#অল্প_পাগলামী_সীমাহীন_ভালোবাসা২
#পর্ব_৬
#FarJana_Akther
আরে তুমি? তুমি এখানে কিভাবে?
দাঁড়িয়ে গিটার চেয়ারে রেখে চুল ঠিক করতে করতে বলে নিহান।
~কেনো? আপনার রুমে আসা কি বারণ? তেমন কিছু হলে বলে দিন, চলে যাচ্ছি আমি।
মুখ বাঁকিয়ে বলে কেয়া।
~এমা নাহ নাহ, আমি তা বলতে চাইনি, মানে তুমি আমার রুম চিনলে কি করে? আগে তো কখনো আসোনি তাই বলছি।
~আমিই নিয়ে এসেছি ওকে।
হিয়া বেলকনিতে প্রবেশ করতে করতে বলে।
নিহান একটু পেঁছনে চলে যায় কেয়ার থেকে দূরে, মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে “আপু তুই “?
~হ্যাঁ আমি, এতো অবাক হচ্ছিস কেনো?
কোমরে হাত রেখে বলে হিয়া।
~নাহ, এমনি।
থুঁতলিয়ে বলে নিহান।
মিটমিটিয়ে হাসে কেয়া। সত্যিই ভাইবোনের সম্পর্কগুলোও অন্যরকম মধুময়।
~শুন এবার তোরা কথা বলে নে,, তারপর সবাইকে জানাইস সিদ্ধান্ত টা। আমরা সবাই নিচে অপেক্ষা করতেছি।
হিয়া নিহানকে এটা বলার সাথে সাথেই কেয়া লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ায়।
নিহান শুধু অবাক হয়, সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে, মনেমনে ভাবছে ” মেয়েমানুষ আসলেই প্যাচালো, সহজভাবে কোনো কথায় তারা বলতে পারেনা, ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে বলতে হয় সব কথা, ধুর।
~আপু কিসের সিদ্ধান্ত, কি বলছিস তুই? একটু বুঝিয়ে বল বোন।
হিয়ার হাতজোড়া ধরে বলে নিহান।
~এমন ভাব করছিস যেনো ভাজা মাছ উল্টে খেতে পারিসনা, আমার মিষ্টি ননদ কেয়ার সাথেই তোর বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। এবার তোরা তোরাই একবার কথা বলে নে একবার।
এটা বলেই হিয়া গটগট করে পা ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়, রুম থেকে বেরিয়েই হিয়া ভাবে আবার যায় ওই রাগের বস্তাটাকে আরেকটু জ্বালিয়ে আসি হিহিহি,,, এসব বকতে বকতে হিয়া কাব্যর কাছে চলে যায়।।
হিয়া চলে গেলে নিহান দুই পা সামনে এগুই, কেয়া বেলকনির রেলিং মুট করে ধরে।
~আপু যা বলে গেলো তা কি সত্যি।
কেয়া হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে, নিহানের খুশিতে ঝিংকু ডান্স দিতে ইচ্ছে করলেও সে নিজেকে কন্ট্রোল করে বলে “মানে তুমি রাজি আছে তো,? নাহ মানে তোমার তো নাকি আবার ছেলে পছন্দ হয়না,,
একটু কেঁশেই কথাটি বলে নিহান।
~পছন্দ অপছন্দ তো থেকেই যাবে, ভাগ্য যেখানে টেনে নিয়ে যাবে সেখানে তো যেতেই হবে।
আকাশ পানে চেয়ে কথাটি বলে কেয়া।
~খুব সুন্দর কথা বলতে পারো দেখি কবিদের মতো।
~হুম, মাঝে মাঝে লেখা হয় দুই এক লাইন।
~বাহ্ ভালোই।
~আপনার কি মত এই বিয়েতে? মন থেকে রাজি আছেন তো? নাকি ফেমিলির চাপে…
~হু রাজি হতেই পারি,তবে একটা শর্তে।। কেউ যদি আমায় আপনি থেকে তুমি করে বলতে পারে তবে এই বিয়েতে আমার আর কোনো আপত্তি থাকবেনা।।
মুচকি হাসে কেয়া। আঁড়চোখে তাকায় নিহানের দিকে। নিহানের চেহারায় খুশির চমক বেশ ফুটে উঠেছে। কেয়া নিহানের দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। নিহানের চোখে চোখ রেখে বলে “ঠিক আছে,,রাজি আছি শর্তে”
নিহান আনন্দিত হয়ে কেয়াকে জড়িয়ে ধরতে গিয়ে থেমে যায়, মাথা চুলকায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। বেশ লজ্জা পেয়ে যায় কেয়া।
সবাই নিচে বসে আছে, গল্প করছে বসে বসে। ফাইয়াজও ঘুম থেকে উঠে গেছে, নানা নানি দাদা দাদি সবাইকে একসাথে পেয়ে বেশ মজা করছে ফাইয়াজ। হিয়া কাব্যর সাথে রুমে।
সিঁড়ি দিয়ে কেয়া আর নিহানকে নামতে দেখে সবাই চিন্তিত হয়ে পরে,
না জানি ছেলেমেয়ে কি সিদ্ধান্ত নিলো, আস্তে করে বলে উঠে আফিয়া বেগম।
কেয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, নিহান কি বলবে বুঝতে পারছে না, কারণ এখানে শুধু তার বাবা মা আর আফিয়া বেগম আফজাল সাহেব আছে। হিয়া আর কাব্য থাকলে তো তাদের কে বলতে পারতো। চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিহান।
হিয়া হঠাৎ কোথায় থেকে যেন এসে বলে কি ভাই, বিয়ের সানায় বাজবে কবে?
~যবে সবাই ডেট ফিক্সড করবে।
এটা বলেই নিহান চলে যায়। কেয়া লজ্জায় মাথা তুলতে পারছেনা, হিয়া গিয়ে জড়িয়ে ধরে কেয়াকে।
‘
‘
‘
এই শুনোন, উঠেন বলছি,, আর কত ঘুমাবেন? চলে যাবো তো আমরা।
হিয়া এসে কাব্যকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলে এসব।
~যাও তোমরা, আমি যাবোনা।
ঘুমের ঘুরে বলে কাব্য।
~আরে কি বলেন এসব? কত কাজ করতে হবে জানেন বাড়িতে গিয়ে? উঠুন বলছি।
কাব্য একটান দিয়ে হিয়াকে নিজের কাছে টেনে নেয়, খুব কাছে। ছটপট করতে শুরু করে হিয়া। কাব্য বন্ধ চোখেই বলে “কিসের এতো কাজ শুনি”?
কাব্যর গরম নিঃশ্বাসে হিয়ার প্রথম দেখার কথা মনে পড়ে যায়, কেনো জানি এই মুহুর্তটা হিয়ার খুব ভালো লাগে, কাব্যর গরম নিঃশ্বাসে হিয়ার বুকে শিহরণ জাগে।
~বিয়ের কাজ, এবার উঠুন।
~কিসের বিয়ে? আমার একটাতেই চুল পাঁকা ধরার অবস্থা, আর বিয়েটিয়ে করতে পারবোনা আমি।
এবার তো হিয়ার বেশ রাগ হয়, বলে কি এই তেলাপোকার বাচ্চা, হিয়া কোনোমতে কাব্যর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে এক গ্লাস পানি এনে কাব্যর মুখে মেরে দেয়, লাফিয়ে উঠে কাব্য। উঠে বসে মাথা ঝেড়ে নেই ভালো করে।
~কি, কি করছো কি তুমি এসব, এতো পাগলামি করো কেনো?
রেগেমেগে বলে কাব্য।
~আপনার মাথা থেকে বিয়ের ভুত নামাচ্ছি। আমি বলি আপনাকে কেয়া আর নিহানের বিয়ের কথা আর আপনি পড়ে আছেন আপনার বিয়েতে,, এই বুইরা বয়সে কে বিয়ে করবে শুনি আপনাকে?
বোকার মতো প্রশ্ন করে হিয়া।
~এই শুনো, এক বাচ্চার বাপ হলেই মানুষ বুইড়া হয়না, যদিও মেয়েরা বুড়ি হয়, তবে ছেলেরা হয়না।
~মেয়েরা বুড়ী হয় মানে কি? আমি তো এখনো সেই কিশোরী বয়সের মতোই আছি।
ঘার উঁচু করে বলে হিয়া।
কুটকুট করে হেসে দেয় কাব্য, গাল ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে হিয়া কাব্যর দিকে।
~আচ্ছা বাবা তুমি এখনো ২০বছরের তরুনী, খুশি এবার?
~হুম অনেক খুশি,
এটা বলেই হিয়া কাব্যকে জড়িয়ে ধরে, কাব্যর গালের সাথে গাল লাগতেই চিৎকার দিয়ে পেঁছনে সরে যায় হিয়া।
~কি হলো? এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? আসো জড়িয়ে ধরো,, ভালোই তো লাগছিলো।
~ ঢেঁরস লাগছিলো,, আপনার খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি দিয়ে সবসময় ব্যাথা দেন, আর জীবনেও জড়িয়ে ধরবোনা,,হুম বলে দিলাম।
গাল ফুলিয়ে কান্না কান্না ফেস করে বলে কথাগুলো হিয়া।
~তো এই খোঁচা দাঁড়ি দেখেই প্রেমে পড়েছিলে আমার, এটা কি অস্বীকার করতে পারবে তুমি?
পাল্টা জবাব দেয় কাব্য।
হিয়া ভেংচি কেটে চলে যাবে তখন কাব্য বলে উঠে “বিয়ের মিষ্টি খাবো”
~ফ্রেশ হয়ে নিচে আসুন, সবাই খেয়ে নিয়েছে শুধু আপনার গুলো বাকি, দ্রুত আসুন
এটা বলেই হিয়া আবারো সামনের দিকে পা বাড়ালে কাব্য হিয়ার হাত টান দেয়।
দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে হাত দুটো,,
~আহ্ কি করছেন কি এসব? কেউ চলে আসবে,
ধীর কণ্ঠে বলে হিয়া।
কাব্য হিয়ার দিকে একটু ঝুঁকে বলে তোমার রুমে কেউ আসেনা,,
~তাই বলে..
কাব্য হিয়াকে পুরো কথা বলতে না দিয়ে বলে আমার বউ আমি যখন যেখানে যা ইচ্ছে করতেই পারি,, কি ঠিক বলছিনা রাজকন্যা?
হিয়া চুপ হয়ে আছে,কিছু বলছেনা,,
কাব্য হিয়াকে চুপ দেখে বলে চুপ করে থেকোনা, সামান্য কথায় এতো মন খারাপ করার কি আছে, মজায় তো করছিলাম।
হিয়া তো মন খারাপ করেনি, একটু ঢং করতেছে,তাই হাসি আসলেও সে হাসছেনা।
কাব্য এবার বুদ্ধি করে কাতুকুতু দেওয়া শুরু করে দেয়, হিয়া তো হাসতে হাসতে ফ্লোরে শুয়ে পরে। হঠাৎ কে জানি জানালা দিয়ে পাথর মুড়িয়ে একটা চিরকুট ফেলে হিয়ার ঘরে। কাব্য কাগজটি থেকে পাথর সরিয়ে খুলেই হিয়ার দিকে আগুনের দৃষ্টিতে তাকায়।
#চলবে_ইনশাআল্লাহ