দৃষ্টির অগোচরে পর্বঃঅন্তিম| কাছে আসার গল্প

0
5193

দৃষ্টির অগোচরে পর্বঃঅন্তিম
#লেখকঃরনি হাসান

নিলয় ভয়ে ভয়ে নুসরাতকে বাসায় নিয়ে যায়। কিন্তু কথায় আছে নাহ, যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হই। যে কথার ভয় নিলয়
মনে মনে পাচ্ছিলো আদিবা সে কথায় নুসরাত আর নিলয়কে এক সঙ্গে দেখে বলে উঠে

–” অফিসের মধ্যে আপনার জৈবিক চাহিদা মিটিয়ে মন ভরে না” তাই না আজ সোজা বাসায় এনাকে নিয়ে চলে আসেন-

উপস্থিত নিলয় নুসরাত কথাটি শুনার জন্য মোটুও প্রস্তুত ছিলো না। নিলয় তো আদিবার কথাতে প্রচন্ডে রেগে গেলো। কিন্তু কিছু বলতে পারলো না। হাজার হক ভালোবাসার বউ তো। এত সহজে চোটে গেলে হীতে বিপরীত কিছু হয়ে যেতে পারে। এসব কিছু ভেবেই নিলয় আদিবার পাশ কাটিয়ে রেগে চলে গেলো। এইদিকে নুসরাত কথাটি শুনার পর আদো কান্না প্রায়। যদি ও সে পরিস্থিতির স্বীকার। তারপর ও নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রেখে বলে উঠে-

–“নাহ জেনে শুনে এভাবে ভুল ভাববেন না প্লিজ –

নুসরাতের কথায় আদিবা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠার উপক্রম প্রায়। অনেকটাই রাগ নিয়ে বলে

–” ছি ছি মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের সংসারে আগুন লাগাতে আপনার বিবেকে একটুও বাধলো না। ও না হই পুরুষ মানুষ জৈবিক চাহিদার শেষ নেই। পরনারী দেহ হলেই চলে। কিন্তু আপনি তো একটা মেয়ে” আপনার মানসম্মান বলতে কিছু নেই-

–” ভাবি আপনার মনে কি চলছে তা খুব ভালোভাবেই আচ করতে পারছি। কিন্তু আমাদের দৃষ্টির অগোচরে অনেক কিছুই হয়ে থাকে তা আমরা কেউ যাচাই বাছাই না করে। চোখের সামান্য তম ভুল দেখাকেই প্রধান্য দিয়ে থাকি। সেদিন আপনি যা দেখেছেন তা শুধু আপনাকে ফোকাস করা জন্যই এসব করা হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে নিলয় সেদিন অজ্ঞান ছিলো।

নুসরাতের এমন রহস্যময় কথা শুনে আদিবা বলে উঠে “আপনি কি বলতে চাচ্ছেন একটু ক্লিয়ারলি ভাবে বলুন প্লিজ

— আপনি তানবীরকে চিনেন_?

তানবীরের কথা শুনে আদিবা আর ও রেগে গিয়ে বলে উঠে “ও তো আস্ত একটা শয়তান কলেজ আমাকে অনেক বিরক্ত করত। কিন্তু আপনি ওকে কীভাবে চিনেন_?

–” বলছি শুনুন তাহলে

নুসরাত এই বলে সমস্ত ঘটনাই আদিবাকে বলে দেই। এসব ঘটনা শুনার পর আদিবার ভুলটা ভেঙে যায়। এবং অনুশোচনায় বলে উঠে

–“আমার দৃষ্টির অগোচরে এতকিছু হয়েছে অথচ আমি কিছুই বুঝতে পারেনি উল্টো আমার স্বামীকে অবিশ্বাস করে আসছি। বোন তুমি কষ্ট পেয়ে না। তোমাকে অনেক বাজে কথা বলে ফেলছি

–” না না ঠিকই আছে। আপনার জায়গায় অন্য কেউ হলে এমনই আচরণ করত (হেসে)

নুসরাত আদিবার সঙ্গে কিছুক্ষন কথা বলে তার বাসায় চলে গেলো। এবার আদিবা পুরো বিষয়টা শুনে নিজেই নিজেই মাঝে অনুশোচনা কাছ করছে” ভুল বুঝার কারনে কতই নাহ কটুকথা তার স্বামীকে বলেছে। আনমনে ভেবে আদিবা মন খারাপ নিয়ে রুমে গিয়ে লক্ষ্য করে নিলয় ফোন ঘাটতে ব্যস্ত। আদিবা কাচুমাচু করেই নিলয়ের পাশে বসে পড়ে। কিছুক্ষন নিরবতার পর আদিবা বলে উঠে

–” সরি আমি আসলে ব্যাপারটা বুঝতে পারেনি
–” It’s okay ( ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে)
–” লান্স করবা নাহ সময় তো অনেক হয়ে গেলো
–” খিদে নেই (ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে)

আদিবা এবার বুঝতে পারলো নিলয় তার প্রতি অনেক রাগ অভিমান নিয়ে আছে যার দারুণ ক্ষুধার্ত থাকার পরও ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে না করছে। এইদিকে আদিবার ও অনেক খারাপ লাগছে নিলয়ের রাগ অভিমান দেখে মনে অনুশোচনার শিহরণ বয়ে যাচ্ছে আদিবার। নিলয় বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে কোনো কিছু না বলে বের হচ্ছে দেখে আদিবা পিছন দিক বলে উঠে

–” কোথায় যাচ্ছো_?
–” যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই যাবো
–” হঠাৎ আমার সঙ্গে এমন বিহেব করছো কেন
–” নিশ্চুপ

নিলয় নিশ্চুপ হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। আর মনে মনে বলতে লাগলো। দুইটা দিন অনেক অবহেলা করেছো আমায়। কাছে ঘেঁষতে দাওনি এবার দেখো অবহেলা কাকে বলে-

উপরদিকে

আদিবা ভাবছে” ধ্যাৎ নুসরাত যদি বিষয়টা আগে সেয়ার করতো তাহলেই কোনো ঝামেলা হতো না। নিলয়কেও এত কষ্টের মাঝে পড়তে হতো না শুধু শুধু মিস বিহেব করে ফেললাম। এখন দেখছি ও আমায় কেমন জানি পাশ কাটিয়ে চলছে। ধ্যাৎ কিছুই ভালো লাগছে –

এইভাবে আদিবা তার ভুল বুঝতে পারে । কিন্তু নিলয় ও ভাব ধরে আদিবার সঙ্গে আগ বাড়িয়ে কথা বলে না। এবং কি ফোনেও কথা বলে না। আগে তো অফিস থেকেও সময় পেলেই ফোনে কথা বলত কিন্তু তা একবারে ভিন্ন। চলুন তাহলে এবার বর্তমানে ফিরা যাক

নিলয় অফিস শেষ করে রাতে রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে বাসায় চলে আসলো। দরজায় কলিং বেল বাজানোর মাত্রই আদিবা এসে দুরুত্বই দরজা খুলে দেই। নিলয় আদিবাকে দেখে অন্যদিকে তাকিয়ে রুমে চলে আসলো। আদিবা এবার ব্যাপারটাকে হজম করতে পারলো না রুমে গিয়ে বলে উঠলো

–” এইটা কি হলো _?
–” নিশ্চুপ
–” তুমি আমাকে দেখে অন্যদিকে তাকিয়ে চলে আসলে কেন
–” আমি একটা বিষয় বুঝতে পারছি না। ভালো মানুষ গুলা কেন যে চরিত্রহীন বদ লোকের সঙ্গে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে আসে আল্লাহ মালুম –

নিলয়ের কথার ধারন শুনে আদিবা খুব ভালো করেই বুঝতে পারে তার আগের কথাগুলো সে হজম করতে পারেনি। সে রাগ অভিমান থেকেই এসব বলছে। দেখে নিলয়ের রাগ অভিমান ভাঙানোর জন্য আদিবা বলে

–” আমার হাসবেন্ড মোটুও চরিত্রহীন বদ লোক না বুঝলেন (হেসে)
–” নিশ্চুপ –

নিলয়ের নিশচুপ থাকা দেখে আদিবা দুষ্টমি করে নিলয়ের কানের কাছে গিয়ে বলে

–” সরি ভুল বুঝে আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলছি। মাপ করে দিন প্লিজ
–” নিশ্চুপ (হয়ে আদিবাকে সরিয়ে কম্বল মুড়িয়ে চোখ বুঝে ফেললো নিলয়)

আদিবাও কম না তার স্বামীর রাগ ভাঙাবে তো ছাড়বে। প্রথমে কম্বলটা সরিয়ে পুরোটাই আদিবা নিয়ে নিলো। ভাবলো এই টপিক নিয়ে কিছুক্ষন দুষ্টমিষ্টি ঝগড়া করবে কিন্তু তা আর হলো না। নিলয়ের কম্বলের দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ফোন বের করে সে ফেসবুক ঘাটতে ব্যস্ত। আদিবা রেগে গিয়ে নিলয়ের হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নেই এবং বুকের উপর ঝুকে বলে উঠে

–“আপনি কি আমাকে এড়িয়ে চলছেন নাকি অবহেলা করছেন কোনটা বলুন তো
–” দুইটার থেকে একটাও নাহ।
–” তাহলে আমার সঙ্গে কথা বলতেছেন না কেন হুম
–“চরিত্রহীন বদলোকেরা কখনো ভালো মানুষদের সঙ্গে মিশে না। আর আপনি তো আমাকে চরিত্রহীন বদ লোক বলেই সম্বোধন করেছেন তাই চেষ্টা করছি আপনার থেকে নিজেকে একটু দুরে সরিয়ে নিই এই আর কি-

–” আপনাকে আমার কাছ থেকে একটুও দূরে যেতে দিবো না – (জড়িয়ে ধরে)
দেখো আদিবা এখন তুমি যত যাই কিছু বলো না কেন” সেদিনকার কথা কিন্তু আমি ভুলেনি

–“সরি বলছি তো, মাপ করে দাও প্লিজ
–” তুমি নিজেই বলছো যে আমার নোংরা হাত তোমাকে স্পর্শ যেন না করি। সুতরাং আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যে আমরা দুইজন, দুই রুমে থাকবো (পাম মেরে)

নিলয় কথাটি ফাজলামো করে বলতেই আদিবা সিরিয়াস হয়ে বলে উঠে

–” ফাজলামো করো নাতো ( আদিবা এই বলে নিলয়কে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে)

ফাজলামো না সত্যিই বলছি ( নিলয় এই বলে আদিবাকে সরিয়ে পাশের রুমে চলে যেতে লাগলো এইদিকে আদিবা ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো

–” এইটা কিন্তু ভালো হচ্ছে না (আদো কান্না হয়ে)

সেদিন তোমার কথা গুলো বলার আগে একবার ভাবা উচিত ছিল (নিলয় এই বলে পাশের রুমে আসলো)

আদিবার আদো কান্না চেহারা দেখে নিলয় তো মনে মনে মহাখুশি।খুশিতে গদগদ হয়ে কম্বল মুড়িয়ে চোখ বুঝে ফেলো কিছুক্ষন পর বুকে ভারি কিছু অনুভব করলো। চোখ মেলে তাকাতেই আদিবার কান্নামাখা চেহারা দেখে নিলয় বলে উঠে

–” কি ব্যাপার কান্না করছো কেন
–” তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না কষ্ট হচ্ছিলো তাই নিজেকে সংযত রাখতে না পেরে তোমার রুমেই চলে আসলাম
–” নিজের বেলা ১৬ আনা আর অন্যের বেলা কাচ কলা তাই না-

নিলয়ের কথায় আদিবা থতমত খেয়ে বলে উঠে

–” বুঝলাম না-
–” আমাকে ছাড়া একদিন ও তুমি থাকতে পারবে না বলছো। অথচ দুইটা দিন তো দিব্যিই আমাকে ছাড়া ছিলে
–” নিশ্চুপ
–” আজ আমাকে ছাড়া তোমার যেমন অনুভূতি হচ্ছে” আমার ও ঠিক একই অনুভূতি তখন হয়েছিলো তুমি তা বুঝতে পারেনি-

–” সরি আর এমন ভুল করবো না (কান্ন করে)
–” ঠিক তো (হেসে)
–” বলছি তো আর এমন ভুল করবো না (কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে রেগে)

আদিবার কান্না দেখে নিলয় পরম ভালোবাসায় আদিবাকে বুকে জড়িয়ে নেই আর ফাজলামোর গানের সুরে বলে

ও বল্টুর মা তুমি কান্না করো না। কান্না করলে পেত্নী লাগে ভালো লাগে না। (নিলয় একটু বলতেই আদিবা হেসে বলে উঠে

–” কি আমি বল্টুর মা (হেসে)
–” এখনো হওনি তবে হতে কতক্ষন হুম (দুষ্টমির হাসি দিয়ে)
–” যা দুষ্ট মুখে কিছুই আটকাই না। (লজ্জা মিশ্রিত হেসে)
–” আদিবা এখন কিন্তু আমাদের সত্যিই বল্টুকে দরকার
–” তুমি চুপ করবা নাকি মুখে টেপ লাগিয়ে দিবো
–” আ– (বলতেই আদিবা নিলয়ের মুখ চেপে ধরে বলে

–“চুপ অনেক হয়েছে এবার ঘুমিয়ে পড়ো (জড়িয়ে ধরে)
–” ওকে (নিরুপায় হয়ে)

__________ সমাপ্ত ____________

(গল্পটা আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন। খুব শীঘ্রই নতুন গল্পে আবারও দেখা হবে। আজ এই পযন্তই সমাপ্তি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here