অল্প_পাগলামী_সীমাহীন_ভালোবাসা২ #পর্ব_৭ শেষ

0
2507

#অল্প_পাগলামী_সীমাহীন_ভালোবাসা২
#পর্ব_৭ শেষ
#FarJana_Akther

হিয়া ঢুক গিলে কাব্যর এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে, ভয়ে চুপসে গেছে সে। চোখগুলো ছোট ছোট করে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকায় কাব্যর দিকে।

হঠাৎ কাব্য কুটকুট করে হেসে খাটে বসে পরে।
হিয়া ভ্যাবাছ্যাকা খেয়ে যায়। গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে থাকে কাব্যর দিকে।
~কি, এমন গোল গোল চোখ করে কি দেখছো?
হাসতে হাসতে বলে কাব্য
~হাসছেন কেনো এমন রামছাগলের মতো?
কোমরে হাত দিয়ে বলে হিয়া।
~তো হাসবোনা তো কি করবো? দেখো কি লেখা আছে এখানে।।
হিয়া টাস করে কাব্যর হাত থেকে চিরকুট টা ছিনিয়ে নেই, আর চোখ বুলাতে থাকে লেখায় “কিরে আন্ডি বাসায় আসলি কবে?দেখাও তো করলিনা, সুন্দর স্বামী পেয়ে সুন্দরী বান্ধবীকে ভুলে গেলি নাকি?”
চিরকুটটা পড়ার সাথে সাথেই হিয়া দৌড়ে বেলকনিতে যায়, দেখে সিয়া তার বেলকনির দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাতে কফির মগ নিয়ে, হিয়া চিল্লিয়ে বলে কিরে গুন্ডি তুই কবে আসলি?
সিয়া বলে এই তো আজকেই আসলাম, কিছুক্ষণ আগে বেলকনিতে এসে দেখি তোর রুমে বাত্বি জ্বলে আর বেলকনির দরজাটাও খোলা তাই চিরকুট দিলাম।
হিয়া বলে হ্যাঁ যা লিখলি তুই, আমার সোয়ামী আর মুখ থেকে ফেলবেনা এই নাম টা।
সিয়া অবাক হয়, চোখ ছোট করে করে বলে কি বলস জিজু আছে নাকি?
হিয়া মন খারাপ করে বলে হুম আছে এবং একটুপর চলেও যাবো।
এভাবে অনেকক্ষণ যাবত কথা বলে দুজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।

হিয়া কি করো এতক্ষণ বেলকনিতে,
কাব্য ঝাঁঝালো গলায় ডাক দেয় হিয়াকে।
হিয়া সিয়াকে বলে দ্রুত রুমে চলে আসে।
~কি হয়েছে এভাবে চিল্লাচিল্লি করতেছেন কেনো ভেড়ার মতো? ফ্রেশ হতে বলেছিলাম তো আপনাকে।

~আমি ফ্রেশ হয়ে এসে বসে আছি ২০মিনিট ধরে কিন্তু তোমার তো কোনো খবরই নেই বেলকনি থেকে আসার।
বিরক্তি ভাব নিয়ে বলে কাব্য।
হিয়া শান্ত হয়েই বলে আচ্ছা আসুন নিচে, খেয়ে বেরুতে হবে আবার।



কেয়া গাড়িতে উঠার সময় নিহান চুপিচুপি কেয়ার নাম্বারটা নিয়ে নেই,, সারা রাত তারা সেদিন ফোনে গল্প করেছে,, সকাল সকাল কথা শেষ করে ঘুমাতে গেলো দুজন।

আজানের পর পরই হিয়ার ঘুম ভেঙে যায়, কাব্যকে নামায পড়তে ডেকে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় হিয়া, হিয়া ওজু করে এসেই দেখে কাব্য এখনো নাক ডেকে ঘুমায়, ফাইয়াজ উঠে যাওয়ার ভয়ে জোরে ডাকতেও পারছেনা।
পরে কাব্যর মুখে হালকা পানি ছিটিয়ে দিলে কাব্য উঠে মসজিদে চলে যায়।

________
২বছর পর
আজ ফাইয়াজের ৪র্থ জন্মদিন। অনেক বড় করে অনুষ্ঠান করা হয়েছে বাড়িতে,
কিন্তু কেয়া আর নিহান আসতে পারেনি কারণ আজ কেয়ার ডেলিভারি।
হিয়া আজ অনেক খুশি একদিকে ছেলের ৪র্থ জন্মদিন আর অন্যদিকে ফুফি হওয়ার আনন্দ। হিয়ার চোখে এই আনন্দ টা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।

কাব্য হিয়ার এই আনন্দ উপভোগ করতেছে খুব, সে ধীরে ধীরে হিয়ার পেঁছনে গিয়ে বলে চলনা আমরাও আবার নতুন করে বাবা মা হওয়ার স্বাদ নিবো, কেমন হবে বলো তো?
কাব্য হিয়াকে কথাটা বলতেই বেশ লাজুক একটা হাসি দেয় পাগলীটা, ঠিক তেমন একটা হাসি যে হাসি প্রথমবার ফাইয়াজ গর্বে আসার কথা জেনে হেসেছিলো।

কিছুক্ষণ পর হিয়ার ফোনে কল আসে তার ভাতিজী হয়েছে, খুশিতে আত্মহারা হিয়া। সবকিছু রেখে কাব্যকে নিয়ে বেরিয়ে যায় হিয়া মেডিকেল।
হিয়া গিয়েই নিহানের কোল থেকে কেঁড়ে নেই ছোট্ট শিশুটিকে, আর নিহানকে বলে তুই আগে নিলি কেন? ওকে সবার আগে নেওয়ার অধিকার শুধু ওর একমাত্র ফুফির।
হেসে দেয় সবাই হিয়ার এমন কথায়।
নিহান বলে ফাইয়াজ কে আনলি না কেনো?
হিয়া আমতা আমতা করে বলে আসলে আমি বাবু হওয়ার খুশিতে সব ভুলে গেছি, এবার তো আমার ফাইয়াজ বাবু রাগ করবে বেশ।

হিয়া কেয়ার পাশে গিয়ে বলে তুমি ঠিক আছো তো বোন? আজকে আমার ফাইয়াজ বাবু তোমাকে খুব মিস করছে।
কেয়া হাসে, ফাইয়াজ কেয়ার জন্য একটু বেশিই পাগল। কেয়াকে পেলে আরকিছুই লাগেনা ফাইয়াজের।

কাব্য হিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে সব নিয়ে তো বকবক করেই যাচ্ছো, ভাতিজীর নাম রাখবে কী কিছু কি ঠিক করেছো?
কাব্যর এমন কথায় নিহান কেয়া আর হিয়ার মা বাবা সবাই হেসে দেয়, হিয়া মন খারাপ করে তাকিয়ে থাকে কাব্যর দিকে।
আসলেই তো আমি কোনো নাম-ই ঠিক করলাম না আমার পুচ্কিটার জন্য,
মনে মনে বলে হিয়া।

নিহান বলে আর যাইহোক নাম কিন্তু তুই-ই রাখবি।
হিয়া এবার চিন্তায় পড়ে যায়।
এটা হিয়ার কাছে অনেক বড় দায়িত্ব মনে হয়।
সবাই হিয়ার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসে।

হিয়া হঠাৎ চিল্লিয়ে বলে উঠে ফারিহা..
সবাই অবাক হয়ে তাকায় হিয়ার দিকে।
কাব্য ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে ফারিহা কি?
আমার ভাতিজীর নাম হবে ফারিহা,, কেমন বলো তো।
কেয়া বলে উঠে মাশাআল্লাহ খুব সুন্দর নাম ভাবি।
হিয়া হেঁসে বলে উঠে সত্যি তো? তাহলে এই নাম-ই ঠিক রইলো।
নিহান দুষ্টুমি সুরে বলে উঠে নাহ, এটা কি কোনো নাম হলো, মোটেও সুন্দর নেই এই নাম।
কাব্যও নিহানকে সাপোর্ট করে বলে উঠে হুম আমারো তেমন ভালো লাগলোনা নাম টা।

হিয়া তো রেগেমেগে আগুন, হিয়া রেগে কিছু বলবে তার আগেই আফিয়া বেগম ফাইয়াজ কে নিয়ে প্রবেশ করে কেবিনে।
ফাইয়াজ দৌড়ে গিয়ে হিয়াকে বলে আম্মু তুমি কাকে কোলে নিছো?
তোমার ছোট্ট আপুমনিকে, তুমি নিবে?
হিয়া ফাইয়াজের দিকে একটু ঝুঁকে বলে কথাটি।
হুম নিবো তো, দাও।
একরাশ খুশির সাথে বলে ফাইয়াজ।
সবাই একসাথে কুটকুট করে হেসে উঠে।
বোকা বনে যায় ফাইয়াজ।



শীতের সকাল, কাব্য চোখ খুলেই দেখে বাচ্চাদের মতো ফেস করে ঘুমুচ্ছে হিয়া। আজকে ফাইয়াজ দাদা দাদির সাথে ঘুমিয়েছে। এই সুযোগে একটু জ্বালানো যাক পাগলীটাকে।
যেই ভাবা সেই কাজ
কাব্য আস্তে করে হিয়ার মুখে পড়ে থাকা অবাধ্য ছোট চুলগুলো সরিয়ে দিতে নিলেই কেঁপে উঠে হিয়া কাব্যর ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে।
~প্লীজ একটু ঘুমাতে দিন
ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে হিয়া।
কাব্য মুচকি হাসে, এই মেয়েটার ঘুমন্ত কন্ঠটা মাতাল করে কাব্যকে।
কাব্য আরো বেশি করে জ্বালাতে থাকে হিয়াকে, হিয়া মিটিমিটি করে চোখে খুলে ইচ্ছে মতো কিল ঘুসি মারতে থাকে কাব্যকে।
কাব্য হাসতে হাসতে জড়িয়ে ধরে হিয়াকে, সাথে সাথেই হিয়া আবার ঘুমিয়ে যায় কাব্যর উষ্ণ বুকে মাথা রেখে।

তোকে ভালোবেসে করিনি তো কোনো ভুল
তুই ছাড়া বেঁচে থাকার নেই তো অন্য কোনো কূল।।

#সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here