#নাম: সিনিয়র বস
#পার্ট: ৯,১০
#লেখক: Osman
পার্ট: ৯
__রাহাত চলে গেলো । রাহাত আসলে ভালই হবে। দুইজন একসাথে মজা করতে পারবো। তিন দিন পর রাহাত আসলো । এসে কোম্পানিতে জয়েন করলো।
এভাবে এক মাস চলে যায়। প্রথম মাসে বেতন দিলো ৩০ হাজার টাকা। আমি ভাবলাম মোটামুটি ভালই খারাপ না। আমি বেতন পেয়ে মাকে ফোন দিলাম।
আমি: কেমন আছেন?
মা: ভালই।
আমি: বেতন পেয়েছি।
মা: কতো
আমি: ৩০ হাজার টাকা। আমার এখানে খরচ গিয়েছে ১০ হাজার টাকা। বাকি টাকা পাঠাইতাছি।
মা: পাঠা। তর জন্য মেয়ে দেখছি।
আমি: দেখছো? কিন্তু মা আমার হাতেতো এখন টাকা পয়সা নেই।
মা: তুই কোনো চিন্তা করিস না। এখন বল তুই কবে আসতে পারবি।
আমি: তুমি যেদিন বলবে।
মা: আগামী সপ্তাহে আসতে পারবি।
আমি: আসতে পারবো শুধু শুক্রবার ছুটি।
মা: তর সাথেতো রাহাত থাকে তাকে নিয়ে একেবারে আসিছ।
আমি: আচ্ছা।
মা: তুইতো জানিস আমি বাড়িতে একা। সাথে যদি বৌমা থাকে তাহলে আমার কোনো টেনশন থাকবেনা।
আমি: মা তোমার যেটা ভালো মনে হয় করো।
মা: আচ্ছা। আমি পরশু তাদের বাড়িতে যাবো। পরে তুই আসলে কথা ফাইনাল করবো।
আমি: আচ্ছা।
মা: তো রাইখা দে।
__আমি ফোন কেটে দিলাম। রাহাত বললো রাহাত এখন আমার সাথেই থাকে। আমি যে রুমে থাকি সে রুমে দুজন ইজিলি দুজন থাকতে পারবে। রাহাত আলাদা তোশক বিছিয়ে থাকে। আমার কোনো সমস্যা নেই। রাহাত বললো
রাহাত: কে ফোন করছে?
আমি: মা ফোন করছে। আমার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখছে। আগামী সপ্তাহে বাড়িতে যাচ্ছি । তর যেতে হবে।
রাহাত: ওকে যাবো। সিগারেট খাবি।
আমি: ধুর হালা। তুই জানিস না আমি এসব খাইনা।
রাহাত: আরে বন্ধু একটা টান দিয়ে দেখ কেমন লাগে। বিয়ের পরতো আর খেতে পারবি না।
আমি: আমি এখনো খাবো না। পরেও খাবো না।
রাহাত: আরে খেয়ে দেখ। টেনশন থেকে সবসময় মুক্ত থাকবি।
__এই বলে রাহাত সিগারেট ধরাতে যাবে। আমি বললাম
আমি: বাহিরে যা। গন্ধ সহ্য করতে পারিনা।
রাহাত: যাচ্ছি।
__আমি কিছুক্ষণ মোবাইল টিপে ঘুমিয়ে গেলাম। পরদিন সকালে ঘুম উঠে খাওয়া দাওয়া করে। অফিসে গেলাম। মনি আপুর সাথে পরে আর কোনো কথা হয়নি। সারার সাথে খুবই অল্প। আস্তে আস্তে কোম্পানিতে অভ্যাস্ত হয়ে গেলাম। এখন সবার কাছেই আমি পরিচিত। ভাবতেই অবাক লাগছে। আর কিছুদিন পর বিয়ে। আল্লাহ আল্লাহ করি যাতে ভালো মেয়ে কপালে জুটে। আজকে অফিসে বেশি কাজ ছিলো না। রুমে চলে আসলাম। মেসের খাবার আর ভালো লাগে না। পেটের ক্ষিধায় শুধু খাই। টাকাও নাই যে ভালো মন্দ খাবো । রাহাতেরও আমার মতো মাসে ত্রিশ হাজার টাকা বেতন। তার একটা লোকাল কোম্পানি। ১০ বছর মেয়াদের চাকরি। রাহাতের ফ্যামিলির সবাই আছে। রাহাত আর সবুজ আমার ছোট বেলার বন্ধু। ছোট বেলা থেকেই আমরা একসাথে ssc দিয়েছিলাম। পরে আমি কারিগরি লাইনে চলে আসি। সবুজের এখনো কোনো চাকরির ব্যাবস্থা হয়নি। ওর বাবার একটা ব্যাবসা আছে। ঐখানে সে এখন সময় দেয়। ওর যদি এদিকে কোনো চাকরি হয় । তাহলে তিনজন একসাথে অন্যা আরেকটি ফ্ল্যাট নিয়ে থাকবো। সবুজের এখনো কোনো আপডেট পাইনি। আমি দুপুরের খাবার খেয়ে বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে বিকালে খেলতে বেরোলাম। রাহাত এখনো রুমে আসেনি। বাসার পাশেই একটা মাঠ আছে ঐখানে ক্রিকেট খেলি। এই একমাসে তাদের সাথে ভালই পরিচয় হলাম। ছোট বেলা থেকেই আমাদের তিনজনের খেলার প্রতি একটু বেশিই জোক ছিলো। বিকালে খেলা ধুলা বাসায় করে বাসায় আসছি। দেখি অনেক মানুষ নামাজে যাচ্ছে । এখানে আসার পর নামাজ কি জিনিস ভুলেই গিয়েছিলাম। বাড়িতে থাকতে মার বকাঝকার কারনে নামাজ পরতাম। এখানে এসে যেনো সেটাই ভুলে গেলাম। কেনো জানি মনে হলো নামাজ পরা উচিত। নামাজ পড়ে রুমে আসলাম। কোম্পানি থেকে নতুন একটা লেপটপ দিয়েছে । লেপটপটা নিয়ে বসলাম। রাহাত রুমে আসলো।
আমি বললাম।
আমি: আজকে এতো দেরি করলি কেনো?
রাহাত: কোম্পানিতে আজকে বেশি কাজের চাপ গিয়েছে।
আমি: তদের বস কি মেয়ে নাকি?
রাহাত: না। দোস্ত চলনা আগামীকাল ভালো মন্দ খাই। মেসের খাবার খেতে খেতে তেতো হয়ে যাচ্ছি।
আমি: কি খাবি?
রাহাত: গ্রীন আর নান।
আমি: খারাপ না ওকে আগামীকাল।
রাহাত: তদের কোম্পানির একটা মেয়ে বাইর কইরা দিস না। কিছুদিন জমিয়ে প্রেম করি ।
আমি: তুইকি নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারতে চাষ। কি দরকার আছে? কিছুদিন পর বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য বলবে তখন দশটা দেখে একটা পছন্দ করবি। সেটা ভালো না।
রাহাত: জানি জানি দেনা একটা বার কইরা ।
আমি: তুই অন্তত আমারে বলিস না। আমাদের কোম্পানির যেই অদ্ভুত নিয়ম সেটা শুনলে তর মাথা চক্কর দিবে।
রাহাত: কি নিয়ম?
__আমি রাহাতকে অফিসের অদ্ভুত নিয়মের কথা বললাম। রাহাত শুনে বললো
রাহাত: এমন আজাইরা ফালতু নিয়ম কে বানাইছেরে। আমার বাব জনমে এমন নিয়মের কথা শুনি নাই। কেরে তদের বসটা। তার বাড়ি কোথায়?
__আমি এতো দিন রাহাতকে মনি আপুর সম্পর্কে কিছুই বলি নাই।
আমি: কে বানাইছে? শুনেতো তুই লাফ দিয়ে উঠবি।
লাফ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হো।
রাহাত: বল বল দেখি কোন হালায় এটা।
আমি: মুফাজ্জল আংকেলের মেয়েকে চিনিস।
রাহাত: কোন মুফাজ্জল।
আমি: তুই কোন মুফাজ্জলকে চিনস।
__দেখি রাহাত ভাবনায় ডুবে গেলো। কিছুক্ষণ পর রাহাত শুয়া থেকে বসে পড়লো। বললো
রাহাত: তুই আমাদের প্রতিবেশী মুফাজ্জল আংকেলের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার মনির কথা বলতাছস। ওয়াট দা ….।
আমি: হুম।
রাহাত: মনি আপু তর বস। আমিতো বিশ্বাসই করতে পারছি না। এতো দিন বলস নাই কেনো?
আমি: সারপ্রাইজ।
রাহাত: বাল সারপ্রাইজ। এই কানিরি তদের সাথে এরকম করছে । এতে আমি একটু অবাক হয়নি। কারণ ওতো এমনই। ছোট বেলা কি জালান ঝালায়ছে।
আমি: তরে বলছিলাম না । আমার চশমা পড়ার পিছনে একটা ইতিহাস আছে। এটা মনি আপুর কারণে হয়েছে।
রাহাত: কি করে হয়েছে?
আমি: আজকে না আরেকদিন।
রাহাত: মনি আপুর সাথে কি চলে নাকি।
আমি: তর কি মাথা ঠিক আছে। কোথায় মনি আপু আর আমি । সালা কিছুদিন পরতো আমি বিয়ে করতাছি।
রাহাত: বুঝছি তর দ্বারা কিছু হবে না। আমারই কিছু একটা করতে হবে।
আমি: তুই কি করবি।
রাহাত: দেখিস।
আমি: তরে আমি একটা মেয়ের সন্ধ্যান দিতে পারি। তুই যদি পটাতে পারিস তাহলে তুই লাকি। আর যদি না পারস । তাহলে তর খবর আছে।
রাহাত: কেরে এটা।
আমি: মনি আপুর সেক্রেটারি সারা । খুব পাকনা। আর মনি আপুর বডিগার্ডও আর যেহেতু বডিগার্ড তাহলে মারামারিতে উস্তাদ।
রাহাত: অসুবিধা নেই। এমন মেয়েই তো আমার দরকার।
আমি: দেখ তুই জেনে বুঝে আগুনে লাফ দিচ্ছোস।তর কপালে শনি আছে।
রাহাত: অসুবিধা নেই তুই শুধু মেয়েটাকে দেখাইস।
আমি: আচ্ছা।
__আমি কতক্ষন মোবাইল টিপে খাওয়া দাওয়া করলাম। দেখি মা ফোন দিয়েছে
মা: তর জন্য মেয়েটা দেখেছি । মেয়েটাকে না আমার খুব ভালো লাগছে। তুই কবে আসবি?
আমি: শুক্রবার আসতাছি।
মা: আয় ।
আমি: রাখি।
__আর কিছুক্ষণ মোবাইল টিপে ঘুমিয়ে গেলাম। পরদিন সকালে অফিসে গিয়ে কাজে মনোযোগ দিলাম। দুপুর পর্যন্ত এক নাগাড়ে বইসা রইলাম। দুপুরে এসে এক সিকিউরিটি এসে খবর দিলো । আমাকে কে জানি ডাকছে । আমি গেঁটের বাহিরে গিয়ে দেখি রাহাত। রাহাতের মুখ দেখে বুঝলাম কিছু একটা হয়েছে। সে জন্য সে ফোন না দিয়ে ডাইরেক্ট এখানে চলে এসেছে । রাহাত বললো
রাহাত: তর মার শরীরটা ভালো না। তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে হবে।
আমি: কি বলিস? আমি গতকালরাতেই মার সাথে কথা বললাম । তখন তো মার শরীর খারাপের কথা বলেনি।
রাহাত: আমাকে এখন ফোন দিয়ে বললো। তর মার শরীর ভালো না। এখুনি রেডি হো বাড়ি যেতে হবে।
আমি: তুই দ্বারা আমি ছুটি নিয়ে আসতাছি।
রাহাত: তাড়াতাড়ি যা।
__আমি ভাবতে লাগলাম। কি হলো মার গত রাতেইতো। মার সাথে কথা বললাম। মা আমাকে তেমন কিছুই বলেনি। রাহাতের মুখ দেখে বুঝলাম নিশ্চয় খারাপ কিছু হয়েছে। তাহলে কি মা কি মারা গেলো। এমন কথা মনে হওয়ায় সাথে সাথে আমার ভিতরে একটা চিপ দিলো। ভাবলাম এটা হতে পারেনা। আমি সোজা মনি আপুর অফিসের সামনে গেলাম। দেখি সারা নেই। মনি আপুর দরজায় টোকা দিলাম। মনি আপু বললো।
মনি আপু: ভিতরে আয়।
__আমি ভিতরে ঢুকলাম। আমি বললাম
আমি: ম্যাডাম আমার ছুটি লাগবে। আমার মার শরীর ভালো না।
মনি আপু: আমি জানি। যা তাড়াতাড়ি বাড়ি যা। আর এই নে আমার পার্সোনাল নাম্বার। কোনো সমস্যা হইলে ফোন দিস।
আমি: ম্যাডাম আমার মার কি হয়েছে আপনি জানেন। (বললাম কাঁদো কাঁদো কন্ঠে। )
মনি আপু: তেমন কিছু না। তুই বাড়ি যা।
আমি: আচ্ছা ম্যাডাম।
__আমি আর রাহাত বাসায় এসে রেডি হয়ে। বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। বাসে রাহাত কে এতো করে বলতে বললাম মার কি হয়েছে। সে বলছিলো বাড়িতে গেলেই দেখতে পারবো। এক ঘন্টা জার্নি করে নরসিংদী আসলাম । বিকালের আগেই বাড়িতে পৌঁছে গেলাম। বাড়ির সামনে এসে দেখি অনেক মানুষের ভিড় । আমার ভিতরে একটা চিপ দিলো। আমি বাড়িতে ঢুকেই দেখলাম একটা লাসের খাঁটিয়া। রাহাত গিয়ে লাসের মুখ দেখালো। আমি দেখেই আমার পায়ের তলা থেকেই মাটি সরে গেলো। আমি মা বলে এক চিৎকার দিয়ে মার লাসের উপর লুটিয়ে পড়লাম। ??
চলবে…
#নাম: সিনিয়র বস
#পার্ট: ১০
#লেখক: Osman
__আমি বাড়িতে ঢুকেই দেখলাম একটা লাসের খাঁটিয়া। রাহাত গিয়ে লাসের মুখ দেখালো। আমি দেখেই আমার পায়ের তলা থেকেই মাটি সরে গেলো।
আমি এক চিৎকার দিয়ে মার লাসের উপর লুটিয়ে পড়লাম। আর শিশুর মতো কাঁদতে লাগলাম । মার লাসের উপর পড়ে। চোখ দিয়ে অঝোড়ে পানি পড়তে লাগলো। রাহাত এসে আমাকে ধরলো আমি চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম। আমার মার কি দোষ ছিলো । আল্লাহ তুমি কেনো? আমার মাকে উঠিয়ে নিয়ে গেলা। রাহাত আমাকে ধরে বাহিরে নিয়ে আসলো। আমি রাহাতের কাঁধে মাথা রেখে কাঁদতে লাগলাম। নিজের ভাব প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম ছিলো জুড়ে জুড়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকা। গতরাতেই তো মার সাথে কথা বললাম। মারতো কোনো অসুখ ছিলো না। আল্লাহ তুমি কেনো মাকে নিয়ে গেলা। রাহাত আমাকে বুঝাতে লাগলো। আমার সেসব কথায় কোনো ফায়দা হচ্ছে না। আমার মাথায় ঘুরপাক করছে। মার সাথে আর কোনো দিন কথা বলতে পারবো না। মাকে আর দেখতে পারবোনা। মার প্রত্যাকটা কথা মনে হচ্ছে। আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। সব আমার দোষ কেনো যে মাকে ছেড়ে চলে গেলাম। আজ যদি মার পাশে থাকতে পারতাম হয়তো এমন হতো না। মৃত্যুর সময় মার পাশে থাকতে পারতাম। মার শেষ কথা গুলো শুনতে পারতাম। হে আল্লাহ ! হে আল্লাহ কেনো তুমি আমার মাকে তুলে নিয়ে গেলা। কেনো তুমি আমাকে এতিম বানায় দিলা। কতক্ষন কাঁদলাম জানি না। মাকে গোসল দিলো। রাতে জানাজার টাইম দিলো। ছোট বেলায় মাদ্রাসায় পড়ার কারনে আরবি পড়তে পারতাম। নিজে মার জানাজা পড়ালাম। নিজের হাতে মার কবর দিলাম। আমার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়তেই আছে। আর শুনতে পারবো না মার মিষ্টি মধুর বকা গুলো। আমি রাতে ঘুমাতে পারলাম না। শেষ রাতে ঘুমিয়ে গেলাম। রাহাত এসে ডেকে উঠালো। এখন কেনো জানি মার মধুর ডাক গুলো শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে। সেই ভেবেই আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো। রাহাত আমাকে শান্তনা দিতে লাগলো।
রাহাত: দেখ মানুষের মৃত্যু হবেই । আজ না হোক কাল। তর মার হায়াত নেই সেজন্য আল্লাহ নিয়ে গেছে।
__রাহাত আমাকে খাবার এনে দিলো। আমি অল্প খাবার খেলাম।
রাহাত: মনি আপু আসছে।
আমি: ভিতরে আসতে বল।
__দেখি মনি আপু আসছে । সাথে সারাও । মনি আপু এসে বসলো। আমার চোখ দিয়ে তখনো পানি পড়তাছে। মনি আপু বললো
মনি আপু: দেখ মানুষের মরতেই হবে। এমন আছে আল্লাহ আমাকেও আজকে তুলে নিয়ে যাবে। তর মার হায়াত নেই। আর মার জন্য না কেঁদে দোয়া কর আল্লাহ যেনো তর মাকে জান্নাত বাসি করে।
আমি: হুম।
মনি আপু: কাঁদিস না । কেঁদে যদি তর মাকে ফিরিয়ে আনা যেতো। তাহলে তর মাকে কেঁদে ফিরিয়ে আনতাম।
আমি: হুম।
মনি আপু: আমি আর সারা কিছুদিন এখানে থাকবো। তর মাকে যারা গোসল করিয়েছে কবর করছে । তাদের দাওয়াত দিয়ে খাওয়াইয়া দিয়ে তারপর আমরা যাবো ।
রাহাত: না আপু আপনার কষ্ট করতে হবে না। আমরাই ব্যাবস্থা করবো।
সারা: রাফিদের অবস্থা ভালো না। আপনারা পারবেন না। আর এমন কেও নাই আপনাদের ব্যাবস্থা করে দিবে। তাই আমরাই করে দিবো।
আমি: না আপু আপনি শুধু শুধু কষ্ট করবেন কেনো? আমরাই ব্যাবস্থা করবো।
মনি আপু : নাহ তরা পারবি না। কে তাদের রান্না করে দিবে। কবে তাদের বলবি।
__সেটা অবশ্য মনি আপু ঠিকই বলছে। কারণ আমার আব্বা ছিলো আমার দাদার একমাত্র ছেলে। যার কারণে আমার চাচা-চাচী ফুফু কিছুই নেই। আমাদের বংশের আমিই লাষ্ট। আমি বললাম
আমি: দুইদিন পর।
মনি আপু: আচ্ছা আমরা দুই দিন বাড়িতে থাকবো।
আমি: শুধু শুধু কষ্ট করবেন আপনারা।
মনি আপু: তোমার নাম যেনো কি? বললো রাহাতকে লক্ষ্য করে।
রাহাত: জী আমার নাম রাহাত।
মনি আপু: রাহাত তুমি রাফিদ কে একটু সঙ্গ দেও।
রাহাত: জী আপু।
মনি আপু: তাহলে এখন আমরা যাই। দুপুরে আর রাতে আমাদের বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করবি।
আমি: জী না আপু।
মনি আপু: চুপ কর যেটা বলছি সেটাই।
__এই বলে মনি আপু চলে গেলো। রাহাত বললো
রাহাত: ভালই হলো ঝামেলা থেকে বাঁচিয়ে দিলো।
আমি: হুম।
রাহাত: তুই বস আমি আসছি।
আমি: ওকে।
__রাহাত চলে গেলো। আমি মার আলমারি থেকে মার বেগটা বের করলাম। মার বেগে থেকে একটা কাগজ পেলাম। কাগজে লেখা ছিলো..
(রাফিদ বাবা আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে আর বেশিদিন বাঁচবো না। তকে বলিনি কারণ তুই শুধু শুধু টেনশন করবি । কখন মারা যাবো বলতে পারিনা হয়তো তুই পাশে থাকতে পারস নাও থাকতে পারস । সেজন্য বলতাছি। আমার পছন্দ করা মেয়েকে তর পছন্দ হলে বিয়ে করিস। আর সবসময় নামাজ পড়বি তর বাবার জন্য দোয়া করিস মারা গেলে আমার জন্য দোয়া করিস। আর বংশের মর্যাদা ধরে রাখিস। আমার একাউন্টে কিছু টাকা আছে ঐগুলো খরচ করিস। আর তর আব্বার কবরের পাশে আমাকে কবর দিস। তকে অনেক বকাঝকা করছি মাফ করে দিস। যদি এই চিঠিটা পড়ে থাকস তাহলে আমি অলরেডি মারা গেছি। কেনো জানি মনে হচ্ছে বেশি দিন বাঁচবো না।)
__আমি চোখ দিয়ে টপটপিয়ে পানি পড়ছে। আমাকে কেনো বললো না মার মনের কথা। আব্বার কবরের পাশেই মার কবর দেয়েছি। মার পছন্দ করা মেয়েকে এখন বিয়ে করা সম্ভব নয় কারণ এখন আমাকে চলে যেতে হবে ঢাকায় । আর বিয়ে করে তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। মা থাকতো তাহলে মার সাথে বাড়িতে থাকতে পারতো। এখন আর সেটা সম্ভব নয়। এই বাড়ি এখন খালি পড়ে থাকবে। ভাবতেই বুক ফেটে চিৎকার আসছে। মাকে ছাড়া কি করে থাকবো । এই পৃথিবীতে আমার এখন আপন বলতে কেউ নেই। দুপুরে মনি আপু আসলো খাবার নিয়ে। মনি আপু আমাকে দেখে বললো
মনি: তর কষ্ট আমি বুঝি। এভাবে কাঁদলে কি তর মা ফিরে আসবে। এই নে খাবার খেয়ে নে দেখবি ভালো লাগবে।
আমি: হুম।
মনি আপু: এখন আমার সামনে খাঁ।
আমি: ওকে।
__আমি অল্প খাবার খেলাম। মনি আপু বললো
মনি: বুঝতে পারছি তর মনটা অনেক খারাপ। তাহলে বিকালে চল নদির পাড়ে হাঁটতে যাবো।
আমি: হুম।
__বিকালে আমি আর মনি আপু সারা রাহাত গেলাম নদির পাড়ে । শুনলাম সবুজ বিদেশ চলে গেছে।
মনি আপু গিয়ে নদীর পাড়ে বসলো । সারা নদী দেখে খুশিতে শেষ। পানিতে নামতে চলে গেলো। মনি আপু ইশারা দিয়ে বললো তার পাশে বসতে। আমি গিয়ে তার পাশে বসলাম। মনি আপু বলল
মনি: তর মনে আছে এই নদীতে কতো গোসল করছিলাম।
আমি: হুম।
মনি আপু: মনে আছে একবার তুই যে আমাকে টান দিয়ে । পানির অনেক গভীরে নিয়ে গিয়েছিলি । আমি যে কি ভয় পেয়েছিলাম । ভয়ের কারণে আমার তিনদিন একটানা জড় ছিলো।
আমি: হুম।
__দেখি সারা পিচ্ছিল খেয়ে পানিতে পড়ে গিয়ে অর্ধেক শরীর ভিজিয়ে ফেলেছে। মনি আপু বললো
মনি আপু: রাহাত ওঠাওতো সারাকে।
__রাহাত গিয়ে হাত বাড়ালো । কিন্তু সারা নিজের চেষ্টায় উঠতে গিয়ে আবার পিচ্ছিল খেয়ে পড়ে গেলো। মনি আপু হাসতে লাগলো। পড়ে বাধ্য হয়েই সারা রাহাতের হাত ধরলো । রাহাত টান দিয়ে সারাকে উঠালো। রাহাত নিজের শরীরের শার্ট খুলে সারাকে দিলো পড়ার জন্য। সারা নিতে নারাজ। মনি আপু হাসতে হাসতে বললো
মনি আপু: সারা নে নে তর শরীর ভিজে গেছে।
__সারা বাধ্য হয়ে রাহাতের শার্ট নিলো । নিয়ে নিজের গায়ে দিলো। আমি বললাম
আমি: চলেন উঠি। আজান দিয়ে দিবে।
মনি আপু: আমার জন্য দোয়া করিস। কবে জানি আমিও মারা যাই ।
আমি: আপনার বয়ফ্রেন্ড কে গিয়ে বলেন। আমাকে বলেন কেনো? আমি মানুষ হিসেবে সবার জন্যই দোয়া করি।
মনি আপু: আমার জন্য একটু স্পেশাল ভাবে দোয়া করিস।
আমি: হুম।
__আমি মসজিদে এসে নামাজ পড়ে । বাসায় আসলাম। দুইদিন চলে গেলো। মনি আপু আর সারা রান্না করে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসলো। যারা যারা গোসল করিয়েছে কবর করছিলো । তাদের সবাইকে দাওয়াত দেওয়া হলো । নানির বাড়ি থেকে মানুষ আসলো। নানা নানী আরো আগেই মারা গিয়েছে। আশেপাশের আত্নীয় স্বজনদের দাওয়াত দেওয়া হলো। সবাইকে খাওয়ানো হলে । মসজিদের ইমামকে এনে দোয়া পড়ালাম। বিকালের দিকে মনি আপুরা আসছে বিদায় নিতে। মনি আপু বললো।
মনি আপু: রাফিদ তাহলে আমরা যাই। তুই কবে জয়েন দিবি।
__মনি আপু খুব উপকার করলো আমার। আসলে এতো মানুষের খাবার রান্না করাটা সহজ বিষয় না।
মনি আপুকে বললাম
আমি: ধন্যবাদ আপু এতোবড় একটা উপকার করার জন্য।
মনি আপু: ধন্যবাদের কি আছে ? এটাতো প্রতিবেশীর হক।
আমি: তারপরেও ধন্যবাদ।
__সারা বললো
সারা: রাহাত আপনার শার্টটা ধোয়ার পর না ডিসকালার হয়ে গেছে। আপনাকে একটা নতুন শার্ট কিনে দিবো।
রাহাত: না কিনে দেওয়া লাগবেনা । ডিসকালার শার্টটাই দেন ঐটায় আমি চালিয়ে নিবো।
সারা: নাহ আপনি আমার উপকার করছেন।
আপনাকে আমি ঠকাতে পারি না। আমি নতুন শার্ট কিনে আপনাকে দিয়ে দিবো।
আমি: সারা যেহেতু চাচ্ছে না করিস কেনো?
মনি আপু: সেটাই। এখন বল কবে জয়েন দিবি।
আমি: কিছু ঝামেলা আছে ঐগুলো শেষ করে । তিন দিনের ভিতর জয়েন দিচ্ছি।
মনি আপু: আচ্ছা। সারা চল।
__মনি আপু আর সারা চলে গেলো। রাহাত বললো
রাহাত: আমি খুব ভোরে চলে যাবো। গিয়ে অফিস ধরতে হবে।
আমি: ওকে।
চলবে….