অল্প_পাগলামী_সীমাহীন_ভালোবাসা২ #পর্ব_৩

0
1824

#অল্প_পাগলামী_সীমাহীন_ভালোবাসা২
#পর্ব_৩
#FarJana_Akther

ছিঃ আপনি এতো বাজে কেনো? একদম কাছে আসবেননা আমার, বহুত কাঁদিয়েছেন সন্ধ্যা থেকে, আর এখন রাত ২টা। ঢং করবেননা একদম , বলে দিলাম।
কান্না জড়িত কণ্ঠে জড়োসড়ো হয়ে বসে বলে হিয়া।
কাব্য হাসে।
~আরে এমন করছো কেনো? লোকটা যেখানে আমার ফোন পেয়েছে সেখানে আমার গাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো, আর গাড়ি ঠিক করার সময় হঠাৎ হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায় নিচে, অনেক চেষ্টা করেও যখন ফোনটা অন করতে পারিনি তখন সিমকার্ড টা নিয়ে ফোন ওখানেই ফেলে চলে যায় শহরে।
লোকটা হয়তো ফোন পেয়ে কোনোরকমে ফোন অন করে ডায়াল কলে তোমার নাম্বারটা পেয়েছে কারণ তোমার সাথেই শেষ কথা হয়েছিলো।

হিয়ার দুই হাত নিজের মুষ্টিবদ্ধ করে বলে কাব্য।
~আর আমাকে যে এতোক্ষণ কষ্ট দিয়েছেন সেটার কি হবে? আব্বু খোঁজ না নিলে আর আম্মু এসে আমাকে বুঝিয়ে না বললে তো আমি মরেই যেতাম।
~নাহ, এমন কথা বলবানা, এতো পাগলামি করছো কেনো? এখন তো আমি তোমার সামনেই আছি।
এটা বলেই কাব্য হিয়াকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে, হিয়া রাগের ঠেলায় কাব্যকে বার বার দূরে সরিয়ে দিতে চাইলেও কাব্যর শক্তির সাথে পেরে উঠছেনা। আর তা দেখে মিটিমিটি হাসছে কাব্য।

~আমি ঘুমাবো ছাড়ুন বলছি।
কাব্যকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলে হিয়া।
~আরে বাবা এতো রাগ করলে কি হয়? এগুলো খুঁজতেই তো এতো দেরি হলো।
~কি খুঁজতে দেরি হয়েছে শুনি?
চোখ রাঙিয়ে বলে হিয়া।
~আরে নাহ কিছুনা, একটা ব্যক্তিগত কাজে গিয়েছিলাম। তুমিও না আজকাল বেশি-ই সন্দেহ করো। আচ্ছা ঘুমাও সোনা। দেখো ফাইয়াজ বাবু কত সুন্দর করে ঘুমাচ্ছে, একদম মায়ের মতো হয়েছে, তাইনা সোনা?
হিয়ার মনকে নরম করতে চাই, কিন্তু হিয়া তো হিয়া-ই।
~ধ্যাৎ
এটা বলেই কাব্যকে সরিয়ে দিয়ে ফাইয়াজকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে হিয়া। কাব্য খেয়ে এসেছে, কিন্তু হিয়া যে কাব্যর অপেক্ষায় খাইনি সেটা আর কাব্য জানেনা।

কিছুক্ষণ পর কাব্য ওয়াশরুম থেকে এসে দেখে হিয়া ঘুমিয়ে পরেছে। কম্বলটা টেনে দেয় কাব্য। তারপর কাবাড খুলে ব্যাগ থেকে চুড়ির পেকেট টা নিয়ে আস্তে করে লকারে রেখে দেয় যাতে হিয়া না দেখে। হিয়া আবার কাব্যর লকারে হাত দেয়না কখনো।
তারপর কাব্য এসে শুয়ে যায়, হিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে “কি করবো বলো, এখানে সব শপিংমল, সব কসমেটিকস এর দোকানে খুঁজেছি এই চুড়ি কিন্তু কোথাও মেলেনি, আর তোমাকে বললে এতো দূরে তুমি যেতে দিতে না তাইতো তোমাকে না বলে যেতে হলো আমায়, আমি জানতাম ওখানেই পাওয়া যাবে এই চুড়ি। কিন্তু আমি জানি চুড়িগুলো দেখলে তোমার সব রাগ গলে পানি হয়ে যাবে। ”

রাত ২টা ৩০
নিহানের ঘুম আসেনা, সে উঠে জানালার কাছে দাঁড়ালো, ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস, কেমন জানি শীত শীত লাগে নিহানের। শীত তো লাগবেই, এই মাসেই তো শীতের আগমন হয়ে গেছে।
ইস্ এই মধুর সময়ে যদি কেয়া আমার বাহুডোরে থাকতো, কতইনা আনন্দ করতাম দু’জন মিলে”
আনমনে বিড়বিড় করে বলে উঠে নিহান।



মায়াবী সকাল, মিটিমিটি আলোর ঝলকানি, চোখ মেলে সবার আগেই ফাইয়াজের মুখের দিকে তাকালো হিয়া, বাবুর কপালে চুমু দিতেই কাব্যর দিকে নজর যায় হিয়ার। কি অদ্ভুত মায়া লাগছে কাব্যকে ঘুমন্ত অবস্থায়, ইচ্ছে করছে কাব্যর কপালে ঠোঁট জোড়া ছুঁয়ে দিতে কিন্তু মাথায় এখনে প্রচন্ড রাগ তার উপর পেট খালি, কিছু খাইনি কাল সন্ধ্যা থেকে।

হিয়া ধীরে ধীরে শোয়া থেকে উঠলো যাতে ফাইয়াজ জেগে না যায়।উঠেই গোসলে চলে যায় হিয়া।



নিহান ছাঁদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে সকালের স্নিগ্ধ আকাশ দেখছে, রাতেও তেমন একটা ঘুম হয়নি। প্রতিদিন সকালে ছাঁদে হাকলা বাতাসে হাঁটাহাঁটি করা কেয়ার অভ্যাস। কিন্তু আজকে ছাঁদে আসতে একটু দেরি হয়ে গেছে কেয়ার।
কেয়া ছাঁদে এসে দেখে নিহান দাঁড়িয়ে আছে ছাঁদের রেলিং ধরে।কেয়া ধীরে ধীরে নিহানের পেঁছনে যেয়ে হালকা একটা কাঁশি দিতেই ভরকে যায় নিহান।
কুটকুট করে হেঁসে উঠে কেয়া।
~বাহ্ নিহান বাবু আপনি দেখি বেশ ভিতু।
হাঁসতে হাঁসতে বলে কেয়া। একটুখানি লজ্জা পেয়ে যায় নিহান।
~আরে নাহ তেমন কিছুনা, তুমি হঠাৎ এভাবে আসবে জানা ছিলোনা তো।
লজ্জায় কি বলবে বুঝতে পারছেনা নিহান।
~হুম আমি রোজ সকালে এখানে হাঁটাহাটি করি, আর এখন তো কুয়াশা থাকে হালকা, তাই একটু বেশিই ভালো লাগে।
~একটা কথা বলতে পারি?যদি তুমি কিছু মনে না করো।।
~হুম বলেন।
~তোমার হাসিটা বেশ সুন্দর।
এটা বলেই নিহান সেখান থেকে চলে যায়। হা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে কেয়া, বেশ লজ্জা পেয়ে যায় কেয়া। নিজে নিজেই হাসে কারণ আজ অবধি এই কথা অনেকেই বলেছে কিন্তু আজকের আগে এই কথায় আর কখনো এতো ভালো লাগা কাজ করেনি কেয়ার।



হিয়া গোসল সেরে এসে দেখে কাব্য বসে বসে মোবাইল টিপে,
~আপনি না বললেন মোবাইল নষ্ট হয়েছে, তবে এখন কোথায় পেলেন আবার?
চুল মুছতে মুছতে কাব্যর সামনে গিয়ে বলে হিয়া।
কাব্য উঠে দাঁড়ায়, হিয়ার দিকে একটু এগোয়। হিয়া এক পা পিঁছিয়ে যায়।
এক টানে হিয়াকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেই কাব্য। কেঁপে উঠে হিয়া।
~এটা নতুন ফোন, এটা কেনার জন্যই তো কাল রাতে শহরে গিয়েছিলাম।
হিয়ার কানে কানে ফিসফিস করে বলে কাব্য। হিয়া চেঁচিয়ে বলে উঠে “তো এটা ফিসফিস করে বলার কি আছে,, যত্তসব ঢং”।
~আরে বুঝোনা কেনো, এতো চেঁচামেচি করলে তো বাবু উঠে যাবে।
~উঠলে উঠুক, তাতে আপনার কি? আমার বাবুকে আমি সামলাতে পারি। হু
একটু ভাব দেখিয়ে বলে হিয়া।

এই পাগলীকে আর শুধরাইতে পারলাম না।
মনে মনে বলে কাব্য।
~এই যে এভাবে ভেড়ার মতো হয়ে আছেন কেনো? ছাড়ুন আমায়।
~নাহ, ছাড়ছি না আজকে আর।
~এমা কেনো?
বোকার মতো ফেস করে বলে হিয়া।
~তোমার ভেজা চুল মাতাল করে আমায়।
হিয়ার চুলে মুখ ডুবিয়ে বলে কাব্য।
~ইস্ আসছে সকাল সকাল রোমান্স করতে। যান গোসল করে আসুন।
কাব্যর চুল টেনে ধরে বলে হিয়া।
~তুমি এমন কেনো?
বিরক্তি ভাব নিয়ে বলে কাব্য।
~কেমন?
চোখ ছোট ছোট করে বলে হিয়া।
~সবসময় আমার রোমান্সের ১৩টা বাজাও কেনো?
~এমা কি বলে এসব,, রোমান্সের আবার ১৩টা আছে নাকি?
বোকার মতো ফেস করে কাব্যর দিকে তাকিয়ে বলে হিয়া।
~ধুরও
এটা বলেই কাব্য হিয়াকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে।
কুটকুট করে হাসতে থাকে হিয়া,



নাস্তার টেবিলে দেখা হয় নিহানের সাথে কাব্যর। দুজন খেতে খেতেই একে অপরের সাথে টুকটাক কথা বলে।
এর ফাঁকে নিহান বলে এখনই নাস্তা করে বেরুতে হবে ওকে, এটা শুনে কেনো জানি হঠাৎ কেয়ার মনটা ভিষণ খারাপ হয়ে যায়।
হিয়া বলে নিহানকে বিকাল করে যেতে কিন্তু নিহান বলে ওর নাকি কাজ আছে, যদিও নিহানও কেয়াকে ছেড়ে যেতে চাইনা তবুও বোনের শশুর বাড়িতে তো আর এভাবে থাকা যায়না।

কাব্য নাস্তা সেরে অফিসের জন্য তৈরি হতে চলে যায়। আফিয়া বেগম হিয়াকে বলে ফাইয়াজকে উনার কাছে দিয়ে কাব্যর কাছে যেতে, ছেলেটা রাতেও দেরি করে আসাতে হিয়ার মন খারাপ ছিলো বেশ তাই। কিন্তু হিয়া যেতে চাইনা কারণ এখনো যে বড্ড অভিমান হচ্ছে কাব্যর উপর তবুও মায়ের কথা রাখার জন্য হিয়া পা বাড়ায় নিজের রুমের দিকে।
কেয়া কিছু না বলেই উঠে চলে যায় নাস্তার টেবিল ছেড়ে। নিহান বাঁকা চোখে তাকায় কেয়ার চলে যাওয়ার দিকে।
আফিয়া বেগম বলে “জানো নিহান এই পাগলী মেয়েকে ওর মা আমার কাছে কেনো রেখে গেছে?
~কেনো আন্টি?
~বিয়ে দেওয়ার জন্য।
একটু হেঁসেই কথাটি বলেন আফিয়া বেগম।

কাঁশি উঠে যায় নিহানের। আফজাল সাহেব পানির গ্লাস এগিয়ে দেয় নিহানের দিকে। নিহান ঢকঢক করে পানি খেয়ে জিজ্ঞেস করে ” তারপর আন্টি ওর বিয়ে কবে”?
~এখনো ঠিক হয়নি বাবা, এতো ছেলে দেখালাম ওর পছন্দই হচ্ছে না।
~ওও
একটু খুশি হয়ে বলে নিহান।
~তবে এবার একটা ছেলেকে পছন্দ করেছি ওর জন্য, আমার মনে হয়না এবার কেয়া আর না করবে।
~ও আচ্ছা, কে ছেলেটা?
কিছুটা মন খারাপ করে বলে নিহান।
~সময় হলে জানতে পারবে বাবা, তবে এখনো ছেলের পরিবারের সাথে কথা হয়নি।
~ওও, আচ্ছা আন্টি এবার উঠি আমি।। একটু কাজ আছে।
~আচ্ছা বাবা, সময় করে এভাবে চলে এসো আবার।
~অবশ্যই আন্টি।
ফাইয়াজকে আদর করেই বেরিয়ে পরে নিহান। আঁড়াল থেকে কান পেতে সব শুনছিলো কেয়া, প্রচন্ড মন খারাপ হয় কেয়ার। নিহান একবারও তাকে বলে যাওয়া প্রয়োজন মনে করলোনা এটা ভেবেই কান্না পাচ্ছে কেয়ার। আবার মনে মনে ভাবে “আমাকে কেনোই বা বলে যাবে, আমাদের মধ্যে তো বন্ধুত্বের সম্পর্কটাও নেই, আমিই বেশি ভাবতেছি একটু”



হিয়া রুমে এসে কিছু না বলে সোফায় চুপচাপ বসে আছে আর পা দোলাচ্ছে, কাব্য তৈরি হতে হতে আঁড়চোখে তাকায় হিয়ার দিকে।
কি ব্যাপার আজকে এই বাচালটা এভাবে চুপচাপ কেনো? বেশিই অভিমান হয়েছে নাকি পাগলীটার?
~হিয়া আমার ঘড়িটা কোথায় দেখো তো।
~পারবো না।
এটা বলতেই কাব্য হিয়ার দিকে রাগান্বিত চোখে তাকাতেই হিয়া বসা থেকে উঠে দৌড় লাগায় আর সাথে সাথেই______

#চলবে_ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here