তারকারাজি দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ-১২

0
819

তারকারাজি দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ-১২
লেখনীতে- অহনা নুযহাত চৌধুরী

মিইয়ে যাওয়া বৃদ্ধ সূর্যের লোহিত আকৃতিটির অর্ধেকটা ঢেকে গেছে ধূসর মেঘের তুলতুলে কম্বলে। ক্রূরমতি চারটে কাক এই লগ্নেও তাদের বিরস সুরে চিৎকার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সানাম স্পষ্ট উপলব্ধি করতে পারে তাদের নিজস্ব ভাষার বাগবিতণ্ডাটি। কিন্তু অর্থবোধক শব্দের অভাবে তা যেন মেয়েটির মস্তিষ্কের নাগালে এসেও ছুটে পালিয়ে যাচ্ছে বারবার।
সানামের কাকা রেদোয়ান সাহেবের বাসা থেকে জরুরি তাগিদে ডাক পড়েছে বলেই সানামের এখানে ছুটে আসা। সে জানে— হয় তার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে নয়তো বাসার কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এই মুহূর্তে এমন ভাবনাটা আসার কারণও তার কাছে পরিষ্কার। শুধুমাত্র এই দুটো কারণেই যে তার কাকা-কাকি তাকে স্মরণ করে! কিন্তু আজ সেই ভাবনা অবশ্য বাস্তবে রূপ নিল না। যৌবনোচ্ছল মেয়েটির জানা এই অপরিবর্তিত বিষয়টি যখন সত্যিই মোড়ে ঘুরে গেল তখন সানামকেও বেশ চিন্তিত দেখালো। আসলে তাকে ডেকে আনার মূল কারণটি কী? কথার উপর অনেক কথা যখন তীব্র বেগে ঊর্ধ্বমুখী বেড়েই চলল ঠিক তার মাঝেই কথার রেশ ধরে রেদোয়ান সাহেবকে বলতে শোনা গেল,

“ দেখো সুমনা, আমরা তোমার বাল্যবিবাহ তো আর দিচ্ছি না? তুমি যা আছো তাতেই যথেষ্ট একটা বিয়ে সেরে ফেলার। আমি এখন রিটায়ার্ড। যা পাই আর রাহাত যা পাঠায় তাতেও আমাদের চলাটা যে কষ্টের হয়ে গেছে, এমনটা না। এই বয়সে ঔষধপত্র কিনেই তো টাকা চলে যায় অনেক। সেখানে বিলাসিতার কথা বাদ-ই দিলাম! তবে মাস শেষে হাতে বিশ-ত্রিশ হাজার টাকা থাকুক তা কে না-চাইবে? ”

গাম্ভীর্যের সাথে কথাটা বলেই রেদোয়ান সাহেব মৃদু কাশলেন। অতঃপর আবারও বলতে শুরু করলেন,

“ আমরা চাই একটা ভালো ছেলে দেখে তোমার বিয়েটা দিয়ে দিতে। তোমার খরচ বহন করবে সাথে পড়াশোনা বা তুমি চাকরি-বাকরি করতে চাইলে তা-ও করতে পারবে ঠিক এমন ছেলের সাথেই বিয়েটা দিতে চাই। কিন্তু তুমি যেসব কাজকর্ম করে বিয়ে ভাঙতাছো তা তো আমাদের জন্যও বোঝা হয়ে যাচ্ছে। আশেপাশের মানুষ তো ওঁৎ পেতে থাকে কথা বলার জন্য। এতগুলো বিয়ের ঘর আসার পরও তোমার বিয়ে হচ্ছে না বলে কি কম কথা শোনায় মানুষ? তারা তো আর ভেতরের কথা জানে না। পরে দেখা যাবে তুমি একটা সময় বিয়ে করতে চাইছো কিন্তু আশেপাশের মানুষরাই ভাংচি দিচ্ছে বিয়েতে; তখন? তাই আমি তোমাকে ডাকলাম। তুমি যদি বলো তোমার বিয়েতে মত আছে তো আমরা পাত্র দেখব এবং তোমার যোগ্য পাত্রই দেখব। আর মত না থাকলে আমাদের এতো জোরাজোরি করার কিছু নাই। অবশ্যই তোমার জীবন তুমি বুঝবে। আমরা জোর করার কেউ না এখানে। রাহাত দেশে ফিরলে ওর বিয়েটা এবার দিয়ে দিব। আমাদের ছেলে বিদেশ থেকে লেখাপড়া করছে, আমাদের দোতলা বাংলো আছে শুনেই তো আর মেয়ের বাবা মেয়েকে দিয়ে দিবে না! বাড়িটা আমাদের দাদার তৈরি তাই তুমি নিজেই তো দেখতে পাচ্ছো কেমন দশা। ঘরে বউ আনতে গেলে বাড়ি-ঘরও তো আগে পরিপাটি করতে হবে? তোমার চাচিকে তো চেনোই। ছেলে সামনের মাসে আসতাছে শুনেই পাত্রী দেখা আরম্ভ করে দিছে। তুমি যদি একটু না বোঝো তাহলে আমরা আমাদের সমস্যাটা কীভাবে সামাল দিব? হাজার হোক তুমি আমার ভাইয়ের মেয়ে। তোমার প্রতি আমাদের কর্তব্যটাও তো আমরা ভুলে যেতে পারি না, সুমনা। ”

ওনার কথা সমাপ্ত হয়েছে বুঝতে পেরে সানাম এইবার সোজা হয়ে বসল। তার চাহনির তীক্ষ্ণতা মুহূর্তেই যেন এলোমেলো করে দিচ্ছে রেদোয়ানকে। তখন সানামকে পাল্টা প্রশ্ন করতে শুনলেন তিনি,

“ তুমি বিয়েটা দিয়ে আমার খরচের দায়ভার অন্যের কাঁধে চাপাতে চাচ্ছো, তাই তো? আচ্ছা, ঠিক আছে। তোমাদের কষ্ট করে পাত্র দেখতে হবে না। আমি আমার খরচ চালিয়ে নিতে পারব কোনোমতে। ”

এই কথা শুনে রেদোয়ান সাহেব একটু অস্বস্তিতেই পড়ে বললেন,

“ যদি তোমার পছন্দের কেউ থাকে তো জানাতে পারো। আমরা কথা বলে দেখব। ”

সানাম দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফিরে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াল। খুব সাবলীলভাবেই উত্তর দিল,

“ আফসোস! আমার তেমন কেউ নেই যার কাঁধে বোঝার মতো বসে থাকতে পারব। কোনো প্রয়োজনে আসলে ডাক দিও। আমি চলে যাচ্ছি, কাকা। সন্ধ্যার মধ্যে হলে থাকতে হবে। ”

সানাম দাঁড়াল না। সন্ধ্যার ক্ষীণ রক্তিম আলো মাথায় করে হেঁটে চলল ভার্সিটির পথে। মিলিয়ে চলল একের পর এক জটাময় সমাধানের তালিকা। তার চাচা-চাচি যে তার জন্য যা-তা পাত্র দেখছে, তা নয়। কিন্তু সানাম এই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে নিজেকে নিয়েই অত্যধিক চিন্তিত। এই যে তার শ্যামবর্ণের উজ্জ্বল ত্বক…! এই ত্বকের প্রতি প্রকৃতপক্ষেই ক’জন ছেলে মুগ্ধ হয়ে বৈবাহিক জীবনকে স্বার্থক মনে করবে তা বেশ ভাবায় তাকে। তার উপর সে না সংসারী রমণী, আর না ভালো রাঁধুনি কিংবা শান্তশিষ্ট মেয়ে। তার যেসব গুণ আছে তা নিয়ে সংসার করার জন্য ‘পার্ফেক্ট’ বা ‘আস্তে-ধীরে শিখে যাবে’র মতো শিরোলিপিগুলো সে নিজেই নিজের উপর আঁটতে পারে না। তাহলে বৈবাহিক সম্পর্কে জড়িয়ে নিজের জীবনটাকে আরও বেশি অগোছালো করার মতো কর্মে নিয়োজিত হওয়া কি সত্যিই তার জন্য কল্যাণকর? কিছুক্ষণ ভেবে সানাম নিজ থেকেই উত্তর দিল— একদমই না। তাকে নিজের খরচ নিজেরই বহন করতে হবে যা হুট করেই তার জন্য প্রচণ্ড চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সানামের আজও গলা ফাটিয়ে বলতে ইচ্ছা করে— তার জীবনটা এমন অগোছালো হওয়ার আদৌ কি কোনো অর্থ আছে? কী হতো যদি সে বাবা-মার সাথেই মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়তো? তাহলে আজ তো তার জীবনটা এমন বিবর্ণতার অতল সমুদ্রে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন পাথরের মতো হতো না। সে যে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে হঠাৎই জীবনের মোড় ঘুরে যাওয়ায় তার নিদারুণ দশাটা!

সানাম তার চলার পথেই একবার স্মরণে আনলো নিশান-রিশানদের কথা। বন্ধু দুজনা যখন অবিশ্রান্ত পরিশ্রম করে জীবন সংগ্রামে জয়ের মুখ দেখেছে তখন বান্ধবী হিসেবে তাদের সাহায্য পাওয়াটা অসাধারণ ব্যাপার বলে মনে হলো না সানামের। সে চলার পথেই ভীষণ তাড়াহুড়োয় কল করল রিশানকে। সবটাই উন্মুক্ত করে বলার পর আশার আলোটা সানাম ভালোই দেখতে পেল তখন। বিবর্ণতার ছায়ায় এক চিলতে রঙিন আলো যেন ঝুপ করেই নেমে এলো তার চোখ দুটোয়। সানাম মুহূর্তেই ভেবে নিল একটি কথা— তার পরিবার ছাড়া জীবনটায় এই বন্ধুত্বটাই যেন একমাত্র আশ্রয়ের শামিয়ানা…! শুকতারা সানামের একটি পরিবার!

অপরদিকে তখন সানামের সাথে কথা বলে ফোন রাখার পর রিশান গিয়ে দাঁড়াল জানালার গ্রিল ঘেঁষে। রুক্ষ মাঘী হাওয়া মুহূর্তেই আঁচড়ে পড়ল তার চোখেমুখে। উড়িয়ে চলল তার খসখসে চুল। সে দেখল বাহিরের চারপাশটা ঠিক যতটা দেখা যায় এই জানালা দিয়ে। চারপাশের নিয়ন বাতিগুলো দীপ্তি ছড়িয়ে আলোকিত করেছে ছুটন্ত গাড়ি-ঘোড়া, প্রশস্ত পিচঢালা সড়ক আর… আর ঘোমটা টেনে নিজেকে আড়াল করা, মাস্ক পরিহিতা কিশোরীর তনু দেহ। যখন সেই অপরিচিতা কিশোরীর চোখ থামল রিশানের চোখে তখন খুব গভীরভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখা গেল রিশানকেও। মেয়েটা বোধহয় অপ্রস্তুত হলো, ভীত হলো খুব। তাই তো দ্রুত পা চালিয়ে সরে গেল সেই অবস্থান থেকে। রিশান অবশ্য চেষ্টা করেছিল সেই রহস্যময়ীকে আরেকটুখানি দেখার। কিন্তু এই কনক্রিটের শহরে তা সম্ভব হলো না বিন্দুমাত্রও।

তখন ঘরে খটখটে এক আওয়াজ হলো। মেয়েটিকে দেখতে পাওয়ার তৃষ্ণার মাঝে ব্যাঘাত ঘটতেই পিছে ঘুরে তাকালো রিশান। দেখতে পেল— নিশান কোথাও যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। সে প্রশ্ন করল,

“ কই যাস এখন? ”

নিশান তৈরি হওয়ার ব্যস্ততাতেই উত্তর দিল,

“ সম্রাট স্যার আছে না যার কাছে ঈশা গনিত পড়তো ক্লাস নাইনে? ওই স্যারের কাছে। ”

রিশান ঠিক বুঝতে পারল না নিশানের ভাবাবেগ। সে এগিয়ে এসে প্রশ্ন করল,

“ তোর কী কাম ওইখানে? পরে আসতে দেরি হইলে হলে ঢুকতে পারবি না-কি? ”

“ হু, বাইক নিয়ে যাইতাছি। দেরি করব না অতো। ”

“ কিন্তু ওইখানে ক্যান? বলবি তো? ”

নিশান তার প্যান্টের বেল্টটা লাগিয়ে নিয়েই রিশানের দিকে তাকাল। উদোম বুকটা শার্টে ঢাকতে-ঢাকতে বলল,

“ এসএসসি ক্যান্ডিডেটরা তেমন স্কুলে যাইতাছে না শুনলাম। আর ঈশা গেলেও ওর সাথে দেখা করা বা ওরে চোখে দেখাটাও অসম্ভব হয়ে গেছে আমাদের জন্য। সেই সাথে ও যার যার কাছে পড়তো তাদের কাছেও পড়া বাদ দিয়ে দিছে। কিন্তু অঙ্ক? ও অঙ্কে কেমন কাঁচা তা তো জানিস-ই। আমার মনে হয় না ও সম্রাট স্যারের পড়া বাদ দিবে। স্কুলে ওর সাথে দেখা করা মুশকিল কিন্তু ওইখানে তো আর মুশকিল হবে না! আমি এইবার সিরিয়াসলি জানতে চাই ঠিক কী হইতেছে আমাদের সাথে। ও সত্যিই বাসা থেকে বের হয়ে আসছে না-কি ওর মায়ের মতোই আমাদের সাথে নাটক করতেছে? দেখতেছিস না— ওর মা প্রতিদিন হলের সামনে এসে কী নাটক করে যাচ্ছে? মান-সম্মান তো এমনিই গেছে। এই মহিলার প্যানপ্যানানি বন্ধ না-করা পর্যন্ত আমি আর বসে থাকতে পারব না। ”

রিশান আহত দৃষ্টিতে তাকাল। কী ক্লান্ত ও দুর্বল সেই চাহনি! সে স্পষ্টতই নরম স্বরে বলল,

“ গিয়ে লাভ নাই। ঈশা ওখানেও পড়ে না। ”

নিশান তার জ্যাকেটটা হাতে নিয়েও বিছানায় রেখে দিল। ভাইয়ের কথাটা যেন বোধগম্য হলো না তার। সে রিশানের দিকে দু’কদম এগিয়ে এসে বলল,

“ মানে? তুই খোঁজ নিছিলি? আমারে বলিস নাই ক্যান? ”

রিশান বসল বিছানার এক কোণে। ঘরে তাদের রুমমেট উপস্থিত নেই। তাই অপ্রকট কণ্ঠেই বলতে লাগল,

“ বলে কী হবে? দিন শেষে তো সেই একই খবর। ও ম্যাথ প্রাইভেট পড়তাছে না। আর পড়লেও অন্যকারো কাছে, সম্রাট স্যারের কাছে না। ওর বান্ধবীরা যেসব কোচিং-প্রাইভেটে পড়ে আমি সেখানেও খোঁজ নিছি। ওরে পাই নাই। ওর বান্ধবীগুলাও তো মুখ খুলে না! না-হলে একটা কিছুও তো বুঝতে পারতাম? ”

এ-কথা শুনে নিশান সজোরে তার পাশের চেয়ারটিতে লাথি মারল। তেজস্বী স্বরে ক্ষোভ প্রকাশ করল,

“ একটা মানুষ এভাবে গায়েব ক্যামনে হয়ে যায়, রিশান? কোনো ক্লু-ই তো পাওয়া যাইতেছে না এইবার। ”

“ একটা-ই উপায় আছে এইবার। এটাই হয়তো আমাদের জন্য লাস্ট চান্স। এটা না-হলে পুলিশের হেল্প নেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না কোনো। ”

নিশানের মস্তিষ্কটা যেন কেমন ঝিমঝিমিয়ে উঠল। সেই চেয়ারটি টেনেই রিশানের মুখোমুখি বসতে দেখা গেল তাকে। কপালের কয়েকটি ভাঁজেই জানার আগ্রহ প্রকাশ করল সে। রিশান বলল,

“ একটা মেয়েকে দেখিস না আমাদের জানালাটার সামনে দাঁড়ায় থাকতে? আমার কেন জানি মনে হয় ওইটাই ঈশা। চল, একদিন ধরি ওই মেয়েটাকে। মুখ দেখলেই তো বুঝতে পারব যে, ও আমাদের বোন কি-না! ”

এই কথাটা নিশানের যে একবারও মনে হয়নি, তা না। ওই মেয়েটাও ঈশার মতোই কৃশাঙ্গী কিশোরী। তবে মেয়েটা যখন থেকে বুদ্ধির ছলে সন্ধ্যার পর আসতে শুরু করল তখন তাকে আঁটকে, সেই কাঙ্ক্ষিত মুখশ্রীটা দেখার সাহস করে উঠতে পারেনি নিশান। যদি অন্য মেয়ে হয় তো ধোলাইটা তো তাকেই দেওয়া হবে! কী বিশ্রীভাবেই-না অসম্মানিত হতে হতো তাকে! তবে রিশান যখন সর্বশেষে ‘আমাদের বোন’ কথাটি উল্লেখ করল তখন নিশান সটান দাঁড়িয়ে বলিষ্ঠ প্রতিবাদ জানালো,

“ আমাদের বোন, কে? ও? কোনোদিন-ই না। ওরা সবাই নাটক করতাছে আমাদের সাথে। তুই বলতাছিস ওই মেয়েটার কথা, তাই না? ওইটা যদি ঈশা হয় তাহলে ও ক্যামনে জানলো আমরা নতুন করে এই হলের এই রুমেই থাকি? কারণ ওর মা আমাদের ফলো করে জানছে আর ওকে বলছে। আর ওর ড্রেসআপ দেখছিস কতো সভ্য? ঈশা বাসা থেকে বের হয়ে আসলে এতদিন টিকতে পারতো? ও কার কাছে থাকে যে ওর ড্রেসআপ এমন উন্নত, এমন সভ্য হলো? ও সত্যিই যদি আমাদের জন্য বাসা থেকে বের হয়ে আসতো তাহলে সবকিছুই না-হয় বাদ দিলাম… অন্তত দেখা তো করতো আমাদের সাথে? ও করে নাই। আর নীলরা তো বলছিলই যে, ওরা ঈশাকে বাসায় রেখেই আসছিল। ওরা কিছু জানলেও তো আমাদের বলতো, তাই না? ওই মহিলারা আমাদের ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করতাছে, বুঝিস না? সব নাটক… সব! ”

এক দমে কথাগুলো বলেই নিজ বিছানায় কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে পড়ল নিশান। তার রাগে বিড়বিড় করতে থাকাটা বুঝতে পারে রিশান। বুঝতে পারে কতটা ভালোবাসে সে তার ওই বোনটাকে। শুধু সেই অনুভূতিটা প্রকাশ পায় না ‘মা’ সম্বোধিত মানুষটার গড়া বিশাল এক পাথুরে প্রাচীরের জন্য। বোনটাকে অনেকবার স্মরণে এনে কাঁদার পরও দু’ভাই দু’জনের কাছে প্রকাশ করতে পারে না ঠিক কতটা ভালোবাসলে ওই মোমের পুতুলটাকে বুকের খাঁচা ভেঙে তাতে বন্ধ করে রাখতে চাওয়া যায়। সকলকিছু দুঃস্বপ্ন বলে বুঝিয়ে, খুব আদরে-যতনে নিজেদের কাছে রাখতে চাওয়া যায়। ও যে বড়ই নির্দোষ! বড়ই আদরে সাজিয়ে রাখা মোমের পুতুল! ওর জন্য নিজেকে ভোলা যায় কিন্তু ওকে কীভাবে ভুলবে তারা দুই ভাই? ও যে তাদের বোন… অত্যন্ত আদরের বোন। বোনের প্রতি ভালোবাসা কি এতটাই ঠুনকো হয় যে তাকে স্মরণ করবে না? না-কি তাকে খোয়ানোর কষ্টটাই-বা অতোটা ঠুনকো হচ্ছে? সেই কষ্ট যে সৃষ্টি করেছে দুই দগ্ধান হৃদয়ের করুণ চিৎকার!

কিন্তু সেই অন্তর কাঁপানো চিৎকার ভাঙতে পারে না ওই পাথুরে প্রাচীরটাকে। সেই নির্মম সত্যটাকে মুহূর্তেই মিথ্যে বলে হাওয়ায় উড়িয়ে দেওয়া যায় না কোনোমতেই। ত্রয়ের জ্ঞাতিত্বে চাপা হাহাকার ছাড়া থাকে না কোনো প্রকাশ্য ভালোবাসার ভাষা!

#চলবে ইন শা আল্লাহ!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here