তারকারাজি দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ,১৬ বর্ধিতাংশ

0
726

তারকারাজি দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ,১৬ বর্ধিতাংশ
লেখনীতে- অহনা নুযহাত চৌধুরী

‘ব্রেক দিজ ফ্রেন্ডশিপ ’
সর্বদেশীয় ভাষায় বলা এই বাক্যটির যে নিজস্ব প্রখরতা আছে তা সেই বন্ধুই অনুভব করতে পারে যার বক্ষস্থল এই প্রখরতায় চিড়ে যায় অত্যন্ত আকস্মিকতায়। রক্তক্ষরণ হয় খুব। এই জীবনে কথা দিয়ে কথা রাখতে না পারা মানুষগুলোকে বরণ করে নেওয়া হয়তো খুব সহজ। কারণ সেখানে মনকে সান্ত্বনা দেওয়ার-ও একটা কারণ থাকে। কিন্তু যারা কথা দিয়ে সেই কথা রাখতে চায় না তাদের মেনে নেওয়া কি আবেগী মানুষদের জন্য ততটাই সহজ হয়? তাদের দেওয়া মিথ্যে প্রতিশ্রুতির এক সত্য ও দুঃসহ ক্ষতটা আপন হৃদয়ের কোনো এক ভাঁজেই গুটিসুটি মেরে বসে থাকে। সেই ক্ষতটা এতই সূক্ষ্মতম হয় যা আশেপাশের মানুষদের দৃষ্টিতে তো দূর, অন্তরের অন্তঃস্থল হতে অনুভব করতে পারার ক্ষমতাতেও ধরা দেয় না। অথচ নুনের ছিটা না পড়লেও তাতে কী দোর্দণ্ড জ্বালা! তা না সওয়া যায় আর না কারো কওয়া যায়।

নিখিল কৃষ্ণাভ আকাশ থেকে নেমে আসা সর্বগ্রাসী জ্যোৎস্না যে মনোহারিণী রূপে থৈথৈ করছে ভুবনে, তা সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে মিথ্যে নিদ্রিত নারীর ভূমিকা পালন করছে নীলাশা। ক্রন্দনে দু’চোখ ফুলে উঠলেও অন্তরের চিৎকার থামে না তার। সে দারুণ স্বচ্ছতায় দেখতে পায় একটু আগের স্মৃতিতে রূপ নেওয়া সকল দৃশ্য। দেখতে পায়— বন্ধুদের উপর ক্ষিপ্ত মনে সবকিছু উথাল-পাথাল করে ফেলতে চাওয়ার মতো তার অহেতুক পাগলামি। নীলাশার মনে পড়ে যায় তখনকার কথা—
রুদ্ররোষে দগ্ধ মস্তিষ্কটা যখন খুটখুটিয়ে কল্পনা করতে লাগল নিশানের বলা কথাগুলো তখন নীলাশা অন্তরে অন্তরে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো যে, এই জীবন সে আর রাখবে না। এই জীবনে প্রতিশ্রুত মানুষগুলো যখন ভুলতে পারে নিজেদের প্রতিজ্ঞা তখন সে কেন পারবে না? এইযে গেল সময়… আত্মহত্যার চেষ্টায় মাটিতে পড়ে থাকা মিশমিকে ঘিরে কারা একসাথে ক্রন্দনে উন্মাদ হয়েছিল? ওর বাকি পাঁচ বন্ধুরাই তো। কারা নিশান-রিশান ও ঈশাকে আগলে রাখতে একসাথে চিন্তার অতলে ডুবেছিল? ওরা বন্ধুরাই তো। কারা সানামকে শুধুমাত্র একটু খুশি রাখার জন্য নিজেদের ব্যয়কুণ্ঠতা ভুলে খরচা করেছিল? ওরা সেই বন্ধুরাই। এইযে পিহু মনমরা হয়ে শোকে কাতরালো, সেই মেয়েটার সমস্যা সমাধান কারা করেছিল? ওরা বন্ধুগুলোই। কারাই-বা মিশমি শুনতে পায় কি-না তা না বুঝেও পক্ষাঘাতগ্রস্ত বান্ধবীটার সাথে বকবক করে গিয়েছে? ওরা বন্ধুরাই। এইভাবেই একসাথে সকলকিছু সামলে নেওয়ার নিয়মে ব্যাঘাত ঘটিয়ে আজ যে ঘোষণা করা হলো বন্ধুত্ব ভাঙনের, তাতে কি নিশানের অন্তর কাঁপেনি? অথচ তারা দুই ভাই ভুলে গেল আত্মসম্মান শুধু তাদের-ই নয়, নীলাশারও আছে। সেই সাথে আছে দুটো পরিবার, কতোগুলো ভালোবাসার মানুষ। সেই থেকে নীলাশা যখন উপলব্ধি করেছিল তার জীবন এই সামান্য রাগে শেষ হওয়ার মতো কিছু না, তখন সহসা গাড়ি নিয়ন্ত্রণে আনাও ছিল তার জন্য বিরাট বড় ব্যাপার! রাতের বিধ্বংসী গাড়িঘোড়া চলা রাস্তা থেকে সরে নিজের প্রাণ বাঁচানোটা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়েছিল যে, রাস্তার ধারে এক মস্ত গাছেই ঠুকতে হয়েছিল উপহার পাওয়া সেই গাড়িটি। ভয়ঙ্কর বেগে ধাক্কা খাওয়া গাড়িটার কাঁচ ভাঙলো, দরদরিয়ে ধোঁয়া বেরোলো। অথচ নীলাশা তা টের না পেয়ে সেখানেই গা এলিয়ে দিয়েছিল বেশ!

এইযে নৌশিন আহমেদ এসে ঘন রাত্রিতেও মেয়েকে ডেকে, তার হাতে দুধের গ্লাস ধরিয়ে দিলেন অথচ তখনও কম কথা শোনানো হলো না নীলাশাকে। ইয়াসিন চৌধুরী তো তার গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন বলে জানালেন তিনি৷ আর আরাভ? তার খবর নীলাশা জানে না। জাগ্রত অবস্থায় কমফোর্টারে বদ্ধ হওয়ার পর এই প্রথম উঠে বসল সে। দুধের গ্লাসটা ফাঁকা হতেই নীলাশা ভাঙা গলায় প্রশ্ন করল,

“ মম? উনি কি ও-বাড়ি চলে গেছেন? ”

নৌশিন আহমেদ মাথা নাড়ালেন, যার অর্থ— না, আরাভ এখানেই আছে। অতঃপর তিনি নীলাশার ঘরের সাথে লাগোয়া বারান্দার দিকে ইশারা করেই চলে গেলেন। নীলাশাও উঠে দাঁড়াল। ঘরের দরজা আঁটকে এগিয়ে গেল বারান্দার দিকে। নীলাশা স্পষ্ট দেখতে পেল— এক ছটা বাসন্তী হাওয়ার স্পর্শে স্বামীর হাতের লোমগুলো যেন শিরদাঁড়া টান করে দাঁড়িয়ে পড়েছে। নীলাশা আরেকটু কাছাকাছি দাঁড়িয়ে সেই হাতেই হাত বুলিয়ে উষ্ণতা ছড়াল। ভগ্নদশাগ্রস্ত কণ্ঠে বলল,

“ আপনার ঠাণ্ডা লাগছে? ”

আরাভ উত্তর দিল না। নীলাশা জানে এই উত্তপ্ত জনবহুল শহরে চৈত্র মানেও জৈষ্ঠ্য। তবুও পাথুরে ভাবমূর্তি ধারণ করা প্রিয়র রাগ ভাঙানোর স্বল্প-বিস্তর চেষ্টা! আরাভের থেকে উত্তর না পেয়ে নীলাশা হাত সরিয়ে নিল। আকাশের ভরাট চাঁদটার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল, “ ডিনার করেছেন? ”

আরাভ উত্তরহীন তাকাল। চন্দ্রপ্রভার স্নিগ্ধোজ্জ্বল রঙে আরাভের ঝলমলানো আঁখি জোড়ায় অচিরাৎ-ই থেমে গেল নীলাশার চোখের পাতা। নীলাশা দুর্বল তবুও মোলায়েম কণ্ঠে প্রশ্ন করল,

“ আর কতক্ষণ রেগে থাকবেন? ”

“ কেন? ”

মানুষটার কপালে ভাঁজ ফেলে ভরাট কণ্ঠে বলা কথাটা বোধহয় পছন্দ হলো না অভিমানিনীর। সে স্পষ্ট উত্তর দিল,

“ সময়টা বলে দিলে তারপর আপনার সাথে কথা বলতাম। এর আগে হাজারটা, লাখটা এমনকি কোটিটা ডাক দিলেও তো আমার কথা শুনবেন না। যেই লাউ সেই কদুই থাকবেন! ”

নীলাশার অভিমান ভরা কথা শুনে নিজের অনিচ্ছাতেই হেসে ফেলল আরাভ। একবার হাসলে কি আর তা ফিরিয়ে নেওয়া যায়? আরাভ সেই চেষ্টাটা করল না। বরং বলল,

“ কথাটা কিন্তু দারুণ বললা! ”

আহ্লাদ পেয়ে নীলাশার মুখটা যেন আরও মলিন হয়ে এলো। সে অনুভব করল— তার কান্না পাচ্ছে, ভীষণ কান্না! অথচ এমনই প্রেমপরায়ণ রাতে তাদের হাতে-হাত রেখে পূর্ণিমা দেখার কথা ছিল! নীলাশা ক্রন্দন রুদ্ধকারী গাঢ় স্বরে বলল,

“ ভুল তো বলিনি! আপনাদের সবার মুডের উপর ডিপেন্ড করে আমাকে চলতে হয়। আর আমার বেলায় ঠনঠনাঠন! আমি তো মানুষ-ই না, আমার মুড থাকতেই পারে না কোনোকিছুর। ”

আরাভ হাসল। চোখের পলকেই নিজ বক্ষের মাঝে অভিমানিনীকে আশ্রয় করে দিল। হাতের বাঁধন সপ্রেমে দৃঢ় রেখে কাটিয়ে দিল কিছুক্ষণ, বহুক্ষণ। মেয়েটা নিঃশব্দে কাঁদছে। আরাভ বুঝতে পারে না— এই রমণীর ওইটুকু-ওইটুকু চোখ জোড়া দিয়ে এতো নোনতা জল বেরোয় কী-করে? যদি সমুদ্র মহাশয়ের থেকে নোনতা জল ধার করার মতো অলৌকিক কিছু আজ লৌকিক হতো তো আরাভ নিশ্চিত দাবি করতো যে, নীলাশার এই চোখের জল সমুদ্র থেকে ধার করা। কারণ মানুষের হাজারটা কষ্ট থাকলেও সে যখন-তখন, যেখানে-সেখানে এমন করে চোখের পানি ফেলতেই পারে না! কিন্তু না, এমন কিছু বাস্তবিক না হলেও মেয়েটা যে কাঁদতে পারে প্রচুর তা অস্বীকার্য নয়। আরাভ তার হাতের পাঁচ আঙুল দ্বারা আঁচড়াতে লাগল নীলাশার চুল৷ ভীষণ আদুরে স্বরে ডাকল, “ নীলা, শুনছো? ”

নীলাশা উত্তর দিল না। তবে আরাভ আগের মতোই বলল,

“ কিছু কথা বলব। মনোযোগ দিয়ে শুনবা? ”

নীলাশা সম্মতিসূচক মাথা নাড়তেই আরাভ বলতে শুরু করল,

“ দেখো নীলা, আমরা এখন ম্যারিড। দু’দিন পর আমাদেরও একটা বেবি থাকবে। তখন তো তাকে বড় করার, সকল কিছু বোঝানোর দায়িত্বটা আমাদের-ই বেশি থাকবে; তাই না? সেখানে তুমি যদি এখনও এমন ছেলেমানুষী করো তাহলে এটা কি মেনে নেওয়ার মতো, বলো? ”

নীলাশা উত্তর দিল না কোনো। আরাভ আবারও বলল,

“ সবকিছুর সাথে মানিয়ে নেওয়ার মতো আমাদের বয়সটা এখন যথেষ্ট। মানুষ রাগের মাথায় অনেক কিছুই বলে। আমরা সেগুলো ধরে যদি আরও বেশি রাগ-ক্ষোভ দেখাই তাহলে আমাদের লাইফটা কেমন হয়ে যাবে ভাবছো? একদিন তুমিই তো বলছিলা যে, ওরা যদি জানে ঈশা তোমার কাছে তো ওরা অনেক সিন ক্রিয়েট করবে আর এটা বোঝার পরও কি তুমি কাজটা ঠিক করলা? ”

নীলাশা সোজা হয়ে দাঁড়াল। কয়লা হয়ে যাওয়া অন্তরে আর্তনাদ চেপেই বলল,

“ কই, আপনার তো কখনো রাগ হয় না! ওদের কেন এতো রাগতে হবে তাও এই সামান্য বিষয় নিয়ে? ”

আরাভ প্রশ্ন করল, “ নীলা, রাগ সবারই হয়। আমারও তো রাগ হইছিল। কিন্তু তুমিই তো লাউ-কদু দিয়ে মাথা ঠাণ্ডা করে দিলা! ”

এ-কথা শুনে নীলাশা বাঁকা চোখে তাকাতেই হেসে ফেলল আরাভ। ফের নীলাশাকে কাছে টেনে বোঝালো অনেক কিছু, অনেকক্ষণ। অতঃপর নীলাশা প্রশ্ন করল,

“ ওরা বলছে ওরা না-কি ঈশাকে নিজেদের কাছে রাখবে। ওরাই তো পাঁচজনে মিলে এক জায়গায় থাকে সেখানে ঈশাকেও রাখবে না-কি? ওই তিনটা ছেলের মাঝে নিজের বোনকে নিয়ে রাখবে এইটা কোনো যুক্তির কথা? ওরা কি পাগল? ছোট বাচ্চা? ”

“ হু, ওরা পাগল-ই। বাট তুমি বোধহয় জানো না ঈশা এখানেই আছে, নিজের ঘরে। আর নিশানরা নিজে এসেই ওকে রেখে গেছে। ”

নীলাশা আশ্চর্যান্বিত নয়নে নির্নিমেষ তাকিয়ে রইল আরাভের দিকে। এমন কথাও তার শ্রবণেন্দ্রিয় হবে তা ঘুণাক্ষরেও উপলব্ধি করেনি সে। এই নিয়ে বিস্ময়াবিষ্ট অনুভূতি প্রকাশ করতেই আরাভ জানালো— নিশান-রিশান ও নীলাশার বাবা-মার মাঝে ঠিক কী কী কথা হয়েছে তা আরাভ জানে না খুব একটা। সে তখন ঘুমন্ত নীলাশার কাছে ছিল বলে ডাকা হয়নি তাকে। কিন্তু যখন ডাকা হয়েছিল তখন না-কি নিশান আরাভের হাত ধরে ক্ষমা চেয়েছে এবং নীলাশাকেও বোঝাতে বলে গিয়েছে যেন তাকে মাফ করে দেওয়া হয়। তাদের এই পরিবর্তন কি হঠাৎই রাগ, মান-অভিমান কমে যাওয়ায়? আরাভ তা-ও স্পষ্টভাবে জানাতে পারল না নীলাশাকে। সাহেলরা কেউই কিছু বলেনি এই নিয়ে। তাদের কথা— সব যখন ঠিকঠাক তখন এইসব কথা বলারও কোনো প্রয়োজন নেই কারোর; আর এই সবটা শুনে যখন নীলাশা ঈশার সাথে দেখা করতে চাইলো তখন আরাভ-ই তাকে বাঁধা দিল। রাত্রির বারোটায় ঈশা জেগে থাকে না। মিছেমিছি তাকে জাগিয়ে কী লাভ? কিন্তু নীলাশার মন মানে না। মস্তিষ্কের সবটা দিয়ে ভাবতে লাগে বন্ধুদের হঠাৎ এই পরিবর্তনের কথা। কোনো কিছু তো ঘটেছেই! কিন্তু কী ঘটছে তা উপলব্ধি করতে পারল না আরাভ-নীলাশা। রাত্রি আরও গাঢ় হতে লাগল তাদের এই চিন্তায়৷ অতঃপর আরাভ যখন বলল সবটা মিটিয়ে নিতে তখন নীলাশা পূর্বের ন্যায় স্পষ্ট অভিমান প্রকাশ করল,

“ কেন আমি মিটিয়ে নিব? ওরা কি ওয়েট করতে পারতো না আমার ঘুম ভাঙার পর আমার সাথে কথা বলার জন্য? কী এমন ঘুম দিয়েছিলাম আমি? মাত্র তো দুই ঘন্টাই! থাকুক, ওরা ফ্রেন্ডশিপ ভাঙার কথা বলছে তখন ওরাই বুঝুক। আমি কথা বলবো না কারো সাথে। ”

আরাভ নিভে গেল একদম। এই জেদী মেয়ে একবার না করেছে মানে তার মুখ থেকে এই মুহূর্তে ‘হ্যাঁ’ বের করানো দায়। যে নীলাশা আরাভের সব কথা মেনে নেয় সে কিছুতেই আজ রাজি হলো না তার প্রস্তাবে। উপায়ন্তর না দেখে এই নিয়ে কথা বলবে না বলেই ঠিক করল আরাভ। রাত গভীর হয়েছে। আরাভের চোখ দুটো জ্বালা করছে ঘুমে। সে নীলাশাকে ঘরে আসতে বলে যেই-না পা বাড়ালো তখনই নীলাশা তার হাত ধরে ডেকে বলল,

“ আচ্ছা, আপনি যে বললেন দুই দিন পর আমাদের বেবি থাকবে! দুই দিন পর-ই তো আমাদের বেবি চলে আসছে না, তাই না? আপনার কি কিছু মনে হচ্ছে না…? ”

নীলাশার আমতা-আমতা করে বলা কথাটা শুনে আরাভ এমনভাবে তাকাল যেন ভয়ঙ্কর কিছু শুনে ফেলেছে সে। সে বলল,

“ নীলা, জান আমার? বিয়ে, সংসারের পর এখন নিশ্চয়ই তুমি বেবি নেওয়ার আবদার জুড়ে দিবা না? ”

নীলাশা এগিয়ে এলো আরাভের দিকে। স্মিত হেসেই মা হওয়ার তীব্র বাসনায় বলল,

“ জুড়ে দিলে কী এমন হবে? বেবি আসতেও তো সেই একবছর লেগে যাবে। চলুন না আমরা বেবি নিই? ”

আরাভ চোখের পরিধি বাড়িয়ে বুকের বা’পাশটায় হাত রাখলো। নাটকীয় ভঙ্গিমায় ও আতঙ্কিত কণ্ঠে বলল,

“ শ্বশুরের মেয়েকেই তো সামলাতে ভয় লাগে আবার সেখানে শ্বশুরের নাতি-নাতনি…? অসম্ভব! আমার আত্মাটা ধড়ফড়-ধড়ফড় করতেছে। এই কথা যদি আরেকবার উচ্চারণ করো তো নিশ্চিত আমি হার্ট অ্যাটাক করব, নীলা। এক বছরের আগে আর উচ্চারণ করো না, আচ্ছা জান? ”

“ আপনি খালি একবছর-একবছর করেন কেন? বিয়ের সময়ও এমন করছেন। এখন বেবি নিলে কী এমন হবে শুনি? ”

না, বাঘিনীর নাকে খাদ্যের গন্ধ যখন পৌঁছেছে তখন তাকে সামলানোও মুশকিল বলে ভেবে নিল আরাভ। এর জন্যই কাউকে দিবাস্বপ্ন দেখাতে নেই! স্ত্রীকে বোঝানোর জন্য তো অনেক কিছুই ছিল, শুধু-শুধু সন্তানের কথা তুলল কেন? আরাভ অসহায় মুখে বলে উঠল এবার,

“ কারে কী বুঝাইতে গেছিলাম আমি! এর জন্যই বাবাকে বলছিলাম এখন বিয়ে করব না, একটা বছর যাক। ভালোবেসে ইমোশনাল হয়ে এখন আমি বাঘিনীর মুখে! একটা বছর পর বিয়ে করলে কী এমন হতো? এইবার ঠ্যালা সামলা আরাভ… ঠ্যালা সামলা। ”

নীলাশা তেতে উঠল, “ আপনি আবার একবছর-একবছর করছেন? ”

আরাভ দৌড়ে ঘরের ভিতর চলে গেল। নীলাশাও গেল পিছু-পিছু তবে বাসন্তী পূর্ণিমায় তাদের প্রেমের গল্পটা এবারও স্বামী-স্ত্রীদের মতো হাতে-হাত রেখে জ্যোৎস্না বিলাসে সম্পন্ন হলো না। তারা থেকে গেল সেই আবেগে পরিপূর্ণ প্রেমিকযুগল-ই। একজন ভীষণ অভিমানে গাল ফুলিয়ে ঝগড়া করল তো আরেকজন তাকে বোঝাতেই প্রতিযোগিতায় নামলো। যেন তাদের পুরনো সেই দিনগুলোর অন্যরকম প্রেমের গল্পটা ধরণীর বুকে আবারও ফিরে এলো!

#চলবে ইন শা আল্লাহ!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here