অল্প পাগলামী সীমাহীন ভালোবাসা-২,প্রথম_পর্ব

0
2944

অল্প পাগলামী সীমাহীন ভালোবাসা-২,প্রথম_পর্ব
#FarJana_Akther

লজ্জা করেনা এভাবে পেট দেখিয়ে শাড়ী পরে মানুষে ভরা এই মহলে আসতে? কে বলেছে কে শাড়ী পড়তে তোমায়? আমি যে এতো করে বারণ করেছি শাড়ী না পড়তে সেটা কি কানে যায়নি তোমার? কাকে ইমপ্রেস করতে চাইছো এই শ্যামলা বর্ণ শরীর দেখিয়ে? পাতলা শাড়ীতে নাভির তিলটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সেই খেয়াল কি আছে তোমার? ভুলে যেওনা এখন তুমি এক সন্তানের মা।

কাব্য রাগি কন্ঠে কথাগুলো বলে হিয়াকে টানতে টানতে রুমে নিয়ে যায়, কাব্যর মা আফিয়া বেগম দেখেও কিছু বলেনা কারণ বাড়ি ভর্তি মেহমান, কেননা আজ যে তাদের একমাত্র মেয়ে কথার বিয়ে। আফিয়া বেগম নিজেই জোর করেছিলো হিয়াকে এই শাড়ীটা পরার জন্য, হিয়া তো পড়তেই চায়নি, কিন্তু আফিয়া বেগম তার কোনো কথা না শুনেই পার্লারের মেয়েদের কে বলল এই শাড়ী পড়িয়ে হিয়াকে সাজিয়ে দিতে। কাব্য এমন আচরণ করবে তিনি ভাবতেই পারেনি। নাতি ফাইয়াজ কে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আফিয়া বেগম, মাত্র দেড়বছর ৪মাস চলছে ফাইয়াজের।

প্রায় তিন ঘন্টা সময় নিয়ে সেজেগুজে ৩২দাঁত দেখিয়ে হেসে হেসে সিড়ি দিয়ে নিচে নামছিলো হিয়া। এমন সময় কোথায় থেকে যেন হঠাৎ কাব্য এসে কথাগুলো বলে হিয়াকে গরুর মতো টানতে টানতে রুমের দিকে নিয়ে যায়।

~আরে ছাড়ুন বলছি আমায়, এভাবে গরুর মতো টানছেন কেন আমাকে?
কাব্যর হাতে থাবর দিতে দিতে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে হিয়া।
কাব্য হিয়াকে রুমে ঢুকিয়ে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়, কেঁপে উঠে হিয়া।

~আ আপনি দরজা বন্ধ করলেন কেন? আমাকে যেতে দিন, মেলা কাজ আছে আমার।
কোমরে হাত রেখে ছোট ছোট চোখ করে বলে হিয়া।
~জানা আছে এখন কি এমন কাজ আছে তোমার, ছেলেদেরকে শরীর দেখিয়ে ধ্যাই ধ্যাই করে নাচবে, এটাই তোমার মূল্যবান কাজ।
হিয়ার হাত মুচড়ে ধরে চোখ লাল করে শক্ত গলায় বলে কাব্য।
~আহ্ ছাড়ুন ব্যাথা লাগে। নয়তো চিল্লিয়ে পুরো বাড়িটা তুলে আপনার মাথায় ফেলবো, হুঁ বলে দিলাম।
চোখে পানি টলমল করছে হিয়ার।

~যাও ছেড়ে দিলাম, ওইদিন এনেছিলাম যে লাল গাউন, ওটা পড়ে আসো যাও।

হিয়া আর কথা না বাড়িয়ে লাল গাউনটা পড়ে আসে, চুলগুলো খোঁপা করা ছিলো, কাব্য গিয়ে খোঁপা টা খুলে দিয়ে বলে ‘খোলা চুলেই বেশ ভালো লাগে আমার জানপাখিটাকে’ এটা বলেই হিয়ার ঘারে নাক ঘসে কাব্য, শিউরে ওঠে হিয়া, লজ্জায় মুখটা লাল হয়ে গেছে একেবারে, সে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে নিচে চলে যায়। কাব্য সেখানেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লাজুক হাসে, “বউটার পাগলামী গুলো আর গেলো না, বিয়ের ৪বছরেও লজ্জা এইটুকু আর কমলোনা পাগলীটার’



বরযাত্রী চলে এসেছে, হিয়া বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, ফাইয়াজও জ্বালাতন করতেছে খুব। কিছুক্ষণ পর পর এসে কাব্যও বিরক্ত করে যাচ্ছে,, আর পারছেনা হিয়া, চোখ-মুখ খিঁচে সে চিল্লানী দিতেই ছেলেকে কোলে নিয়ে দৌড় দেয় কাব্য।।
হিয়া মুচকি হাসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে, আফিয়া বেগমও হাসে ওদের এসব খুনসুটি দেখে।।

বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়ে কথার বিদায় হওয়ার পর স্টেজে যে চেয়ার ছিলো সেখানে গিয়ে বসে হিয়া। বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে তাকে। হিয়ার শ্বশুর আফজাল সাহেব বলে ‘মা বেশি ক্লান্ত লাগলে রুমে গিয়ে বিশ্রাম নাও, বাকি সব কাল দেখা যাবে।
~নাহ আব্বু ঠিক আছি আমি।

নিহান দৌড়ে এসে বলে ” আপু, আঙ্কেল চলে যাচ্ছি আমরা, আব্বু ডাকছে আপনাদের।
এটা বলতেই হিয়া আর আফজাল সাহেব গেইটের দিকে পা বাড়ালো।

নিহান দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো “ইস মেয়েটা খুব দারুণ ছিলো, কিন্তু কে হতে পারে মেয়েটা? আপুকে জিজ্ঞেস করলেই তো বাঁশ দিবে।”



আফজাল সাহেব আর আফিয়া বেগম খুব জোড়াজুড়ি করেছিলো আজ রাত টা থাকার জন্য কিন্তু আলিয়া বেগম আর মিজান সাহেব রাজি হলো না এভাবে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে থাকতে।

মা বাবা চলে যাওয়ার পর হিয়া সোজা রুমে চলে যায়, কাব্যও পেঁছন পেঁছন যায় ফাইয়াজ কে নিয়ে। হিয়া চেঞ্জ করে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখে কাব্য ফাইয়াজ কে নিয়ে সারা রুমে পায়চারি করছে,

~কি হয়েছে বাবুর? এখনো ঘুম আসছেনা বুঝি ওর?
~নাহ, ক্ষিদে লেগেছে মনে হয়, তুমি ঘুম পারিয়ে দাও ওকে আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
বলেই ফাইয়াজকে হিয়ার কোলে দিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায় কাব্য।

হিয়া ফাইয়াজকে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে নিজেও ঘুমিয়ে পড়ে একসময়, সারাদিনের ক্লান্তি, ঘুম আসবে এটাই স্বাভাবিক।

কাব্য ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখে মা ছেলে দু’জনেই জড়োসড়ো হয়ে ঘুমচ্ছে। মুচকি হাসে কাব্য, কাব্য ধীরপায়ে হেটে যায় বিছানার দিকে। মা ছেলে দু’জনের কপালেই ভালোবাসার রেখা একেঁ দেয় কাব্য। কাব্যর ভেজা ঠোঁটের স্পর্শে একটু কেঁপে উঠে হিয়া। কাব্য মুচকি হেঁসে ফাইয়াজ আর হিয়ার গায়ে লেপ টা টেনে দেয়। নবেম্বর মাসের শুরু, একটু একটু শীতের ছোঁয়া লাগে রাতে ইদানীং। কাব্যও লেপ মুড়িয়ে ঘুমিয়ে যায় মা ছেলে দু’জনকে জড়িয়ে।



সারাঘরে রোদের আনাগোনা, ঝিকঝিক করছে পুরো ঘর। হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠে পড়ে হিয়া, ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখে ৯টা বাজে। পাশে তাকোতেই দেখে কাব্য ঘুমে আর ফাইয়াজ নেই।
বুকটা কেঁপে উঠে হিয়ার। সে অস্থির হয়ে দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। উঠে দাঁড়িয়ে একটু সামনের দিকে পা বাড়াতেই দেখে ফাইয়াজ কাব্যর পাশে বিছানার নিচে বসে বসে খেলা করছে একা একা, তাও কাব্যর ফোন দিয়ে। হিয়া দৌড়ে গিয়ে কোলে তুলে নেই ফাইয়াজকে। কাব্যর ফোনটা ফাইয়াজের হাত থেকে নিয়ে ফোন দিয়েই কাব্যর হাতে ঠাস করে লাগিয়ে দেয় একটা, কাব্য বিরক্তি কণ্ঠে একটু চিল্লিয়ে কোন বান্দর রে সকাল সকাল বলেই পেঁছনে ঘুরে দেখে হিয়া ফাইয়াজকে কোলে নিয়ে আগুনের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। হুড়মুড় করে কাব্য বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় হিয়ার সামনে।

~কি হয়েছে? সকাল সকাল নাগিনীর রুপ ধারণ করছো কেনো?
চোখ ডলতে ডলতে হাম তুলে বলে কাব্য।
~আপনার ঘুম এতো ভারী হলো কবে?
~কেনো কি হয়েছে?
চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করে বলে কাব্য।
~আপনার জন্য যদি আজকে ফাইয়াজের কিছু হয়ে যেতো?
চোখ লাল করে বলে হিয়া।
~মানে কি? সকাল সকাল কি আবুল তাবুল বকতেছো এসব?
~আমি বকি হ্যাঁ আমি বকি?
এটা বলেই এক হাত দিয়ে থাবরাতে লাগে হিয়া কাব্যকে।
~আরে আরে এমন করছো কেনো তুমি? বলবে তো আগে কি হয়েছে?
~বাবু আপনার গায়ের উপড় দিয়ে এসে খাট থেকে নেমে আপনার ফোন দিয়ে খেলছিলো নিচে বসে বসে। যদি ও নামার সময় পড়ে যেতো,, ব্যাথা পেতো।
~আচ্ছা বাবা সরি, আর হবেনা এমনটা। জানোই তো গতকাল কত পরিশ্রম করতে হয়েছে, গভীর ঘুম আসবে এটা তো স্বাভাবিক।
বলোই কাব্য ফাইয়াজকে কোলে নিয়ে আদর করতে থাকে।
হিয়া ভেঙচি দিয়ে চলে যায় গোসল করতে। সকাল সকাল গোসল না করলে যেন দিন শুরু হয়না তার।
কাব্য ফাইয়াজ কে নিয়ে লেপ মুড়িয়ে আবার শুয়ে পরে। কিন্তু শান্তি পাচ্ছেনা।

ছেলেটাও তার মায়ের মতোই বান্দর হয়েছে। যেমন মা তেমন ছেলে, লাইফটাকে ত্যানাত্যানা করেই ছাড়লো।
বিড়বিড় করে বলে কাব্য।

সামনের ডিসেম্বরে তাদের বিয়ের চারবছর পূর্ণ হবে, এখনো এই বাদাম পাগলীকে বিন্দুমাত্র চেঞ্জ করতে পারেনি কাব্য, এই একটাই আফসোস রয়ে গেলো কাব্যর।



হিয়া গোসল করে এসে রুমে পা রাখতেই দেখে কাব্য____

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here