অল্প_পাগলামী_সীমাহীন_ভালোবাসা২ #পর্ব_৪

0
1798

#অল্প_পাগলামী_সীমাহীন_ভালোবাসা২
#পর্ব_৪
#FarJana_Akther

যাবে কোথায় সোনা,, আমি যেতে দিলেই তো যাবে?
দাঁত চেপে বলে কাব্য।
কাল রাত থেকে কেনো এমনটা করতাছো বলো তো?
হিয়া চুপ হয়ে আছে, কিছু বলছেনা।
কাব্য আবারো বলে “কি,,কথা কি কানে যায় না তোমার?
একটু চেঁচিয়ে বলে কাব্য। ভয়ে চোখ-মুখ খিঁচে ফেলে হিয়া।

আপনি কালকে বাদাম আনবেন বলেও আনেননি, তারপর
এটুকু বলেই থেমে যায় হিয়া।
~তারপর কি?
~ কাল সন্ধ্যা থেকে আপনার অপেক্ষায় কিছু খায়নি, রাতেও খাবার খায়নি, কিন্তু আপনি একবারও জানতে চাইলেননা। আপনিতো ভালোই বাহির থেকে খেয়ে এসেছিলেন, আপনার কি মনে ছিলো আমার কথা?
অভিমানের সুরে কথাগুলো বলে হিয়া।

কাব্য এতক্ষণে বুঝতে পারছে মহারানী কেনো এতো রেগে আছে। কাব্য হাঁটু গেড়ে বসে হিয়ার হাতের উল্টো পিটে চুমু দিয়ে বলে ভালোবাসি তো।
হিয়া অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে নেই।
কাব্য হিয়াকে বিছানায় বসিয়ে কাবাড খুলে।
হিয়া চুপচাপ দেখছে কাব্য কি করতে চাই।
কাব্য কাবাডের লকার থেকে চুড়ির প্যাকেট টা বের করে হিয়ার সামনে এসে বসে।

হিয়া অন্যদিকে ঘুরে বসে।
কাব্য প্যাকেট থেকে চুড়ি গুলো বের করে হালকা বাজাতেই চমকে উঠে হিয়া, দ্রুত কাব্যর হাতের দিকে তাকায় হিয়া, দেখে কাব্যর হাতে সেই চুড়ি যে চুড়ির জন্য এইমাসে হিয়া কাব্যর চোখের ঘুম আর শান্তি হারাম করে দিয়েছে। খুশিতে ঝিকঝিক করছে হিয়ার মুখ খানি। এই হাসিতেই মাতাল কাব্য।

হিয়া এক নজরে তাকিয়ে আছে কাব্যর চোখের দিকে, খুশিতে হিয়ার চোখে পানি চিকচিক করছে। কপাল করে এমন অর্ধাঙ্গিনী পেয়েছে।

কাব্য এক এক করে সব চুড়ি পড়িয়ে দিলো হিয়ার হাতে। হিয়া দুই হাত চোখের সামনে রেখে এক গাল হেঁসে দেয়। কাব্য বলে “এখনোই কী রেগে আছে কেউ আমার উপর “?
~উঁহু
~তবে আমার পাওনা।
হিয়া লজ্জা পাই। কাব্য নিজেই জড়িয়ে ধরে হিয়ার কপালে ভালোবাসার রেখা এঁকে দেয়। হিয়া মুখ লুকায় কাব্যর বুকে।



কাব্য চলে যাওয়ার পর হিয়া নিচে আসে, হিয়া সিঁড়ি দিয়ে নামতেই আফিয়া বেগম অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। নীল শাড়ীতে লাল চুড়ি, অসম্ভব ভালো লাগছে হিয়াকে দেখতে। শ্বাশুড়ির এভাবে তাকিয়ে তাকায় বেশ লজ্জা পাই হিয়া।
আফিয়া বেগম হিয়াকে দেখে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে দেখছে হিয়াকে, হিয়া শ্বাশুড়ির খুব কাছে এসে লজ্জা মাখা চাহনি নিয়ে বলে ” এভাবে কি দেখছেন মা?
~নাহ, দেখছি আজ তোমায় অন্যরকম লাগছে মা।
~আপনিও না, বসুন।
হেসেই বলে হিয়া।
~আচ্ছা বসলাম,এবার বল এই চুড়ি কবে নিলে?
~আসলে আম্মু এগুলো উনি এনেছেন গতকাল রাতে ফিরার সময়।
নিচের দিকে তাকিয়ে লজ্জিত সুরে বলে হিয়া।
হেসে দেয় আফিয়া বেগম।

~তবেই ভাইয়া রাতে এতো অপেক্ষা করিয়েছে তোমায়।
ফাইয়াজকে কোলে নিয়ে বাহির থেকে আসতে আসতে বলল কেয়া।
ফাইয়াজ এসে হিয়ার কোলে ঝাপিয়ে পড়ে।

~আই মা বস, কথা ছিলো তোর সাথে।
আফিয়া বেগমের এমন কথায় হঠাৎ বুকটা কেঁপে উঠে কেয়ার। তবুও গিয়ে খালামনির পাশে বসে কেয়া।
~বলো খালামনি কি বলবে?
~আসলে কথাটা হলো তোর জন্য একটা ছেলে দেখেছি, আাশা করি এবার আর না করবিনা। ছেলে খুব ভালো, এক মাস আগেই বাবার সাথে নিজেদের অফিসে জয়েন করেছে। পরিবারও ভালো। তোর কোন অসুবিধা হবেনা রে মা।
~খালামনি আসলে আমি__
আর কিছু বলতে পারছেনা কেয়া, নিহানের কথা মনে হয়ে যায় হঠাৎ।
~কি ভাবছিস এতো মা?
~নাহ খালামনি কিছুনা, যেটা তোমাদের ভালো মনে হয়।

~কি বলো মা, ছেলে কে? আমাকে তো কিছুই বললে না।
আফিয়া বেগমের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে হিয়া।
~হুম তোমাদের জন্য সারপ্রাইজ, সন্ধ্যায় যাবো। ছেলেমেয়ে একে অপরকে দেখবে আর ছেলেমেয়ের একে অপরকে পছন্দ হলে তো আলহামদুলিল্লাহ। কেয়ার মা বাবাকে আসতে বলবো।
~কিন্তু আম্মু আমরা যাবো কোথায় ছেলে দেখতে?
~গেলেই দেখবে।
হিয়া আর আফিয়া বেগম কথা বলেই যাচ্ছে, কেয়া মন খারাপ করে উঠে চলে যায় সেখান থেকে।

কেয়া ছাঁদে এসে দাঁড়িয়ে থাকে একা একা। ভালো লাগছেনা। ধুর কেনো এমন লাগছে আমার? যার সাথে কিনা ভালো করে বন্ধুত্বটাও হলোনা তার জন্যই কেনো খারাপ লাগছে আমার। তবে কি??? নাহ নাহ কি ভাবছি এসব আমি।। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেই কেয়া।



নিহান ভাবছে হঠাৎ তার বাবা মা বিয়ের কথা কেনো তুললো। সবে মাত্র অফিসে জয়েন করেছে আর এখনই বিয়ের জন্য চাপাচাপি শুরু করে দিলো। ধ্যাৎ ভাল্লাগেনা।।
প্রেম শুরু হওয়ার আগেই শেষ আমার, কোথায় ভাবলাম কেয়াকে পটাবো কিন্তু তা আর করতে দিলোনা আমায়, তবে এই মেয়ের মাঝে এমন কি আছে যে বারবার আমাকে তার দিকে আকৃষ্ট করে। প্রথম দেখায় কেনো এতো ভালো লাগা কাজ করলো কেয়ার উপর?? সব কল্পনা

?
সন্ধ্যায় কাব্য ঘরে আসতেই হিয়া বলে দ্রুত তৈরি হয়ে নিতে, বাহিরে যাবে। কাব্য বলে ওর ক্লান্ত লাগে ও কোথাও যেতে পারবেনা এখন। পরে হিয়া সব খুলে বলে কেনো যাবে আর কোথায় যাবে, তারপর রাজি হয় কাব্য।
হিয়া এখনো জানতে পারেনি যে ওরা আসলে যাচ্ছে টা কোথায়।

কাব্য ড্রাইভ করছে আর কাব্যর পাশে ফাইয়াজকে নিয়ে হিয়া বসেছে, বাকিরা পেঁছনে বসছে।
কাব্য তার মাকে জিজ্ঞেস করে যাবে টা কোন জায়গায়, আফিয়া বেগম শুধু বলে হিয়াদের বাড়ির রাস্তার দিকে যেতে, ওইদিকে গেলেই বলবে।
কাব্য বেশ বিরক্ত হয়, একেবারে বলে দিলে কি হয় কোথায় যাবে, ধ্যাৎ

হিয়া হালকা কাশি দেয়,, কাব্য লাল চোখে তাকায় হিয়ার দিকে। হিয়া ফিসফিস করে বলে “এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই, আমি কাউকে ভয় পাইনা, হুম।
~আচ্ছা বাড়িতে আসি একবার, তারপর দেখাবো কে কাকে ভয় পায়।
দাঁত চেপে বলে কাব্য।

হিয়া বলে এখানেই থামান গাড়ি।
~কেনো?
~আগে থামান।
কাব্য গাড়ি থামিয়ে বলে ” দেখো তুমি ভালো করেই জানো এই মুহুর্তে বেশ ক্লান্ত আমি, সো আর বিরক্ত করো না”।
~বিরক্ত করছিনা তো,, আপনি একবার জায়গাটা দেখুন।
~কি দেখবো?
রাগান্বিত কন্ঠে বলে কাব্য।
~চারপাশটা দেখুন না একবার।
বায়না করে বলে হিয়া।
~দেখো রাগ উঠতেছে কিন্তু।

পেঁছন থেকে আফজাল সাহেব, আফিয়া বেগম কেয়া হেসে উঠে কুটকুট করে।
কাব্য হিয়ার দিকে তাকায় আগুনের চোখে।
~দেখো সবার সামনে পাগলামী করো না।
হিয়ার হাত চেপে ধরে বলে কাব্য।
~আপনি দেখুন এটা সেই জায়গা যে জায়গায় আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিলো, আমি তো এটাই বুঝাতে চেয়েছি কিন্তু আপনি তো..
কাব্য বিরক্তির কারণে খেয়াল করেনি এতক্ষণ এই জায়গাটা, সারাদিনের ক্লান্ত ঘিরে আছে তাকে।
~সরি
মাথা ঠান্ডা করে বলে কাব্য। কাব্য বুঝে গেছে হিয়া কি বলতে চাইছে।
কাব্য হুট করে গাড়ি থেকে নেমে যায়। অবাক হয় হিয়া। কাব্য কোলে করে ফাইয়াজকেও নিয়ে যায়।

বাকিরা সবাই ভয় পেয়ে যায়, আফিয়া বেগম হিয়াকে জিজ্ঞেস করে কাব্য কোথায় গেছে,, হিয়া বলে “আপনার উল্টা ছেলে কি কাউকে কিছু বলে? সবকিছু হুটহাট করেই করে ফেলে”
আফজাল সাহেব হাসেন।

সত্যি তো গেলেন কোথায় উনি বাবুকে নিয়ে???
চিন্তায় পড়ে যায় হিয়া। হঠাৎ কেউ হিয়ার চুল টান দিতেই ভরকে যায় হিয়া,, সে মাথা ঘুরিয়ে তাকাতেই______

#চলবে_ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here