলো কিভাবে! কোনো ভুলের তথ্য অনুসন্ধান করে যাচাই না করেই তাকে দুশ্চরিত্রা বললো কিভাবে! সে নিজেই ডিভোর্স চেয়ে নিয়েছে। ভালোই হয়েছে, তার সাথে সংসার করার কোনো ইচ্ছাই নেই! যে সম্পর্কে বিশ্বাস নেই সেটা তো বালির সংসার! এতোদিনেও তার চরিত্র সম্পর্কে জানলো না, তাকে নিয়ে আর কি স্বপ্ন দেখবে! চরিত্র নিয়ে কটু কথা বলতে পারে এমন লোকের কাছ থেকে মুক্তি পাওয়াটাই শ্রেয়! হয়তো সে এতোদিন যাবত একজনকে দেখতে দেখতে বিরক্তই হয়ে গেছে! থাকুক সে তার মতো! অন্যের ব্যাপার হলে আজ প্রতিবাদ নিয়ে দাড়াতো কিন্তু যাকে জীবনে সবচেয়ে আপন করে নিয়েছে তার ক্ষেত্রে প্রতিবাদ করতে গেলে তো ভালোবাসা মূল্যহীন হয়ে পড়বে! লাগবে না তাকে, জীবনের সাথে লড়াই করে অন্তসত্ত্বাকে নিয়ে বেচে থাকার চেষ্টা করবে। আকাশের মতো নিজের মনেও অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে গেছে!
ইমরান নাফিসাদের বাসায় এসে পড়েছে। তার অবস্থা পুরো পাগলের মতোই! নিজেকে তো একবার আয়নায় দেখেও নি! কাল বিকেল থেকে আজ এখন পর্যন্ত নিজের দিকে কোনো খেয়ালই দেয়নি। ঘরে ঢুকেই ফুপিকে দেখে বললো,
ইমরান- ফুপি, নাফিসা কোথায়?
– কিরে তোর অবস্থা এমন কেন? কি হয়েছে তোদের আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না!
ইমরান- নাফিসাকে বকেছি আমি। কোথায় এখন সে?
ইমরান কথা বলতে বলতে রুমের দিকে এগোতে নিলে ফুপি বলে দিলো নাফিসা ছাদে গেছে। ইমরান বেরিয়ে দৌড়েই ছাদে চলে গেলো। ছাদে পা রাখতেই দেখলো নাফিসা রেলিং ধরে দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। ইমরান তাকে ঠিকঠাক দেখে খুব বড় একটা নিশ্বাস ছাড়লো! এগিয়ে এসে নাফিসাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
ইমরান- সরি মাই কুইন।
হঠাৎ ইমরানের স্পর্শ পেয়ে নাফিসা চমকে উঠলো! ইমরান এখানে এসেছে কেন! নাফিসা নিজেকে ছাড়াতে লাগলো।
নাফিসা- ছাড়ুন। আপনি এখানে কেন! সরে দাড়ান!
ইমরান- সরি ওসব বলার জন্য! তুমি শান্তার সাথে কথা বলেছো আমি সেটা জানতাম না! সরি!
নাফিসা- আমি ছাড়তে বলেছি আমাকে!
ইমরান তাকে ছেড়ে দিয়ে দাড়ালো। নাফিসা তার দিকে ঘুরতেই চেহারা দেখে ইমরানের ভেতরটা ছ্যাত করে উঠলো! কান্না করে চোখমুখ ফুলে গেছে! চোখ লাল হয়ে গেছে এখনো গাল গড়িয়ে পানি পড়ছেই! আবার দু’হাতে নাফিসার মুখখানা ধরতে গেলে নাফিসা পিছিয়ে গেলো তার কাছ থেকে!
নাফিসা- এখানে এসেছেন কেন! ছেড়ে চলে এসেছি তো! আর কখনো যাবো না, আমার ছায়াও আপনাকে দেখতে হবে না! চলে যান এখান থেকে।
ইমরান- সরি বলেছি তো।
নাফিসা- না ঠিক আছে, সরি কেন বলবেন আপনি! আপনিই ঠিক আছেন। আমিই দুশ্চরিত্রা! আমিই খারাপ! বিশ্বাস ভেঙে দেই সবার! ঘরে স্বামী রেখে পর পুরুষের সাথে রাত কাটাই, লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করি, আড্ডা দিতে যাই।
ইমরান- নাফিসা…!
নাফিসা- শাট আপ! জীবনেও এমন কলঙ্কিত নাম মুখে আনবেন না। পাপ হবে আপনার! ভালো থাকুন আপনি আর দয়া করে আমার মতো মেয়ের সাথে দেখা করতে আসবেন না! কেন এসেছেন এখানে! চলে এসেছি তো। আপনার কাছে যাই নি আমি, দয়া করে আপনিও আর আসবেন না। শান্তিতে থাকুন আপনি। চলে যান এখান থেকে।
ইমরান- হ্যাঁ যাবো। তোমাকে সাথে নিয়ে। বাবা মা সবাই বাসায় ফিরেছে। চলো।
ইমরান একটু এগিয়ে যেতেই নাফিসা আরও পিছিয়ে জোর গলায় বললো,
নাফিসা- একদম কাছে আসবেন না! আরেক পা এগোলে আমি ছাদ থেকে ঝাপ দিয়ে মরে যাবো।
ইমরান থেমে গেছে। নাফিসার কথা শুনে আর এগোতে পারলো না! অনেক রাগ, অভিমান, জেদ নিয়ে কথা বলছে সে। জেদের বশে যে কোনো কিছুই ঘটাতে পারে! নাফিসা আবার চেচিয়ে বলতে লাগলো,
নাফিসা- আপনার মতো এতো ভালো লোকের সম্মুখীন হতে আমার ঘেন্না লাগে! আমাকে নিয়ে সংসার করতে পারবেন না আপনি। আমি দুশ্চরিত্রা! আমার সাথে দ্বিতীয়বার কথা বলতেও আসবেন না! তাহলে নিজেকে শেষ করে দিবো আমি। চিন্তা করবেন না। আমি কাউকে কিছু জানাবো না। ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিয়েন। সিগনেচার করে দিবো। ডিভোর্স চাই আমিও….! কোনো অভিযোগ থাকবে না আপনার বিরুদ্ধে। চলে যান এখান থেকে, না হলে আমি বাধ্য হবো এখন এইমুহূর্তে নিজেকে শেষ করে দিতে।
ইমরানের চোখ ছলছল করছে। সে বুঝতে পারছে, কম কষ্ট নিয়ে কথাগুলো বলছে না নাফিসা! খুব বড় আঘাত করে ফেলেছে সে! এটা কি হওয়ার ছিলো!
ইমরান- ওকে, পাঠিয়ে দিবো পেপার!
ইমরান নিজের চোখে মুখে হাত বুলিয়ে চলে গেলো ছাদ থেকে। নাফিসা রেলিং শক্ত করে ধরে ঠোঁট কামড়ে ধরে কাদতে লাগলো! অত:পর চোখমুখ মুছে নিজেই নিজেকে সান্তনা দিতে লাগলো,
নাফিসা- না, আমি কেন কাদবো! কার জন্য কাদছি আমি! ওকে প্রয়োজন নেই আমার। একাই বাচতে পারবো আমি! লাগবে না তোর মতো জীবনসঙ্গী!
নাফিসা ছাদে আরও কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে নিজেকে ফ্রেশ করার চেষ্টা করলো। তারপর নিচে নেমে এলো। ইমরান এখনো যায়নি! ড্রয়িং রুমে বসে বাবার সাথে কথা বলছে!
ইমরান- ফুপা, নাফিসা সিগনেচার করলেই হয়ে যাবে। আর কোন ঝামেলা থাকবে না।
বাবা- ইমরান, তুমি কি বলছো! নাফিসা কি এখন পারবে সামলাতে!
নাফিসা দেখতে পেল ইমরানের হাতে একটা কাগজ! মনে মনে বললো, “বাহ! পেপার তো দেখছি আগেই রেডি করে রেখেছে! ডিভোর্স পেপার আবার এখন সাথে নিয়েই এসেছে! অথচ ছাদে গিয়ে ড্রামা শুরু করেছে!” ওড়না দিয়ে নাক মুছে সোফায় এসে বসতে বসতে বললো,
নাফিসা- বাবা, আমাকে নিয়ে কাউকে ভাবতে হবে না। সবাই নিজেদের মতো ভালো থাকুক। আমিও সামলে নিতে পারবো।
বাবা- তাহলে আর কি! যা ভালো মনে করো তাই করো। আমার কাজ আছে, বের হবো।
বাবা উঠে বেরিয়ে গেলো আর ইমরান নাফিসার কথা শুনে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। ইমরান আগের জামাকাপড়েই আছে কিন্তু হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়েছে দেখা যাচ্ছে! নাফিসা তাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,
নাফিসা- কোথায় সাইন করতে হবে বলুন।
ইমরান দেখিয়ে দিলো আর নাফিসা সাইন করার জন্য কলম নিয়েছে হাতে! চোখে কিছু দেখতেই পাচ্ছে না! বারবার ঝাপসা হয়ে আসছে চোখ! হাতে কলমটাও ধরতে পারছে না, হাত কাপছে তার! ইমরান লক্ষ্য করেছে ঠিকই!
ইমরান- রেখে দাও, পারবে না তুমি!
নাফিসা- না, পারবো!
চোখ মুছে, নিজেকে শক্ত করে সে কাপা কাপা হাতে সাইন করে দিলো। ইমরান পেপার নিয়ে উঠে গেলো। নাফিসা কলম ছেড়ে স্তব্ধ হয়ে টেবিলের দিকেই তাকিয়ে আছে! সব শেষ হয়ে গেলো আজ! ইমরান কিভাবে পারলো এটা করতে! একবারও বাধা দিলো না! বাবাও কিছু বললো না! বাবা আর কি বলবে, ইমরান নিজেই চাইছে সব! আজ সব কিছু নাফিসার কাছে পরিষ্কার! ইমরান তাকে ডিভোর্স দিবে বলেই এতোদিন ধরে এমন বিহেভ করে যাচ্ছে তাকে! কষ্টে ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে নাফিসার! একটা মাত্র সিগনেচারে আজ কতোদিনের গড়া সম্পর্ক ভেঙে গেলো যেটা আর কখনো জোরা লাগা সম্ভব না!
ড্রয়িং রুম ছেড়ে দৌড়ে তার নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলো। জানালার পাশে দাড়িয়ে তার পেটে হাত রেখে কাদতে কাদতে বললো,
নাফিসা- দুনিয়াতে আসার আগেই বাবা ছাড়া হয়ে গেলি! আজ তোর মাকেসহ তোকে ছেড়ে দিলো তোর বাবা! জানাতেই পারলাম না আমি তোর কথা! চিন্তা করিস না, তোর মা আছে তোর সাথে। বাবার অভাব বুঝতে দিবো না কখনো তোকে। একাই লালন পালন করবো আমি! কোনো অযত্নে রাখবো না!
নাফিসা হু হু করে কাদতে কাদতে বসে পড়লো ফ্লোরে। ইমরান যে আগে থেকেই তার রুমে বসে আছে খেয়ালই করেনি সে! নাফিসা হুহু করে কাদতে কাদতে বসে পড়তে দেখে ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে দৌড়ে এসে নাফিসার কাছে বসে পড়লো।
ইমরান- নাফিসা, চুপ করো! কান্না থামাও। কিছু হয়নি! কোথাও যাইনি আমি তোমাদের ছেড়ে!
নাফিসা বড় বড় চোখ করে ইমরানের দিকে তাকালো! আবার দরজার দিকে তাকালো! দরজা তো লাগানোই আছে! তাহলে ইমরান এখানে কিভাবে! নাফিসা ঝটপট উঠে দাড়ালো!
নাফিসা- আপনি এখানে কেন! এখনো যাননি কেন এখান থেকে!
ইমরান- যাবো তো, আমার বউ আর বাচ্চাকে সাথে নিয়ে।
ইমরানের মুখে বাচ্চার কথা শুনে চমকে উঠলো নাফিসা! জানালার দিকে ঘুরে বললো,
নাফিসা- কার বাচ্চা, কোথায় বাচ্চা!
ইমরান পেছন থেকে নাফিসার পেটে হাত রেখে কানের কাছে এসে বললো,
ইমরান- আমাদের বাচ্চা, এখানে।
নাফিসা- এখানে কোনো বাচ্চা নেই। সরে দাড়ান। আমাকে টাচ করবেন না!
ইমরান- উহুম।
নাফিসা ঘুরে খুব জোরে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো ইমরানকে! অত:পর আবার জোর গলায় বলতে লাগলো,
নাফিসা- নিষেধ করেছি না টাচ করতে! কিসের বউ, কিসের বাচ্চা! মরে গেছে তোর বউ! সব ধ্বংস হয়ে গেছে! নিজ হাতে ধ্বংস করে দিয়েছিস সব! কোনো সম্পর্ক নেই তোর সাথে আমার! ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিয়েছি, কোনো অধিকার নেই তোর আমার উপর! বেরিয়ে যা এখান থেকে!
ইমরান- ডিভোর্স হয়নি আমাদের। এতো সহজে ছাড়ছি নাকি!
নাফিসা- ডিভোর্স হয়নি মানে! এই মাত্র আমি পেপারে সাইন করে এসেছি।
ইমরান পকেট থেকে পেপার নিতে নিতে বললো,
ইমরান- এতো শিক্ষিত হয়ে লাভটা কি হলো! সাইন করার আগে মূর্খ মানুষও তো জানার চেষ্টা করে সে কোথায় সাইন করছে! এটা তো বৃদ্ধাশ্রমের রেজিস্ট্রি পেপার ছিলো!
নাফিসা হতবাক হয়ে আছে! ইমরানের হাত থেকে পেপারটা নিয়ে চোখ বুলিয়ে দেখলো এটা রেজিস্ট্রি পেপারই!
ইমরান নাফিসার হাত থেকে কাগজ নিয়ে ভাজ করতে করতে বললো,
ইমরান- বাচ্চার বাবা এতো খারাপ না! রেগে গিয়ে বলেছি এসব! সঠিকটা না জেনে উল্টাপাল্টা বলে ভুল করেছি সেটাও মানছি। এবার বাচ্চার মা শাস্তি দিলেও মাথা পেতে নিবো কিন্তু বাচ্চার বাবাকে দূরে সরিয়ে দিতে পারবে না। খুন করবে আমাকে? প্লাস্টিকের দা বটি নিয়ে আসবো?
নাফিসা এগিয়ে দু’হাতে ইমরানকে মারতে লাগলো,
নাফিসা- খুব খারাপ তুমি! খুব খারাপ! কি করে পারলে আমাকে এসব বলতে! কি করে পারলে!
ইমরান নাফিসাকে টেনে একেবারে নিজের সাথে চেপে ধরে রাখলো! নাফিসা ইমরানের বুকে মাথা রেখে শব্দ করে কান্না করতে লাগলো! ইমরানের ইচ্ছে করছে নাফিসাকে কলিজার ভেতরে লুকিয়ে রাখতে! কি বলেছে ভাবতে নিজেরই নিজের প্রতি ঘৃণা লাগছে! নাফিসা কেদেই চলেছে, ইমরান বাধা দিচ্ছে না! কাদলে মন হালকা হবে! তার বুকে পড়ে আছে এতেই তার শান্তি!
কান্নার শব্দ শুনে নাফিসার মা এসে একবার ডেকে গেছে ইমরান সাড়া দিয়েছে সে নাফিসার কাছে আছে। আস্তে আস্তে কান্নার বেগ কমে গেছে।
ইমরান- তুমি হসপিটালে যাবে আমাকে বলোনি কেন আগে?
নাফিসা- বলার সুযোগ দিয়েছো তুমি? আমার সাথে তো কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছো! তাছাড়া বের হওয়ার আগে আমি কাগজে লিখে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে এসেছিলাম।
ইমরান- তুমি ই তো আমাকে অবহেলা শুরু করেছো সে থেকেই তো আমি এমন করেছি।
নাফিসা- আমি কখন অবহেলা করেছি?
ইমরান- আমি কখনো পড়া নিয়ে সমস্যা জানতে চাইলে আমাকে ইগনোর করে তোমার ফ্রেন্ডদের সাহায্য নিবে বলেছো। পড়েছো আর রাত নেই দিন নেই তাদের সাথে ফোনে কথা বলেছো অথচ আমার সাথে কথা বলার সময় নেই! এক্সামের দিনগুলোতে রাত জেগে ছিলে আর ঘুমানোর কথা বললে আমাকে একা ঘুমাতে বলতে! কেন? আমি কি কখনো বলেছি তোমাকে, তুমি ঘুমিয়ে পড়ো আর আমি পড়ে ঘুমাবো? শত কাজ থাকলেও তোমাকে সময় দিয়েছি, তোমাকে সাথে নিয়েই ঘুমিয়েছি। কারণ আমি জানি তুমি আমি তোমার অভ্যাস হয়ে গেছি, আমাকে ছাড়া ঘুম আসবে না। অথচ দেখো, কতো সহজে অভ্যাস পাল্টে ফেলেছো!
নাফিসা- তুমি সারাদিন অফিসে কাজ করো আবার ঠিকমতো অফিস যাও। আমার জন্য তোমার যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সেজন্য আমি তোমাকে ঘুমিয়ে থাকতে বলতাম! আর বন্ধুদের সাথে কি আমি অপ্রয়োজনীয় কথা বলেছি! একাধারে পড়তে পড়তেও তো বোরিং লাগে। আর বোরিং দূর করতেই একটু আধটু গল্প করতাম!
ইমরান- এক্সাম শেষেও কি তোমার বোরিং লাগতো! তাদের সাথে এতো কথা বলতে কেন? সারাদিন তো ফোন নিয়েই বসে থাকতে!
নাফিসা- এক্সামের পর আমি কারো সাথেই তেমন কথা বলিনি! শান্তা আপুর সাথে শুধু কথা বলতাম অসুস্থতা নিয়ে! আর দুএকবার দিনার সাথে কথা বলেছিলাম! তুমি তো আমার সাথে কথা বলতেই না, তাই আপুদের সাথে মায়ের সাথে কথা বলে সময় কাটিয়েছি আমি!
ইমরান- মিথ্যে বলছো কেন? শিহাবের সাথে তুমি কথা বলোনি এক্সামের পর?
নাফিসা- আমি শিহাবের সাথে কখন কথা বললাম!
ইমরান- কাল দুপুরে কল লিস্ট চেক করে দেখেছি আমি শিহাবের নম্বর ফার্স্টে! শিহাব আবার কল করেছে পরেই আমি ফোন ভেঙে ফেলেছি!
নাফিসা- শিহাবের সাথে আমি কথা বলেছি! আচ্ছা বলো কত মিনিট কথা বলেছি?
ইমরান- আমি সেটা দেখিনি!
নাফিসা- না দেখে বেশি বুঝো কেন? দুপুরে হসপিটাল যাওয়া নিয়ে শান্তা আপুর সাথে কথা বলেছি আমি। ভুলে কন্টাক্ট নম্বরে টাচ লাগতেই শিহাবের নম্বরে ডায়াল হয়ে যায়! সাথে সাথেই কেটে দিয়েছি। আর রাস্তায় দেখা হওয়ার পর শিহাব বলেছে আমাকে, মিসকল দিয়েছি ভেবে সে কল ব্যাক করেছিলো। এজন্য তুমি সন্দেহ করছো আমাকে?
ইমরান- এজন্য সন্দেহ করেছি? তুমি শিহাবের সাথে কফিশপে বসে আড্ডা দাওনি? আর আমি কল করে জিজ্ঞেস করায় বলেছো তুমি বাসায়! কাল শিহাবের সাথে বাইকে যেতে দেখে আমার রাগ আরও বেড়ে গেছে। তা না হলে আজ এতোকিছু হতো না!
নাফিসা- তুমি সেদিন ঢাকা এসেছিলে তাহলে! আমি শিহাবের সাথে আড্ডা দেওয়ার উদ্দেশ্যে যাইনি! অনেকদিন পর ভার্সিটি যাওয়ায় শিহাব বললো তাদের কফি খাওয়াতেই হবে, আবার আমার নোট নেওয়া প্রয়োজন ছিলো তাই রাজি হয়েছি। শিহাব নয় শুধু, দিনা অন্তুও এসেছে। একসাথেই আড্ডা দিয়েছি। ওরা একটু পরে এসেছে। আমার একবার মনে হয়েছে তোমাকে গাড়িতে দেখেছি। কিন্তু তেমনভাবে খেয়াল করতে পারিনি! ঠিক তখনই তোমার ফোন আসতে নিশ্চিত হয়েছিলাম তুমি আমাকে দেখেছো। তাই মিথ্যে বলেছিলাম যাতে আমাকে হাতেনাতে ধরো। ভেবেছি আমার সামনে যাবে তুমি! কিন্তু যখন দেখলাম যাওনি তখন ভাবলাম তাহলে গাড়িতে তুমি ছিলে না। পড়ে সত্যিটা জানাতে কল করেছিলাম, তুমি বলেছো ব্যস্ত তাই আর বলতে পারিনি। পরে আর মনেই ছিলো না! কাল গাড়ি পাই নি, আর শিহাবকে আমি ডাকিনি! সে মার্কেটিং জব করে, নারায়ণগঞ্জ ডেলিভারি দিতে গিয়েছিলো। আর রাস্তায়ই আমার সাথে দেখা হয়েছে। অনেক বড় নাকি জ্যাম লেগেছিলো সেজন্য বলেছিলো তার সাথে স্ট্যান্ড পর্যন্ত যেতে! হসপিটাল যাবো বলেই বাধ্য হয়েছি আমি তার সাথে যেতে! এতো সন্দেহ নিয়ে বসে ছিলে আমার প্রতি! একবার জিজ্ঞেস করলে কি হতো! যেখানে বিশ্বাস থাকে না সেখানে সম্পর্ক টিকে কিভাবে! এতো সন্দেহ অবিশ্বাস থাকলে আমিও থাকতে পারবো না তোমার সাথে! থাকো তুমি যেভাবে ইচ্ছা! কোনো অভিযোগ নেই তোমার বিরুদ্ধে!
ইমরান- এহ! কি শক্তিশালী নারী! একা একা থাকবে, একা একাই বাচ্চাকে লালন পালন করবে! তুমি একা একা বাবুর যত্ন নিবে আর আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবো তাই না!
নাফিসা- কে বলেছে তোমাকে দেখতে! চলে যাও, দেখো পারি কি-না!
ইমরান- হুহ্! যাচ্ছি না আমি! সবসময় তোমার কথাই হবে নাকি! এটাও জানি, খুব পারবে তুমি একা বাচতে! কিন্তু আমি বাচবো কি নিয়ে!
নাফিসা- তাড়িয়েই তো দিয়েছো! না বাচতে পারলেই কি এসব বলতে আমাকে!
ইমরান- সরি মাই লাভার কুইন! একবার সুযোগ দাও আমাকে! আর কাদতে দিবো না কখনো তোমায়! হয়েছে তো এবার! আর কতো কাদবে! দেখো চোখের পানি, নাকের পানিতে আমার শার্ট ভিজিয়ে দিয়েছো!
নাফিসা নাকটা আরেকটু ভালোভাবে ইমরানের শার্টে মুছে নিলো।
.
.
কি হলো! নিজেই তো বুঝতে পারছি না! ??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here