#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা,পর্ব২০,২১
#Hridita_Hridi
#পর্ব২০
নিপু পেছনে তাকিয়ে দেখে সবুজ সরি বলছে। নিপু সবুজের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললো আপনি! আপনি এখানে কেনো এইসময়?
সবুজ নিপুর জবাবে বললো তোমার কাছে এসেছি, আমার মায়ের হয়ে ক্ষমা চাইতে।আসলে আমার মা যা যা বলেছে, সেগুলো একদমি তার বলা উচিৎ হয়নি। তাই আমার মার হয়ে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি।প্লিজ ক্ষমা করে দাও!
নিপু এক ধ্যানে সবুজের দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে, াছেলেটা কতো সহজ সরল আর কতোটা ভালো অথচ তার মা! আচরণের কোনো মিল নেই মা ছেলের।
নিপু চোখের জল আড়াল করে বললো না না এভাবে কেনো বলছেন বলুনতো! আর আপনার মা তো ঠিকি বলেছে। আমি তো এতিম আশ্রিতা। আম্মা আর বাবাই খুব ভালো মানুষ তাই আমাকে এতো আদর যত্নে লালন পালন করেছেন। কখনো বুঝতে দেয়নি মা বাবার অভাব। আমি তো ভুলেই গেছিলাম যে আমি একটা এতিম।
সবুজঃ নিপুর সামনে হাত জোর করে ক্ষমা চাইছে আর বলছে প্লিজ নিপু! এভাবে বলোনা। তুমি এভাবে বললে আমার খুব কষ্ট হয়।
সিঁড়ি দিয়ে ছাঁদে উটছে ঋতুরা সবাই সবুজের কথা শুনতে পেয়ে ঋতু বলে হ্যা হ্যা তা তো কষ্ট পাবেই, আমার ভাইয়ের সুর তো এখন অন্য কিছু বলছে।
ঋতুর কথা শুনে সবুজ আর নিপু দুজনেই ঘুরে তাকায়। নিপু বলে আপু তোমরা সবাই এখানে! ঋতু বললো হুমমমম এলাম বলেই তো এতো সুন্দর মনোমুগ্ধকর একটা দৃশ্য স্বচক্ষে দেখতে পেলাম, নাহলে তো সব মিস করে যেতাম।ঋতুর কথা শুনে ঋতু সহ সবাই হেসে ওঠে শুধু নিপু লজ্জা পেয়ে লাল হয়ে যায়। আর সবুজ মাথা নিচু করে ঠোঁট বাকিয়ে হাসে আর মাথার পিছনের দিকের চুলে হাত দিয়ে চুল নাড়তে থাকে।
রাফসান সবুজের কাছে গিয়ে বলে হয়েছে ভাই আমার, আর লজ্জা পেতে হবেনা। ভাগ্যিস আমরা এ কয়জনি আছি অন্য কেউ এখনে আসেনি।
চল সবাই বসে পরি বলেই রাফসান প্যান্ডেলের নিচে যেখানে মেহেদির জন্য বসার ব্যাবস্থা করা হয়েছিল সেখানে বসে পরে। তার পাশে ঋতু, বর্ষা,নিপু বর্ষণ, সবুজ,রোহিত এভাবে একজনের পাশে একজন সিরিয়াল করে গোল হয়ে বসে পরে।
ঋতুঃ চল আমরা সবাই একটা গেম খেলি এইযে এই ছোট বক্সে কিছু কাগজের টুকরো আছে এতে সবার নাম আছে, এটা থেকে একটা কাগজ তুলতে হবে যার নাম উঠবে তাকে প্রশ্ন করা হবে।কে প্রশ্ন করবে তা সবাই মিলে ডিসাইড করা হবে।একেক জনকে তিনটি করে প্রশ্ন করা যাবে তবে এর কম ও করা যাবে। আর হ্যা যে প্রশ্নই করা হোকনা কেনো? তার ঠিক ঠিক জবাব দিতে হবে নো চিটিং।
সবাই মিলে বললো ওকে ঠিক আছে তাই হবে।
বর্ষণঃআমাদের সকলের মুরুব্বি যখন সব কিছু ঠিক করেই রেখেছে সেখানে আমাদের না বলার তো কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
ঋতুঃবর্ষণণণণণণণ… তুই আমাকে বুড়ি বললি! আজ তোকে আমি, দাড়া দেখাচ্ছি মজা বলেই উঠে গেলো বর্ষণের কাছে। বর্ষণ ও ছেড়ে দেবার পাত্র নয় হুহ্।যেই না ঋতু বর্ষণের কাছাকাছি গেলো।বর্ষণ উঠে দিলো এক দৌড়।
বর্ষণকে আর পায় কে । ঋতু ও হার মানার পাত্রি নয়। বর্ষণ আগে আগে দৌড় ঋতু পিছে পিছে দৌড়।
অনেকক্ষণ দৌঁড়ানোর পর বর্ষণ রোহিতের পেছনে গিয়ে লুকিয়ে পরে। রোহিত থামিয়ে দেয় ঋতুকে।
বর্ষা ঋতুকে বলে আচ্ছা আপু আমি বুঝতে পারছি না আমরা এখানে কানামাছি খেলতে এসেছি নাকি হাডুডু। তোমরা দুই ভাই বোন মিলে যা শুরু করেছো তাতে বোঝাই যাচ্ছে দৌড়ের উপরেই রাত কেটে যাবে।
রাফসান ফিক করে হেসে বলে আরে বর্ষা তুমি তো জানোনা ওরা ম্যারথনে নাম লিখিয়েছে তাই এইটুকু পূর্ব প্রস্তুতি।
রাফসান আর বর্ষার কথায় হাসতে হাসতে সবাই আবার যে যার জায়গায় বসে পরে।
ঋতু বক্সটা ঝাঁকিয়ে নিয়ে নিপুর সামনে ধরে বলে আমাদের টিমে তুই সবার থেকে ছোট তাই তুই কাগজ উঠাবি।
নিপু সবার দিকে একবার তাকিয়ে বক্সে হাত দিয়ে একটা কাগজ উঠায় তাতে নাম লেখা আছে রোহিত।
বর্ষণঃ কারও কোনো আপত্তি না থাকলে দুলাভাইকে কি প্রথম প্রশ্নটা আমি করতে পারি?
সবাই হ্যা বলাতে বর্ষণ রোহিতকে জিজ্ঞেস করলো- দুলাভাই বিবাহিত জীবনে কতোবার মার খেয়েছেন আমাদের এই লক্ষি ডাইনি কিউট আপুর হাতে?
রোহিতঃ যাহা বলিবো সত্য বলিবো, আমি তোমার আপুর হাতে কখনো মার খাইনি তবে হ্যা জীবনে অনেক দৌড়াইতে হইছে বর্ষণের মতো, এতে আমি শিউর যে আমার ডায়াবেটিস এর সম্ভাবনা খুবই কম।
বর্ষা বললো আমি একটা প্রশ্ন করতে চাই দুলাভাইকে। সবাই সম্মতি দিলো।
বর্ষাঃকখনো কি এমন পরিস্থিতি হয়েছে যে রেগে গিয়ে দুজন আলাদা থেকেছেন কিংবা কখনো আলাদা থাকার চিন্তা করেছেন?
রোহিত একটু হেসে বললো সংসারে রাগ অভিমান তো থাকবেই। বিপরীত কিছু না থাকলে তার মূল্য টা বোঝা যায় না। ভালো মন্দ যেমন মুদ্রার দুটি পিঠ। একটাকে ছাড়া, অন্যটা ভাবা যায়না, তেমন অভিমান আর ভালোবাসা ও মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ।অভিমান না থাকলে ভালেবাসার মূল্য টা কেউ বুঝতোনা।
আমাদের মাঝেও এমন অভিমান হয়েছে কিন্তু কেউ কাউকে ছেড়ে থাকা তো দুরের কথা। এমন চিন্তা মাথায়ই আসেনি কখনো। রোহিতের বলা শেষ হলে সবাই বাহবা দিতে থাকে।
নিপু বক্স থেকে আবার কাগজ তুলে।কাগজের নাম দেখে হা হয়ে আছে নিপু কারণ তার নিজের নামটাই উঠেছে এবার।
সবুজ বললো নিপুকে কি আমি প্রশ্ন করতে পারি? সবাই হেসে বললো অবশ্যই।
সবুজঃ কাউকে লাইক করো? ভালোবাসো কাউকে? কেউ যদি ভালোবাসার দাবি নিয়ে সামনে দাঁড়ায় কখনো তখন কি করবে?এক দমে প্রশ্ন তিনটি করে দম ফেলে সবুজ। ওর প্রশ্ন শুনে সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সবুজের দিকে।
নিপু জবাব দিলো, না লাইক না লাভ কোনোটির জায়গা নেই আমার লাইফে।আর এসব নিয়ে কখনো ভাবিনি আমি, সত্যি বলতে এসব ভাবার প্রয়োজন মনে করিনি কখনো।
একটু তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে নিপু তৃতীয় প্রশ্নের জবাব দিলো কেউ ভালোবাসার দাবি নিয়ে সামনে দাঁড়ালে তার জবাব ও না ই হবে।
নিপুর প্রথম দুটি জবাব শুনে তো সবুজের মনে লাড্ডু ফাটতে শুরু করে কিন্তু তৃতীয় নম্বর জবাবটা শুনে আবার চুপসে যায়। মুখটা ছোট হয়ে যায়।
বক্স থেকে এবার কাগজ উঠালো, নাম উঠলো রাফসানের।
নিপু প্রশ্ন করলো ভাবির সাথে এ পর্যন্ত কতোবার দেখা করেছো ভাইয়া? আর ব্রেকআপ করেছো কতোবার? তুমি আগে সরি বলেছো নাকি ভাবি আগে সরি বলেছে?
রাফসানঃ কতোবার দেখা করেছি গুনে শেষ করতে পারবো না তবে তিন চার বার ব্রেকআপ হয়েছে যদিও দোষটা ঈশুর ছিলো তবুও সরিটা সর্বপ্রথম আমিই বলতাম। কারণ ওর ইগোটা একটু বেশি ও চাইতো সরিটা আমার তরফ থেকেই হোক।তবে এমনটা এখন আর হয়না। এখন দুজনেই দুজনকে সরি বলে দেই।
এবার বক্স থেকে নাম উঠলো বর্ষার।
ঋতু প্রশ্ন করলো কাউকে জড়িয়ে ধরেছো কখনো কিংবা অন্য কেউ জড়িয়ে ধরেছে তোমায় কখনো? বর্ষা মাথা নিচু করে জবাব দিলো হুমমম।
বর্ষার জবাব শুনে সবাই একসাথে বললো কিইইইইইইইই!
বর্ষা তখন বলে, না ম মা মানে স্বপ্নে। একবার স্বপ্ন দেখেছিলাম একটা বজ্জাত ছেলে আমার হাত ধরে টানাটানি করছে আর একটা রাজকুমার এসে ছেলেটাকে মেরে আমাকে তার বুকে জরিয়ে রেখেছে।
এবার রোহিত বলে ওহ্ তাই বলো। এক্ষুনি তো হসপিটালে যাওয়ার ব্যাবস্থা করছিলে।
এবার এলো ঋতুর পালা।
প্রশ্ন করলো রাফসান। বললো আচ্ছা আপু যদি দুলাভাই কখনো দ্বিতীয় বিয়ে করে তোর সামনে দাঁড়ায় তখন তুই কি করবি?
ঋতুঃ খুনননন করে ফেলবো। আগে ওকে মারবো তারপর ঐ মেয়েটাকে মারবো। না না আগে ঐ মেয়েটাকে মারবো তারপর তোর দুলাভাইকে মারবো।
রোহিতঃ শালাবাবু কেনো এসব কথা বলে আমার আয়ু কমিয়ে দিচ্ছো বলোতো!
সবাই রোহিতের কথা শুনে হা হা হা করে হেসে ওঠে।
এবার এলো সবুজের পালা।
প্রশ্ন করলো বর্ষণ। সবুজ তুই কি ভালোবাসিস আমার বোনকে? ভালো রাখতে পারবি ওকে?
সবুজ বর্ষণের প্রশ্ন শুনে যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে। মুখটা মুহুর্তে ই উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। সবুজ জবাব দিলো হুমম খুব ভালোবাসি। আমার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করবো ওকে ভালো রাখার। শুধু একটাবার আমায় বিশ্বাস করতে বল তোর বোনকে।
বর্ষণের প্রশ্ন শুনে তো নিপু বর্ষণের দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবছে তার ভাইয়া কি পাগল হয়ে গেছে নাকি কি সব বলছে এগুলো?
এবার শুধু বাকি আছে একজন বর্ষণ।
সবাই মিলে তো আশায় আছে প্রশ্ন করবে।রোহিত বললো যেহেতু তোমার নাম টা শেষে তাই আমাদের যা খুশি যতগুলো খুশি প্রশ্ন করতে পারি।
বর্ষণ বললো ঠিক আছে তাই হবে।
প্রথম প্রশ্ন করলো
রোহিতঃ আচ্ছা শালাবাবু তুমি কি ভালোবাসো কাউকে?
চলবে……….
#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#পর্ব২১
বর্ষণ সবার দিকে একবার তাকিয়ে জবাব দিলো এটা জানা কি তোমাদের খুব জরুরি? না জানলে হয়না?
রোহিতঃ না না! শালাবাবু কথা ইজ কথা। সবাই সঠিক সঠিক জবাব দিয়েছে তাই তুমিও কোনো ভণিতা না করে সোজা সাপটা উত্তর দেবে।
বর্ষণঃ মাথা চুলকে মাথা নিচু করে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো হুম বাসিতো। একজনকে খুব ভালোবাসি।
বর্ষণের কথা শুনে শুধু নিপু আর রাফসান ছাড়া বাকিরা যেনো আকাশ থেকে ধপাস খেয়ে মাটিতে পরে যায়। এ তারা কোন বর্ষণকে দেখছে!
সবুজঃ তার জন্য তোর মনের ফিলিংসটা কেমন?
বর্ষণঃ এবার সোজা হয়ে বসে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, তার জন্য আমার কেমন ফিলিংস কাজ করে সেটা আমি কাউকে বলে বোঝাতে পারবোনা। তবে তার পাশে আমি কাউকে সহ্য করতে পারি না। কেউ তার প্রশংসা করবে, তাকে বাহবা দেবে সেটা আমি মানতে পারিনা। সে যদি আমার উপর রাগ করে আমার সাথে কথা না বলে আমার সামনে না আসে তাহলে নিজেকে বড় অসহায় লাগে।খুব কষ্ট হয় যেটা আমি কাউকে বোঝাতে পারবোনা। আমি চাই ওর হাসি ওর আনন্দ সবটার কারণ শুধু আমি হবো শুধু আমি।
ঋতুঃ নাম কি মেয়েটার?
বর্ষণঃ বর্ষার দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর ঋতুর দিকে তাকিয়ে বলে পরী।ওর নাম পরী।
সবাই বলে কিইইই এটা আবার কারো নাম হলো?
বর্ষণঃ হুম, আর কারো কাছে নাম হোক বা না হোক সে তো আমার পরী। কে কি বলে ডাকে সেটা ফ্যাক্ট না। আমার কাছে সে কি সেটাই মেইন ফ্যাক্ট।
রাফসান বসে বসে এতোক্ষণ শুনছিলো আর মিটিমিটি হাসছিলো।এখন আর চুপ থাকলোনা বললো, আচ্ছা অনেক প্রশ্ন তো হলো এবার একটা কথা বলার আছে আমার। সেটা হলো- তোর পরীর উদ্দেশ্যে কি তুই কিছু বলতে চাস?
বর্ষণঃ নাহ্ তেমন কিছু না শুধু একটা কথাই বলার আছে তাকে।
কোনো এক চাঁদনী রাতে হাত রেখে হাতে,
পলকহীনভাবে তাকিয়ে,
মন থেকে বলতে চাই ওই পাগলী শোন! #তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা।
আমিও কি ততোটাই তোর কাছে?
যতোটা তুই আমার কাছে?
বর্ষা এতোক্ষণ হা হয়ে, বসে বসে বর্ষণের কথা শুনলেও মনে মনে একটু খারাপ লাগাও ছিলো কারণ বর্ষা আশা করেছিলো পরীর জায়গাটা হয়তো তার হবে।বর্ষা বার বার বর্ষণের দিকে তাকাচ্ছিলো আর ভাবছিলো এই কি সেই বর্ষণ ভাইয়া যাকে এতোদিন ধরে চিনতাম ! সেই বর্ষণ ভাইয়া এতোটা রোমান্টিক কবে থেকে হলো? আর কাকে ই বা পছন্দ করে? পরী নামে কেউ আছে কই এমনটা তো শুনিনি কখনো! কে এই পরী! আমাকে জানতেই হবে।
সবাই চেঁচিয়ে বলে ওঠে বলিস কি বর্ষণ? এমন কথা তুই বলতে পারিস সেটা কখনো ভাবতে পারিনি!
সবাই তো শুধু বর্ষণের কথাগুলো আলোচনা করছিলো।
রাফসান বললো অনেক আড্ডা হয়েছে, এবার ঘুমোতে চল সবাই। কাল আবার হলুদের আয়োজন আছে।
সবাই যার যার মতো রুমে চলে যায়।
বর্ষার কানে শুধু বর্ষণের কথাগুলো প্রতিধ্বনি হতে থাকে।
বার বার বর্ষণের বলা কথাগুলো ভেবে ভেবে মিটমিটিয়ে হাসছে।
সকালে…
সবার ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরি হয়ে গেছে কারণ রাতে তো কেউ ঘুমায়নি, জেগে আড্ডা দিয়েছে।
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে সবাই যে যার মতো ব্যাস্ত হয়ে পরে। কেউ আছে আড্ডা নিয়ে কেউ আছে কাজের ব্যাস্ততায়, কেউ পরে আছে সাজুগুজু নিয়ে।
অবশেষে এলো সেই হলুদ সন্ধ্যা। আসলে হলুদ সন্ধ্যা নয় হলুদ রাত হয়ে গেছে। সবাই শাড়ি পরে সাজুগুজু করে আসতে আসতে রাত দশটা। এখন থেকে হলুদ মাখানো শুরু হবে।
রাফসান বলে দিয়েছে বড়রা আগে হলুদ দিয়ে চলে যেতে পারো কাল তো অনেক ঝামেলা থাকবে তাই অযথা রাত জাগার কোনো মানে হয়না।
রাত ১১ টা বাজতে চললো এখনো হলুদ মাখানো চলছে তবে বড়দের হলুদ মাখানো শেষ তারা চলে গেছে সবাই নিচে। এখন শুধু দু চারজন আছে যারা অল্প বয়সের। আর আছে রাতের পাখিরা মানে, যারা গতরাতে আড্ডায় ছিলো।
রাফসানকে এ বুদ্ধিটা দিয়েছিলো সবুজ। কারণ নিপুর আসেপাশে সবুজকে দেখলে তার মা আবার কখন কি বলে বসে তার ঠিক নেই।
এখন রাফসানকে হলুদ দিতে যাচ্ছে রোহিত আর ঋতু।দুজন রাফসানের দুইপাশে বসে হলুদ মাখালো।
এবার বর্ষার পালা, বর্ষা হলুদ মাখাতে যাবে ঝামেলাটা হলো তখন। কারণ বর্ষা নিপুকে সাথে নিয়ে যাবে হলুদ দিতে তখন পেছন থেকে বর্ষণ বর্ষার হাত চেপে ধরে বলে, R u mad?
বর্ষা তো স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
কেনো ভাইয়া কি করেছি আমি?
বর্ষণ বলে কাবাবের হাড্ডি হতে খুব ইচ্ছে করে তোর তাইনা?
বর্ষা কিছু না বুঝে বলে কাবাবের হাড্ডি হতে যাবো কেনো ভাইয়া?
বর্ষণ তখন ফিসফিস করে বলে, তাহলে নিপুকে ডাকছিস কেনো শুনি! ওকে ওর মতো থাকতে দে না।
বর্ষণ বর্ষার হাত চেপে ধরে রেখেছে দেখে নিপু হাসতে হাসতে একাই হলুদ দিতে চলে যায়।
নিপু রাফসানের এক পাশে বসতেই অন্য পাশে সবুজ গিয়ে বসে পরে। সবুজকে দেখে নিপু উঠে আসবে তখনই রাফসান নিপুর হাত ধরে বলে আমার এই ভাইটাকে একবার সুযোগ দিয়ে দেখতে পারো।আমার বিশ্বাস ঠকবেনা।
রাফসানের কথা শুনে নিপু বসে পরে।
এতোক্ষণে বর্ষা বুঝতে পারলো বর্ষণের কথার মানেটা।কাবাবের হাড্ডি কেনো বলেছিলো? বুঝতে পেরে বর্ষা ঠোঁটের কোনায় হাসি ঝুলিয়ে মনে মনে বলে সত্যি তো কাবাবের হাড্ডি হতে যাচ্ছিলাম।
সব শেষে বর্ষণ আর বর্ষা যায় হলুদ দিতে। হলুদ শেষে সবাই ফটো তুলতে ব্যাস্ত হয়ে পরে।
বর্ষা ছবি তোলা শেষে বসে আছে পাশে বসে আছে বর্ষণ, ওদের থেকে একটু দুরে বসে কথা বলছে নিপু আর সবুজ হয়তো তাদের দুজনের মধ্যে বোঝাপরা চলছে।রাফসান ফোনে কথা বলছে ঈশিতার সাথে আর রোহিত ঋতু ফটো তুলছে আর ঝগড়া করছে দুটিতে মিলে।
বর্ষা বর্ষণকে ডেকে বললো ভাইয়া!
বর্ষণঃ হুম কি বলবি বল শুনছি।
বর্ষাঃ তুমি কাকে পছন্দ করো? সে কি দেখতে খুব সুন্দরী? তাকে দেখাবে আমায়?
বর্ষণঃ ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বলে সুন্দরী তো অবশ্যই। আমার চোখে সে তো পরী।আর তুই তাকে দেখতে চাস তো? দেখবি, দেখবি। সময় হলে ঠিক দেখতে পাবি।
বর্ষা একটু মন খারাপ করে বললো, সে কি আমার থেকেও সুন্দরী?
বর্ষণঃ হয়তোবা তাই।
এবার বর্ষা চুপ করে বসে থেকে কিছুক্ষণ পরে বললো ভাইয়া তোমরা থাকো আমি নিচে যাই।
বর্ষণঃ এখনি যাবি? আর একটু থাকবি না!
বর্ষাঃ নাহ্ আমার খুব ঘুম পেয়েছে আমি রুমে যাবো।
বর্ষণঃ ওকে চল আমিও যাই।
বর্ষাঃ না না ভাইয়া তোমাকে যেতে হবে না, আমি একা যেতে পারবো।
বর্ষণ বুঝতে পেরেছে বর্ষা রাগ করেছে। তাই বললো তোকে কখন বললাম তুই যেতে পারবিনা। আমি বলেছি আমিও যাবো।
বর্ষা বললো হ্যা সেটাই তো বলছি তুমি যাবে কেনো তুমি এখানে থাকো সবার সাথে মজা করো। তোমাকে যেতে হবে না।
বর্ষা বললো ঠিক আছে তুমি যাও আমি যাবো না বলে ছাঁদের একপাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
বর্ষণ ও আর কিছু না বলে চুপচাপ বসে থাকে। কিছুক্ষণ পরে উঠে গিয়ে বর্ষার পাশে দাঁড়ায়।
বর্ষা একবার তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।বর্ষার এমন কান্ড দেখে বর্ষণ একটু এগিয়ে গিয়ে বর্ষার পাশ ঘেষে দাঁড়িয়ে বলে কেউ কি আমার উপর রেগে আছে?
বর্ষা বললো রাগ করতে যাবো কোন দুঃখে? বর্ষার এমন স্ট্রেটকাট কথা শুনে বর্ষণ বললো তাহলে অভিমান?
বর্ষা তখন ভ্রু কুচকে বললো অভিমানের জন্য অধিকারের প্রয়োজন।
বর্ষণঃ তারমানে কি কেউ বলতে চাচ্ছে আমার উপর তার কোনো অধিকার নেই? নাকি আমি তার কেউ না?
চলবে….
হ্যাপি রিডিং ?