#অল্প_পাগলামি_সীমাহীন_ভালোবাসা,#২য়_পর্ব,০৩
#ফারজানা_আক্তার
২য়_পর্ব
একবার আম্মুকে কল দিয়ে দেখি, “আম্মু তুমি কি আমাকে ভুল বাড়ির ঠিকানা দিয়েছো” রাহেলা বেগম অবাক হয়ে বলে “কেন?কি হয়েছে? তুই কি বাড়ি খুঁজে পাচ্ছিস না?আমরা তো সেই কবেই চলে এসেছি বাবা।।”
কাব্য- আমি বাড়ির সামনে কিন্তু মনে হচ্ছে এটা ভুল বাড়ি
মা- বাড়ির গেটের সামনে কি একটা বড় করে “সূর্যমুখী হাউজ” লেখা আছে?
কাব্য- হ্যাঁ
মা- তবে আর দেরি না করে দ্রুত চলে আয় বাবা। সবাই তোর জন্যই অপেক্ষা করছে।
কাব্য- আচ্ছা
কাব্য এক পা দু পা করেই ধীরে ধীরে সামনের দিকে আগাচ্ছে। আর ভাবছে মেয়ে আমার পছন্দ হলে নাকি আজকেই পাকা কথা সেরে ফেলবে,কি করবো এখন? পছন্দ না করার কোনো খুঁত তো এই মেয়ের মাঝে নেই, আর যা আছে তা তো সবাইকে বললেও হয়তো বিশ্বাস করবেনা, কেনইবা বিশ্বাস করবে? এতো সুন্দর রূপবতী একটা মেয়ে যে এত্তো কিপটা আর ফাজিল হতে পারে এটা তো কেউ ধারণাও করতে পারবেনা। এসব ভাবতে ভাবতে সে কলিং বেল চাপ দিলো। আলিয়া বেগম হাসিমুখেই দরজা খুললো
কাব্য- আসসালামু আলাইকুম, আমি কাব্য।
আলিয়া বেগম মুচকি হেসে বলে “ওয়ালাইকুমুস সালাম,আমি তোমাকে চিনি বাবা, মাশাআল্লাহ কত বড় হয়েছো তুমি, সেই ছোটকালে দেখেছিলাম তোমায়, তারপর তোমরা সপরিবার বিদেশ চলে গেলে”।। পিঁছন থেকে রাহেলা বেগম বলে ” সব কথা কি ঘরের বাহিরে দাঁড় করিয়েই বলবি?নাকি আমার ছেলেকে ঘরে ডাকবি? আলিয়া বেগম বলে “কি যে বলিস না তুই ” কাব্য কে বলে “আসো বাবা”।
কাব্য ঘরে ডুকতেই অবাক, খুব সুন্দর করেই বাড়িটা সাজানো হয়েছে। কাব্য শুধু বাড়িটাই দেখছে। এমন সময় জামাল সাহেব বলে ” বেটা শুধু বাড়ি নয়, আমার শালির মেয়েটাও কোনো পরির থেকে কম নয়” কাব্য মনে মনে চিন্তা করে পরি হোক বা জ্বিন আমি দেখা মাত্রই না করে দিবো। কাব্য ব্রু কুঁচকে বাবাকে প্রশ্ন করে “বাবা, শালির মেয়ে মানে কি?
বাবা- মানে তোর হবু শাশুড়ি হলো আমার মামা শশুড়ের শালার মেয়ে
কাব্য- মাশাআল্লাহ, খুব কাছের আত্মীয় তো। (গম্ভীর মুখে)
কাব্য এর গম্ভীর মুখ দেখেই তার বাবা ভয় পেয়ে গেলো, আর কিছু না বলে তিনি চুপ হয়ে রইলেন। একমাত্র মা ছাড়া বাকি সবাই তাকে বাঘের মতো ভয় পাই।
দশমিনিট পর,,
হিয়া সিড়ি দিয়ে নামছে,সাথে তার বান্ধবী রিতা। আশ্চর্য ব্যাপার হলো সবাই হিয়ার দিকে না তাকিয়ে কাব্য এর দিকেই তাকিয়ে আছে। কারণ কাব্য হিয়াকে দেখে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেছে, আর হা করে হিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে যেন এর আগে কোনো মেয়ে দেখেনি,, নীল শাড়ি, চোখে হালকা কাজল, হাতে নীল চুরি, ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক, কপালে ছোট্ট একটা নীল টিপ, ঠোঁটের নিচের তিলটা যেন প্রাণকারা, চুলগুলো কোপা করেছে যেন চোখ ফিরানো দায়। কাব্য ভাবছে কিভাবে এখন আর না করবো, আমি মুগ্ধ এই বাহারি রুপের।
কাব্য এর বোন কথা কাব্যকে হালকা করে একটা ধাক্কা দিয়ে বলে ” কিরে ভাইয়া তুই তো আসতেই চাসনি, আর এখন তো..………. চুপ কর নয়তো এখানেই মাটিচাপা দিয়ে রেখে যাবো। কাব্য লজ্জা পেয়ে বোনকে ধমক দিলো কিন্তু চোখ হিয়ার দিক থেকে সরাইনি। হিয়া এসে একে একে সবাইকে সালাম দিলো। কিন্তু কাব্য এর দিকে একবারো তাকালো না। হয়তো লজ্জা পেয়েছে মেয়েটা।
কাব্য মনে মনে চিন্তা করে মেয়েটা ফাজিল হলেও বেশ লজ্জাবতী। “এই লজ্জাবতীর মায়ায় যেন অতয় সমুদ্রে তলিয়ে গেছে মন” ভাবনার জগত থেকে ফিরে সে বলে হিয়ার সাথে আলাদা কথা বলতে চায়। কণ্ঠস্বর শুনেই হিয়া চমকে গেছে, কারণ এতক্ষণ কাব্য আর কোনো কথা বলেনি। হিয়া চোখ তুলে তাকাতেই দেখে কাব্য, সে চিৎকার করে বলে উঠে “কিপটা বিড়ালছানা ” কাব্য তো অবাক সবার সামনে করছেটা কি মেয়েটা।
মিজান সাহেব বলে “আম্মু কি বলছো এসব, আজকের দিনে কোনো ফাইজলামি করিওনা আম্মু ”
আলিয়া বেগম রাগি গলায় বলল “আরো আদর করে করে বাঁদর বানাও মেয়েকে”। হিয়া ভ্রু কুঁচকে বলে ” বাবা দেখেছো মা আবারো আমায় সবার সামনে বাঁদর বলেছে”। মিজান সাহেব এবার মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে “খবরদার আমার মামুনিকে কেউ কিছু বলবেনা”। সবাই হাসতেছে৷ কারণ সবাই ভেবেছে হিয়া দুষ্ঠামি করেছে। হিয়ার দুষ্টুমির কথা সবারই জানা আছে শুধু কাব্য ছাড়া, এমনকি কাব্য তাদের কোনো আত্মীয়কেই ভালো করে চেনেনা, কারণ সে সবসময়ই কাজ নিয়ে ব্যাস্ত থাকে, ঘরেও কম থাকে, সবসময় শুধু অফিস আর অফিস। কোনো দাওয়াতেও তাকে নিতে পারেনা কেউ। এখনো মায়ের চাপে পরে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। তার মায়ের ধারণা একমাত্র হিয়া ছাড়া আর কেউ এই গম্ভীর ছেলেকে চেঞ্জ করতে পারবেনা। বিদেশ থেকে ফিরেছে একবছর হলো প্রায়, কিন্তু তবুও এখনো কারো সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারেনি তাকে।
হিয়া দাঁড়িয়ে আছে তার রুমের বেলকনিতে। বুকটা তার ভিষণ কাঁপছে। পাশে দাঁড়িয়ে আছে কাব্য, কেউ কোনো কথা বলছেনা। কাব্য একনজরে তাকিয়ে আছে হিয়ার দিকে আর হিয়া তাকিয়ে আছে বিচিত্রময় ওই নীল গগনের দিকে।
হিয়ার চুল বাতাসে উড়ে উড়ে মুখে পরতেছে আর বিরক্ত হচ্ছে কাব্য, সে এক হাত জিন্সের পকেটে রেখে অন্য হাত দিয়ে হিয়ার মুখে পরে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিতে ব্যাস্ত।
হিয়া কেঁপে কেঁপে উঠছে বারবার কিন্তু কিছু বলার সাহস পাচ্ছেনা। হিয়া এবার আর চুপ থাকতে পারছেনা, তার মনে হচ্ছে আর একমিনিট কথা না বলতে পারলে দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে সে।
সে একটু সরে গিয়ে বলে “আপনার মতো গম্ভীর মহিষকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না আঙ্কেল, আপনি সবাইকে বলে দিন আপনার আমাকে পছন্দ হয়নি”।
কাব্য রাগি কন্ঠে “হোয়াট রাবিস,, আবারও আঙ্কেল বললে আমায়, আর এসব কি ভাষা হ্যাঁ?”
হিয়া ভ্রু কুঁচকে বলে ” আচ্ছা এবার থেকে কাকু ডাকবো”
কাব্য হিয়াকে টেনে নিজের খুব কাছে নিয়ে আসে, দুজন এতো কাছকাছি যে একে অপরের নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে। কাব্য হিয়াকে জড়িয়ে ধরে কানে কানে বলে “যা ডাকার ডাকো, বিয়ে তো আমি তোমাকেই করবো রাক্ষসী”
হিয়া রাগি কন্ঠে বলে “ওই গরুর গোবর, আমি তোকে বিয়ে করবোনা কিছুতেই”
আচ্ছা তবে যাও তোমার আম্মু কে বলো এই কথা, কাব্য মুচকি হেসে কথাটি বলেই ছেড়ে দিলো হিয়াকে। হিয়া যেন নিশ্বাস ফিরে পেলে।
এবার তো হিয়া করুণ সুরে বলে “আম্মুকে বললে তো আমার মাথায় আর চুল একটাও থাকবেনা”
_____________
কাব্য হেসে হেসে চলে যাচ্ছে হিয়া পেঁছন থেকে তাকিয়ে আছে তার যাওয়ার দিকে। আর ভাবছে, এই ছেলেটা এমন কেন?আমার এতো আবুল তাবুল বকবক শোনেও বিরক্ত হলোনা কেন? গম্ভীর হলেও বলতে হবে ছেলেটা দেখতে খুব সুন্দর,, ফর্সা চেহেরায় খুঁচা খুঁচা দাঁড়িতে নূর চমকায়। তবে কি এই গন্ডারের গলায় ঝুলায় দিবে আম্মু আমাকে???????????
রেস্পন্সের উপর ভিত্তি করে পরের পর্ব দিবো।। নয়তো এখানেই শেষ করে দিবো
#চলবে
#অল্প_পাগলামি_সীমাহীন_ভালোবাসা
#৩য়_পর্ব
#ফারজানা_আক্তার
কাব্য নিচে এসে সবাইকে বলে “বিয়ের আয়োজন করুন”। সবাই খুশি হয়ে বলে আলহামদুলিল্লাহ। জামাল সাহেব বলে ” তবে আজকেই পাকা কথা সেরে ফেলি, কি বলেন শালিকা বেয়াই?? আলেয়া মুচকি হেঁসে বলে “কেন নয়”। মিজান সাহেব একটু গম্ভীর হয়ে বলে ” কিন্তু তার আগে আমি একটু কথা বলতে চাই মামনির সাথে, ওর মতামতেরও একটা ব্যাপার আছে।
কাব্য ভয় পেয়ে গেলো এটা শোনে। হিয়া তো এখন না করে দিবে, কি করবে এখন কাব্য। ফুল স্পিডে পাখা ঘুরছে মাথার উপড় তবুও তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের আনাগোনা। থাক এখন না বললে পরে রাজি করিয়ে নিবো,মনে মনে এটা বলে নিজেকে শান্তনা দেয় সে। “যদি না পাই রুপসী তোরে, তবে অস্তিত্ব হারাবে বালুচরে”।
মা, একা দাঁড়িয়ে কি করছো? মিজান সাহেবের কন্ঠ শোনে হিয়া পিঁছনে তাকায়।
হিয়া- আকাশ দেখছিলাম বাবা, খুব সুন্দর আজকের আকাশ, কোনো মেঘ নেই
বাবা- হ্যাঁ মা খুব সুন্দর। একটা কথা বলতাম
হিয়া- বলো বাবা
বাবা- তোর কি কাব্যকে পছন্দ?
হিয়া মুখ নিচু করে লজ্জা কন্ঠে বলে “এক দেখাতে কাউকে পছন্দ করা যায়না বাবা, তোমরা যা সিদ্ধান্ত নিবে তাতেই আমি রাজি”
বাবা- তবে পাকা কথা সেরে ফেলি। ৩মাস পর তোর ফাইনাল পরিক্ষার পর বিয়ের তারিখ দিবো।
বাবা চলে গেলো। হিয়া আবার আকাশের নীলিমায় ডুব দিয়েছে, আর ভাবছে, জানিনা কি হবে, তবে ওই গিরগিটিকে সহ্য করার প্রস্তুতি নিতে হবে ভিষণভাবে।
রাতে খাওয়া শেষে কাব্য রা চলে যাবে এমন সময় কাব্য কথা কে ডেকে বলে সে হিয়ার সাথে একটু কথা বলবে, কথা সেটা তার মাকে বলল তারপর মা তাদের কে বারান্দায় পাঠালো কথা বলার জন্য।
মিস্টার কিপটা বিড়ালাছানা আমি কিন্তু এই তিনমাসে অনেক কিছুই করতে পারি, পালিয়ে যেতেও পারি, চোখ টিপ মেরে কাব্যকে বলে হিয়া। কাব্য এর এবার রাগ উঠে গেলো, কারণ সে নাম্বার নেওয়ার জন্য আর একটু প্রাণভরে দেখার জন্য আলাদা কথা বলতে চেয়েছে। কাব্য রাগে গিজ গিজ করতে করতে বলে, পালিয়ে দেখাও আগে তবে চিনবে এই কাব্য কে।
হিয়া- রাগলে কেউ একজনকে খুব সুন্দর দেখায়। (মুচকি হেঁসে)
কাব্য- এর আগেও অনেক মেয়ে বলেছে,(দুষ্টু হেসে)
হিয়া রেগে গেলো এটা শোনে কিন্তু কাব্য কে বুঝতে দিলোনা, সে মুখ ভেঙ্গিয়ে বলে “লেজবিহীন টিকটিকির আবার প্রশংসা করবো আমি, আমার বয়ে গেছে”
কাব্য- তো কার কথা বলছিলে? (ভ্রু কুঁচকে)
হিয়া- নিহান
কাব্য- তোমার বয়ফ্রেন্ড?
হিয়া- না। ছোট ভাই
কাব্য- দেখিনি কেন? কোথায় সে?
হিয়া- বন্ধুদের সাথে রাঙ্গামাটি গেছে ঘুরতে। কালকে আসবে
কাব্য করুণ সুরে বলে “সত্যি কি ওর কথা বলেছিলে “?
হিয়া একটু ভাব নিয়ে বলে “তো কি কিপটা বিড়ালছানা কে বলেছি”?
কাব্য রাগ সামলাতে না পেরে এক টানে হিয়া কে নিজের বাহুডুরে আবদ্ধ করে নিলো, হিয়া কিছু বুঝে উঠার আগেই তার ঠোঁট জোড়া নিজের দখলে নিয়ে নিলো কাব্য। তিন মিনিট পর ছেড়ে দিলো।
হিয়া যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
হিয়া নিচের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ আচমকা বলে উঠলো “আজকের আগে কোনো পুরুষ স্পর্শ করেনি কখনো, প্লিজ আমার সতীত্ব কেড়ে নিবেননা, সতীত্ব নারীর অহংকার,, তিনমাস অপেক্ষা করুন”। কথাগুলো বলার পর টুপ টুপ করে দু’ফোটা পানি পরে হিয়ার চোখ বেয়ে।
কাব্য অবাক, এই রাক্ষসী চঞ্চল মেয়েটা এতো সুন্দর করে গুছিয়ে কিভাবে বলেছে কথাগুলো।
কাব্য খুব যত্ন করে তার চোখের জলগুলো মুছে দিলো তারপর বললো ” তোমার চোখের জল হৃদয়ে কাঁটার মতো গাঁথে, প্লিজ কেঁদনা কখনো, তুমি রাগিয়েছো বলেই কন্ট্রোল করতে পারিনি”।
হিয়া- আসুন এবার,, আল্লাহ হাফেজ
কাব্য- তাড়িয়ে দিচ্ছো?
হিয়া- একবার ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে দেখুন।
কাব্য- মাত্র ১২টা
হিয়া- হায় আল্লাহ, গরুর গোবরে কই কি? এই সময়ে তো আমি মরার মতো ঘুমায় প্রতিদিন।
কাব্য- ননসেন্স
হিয়া- ওই ইংরেজি তে গালি দিলেন কেন?
কাব্য- তুমি বাংলাতে গালি দিয়েছো কেন?
হিয়া- আমার অভ্যাস
কাব্য- গুড।। তোমার বান্ধবী টা কিন্তু হেব্বি কিউট। ওর নাম কি?
হিয়া রাগি কন্ঠে বলে “রিতা”।
কাব্য মুচকি হেসে বলে “রিতা না থেকে চলে গেলো কেনো?
হিয়া রাগে গিজ গিজ করতে করতে কাব্য এর শার্টের কলার ধরে টান দিয়ে বলে “তাতে তোর কি রে তেলাপোকার গোবর? বেশি দরদ দেখাতে হবেনা ওর জন্য,, ওর জন্য আমিই যথেষ্ট “।
কাব্য অবাক হলো ওর এমন রুপ দেখে আবার খুব হাসিও পাচ্ছে তার।
কাব্য- আচ্ছা (গম্ভীর হয়ে)
হিয়া কাব্য এর গম্ভীর মুখ দেখে কলার ছেড়ে দিলো। সে ভয়ে ঢুক গিলে একটু পিঁছিয়ে গেছে।
কাব্য ইচ্ছে করে মুখ গম্ভীর করেছে যাতে হিয়া ভয় পায়।
________________
কথা- ভাইয়া রাত হয়েছে অনেক, চল এবার
কাব্য- হিয়া আমি কিন্তু কল দিবো, ঘুমুতে দিবোনা সারা রাত, (কানের কাছে গিয়ে ফিস ফিস করে বলে)
কাব্য চলে গেলো। হিয়া কথা কে বলে “তো তুমি এবার এসএসসি পরিক্ষা দিবে, প্রস্তুতি কেমন চলছে?”
কথা- জি ভাবি ভালোই, দোয়া করবেন।
হিয়া- তুমি না হয় আজ থেকে যাও আমার সাথে ।
কথা- না ভাবি, অন্য একদিন আসবো
হিয়া- আসবে কিন্তু
কথা- অবশ্যই আসবো।
_____________
রাত ২টা বাজে ১০মিনিট, হিয়া ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেছে, এখন কেউ কানের কাছে
ঢোল বাজালেও সে আর উঠবেনা।
কাব্য প্রায় ৩০টা কল দিলো হিয়াকে, সে তো ফোন সাইলেন্ট করে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে আর এদিকে কাব্যর মন খারাপ হয়ে গেলো।।
অশান্ত হয়ে গেছে কাব্য।
হয়তো ঘুমিয়ে পরেছে পাগলীটা।।
কাব্য বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো, আকাশের দিকে এক মন এক দ্যানে তাকিয়ে আছে সে,, “জীবনটাও কি অদ্ভুত, একদিনেই কতকিছু বদলে গেলো। এই প্রথম কোনো মেয়েকে দেখে হৃদবাগানে প্রেমের পদ্মফুল ফুটেছে,, এতো সুন্দরও কি করে মানুষ হতে পারে?
তোমারে দেখিয়া নয়নে খুশিরও চাঁদ উঠিয়াছে
ভালবাসি তোমায় হৃদয় বারেবার কহিতেছে”।
_____________
সকাল ৯টা বেজে গেছে, অথচ হিয়ার ঘুম ভাঙ্গার নামগন্ধ নেই, আলিয়া বেগম তিনবার এসে ডেকে গেছে, কিন্তু এই মেয়ের কোনো রেস্পন্স নেই। দশটা থেকে আবার কলেজ আছে।
আলিয়া বেগমের রাগ উঠে গেলো।
আলিয়া বেগম এক বালতি পানি এনে মেয়ের মুখে গায়ে ঢেলে দিলেন।
হিয়া এক লাফে শোয়া থেকে উঠে যায় আচমকা মুখে গায়ে পানি পরায়,, ওই কোন গরুর গোবর রে পানি মারলো আমায়? আল্লাহ কি সুন্দর স্বপ্ন ছিলো,, সব শেষ হয়ে গেলো রে।। আঁআঁআঁ
কাঁদতে কাঁদতে এসব বলতে লাগলো হিয়া।
এতো বকবকটকটক না করে দ্রুত তৈরি হয়ে কলেজে যা। তিনমাস পর বিয়ে, শশুর বাড়িতে ঝাড়ু দিয়ে মেরে মেরে তুলবে শাশুড়ী ঘুম থেকে দেখিস। বাবারে বাবা, কিভাবে এতো ঘুম যেতে পারে এই মেয়ে আল্লাহই ভালো জানে।
আচমকা আলিয়া বেগমের কথা শুনে হিয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। তাহলে আম্মুই আমাকে পানি মেরেছে।
আজকেই বলবো আব্বুকে, আব্বু তোমাকে খুব বকবে দেখো, (ভ্রু কুঁচকে বলে কথাগুলো)
_________
হিয়া ঘড়ির দিকে তাকাতেই অবাক,, আল্লাহ আজকেও কলেজে দেরি হবে আমার। আব্দুল্লাহ স্যার তো গিলে খাবে আমায়, আল্লাহ এই গিরগিটির হাত থেকে রক্ষা করো আমায়।।
হিয়া তরি গরি করে কলেজে চলে গেলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে দশটা বাজতে আরো পাঁচ মিনিট বাকি আছে। হিয়া একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো। “আল্লাহ এই যাত্রায় তাহলে বেঁচে গেলাম গিরগিটি থুক্কু স্যারের হাত থেকে”। এটা বলেই খিলখিল করে হাসতে লাগলো নিজে নিজে।।
________
কলেজ ছুটির পর গেইটের সামনে আসতেই হিয়া চমকে গেলো, আর বিড়বিড় করে বলতে লাগলো ” এ কাকে দেখছি আমি”?
#চলবে