বিবর্ণ_জলধর,পর্ব: ১৮

0
486

#বিবর্ণ_জলধর,পর্ব: ১৮
#লেখা: ইফরাত মিলি

রাস্তার পাশে বেঞ্চিতে বসে আছে আষাঢ়। দেখতে দেখতে শরৎ বিদায় নিয়ে হেমন্ত এসে গেছে। হেমন্তেরও আছে নজর কাড়া রূপ। গাছ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে পাতা ঝরে পড়ে এ সময়। রাস্তার উপর পড়ে আছে অজস্র ঝরা পাতা। বেঞ্চির যে একটুখানি জায়গা পড়ে রয়েছে সেখানেও তিনটা-চারটা পাতা নিজেদের দখল বসিয়েছে। রাস্তায় খুব বেশি একটা মানুষের চলাচল লক্ষ্যনীয় নয়। আষাঢ় বসে আছে তার টিউলিপ ফুলের অপেক্ষায়। টিউলিপ ফুলের সাথে তার আজ পনেরো দিনের ব্যবধানে দেখা হয়েছে। সেই যে হাতে ব্যান্ডেজ দেখেছিল এরপর আর টিউলিপ ফুলের দেখা পায়নি। আজ সকাল বেলা টিউলিপ যখন প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে শপ থেকে ফিরছিল, তখন দেখা হয়েছিল। আষাঢ় দেখা হওয়া মাত্রই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল এতদিন কেন দেখতে পায়নি তাকে এ নিয়ে। অজস্র প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিল ছোট টিউলিপের কাছে। কিন্তু টিউলিপ একটা প্রশ্নেরও উত্তর দেয়নি, শুধু বলেছিল,
‘আমাদের প্রথম মিটের স্থানে আমরা আজকে দেখা করতে পারি…বিকেলে উপস্থিত থাকবেন, যদি দেখা করতে চান আমার সাথে।’

কথাটা বলে সব সময়ের ব্যস্ততা, ভয় নিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে গিয়েছিল সে। আষাঢ় তার কথা মতো এসে অপেক্ষা করছে এখন। অনেকটা সময় হয়ে গেছে। কিন্তু টিউলিপের দেখা নেই। মেয়েটা বিকেলে বললো ঠিকই, কিন্তু নির্ধারিত কোনো টাইম বললো না। এভাবে এতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করা যায়? তবে আষাঢ় জানে টিউলিপ আসবে। না আসলে কখনো এই কথা বলতো না।
রাস্তার সুদূরে একটা ছোট মেয়ের আগমন দেখা গেল। গুটি গুটি পা ফেলে এগিয়ে আসছে। হাসি ফুঁটলো আষাঢ়ের মুখে। মেয়েটা কিছুটা কাছে এলে আষাঢ় তার পোশাকের দিকে খেয়াল করলো। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া আজকে। শীত পোশাকের প্রয়োজন আছে বটে, কিন্তু মেয়েটা অতিরিক্ত পুরু পোশাক পরে এসেছে। যেন এখন হেমন্ত চলছে না, এটা শীতকাল। মেয়েটার কাণ্ড-কলাপে হাসলো আষাঢ়। নিকটে এসে গেছে মেয়েটা। সামনে দাঁড়িয়ে আষাঢ়ের পাশে অবশিষ্ট বেঞ্চির একটুখানি ফাঁকা জায়গাটায় চোখ রাখলো সে। আষাঢ় মধ্যখানে বসে পুরো বেঞ্চি নিজে দখল করে রেখেছে। আষাঢ় মেয়েটার দৃষ্টি লক্ষ্য করে বললো,
“ও, তুমি বসবে?”
কথাটা বলতে বলতে আষাঢ় বেঞ্চির একপাশে সরে গেল। হাত দিয়ে বেঞ্চির অন্যপাশে পড়ে থাকা ঝরা পাতাগুলো ঝেড়ে ফেলে দিলো। মেয়েটা বসবে, কি বসবে না নিয়ে এক মুহূর্ত ভাবলো। বসলো সে আষাঢ়ের পাশে।
এই প্রথম দুজনের পাশাপাশি বসা হলো। এর আগে মেয়েটার সাথে পথে-ঘাটে, শপ কিংবা অন্য কোথাও দেখা হলেই মেয়েটা একপ্রকার পালানোর মতো করে চলে যেত। এড়িয়ে চলতো যেন। মেয়েটার আসল নামও জেনেছে খুব কষ্টে। মেয়েটা বলবে না বলে মুখে খিল এঁটে ছিল। কিন্তু আষাঢ় কি ছাড় দেয়! ঠিকই জেনে ছাড়লো। মেয়েটার সাথে তার পরিচয় তিন মাসের। এক এলাকা বলে মেয়েটার সাথে তার দেখা সাক্ষাৎ হতো। কিন্তু প্রতিদিন না। অনেক দিনের ব্যবধানের পর। আর দেখা হলেই মেয়েটার মুখে লেগে থাকা বিষাদ আর বিষণ্নতা দেখতে পেত সে। ওই বিষাদ আর বিষণ্নতার জন্যই মেয়েটার মুখ তার খুব প্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে মেয়েটার চোখ। এখনও আষাঢ় মেয়েটার চোখ জোড়াতে চেয়েছিল। আজকে যেন চোখ জোড়াতে বেশি কষ্ট, বেশি বিষণ্নতা। আষাঢ় চোখ নিয়ে আর নিজের ভাবনা বাড়ালো না। বললো,
“স্ট্রেইঞ্জ! এতদিন তো আমার থেকে পালিয়ে বেড়াতে, আজকে এসে একেবারে আমার পাশে বসলে যে? সাহস হয়ে গেল না কি? ভেবে তো ছিলাম দেখা করার কথাটা শুধু আমাকে এমনি এমনি বলেছো, কিন্তু তোমাকে সত্যি এখানে দেখতে পেয়ে আমি আশ্চর্যান্বিত!”

মেয়েটা ক্ষণিকের জন্য আষাঢ়ের দিকে তাকালো, আবার চোখ সরিয়ে নিলো। মুখটা একেবারে কালোপূর্ণ তার।

আষাঢ় নোয়ানার বাম হাতে তাকালো। জ্যাকেটের নিচে ঢাকা পড়েছে বাম হাত। বললো,
“তোমার হাতের ক্ষত সেরেছে?”

মেয়েটা নিজের বাম হাতের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলো। মুখে একটা কথা ফুঁটলো না।
আষাঢ় বিরক্ত নয়, তবুও একটু বিরক্তি নিয়ে বলার চেষ্টা করলো,
“আবারও বোবা সেজেছো তুমি? কথা বলবে না?”

মেয়েটার ভাবান্তর হলো না। ঠাঁয় নিশ্চুপ, নির্বিকার বসে রইল। আষাঢ়ও নিশ্চুপ হয়ে গেল। আজ মেয়েটার মৌনতা ভিন্ন। ওই মৌনতার উপর কথা বলা বেমানান ঠেকলো। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকলো শুধু। আর মেয়েটা আনমনা অন্যদিকে। নীরবই কেটে গেল কিছু সময়। মেয়েটা হঠাৎ উঠে দাঁড়ালো। শীতল স্বরে বললো,
“তোমার সাথে আর আমার দেখা হবে না।”
বলেই মেয়েটা হাঁটা দিলো।

আষাঢ় দাঁড়িয়ে গেল। চলন্ত মেয়েটার উদ্দেশ্যে বললো,
“দেখা হবে না মানে? কী বলছো?”

মেয়েটা দ্বিরুক্তি করলো না। হেঁটে চললো।

আষাঢ় চেঁচিয়ে ডাকলো,
“টিউলিপ!”

থামলো না মেয়েটা।

“স্টপ নোনা। আমাকে সবটা খুলে বলো। তোমার সাথে কেন দেখা হবে না আমার? এভাবে অর্ধকথা বলে চলে যাবে না। দাঁড়াও।”

মেয়েটা থামলো। দু চোখে অশ্রু। পিছন ফিরে আষাঢ় যেন শুনতে পায় সেজন্য উচ্চৈঃস্বরে বললো,
“নিউ ইয়র্ক ছেড়ে চলে যাচ্ছি আমি। খুব দূরে চলে যাব। তোমার সাথে তাই আর দেখা হবে না।”

এটুকুই ছিল মেয়েটার শেষ কথা। সে ঘুরে আবার হাঁটতে লাগলো। পিছনে ফেলে গেল কিছু তিক্ত অনুভূতি। নিজের ভিতরও কষ্ট হচ্ছে। যদিও কষ্ট তার ভিতর সব সময়ই বিদ্যমান। কিন্তু আজকের কষ্টটা একটু ভিন্ন গড়নের।
আষাঢ় স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল মেয়েটার যাওয়ার পথে। মেয়েটা ঝাপসা হলো। এক সময় অদৃশ্য হয়ে গেল। পথ পড়ে রইল শূন্য!

_________________________________________________

জানালা দিয়ে প্রবেশকৃত রোদ্র আলোয় পিটপিট করে চোখ মেললো সিনথি। ঝাপসা চোখে প্রথমেই নজরে পড়লো পার্শ্বদেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে এক শ্যামবর্ণের যুবক। ঝাপসা চোখ মুহূর্তেই সচকিত হলো, চকিতে শোয়া থেকে উঠে বসলো সে। ভয়ের এক তান্ডব ছড়িয়ে পড়েছিল তার ভিতর। কিন্তু মানুষটা পরিচিত হওয়ায় ভয়টা কমলো। আষাঢ় হাসি মুখে উইশ ছুঁড়লো ঘুম কাতুর চেহারার সিনথির উপর,
“গুড মর্নিং সিনথিয়া!”

সিনথি অপ্রস্তুত ভাবে উইশটা গ্রহণ করলো,
“গুড মর্নিং।”

“তুমি এমনিতে দেখতেই অপরূপ সুন্দরী, এমন ঘুম ঘুম অবস্থায় দেখতে আরও সুন্দর লাগছে। অগোছালো চুলগুলো পরিপাটি করে নিয়ো তাড়াতাড়ি, যেকোনো ছেলে তোমার এই রূপ দেখলে পাগল হয়ে যাবে তো।”

সিনথি আষাঢ়ের কথায় লজ্জা পেয়ে সলজ্জ হাসলো।

আষাঢ় ভেবেছিল মেয়েটা তার এমন কথায় রাগবে। রাগের ছায়া দেখতে পাবে মুখে। কিন্তু মেয়েটার লজ্জা পাওয়ার বিষয়টা আরও ভালো লাগলো তার। বলে ফেললো,
“লজ্জা পেলেও তোমাকে দারুণ সুন্দর লাগে।”

সিনথি আরও লজ্জায় পড়লো। চোখ তুলে তাকাতে পর্যন্ত পারলো না।
আষাঢ় মনে মনে হাসলো। সিনথির সলজ্জ মুখটা ভালো করে দেখে বললো,
“তৈরি হয়ে থেকো আমার হবু বউ। তোমাকে বাইরে ব্রেকফাস্ট করাতে নিয়ে যাব আমি। আর বেশি সাজার দরকার নেই। তোমার বিনা সাজপূর্ণ রূপ দেখেই আমি মুগ্ধ, বেশি সাজলে মাথা ঠিক নাও থাকতে পারে।”

আষাঢ় আর এখানে থেকে মেয়েটার লজ্জা বাড়াতে চাইলো না, ঠোঁটে মুচকি হাসি ধরে রেখে বেরিয়ে গেল।
কারিব দাঁড়িয়ে ছিল দরজার বাইরে। আষাঢ় বের হতেই সে বললো,
“আপনার ব্যাপার আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। কালকেই তো বললেন, এটা ঠিক হয়নি। তাহলে আজকে আবার এরকম করছেন কেন?”

আষাঢ় সিঁড়ির দিকে যেতে যেতে নিশ্চিন্ত সুরে উত্তর দিলো,
“আমার যে হিস্ট্রি, তাতে কোনো মেয়ে আমাকে সহজে বিয়ে করবে না কারিব। তোমার কী মনে হয়? এই মেয়ে যদি আমার গার্লফ্রেন্ড হিস্ট্রি জানে বিয়ে করবে আমায়? উহু, কিছুতেই না। আমার ব্যাপারে সবটা জেনেশুনে একমাত্র নোয়ানাই নিঃসন্দেহে ভালোবাসতে পারে আমায়। কারণ, সে জানে, শুধু তার প্রতিই আমার ভালোবাসাটা প্রকৃত। তাই অন্য সবার ক্ষেত্রে এটা ডিফিকাল্ট। এ মেয়ে আমার হিস্ট্রি জানলে আমাকে বিয়ে করার বদলে, আজই ইন্ডিয়া ব্যাক করবে।”

আষাঢ়ের ঠোঁটে বাঁকা হাসি দেখতে পেল কারিব। যা বোঝার বুঝে নিলো সে। বললো,
“মেয়েটা যদি মামার কাছে বলে বড়ো কোনো ঝামেলা লাগিয়ে দেয়? আপনি তো চেনেন আপনার আব্বুকে। শ্রাবণ ভাই তো তেজ্যপুত্র হওয়া থেকে রেহাই পেয়েছে বিয়েটা করে। কিন্তু আপনি কী করবেন? আপনার ক্ষেত্রে বিয়ের মতো কোনো অপশন না’ও রাখতে পারে।”

“মোবারক কারিব! আমাকে তেজ্যপুত্র করে দিলে আমার ভাগের সম্পত্তিটা নিশ্চয়ই আব্বু তোমার নামেই করে দেবে। তোমার যদি দয়া-টয়া হয় তাহলে আবার সম্পত্তিটা আমার নামে উইল করে দিয়ো।”
কথাটা শেষ করে ফিক করে হেসে ফেললো আষাঢ়।

“সিরিয়াস মুহূর্তে আপনি মজা করছেন? আমার আসলেই টেনশন হচ্ছে।”

“ডোন্ট ও্যরি, মেয়েটা কিছুটা বোকা ধরণের। বড়ো কোনো ঝামেলা হবে না আশা করছি। একটু-আধটু ঝামেলা না হলে ব্যাপারটা সলভ হবে কী করে?…তোমার টিউলিপ ভাবির খবর কী? জ্বর কি এখনও আছে তার?”

কাল রাতে কারিব সবটাই জেনেছে নোয়ানা আর আষাঢ়ের ব্যাপারে। আষাঢ় আর নোয়ানার আগে কোথায়, কীভাবে, কখন, কীরকম দেখা হয়েছে সব। এমনটা হতে পারে আশা করেনি কারিব। আষাঢ় নোয়ানার সাথে আমেরিকা থাকতেই পরিচিত। নোয়ানা আমেরিকা ছিল! কিন্তু কীভাবে কী সম্ভব বুঝতে পারছে না। কালকে রাতে আষাঢ়ের কাছ থেকে ওসব জানার পর আজ ভোরে মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় কবির সাহেবকে জিজ্ঞেস করেছিল,
‘ইদ্রিস খান কি আমেরিকা গিয়েছিল কখনো?’ আষাঢ়ই জিজ্ঞেস করতে বলেছিল এটা। নিজেরও আগ্রহ ছিল। কবির সাহেব বলেছেন, না, ইদ্রিস খান আমেরিকা যায়নি কখনো। আর হঠাৎ করে এমন প্রশ্ন করার মানেও জানতে চাইছিলেন। কারিব প্রশ্নটা এড়িয়ে গেছে কোনো রকম। এমনিই জানতে চেয়েছে এমন একটা ভাব প্রকাশ করেছে। আষাঢ়ের পাশাপাশি এখন সেও খুব চিন্তিত নোয়ানার ব্যাপারটা নিয়ে। তার মনে হচ্ছে আষাঢ়ের ধারণাই সত্যি। নোয়ানার বায়োডাটা হাতে পেলেই সবটা খোলাসা হবে। এর আগেও খোলাসা করা যায়, কিন্তু আষাঢ় বলেছে এ নিয়ে কোনো মানুষের মনে প্রশ্ন ঢুকাবে না। সবটা আমি-ই দেখবো। বাস, সেও আষাঢ়ের মতো ধৈর্য ধরে সবটা জানার কৌতূহলে আছে।

“টিউলিপ ভাবি এখন প্রায় সুস্থ। কাল থেকে ভার্সিটি যাওয়া শুরু করবেন বোধহয়।”

আষাঢ় কালকে কারিবকে নোয়ানাকে ‘টিউলিপ ভাবি’ বলে সম্মোধন করতে বলেছে। সেজন্য কারিব নোয়ানাকে টিউলিপ ভাবি বলেই সম্মোধন করছে।

“বাড়িতে আমার হবু বউ এসেছে এই খবরটা নিশ্চয়ই এখনও নোয়ানার কাছে অজ্ঞাত নেই। ভাবি কাল সন্ধ্যা থেকে ও বাড়িতে, কথায় কথায় জানিয়ে দিয়েছে নিশ্চয়ই। আর খবরটা পাওয়ার পর নিশ্চয়ই নোয়ানার হৃদয়ে দহন শুরু হয়েছে এখন। হোক। একটু-আধটু দগ্ধ হোক তার হৃদয়। পুরোটা পুড়ে যাওয়ার আগে পানি ঢেলে আগুন নিভিয়ে দেবো। তারপর মেরামত করে আবার তার হৃদয়ের ক্ষত সারবো।”

_________________

“আমার জীবন পুরো ধ্বংস হয়ে গেল নোয়ানা, পুরো ধ্বংস! বিয়েটা করা কী পরিমাণ ভুল হয়েছে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি আমি। ইদানিং নিজের মাঝে বউ বউ একটা ফিল পাই। শ্রাবণের সাথে রুমকিকে একদম সহ্য হয় না আমার। রুমকির সাথে তাকে কথা বলতে দেখলে রাগে গা জ্বলে যায়, সাথে হৃদয়টাও পুড়ে।”
আফসোস, রাগ, কষ্ট তিনটা সুরই ফুঁটে উঠলো মিহিকের কথায়। রুমে এখন শুধু সে আর নোয়ানা। এমন সুযোগে নোয়ানার কাছে মনের দুঃখ প্রকাশ করছে সে।

নোয়ানা বললো,
“রুমকির সাথে তাকে সহ্য করতে পারো না এটা কেন বলছো না তাকে? রুমকির সাথে কেন কথা বলতে দিচ্ছ তাকে? কোনো স্ত্রীই এটা সহ্য করতে পারে না, তুমি কেন সহ্য করবে? তাকে নিষেধ করো। কষ্টটা নিজে নিজে লালন না করে তার কাছে বলে দাও। বলে দিলে তো কিছুটা…”

“কী বলবো আমি? রুমকিকে যে সে ভালোবাসে সেটা তো আমি বিয়ের আগে থেকেই জানতাম। রুমকিকে ভালোবাসে বলে রুমকির বিয়ে পর্যন্ত ভেঙে দিয়েছে সে, আমার সাথে দেখা করেও বলেছিল রুমকিকে ভালোবাসে। রুমকির প্রতি তার ভালোবাসা অনেক আগের। এখন আমি কী করে বলবো তাকে যে, আপনি রুমকির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করুন? এটা বলার মুখ যে আমার নেই!”

“তাহলে কী করতে চাইছো তুমি? এরকম চুপ করে থাকলে তো সে শুধরাবে না। তাকে কিছু বলো, নয়তো তার মা-বাবার কাছে বলে দাও তার ঘটনা। লায়লা আন্টি না কি তোমাকে বলেছিল, যদি এই বিয়ে নিয়ে তোমাকে আফসোস করতে হয়, তাহলে এর শাস্তি সে নিজে মাথা পেতে নেবে? তো তাদের কাছে বলে দাও। চুপ করে থাকলে তো কোনো গতিই হবে না। জীবন তো আর এভাবে চলতে পারে না।”

“তাদের কাছে বলে দিলে বড়ো একটা ঝামেলা হবে। আমি চাইছি আরেকটু ধৈর্য ধরে দেখবো। এর মাঝেও যদি শ্রাবণের কোনো পরিবর্তন না হয়, তাহলে সত্যি সত্যি বলে দেবো শ্বশুর-শাশুড়ির কাছে। এটা আসলেই সহ্য করতে পারছি না আমি।”

রুমের দরজায় তিন্নির পুলকিত মুখ দেখা গেল।
“আপু, দুলাভাই এসেছে।”

“কে এসেছে?”

“দুলাভাই।”

নোয়ানা বলে উঠলো,
“ওই দেখো, বউকে ছাড়া সারা রাত একা ছিল বলে বর আজ শ্বশুর বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়েছে। সম্পর্কটা খাট আর ফ্লোরে থাকলে হবে কী, মনের টান আছে কিন্তু।”

মিহিক চোখ গরম করলো। নোয়ানা হাসলো।

লিভিং রুমে এসে সত্যি সত্যি শ্রাবণকে বসা দেখতে পেল মিহিক। হাফিজা কথা বলছিলেন, মিহিককে দেখে কথার সমাপ্তি ঘটালেন। উঠে এসে বললেন,
“কথা বল, আমি কিছু নাস্তা নিয়ে আসছি।”

হাফিজা চলে গেলেন। মিহিক কাঠ গলায় জানতে চাইলো,
“আপনি এখানে এসেছেন কেন?”

শ্রাবণ এসেছে মূলত মিহিকের জন্যই। কাল সারা রাত মিহিক বাবার বাড়িতে ছিল, সকালেও বাড়ি ফেরার নাম নেয়নি। আজকেও ফিরবে না বলে তার ধারণা। সে বিষয়েই খোঁজ নিতে এসেছে। কিন্তু বাইরে তো এটা প্রকাশ করতে পারবে না। বললো,
“নোয়ানাকে দেখতে এসেছি। ওর জ্বর কেমন? সুস্থ হয়েছে?”

নোয়ানা তখনও লিভিং রুমে এসে পৌঁছয়নি, এসে সালাম জানালো শ্রাবণকে। শ্রাবণ সালামের উত্তর দিয়ে বললো,
“জ্বর কেমন এখন?”

“আলহামদুলিল্লাহ! জ্বর নেই এখন।”

শ্রাবণ হেসে নিজের অভিব্যক্তি জানালো। নোয়ানা মিহিকের কঠিন মুখখানি দেখলো একবার। কাল যে শ্রাবণের সাথে ঝগড়া করে এখানে থেকেছে মিহিক, সেটা আর কেউ না জানলেও সে জানে। বললো,
“আপনি সত্যিই আমাকে দেখতে এসেছেন? না কি নিজের বউকে দেখতে এসেছেন?”

নোয়ানার প্রশ্নে ঘাবড়ে যায় শ্রাবণ। কিন্তু ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে ঢেকে দেয় সেটা। তার ধারণা বাকি সবার মতো নোয়ানাও জানে তাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক। মিহিক যে নোয়ানাকে সব বলে দিয়েছে সেটা তার অজানা। বললো,
“বউ তো সব সময় আমার কাছেই থাকবে। তাকে দেখার জন্য তো আর আলাদা করে এখানে আসতে হবে না। তোমাকে দেখতেই এসেছি।”

হাসলো নোয়ানা। শ্রাবণ যে তাকে দেখতে আসেনি এটা ভালো করেই বুঝতে পারছে সে। ভালো লাগলো ব্যাপারটা।
মিহিকও একটু একটু বোঝার দ্বারপ্রান্তে আছে। তিন্নি সোফার উপর বসে বললো,
“শুনলাম, আপনাদের বাড়িতে না কি মেহমান এসেছে? আপনার ভাইয়ের হবু বউ? আপনার ভাইয়েরও না কি তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যাবে?”

তিন্নির প্রশ্ন শুনে নোয়ানার মুখ থেকে হাস্যভাব সরে গেল। আঁধার নামলো যেন আননে। বুকের ভিতর এক চাপা কষ্ট অনুভব হয়। চিনচিনে এক ব্যথা। আষাঢ়ের হবু বউ এসেছে সেটা কাল মিহিক আসার পরপরই জেনেছে। মিহিকের আবার অতিথিতে এলার্জি আছে। বাড়িতে মেহমান আসলে কেমন একটা অস্বস্তি হয় তার। নিজের মতো করে সময় কাটাতে পারে না। তাই কাল এসেই নিজের অস্বস্তির ঝুড়ি খুলে বসেছিল। তখন কথায় কথায় আষাঢ়ের হবু বউয়ের কথাও জানতে পারলো।

শ্রাবণ মিহিকের দিকে তাকিয়ে তিন্নিকে বললো,
“তোমার বোন বলেছে?”

তিন্নি মাথা নাড়লো।

“হ্যাঁ, আষাঢ়েরও খুব শীঘ্রই বিয়ে হবে। দুজনের দুজনকে পছন্দ হলে বিয়েটা কনফার্ম।”

শ্রাবণ কিছু সময় থাকলো। হাফিজা নাস্তা দিলেন। শ্রাবণের খাওয়ার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু দেওয়ার পর না খেয়েও তো পারা যায় না। এটা আবার তার শ্বশুর বাড়ি। খেলো অল্প পরিমাণ। যাওয়ার সময় দরজা দিয়ে নামাকালীন হঠাৎ আবার ঘুরে মিহিককে প্রশ্ন করলো,
“আপনি কি আজও বাড়ি ফিরবেন না?”
এটাই জানার ছিল শ্রাবণের।

মিহিক প্রশ্নটা শুনে খুশি হলো। মনে হলো শ্রাবণ তাকে একটু হলেও ভাবা শুরু করেছে। নোয়ানা আর তিন্নির দিকে একবার তাকিয়ে শ্রাবণের কাছে গেল সে। বেশ কঠিনভাবে বললো,
“আমি না গেলে আপনি খুশি হবেন?”

শ্রাবণ যত্নশীল ভাবেই প্রশ্নটা করেছিল, কিন্তু মিহিকের এমন কথায় খারাপ লাগলো তার। সেও কঠিনভাবে বললো,
“আজ বিকেলেই বাড়ি ফিরবেন। এরকম করে বাবার বাড়িতে এসে থাকলে, আরও বেশি সন্দেহ করবে সবাই।”
শেষের কথাটা আস্তে বললো।

মিহিক বুঝতে পারলো শ্রাবণ শেষের কথাটা অহেতুক ইউজ করেছে। বুঝতে পেরেও বললো,
“আপনার কথাটা শুনে ভালো লেগেছিল, কিন্তু শেষের কথাটা শুনে ভালো লাগা রইল না। সন্দেহ করবে বলে আপনি আমাকে বাড়ি ফিরতে বলছেন, নয়তো আমি বাড়ি ফিরলাম, কি ফিরলাম না এ নিয়ে আপনার মাথা ব্যথা নেই, তাই তো?”

“আপনি সব সময় বেশি বোঝেন।”

“আর আপনি সব সময় বেশি বলেন। শেষের কথাটা না বললেই তো হতো।”

শ্রাবণ আর বলার ভাষা পেল না। চুপসে গেল একেবারে। মুখ বন্ধ রেখেই চলে যায় সে। নোয়ানা কাছে এসে নিচু স্বরে বললো,
“মনে তো হচ্ছে বউয়ের দিকে একটু একটু করে মনোযোগ ঘুরছে।”

“ওনাকে তুই চিনিস না, উনি হলেন শয়তানের ছোট ভাই।”

“কিন্তু উনি তো বড়ো ভাই।”

নোয়ানার কথায় হেসে ফেললো মিহিক। সাথে নোয়ানাও হাসলো।

________________

আষাঢ় বেরিয়েছে সিনথিকে নিয়ে। ঘড়ি এখন দশটা বারো ছুঁই ছুঁই। তাড়াতাড়ি বের হবে ভেবেও লেট করেই বের হলো তারা। লেট অবশ্য সিনথি করেছে। গাড়িতে শুধু সে আর সিনথি। কারিবকে ছাড়া এই প্রথম বাইরে বের হলো আষাঢ়। এবার বাংলাদেশ এসে গাড়িও ড্রাইভ করছে প্রথম। গাড়িতে ওঠার পর থেকে মেয়েটা মোবাইল নিয়ে পড়ে আছে। আষাঢ় নিজের দিকে মনোযোগ আনার চেষ্টায় বললো,
“আমাদের দুজনের ব্যাপারে যেহেতু একটা বিয়ে বিয়ে ভাব জড়িয়ে গেছে, সেহেতু আমি মনে করি কিছু বিষয় আমাদের ক্লিয়ার হয়ে নেওয়া দরকার।”

মেয়েটার মনোযোগ খুব একটা আকর্ষণ করা গেল না। সে মোবাইলে ব্যস্ত থেকেই নির্বিকার ভাবে বললো,
“যা বলতে চাও বলো, বা যা জানতে চাও।”

“বয়স কত তোমার?”

“বয়সটা কি বেশি ইম্পরট্যান্ট?”

মেয়েটার কথা বলার ধরণ আষাঢ়ের ভালো লাগছে না। কেমন কাঠ কাঠ গলায় উত্তর দিচ্ছে। ভেবেছিল মেয়েটা বোকা ধরণের, কিন্তু এখন ধারণায় ভুল হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। বললো,
“যাকে বিয়ে করবো তার বয়স জানা একটা ইম্পরট্যান্ট বিষয়ই বলা চলে।”

“তেইশ।”

“তার মানে দুই বছরের জুনিয়র আমার। পারফেক্ট একেবারে।”

“তিন বছরের ব্যবধান হলে পারফেক্ট হতো বলে আমার ধারণা। তুমি আরও বড়ো হলে ভালো হতো।”

“পঁচিশ বছরের যুবক বিয়ে করতে অসুবিধা তোমার? তুমি পঁয়ত্রিশ বছরের যুবতী হলেও কিন্তু আমার আপত্তি ছিল না। যাই হোক, কী করো তুমি?”

“পড়ালেখার পাশাপাশি একটা বিউটি পার্লার চালাই।”

“ও, ভালো ব্যাপার।”

“আমার কাছে ভালো লাগে না। টাকা ইনকাম হয় বলে করি। বিয়ের পর কোনো কাজ করবো না আমি, শুধু বাড়িতে বসে থাকবো।”

“কিন্তু আমি তো চাইতাম আমার ওয়াইফ চাকরিজীবী হোক।”

“ওসব আমার দ্বারা সম্ভব নয়, সুতরাং ভুলে যাও।”
মেয়েটার স্পষ্ট জবাব একেবারে। আষাঢ়ের মোটেই ভালো লাগছে না যা।
বললো,
“বয়ফ্রেন্ড আছে তোমার?”

“না। আর ছিলও না কোনোদিন। ইন্ডিয়ান কোনো ছেলেদের পছন্দ হয় না বলে কখনও কারো গার্লফ্রেন্ড খেতাব পাইনি।”
মেয়েটার এ উত্তরও একেবারে সফট।

আষাঢ় গলায় কেমন ভাব ধরে বললো,
“বয়ফ্রেন্ড নেই তোমার?”
প্রশ্নটা এমন ভাবে করলো যেন বয়ফ্রেন্ড না থাকার মতো আশ্চর্যকর বিষয় আর নেই।

“না, নেই। এমন করে বলছো কেন? তোমার কত গার্লফ্রেন্ড আছে? দুইশ-তিনশ?”

আষাঢ় হাসলো। মেয়েটার সকল ফুটন্ত বুলি এখনই নিভে যাবে। বড়ো করে এক নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো সে। তারপর বলতে শুরু করলো,
“দশ বছর বয়স থেকে আমি আমেরিকাতে বড়ো। বাংলাদেশের কালচারে বেড়ে উঠিনি বললেই চলে। আমার রক্তে রক্তে আমেরিকার কালচার মিশে আছে। শুধু একটা কালচার আমার সাথে জড়িত নয়, এ বাদে সবকিছু আমার অভ্যস্ত। উনিশ বছর বয়সে সবচেয়ে খারাপ একটা ভাইরাসে ধরেছিল আমায়। যেটা এখনও পিছু ছাড়েনি। সেই খারাপ ভাইরাসটি কী, জানো? সেটা হলো মেয়ে। উনিশ বছর বয়স থেকেই আমি মেয়েতে পাগল হয়ে উঠেছি। পাগল মানে সেরকম পাগল নয়। কথা-বার্তা, ঘোরা-ফেরা, দেখা-সাক্ষাৎ দ্যাটস অল। এর বেশি কিছু নয়। বেশি কিছু না হলেও, এটা খুব খারাপ একটা বিষয় কিন্তু। বিচ্ছিরি খুব। আজ পর্যন্ত আমার কতগুলো গার্লফ্রেন্ড ছিল তা গুনে শেষ করা যাবে না। আমার কাছে গার্লফ্রেন্ড বিষয়টিতে আবার দুটো ভাগ রয়েছে। একটা হলো- স্বল্প সাময়িক গার্লফ্রেন্ড, আরেকটি হলো- স্থায়ী গার্লফ্রেন্ড। এই স্বল্প সাময়িক গার্লফ্রেন্ডে যে কত মেয়ের আসা যাওয়া হয়েছে তার হিসেব নেই। তবে স্থায়ী গার্লফ্রেন্ডের ক্ষেত্রটি ছোট। এটাতে মাত্র পাঁচজন সদস্য। এরা প্রত্যেকে আমার ভীষণ প্রিয়। বয়ফ্রেন্ড হিসেবে আমি খুব একটা ভালো নই, তবুও এরা কেউ আমাকে ছেড়ে যায়নি। চাই যেন কেউ না যায়। কারণ, ছেড়ে এলে আমি আসবো, তাদের ছেড়ে যাওয়া আমার মোটেই পছন্দ হবে না। আমেরিকাতে আমি সব সময় গার্লফ্রেন্ড নিয়েই থাকি। কেউ এই স্বল্প সাময়িক গার্লফ্রেন্ড হলে, এই আবার শেষ। নিত্য নতুন স্বল্প সাময়িক গার্লফ্রেন্ড বানানো আমার অভ্যাস। বাংলাদেশে এই অভ্যাসটা খুব একটা কাজ করে না, কিন্তু আমেরিকাতে অভ্যাসটা পাগলের মতো। বুঝতে পারছো আমি কী বলছি?”
আষাঢ় বাড়িয়ে বাড়িয়েও বললো কিছু।
পাশ ফিরে সিনথির দিকে তাকালো।

সিনথি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আষাঢ় মনে মনে বিজয়ী হাসে। চোখ সরিয়ে এনে বললো,
“বুঝতে পারছি আমার কথা তোমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য ঠেকছে না, কিন্তু এটা চিরন্তন সত্য। আমি চাইনি আমার ব্যাপারে কোনো কিছু লুকায়িত থাকুক। নিজের সম্পর্কে এত বড়ো একটা কাহিনী লুকিয়ে আমি বিয়ে করবো, এমন কাপুরুষ আমি নই। যাতে কোনো ভুল বোঝাবুঝি না হয় এজন্য ডিরেক্ট সবকিছু জানিয়ে দিলাম তোমায়। এখন যদি তোমার মনে হয় আমার মতো একটা ছেলেকে তুমি বিয়ে করবে না, তাহলে কোনো সমস্যা নেই। বিয়ে করবে কি করবে না এটা তোমার একান্ত নিজ ব্যাপার। তুমি এটা তোমার ফ্যামিলিকে জানাও। এমনকি আমার আম্মু-আব্বুর কাছে আমার হিস্ট্রি তুলে ধরেও তুমি বিয়েতে অস্বীকৃতি জানাতে পারো। তুম…”

“অস্বীকৃতি কেন জানাবো?” আষাঢ়ের কথার মাঝে শোনা যায় সিনথির শীতল কণ্ঠ।
আষাঢ় সিনথির দিকে তাকালো। সিনথির ঠোঁটে মুচকি হাসি। চেহারা স্বাভাবিক। আষাঢ়ের কপালে ভাঁজ পড়ে।

“এতক্ষণ যা বললে নিজের সম্পর্কে, তা সব কিছুই তো স্বাভাবিক।”

আষাঢ়ের মনে হলো সে শক্তি হারাচ্ছে। গাড়ি ড্রাইভ করার শক্তি আর তার নেই। পার্কিং সাইডে গাড়ি নিয়ে গাড়ি পার্ক করলো সে। সিনথির দিকে তাকালো অগাধ বিস্ময়ে।

সিনথি বললো,
“হুম এসব তো স্বাভাবিক ব্যাপার। আজকাল ছেলেদের এত এত গার্লফ্রেন্ড থাকতেই পারে, কোনো ব্যাপার না। এই এতটুকু সামান্য ব্যাপারের জন্য আমি বিয়েতে অস্বীকৃতি জানাবো এর তো প্রশ্নই আসে না। আর সবচেয়ে বড়ো কথা হলো, তোমাকে প্রথম দেখাতেই ভালো লেগেছিল আমার। যে ভালো লাগাটা সব ছেলেদের প্রতি আসে না। তোমার মাঝে কী লুকায়িত আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। আমি তোমাকে যত দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। নিজের সম্পর্কে বলা তোমার এমন অকপটে কথাগুলো শুনে তো মনে হচ্ছে আমি তোমার প্রেমে পড়ে গেছি। এত সুন্দর কেন তুমি বলো তো?”

আষাঢ় বাকরুদ্ধ। এ মেয়ে বলছে কী এসব! আষাঢ় কোনো রকম বলতে সক্ষম হলো,
“আমি যা বলেছি তাতে তুমি অবাক হওনি? খারাপ লাগেনি তোমার? আমার প্রতি ঘৃণা হয়নি?”

“অবশ্যই না। যাকে বিয়ে করবো তার প্রতি ঘৃণা কেন হবে? তুমি আমার হৃদয়টা কেড়ে নিয়েছো আষাঢ়। তোমার এসব ক্ষুদ্র খুঁতগুলো আমি গণনায়ও ধরবো না। তোমাকে আমার মনে লেগে গেছে। বিয়ে না করে থাকা যাবে না তোমায়। আর তোমার এই গার্লফ্রেন্ড বিষয়টাতে আমার খারাপ লাগার বদলে, বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছে। অবশেষে ভিন্ন ধরণের মনের মতো একটা মানুষ পেলাম। চিন্তা করো না, তোমার আর আমার বিয়েটা হয়ে যাবে।”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here