#ভ্যাম্পায়ার_লাভার,পর্বঃ-০৫,০৬
লেখনীতেঃ-কাশপিয়া মেহজাবিন রিমশা।
পর্বঃ-০৫
একটা মানুষের সাথে ওর কি সম্পর্ক থাকতে পারে? সে-তো একজন ভ্যাম্পায়ার। নাহ ওকে এ রহস্য ভেদ করতেই হবে।
কাল শ্রুতির সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে হবে। সাদাফ ঠিক করেছে কাল শ্রুতির সাথে বন্ধুত্ব করবে। তারপর তারা দুজনে মিলে এই রহস্য ভেদের মিশনে নামবে। সাদাফ এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে যায়।
.
.
তোদের আমি ভালো থাকতে দিবো না। তোরা যতবারই জন্মগ্রহণ করবি আমি ততবারই তোদের আলাদা করে ফেলবো। সোফিয়া শুধু আমার।
.
.
সাদাফের ঘুম ভেঙে যায়। অনেকটা ভয় পেয়ে যায়। সাদাফের তো ভয় বলে কিচ্ছু থাকার কথা না। তাহলে কেনো সে এখন ভয় পেলো? সাদাফের খুব অস্তির অস্তির লাগছে। যে করেই হোক শ্রুতির সাথে সাদাফকে কথা বলতেই হবে। সাদাফ চটপট করতে লাগলো।
.
.
অন্যদিকে ঠিক একই স্বপ্ন দেখে শ্রুতির ঘুম ভেঙে যায়। কি একটা ভয়ানক স্বপ্ন। শ্রুতির সাথে কেনো বার বার এরকম হচ্ছে। নিশ্চয়ই সাদাফও একই স্বপ্ন দেখেছে। ওর অনেক ভয় করছে। সাদাফকে একটা ফোন করা যাক। তাহলে একটু হালকা লাগবে।
শ্রুতি মোবাইল হাতে নিয়ে সাদাফের মোবাইল নাম্বার তন্নতন্ন করে খুঁজলো কিন্তু, কোত্থাও পেলো না। পরক্ষণে শ্রুতির মনে পড়লো সাদাফ তো ওকে ওর ফোন নাম্বার দেই’ই নি। শ্রুতি হতাশ হলো।
.
.
পরদিন সকালে শ্রুতি অপেক্ষা করছে ফুলের তোড়া আর চিঠির জন্য। আজ আর মা’কে দেখাবে না। মা দেখার আগেই শ্রুতিকে এই ফুল আর চিঠি লুকিয়ে রাখতে হবে। শ্রুতির মন বলে এইগুলো যে পাঠায় সে শ্রুতিকে অনেক ভালোবাসে। আর এসব চিঠি পড়ে শ্রুতিরও কেমন জানি মায়া হয় অদৃশ্য সেই মানুষটির উপর। শ্রুতি এই অদৃশ্য মানুষটিকে নিয়ে আগে অনেক ভাবতো। কেমন হবে এই মানুষের আকার আকৃতি?
কিন্তু এখন শ্রুতির মনে বেশ অর্ধেক জায়গা করে নিয়েছে সাদাফ। কিন্তু সে বলবে না কিছু।
অপেক্ষা করতে করতে শ্রুতির কলেজের লেট হয়ে যাচ্ছে। আজ আর সেই ফুলের তোড়া আর চিঠি আসলো না। শ্রুতি তড়িঘড়ি করে রুমে যাওয়ার সময় কলিং বেল বেজে উঠে। শ্রুতি ভাবলো আজ হঠাৎ কলিং বেল? শ্রুতি আজ হাতে নাতে ধরবে কে সে?
শ্রুতি তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দেখল তার বাবা এত্তগুলা বাজার করে ঘরে আসছে। ওইদিকে শ্রুতির মা সকাল থেকেই বুয়া’কে নিয়ে রান্নাবান্না নিয়ে ব্যাস্ত।এতো আয়োজন দেখে মনে হচ্ছে যেনো আজ শ্রুতিকে দেখতে আসবে।
শ্রুতি কলেজের জন্য রেডি হয়ে রওনা দেওয়ার সময় ওর মা ওকে একটা শাড়ি দিয়ে বলে,
শ্রুতির মাঃ-শ্রুতি কলেজের ড্রেস পাল্টে ঝটপট এইটা পড়ে নাও। আমি রাবেয়া(কাজের বুয়া) কে পাঠাচ্ছি তোমাকে হেল্প করে দিবে।
কথাটা বলে ওর মা চলে যেতে লাগলো। শ্রুতির মাথায় আসছেনা আজ তো কলেজের কোনো ফাংশান নেই,তাহলে ওর মা শাড়ি পড়তে বলবে কেনো? শ্রুতি ওর মা’কে ডাক দেয়-
শ্রুতিঃ- মা আমাকে শাড়ি পড়তে বলছো কেনো? আমার কলেজের দেরি হয়ে যাচ্ছে তো, তাছাড়া আজ তো কলেজে কোনো অনুষ্ঠানে হচ্ছে না।
শ্রুতির মাঃ- আজ কলেজে যেতে হবে না,তোমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। তোমাকে নাকি রাস্তায় কোথায় দেখেছে। তাদের বেশ পছন্দ হয়েছে তোমাকে।
শ্রুতির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। শ্রুতি কখনো স্বপ্নেও বিয়ে নিয়ে ভাবে নাই। নাহ শ্রুতির এখন বিয়ে করলে চলবে না। শ্রুতির খুব কান্না পাচ্ছে। সাদাফের কথাও মনে পড়ছে।
শ্রুতিঃ- মা তোমরা আমাকে না জানিয়ে এতবড় কাজ করে ফেলছো? আমাকে অন্তত একটিবার জানাতে পারতে মা?
শ্রুতির মাঃ- তোমাকে বললে তুমি কখনোই হ্যাঁ বলতে না। আর ছেলে আমেরিকায় থাকে,ওখানে ওর শো-রুম আছে। বিয়ের পর তোমাকেও নিয়ে যাবে।
শ্রুতির প্রবাসী ছেলে একদমই পছন্দ না। তার উপর তাকেও আমেরিকায় নিয়ে যাবে। শ্রুতির বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই দেশের বাইরে গিয়ে থাকার।
শ্রুতিঃ-মা আমার তো পছন্দ অপছন্দ বলে কোনো কথা আছে। আর তুমি আর বাবা তো জানোই আমার প্রবাসী ছেলে পছন্দ না,তাও জেনে শুনে এমনটা করতে পারলে?
শ্রুতির মা কিছু না বলে চলে যায়। যাওয়ার আগে সাফ সাফ জানিয়ে দেয় এই বিয়ে হবেই। কান্না করা ছাড়া শ্রুতির আর কোনো উপায় নেই।
কেনো হলো এমনটা?
চারিদিকের আকাশ,বাতাস তো চেয়েছিলো তাদের দুজনা’তে ভালোবাসা বাসি হউক।
তাদের একসাথে পথচলা হউক।
তবে কেনো আজ সব তার বিপরীতে?
.
.
আজ কলেজে শ্রুতি নয় বরং সাদাফ খুঁজছে শ্রুতিকে। সারা কলেজ খুঁজেও শ্রুতির দেখা মিললো না। আজ মেহেরও আসলো না। সাদাফের অনেক টেনশন হচ্ছে। সাদাফের জানামতে শ্রুতি ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল। নিয়মিত ক্লাস করে,যতই ঝড় তুফান হউক ও আসবেই। তবে কেনো আজ আসলো না? সাদাফ ঠিক করেছে ও শ্রুতির বাসায় যাবে অদৃশ্য হয়ে।
.
.
পাত্রপক্ষ এসে পড়েছে। তাদের যত্নআত্তির কোনো কম রাখছে না শ্রুতির মা-বাবা।
আজ শ্রুতির ভাই সাগর বাসায় নেই, ইচ্ছাকৃত বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। সে দেখতে পারবে না বোনের কষ্ট। বোন তো এই বিয়েতে রাজি না তাও মা-বাবা বোনকে জোড় করে বিয়ে দিচ্ছে। সে ছোট বলে প্রতিবাদ করায় তার মা অনেক বকেছে। তাই সে বের হয়ে গেছে,থাকতে চায় না সে এখানে। বোনের কষ্ট তার সহ্য হবেনা।
শ্রুতিকে একপ্রকার জোড় করেই আনা হয়েছে পাত্রপক্ষের সামনে। পরনে যেই সেলোয়ার টা ছিলো ওইটা পড়েই আসছে। শ্রুতি সেই শাড়ীটা কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলেছে। এরজন্য ওর মা ওকে অনেক বকে।
শ্রুতি দেখলো ছেলেটি কেমন ভাবে যেনো তাকিয়ে আছে শ্রুতির দিকে। শ্রুতির ছেলেটিকে দেখে লুচু নাম্বার ওয়ান মনে হচ্ছে। শ্রুতিদের কথা বলার জন্য ছাদে পাঠানো হলো।
-আমার নাম ফারহান চৌধুরী।
শ্রুতি কোনো কথাই বলছে না। রাগে গা পুড়ে যাচ্ছে ওর।
ফারহানঃ- হেই সুইটহার্ট ইউ আর লুকিং সো হট।
শ্রুতির মাথায় যেনো চরম বিষ্ময়ের আকাশ ভেঙে পড়লো। শ্রুতি যা ভেবেছে তাই হলো। লোকটা লুচু নাম্বার ওয়ান। কাউকে প্রথম দেখায় কেউ এভাবে বলতে পারে? সাদাফ তো ওর দিকে ভালো করেও তাকায় না।
কি হতো আজ এই লোকটার জায়গায় যদি সাদাফ থাকতো?
এরকমটা হলে কি খুব বেশি খারাপ হয়ে যেতো?
শ্রুতি আর কিছু বললো না। তারা যাওয়ার পর মা’কে সব বলে। তার মাও এতে অবাক হয়। কিন্তু শ্রুতির কথা অতটা পাত্তাও দেন নাই।
শ্রুতির আজ আর কিচ্ছু ভালো লাগছে না। শ্রুতি ঘুমিয়ে পড়ে।
.
.
পরদিন সকালে খবর আসলো ফারহান চৌধুরী মানে শ্রুতিকে দেখতে আসা পাত্রের লাশ রাস্তার পাশ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ফরেনসিক রিপোর্টে দেখা যায় ছেলেটির শরীরের কোনো রক্ত নেই। ঘাড়ের উপরে দুইটা ফুটো। পুলিশেরা এর আগেও এরকম অনেক লাশ পেয়েছে কিন্তু কে বা কারা এমন করেছে তার রহস্য তারা উদঘাটন করতে পারছে না এখনও।
শ্রুতি এতে বেশ খুশি হয়।যাক বাবা বাঁচা গেলো। বাবা-মায়ের চিন্তিত মুখ দেখে শ্রুতির আনন্দে লাফাতে ইচ্ছে করছে। শ্রুতি আজ খুশিমনে কলেজে গেছে। কাল মেহেরও যায় নি। মেহেরকেও দেখতে এসেছিলো ওর বয়ফ্রেন্ড।
মানে ওর ফুফাতো ভাই আবিরের সাথে মেহেরের বিয়ে ঠিক হয়। শ্রুতিকে অনেক বলেছে এমনকি এটাও বলেছে শ্রুতি না গেলে মেহের বিয়ে করবে না। শ্রুতির মা’কেও বুঝায় কিন্তু শ্রুতির মা বলে আজ শ্রুতিকে দেখতে আসবে। তাই মেহের আর কিছু বলে নি। মেহেরের কষ্ট হলো এই ভেবে শ্রুতির অভ্রের কি হবে?
মেহের তো আর জানে না অভ্র শুধুই মেহেরের স্বপ্ন।
আজ দুই বান্ধবী মহা আনন্দে আছে। অনেক মজাও করছে দুজনে। আজকে সকালের সব ঘটনা সে মেহেরকে বলে এতে মেহেরও অনেক খুশি হয়। দূর থেকে সাদাফ শ্রুতির সেই মন ভোলানো হাসিটা উপভোগ করছে।
.
.
কাল সাদাফ অদৃশ্য হয়ে শ্রুতিদের গেইট পেরিয়ে যখন ডুকতে যাবে তখন সাদাফ শ্রুতিকে আর একটা ছেলেকে ছাদে দেখে। তাই সাদাফ হাওয়ায় ভেসে ছাদে যায়। আর সাদাফ একটা শক্তির কারনে সবার মনের কথা শুনতে পায়। সাদাফ শুনতে পেয়েছিলো সাদাফকে কাছে পাওয়ার শ্রুতির সেই আকাঙ্খা। সাথে শুনতে পেয়েছিলো শ্রুতিন পাশে দাড়িয়ে থাকা সেই ছেলেটিরও মনের কথা।
সে ছেলেটি মনে মনে বলছিলো এই মেয়েকে যদি এক রাতের জন্য পাই তাহলে বন্ধুদেরও বলবো। পরে সবাই মিলে একটা পার্টি করবো। কতদিন এরকম কচি মেয়ে দেখি না। মেয়েটা যেনো দুধে আলতা।
সাদাফ ছেলেটির মনের কথাগুলো শুনার পর তার তার আবারও নেশা উঠে সেই খুনের নেশা। তাই তো সাদাফ…..
চলবে…
#ভ্যাম্পায়ার_লাভার
পর্বঃ-০৬
লেখনীতেঃ- কাশপিয়া মেহজাবিন রিমশা।
সে ছেলেটি মনে মনে বলেছিলো
-এক রাতেন জন্য এই মেয়েটিকে পাই। শেষে সব বন্ধুরা মিলে জমিয়ে একটা পার্টি দিবো।
এক রাতের জন্য শ্রুতিকে অন্য ছেলে কাছে পেতে চাচ্ছে কথাটা কেমন জানি সাদাফের পছন্দ হয়নি। বরং রাগ হয়েছে অনেক,
নিজের সবকিছুর ভাগ মানুষ অন্যকে দিতে পারলেও ভালোবাসার মানুষের ভাগ কেউ কখনও কাউকে দিতে পারে না। সে একান্তই তার থাকে। ভালোবাসার মানুষটির ত্যাগ, তিতিক্ষা, রাগ, অভিমান, ভালোবাসা সবই থাকে একমাত্র সেই অপরজনের উপর। ভালোবাসার মানুষটির এ সব কিছু সে আগলে রাখবে বুকের এক কোণে। ভালোবাসার মানুষটিকে কত ভাবেই না ভালোবাসতে ইচ্ছে করে।
সাদাফও মনে মনে ঠিক করেছিলো, সমাজে এসব ভালো মানুষের মুখোশের পেছনের পিশাচদের সে ধ্বংস করবেই। সাদাফ হারাতে দিবে না আর কারও মা’কে, আর কারও বোনকে,আর কারও প্রিয়ষীকে। তাই তো চারিদিকে পুলিশেরা এতো এতো লাশ পায়। পুলিশেরা প্যারানরমাল কিছুকে কেনো যে বিশ্বাস করতে চায় না?
এসব ভেবে সাদাফের হাসি পায়,অনেক হাসি পায়।
সাদাফ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে-
—-হুহ্ ভাম্পায়ার, ভ্যাম্পায়ারের অস্তিত্ব বিশ্বাসই করতে চায় না কেউ। তাই তো কোনো মানুষকে খুন করা আমাদের পক্ষে এতো সহজ।
.
.
সাদাফ শ্রুতির হাসি দেখেই যাচ্ছে। হঠাৎ শ্রুতির নজর পড়লো সাদাফের উপর। আজ যে করেই হউক সাদাফের সাথে কথা বলবেই। শ্রুতি মেহেরকে আসছি বলে সাদাফের কাছে আসে। সাদাফ ঠাই দাড়িয়ে রইলো। একটা অপরূপা যে তার সামনে হয়তো সে এই অপরুপার রুপেই মত্ত হয়ে আছে।
সাদাফের এরকম অবাক চাহনি দেখে শ্রুতিও কিঞ্চিৎ অবাক হয়,আবার একটু হাসিও পায়।
—মুখে মশা ডুকে যাবে তো।
কথাটায় সাদাফের হুশ আসে। একটু লজ্জাও পায়।
—কেমন আছেন সাদাফ?
—ভালোই,আপনি?
—ভালো আছি।
কিছুক্ষণ পিনপন নিরবতা পালন করলো দুজনে। হঠাৎ নিরবতা ভেঙে সাদাফ বলে উঠে,
—আবারও দেখেছিলাম স্বপ্ন।
এতে শ্রুতি অবাক হয় না। শ্রুতি জানে সাদাফও সেই একই স্বপ্নটা দেখবে।
—আমিও সেজন্য কথা বলতে এসেছিলাম। কাল তো আপনার নাম্বার টাও দিলেন না।
—কথায় কথায় ভুলে গেছিলাম।
—তো এখন দেন।
সাদাফ তার ফোন নাম্বার টা শ্রুতিকে বলে আর শ্রুতি খুব মনযোগ সহকারে ওর ফোনে নাম্বারগুলো উঠাচ্ছে।
—-আচ্ছা কাল ওভাবে চলে গিয়েছিলেন কেনো? কথার মাঝে কেউ এভাবে চলে যায়?
-আসলে আমার রক্তের নেশা উঠেছিলো। আমাকে তখন কারও রক্ত খেতে যেতে হয়েছিল। আমরা তো ভ্যাম্পায়ার তাই এই নেশাটা আমাদের অনেক ভয়ানক।
!! কথাটা মনে মনে বললেও সাদাফ কিন্তু সত্যিকারে কখনও এসব কাউকে বলতে পারবে না। তাই সাদাফ বললো,
—আসলে তখন ক্লাস শুরু হয়ে গেছিলো।ক্লাসটা অনেক ইম্পর্ট্যান্ট ছিলো এতই তাড়া ছিলো যে আপনাকে বলে যাওয়ার সময়টুকু পাইনি। তার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত মিস.শ্রুতি।
সাদাফের মুখে মিস.শ্রুতি নামটা এতই দরদ মাখানো ছিলো যে শ্রুতি একটু অবাক হয় আবার অনেক ভালোও লাগে।
–ইশ এই ডাক যদি সারাজীবন শুনতে পেতাম।
—বিরবির করে কি বলছেন? শুনতে পাইনি। আরেকটু বড় করে বলুন।
শ্রুতি পড়ে গেলো ভীষণ লজ্জায়। কথাটা সাদাফ ঠিকই শুনতে পেয়েছিলো। আর এখন যে শ্রুতি লজ্জা পাচ্ছে সেটাও বেশ ভালোই বুঝতে পারছে। তাই সে কথার প্রসঙ্গ পাল্টে বলে..
—কেনো হচ্ছে এমন?
সাদাফের এমন কথায় শ্রুতি ভেবাচেকা খেয়ে যায়।
—কেমন হচ্ছে?
সাদাফ জানতো না মেয়েটি এতো বোকা।
—আমরা এভাবে দুজনে স্বপ্ন দেখছি কেনো?
—সেটা আমি কি করে জানবো? রহস্য সমাধানের জন্যই তো আপনার কাছে এলাম।
সাদাফ একটু মজার ছলে বলে,
—আমিতো কখনও গোয়েন্দা গল্পও পড়িনি। এখন মনে হচ্ছে হুমায়ুন আহমেদের “মিসির আলি” সমগ্র পড়া উচিত ছিলো। তাহলে রহস্য উদঘাটনের জন্য একটু আধটু আইডিয়া থাকলেও থাকতে পারতো আর কি।
শ্রুতি বুঝে যায় সাদাফ মজা করছে। এই মানুষটা এতো মিশুক আর রসিক হবে শ্রুতির ধারনাই ছিলো না। দুজনেই হাসিতে মেতে উঠে।
শ্রুতি বলে উঠে,
—তহলে বন্ধু?
—বন্ধু নয় সেটা কখন বললাম?
—বন্ধু সেটাও বা কখন বললেন?
—শুনুন মেয়ে আপনাকে বন্ধু না ভাবলে এতক্ষণ আপনার সাথে কথা বলতাম না। আর বন্ধু হলে সেটা ঢাক ঢোল পিটিয়ে বলতে হয় নাকি? যদি আপনি বলেন তাহলে এখনই ব্যবস্থা করছি।
সাদাফের কথা শুনে শ্রুতির হাসতে হাসতে পেট ফাটার উপক্রম হয়েছে।
—আরে না না ঢাক ঢোল পেটাতে হবে কেনো? ওদের পেটালে ওদের কষ্ট হবে না?
—ওমা আপনি তো দেখছি অনেক দরদী মানুষ। ঠিক আছে আপনি বলছেন বলে পিটাচ্ছি না।
—আপনি না বললেন আমরা বন্ধু?
—হুমম,তো?
—হুম তো মানে কি? বন্ধুকে কেউ আপনি বলে?
—তাহলে কি বলতে হবে?
—তুমি।
.
.
কি আছে তোর মাঝে বুঝিনা!!
শুধু অনন্তকাল তোর দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে!!
ইচ্ছে করে সারাজীবন তোকে দেখি!!
কি অদ্ভুত ভালোবাসা!!
কি অদ্ভুত সম্পর্ক!!
সব কিছু ভুলে যাই,যখন তোর ওই মায়াভরা মুখের দিকে তাকাই!!
আমি আমার নিজেকে হারিয়ে ফেলি তোর মাঝে!!…..সত্যি!!
(গুগল থেকে নেওয়া)
সাদাফ মনে মনে ভাবছে কথাগুলো। কিভাবে একটা মানুষকে এতোটা ভালোবাসা যায়?
এভাবে চলে যায় তাদের মাঝে বন্ধুত্ব, খুনশুটি, রাগ, অভিমান আর অদৃশ্য সেই ভালোবাসা। প্রতিদিন তারা একে অপরকে অনেক সময় দেয়। সাদাফের মাঝে মাঝে মনে হয় সে একটু বেশিই করে ফেলছে। আবার পরক্ষণে মনে হয় সাদাফ তো আর শ্রুতির সামনে তার ভালোবাসা প্রকাশ করছে না। থাকুক না ভালোবাসাটা মনের মধ্যখানে।
কাল শ্রুতির জন্মদিন। তাই শ্রুতি কাল তার মনের কথা সাদাফকে জানাবে বলে ঠিক করে। শ্রুতিও ভালোবেসে ফেলে সাদাফকে। আর কাল সেই সঠিক সময়টা।
সাদাফের সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার পর সাদাফ ছাড়া শ্রুতির আর কোনো ছেলে বন্ধু ছিলো না। মেহেরেও সাদাফের অনেক ভালো বন্ধু হয়ে যায়। তারা তিনজনে মিলে ছিলো একটা ছোট্ট গ্যাং। সাদাফ তো শ্রুতির সাথে কোনো ছেলেকে দেখতেই পারতো না,তেলে বেগুনে জ্বলে উঠতো। সাদাফ ওকে অনেক কেয়ার করতো। অনেক ঝগড়াও করে দুজনে। ওদের ঝগড়া,যত্ন এসব দেখে কেউ বলতে পারবে না ওরা জাস্ট বন্ধুই।
এই তো সেদিন,
—এগুলো কি?(সাদাফ)
—পুলিপিঠা। (শ্রুতি)
—আমার জন্য?
শ্রুতি ভাবছে,
কি আজব,হাত বাড়িয়ে যখন বক্সটা সাদাফকে দিচ্ছে নিশ্চয়ই এটা ওর জন্যই হবে। এতো সহজ বিষয় না বুঝার কি আছে।
—নাহ,পাশের বাড়ির ছখিনার পোলার জন্য।
শ্রুতির এরকম আজাইরা মার্কা কথা শুনে সাদাফ হাসতে হাসতে শেষ। সাদাফ হাত বাড়িয়ে সেগুলো নিতে নেয়। ওদের হাত লাগা মাত্রই শ্রুতি আর সাদাফ ৪২০ ভোল্টের শক খেলো। সাদাফ অবাক চাহনি দিয়ে চেয়ে আছে শ্রুতির দিকে। আগে কখনও কেউ কাউকে এভাবে স্পর্শ করে নি বিধায় এরকম আজব ব্যাপার আগেও ঘটেনি।
—নিজের গায়ের সাথে ইলেক্ট্রিসিটি নিয়ে হাঁটো নাকি? যে কেউ ধরলেই ৪২০ ভোল্টের ছ্যাকা খেতে হবে।
সাদাফের এমন কথায় চরম বিষ্ময়ের আকাশ ছুঁয়েছে শ্রুতির মন। তাই শ্রুতি বলে,
—আমি কেনো ইলেকট্রিসি গায়ে নিয়ে ঘুরবো? তুমিই তো আমাকে সেই ৪২০ ভোল্টের শকটা দিলে।
—আমি দিইনি। তুমি দিয়েছো।
—নাহ তুমিই দিয়েছো।
—বললাম তো আমি দিই নি,তুমি দিছো।
—না আ….
এতক্ষণ ওদের দুজনের মাঝে কাবাব মে হাড্ডি ছিলো মেহের। তাই শ্রুতি কথা বলার আগে মেহের চেঁচিয়ে উঠে,
—চুপ থামবে তোমরা?
ওমনি দুজনে চুপ হয়ে যায়। তাই মেহের আবারও বলে,
—সাদাফ তুমি বলছো তুমি ওকে কোনো শক দাওনি?
—হ্যাঁ কখন থেকেই তো এই কথাটা এই বান্দরনিকে বুঝাতে চাচ্ছি।
—কিহ আমি বান্দরনি? তাহলে তুমি হনুমাতের নাতী, ভেড়ার মেয়ের জামাই আর আর…
মেহের আবারও চিৎকার দিয়ে উঠে বলে,
—চুপ কর, তুই আবারও সেই বিশ্বযুদ্ধ শুরু করে দিলি?
সবসময় তোদের এই বিশ্বযুদ্ধের সময় কাবাব মে হালুয়া আমিই হই।
—কাবাব মে হালুয়া কিরে?
—উফফ শ্রুতি তুই কখনো মানুষ হবি না?
—কেনো তোর কি আমাকে ভ্যাম্পায়ারের মতো লাগে,শাঁকচুন্নি?
কথাটা শুনে সাদাফ কিঞ্চিৎ অবাক হলেও সেটা কাউকে বুঝতে দেয় না।
তখন মেহের বলে উঠে,
—আচ্ছা শোন আর ঝগড়া নয়। শ্রুতি এবার তুই বল তুই ওকে কোনো শক দিস নি?
—আরেহ বাবা আমি কেনো উকে শক দিবো বলতো?
—ওকে ফাইন। কথাটা দাড়ালো কেউ কাউকে ইচ্ছাকৃত কোনো শক দেওয়া হয়নি। তার মানে হলো এটা অদৃশ্য কোনো শক্তি।
মেহেরের এরকম আজগুবি কথা শুনে শ্রুতি আর সাদাফ কিছুটা হলেও বুঝতে পারে। হ্যাঁ,এটা অদৃশ্য কোনো শক্তি। কিন্তু মেহেরকে সেটা বুঝতে দেয়না। তাই সাদাফ কথা কাটিয়ে বলে,
—ধুর বাদ দাও তো। দেখি শ্রুতি দাও পুলিপিঠা। এমনিতে খিদায় পেটের ভেতরে ইদুর দৌড়াচ্ছে।
—পেটের ভেতরে একটা বিড়াল ছেড়ে দিলেই তো হয়।
—কিহ বিড়াল? বিড়াল কেনো?
—যাতে বিড়ালটা তোমার পেটের ভেতরে সেই ইদুরগুলো চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে পারে।
চলবে….
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)