মেঘলা মন-২,৩

0
837

মেঘলা মন-২,৩
তারানা তাসনুভা
পর্ব:২

আমি ভোরে উঠে তৈরি হয়ে বসে আছি। রাকিন যদি আসে। কিন্তু না! সকাল নয়টায় বড় চাচা এসে খবর দিল পুলিশ এসেছে। দাদী এসে বললেন,
• ভয় পাবিনা। যা সত্যি তাই বলবি।

আমার দাদাবাড়ি বিশাল জায়গা জুড়ে।
প্রথমে বিশাল লোহার গেট। তারপর ফুলবাগান। তারপর বাহির ঘর, যাকে আধুনিক ভাষায় ড্রয়িংরুম বা গেস্টরুম বলা যায় , তারপর আঙিনা, আঙিনায় ফল গাছ, মরিচ, লেবু, টমেটো আরো টুকটাক আনাজপাতির গাছ, তারপর তিনতলা বাসভবন, তার পেছনে বিশাল পুকুর, পুকুর পাড়ে আমার দাদার বাবার লাগানো পুরনো কাঠের গাছ, যা আমার চাচারা কেউ হাত দেয়নি, দাদার মৃত্যুর প্রায় বিশ বছর পরেও। আমি আসলে মেলাতে পারিনা। বড় চাচার ব্যবসা আছে, বাবা বিদেশে, ছোট চাচা ভালো চাকরি করে ঢাকায়, এরা কেন মাকে মারতে যাবে! আবার মাও কেন এত ঘৃণা মনে পুষে রেখেছিল? সবটাই অসুখ? নাকি তার ভেতর কোন সত্যতা লুকিয়ে আছে। এদের আমার প্রতি আন্তরিকতা কি লোক দেখানো? পুলিশের ভয়ে? চাচা আমার সাথে আসছিলেন, আমি মাঝ উঠানে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলাম তিনি ঘাড়ে হাত দিয়ে এগিয়ে যেতে ইশারা করলেন। আমার একটুও খারাপ লাগলো না। চাচা দিনা, দিশা আপুর সাথে যেভাবে কথা বলেন আমার সাথেও সেভাবেই কথা বলেন।

বাহির ঘরে গিয়ে আমি অবাক। সিভিল ড্রেসে একজন মধ্যবয়সী মহিলা। চোখমুখে পুলিশের মতো কাঠিন্য নেই। আমাকে দেখে হেসে বসতে বললেন।

• আসসালামু আলাইকুম
• ওয়ালাইকুম আসসালাম
• তোমার নাম? তুমি করেই বলি?
• জি আপনি আমার মায়ের বয়সী।
• তোমার নাম?
• তিমির, খাদিজাতুল কুবরা
• তিমির?
• জি আমার এক বোন ছিল, যার নাম রাত্রি
• তোমার নাম মিলিয়ে তিমির?
• জি
• রাত্রি কোথায়?
• মারা গেছে
• আই য়্যাম সো স্যরি
• ইটস ওকে
• আমি ও কে দেখিনি, আমার জন্মের আগে মারা গেছে
• কিভাবে?
• আমি শুনেছি আমার মা নাকি ওর যত্ন করতো না, মা ভাবত ওর কারণে মা অসুন্দর হয়ে গেছেন
• তোমার মা এই বয়সেও ভীষণ সুন্দরী ছিলেন। সুন্দর মানুষের অনেক দুশ্চিন্তা থাকে, কখনো মানসিক রোগের ডাক্তার দেখানো হয়েছে?
• আমি দেখাবো ভেবেছিলাম কিন্তু সময় পেলাম কই?
• তোমার আত্মীয়রা?
• না কেউ ডাক্তার দেখায়নি
• হুম, তোমার বাবা?
• দুবাই থাকেন, সেখানে তার স্ত্রী, সন্তান আছে
• সেটা কত বছর আগের কথা?
• পনেরো বছর, আমার বয়স যখন দুই, বাবা মাকে ছেড়ে দেন, দেনমোহর হিসেবে ঐ টিনের ঘরটা দেন
• ডিভোর্স হয়ে গেছে?
• না কাগজে কলমে তালাক হয়নি
• আচ্ছা, আজ থাক আমি আরেকদিন আসবো ,একটা শেষ প্রশ্ন তুমি তোমার মায়ের কলিগ জালাল উদ্দীনকে চেন? উনার তোমাদের বাড়িতে যাতায়াত ছিল?
• না, মায়ের চাকরি চলে গেছে প্রায় আটমাস আগে , তার আগেও আমাদের বাড়িতে কেউ পারতপক্ষে আসত না
• এই আট মাস চলেছে কিভাবে তোমাদের?
• মায়ের সেভিংস ছিল কিছু। মা আমাকে কিছু বলত না। ভাবত আমি জেনে গেলে টাকা চুরি করে পালাবো
• আচ্ছা দরকার হলে, তুমি আমাদের সাথে গিয়ে কাগজপত্র গুলো বের করো, আজ আসি কেমন?
• জি

মহিলা পুলিশ চলে গেল। আমি কতক্ষণ বসে আছি জানিনা দিশা আপু ডাকল।
আমি নাস্তা খাইনি। আমি চুপচাপ উঠে নাস্তা খেতে গেলাম। রাকিন কি বিকালে আসবে?

এক সপ্তাহ পর,
না, রাকিন বিকেলেও আসে না। আমার সাথে তার দেখা হয় কোচিংয়ে। সে চশমায় সুতা বেধেছে। আমার খুব ইচ্ছে করে তাকে একটা নতুন ফ্রেম কিনে দেই। সে কি নেবে? তার চেয়ে বড় কথা আমি টাকা পাবো কোথায়। মা চলে যাওয়ার পর বড় চাচা আমার দায়িত্ব নিয়েছেন। ছোট চাচা স্পষ্ট ভাষায় বলে গেছেন, আমার আর মায়ের জন্য বরাদ্দ টিনের ঘরের আয়ের থেকে এক পয়সা বেশি আমার পিছনে খরচ করা ঠিক হবেনা! আমি নাকি পাগল মায়ের পাগল মেয়ে! কথাটা দিনা আপু শুনে এসে দিশা আপুকে বলছিল। সেটা আমি শুনে ফেলি। আমি বাড়ির পিছনের টানা বারান্দায় হাটছিলাম, আমাদের বাড়িতে মেয়েরা সামনের বারান্দায় দাঁড়ানোর নিয়ম নাই । কারণ রাস্তা থেকে দেখা যায় বারান্দা। যদিও স্পষ্ট না, তাও এটা নিয়ম বহির্ভূত। তাই আমি পিছনের বারান্দায় হাটছি। পাকা ঘর, বারান্দা, ছাদ আমার খুব ভালো লাগছে। যদিও আমাদের ছোট্ট উঠানে বসে চাঁদের আলোয় স্নান করার স্মৃতি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ স্মৃতি। মা আমার পাশে এসে বসেছিল। বলেছিল,
• দেখ চাঁদেরও কলঙ্ক আছে, তাও কি মায়াবী আলো দেয়। মেয়ে মানুষ হলো চাঁদের মতো। কলঙ্ক থাকবে আবার মায়াও ছড়াতে হবে।
• আমি বলেছিলাম, না মা। মেয়েদের হতে হবে সূর্যের মতো। মানুষ চোখ তুলে তাকিয়ে দেখতে পারবে না। এমন তেজস্বিনী হতে হবে মেয়েদের। মা শুধু হেসেছিল, জবাব দেয়নি।
আজ মনে হচ্ছে মায়ের কথাই ঠিক। মেয়েরা কলঙ্ক মাথায় নিয়ে মায়া ছড়াবে। এটাই মেয়েদের স্বভাব।

আমি রাকিন পাশাপাশি হাটছি। সন্ধ্যার আকাশের লালিমা ধীরে ধীরে মিলিয়ে গিয়ে ধ্রুবতারাটা ফুটে উঠেছে, সেও যেন আমাদের সঙ্গী! এমনটা মফস্বলে ভালো চোখে দেখা হতো না। এখন সব মেয়ের পাশেই একটা করে বা একাধিক ছেলেরাও হাটছে, হাসি ঠাট্টা করছে। চায়ের দোকানেও আজকাল মেয়েরা আড্ডা দিচ্ছে! মা এসব সহ্য করতে পারত না। দেখলেই গালি দিত।

• কি এত ভাবছ?
• না তেমন কিছু না। আমার দাদাবাড়ী তো কাছেই। এগিয়ে না দিলেও চলত।

আমার কন্ঠে কি ছিল জানিনা। অভিমানের ঝড় কি আমার কণ্ঠে প্রকাশ পেয়েছিল? রাকিন তাকিয়ে রইল। তারপর বললো,
• আমি প্রতিদিন ভেবেছি যাব। কিন্তু তোমার দাদাবাড়ীর লোকেরা রক্ষণশীল। তাই ভেবেছি কোচিং এ এলে সমবেদনা জানাবো।
• আমাদের বাহির ঘর আছে। সেখানে আসতেই পার। কোন সমস্যা নেই।
রাকিন আর কোন কথা বলেনা। চুপচাপ আমাকে এগিয়ে দিয়ে নিজের পথ ধরে।

সন্ধ্যায় তিন বোন মাগরিবের নামাজ পড়ে, চা মুড়ি খেয়ে পড়তে বসেছি। এটা এই বাড়ির নিয়ম। রান্নাঘরের কাজ মাগরিবের আগে শেষ করে, নামাজ পড়ে পড়তে বসতে হবে টানা নয়টা পর্যন্ত পড়ে আবার এশার নামাজের পর খেতে যেতে হবে। দাদীর করা নিয়ম, চাচী মেনে চলেন। অনিয়ম হয় ছোট চাচা এলে, বাচ্চারা কেউ এসব মানতে চায়না। দাদীও কিছু বলেনা। রান্নার চাপ বাড়ে। বেলায় বেলায় চা হয়। কেউ পড়ার সময় পায় না।

বড় চাচা খবর দিলেন, মায়ের কলিগ দেখা করতে চান। দিশা আপুর সাথে যেন আমি বাহির ঘরে যাই। দিশা আপু একটু বিরক্ত হলো। পড়া শেষ করে, সে বারান্দায় হাটবে আর ফোনে কথা বলবে তার বাগদত্তের সাথে। দিনা আপু বড়, তাও দিশা আপুর কেন আগে বাগদান হলো আমি জানিনা। আমাদের বাড়িতে মিষ্টি পাঠানো হয়েছিল। মা বলেছিল ওতে বিষ আছে, নয়ত কালোজাদু, কিন্তু আমি লোভ সামলাতে পারিনি, এত দামী মিষ্টি আমি কখনো খাইনি! খাটি ঘিয়ের তৈরি পাঁচ রকমের মিষ্টির লোভ সামলানো সহজ না। ঐ বিষ খেয়েও আমি বেঁচে আছি। মা নিজেই চলে গেল।

(চলবে)

মেঘলা মন
(৩)

দিশা আপু আর আমি বাহির ঘরে এসেছি। ভদ্রলোকের বয়স পয়তাল্লিশ হবে, কাঁচাপাকা চুল, ধবধবে ফর্সা গায়ের রঙ, জাম রঙের শার্ট আর জিন্সের প্যান্ট, কাউকে স্বান্তনা দিতে এই পোশাকে কেউ আসতে পারে আমার ধারণার বাইরে! দিশা আপু একটু দূরে বসে মেসেজ চালাচালি করছে।
একটু কেশে ভদ্রলোক কথা শুরু করলেন, তার সামনে রাখা ট্রে থেকে এক টুকরো কেক মুখে পুরে নিলেন।

• দেখ তিমির আমি তোমার মায়ের কলিগ ছিলাম। আমি জানিনা তুমি আমার কথা কতটুকু জানো। আমি জালাল উদ্দীন। তোমার মাকে বিবাহ করতে চেয়েছিলাম। মাথায় সমস্যা থাকলেও তিনি অসামান্য রূপবতী ছিলেন। একদিন আমি তাকে শিক্ষকের বসার জায়গায় চা খেতে বলি আমার সাথে, কি বলবো আর লজ্জার কথা! সে বুকের আঁচল ফেলে দিয়ে বলে, খাবি? আমাকে খাবি?
জালাল উদ্দীন আমার মায়ের কথা বলছেন কিন্তু তার চোখ আমার বুকের দিকে, চওড়া ওড়না জড়ানো ছিল। আরো ভালোমতো জড়িয়ে নিলাম।
আমার উশখুশ দেখেই দিশা আপু একটু কাশি দিল। জালাল উদ্দীন চোখ সরালেন। এত ভয়ংকর একটা কথা তিনি অবলীলায় জানালেন, পিরিচের সব কেক শেষ করে, চা নিলেন।

• দেখ পুলিশ হয়তো নানান কথা বলবে, কিন্তু আমি বিপত্নীক মানুষ, আমার বাড়ি গ্রামে, আর তোমরাও মা, মেয়ে কোন পুরুষ নাই বাসায়, ভেবেছি আমি থাকলে নিরাপত্তা হবে তোমাদের। আমার একার জন্য প্রস্তাব দেইনি।
বেশ এখন কি চান? দিশা আপুর ঠান্ডা কন্ঠ শুনে একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে গেলেন। তারপর ফিসফিস করে বললেন,
• তোমার মা তোমায় নিয়ে যে ভয় পেত তা অমূলক। তুমি এত রূপবতী না! তোমার এই বোনের কি বিবাহ হয়েছে? নাহলে আমি বিবাহের প্রস্তাব দিতে পারি!
• এক্ষুনি বের হন। আর কোনদিন বাসার একশ গজের মধ্যেও যদি পাই, খুন করে চব্বিশ টুকরো করে কুত্তারে খাওয়াবো। দিশা আপুর চিৎকারে কাজের লোক, দারোয়ান, বড় চাচা দৌড়ে এলেন,
ঐ লোকের মুখের তেলতেলে হাসি এতটুকু বিকৃত হলো না। ওমন ফিসফিস করেই বলে গেল,
• এমন দেমাগ শুধু এমন রূপবতীদের মানায় তিমির। তোমার মায়েরটা একদম অমূলক!
• অসুস্থ মানুষ। এরে পাগলা গারদে রাখা উচিত। চল ভিতরে চল। আর কারো সাথে দেখা করার আগে, আমি কথা বলে নিব। দিশা আপু শক্ত করে আমাকে ধরে ভিতরে নিলেন। আমি এই প্রথম বড় বোনের ভালোবাসা অনুভব করলাম। আমার চোখ ভিজে আসছে। মা এদের মতো জানোয়ার দের সাথে কাজ করত? এদের মতো জানোয়ারদের জন্য চাকরি হারিয়ে এত অসহায় ছিল?

সারারাত আমি কাঁদলাম। দিনা আপু বলে উঠলো, এইতো তোর কাঁদার দিন শুরু। যত দিন যাবে তত মায়ের অভাব অনুভব করবি!

পরদিন সকালে,
পুলিশ মায়ের লাশ দিয়ে গেছে ময়নাতদন্ত শেষে। রিপোর্ট জানা যায়নি। বড় চাচা খুব দ্রুত গোসল, জানাজা দিয়ে দাফনের ব্যবস্থা করলেন। এমন কাটা ছেড়া লাশ বেশিক্ষণ রাখা যায় না। মায়ের পক্ষের কারো সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। মায়ের দূর সম্পর্কের এক মামা এসেছিলেন শেষ দেখা করতে। আমি তাকে চিনিনা কোনদিন বাসায় আসেননি। যাওয়ার আগে আমার সাথে কথা বললেন,

• বুজান তুমি আমারে চিনবা না। আসলে আমি আসতে পারিনাই তোমাগো দ্যাখতে! তুমি তো এখন এই মহলে থাকবা। থাকন খাওন তো ফিরি, পড়াইবো কইল তোমার চাচা। যা হয় ভালোর জন্যই হয়। চাকরি যাওনের পর কিছু টাকা ধার নিছিল তোমার মা। ক্যামনে যে কই…..
• কত টাকা? পিছন থেকে বড় চাচা জিজ্ঞেস করলেন।
• ইয়ে এই হাজার পঞ্চাশ!
• এত টাকা? আপনার কাছে ছিল?
• মানে কি? আমারে কি আপনে ফকির মিসকিন ভাবেন?
• না তা ভাবতে যাবো কেন? ভাগনিকে জীবদ্দশায় দেখতে এলেন না, মরদেহ দেখতে আসার ভাড়াও নিলেন আমার কাছ থেকে। তাই প্রশ্ন করলাম।
• আমি তো দাবি রাখিনাই, ভাগনি আমার বড় আপন…..
• আপন ভাগনিকে কখনো দেখতে আসেননি কেন? এবার আমি মুখ খুললাম।
• তিমির তুমি ভিতরে যাও আমি দেখছি, বড় চাচা বললেন গম্ভীর কণ্ঠে।
তারপর কি হয়েছে জানিনা। কিন্তু ঐ লোক কে আমি আর দেখিনি। বাবা আজ আবার ফোন করেছেন, আমাকে চাইলেন, ভেঙে পড়তে মানা করলেন, শক্ত হতে বললেন। এই কথা গুলোই জীবদ্দশায় আমার মা শুনে যেতে পারলে হয়তো মানসিক অবস্থা এত খারাপ হতো না। আমার কলেজের কয়েকজন মেয়ে এসেছিল। তারা স্বান্তনা দিয়ে চলে গেল। চাচা ওদের মিলাদের দাওয়াত দিলেন। আমাকেও বললেন, কোচিং-এর সবাইকে, যেন বলি। এসব নাকি বলতে হয়! দোয়া চাইতে হয়। আপুদের সাথে পুরোদস্তুর নামাজ পড়ছি। দাদী কোরআন শরিফ পড়ান আমাদের তিন বোনকে। দাদীর ঘরে আমরা তিনজন বসেছি, দাদী কোরআন তিলাওয়াত শেষ করে , হাদিস পড়ছেন। দিশা আপু উশখুশ করছে ,তার ফোনে টুং করে মেসেজ এসেছে, আমারও অস্থির লাগছে, মনে হচ্ছে কোথাও একা বসে থাকলে আরাম পাবো, এই বাড়িতে একা হওয়া কঠিন। কেউ না কেউ থাকেই সাথে।

রাকিন মিলাদে এলো, সাদা পায়জামা, পাঞ্জাবি পরে। মুখ ভীষণ শুকনো। মিলাদ শেষে তবারক হাতে আমাকে কিছুক্ষণ খুঁজে চলে গেল। আমি দাদীর ঘরের জানালা দিয়ে দেখলাম। মেয়েদের আলাদা মিলাদে অংশগ্রহণের জায়গা ছিল। আমরা বাড়ির মেয়েরা দাদীর ঘরে বসেছি।
আজ মনে হচ্ছে এই বাড়ির কেউ মারা গেছে! বড় চাচা এই আবহ তৈরি করতে সফল! বাবা আজ ফোন করেননি। তার কত কাজ। প্রতিদিন আমার খোঁজ কেন নেবে? রাকিন এসেছে, আমার তাতেই খুশি হওয়া উচিত। আত্মীয়স্বজনরা এক সাথে বসে আলাপ করছে। আমার মাকে নিয়ে ভালো কথা বলাটা খুব কঠিন। যে কয়দিন এই বাড়িতে ছিল, দাদী আর বড় চাচীর সাথে রোজ ঝগড়া হতো, ঝগড়াঝাটি করেই স্কুলের চাকরি নিয়েছিল । আমি তখনও হইনি। বাবার সাথেও নাকি রোজ ঝগড়া হতো। বাবা ঢাকায় চাকরি নিয়ে চলে গেল। রাত্রী তখন পেটে , মা নাকি প্রতি রাতে কাঁদত, চিৎকার চেচামেচি করত৷ রাত্রী যখন হয়, মা নাকি মুখটাও দেখেনি, দুধ খাওয়াতে দেয়নি! শীতের মধ্যে হয়েছিল রাত্রী। মায়ের বুকের ওম না পেয়েই নিউমোনিয়াতে মারা যায়। বাবা নাকি তখন মাকে ডাক্তার দেখিয়েছেন। মা ওষুধ খেলে নাকি একদম ভালো থাকতো, ঢাকায় গিয়ে ছিল কিছুদিন। কিন্তু আবার অসুখটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে মা আবার ফেরত আসে। কপাল গুণে চাকরিটা আবার পায়। ওষুধ খাওয়া নাকি ছেড়ে দিয়েছিল। এসে জানতে পারে সে আবার অন্তঃসত্ত্বা! ওষুধের প্রভাব হোক আর যাই হোক এবার সে আমার মুখ দেখে, কোলে নেয় কিন্তু বাবা তখন দুবাই যাওয়ার পরিকল্পনায় ব্যস্ত। আমাকে অনেকটা
ফেলে গেলেন আমার অসুস্থ মায়ের কাছে। বিনিময়ে ঐ জমিটা বড় চাচার মাধ্যমে মাকে দিলেন। সেখানেই আমার বেড়ে ওঠা। বাকি গল্প তো আমার জানা। এটুকু জানা ছিল না। মায়ের কাছের কেউ ছিল না। দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের কাছে বড় হয়েছে, তবে যিনি সেদিন সেদিন এসেছেন তিনি না! বাবা মায়ের রূপ দেখে প্রেমে পড়ে যান। বিয়ের প্রস্তাব দেন, কোন চিন্তাভাবনা না করেই। ফলশ্রুতিতে রাত্রী বেঁচে গেলেও আমার জীবনটা দোদুল্যমান!
কেন এমন করে মানুষ? কেন ভালোবাসা আজীবন থাকেনা? কেন জালালের মতো কীট আমার অসুস্থ
মায়ের মানসিক চাপ আরো বাড়ায়?
কেন একটু শান্তিতে বাঁচতে দেয়না কেউ? কেন?

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here