#ভ্যাম্পায়ার_লাভার
পর্বঃ-১২
লেখনীতেঃ- কাশপিয়া মেহজাবিন রিমশা।
আয়নায় আবারও লেখা উঠে,
—যখনি বিপদে পড়বে এই পাথরটা ধরে আমার নাম তিনবার স্বরণ করবে৷ আমি চলে আসবো। এবার যাই বিদায়।
শ্রুতি চমকিত নয়নে এখনও তাকিয়ে আছে আয়নার দিকে।
—তার মানে অদৃশ্য শক্তি টা আমার আর সাদাফের ক্ষতি করতে চাচ্ছে। কে এই অভ্রজিত? আর কেই বা সোফিয়া? কেনো তাদের মুখের আদল আমাদের কার্বন কপি?
মনে মনে ভাবছে শ্রুতি।
না আজ এসব ব্যাপারে সাদাফের সাথে কথা বলতে হবে।
অন্যদিকে সাদাফও আয়নায় কিছু লেখা দেখে চমকে উঠে,
“তোকে আমি শেষ করে ফেলবো। আমি তোদের কখনোই একত্রিত হতে দিবো না।”
সাদাফ কিঞ্চিৎ অবাক হয়। নিশ্চয়ই হ্যালুসিনেশন হচ্ছে তার। সাদাফ ঠিক করে সে আয়নার দিকে আর তাকাবে না। সাদাফ আয়নার দিকে আর তাকায়ও নি। ওমনি টেবিলের পাশের ফুলদানিটা হাওয়ায় উড়ে এসে ধুম করে সাদাফের কপালে লাগে। হঠাৎ আক্রমণে সাদাফ ভয় পেয়ে যায়। কপালে অনেকটা কেটে গেছে,অনেক রক্ত পড়ছে। সাদাফ কপালে হাত দিয়ে চেপে ধরে ঘর থেকে বের হযে যায়। উদ্দেশ্য ডাক্তারের কাছে যাবে দ্যান কলেজ।
——
সাদাফের কপালে ব্যান্ডেজ করা শেষ। ডাক্তার ফলমূল খেতে বলেছে। স্যালাইনও দিতে বলেছিলো কিন্তু সাদাফ দেয় নি।
—আরে মিস্টার কই যাচ্ছেন? আপনার শরীর এখনও অনেক দুর্বল। আপনাকে স্যালাইন দিতে হবে। বসুন একটু। আজ অন্তত রেস্ট করুন।
—না ড.মাহমুদ আমাকে এখন যেতেই হবে।
—কথা তো শুনে যান। প্রেসক্রিপশনটা অন্তত….
ডাক্তার মাহমুদের কথা শেষ হওয়ার সাদাফ বের হয়ে যায় চেম্বার থেকে।
—কি আজব প্রেসক্রিপশনটাও নিলো না।
কিছুক্ষণ পর
………..
সাদাফ আর শ্রুতি দুজনে মুখোমুখি।
—একি কপাল কাটলো কিভাবে তোমার? (শ্রুতি কাঁদোকাঁদো হয়ে জিজ্ঞেস করে)
সাদাফ কিছুই বলছেনা। তার এখন শ্রুতিকে মন ভরে দেখতে ইচ্ছে করছে। কেনো জানি মনে হচ্ছে মেয়েটাকে ভালোবাসলে ভুল হবেনা।
—কি হলো সাদাফ? কিভাবে হলো এটা? বলো না…
কথাটা বলেই শ্রুতি ভ্যাঁ করে ভেড়ার মতো গলাটা ছেড়ে দেয়। কাঁদছে শ্রুতি। সাদাফ দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরে রেখেছে।
সাদাফকে কিছু বলতে না দেখে, শ্রুতি কান্না থামিয়ে আর সাদাফের দিকে তাকিয়ে দেখে সাদাফ চোখ মুখ খিঁচে কানে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। শ্রুতির ক্রন্দনের ভুমিকম্পটার কোনো সাড়াশব্দ না দেখে সাদাফ চোখ খুলে তাকায়।
সাদাফকে এইভাবে দেখে শ্রুতির হাসিও পাচ্ছে আবার রাগও হচ্ছে। তাই সে কিছু বলছেনা।
দুজনেই নিশ্চুপ,
—সাদাফ
—শ্রুতি
দুজনে একসাথে দুজনের নাম নেয়। তখন সাদাফ বলে,
—হুম বলো,
—তুমি আগে বলো,
—শ্রুতি তোমাকেই আগে বলতে হবে। তোমার ইচ্ছাতেই হবে সব।
—তুমি আগে বলো না।
—ওকে না বলতে চাইলে কি আর করার,আমি যাচ্ছি।
কথাটা বলেই সাদাফ পেছনে ফিরে হাঁটতে শুরু করে।
—দাঁড়াও না বলছি তো। সবসময় এতো তাড়া পকেটে পকেটে নিয়ে হাঁটো?
সাদাফ হেসে জিজ্ঞেস করে,
—তাড়া আবার পকেটে নিয়ে হাঁটা যায় জানতাম না তো।
—উফফ তুমি অসহ্য।
—সেইম টু ইউ।
সাদাফ শ্রুতিকে ভেংচি কাটে।
—এবার বলো,
শ্রুতি সাদাফকে সকালের সব ঘটনা বলে। শ্রুতির সব কথা শুনে সাদাফকে চিন্তিত দেখে শ্রুতি আবার বলে,
—কপাল কাটলো কি করে?
— হঠাৎ আয়নার দিকে তাকাতেই তোমার সাথে যেভাবে হয়েছে ঠিক সেইভাবে আয়নায় লেখা উঠে,
“তোকে আমি শেষ করে ফেলবো। আমি তোদের কখনোই একত্রিত হতে দিবো না।”
তারপর আমি আয়নার দিকে তাকাইনি। আমিও ভেবেছি আমার হ্যালুসিনেশন হচ্ছে। কিন্তু আমি আর বেশি ভাবতে পারলাম না। ফুলদানিটা হঠাৎ এভাবে উড়ে আমার কপাল ফাটাবে তা আমার ধারনারও বাইরে ছিলো।
সাদাফের সব কথা শুনে শ্রুতি বলে,
—আমার মনে হয় দু’জনেই একজন।
সাদাফ শ্রুতির দিকে কিছুটা ঝুঁকে বলে,
— কিভাবে?
—তোমার আর আমার ঘটনা তো একই। কোনো এক অদৃশ্য শক্তি আমাদের পেছনে পড়েছে সেটা আমি সিওর। যে আমাদের ক্ষতি ছাড়া কিছুই করতে চায় না। কিন্তু কিসের স্বার্থে? আমাদের ক্ষতি করে তার কি লাভ হবে?
হয়তো আমাদের ক্ষতি করে তার কোনো লাভ হবেই হবে। নয়তো সে আমাদের এভাবে পিছু নিতো না। আমাদের ক্ষতি ছাড়া সেই শক্তিটা ভালো করতে চাইবে না।
সাদাফ এখন বেশ চিন্তিত।
এতক্ষণ দুজনের কথা হা করে শুনছিলো মেহের। এখন সে কথা বলে উঠলো,
—শ্রুতি তোর কাছে পাথরটা আছে এখন?
—হ্যাঁ এইতো নিয়ে এসেছি।
—আজ তুই আর সাদাফ একসাথে থাক। বাসায় যাবি না,আমিও থাকবো তোদের সাথে। আমরা সাদাফের বাসায় যাবো।
—কিন্তু কেনো?(শ্রুতি)
—আমরা এটুকু বুৃঝেছি কেউ তোরা একসাথে হোক সেটা চায় না। সাদাফের একবার ক্ষতি যেহেতু করেছে নিশ্চয়ই সে আর থেমে থাকবে না। বুঝেছিস আমি কি বুঝাতে চাচ্ছি?
—বুঝলাম কিন্তু পাথরটার কি হবে? (সাদাফ)
—সেটা তোমার বাসায় গিয়ে বলবো।
—কিন্তু আমরা আমাদের বাসায় কি বলবো? (শ্রুতি)
— তুই আমার বাসায় ফোন করে বলবি আমি তোর বাসায় থাকবো আজ আর আমিও তোর মা’কে ফোন করে বলবো তুই আমাদের বাসায় থাকবি।
—কিন্তু আমার মা যদি তোর বাসায় ফোন দেয়। তোর মায়ের তো আমার নাম্বার ছাড়া আমার ফ্যামিলির কারও নাম্বার নাই। তাই তুই কোথায়,কখন আসবি সেসব তিনি আমার কাছে ফোন করা ছাড়া আর কোথাও ফোন দিতে পারবেনা। সেদিকে নিশ্চিত থাকা যায়। কিন্তু আমার মায়ের কাছে তো তোর বড় আপার নাম্বারটাও আছে। যদি উনাকে ফোন দেয় আমার কথা জিজ্ঞেস করে তখন তো সব ফাঁস হযে যাবে মেহুপাখী।
মেহের হেসে বলে,
—কুছ নেহি হোতা। ইতনি ডারকে কুছ বি নেহি হোতা। সামঝি?
শ্রুতি রেগে দাঁত কটমট করতে করতে বলে,
—আবারও ভুলভাল হিন্দি বলে কান জ্বালাপালা করে দিলি। কানের নিচে ধরে দুইটা দিবো।
মেহের শ্রুতির কথায় ডোন্ট ওয়্যারি ভাব নিয়ে কিছু বলতে যাবে তখন শ্রুতি আবার দাঁত কটমট করে বলে উঠে,
—যে ভুল হিন্দি টা মারছস,সেটার বাংলা বল।
—শ্রুতিবেবী চিল চিল,প্যারা নিস না।
—তোরে বাংলা কইতে কইছি,ইংলিশ ঝাড়তে বলিনাই হারামজাদি।
—হোয়াট ডু ইউ মিন বাই হারামজাদি? শ্রুতিবেবী আ’ম হারামজাদি? (কাঁদোঁকাদো ফেস করে বলে মেহের)
—তোরে কানের নিচে দুইটা দিবো নাকি চারটা?
—ওকে ওকে বলছি তো। বলেছি কিছু হবে না। এতো ভয় পেলে কিচ্ছু সঠিক হবেনা। বুঝেছিস?
— হিন্দি যেদিন পুরোপুরি পারবি সেদিনই বলবি। বাংলায় যে বললি সঠিক হবে না,সঠিকের হিন্দি টা তো বলিস নি।
—শ্রুতি বেবী ইউ কনসাল্ট মি।
—কনসাল্ট নাকি ইনসাল্ট?
—ওই একই হলো।
—আচ্ছা বাদ দে,তুই যে বললি ভয়ের কিচ্ছু হয়নাই সেটার মানে কি? তুই কি বলছিস তুই নিজে জানিস?
—অবশ্যই। কারন আপুর মোবাইল দু’দিন আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। মানে ফোনের ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেছে।ফোনটা আব্বু দুবাই থেকে পাঠাইছে। তো মোবাইল যখন ঠিক করাতে দিছে তখন ওখানের লোকেরা জানালো ওরা নতুন ব্যাটারি দিয়ে ঠিক করে দিবে কিন্তু সেটা বেশিদিন ঠিকবে না। মোবাইলটা দুবাইয়েই ঠিক করাতে দিতে হবে। তবে পুরোপুরি ঠিক হবে। আব্বু বলেছে তিনি আর কদিন পরে আপুর জন্য আরেকটা নতুন কিনে পাঠাবেন। তাই আপু আর মোবাইল ঠিক করেনি।
—যদি তোর আপু সিম অন্য মোবাইলে ঢুকায়?
—না সেটা সম্ভব নয়। আমাদের ঘরের সবার পার্সোনাল মোবালই আছে এক্সট্রা নেই।
—বাঁচা গেলো(বলল সাদাফ)
তারা তিনজনে সাদাফের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সে তার ফ্ল্যাটে একা থাকে বিধায় শ্রুতিদের নিয়ে যেতে কোনো সমস্যা হবে না। আর বাড়িওয়ালাও কিছু বলতে পারবে না। বললেও সাদাফ ব্যবস্থা করে নিবে। তাও যত সম্ভব ওদের লুকিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
অবশেষে আধঘন্টা পর সাদাফের বাসায় পৌঁছোয় ওরা তিনজনে। সাদাফ ওদের জন্য হালকা নাস্তার ব্যবস্থা করতে কিচেনে যায়।আর অন্যদিকে সাদাফের বাসায় এসেই শ্রুতি ওর মা’কে ফোন দেয়।
রিং হওয়ার সাথে সাথে ওর মা কল রিসিভ করে ফেলে যেন শ্রুতির কলের অপেক্ষায় ছিলো,
—কিরে শ্রুতি কোথায় তুমি। কলেজ তো সেই কখন ছুটি হয়ে গেছে৷ ৩০মিনিট পার হয়ে গেলো তুমি এখনও ঘরে ফিরলে না কেনো? তুমি জানো না আমি ঘরে একা? সেদিনের পর থেকে সাগর রাগ করে হোস্টেলে উঠেছে তোমার বাবাও কাজের জন্য বান্দরবান গেছে। আমার কি ভয় হচ্ছে না?
—মা আমাকে তো বলতে দিবে। আসলে মা আমি মেহেরের বাসায় এসেছি।
—যাওয়াে আগে আমাকে বলে গেছো?
—মা তুমি মেহেরের সাথে কথা বলো।
শ্রুতি মেহেরকে ফোনটা দেয়।
—হ্যাঁ আসলে আন্টি ওকে জোড় করেই নিয়ে এসেছি। আজ আমার আপুর জন্মদিন। মা বলেছে শ্রুতি আসতে না চাইলেও জোড় করে নিয়ে আসতে।
—তা ও একবার আমাকে বললে পারতো না,?
—আন্টি আপনি বাসায় একা তাই শ্রুতি আপনাকে বলেনি। আন্টি আপনি চিন্তা করবেন না। শ্রুতি কাল কলেজ থেকে চলে যাবে।
কথা শেষ মেহের শ্রুতির হাতে মোবাইল নিয়ে ইন্না-লিল্লাহ পড়তে থাকে।
—মা লতিফা খালা তো আছে। একটু কষ্ট করো,কাল তো চলে আসবো।
মা মেয়ে দুজনে কথা শেষ করার পর মেহের ওর মা’কে ফোন দেয়। আর দুই বান্ধবীতে মিলে মিথ্যা গল্প সাজিয়ে বলে দিলো মেহেরের মা’কে। ব্যাস এখন শত্রুর আক্রমণের পালা।
সাদাফ নাস্তা বানিয়ে আনে।
স্যান্ডউইচ, পাস্তা আর সাথে কফি।
সাদাফ বলে,
—তো এবার শুরু করা যাক।
শ্রুতি আর মেহের হেঁসে খাবার মুখে দেয়। খাবার মুখে দেওয়ার পর দুজনে অবাক চাহনি দিয়ে একে-অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে।
অন্যদিকে সাদাফের কলিজা বের হওয়ার উপক্রম।
সাদাফ দুজনকে জিজ্ঞেস করে,
—খেতে ভালো হয়নি?
শ্রুতি মুখ গোমড়া করে বলে,
—না ভালো হয়নি।
সাদাফ অবাক হয়ে ভাবছে ওর তো রান্নার হাত অনেক ভালো তাহলে আজ কি হলো?
তখন শ্রুতি আবার বলে উঠে,
—শুধু ভালো হয়নি অনেক বেশি ভালো হয়েছে খেতে।
এবার শ্রুতি,সাদাফ ও মেহের একসাথে হেসে উঠে। তখন সাদাফ উঠে নিজের রুমের ভেতর যায় এবং হাতে একটা গিটার নিয়ে ফিরে আসে। শ্রুতি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সাদাফের দিকে। সাদাফ শ্রুতির দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে গিটার বাজানো শুরু করে।
——
কেনো রোদের মতো হাসলে না?
আমায় ভালোবাসলেনা,
আমার কাছে দিন ফুরালেও আসলেনা!!
এই মন কেমনের জন্মদিন,চুপ করে থাকা কঠিন!!
তোমার কাছে খরস্রোতাও গতিহীন!!
নতুন সকাল গুলো কপাল ছুঁলো তোমারই,
দূরে গেলেও এটাই সত্যি তুমি আমারই,শুধু আমারই!!
কেনো রোদের মতো হাসলে না?
আমায় ভালোবাসলেনা?
আমার কাছে দিন ফুরালেও আসলেনা!!
জলে ভিজা,চোখ বুঝা,ঘুম খুঁজা ভোর,
নিশানা তীর স্মৃতির ভীড় এলোমেলো ঘরদোর!!
মেঘ আসে,এলো কিসে?
ছুয়ে দিলে সব চুপ!!
সেই মেঘবাড়ি কার গল্প হোক,শহরজুড়ে বৃষ্টি হউক!!
রৌদ্রুর হউক আজ শুধুই তার ডাকনাম!!
পাতাভরা শব্দ ঢুকলো না,
কালবৈশাখীর মতো মুখজোড়া,
সব ভিজে যাক,শুধু বেচে থাক অভিমান!!
এতটুকু গেয়ে সাদাফ থামে। শ্রুতির এখনও ঘোর ভাঙেনি। সাদাফ যে এতো সুন্দর গাইতে পারে সে স্বপ্নেও ভাবেনি। শ্রুতির খুব ইচ্ছা ছিলো সাদাফের গলায় গান শুনবে। আজ তা এভাবে হঠাৎ করেই সাদাফ পূরণ করে দিবে তা কে জানতো। শ্রুতি হাসলো, সাদাফও শ্রুতির দিকে তাকিয়ে হাসলো।
একজোড়া প্রেমিক যোগল বুঝতে চাইছে একজন অপরজনের চোখের ভাষা। কি মুগ্ধকর সেই মূহুর্ত। তুষারের ন্যায় শীতল সেই চোখগুলো কি তাদের মনের খবর পড়তে পারছে?
মেহের ওদের কান্ড দেখে কেশে উঠে,
—এহেম এহেম।
সাদাফ ও শ্রুতি থতমত খেয়ে যায়, দুজনেই চোখ সরিয়ে ফেলে। হঠাৎ শ্রুতি তেষ্টা পেয়েছে বলে উঠে দাড়ায়। সাদাফ বলে,
—তুমি বসো,আমি পানি এনে দিচ্ছি।
সাদাফ গিয়ে এক গ্লাস পানি এনে শ্রুতিকে দেয়। শ্রুতি ঢকঢক করে পুরো পানি খেয়ে ফেললো। শ্রুতি সাদাফের দিকে তাকিয়ে আছে। সাদাফ সেই তাকানোর অর্থ বুঝে গিয়ে আরেক গ্লাস পানি আনে, শ্রুতি তাও গড়গড় করে খেয়ে নেয়। শ্রুতি আবারও সাদাফের দিকে তাকায়। এবার সাদাফ গিয়ে পুরো জগ নিয়ে আসলো। শ্রুতি পুরো জগের পানি শেষ করে দিয়েও বলে তার তৃষ্ণা মেটেনি।
এতে মেহের অবাক হয়ে যায়। যে মেয়ে দিনে ভালো করে দুই গ্লাস পানি পর্যন্ত খায় না সে এখন পুরো এক জগ পানি মুহুর্তেই সাবাড় করে দিয়ে বলছে এখনও তৃষ্ণা মেটেনি।
সাদাফের মনে মনে ভয় হচ্ছে। এরকম তেষ্টা তো সাদাফের মতো প্রাণীদেরই হয়। সাদাফের ভাবনার দেয়াল ভেঙে শ্রুতি দৌড় দেয় বাইরে।
—আরেহ আরেহ শ্রুতি কই যাচ্ছিস। দাড়া,দাড়া বলছি।
শ্রুতি দ্রুতবেগে দৌড়ে সেই যায়গাটি ত্যাগ করলো। সাদাফও শ্রুতির পেছন পেছন দৌড়ে যায়।
সাদাফের বাসায় মেহের একা বনে আছে। মেহের একা তার উপর একটু আগে যে ঘটনাটা ঘটে গেলো সেটা ভেবেই মেহেরের ভয়ে প্রাণআত্মা বেরিয়ে যাচ্ছে। শ্রতিকে খুঁজে পাবে তো সাদাফ? যদি শ্রুতির কিছু হয়ে যায় তবে শ্রুতির মা’কে কি জবাব দিবে? আর ও নিজেকে কি জবার দিবে? তার নিজের প্ল্যান মোতাবেকই তো আসলো শ্রুতি। মেহেরের খুব কান্না পাচ্ছে। পরক্ষণে আবার বলছে দূরর এসব কি ভাবছি। শ্রুতিকে সাথে নিয়ে সাদাফ নিশ্চয় ফিরে আসবে।
সাদাফ শ্রুতিকে আশেপাশে অনেক জায়গায় খুঁজেছে কোথাও পেলো না। সাদাফের অনেক টেনশন হচ্ছে মেয়েটা গেলো কই। সাদাফ আনমনা হয়ে হাঁটছে। প্রচুর চিন্তা হচ্ছে। একসময় হাটতে হাটতে হঠাৎ কিছু একটার মধ্যে পা লেগে সাদাফ রাস্তায় পড়ে যেতে নেয় তখনই সে নিজেকে সামলিয়ে নেয় আর তাকিয়ে দেখে একজন মহিলার লাশ। সাদাফ লাশটাকে ভালো করে দেখছে। গলার কাছে দু’টো ফুঁটো খুব স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সে। সাদাফ বুঝতে পেরেছে এটা তার মতোই কোনো ভ্যাম্পায়ারেে কাজ। অজানা আশঙ্কায় সাদাফের মন বলছে সে ভ্যাম্পায়ারটা শ্রুতি নয় তো? দূরর কি সব কি।
এবার সাদাফের ধুকপুকানিটা আরও বেড়ে চলেছে। শ্রুতি কোথায়?
চলবে….