#ভালোবেসে_থাকবো_পাশে?
#পর্বঃ_১৯
#লেখিকা_ইসরাত_জাহান_ইমা
তূর্য অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,, কী বললা তুমি! সারপ্রাইজ টা জঘন্য!
–হ্যাঁ অনেক জঘন্য ছিলো। এই দুইটা দিন আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি সেটা বুঝতে পারছেন আপনি?(আরিয়া)
— আরুপাখি বিশ্বাস করো এই দুইটা দিন আমিও তোমাকে কষ্ট দিয়ে ভালো ছিলাম না। তোমার আব্বু আম্মু কে ম্যানেজ করতে করতেই আমি হাঁপিয়ে গেছিলাম। আল্লাহ চেয়েছেন বলেই আমরা এক হচ্ছি। প্লিজ আরুপাখি রাগ করে থেকো না।(তূর্য)
–মিস্টার তূর্য একটা কথা জানেন কী নরম কাঁদা একবার পুড়ে যদি ইট হয়ে যায়, তারপর যতই পানি ঢালা হোক না কেন, তা আর গলে না বরং শক্তিশালী হয়। মানুষের মনও একই রকম, একবার কষ্ট পেলে এরপর শত আবেগেও তার কোন পরিবর্তন হয় না।আমার কষ্ট টা আপনি উপলব্ধি করতে পারলে এমন টা করতে পারতেন না৷ জানেন দুইটা দিন আমার অবস্থা কেমন হয়ছিলো। আপনি এতটা কষ্ট না দিলেও পারতেন। (আরিয়া)
— আরুপাখি প্লিজ দয়া করে এভাবে বলো না। আমিও তো তোমার সাথে কথা বলতে না পারায় কষ্টে ছিলাম। বিশ্বাস করো প্রতিটা মুহূর্তে তোমাকে মিস করেছি। খুব ভালোবাসি তোমায়। বলেই তূর্য আরিয়া জড়িয়ে ধরলো৷
আরিয়াও মুচকি হেসে তূর্য কে জড়িয়ে ধরে বলল, আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি। প্লিজ আমাকে আর কখনো কষ্ট দিয়েন না।
–আরুপাখি কথা দিচ্ছি আমি আর তোমাকে কষ্ট দিবো না। তুমি আমাকে আর ভুল বুঝো না প্লিজ।(তূর্য)
— বেটা বজ্জাত তুই তো সেদিনও কথা দিয়েছিলি আমাকে কষ্ট দিবি না৷ কিন্তু একটা সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য দুইদিন কাঁদায়ছিস আমায়। আমি কী তোরে এমনি এমনি ছেড়ে দিবো নাকি! মনে মনে কথা টা বলেই আরিয়া বাঁকা হাসি দিলো।
— কি ভাবছো আরুপাখি! কিছু বলছো না কেন?(তূর্য)
–কিছুই ভাবছি না!
— আরুপাখি তোমার সব রাগ অভিমান গুলো আমার উপর এসে আছড়ে পরুক। তোমার সব ব্যথা বেদনা গুলো আমার উপর ঝড় হয়ে আসুক। খুব অবাক হয়ে যাচ্ছো এই কেমন মানুষ যে কিনা সব কিছু নিজের মাঝে জড়িয়ে নিতে চায়। তাহলে শোন তুমি আমার সেই মানুষ যার ভালোবাসা গুলো আমার উপর এসে আছড়ে পরে। যার প্রতিটা সময়ে আমি জুড়ে রই যার ভালোবাসায় আমি রই তাই আমি চাই তার রাগ অভিমানে থাকতে। আমার কষ্ট গুলো যখন আকাশ ছুয়ে পরে তুমি আমাকে বুকে নিয়ে শক্তি জুগাও নিজেকে শক্ত করার সাহস দাও। সবাই যখন মুখ ফিরিয়ে নেয় তখন তুমি আমার পাশে থাকো। একটা মানুষ এতোটা ভালোবাসার পর তার সমস্ত ব্যথা বেদনা আমি হাসি মুখে নিতে পারি। প্রচণ্ডভাবে যখন ভেঙে পরবে তখন হাত বাড়ালে আমাকে পাবে। মিলিয়ে নিও। আমি তোমার সবটা জুড়ে থাকতে চাই। সে হোক তোমার ভালোবাসা কিংবা অভিমানে নয়তো বা অভিযোগে। মানছি আমি অন্যায় করেছি ক্ষমাও চাইছি। দয়া করে বিয়ে না করো না। ভীষণ ভালোবাসি তোমায়।(তূর্য)
__হয়ছে কষ্ট দিয়া এখন আর ভালোবাসা প্রকাশ করা লাগবে না। বাহিরে চলুন এখন। সবাই অপেক্ষা করছে।(আরিয়া)
— হুম চল।
সেদিন শুধু আরিয়াকে আংটি পড়িয়ে দিয়ে যায়। এক সপ্তাহ পর বিয়ে।
_____________
রাতে শিশির আহমেদ তূর্য উইথ আরিয়া আফনান গট এনগেজড দেখে রাতুল অবাক হয়ে যায়। রাতুল একটার পর একটা মেসেজ দিয়ে যাচ্ছে।
–রাতুল এসব কী? এত মেসেজ কেন দিচ্ছো?(আরিয়া)
–তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে তুমি আমাকে বলো নি কেন? আর তুমি আমাকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করবে মানে টা কী?(রাতুল)
— হোয়াট দা হ্যাল মিস্টার রাতুল! তুমি কে যে তোমাকে জিজ্ঞেস করে আমি আমার লাইফের সিদ্ধান্ত নিবো। আমার পার্সোনাল লাইফের ব্যাপারে তোমাকে কেন বলবো আমি? কে হও তুমি আমার? আমি কাকে বিয়ে করবো না করবো সেটা জাস্ট আমার ব্যাপার। তুমি নাক গলানোর কে?(আরিয়া)
— এসব কী বলছো আরু? আমি তোমার ভালোবাসা! আর আমিও তোমাকে ভালোবাসি। চলো না আমরা দূরে কোথাও পালিয়ে যায়। (রাতুল)
— ভালোবাসা! ভালোবাসো তুমি আমায়? ভালোবাসা মাই ফুট। তুমি যখন ফারিয়াকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলা তখন আমাকে জিজ্ঞেস করছিলা? সোজা বিয়ের কার্ড নিয়া হাজির হয়েছিলা? তখন কী এত প্রশ্ন করেছিলাম আমি? তোমার কাছে ভালোবাসার দাবি নিয়ে গেছিলাম নাকি তোমার বিয়েতে আপত্তি করছিলাম আমি? নিজের মতো থাকো। ফারিয়াকে ভালো রেখো। পালিয়ে যাবো তাও আবার তোমার মতো একটা বেইমান, প্রতারক গিরগিটির সাথে। সে সেকেন্ড সেকেন্ডে রুপ বদলায়। হাসালে তুমি আমায়। নেক্সট টাইমে আর আমাকে বিরক্ত করো না। আমাকে আমার মতো থাকতে দাও। দয়া করে আমার পার্সোনাল লাইফ ইনর্টারফেয়ার করার ট্রাই করো না। ভালো থেকো।(আরিয়া)
মেসেজ টা দিয়েই সোজা রাতুল কে ব্লক দিয়ে আরিয়া অফলাইন হয়ে ফোন অফ করে ঘুমিয়ে গেছে। অন্যদিকে তূর্য কল দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু বারবার ফোন অফ বলছে। সকালে বার বার ফোন দিচ্ছে। কিন্তু আরিয়ার ফোন অন থাকা সত্ত্বেও ফোন রিসিভ করছে না। তূর্য বুঝতে পারছে না আরিয়া তাকে ইগনোর কেন করছে। আর এইদিকে আরিয়ার হেঁসে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা। তূর্যের অবস্থার কথা ভেবেই তার দম ফাটানো হাসি আসছে।
তূর্য আর সহ্য করতে না পেরে আরিয়াদের বাসায় চলে আসে। কলিং বেল বাজাতেই আরিয়ার আম্মু দরজা খুলে দেয়!
আরে তূর্য বাবা তুমি এসময় আমাদের বাসায়?
— আসসালামু আলাইকুম শাশুড়ী মা! কেমন আছেন?
–আলহামদুলিল্লাহ! তুমি কেমন আছো?
–ভালো নেই শাশুড়ী মা। আপনার মেয়ে ভালো আর থাকতে দিল কই!(তূর্য)
–কেন ও আবার কী করলো?
–আর বলবেন না মা আপনার মেয়ে কাল রাত থেকে ফোন অফ করে রাখছে৷ সকালে ফোন অন করছে কিন্তু রিসিভ করছে না।
আরিয়ার আম্ম কিছু বলতে যাবে তখনি আরিয়ার আব্বু সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে বলে, আরে কী শুরু করছো তুমি? ছেলেটাকে আগে বসতে তো দিবে। তা না প্রশ্ন করেই যাচ্ছো।
— আসসালামু আলাইকুম বাবা। আমি বসব না আগে বলুন যে আরুপাখি কোথায়?(তূর্য)
–ওর রুমেই আছে।
–আচ্ছা আমি আসছি বলেই তূর্য আরিয়ার রুমের দিকে চলে গেলো।
_তূর্য আরিয়ার রুমে এসে দেখে আরিয়া ফোনে গেমস খেলছে। আরিয়া ভাবছে ওর ভাই এসেছে তাই আর কিছু বললো না। তূর্যও কোনো শব্দ না করে আরিয়ার হাত থেকে ফোন টা ছুঁ মেরে কেড়ে নিলো।
আরে সাদঁ ফোনটা…..
তাকিয়ে দেখে তার সামনে স্বয়ং তূর্য দাঁড়িয়ে আছে। আরিয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,, আপনি এখানে?
কেন অন্য কাউকে আশা করছিলে বুঝি?(তূর্য)
আরে না। কিন্তু আপনি এখানে কেন? কখন এলেন? আব্বু আম্মু দেখলে কী ভাববে বলুল তো!(আরিয়া)
আরে কুল আরুপাখি! ভুলে যাচ্ছো আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আংটি বদল হয়ে গেছে। আমরা এখন অর্ধেক স্বামী-স্ত্রী। আর আমি মা বাবাকে বলেই আসছি সো চাপ নিয়ো না।(তূর্য)
আরিয়া ছোট করে বলল,, “ওহ্”!
হুম। তা এখন বলো কাল রাতে তোমার ফোন কেন অফ ছিলো? আর সকাল থেকে ফোন দিচ্ছি রিসিভ করছো না কেন? আমার কষ্ট হয় তুমি বুঝো না?(তূর্য)
কষ্ট দেওয়ার জন্যই তো এমন টা করলাম। তা কেমন লাগলো মিস্টার তূর্য! খুব কষ্ট হইছিলো বুঝি? সেই দু’দিন আমারো খুব কষ্ট হইছিলো।(আরিয়া)
— কী?? তার মানে আপনি আমার বদলা নিয়েছেন!(তূর্য)
— জ্বি মিস্টার তূর্য।
আমাকে কষ্ট দেওয়ার শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে আরুপাখি! বলেই তূর্য আরিয়ার দিকে এগোতে লাগলো।
তূর্যকে সামনে এগোতে দেখে আরিয়া কিছুটা ভরকে গেলো। আরে আরে করছেন টা কী? আর এক পা এগিয়ে আসলে কিন্তু আমি দৌড় দিব।
কিন্তু তূর্য থামছে না। যেই আরিয়া দৌড় দিতে যাবে তখনি তূর্য আরিয়ার হাত ধরে এক টানে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। আরিয়া ভয়ে চোখ অফ করে ফেলল। তা দেখে তূর্য মুচকি হাসলো। তূর্য আরিয়ার কপালে চুমু দিয়ে একটু দূরে সরে আসলো। আরিয়া তখনও চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে।
আরুপাখি চোখ খুলো! আমি তো কিছুই করলাম না আর এখনি কাঁপাকাঁপি শুরু।(তূর্য)
ফট করে আরিয়া খোলে ফেলল। দেখলো তূর্য তার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। নিজের বোকামির কথা ভাবতেই লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল।
— যাও আর লজ্জা পেতে হবে না রেডি হয়ে আসো?(তূর্য)
–এখন রেডি হয়ে কোথায় যাবো?(আরিয়া)
–বেশি প্রশ্ন করো না। তাড়াতাড়ি রেডি হও।(তূর্য)
–আপনার সামনেই রেডি হবো নাকি?(আরিয়া)
–না না। আমি ড্রয়িং রুমে বসছি তুমি তাড়াতাড়ি আসো। বলেই তূর্য রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আরিয়া মুচকি হেসে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। গোলাপি থ্রি পিস আর গোলাপি রঙের ইয়ার রিং পড়েছে। চুল গুলা জুটি করে উপরে বাঁধা। ঠোঁটে হাল্কা লিপস্টিক। এতেই সুন্দর লাগছে। রেডি হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িং রুমে এসে দেখলো তূর্য, আহিল, ছোঁয়া, অন্তু আর সায়ান বসে আছে।
–এই তোরা আমাদের বাসায় কী করছিস?আর কখন এলি?(আরিয়া)
–বাবা রে এমনে কস কে? আমাদের ঠেকা পড়ে নি এসময় আসতে। নেহাৎ ভাইয়া আর আন্টি ফোন করে বলেছিলো তাই আসছি।(ছোঁয়া)
–ওলে বাবা লে এখন এই শিশুই তোদের কাছে বড় হয়ে গেলো? আমাকে না জানিয়ে আমার বিয়ের প্ল্যান করে ফেললি এখন আবার এই শিশুর কথা শুনে সবাই আমাকে না জানিয়ে আবার কী প্ল্যান করে আসলি শুনি?(আরিয়া)
–রাগ করে না আরু সোনা। আজ কেনো প্ল্যান করিনি। তোর মুড অফ তাই সবাই মিলে ঘুরতে যাবো।(আহিল)
— ওহ্ আচ্ছা তাই না। তা বল আগে কোথায় ঘুরতে যাবি?(আরিয়া)
— দূরে কোথাও যাবো না। কাছেই কোথাও। অনেক লেট হয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি চলো সবাই।(তূর্য)
____________________
এই জায়গায় আসবে সেটা আগে বললেই হতো। তবে প্লেস টা সুন্দর।(আরিয়া)
— হুম সেই জন্যই তো তোমাকে এখানে নিয়ে আসলাম আরুপাখি। আজ তোমাকেও খুব সুন্দর লাগছে। কথাটা কানে কানে বলল তূর্য।
আরিয়া লজ্জায় আর কিছু বলতে পারলো না।
কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করার পর সায়ান কোথা থেকে একগুচ্ছ কালো গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে ছোঁয়ার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলতে লাগলো___
ছোঁয়া তুমি আমার আঁধার রাতের এক টুকরো আলো হবে? যার জন্য আমার জীবনটা আলোকিত হবে। তুমি কী আমার হাসি মুখের কারণ হবে। তুমি কী আমার শত ভুলের বারণ হবে। কথা দিচ্ছি কখনো দেব না জল আসতে তোমার চোখে। দেবে বুঝতে তোমায় একটু অধিকার। কোন এক পড়ন্ত বিকেলে তোমার মাথায় একগুচ্ছ কালো গোলাপ গেঁথে বলবো ভালোবাসি। বৃষ্টির দিনে একগুচ্ছ কদম হাতে নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে আবার নতুন করে ভালোবাসি বলবো। প্লিজ দেবে একটু অধিকার!
সায়ানের দিকে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আরিয়া অবাক হয়ে বললো,, ভাইয়া তুমি তো দেখি পুরাই কবি হয়ে গেছো!
সায়ান মুচকি হেসে বলল এই একটু আরকি। ছোঁয়া প্লিজ আর ফিরিয়ে দিয়ো না। খুব ভালোবাসি তোমায়।
ছোঁয়া আর কিছু না ভেবে সায়ান কে উঠালো। ফুল গুলো হাতে নিয়ে সেও হাঁটু গেড়ে বসে বলতে লাগলো__
আমি আপনার আঁধার রাতের এক টুকরো আলো হবো। জানি না আমি আপনার জীবন আলোকিত করতে পারবো কি না তবে আমি সারাজীবন আপনার পাশে থাকবো। হুম আমি আপনার শত ভুলের বারণ হবো। আপনার হাত কখনো ছাড়বো না। আমিও ভালোবাসি আপনাকে। আমি আপনাকে #ভালোবেসে_থাকবো_পাশে ?
#চলবে…!!