#ভ্যাম্পায়ার_লাভার
পর্বঃ-১৫
লেখনীতেঃ- কাশপিয়া মেহজাবিন রিমশা।
তারা অত্যন্ত বুদ্ধির সহিত সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ডিলিট করে দেয়।তাই পুলিশরা এ নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে। খুব শীঘ্রই পুলিশ তাদের খুঁজে বের করবে বলে তাদের ধারনা।
শ্রুতি আর মেহের ঠিক করলো আজ ঠং দোকানে চা খাবে।সেখানে গিয়ে টিভির সকল চ্যানেলে এই নিউজ দেখে শ্রুতির খুব কান্না পাচ্ছে। সে খুনি তো আর কেউ নয় সে নিজেই। চারিদিকের সব কেমন জানি এলোমেলো লাগছে শ্রুতির।
মেহের কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে,
—এবার কি হবে? ওরা যদি সব জানতে পারে?
মেহেরের কথা শুনে শ্রুতি আরও ঘাবড়ে যায়। সে কখনও ভাবেনি তার জীবনে খুনের মতো একটা ব্যাপার সে ঘটাবে। এতো কম সময়ের মধ্যে শ্রুতির জীবনের সব উলটপালট হয়ে গেলো। সবকিছু আগের মতো থাকলে খুব কি ক্ষতি হয়ে যেতো?
মেহের শ্রুতিকে নিয়ে ক্যাম্পাসে চলে আসে। ওরা তিনজনে একসাথে কলেজে এসেছে। সাদাফ একটু আসি বলে সেই যে গেলো এখনও আসার নাম গন্ধ নেই।
শ্রুতি, মেহের দুজনেই আজ ক্লাস করছেনা। ক্যান্টিনে বসে আছে।
শ্রুতি ভাবছে তাকে এই বিপদ থেকে কে উদ্ধার করতে পারবে? কে পারবে? হঠাৎ সেই নীল পাথরটার কথা মনে পড়ে শ্রুতির।
—আচ্ছা মেহের এখন সানজানাকে ডাকলে কেমন হয়?
মেহের কোল্ড ড্রিংকস খাচ্ছিলো। বাইরের এই গরমে এটাই একটু আরাম দিতে পারে বলে ধারণা করে মেহের। শ্রুতির কথা শুনে মুখ থেকে সব কোল্ড ড্রিংকস ফেলে দিলো।
শ্রুতি মেহেরের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে। সে কি এমন বলেছে যে সব ড্রিংকস উবচে ফেলতে হবে।
—কিছু তো একটা বলেছি তোকে। মুখ থেকে ড্রিংকস ফেলে দিতে বলিনি।(বলল শ্রুতি)
—তুই যা বললি তা শুনে কি আর মুখে খাবার রাখার জায়গা থাকে? তোর কথাতেই তো পেট ভরে গেছে।
—কথাতে আবার পেট ভরে? আমার কথাটা এতোটাই বড় ছিলো নাহ,হুহ্।
—শ্রুতি পাবলিক প্লেসে তুই একটা আত্মাকে ডাকবি?
—কেউ তো দেখতে পাবে না।
—সেটাই তো আসল সমস্যা।
—কিভাবে?
—তুই সানজানার সাথে কথা বলবি। কেউ সানজানাকে দেখবে না। সবাই দেখবে তুই একা একা কথা বলছিস। এতে রেজাল্ট কি দাড়ালো?
—কী?
—তোর নামের সহযোগী হবে তখন মেন্টাল নামটা। মেন্টাল শ্রুতি। দারুণ না?
কথাটা বলেই মেহের হাসতে থাকে। শ্রুতির এখন ইচ্ছে করছে মেহেরকে চিবিয়ে খেতে।
—শাঁকচুন্নি (রেগে বলে শ্রুতি)
—জ্বি বলুন।
—ঢং তুই তোর উনার সাথে কর, আমার সাথে না। আমাকে সমাধান দে এখন আমি কি করবো?
—শ্রুতি বিষয়টা আমরা যতটা জটিল ভাবছি,ততটা জটিল না।
—মানে?
—দেখ নিউজে লেখা ছিলো কেউ সেই সময়ের নিউজ নিখুঁতভাবে ডিলিট করে দেয়। তার মানে এই দাঁড়ায় পুলিশদের হাতে কোনো প্রমাণ নেই।
—তাও আমি নিশ্চিত হতে পারছি না মেহের।
—তুই একটু শান্ত হো। সাদাফের সাথে কথা বলে দেখা যাক কি হয়।
——
কিছুক্ষণ পর….
সাদাফ আসছে।
—শ্রুতি দেখ সাদাফ এদিকেই আসছে।
—হু দেখতে পাচ্ছি।
—কি ব্যাপার? তোমাদের এতো চিন্তিত লাগছে কেনো?
শ্রুতি তখন সাদাফের হাতটি খপ করে ধরে ফেলে। সাদাফ বলে,
— কি হয়েছে সেটা তো বলবে।
—সাদাফ মিডিয়ায় এখন কালকের খুনটা নিয়ে যে তোলপাড় চলছে এতে আমার খুব ভয় হচ্ছে।
—চুপ আস্তে বলো আর ভয় পেয়ো না।
—ভয় পেয়ো না বললেই কি ভয় চলে যাবে?
—না তা যাবে না।
—তাহলে?
এর উত্তরে সাদাফ কিছুই বললো না। শ্রুতি মুখ ঘোমটা করে বসে থাকে। মেহের বলে উঠে,
—সাদাফ একটা আশ্চর্যজনক ব্যাপার কি জানো? কেউ মার্ডারের সেই ফুটেজ টা ডিলিট করে দিয়েছে। কে হতে পারে সেটা ভাবতেই আমার ভয় হচ্ছে।
সাদাফ জিজ্ঞেস করলো,
—ভয় হচ্ছে কেনো? শ্রুতি যে মার্ডারার সেটা তো আর প্রমাণ হবে না। ভয়ের কি আছে এতে?
—একদিকে সেটা যেমন আনন্দের অন্যদিকে কে এসব লুকাতে চায় সেটা ভয়ের। কারন যে ভিডিও ফুটেজ লুকিয়েছে সে নিশ্চয়ই জানে খুনি কে? পরে সে যদি শ্রুতিকে ব্ল্যাকমেইল করে।
মেহেরের “ব্ল্যাকমেইল” কথাটা শুনে শ্রুতির বুকে দ্রিম দ্রিম করে ড্রাম বাজছে।
সাদাফ শ্রুতির এরকম মুখ দেখে না হেসে পারলো না। এতে শ্রুতির আরও কান্না পায়। ঠোঁট চেপে ধরে কান্না থামানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
—শ্রুতি?
—হুহ
—ভয় হচ্ছে।
—নাহ তো ভয় আবার কেনো হবে।(অনেকটা অভিমান করে বলে শ্রুতি)
—যদি জানো অজানা লোকটি আমি,তাহলেও ভয় হবে?
শ্রুতি তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে সাদাফের দিকে তাকায়। সাদাফের কথাগুলো শ্রুতির কানে বারবার বাজতে থাকে।
“যদি জানো অজানা লোকটি আমি,তাহলেও ভয় হবে?”
“যদি জানো অজানা লোকটি আমি,তাহলেও ভয় হবে?”-এইভাবে।
মেহেরও অবাক হয়ে শুনতে থাকে সব।
সাদাফ হেসে বলতে শুরু করে,
—কাল রাতে যখন তোমাকে কোলে করে আনছিলাম। তখনই ডান পাশের বিল্ডিংয়ে চোখ যায়। আমার তখন মনে পড়ে সিসিটিভির কথা। ভালো করে খুঁজতে থাকি আশেপাশে কোথাও সিসিটিভি আছে কি-না। ওই যে বললাম ডান পাশের বিল্ডিং? ওই বিল্ডিংয়েই ছিলো সিসিটিভি। এদিকে নির্জন বলে আর কেউ সিসিটিভি লাগানোর প্রয়োজনবোধ করেনি। তারপর উড়ে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ টা নষ্ট করে দিই।
—কিহ তুমি উড়তে পারো?(বললো মেহের)
—হুম,তোমাকে শ্রুতি বলেনি?
মেহের শ্রুতির দিকে তাকিয়ে বলে,
—নাহ তো।
—হ্যাঁ পারি।
—তোমার পাখা আছে? দেখাবে একদিন?
—পাখা নেই।
—তাহলে উড়ো কিভাবে?
—সে রহস্যটা আমর নিজেরও অজানা। তবে হাওয়ার ভাসতে পারি এটা আমার ক্ষমতা।
মেহের মনে মনে বলে, এদের সম্পর্কে আরও কত কি যে জানতে হবে?
ওহ
আল্লাহ আমাকে তুইল্লা নাও,তুইল্লা নাও।
—হিরো আলমের ডায়ালগ তো ভালোই রপ্ত করছো।
সাদাফের এহেন কথায় মেহের,শ্রুতি চমকায় এবং জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে সাদাফের দিকে তাকায়।
—আরেহ কুল কুল। আমাকে নিয়ে কেউ মনে মনে বললে সেটাও আমি বুঝতে পারি।
সাদাফের এসব কথায় মেহের আরেকটুর জন্য হার্ট অ্যাটাক করছে না। মেহেরের মনে হচ্ছে আরও অনেক ঘটনা আছে সেসব জানার পর সে হার্ট অ্যাটাক টা করবে।
তখন শ্রুতি বলল,
—সাদাফ বড় কোনো তান্ত্রিকের খুঁজ পেয়েছো? যে আমাদের এই সমস্যার সমাধান দিতে পারবে?
—হুম এতক্ষণ আমি তান্ত্রিকের খুঁজেই ছিলাম। আমার এক বন্ধুকে বলাতে ও দেখিয়ে দিলো।
—কিহ? বন্ধু মানে? কাকে বলেছো?
—আরেহ শ্রুতি এতো উত্তেজিত হইয়ো না। আবিরকে বলেছি। তুমি নিজেও জানো ও একজন সাইকোলজিস্ট আর এর পাশাপাশি ও প্যারানরমাল ব্যাপারগুলো নিয়ে বইটই পড়ে।
—মানে মেহেরের আবির?
—জ্বি।
সাদাফের কথায় মেহেরের মাথায় একটার পর একটা বাজ পড়ছে। আবির, সাদাফের বন্ধু? কই আবির তো কখনও তাকে কিছু বলেনি।
—আবির ভাইয়া কি করে তোমার বন্ধু হলো?
—কলেজে আসার পর থেকেই। কলেজে আমরা একসাথে ছিলাম এখন আমরা আলাদা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি।
—আমাদের আগে কখনও বলনি যে?
—এমনিই।
একটু পর সাদাফ আবারও বলে উঠে।
—শ্রুতি?
—হু
—তোমার হলুদ গোলাপ খুব পছন্দ না?
—হুম তুমি কি করে জানলে?
—অজানার কি আছে?
—আমি তো তোমাকে কখনও বলিনি এই ব্যাপারে।
—জেনে নিয়েছি।
—কিভাবে?
— তোমার বাসায়তো আগে রোজ সকালে হলুদ গোলাপের তোড়া যেতো।
শ্রুতি এবার বুঝতে পারে এসব কার কাজ ছিলো। ওইদিকে মেহেরের অবস্থা বেগতিক। একটার পর একটা কথা শুনে মেহের ঠিকমতো তাল সামলাতে পারছে না।
—আবার হলুদ গোলাপ আসলো কোত্থেকে? (বলল মেহের)
সাদাফ হেসে উঠে আবারও। শ্রুতি মেহের দু’জনেই সাদাফের দিকে তাকিয়ে আছে। যে তাকানোর অর্থ তারা সব জানতে চায়।
—মেহের তোমার থেকে কৌশলে জেনে নিয়েছিলাম শ্রুতির সম্পর্কে। আমি যেদিন থেকে শ্রুতিকে পছন্দ করতাম সেদিনের পর থেকে দিতাম, ওকে ভালো ও বাসতাম। তাই প্রতিদিন সকালে ওর পছন্দের হলুদ গোলাপ আর সাথে একটা চিঠি রেখে আসতাম। তারপর একদিন গোলাপ নিয়ে যেতে দেরী হয়ে যায়। শ্রুতির বাসার সামনে গিয়ে শুনি ওর মা ওকে বকছে ফুল নিয়ে। তাই আর দিই নি।
সাদাফের কথা শুনে শ্রুতি মনে মনে বলে,
এই লোক লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে নিয়েছে। আগের মতো গোমড়া মুখো থাকলে ভালো হতো। এখন কথায় কথায় ভালোবাসার কথা বলে তাকে লজ্জা দেয়।
সাদাফ শ্রুতির মনে কথা বুঝতে পেরে হেসে বলে,
—জানো শ্রুতি উইলিয়াম শেক্সপিয়ার কি বলেছেন?
—কি?
—উনি বলেছেন,
যে তার ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারে না,
সে ভালোবাসতেই জানে না।
শ্রুতির আবারও লজ্জা পেলো। মেহেরের সামনে সাদাফ এগুলো না বললে হতো না? এখন যদি মাঠি ফাঁক থাকতে তাহলে সেখানে শ্রুতি টুপ করে ডুকে যেতো।
চলবে….
নামাজ রোজা কায়েম করুন।