#ভ্যাম্পায়ার_লাভার,পর্বঃ-১৯
লেখনীতেঃ- কাশপিয়া মেহজাবিন রিমশা।
—উফফ নেগেটিভ বলিও না তো। তুমি এরকম কিছুই করবে না। বিশ্বাস ছিলো। (সাদাফ)
—এখন নেই?(শ্রুতি)
—সবসময় থাকবে। (সাদাফ)
—আচ্ছা শুনো, দুজনেই দুজনকে একসাথে কল দিচ্ছিলাম তাই নাম্বার বিজি আসছিলো। (শ্রুতি)
—ওহহ তাই বলো।(সাদাফ)
—রাখছি, কাল দেখা হবে।
(শ্রুতি)
—অকে বাই।
——-
“আমি তোমাকে ভালোবাসি
চাইলে প্রতিদিন বলা হয়ে উঠে না ভালোবাসি।
হাতে হাত রেখে বলা হয়না-” কখনও ছেড়ে যাবো না”
পায়ে পা মিলিয়ে কখনও বলা হয়না-“সারাজীবন একসাথে চলবো”
আমি তোমায় ভালোবাসি,
আমি কয়েক পাতা জুড়ে চিঠি লিখতে পারিনা,
আবার হাত কেটেও তোমার নাম লিখতে পারি না,
সারাদিন একবারও বলা হয়না ভালোবাসি,
কিন্তু,
আমি ফোন দিয়ে তোমার ঘুম ভেঙে দিতে পারি,
আমি সারাক্ষণ তোমার সাথে ঝগড়া করতে পারি,
আমি তোমাকে রাগিয়ে দিতে পারি,
তোমার সাথে পাগলামো করতে পারি।
——-
পরদিন কলেজে সাদাফ আর শ্রুতির দেখা হয়। দেখা যায় মেহের আসেনি অথচ আবির এসেছে। আবির তো এই কলেজে পড়ে না। তাহলে কেনো এসেছে?
—আবির ভাই আজ হঠাৎ এখানে? মেহের কোথায়?
—মেহেরকে আসলে হসপিটাল থেকে…
আবির আর কথাটা বলতে পারলো না। শ্রুতির আবির মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলল,
—কি মেহের হসপিটালে? কি হয়েছে মেহেরের? ও এখন কোথায়? সাদাফ চলো, এখনই মেহেরের কাছে যাবো।
সাদাফ হা করে শ্রুতির কথা গিলছে।
—আরেহ আবিরকে তো পুরো কথা শেষ করতে দিবে। আবির বল কি হয়েছে মেহেরের?
—আমি অফিস যাওয়ার পথে দেখলাম মেহের ঢুলে ঢুলে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে। হোটচ খেয়ে পড়ে যাবে এই সময়ে আমি গিয়ে ধরি। তখন দেখি ওর পুরো গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। আমি ওকে তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে যাই। তারপর ডাক্তার দেখিয়ে, ওষুধ নিয়ে বাসায় পৌঁছে দিছে আসি। ও এখন ঠিক আছে। টেনশন নিওনা।
মেহেরের এমন অবস্থা শুনে শ্রুতি কাঁদতে থাকে। শ্রুতির কান্নায় সাদাফের বুকে আবারও রক্তক্ষরণ শুরু হয়। আবির ওদের বিদায় দিয়ে চলে যায়। ওরা ঠিক করলো ক্লাস শেষে মেহেরকে দেখতে যাবে।
——–
মেহের এখন অনেকটা সুস্থ,উহু অনেকটটা না, পুরোপুরি সুস্থ। বলতে গেলে শ্রুতিকে দেখে মেহের খুশিতে গদগদ হয়ে সুস্থ হয়ে গেছে।
আবির ফোন করেছিলো আরও একবার ওদের সবাইকে তান্ত্রিকের কাছে যেতে হবে বলে জানিয়েছে সাদাফকে।আবির মেহেরকে কড়া নির্দেশ দিয়েছে বেড রেস্টে থাকতে। ও যেনো না যায়। কিন্তু মেহের নাছোড়বান্দা, শ্রুতির সাথে সে যাবেই যাবে। সবাই মিলে তান্ত্রিকের উদ্দেশ্য রওনা দেয়।
শ্রুতির মনে খচখচ করছে, কোন অভিশাপের ফলে আজ সে ভ্যাম্পায়ার। এমতাবস্থায় সাদাফ গাড়ি থামাতে বলে। তখন ওদের গাড়ি জঙ্গলের পাশে। আবির গাড়ি থামানোর সাথে সাথে সাদাফ গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। সাদাফ কিজন্য নেমেছে শ্রুতি বুঝতে পারে। সাদাফের সাথে শ্রুতিও বের হয়ে যায়।
প্রায় দেড় ঘন্টা পর…
ফিরে আসে শ্রুতি আর সাদাফ,
—হয়েছে? (বলল মেহের)
—হুম(হেসে উত্তর দিলো শ্রুতি)
——-
সবাই তান্ত্রিকের কাছে পৌঁছে গেছে। সাদাফ,শ্রুতি, মেহের আর আবিরের মন কু-ডাকছে। কি জানি ওরা কি শুনতে চলেছে তান্ত্রিকের কাছ থেকে।
নাহ আজ আর অন্ধকার নয়।তান্ত্রিকের কক্ষটি আজ আলোয় ভরা। তান্ত্রিক চোখ বন্ধ করে বসে আছে।
শ্রুতি মনে মনে বলছে ব্যাটা সারাদিন কি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে থাকিস?
তান্ত্রিকের চারিপাশে বিভিন্ন রঙের গুড়া। ঘি,একটা বড় চামচ, মানুষের মাথার খুলি আর হাড়গোড়। সব মিলিয়ে ভয়ংকর এক পরিবেশ। শ্রুতি সাদাফকে খামচে ধরে, আরেকটু হলে সাদাফের ফর্সা হাত থেকে রক্ত বেরুবে। ব্যাথায় চোখমুখ খিঁচে আছে সাদাফ। তাও কষ্টটা শ্রুতিকে বুঝতে দিচ্ছে না।
অন্যদিকে মেহের মনে মনে ঠিক করলো আজ কিছুতেই ওদের বুঝতে দিবে না ও ভয় পাচ্ছে। তাই মেহের আজ আবিবের হাত ধরেনি। আবিরের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে স্বাভাবিকভাবে। মনেই হচ্ছেনা আবিরের পাশে একটা ভিতুর ডিম দাঁড়িয়ে আছে।
তৎক্ষনাৎ তান্ত্রিক চোখ খুলে বলল,
—এসেছিস তোরা? প্রস্তুত আছিস?
তান্ত্রিকের এমন কথায় সবাই ঘাবড়ে যায়। আবির বলল,
—বাবা কিসের প্রস্তুতি? কি হয়েছে সব বলুন।
তান্ত্রিক হেসে বলল,
—আমি যা ধারণা করেছি তাই হয়েছে। এরা দুজনেই অভিশপ্ত রক্তচোষা।
তান্ত্রিকের এহেন কথায় ভয়ে শ্রুতির হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। মনে হচ্ছে শরীরের সমস্ত শিরা উপশিরা দর চলাচল স্তব্ধ হয়ে আছে। কেউ আর চলতে চাইছে না।
সাদাফের মনে হচ্ছে এই মাত্র, এই মুহুর্তে সে অনেক বড় শক খেয়েছে। সে অভিশপ্ত হতে যাবে কেনো? সে-তো একজন ভ্যাম্পায়ার রাজার ছেলে আর ভ্যাম্পায়ার রাজপুত্র। সাদাফের মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। আর ওদের কেই বা অভিশাপ দিলো?কখন দিলো? এর সাক্ষী কে?
তান্ত্রিক ওদের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বলল,
—আমার এই সাধনাটি কখনও মিথ্যা বলবে না। শ্রুতি মেয়েটা মানুষ থেকে রক্তচোষা হয়েছে, এটা থেকে স্পষ্ট মেয়েটা অভিশপ্ত। অভিশাপের ফলেই সে রক্তচোষায় পরিণত হয়েছে। আর সাদাফ, তার জানামতে সে ছোট থেকেই রক্তচোষা।
কিন্তু না,
সাদাফ এটা ভুল। তুই তোর বাবা-মায়ের আসল সন্তান নস। একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিলো তোর ১৫ বছর বয়সে। সে এক্সিডেন্টে তোর আসল মা-বাবা মারা যায়। এক্সিডেন্ট টা হয়েছিলো কাল তোরা যে জায়গায় এক্সিডেন্ট করেছিলি। ঠিক সেই জায়গায় তোর মা-বাবা আর তোর এক্সিডেন্ট হয়। এক্সিডেন্ট টা হয়েছিলো সেই অশুভ সয়তানের জন্য। সে পথে ভ্যাম্পায়ার রাজা হাটতে বের হলে তোকে উদ্ধার করে।
তান্ত্রিকের কথা শুনে ওরা চারজনের মাথায় বাজ পড়ে। তার মানে সাদাফও আগে মানুষ ছিলো।
সাদাফ কিছু বলতে যাবে তখন খেয়াল করলো ওর মুখ দিয়ে কোনো কথায় বের হচ্ছেনা।সাদাফের চোখ দুটো জলে টলমল করছিলো। তা দেখে শ্রুতি সাদাফকে স্বান্তনা দেয়। আবির একবার সাদাফকে পরখ করে নিয়ে তান্ত্রিককে বলল,
—বাবা আপনি এসব কিভাবে জেনেছেন? আর আমাদের যে কাল এক্সডেন্ট হয়েছে সেটাই বা কি করে জানলেন?
তান্ত্রিক হেসে বলল,
—তোদের বলেছিলাম না বড় যজ্ঞ করবো? সেটার মাধ্যমেই জেনেছি।
সাদাফ বলল,
—বাবা আরেকটু খেয়াল করে দেখুন আমার মা-বাবার মুখটা দেখেছিলেন কি-না? আপনার মনে পড়লে আমি ওদের স্ক্যাচ বানাবো।
কাঁদতে কাঁদতে সাদাফ বলল কথাগুলো,সাথে শ্রুতি, মেহেরও কাদছে।
আবির বলল,
—সাদাফ তুই পাগল হয়ে গেছিস? কারও দিয়ে স্ক্যাচ বানালে বাবার খবর মিডিয়া জেনে যাবে।
—তো কি করবো আমি? আমার যে সব থেকেও নেই।
এবার চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো সাদাফ।
তান্ত্রিক বললো,
—সাদাফ বাবা তুই শান্ত হো। আর বল তোরা কাল কোনো স্বপ্ন দেখেছিলি?
সাদাফ কিছু বলছেনা,সেই তখন থেকে কেঁদে চলেছে। শ্রুতি সাদাফকে জড়িয়ে ধরে,আর তান্ত্রিককে বলল,
—হ্যাঁ বাবা দেখেছি,কিন্তু আপনি জানলেন কি করে?
তান্ত্রিক একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলো,
—কাল কেউ আমার স্বপ্নে এসেছিলো। আমাকে হুমকি দিয়েছিলো আমি যাতে তোদের সাহায্য না করি। নইলে আমাকে জানে মেরে দিবে। তাই আমি ভাবলাম তোরাও দেখেছিস হয়তো।
তান্ত্রিকের কথা শুনে সাদাফ চোখের পানি মুছে তান্ত্রিকের দিকে তাকায়। শ্রুতি বলল,
—হ্যাঁ বাবা দেখেছি।
তারপর তান্ত্রিকের কথায় শ্রুতি পুরো স্বপ্নটা বলে, তান্ত্রিক সাদাফকেও জিজ্ঞেস করে একই স্বপ্ন সেও দেখেছে কি-না। তখন সাদাফ মাথা নেড়ে সায় দেয় যার অর্থ হ্যাঁ।
তান্ত্রিক শ্রুতির মুখ থেকে সব শুনে বলল,
—স্বপ্নে গুহাটায় কিভাবে গেছিলি মনে আছে?
শ্রুতি সোজাসাপটা উত্তর দেয়,
—কেনো?হেঁটে?
শ্রুতির প্রতিউত্তর শুনে তান্ত্রিক ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।
—মা সেটা বলিনি,কিভাবে বলতে কোন জায়গা দিয়ে,কিভাবে গেছিস ওসব?
শ্রুতি অনেকক্ষণ মনে করার চেষ্টা করলো, কিন্তু পুরোপুরি মনে পড়ছে না। তখন সাদাফ বললো আমার মনে আছে।
চলবে…?