সাঁঝক বাতি,০৬,০৭
নূরজাহান আক্তার (আলো)
[০৬]
শিফার বাসার সবাই খুব খুশি হয়েছেন।দিগন্তের বিনয়ী আচরণ উনাদের মন কেড়েছে। বেশ ভদ্র!
এমন অমায়িক ছেলে’ই হয় না। শিফা পারফেক্ট একজনকে সঙ্গী করেছে। মেয়ের জন্য আর চিন্তা নেই। দিগন্তকে দায়িত্ব দিয়ে সবার স্বস্তি মিলেছে। দু’টোতে ভালো থাকলেই হলো। এসব উনাদের উক্তি। তবে তনয় কিছু একটা বোঝাতে চাচ্ছে। বাচ্চা ছেলে বোঝাতে পারছে না। তাই বার বার বলছে,
-‘করে দাও, করে দাও। আমি সব বুঝে নিবো।’
বাচ্চাটার কথা কেউ গুরুত্ব দিলেন না। দিগন্তকে কাজের কথা বলতে শুনেছে। তাই হয়তো এসব বলছে। শিহাব আর রাফি বোন চলে যাওয়াতে কষ্ট পেলেও, বোনের হাসিমুখ দেখে খুশি হয়েছে।
বোন ভালো থাকলেই হলো। খোঁজও নিয়েছিল, দিগন্ত খুব ভালো ছেলে। খারাপ কোনো রিপোর্ট নেই। বোন খুব সুখে থাকবে! তাছাড়া শিফাদের পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনরা দিগন্তের খুব প্রশংসা করেছে। মেয়েজামাই খুব ভালো হয়েছে। এতেই শিফার পরিবার খুশিতে গদগদ। সাফার বাবা-মা দেখা করতে এসেছিলেন। দিগন্ত আর শিফাকে নতুন পোশাক দিয়েছেন। কতশত দোয়া করে অশ্রু ঝরিয়েছেন।সাফা নেই। তবুও শিফার সুখে-দুঃখে উনারা অবশ্যই সামিল হবেন। কেউ না চাইলেও! কারণ সাফার মতো শিফাকেও খুব ভালোবাসেন। তাই ভেদাভেদ করা কারণ নেই।
এদিকে, স্বপ্নীল কানাডাতে যাওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলেছে। আজকে রাতে চলে যাবে। ফিরবে কবে ঠিক নেই। মেয়ের শোকে; ছেলের ভবিষ্যতটা নষ্ট করা যায় না। তাই সম্মতিও দিয়েছেন। স্বপ্নীল শিফাকে ভালোবাসে একথা উনারাও জানেন। সাফা নিজে জানিয়েছিল। তবে শিফার থেকে এমন কিছু দেখেন নি। সাফা স্বপ্নীলকে প্রায়’ই বলত,
-‘ভাইয়া বান্ধবীকে ভাবী বানালে কেমন হয় রে?
না মানে, পর যেন না হয়, তাই আর কি।’
স্বপ্নীল হাসত! ছেলের হাসি দেখে উনারা বুঝে নিতেন। শিফাকে উনাদেরও পছন্দ। তাই কখনো
অমত করেন নি। ছেলে-মেয়ের খুশিতে উনারাও খুশি। তবে স্বপ্নীল আগ-বাড়িয়ে শিফাকে কিছু বলত না। তবে হাব-ভাবে কিছু প্রকাশ করতো। শিফাও বুঝে না বোঝার ভান করত। আর মধ্যে থেকে সাফা মজা নিতো। পরিবারিকভাবে সবার
জানার আগেই, সাফা মারা গেল। এই ঝড়ে সব
লন্ডভন্ড হয়ে ব্যাপারটা অপ্রকাশিতই রয়ে গেল।
এর পনেরোদিন পরে, শিফা জেদ ধরল দিগন্তকে বিয়ে করবে। আগে থেকেই নাকি দিগন্তকে পছন্দ করে। বিয়ে দিতেই হবে। নয়তো সাফার মতো সে আত্মহত্যা করবে। সাফা তো স্মৃতিশক্তি হারিয়ে আত্মহত্যা করেছে। সবাই ভেবেছিল, সে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে কোনো ভুল করেছে। গর্ভবতী হয়ে মানসিক চাপে স্মৃতিশক্তি হারিয়েছে। কিন্তু
ময়নাতদন্তের রিপোর্টে এমন কিছু আসে নি।বরং এসেছে, ‘সি ইজ ভার্জিন নট এ প্রেগনেন্ট।’
আর একজন মানসিক রুগীর আত্মহত্যা করাটা স্বাভাবিক। তাদের জ্ঞান থাকে না।ভালো-মন্দের
তফাত বুঝে না। হুজুগেরবশে আত্মাহত্যা করে।
এমন কেস অহরহ ঘটে। তাই সাফার কেস চাপা পড়ে গেছে। এই কেসের তদন্ত মানে সময় নষ্ট, বৈ কিছু নয়! তারপর শিফার জেদ রক্ষার্থে দিগন্তের বাসাতে প্রস্তাব পাঠানো হয়। দিগন্ত না করাতে; শিফা খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে জেদে’ই অটল। পরে
পারিবারিকভাবে আলোচনা করে বিয়েটা সম্পূর্ন হলো। ভালো না বাসলে কেউ এমন পাগলামি করে না! আর এখানে স্বপ্নীলের কথা কীভাবে’ই বা বলতেন? শিফা তো নিজে চাচ্ছে ; দিগন্তকে।
তাহলে?
স্বপ্নীলেরও গতি হয়ে যাবে। সবার জীবনে পূর্নতা আসে না। যদি আসতো, ব্যর্থতা, হৃদভঙ্গ, কষ্ট, আর বিচ্ছেদ নামক শব্দগুচ্ছের সৃষ্টি হতো না।
সময়ের ব্যবধানে তার জীবনও ধারাক্রমে চলতে থাকবে।
__________________________________
শিফাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে দিগন্ত চলে গেছে।
নিহা আর শাশুড়ির সঙ্গে কথা বলে শিফা রুমে গেল। রুমের দরজাটা আটকে ড্রেস নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল। ওয়াশরুমের বালতি উপুড় করে বসে ফোন বের করল। ফোনটা সবসময় লুকিয়ে রাখে। কারণ এবাসার কোনো জায়গা ওর জন্য নিরাপদ নয়। ওয়াশরুম বাদে। আর যাই হোক, দিগন্ত ওয়াশরুমে সিসি ক্যামেরা রাখবে না। এর কারণ সেও ব্যবহার করো। তাই এটাই আপাতত নিরাপদ। শিফা ফোনে কিছু টাইপ করে কাউকে পাঠিয়ে দিলো। তার পরপরই ওর ফোনে দু’টো মেসেজ আসল। হুম যা ভেবেছিল তাই’ই, দিগন্ত বিগত বাহাত্তর ঘন্টা ধরে ওর ফোন ট্র্যাক করছে। যাতে নজর রাখতে পারে। একেই বলে, ‘ধূর্ততা।’ দিগন্ত যত যায় করুক, ওর নাকের ডগা দিয়ে সে ঠিক বেরিয়ে যাবে। শিফা দ্রুত কাজ সেরে ফ্রেশ হয়ে আসল। হাতের তেয়ালে মেলে দিয়ে সাফার
ছবি বুকে জড়িত নিলো। ওকে, খুব মনে পড়ছে!
শিফা চোখের পলক ফেলতেই অশ্রুফোঁটা ঝরে গেল। দ্রুত মুছে নিয়ে ছবিটা রেখে বেরিয়ে গেল।
দিগন্ত লেপটপের সামনে বসে এতক্ষণ শিফাকেই দেখছিল। এ’রুমে চারটা সিসিক্যামেরা লাগানো আছে। শুধু দিগন্ত জানে! শিফাকে কাঁদতে দেখে দিগন্ত উচ্চশব্দে হাসল। আহারে, বউটা কাঁদছে! আবেগপূর্ণ মন নিয়ে লড়তে এসেছে। তার মুখে আবার বড় বড় কথা!
তেমন কিছু না পেয়ে দিগন্ত লেপটপ রেখে উঠে দাঁড়াল। কিছু কাজ বাকি আছে। আজকেই সব সারতে হবে।
রাত দশটা। শিফার ফোনে কল এসেছে। নাম্বার
ট্র্যাকে থাকায়; সংকেত দিচ্ছে। দিগন্ত ব্লু-টুথ’টা ঠিক করে শুনতে মনোযোগী হলো। শিফা শুয়ে আনমনে টিভি দেখছিল। রিংটোন শুনে ফোন হাতে নিলো। স্বপ্নীল কল করেছে। শিফা কলটা রিসিভ করে চুপ করে থাকল। অপরপাশেও চুপ!
স্বপ্নীল আপাতত এয়ারপোর্টের ওয়েটিংরুমে বসে আছে। চলে যাচ্ছে সে। তখন শিফা কেশে বলে উঠল,
-‘আমার সময়ের দাম আছে। যা বলার, দ্রুত বলুন।’
-‘সত্যিই আমার হবি না শিফা?’
-‘না, বিধবা হলেও না।’
একথা শুনে দিগন্ত হাসল। মেয়েটার মুখে কিচ্ছু আটকায় না। কঠিন একথাটা কত্ত সহজে বলে ফেলল। মেয়েটার মন বলে কিছু আছে কী? সে
ভেবে পায় না! শিফার থেকে এরচেয়ে বেশি কিছু আশা করাও বোকামি। দিগন্ত ওর ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে, ওদের কথা শোনাতে মনোনিবেশ করল।
মুখে তার কুটিল হাসি। স্বপ্নীল শিফার মুখে এই কথা শুনে বলল,
-‘দোয়া করি, সুখে থাক। আর বিধবা তকমাটা যেন তোর শরীরে কখনো না লাগে। খু্ব ভালো থাকিস।’
কথাটা বলে স্বপ্নীল কল কাটলো। দুইহাতে মুখ ঢেকে নিশ্চুপ হয়ে বসে রইল। অনবরত অশ্রু
ঝরছে। তার উক্তি, মনটা পুড়ছে বিধায় দু’চোখ কাঁদছে। সে কিছুক্ষণ বসে নিজেকে সামলে উঠে দাঁড়াল। পিছুটান নয়, অনেক তো হলো। শিফা ভালো থাকুক। ওর প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে সুখে থাকুক। সে না পেলেও অভিশাপ বা অভিযোগ কোনোটাই করবে না। প্রকৃত প্রেমিকদের চাওয়া হয়তো এমনই হয়। নিজে পুড়ে ছাই হবো; তবুও প্রিয় মানুষটার হাসিটা যেন অটল থাকে। আর
চরম সত্যি; ভাগ্যের উপরে কারোর’ই জোর চলে না। ওর ক্ষেত্রেও তাই।
তারপর স্বপ্নীল কানাডার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিলো। দূরেই সে ভালো থাকবে। এখানে কষ্ট পাচ্ছে, খুব
কষ্ট! এখানকার বাতাসও বিষাদপূর্ণ। তাই চলে যাওয়াই শ্রেয়।
রাত একটার দিকে দিগন্ত বাসায় ফিরল। শিফা ঘুমাচ্ছে। এটা দিগন্তের পছন্দ হলো না। পানির গ্লাসটা নিয়ে শিফার মুখে ছুঁড়ল। শিফা ধড়ফড় করে উঠে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছে। কাঁচা ঘুমটা ভাঙ্গানোর জন্য ওর মেজাজ তুঙ্গে। তবুও স্বাভাবিকভাবে বসে রইল। দিগন্ত হেসে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বলল,
-‘ঘুমাচ্ছিলে? সরি হ্যাঁ, প্রচুর ক্ষুধা পেয়েছে বউ। খাবার নিয়ে আসো।’
শিফা উঠে পা বাড়াতেই দিগন্তও এক পা বাড়িয়ে দিলো। খুব কৌশলে। ফলস্বরূপ; শিফা হোঁচট খেয়ে ওয়ার্ডড্রোপের সঙ্গে স্বজোরে ধাক্কা খেলো। ওর মুখ থেকে ব্যথাতুর একটা শব্দও বের হলো। কপালও তাৎক্ষণিক ফুলে নীল হয়ে গেল। প্রচন্ড ব্যথায় শিফা মেঝেতেই বসে পড়েছে। মনে হচ্ছে, মুখটা কেউ থেতলে দিয়েছে। তখন দিগন্ত বসে ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল,
-‘আরে, আরে, চোখেও কম দেখো নাকি? খুব ব্যথা পেয়েছো?’
শিফা ব্যথাটা সয়ে উঠে বেরিয়ে গেল । রান্নাঘরে গিয়ে নিঃশব্দে অশ্রু ঝরিয়ে বরফ ডলে নিলো।
মাথাটা ঘুরছে। একহাতে আইসব্যাগ অন্যহাতে খাবারের ট্রে নিয়ে ফিরে আসল। দিগন্ত টাওজার পরে বসে ভেজা চুল মুছছে। খাবার দেখে মুখটা অসহায় করে বলল,
-‘ওহ, খেয়ে এসেছি বলতেই ভুলে গেছি। সরি জান, অযথা কষ্ট করানোর জন্য।’
শিফা নিশ্চুপ! দিগন্তের এটাও সহ্য হলো না। সে জ্বলন্ত সিগারেটে টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়াল। শিফা শান্ত চাহনিতে দেখে যাচ্ছে। দিগন্ত সিগারেট ওর দিকে এগিয়ে খেতে ইশারা করল। মুখে ফিচেল হাসি। যেন, তোমাকে শায়েস্তা করা ব্যাপারই না।
শিফা উঠে দিগন্তের কোলে বসে পড়ল।আচমকা
বসাতে দিগন্ত হতবাক। সে কিছু বোঝার আগেই, শিফা দিগন্তের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবাল। প্রথমে খুবই
ধীর গতিতে অধরসুধা পান করলেও, পরবর্তীতে স্বজোরে দাঁত বসিয়ে দিলো। দিগন্ত ছটফট করে ছাড়তে চাইলে শিফা শক্ত করে ধরল।একইভাবে পুনরায় কামড় বসাল। এবার নোনাস্বাদ পাচ্ছে। হয়তো রক্তের! ঠোঁট কেটে গেছে; দু’জনেই বুঝতে সক্ষম। দিগন্ত শিফার চুল টেনে স্বজোরে ধাক্কা দিলো। শিফা ছিঁটকে সরে গেল। দু’জনের ঠোঁটে রক্ত। দিগন্ত বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ঠোঁট’টা চেপে ধরল। চোখে ক্রোধ স্পষ্ট! যেন এক্ষুণি ভস্ম করেই ক্ষান্ত হবে। শিফা ঠোঁটের কোণে হাসি।শান্তি পাচ্ছে সে; প্রচুর শান্তি।
ওর ঠোঁটজোড়া দিগন্তের রক্তে রাঙা হয়ে গেছে।
দেখতে ভয়ংকর লাগছে। মনে হচ্ছে, রক্তপিপাসু
মানবী। তখন শিফা হেসে বলল,
-‘বউয়ের আদর নিতে পারেন না। কেমন পুরুষ আপনি, হুম? ছিঃ, এই ক্ষমতার এত গর্ব?’
দিগন্ত রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা বড্ড বার বেড়েছে। এত ব্যথায় পেয়েও তেজ কমে নি।
আরেক ডোজ দিতে হবে। শিফা মুখটা ধুয়ে এসে সাফার ছবি হাতে নিয়ে বলল,
-‘দেখলি, ঠুনকো জোর কাকে বলে?’
দিগন্ত ঠোঁট থেকে টিস্যু’টা সরিয়ে পাশে দাঁড়াল।
সাফার ছবি দেখে শিফার পুরো শরীরে তাকাল।
দু’জনেই বিরক্তকর। দিগন্ত মুখ বেঁকিয়ে বিরক্ত নিয়ে বলল,
-‘এখন যা বলবো সরাসরি জবাব দিবা।”
-‘ওকে।’
সাফাকে আমি প্রেমের জালে ফাঁসিয়েছি?’
-‘না।’
-‘বেডপার্টনার বানিয়েছি? অথবা প্রেগনেন্ট করে ছেড়ে দিয়েছি?’
-‘না।’
-‘সুইসাইড করতে বাধ্য করেছি?’
-‘না।’
-‘তাহলে ওকে টানছো যে? শোনো তবে, আমার শত্রুতা তোমার সঙ্গে। আমাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখো।তাছাড়া তোমরা দু’জনই আমার পছন্দের লিষ্টের বাইরে; প্রেম তো বহুদূর! এই ভালোবাসা জিনিসটা আমার জীবনে কখনো আসে নি।এর কারণ অযথা সময় নষ্ট করা, আমার অপছন্দ। তোমাকেও আমার পছন্দ নয়। তাই নিজেকে এত শ্রেষ্ঠত্ব ভাবা বন্ধ করো। আর নয়তো মেরে গুম করে দিবো, যত্তসব!’
কথাটা বলে দিগন্ত ফোনটা নিয়ে বেরিয়ে গেল।
শিফা হাসল! দিগন্ত ভুল বলে নি। আসলেই সে এসব করে নি। দিগন্তের সঙ্গে পূর্বেও ওর সম্পর্ক ছিলো না। প্রেমজনিত কারণে দিগন্তকে বিয়েও করে নি। ওদের যুদ্ধ ভিন্ন কারণে। দু’জনেই সেটা অবগত। দিগন্ত মাফিয়া দলের লিডার অথবা নারী পাচারকারীও নয়। তবুও অপরাধী। ক্ষমার অযোগ্য!
শিফা দাঁড়িয়ে না থেকে শুয়ে পড়ল। অহেতুক ভেবে র্নিঘুম রাত কাটানোর মানেই হয় না। হ্যাঁ, ঘুমালে শরীর ও মন ভালো থাকে। মনটা ভালো থাকলে; বুদ্ধিও সচল হয়। পরিস্থিতি মোতাবেক এই দু’টোর বড্ড প্রয়োজন। বাকিটা পরে বুঝবে।
তাই শিফা চোখজোড়া বন্ধ করে বিরবির করে
বলল,
-‘ফেইক আইডির শাস্তিও তোলা রয়েছে। শুধু সময়ের অপেক্ষা।’
To be continue……….!!
-‘সাঁঝক বাতি-‘
নূরজাহান আক্তার (আলো)
[০৭]
-‘ফেইক আইডির শাস্তিও তোলা আছে। তোমার মতো ঘুঘুকে সময় মতো ধরব। শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা।’
কথাটা বলে শিফা চোখজোড়া বুজে নিলো। ঘুম দরকার! চোখের পাতা দু’টো বিশ্রাম চাচ্ছে।আর
কত? কেবল তো শুরু! এখন সব ভেবে ফেললে, পরে কী করবে? মরতেই এসেছে তাই প্রাণের ভয় নেই। তবে আসার উদ্দেশ্যে সফল করতে হবে। নয়তো সব বৃথা! এত কষ্ট, ত্যাগ, বৃথা করা যাবে না। সেদিন রাতে দিগন্ত আর বাসায় ফিরল না। কোথায় গেল? একমাত্র সেই জানে। আর দিগন্ত কাজের কৈফিয়ত কাউকে দেয় না; দিবেও না। মর্জিমতো চলে সে। কারো কথায় বা ইচ্ছায় নয়।
টিকটিক করে ঘড়িতে সময় চলতে থাকল। শেষ
প্রহরে ভোরের আজান দিচ্ছে। বাইরে অন্ধকার।
ভোরের আলো এখনো ফুঁটে নি। শিফা সতর্কতা অবলম্বন করে বের হলো।এটাই মোক্ষম সুযোগ।
বাসার সবাই ঘুমে মগ্ন! দিগন্ত কখন ফিরবে ঠিক
নেই! শিফার পরণে জিন্স, টপস্, কেডস, আর মুখে মাস্ক। ওড়নাটা গলায় পেঁচানো। চুলগুলো পনিটেল করে বাঁধা। চোখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি! সে চোখ বুলিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে সতর্ক হয়ে’ই যাচ্ছে। কেউ দেখে ফেললেই বিপদ। যাওয়াটাও জুরুরি!
শিফা বাড়ির পেছনের দিকে গেল। বাউন্ডারির প্রাচীরটা বেশি উচুঁ না! শিফা লাফিয়ে প্রাচীরটা টপকে রাস্তায় উঠল। এই কাজেও অভিজ্ঞ সে।
ফাঁকা রাস্তা! এদিকটাতে তেমন কেউ আসে না। তারউপরে এখনো ঘুটঘুটে অন্ধকার। সে হাতের টর্চলাইট নিয়ে সামনে এগিয়ে গেল। অদূরে কেউ
ওর অপেক্ষায় আছে। বাইকের মালিকের মুখেও মাস্ক। তবে নারীর অবয়ব তা স্পষ্ট! শিফা গিয়ে বাইকে বসে দ্রুত স্থান ত্যাগ করল। দু’জনে চুপ!শাঁ শাঁ করে বাইকটা দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
অবাধ্য বাতাসে উড়িয়ে দিচ্ছে চুল আর ওড়না।
একটুপরে, শিফা আর মেয়েটা ডুপ্লেক্স বাসাতে ডুকলো। একজন ওদেরকে দেখে হাসলেন। যাক বাঘিনী’রা চলে এসেছে। শিফা ওর মাস্কটা খুলে তাড়া দিয়ে বলল,
-‘দিগন্তের পেছনে লোক লাগাতে বলেছিলাম।’
-‘দিগন্ত তাকে মেরে গুম করে দিয়েছে। কীভাবে যেন বুঝে গিয়েছিল।’
-‘আর কোনো খবর আছে?’
-‘স্বপ্নীল স্যারকে দু’বার এ্যার্টাক করেছিল। তবে সফল হতে পারে নি। আপনার কথামতো উনার দেহরক্ষীরা গোপনে সেভ করেছে। স্যার টের পান নি।’
-‘স্বপ্নীলকে নজরে রাখুন। কানাডাতেও সে সেভ নয়। ওর শরীরে যেন সামান্য টোকাও না লাগে।
দরকার হলে দেহরক্ষী বাড়িয়ে দেন।’
-‘আচ্ছা।’
শিফার পাশের মেয়েটা কিছু কাগজপত্র শিফার দিকে বাড়িয়ে দিলো। শিফা সেগুলো দেখে মুচকি হাসল। বাহ্, এত তাড়াতাড়ি হবে ভাবতেও পারে নি। তারপর ওরা জুরুরি কিছু বিষয়ে আলোচনা করল। দিগন্তের এত ধূর্ত সব চাল ভেস্তে দিচ্ছে।
দিক, কতবার দিবে? শিফা এটাও জানল, দিগন্ত আজ আবাসিক হোটেলে রাত কাটাচ্ছে। সপ্তাহে তিনদিন সেখানে রাত কাটায়। তাও নতুন নতুন মেয়ে লাগে। তার জন্য রুম বরাদ্দ থাকে। যদিও এখানে তার কিছু শর্ত জারি আছে। এই যেমন;
ওর সঙ্গী যতই উত্তেজিত হোক, ওর শরীর স্পর্শ করা বারণ। সে স্পর্শ করবে! তবে অপরব্যাক্তি তাল মিলাতে পারবে না। এমন অদ্ভুত কিছু শর্ত
রেখেছে। গতসপ্তাহে, একটা মেয়ে ভুলবশত ওর পিঠে নখের আঁচড় কেটেছিল। নিজের ভুল বুঝে সরিও বলেছিল। দিগন্ত এর প্রত্যুত্তরে হেসেছিল। হাসিটা ছিল; অমায়িক। পরে মেয়েটা নিখোঁজ!
কোনোভাবেই তার সন্ধান মিলে নি। হয়তো মৃত! তার ভুলের শাস্তি তাকে দেওয়া হয়েছে।
শিফা কাজ বুঝিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেল। ভোরের আলো ফুটে গেছে। আর থাকা ঠিক হবে না। ওই মেয়েটা শিফাকে পূর্বের স্থানে নিয়ে গেল। শিফা বাইকে থেকে নামতেই মেয়েটা ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-‘সাবধানে থাকিস! কিছু হলেই খবর দিস।’
-‘হুম।’
শিফা নিজেকে ছাড়িয়ে লাফিয়ে প্রাচীরে উঠল। মেয়েটাকে যাওয়ার ইশারা করে নিচে নেমে গেল।
মেয়েটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেল। আর শিফা
দ্রুত রুমে গিয়ে ড্রেস বদলে ছাদে গেল। শীতল বাতাসেও মনটা অশান্ত হয়ে আছে। মনোরমদৃশ্য
মন ছোঁয়তে ব্যর্থ। বিষাদপূর্ন জীবন। সবকিছুতে যেন বিষাদের ছোঁয়া! শিফার দৃষ্টি নিবদ্ধ দিগন্তর বাগানের দিকে। সেখানেই দিগন্তকে চিনেছিল। সাফা বাগানে বসে দিগন্তকে নিয়ে কতশত গল্প করত। দিগন্তের চোখজোড়া সাফার খুব পছন্দের ছিল। ওই দু’চোখতে নাকি কথা বলে! কথা বলা চোখ! শিফা বিরক্ত হলেও, শুনত। যাতে সাফা কষ্ট না পায়। ভালোবাসা নামক খেলায় এলার্জি শিফার। আজগুবি মনে হয়। কত প্রস্তাব পেয়েছে তারও হিসাব নেই। এসবে বরাবরই ওর অনীহা। কেন? সেও জানে না! আর গতকালকে, দিগন্ত ওকে জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘সাফাকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়েছিল নাকি?’ এর উত্তরে ‘না’ বলেছিল। অথচ সত্যটা ‘হ্যাঁ’ হতো।
মূলত, ইচ্ছে করেই মিথ্যে বলেছে। নয়তো দিগন্ত ওর পরিকল্পনা ভেস্তে দিতো। দিগন্ত জানা মানে; মৃত্যু নিশ্চিত। স্বপ্নীলকে মারতে বলেছিল।কারণ দিগন্তকে বোঝাতে চেয়েছিল, স্বপ্নীলকে সে হেলা করে। স্বপ্নীল মরলেও ওর কিছু আসবে যাবে না।
তবুও দিগন্ত সত্যিটা বুঝে এ্যার্টাক করেছে। শিফা মিথ্যে বলেছে, দিগন্তের অজানা নয়। কারণ ওর সব তথ্য দিগন্তেরও জানা। ঠিক বুঝেও ফেলেছে, ওর পেছনে লোক লাগিয়েছিল। শিফা লাগিয়েছে তাও জানে। এই ছেলেটা খুব ধূর্ত। তবুও, আজ অথবা কাল টোপ গিলতেই হবে। ততদিনে ওর দূর্বল পয়েন্ট খুঁজে বের করতে হবে। এসব ভেবে, শিফা পেছনে ঘুরতেই কারো সঙ্গে ধাক্কা খেলো। মুখ তুলে দেখে দিগন্ত। সদ্য গোসল সেরে ছাদে এসেছে। চুল থেকে পানি ঝরছে। ঘৃনায় ওর বমি পাচ্ছে। ঘৃনিত দৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে সে চোখ সরিয়ে নিলো। সারারাত আকাম করে মুখভঙ্গি এমন যেন কিচ্ছু বোঝে না। নাদান বাচ্চা সে!
শিফা খুব বিরক্ত হয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। তখন দিগন্ত ফিচেল হেসে বলল,
-‘জানতাম, হোটেলের খবরটাও পেয়ে যাবে। খুব ভালো সময় কাটিয়েছি। মেয়েটা ভার্জিন ছিল! আর হ্যাঁ, শুনলাম তুমি নাকি কেবল ফিরলে?’
শিফা নিশ্চুপ! একদম স্বাভাবিক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। যেন দিগন্তের কথা শুনতেই পায় ন। সে বধির! শিফার নিশ্চুপ থাকাটা দিগন্তের পছন্দ হচ্ছে না। তাই চুলগুলো ঝেড়ে শরীর জ্বলানো একটা কথা বলল,
-‘তুমিও কি আমার মতোই? কি বোঝাতে চাচ্ছি, বুঝতে পারছো?’
-‘হুম, আমিও গিয়েছিলাম চাহিদা মিটাতে।’
-‘আমাকে বলতে।’
-‘আপনাকে দিয়ে আমার পোষাবে না।’
শিফার অপমান দিগন্ত সহজেই ধরে ফেলল। সে এগিয়ে এসে শিফা হাত মুচড়ে ধরল। শিফা ওর
কৌশল অবলম্বন করার আগে দিগন্ত আস্টেপৃষ্ঠে
জড়িয়ে নিলো। আর পথ নেই।পুরুষালি হাতের বাঁধনে শিফা নড়তেও পারল না। তাই স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়াল। ওকে শক্তি প্রয়োগ করতে না দেখে দিগন্ত হাসল। মেয়ে না যেন বাঘিনী একটা! তা নাহলে ছেলের সঙ্গে লড়তে আসে। দিগন্ত হাতের বাঁধন নরম করতে শিফা ঘুরে ঘুষি মেরে দিলো।ঠিক নাক বরাবর। রক্ত না আসলেও খুব ব্যাথা পেয়েছে। দিগন্ত নাক না ধরতেই শিফা ওর হাঁটু বরাবরই লাথি মারল। দিগন্ত তাল সামলাতে না পেরে নিচে বসে পড়ল। শিফা পেছন থেকে ওর চুল খামছে গলায় ধারালো ছুরি ধরে রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
-‘মেয়ে বলে, দূর্বল ভাবিস না। কুকুরকে শায়েস্তা করার কৌশলও জানা আছে।’
ছুরিটা সবসময় শিফার কাছেই থাকে। দিগন্ত তা দেখে হাসল। শিফার পায়ের পাতায় পাড়া দিয়ে দিগন্ত ছুরি কেড়ে ফেলে দিলো। শিফা টু শব্দ না করে তাকিয়ে রইল। তেজী চাহনি। দিগন্ত ওকে স্বজোরে থাপ্পড় বসিয়ে ছাদের মেঝেতে শুইয়েই গলা চেপে ধরল। শিফা শ্বাস নিতে পারছে না।
দিগন্ত চোয়াল শক্ত আরো শক্ত করে গলায় চাপ দিলো। শিফার চোখ উল্টে যাচ্ছে। তবে বাঁচার আকুঁতি করছে না। সিঁড়িতে কারো পায়ের শব্দ শুনে দিগন্ত ওকে ছেড়ে দিলো। শিফা উঠে বসে গলা ধরে কাশতে লাগল। অঝরে অশ্রু ঝরছে।
খুব কষ্টও হচ্ছে। আর একটু হলেই প্রাণটা বুঝি উড়াল দিতো। দিগন্ত ওর পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
-‘কষ্ট হচ্ছে বউ? আহারে, সরি সোনাপাখিটা।’
শিফা জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে থেমে থেমে জবাব দিলো।
-‘ আমাকে মেরে দে। নয়তো তোর কপালে দুঃখ আছে।’
-‘দুঃখ দেখার জন্যই তোমাকে বাঁচিয়ে রেখেছি।
তেজ দেখাও। আমি আরো তেজ দেখতে চাই!’
শিফা হাসল। মুখে মুখে নয় দু’জনের কথা হলো চোখে। অপ্রকাশিত যুদ্ধের আলাপ। নিহা ওদের দেখে সিঁড়ি থেকেই নিচে চলে গেল। বিরক্ত করা ঠিক হবে না। দু’জনে কিছুটা সময় কাটাক। ওকে দেখে লজ্জা পেতে পারে। শিফা উঠে হাত ঝেড়ে পা বাড়াল। তখন দিগন্ত বলল,
-‘লোক লাগিও না। পরেরবার মাফ করব না। বারবার সুযোগ দেওয়া আমার ধাঁচে নেই।’
শিফা না শোনার ভাণ করে চলে গেল। কিছুদিন
চুপ থাকতে হবে। শিফা নিচে গিয়ে গোপন ফোন বের করল। জুরুরি মেসেজ এসেছে। শিফা সেই মেসেজের রিপ্লাই করে ফোনটা বন্ধ করে ফেলল।
এখন কিছু একটা করতে হবে। সে রান্নাঘরে গিয়ে
হাতে হাতে কাজ করল। শাশুড়ি পাশে আছেন।
নিহার পরোটা বেলছে আর শিফা ভাজছে। সে
চুপ থেকে শাশুড়ি আর নিহার গল্প শুনছিল।
তারপর হঠাৎ বলে বসল,
-‘আপনি বাবার দ্বিতীয় পক্ষ তাই না, মা? নার্স ছিলেন আগে?’
ওর কথা শুনে দিগন্তের মা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলেন। নিহাও অবাক হয়েছে। শিফা উত্তরের আশায়। ওদিকে প্রশান্ত নাস্তা চাচ্ছে। তাই কেউ আর কথা বাড়ালেন না। তবে শাশুড়ির থমথমে মুখ শিফা ঠিকই খেয়াল করল। নিহা দ্রুত নাস্তা নিয়ে প্রশান্তকে দিলো। আর শিফা খুব কৌশলে নিচে তেল ফেলে সরে গেল। আর অপেক্ষায় রইল চিৎকার শোনার। একটা ডিমের খোসা না ছাড়াতেই নিহার চিৎকার শুনতে পেলো। আহা,
কত্ত শান্তি! শিফা দৌড়ে গিয়ে নিহাকে তুললো। নিহা কোমরে খুব ব্যথা পেয়েছে। প্রশান্ত বকাবকি করে রেস্ট নিতে বলে চলে গেল। মিটিং আছে।
দিগন্তও বাবার সাথে নাস্তা সেরে অফিসে চলে গেল। শাশুড়ি নিজের রুমে। শিফা সুযোগ বুঝে নিহার কাছে গিয়ে বলল,
-‘ভাবি, আপনার চেকআপ করে নেওয়া উচিত। আমার এক চাচীর পড়ে তো কোমরের হাঁড় ফেটে
গিয়েছিল। পরে ডাক্তার দেখিয়েও লাভ হয় নি।’
-‘তারপর?’
-‘এখন কুঁজো হয়ে হাঁটে। কোনো কাজ করতেও পারে না।’
নিহা ওর একথা বিশ্বাস করে নিলো। তাই তো!
ওর’ও যদি ফেটে যায়! না, না, ডাক্তার দেখাতেই হবে। সে প্রশান্তকে ফোন দিয়ে কান্নাজুড়ে দিলো।
প্রশান্ত জানে; নিহা চেকআপ না করানো অবধি ঘ্যান ঘ্যান করবে। তাই ওর হাসপিটালে’ই যেতে বলল। নিহা তখন শিফার হাত ধরে বলল,
-‘শিফা, প্লিজ আমার সঙ্গে চলো। আমার ভয় লাগছে।’
-‘ ভয়ের কিছু নেই। আচ্ছা, আমি যাচ্ছি।’
শিফা যেন একথারই অপেক্ষায় ছিলো। সফল হলো। নিহাকে রেডি হতে বলে সেও রুমে গেল। তারপর দু’জনেই শাশুড়িকে বলে বেরিয়ে গেল।
হসপিটালে পৌঁছে অপেক্ষা করতে হলো না। ওরা যাওয়ার আগেই প্রশান্ত ডাক্তারকে বলে রেখেছে।
নিহার কথা প্রশান্তকে ছাড়া ডাক্তারের চেম্বারেই ঢুকবে না। শিফা প্রশান্তকে যেতে বলল। অগত্যা তাকে যেতেই হলো। ওরা ডাক্তারের রুমে ঢুকতেই শিফা দৌড়ে গেল, লিফটের দিকে। একজন ওর
অপেক্ষায় আছে। শিফাকে দেখে অগুন্তক ফাইল রেখে সরে দাঁড়াল। শিফা সেটা দেখে মৃদু মাথাটা নাড়িয়ে ফাইলটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।
হাতে ফাইল দেখলে নিহা সন্দেহ করবে। তাই সে কাগজটা দেখে ফাইলটা ওখানেই রেখে দিলো। অগুন্তক আশেপাশে তাকিয়ে মাস্কটা ঠিক করে ফাইল নিয়ে চলে গেল। নিহা চেকআপ করিয়ে বের হয়ে দেখে শিফা বসে আছে। তারপর প্রশান্ত ওদের বাসায় যেতে বলে চলে গেলে। সে মিটিং ফেলে এসেছিল। শিফা আর নিহা দু’জনে হাসি মুখে বাসায় চলে গেল। নিহার তেমন কিছু হয় নি। ওষুধ খেলে’ই ঠিক হয়ে যাবে।
______________________________
প্রায় এক সপ্তাহ পর,
শিফা বাবার বাসায় বেড়াতে এসেছে। দিগন্তের নাকি কাজ আছে। তাই থাকতে পারে নি। শিফা চুপ করে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। ছলছল চোখ! অশ্রুফোঁটা গড়িয়ে পরার অপেক্ষা।ফোন
স্কল থামিয়ে পানি খেয়ে দরজা আটকে আসল।
ওর ফোনে অন্য আইডি লগ ইন করা। সেখানে
স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে, দিগন্ত আর সাফার কতশত
প্রেমালাপ। রোমান্টিক কথাবার্তা! দিগন্তের ছবিও আছে। সাফার ওড়না ছাড়া ছবি নেওয়ার জন্য,
দিগন্ত রাগ করে দুইদিন কথা বলে নি। তা নিয়ে সাফার রাগ ভাঙ্গানোর কতশত চেষ্টা। পরে ছবি পেয়ে তারপর দিগন্ত কথা বলেছে। অনেক ছবি!
এমনকি দিগন্ত সাফাকে নিষেধও করছে শিফাকে এসব না জানাতে। পরে জানিয়ে চমকে দিবে! বোকা সাফা তাই’ই করেছে। সব বললেও ছবির কথা সত্যিই গোপন রেখেছিল। শিফা আজকে জানতে পারল। শিফার চোখদু’টো খুব জ্বলছে। কাঁদতে পারলে বেশ হতো। কিন্তু পারছে না তো। কষ্টে বুকটা যেন ফেঁটে যাচ্ছে। সাফার কাজে সে কষ্ট পেয়েছে।
সাফাও দিগন্তের চতুরতা ধরতে পারে নি। বুঝতে পারেনি দিগন্তের পরিকল্পনা। ভালোবেসেছে তাই হয়তো! তাছাড়া, একটা মানুষের কত রুপ হতে পারে? কত নিকৃষ্ট হতে পারে? কত জঘন্যও হতে পারে? এর জলজ্যান্ত প্রমান, দিগন্ত। সে মানুষ নয়; অমানুষ!
শিফা আর ভাবতে পারছে না। সে বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়ল। চোখের পানি আড়াল করার এটাই উত্তম পন্থা। এছাড়া আপাতত মস্তিষ্ক আর কিছু আসছে না।ভাগ্যিস, অশ্রুর রং কিংবা গন্ধ নেই। নয়তো সবার কাছে ধরা পড়ে যেতে। শিফা কাঁদছে! অঝরে কাঁদছে! তবে নিরবে, নিঃশব্দে।ওর কানে সাফার শেষ কথাটা এখনো প্রতিধ্বনি হয়,
-‘প্রিয়, আমার প্রাণ নিলো। হ্যাঁ ওই প্রিয়! প্রিয়ই, আমার প্রাণ নিলো।’
To be continue…….!!