সিনিয়র বস #পার্ট: ২৩

0
1684

#নাম: সিনিয়র বস
#পার্ট: ২৩
#লেখক: Osman

__বিশ মিনিট পর তারা একটা পরিত্যাক্ত গোডাউনে প্রবেশ করলো । মনি ইশারায় বলে দিলো গোডাউনে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকতে । সারা গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলো । গাড়ি থেকে হকিস্টিক হাতে নিয়ে নামলো । মনি গাড়ি থেকে নেমে বললো

মনি: রাফিদকে আর রাফাতকে ছেড়ে দে। তাহলে তদেরকে কিছুই করবো না। নাহলে প্রত্যাকটাকে মেরে আজ নরকে পাঠাবো।

রিফাত: যাক ভালই হলো। এক ঢিলে দুই পাখি। এই তাদের দুজনকে ও ধর। ধরে চেয়ারে বাধ।

__দেখি মনি আর সারার সামনে প্রথমে দুইজন গেলো। মনি তার মাথায় ভারি দিলো। সে সাথে সাথে মাটিতে পড়ে গেলো। সারাও লোকটার মাথায় ভারি দিলো। দুইজন ওই মনে হয় অজ্ঞান হয়ে গেলো। সেখানে লোক ছিলো আগে ১০ জন এখন হয়েছে বারো জন রিফাতকে নিয়ে। তার মধ্যে দুইজনকেই শেষ করে দিলো। পরে একসাথে চারজন গেলো। মনি প্রথমে একজনের পায়ে ভারি দিলো তারপর সাথে সাথে আরেকজনের পায়ে কিক চালোলো। দুইজনেই মাটিতে পড়ে গেলো। মনি একটার তলপেটে কিক চালালো আরেকজনের কানের নিচে নরম জায়গায় কিক চালালো। দুইজনেই হয়তো জ্ঞান হারালো। সারারো মারার একই স্টাইল । হয়তো মনির থেকেই সারা এমন মারামারি শিখেছে। রিফাতকে ছাড়া আর বাকি ছিলো ৫ জন । তারা প্রত্যাকেই হাতে একটা করে লাঠি নিয়ে আগাতে থাকে। আমি তখনো নিচে শুয়ে রয়েছি। তারা মারার কারণে আমার বাঁধন গুলো অনেকটাই খুলে গিয়েছিলো। আমি নিজের বাঁধন খুলতে চেষ্টা করতে লাগলাম। দেখি মনি আর সারার চোখে প্রতিশোধের আগুন জ্বলতাছে। এখন যে সামনে যাবে মনি তাকে কোনো ভাবেই ছাড়বে না। তিনজন গেলো মনির কাছে আর দুইজন গেলো সারার কাছে। মনি প্রথমে একটাকে নুয়ে তার পায়ে ভারি দিলো। আরেকজন মনির পিঠে ভারি দিলো । মনি নিচে পড়ে গেলো। নিচে শুয়ে থেকেই আরেকটার পায়ে কিক চালালো। পরক্ষনেই আবার অদ্ভুত কায়দায় দাঁড়িয়ে গেলো। একজনের মেডেল স্টেম বরাবর কিক চালালো। বেচারা মাটিতে পড়ে গেলো। সাথে সাথে ঘুরে আরেকটার মাথায় ভারি দিয়ে বসলো। সেও নিচে পড়ে গেলো । আরেকজনের ধাক্কা দিয়ে নিচে পড়ে গেলো তার উপড় উঠে মনি তার চোখে মুখে ঘুষি দিতে লাগলো। ততক্ষণ ঘুষি চালালো যতোক্ষন পর্যন্ত না তার জ্ঞান হারালো। মনি তার উপর থেকে উঠে আরেকটার কানের নিচে কিক চালালো সে সাথে সাথে জ্ঞান হারালো। ঐদিকে সারা দুইটাকে ভালো করেই কাবু করলো। এখন শুধু রিফাত আছে। সবগুলো অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। এদিকে আমি আমার বাঁধন খুলে ফেললাম। দেখি রাহাতের অবস্থা সিরিয়াস। মনে হয় রাহাত জ্ঞান হারাতে চলেছে। সে মাটিতে শুয়ে আছে। এদিকে দেখি রিফাত রিভলবার লোড করলো। আবার দেখি মনিও কোমড় থেকে রিভলবার বের করলো। মনি রিফাতের দিকে রিভলবার তাক করে বললো ।

মনি: রিফাত হাত থেকে রিভলবার ফেলে আত্নসমর্পন কর। তাহলে তুই এই যাত্রায় বেঁচে যাবি।

__রিফাতো মনির দিকে রিভলবার তাক করে বললো।

রিফাত: তর জন্য আমার এ অবস্থা তুই যদি আমাকে বিয়ে করতি তাহলে দুজনে শান্তি মতো সুখের সংসার করতাম। কিন্তু তুই গিয়ে পছন্দ করছত এক ক্ষেতকে। তরে আমি কিছুই করবোনা আমি কেড়ে নিবো তর ভালোবাসাকে যাতে তুই সারাটা জীবন কষ্ট ভোগ করতে করতে মরিস।

__এই বলে রিফাত আমার দিকে তিনশোষাট ডিগ্রি এনগেলে রিভলবার ঘুরালো। দেখি তার তর্জনী নড়ে উঠেছে। আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম হয়তো আমার মৃত্যু এসে গেছে। মনি রাফিদ বলে এক চিৎকার দিলো রিভলবারের আওয়াজ হলো । কিন্তু না গুলি আমার শরীরে লাগে নাই। দেখি মনি জাম্প দিয়ে আমার শরীর ডেকে ফেলেছে । গুলিটা গিয়ে মনির শরীরে বেধ করলো । সাথে সাথে আরেকটা গুলির আওয়াজ। এটা মনির রিভলবার থেকে দেখি রিফাতের মাথা বরাবর গুলিটা গিয়ে লাগলো । রিফাত সোজা মাটিতে পড়ে গেলো। মনিও মাটিতে পড়ে গেলো সব কিছু যেনো মুহূর্তের মধ্যেই হয়ে গেলো। দেখি মনি মাটিতে পড়ে কাঁদতে লাগলো। আমি মনিকে ধরলাম। আমি বললাম

আমি: কি জন্য এখানে আসলা?

মনি: তরে ছাড়া আমার জীবন মূল্যহীন।

__আমি মনির তলে হাত দিয়ে দেখি মনির শরীরের গরম রক্ত আমার হাত বয়ে চলেছে। আমি তাড়াতাড়ি আমার শরীর থেকে কাপড় খুলে ঐখানে বেঁধে দিলাম। সারা রাহাত কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো আর চোখে মুখে চুমু দিতে লাগলো। আর রাহাত রাহাত বলে জুড়ে জুড়ে ডাকতে লাগলো।

আমি: আমাকেই গুলিটা হজম করতে দিতা।

মনি: আমি বলেছিলাম না আমি থাকতে তর কিছু হবে না।

আমি: তোমার কিছু হবে না। কোথায় গুলি লাগছে?

মনি: মনে হয় কোমড়ের দিকে।

আমি: তোমার কিছু হবে না।

মনি: নারে মনে হয় বাঁচবো না। তরে অনেক বকছি অনেক কষ্ট দিছি মাফ করে দিস। সত্যিই রাফিদ তরে অনেক ভালোবাসি। তর জন্য মরতে পেরে নিজেকে অনেক সার্থক মনে হবে।

আমি: তুমি এসব কি বলছো? তোমার কিছু হবে না। তুমি চলে গেলে আমি এই পৃথিবীতে থেকে কি করবো। সারা গাড়ি স্টার্ট দেও।

মনি: জানি তুই আমাকে অনেক ভালোবাসস। এখন আমাকে তর বুকে অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধর আর কপালে চুমু দে । যতক্ষন পর্যন্ত আমি না মরবো ততক্ষন আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে রাখ।

__আমি মনিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম এবং তার কপালে চুমু দিলাম। আমি মনিকে কোলে তুলে নিলাম কোলে করে নিয়ে গাড়িতে বসালাম। হাতটা তার গুলি লাগার স্থানে ধড়িয়ে দিলাম। পরে রাহাতকে পাঁজাকোলা করে তুলে এনে গাড়িতে বসালাম। আমি মনির পাশে বসলাম। আমি মনির কোমড়ে ধরে রাখলাম । যাতে ব্লিডিং এরানো যায়। সারা গাড়ি স্টার্ট দিলো। জিজ্ঞেস করলাম কতক্ষন লাগবে সারা বললো ২০ মিনিট। আমি মনিকে বললাম

আমি: মনি বিশটা মিনিট চোখ খুলে রাখো।

মনি: এদিকে আমার মুখের কাছে আয়।

__আমি মনির মুখের কাছে কান নিলাম। মনি বললো

মনি: I love you ? রাফিদ।

__আমিও কানে কানে বললাম।

আমি: I love you too baby?।

__এই বলে আমি মনির কপালে চুমুর প্রলেপ এঁকে দিলাম। মনি আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম

আমি: এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?

মনি: শেষবার তকে দেখে নেই। যাতে পড়ে তকে চিনতে পারি। আমার কপালে চুমু দিয়ে রাখ আমি তকে আরো কাছ থেকে দেখতে চাই।

আমি: ওকে।

__আমি মনির কপালে চুমু দিয়ে ধরে রাখলাম। শেষ মুহূর্তে আর পারিনি। মনি অজ্ঞান হয়ে গেলো । আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মনি জ্ঞান হারালো। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে এনে মনি আর রাহাতকে ইমার্জেন্সি থিয়েটারে পাঠানো হলো। কিছুক্ষণ পর সাদিয়া এসে বললো

সাদিয়া: অনেক ব্লিডিং হয়েছে। মনির A- রক্ত আমাদের কাছে এক বেগ ছিলো। আরো এক বেগ রক্তের প্রয়োজন।

আমি: আমার আর মনির রক্তের গ্রুপ এক । আমি রক্ত দিবো।

সাদিয়া: আপনার কাছ থেকে রক্ত নেওয়া যাবে না। আপনার অলরেডি অনেক ব্লিডিং হয়েছে। আপনি রক্ত দিতে পারবেন না। এক্ষেত্রে আপনার সমস্যা হবে।

আমি: ধুর আমার শরীরে যদি এক ফোঁটা রক্ত থাকে তাহলে ঐটা নিয়ে নিন। প্লিজ মনিকে আমি ফেরত চাই।

সাদিয়া: বুঝে বলছেনতো। পরে কোনো সমস্যা হলে আমরা দায়ী থাকবো না।

আমি: মনির যদি কিছু হয় তাহলে আপনারা দায়ী থাকবেন।

সাদিয়া: আচ্ছা দেখি।

আমি: প্লিজ সাদিয়া মনিকে বাঁচান । মনি ছাড়া পৃথিবীতে আমার আর কেও নেই।

সাদিয়া: আমি এখনো নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। প্রচুর ব্লিডিং হয়েছে।

আমি: তাড়াতাড়ি রক্ত নেন।

__আমার শরীর থেকে এক বেগ রক্ত নিলো। আমার শরীরে আর একটু শক্তিয় অবশিষ্ট নেই। আমি বেডে শুয়ে আছি। দেখি সারা আর রাহাত আসলো। রাহাতের সারা শরীরে বেন্ডেজ। সারা রাহাতকে আমার পাশে এক বেডে শুয়ে দিলো। সারা বললো

সারা: মনির বাবা মা আসছে। আমি পুলিশকে সব জানিয়ে দিয়েছি। পুলিশ ওদিকে সব ব্যাবস্থা করবে।

আমি: ওকে। কিন্তু মনি বাঁচবে নাকি সেটাই এখন বড় সমস্যা।

সারা: রাফিদ মনির কিছুই হবে না।

আমি: আমি আর ঢাকা থাকছি না। বাড়িতে চলে যাবো। এই হিংস্র শহর আমার জন্য না।

রাহাত: আমিও চলে যাবো।

আমি: তুই থাক । তর বাড়িতে মা বাবা আছে তাদের জন্য তর কিছু করতে হবে। নতুন ফ্ল্যাট ঠিক আরে আরেক জায়গায় ওঠ। আর সব সময় নিজেকে সবার থেকে আড়ালে রাখবি। সারা তকে হেল্প করবে।

সারা: অপারেশন আর কতক্ষন চলবে।

আমি: জানি না।

সারা রাহাত বসে রয়েছে। আমি ভাবতে লাগলাম।
মনি যদি মারা যায় তাহলে আমি কি করবো। একমাত্র মনিই আমার সব কিছু ছিলো। এটা ভাবতেই আমার কাঁটা দিয়ে ওঠে। দ্বীর্ঘ এক ঘন্টা পর অপারেশন শেষ করে সাদিয়া বের হলো। সাদিয়াকে জিজ্ঞেস করলাম।

আমি: মনির কি অবস্থা?

সাদিয়া: অপারেশন ভালো হয়েছে। কিন্তু যদি তিনদিনের ভিতরে জ্ঞান না ফিরে । তাহলে আশা শেষ ‌।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here