সাঁঝক বাতি,১৬,১৭

0
566

সাঁঝক বাতি,১৬,১৭
নূরজাহান আক্তার (আলো)
[১৬]

-‘প্রশান্ত, সাফাকে কেন মেরেছে?’
-‘জানি না। তবে আমি ওদের ইন্টিমেট হতে সাহায্য করেছি।’

শিফা সর্বশক্তি দিয়ে নিহার গালে থাপ্পড় দিলো।
ওর ধৈর্য্যের বাঁধ আর মানছে না। সবাই’ই পশু।
মানুষ হলে বিবেকবোধ বলে কিছু থাকত। পাপ ও পূর্ণ্যের পার্থক্য বুঝত। নিহার এই কথা শুনে,
হাসিবও এগিয়ে এসে চার থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।
সাফা ও শিফাকে সে বোনের মতো ভালোবাসে।
অথচ এরা! মৃত সাফার ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ছিল; প্রেগনেন্ট। তাও আড়াই মাসের। রিপোর্ট আগে শিফা দেখে হাসিবকে দিয়ে মিথ্যা রিপোর্ট বানিয়েছিল। যাতে ব্যাপারটা পাঁচকান না হয়। নয়তো সাফার আব্বু-আম্মু সহ্য করতে পারতেন না। স্বপ্নীলও ভেঙ্গে পড়ত। সবার ভালোর জন্য শিফা একাজ করতে বাধ্য হয়েছিল। এজন্য কেউ
একথা জানে না। নাহলে সন্মান নিয়ে টানাটানি হয়ে যেতো। সাফার বাবা-মাকেও সমাজের লোক বাঁচতে দিতো না। কথার খোঁচা মেরে। এতকিছু শিফা নিজ হাতে সামলেছে। ওর মধ্যেও কেমন ঝড় বইছিল, কেবল সেই জানে! আর সবকিছু হয়েছে এই নরপশুদের জন্য। সাফা মারা গেল, আর পাপীরা বেঁচে রইল। তবে, তাদেরও পতন
হবে, হতেই হবে! সময় কথা বলবে। তবে নিদির্ষ্ট এক পরিস্থিতিতে। পাপ এবং পাপীদের পতন না ঘটলে পৃথিবী আগেই রসাতলে চলে যেতো। না, এবারও পাপ ও পাপিষ্ঠের বরাবর হবে। তখন হাসিব নিহাকে বলল,

-‘এখনো সময় আছে সত্য প্রকাশ করো। নয়তো ফল ভালো হবে না।’

-‘আমি কিছু করি নি। আমাকে ছেড়ে দাও।’

হাসিব মারতে গেলে শিফা আঁটকে দিলো। ওকে
ভুলিয়ে ভালিয়ে কথা বের করার সময় নেই। যা করতে হবে ঝটপট। শিফা হাতের ছুরি রেখে উঠে দাঁড়িয়ে নিহাকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করল,

-প্রশান্ত সাফাকে কেন মেরেছে? আর কে কে ওর সঙ্গে জাড়িত?’

-‘জানিনা।’

ওর এই মিথ্যা কথাটা সহ্য করার মতো না। তাই
শিফা পাশে থাকা ফুটন্ত গরম পানি ছুঁড়ে দিলো।
নিহা আতর্নাদ করে উঠল। পুনরায় গরম পানি
দিতে গেলে নিহা বলার জন্য উদ্ধত হলো। তবে
বলতে পারল না, কান্নার জন্য।শিফা ওকে একটু সময় দিলো। যাতে পুরো ঘটনা এখনই জানতে পারে। আর ওর জানাও খুব জুরুরি। নিহা বেশ কয়েকবার শুকনো ঢোক গিলল। পানি পেলে বেশ হতো। তবে ভয়ে পানির কথা বলতে পারল না। যদি টগটগে গরম পানি দেয়। গরম পানিতে পিপাসা মিটবে না। বরং ঝলসে যাবে। শরীরটা যেমন ঝলসে যাচ্ছে। কিন্তু গলাও শুকিয়ে গেছে। ভয়ে বুকটা দুরুদুরু কাঁপছে। পূর্বে কাউকে এতটা ভয় পায় নি সে। অথচ আজ পাচ্ছে! তাও ছোট্ট মেয়েটাকে। শিফার চোখে ধারালো চাহনি। যেন নিমিষেই ভষ্ম করে দিবে। ক্ষুধার্ত বাঘিনী যেন অবশেষে শিকারকে হাতে পেয়েছে। শিকার শেষ।
শিফা এত কঠোর নিহার জানা ছিল না।কীভাবে হলো? তাও হঠাৎ! নিহা এবার একটু সময় নিয়ে বলতে শুরু করল।

প্রথম থেকেই প্রশান্তর নজর ছিল, সাফার দিকে। মেয়েটার শারীরিক গঠন বেশ আকষর্ণীয়। ওর নাকি ছুঁইয়ে দেখার বাসনা জাগে। প্রশান্ত নারীর দেহের পাগল। দিগন্তের পছন্দ উচ্চমানের হলেও প্রশান্ত এমন নয়। একটা হলেই হয়। তবে চাই-ই চাই! আর ভালো সর্বদা ভালোকে আকষর্ণ করে আর খারাপ খারাপকে। ওদের পরিবারের সবাই এমন। কারো চক্ষুলজ্জাও নেই। প্রশান্ত বাবা-মা ও দিগন্তের সামনে মেয়ে নিয়ে রুমে ঢুকে। বাবাও তাই। বড়রা করলে ছোটটা বাদ যাবে কেন? তাই
দিগন্তও। সেও পুরুষ। তারও তো চাহিদা আছে।
আর নিহা বিয়ে ছাড়া বান্ধবীর পরিচয়ে বাসায় আসত, থাকত। কেউ কিছু বলতো না। বাঙালী কার ভেতরে কি আছে খোঁজ করে না। এরা মিষ্টি কথাতে মজে বেশি। সেও প্রশান্তদের ভাড়াটিয়ার
সাথে যেভাবেই মিশতো। বোকা এবং সহজসরল সেজে। এজন্য সবাই খুব সুনামও করতো। নিহা
বিয়ে ছাড়াই প্রশান্তের সঙ্গে অসংখ্যবার ইন্টিমেট হয়েছে। ব্যাপারটা ওদের কাছে খুবই স্বাভাবিক।
একদিন দু’জনে অর্ধনগ্ন হয়ে শুয়ে ছিল। তখন প্রশান্ত গদগদ হয়ে বলেছিল,

-‘নিহা ডালিং নিচের তলার মেয়েটাকে বিছানার আনার ব্যবস্থা করো, প্লিজ!’

তখন নিহা ভাব দেখিয়ে মুখ ভেঙিয়েছিল। এর কারণও আছে। সে প্রশান্তের নাক টেনে আহ্লাদী হয়ে বলেছিল,

-‘এর বিনিময়ে আমি কি পাবো, হুম?’
-‘আমার জানপাখিটার কী চায়, শুনি?’
-‘তোমার ভাইকে। ওর সঙ্গে আমার বিয়ে দাও।’
-‘একথা শুনলে তোমাকে গুম তো করবেই; সঙ্গে আমাকেও।’
-‘তাহলে তুমি আমাকে বিয়ে করো?’
-‘করবো জান। আগে ওই পাখিটাকে খাওয়ার
ব্যবস্থা করো।’

সেদিন থেকেই নিহা সাফার সঙ্গে বেশি মিশতো।দু’দিনে এত আপন হয়, যে সাফারও ওর পেটের কথা সব নিহাকে বলেও দেয়। সব বলতে সব’ই।
এমনকি দিগন্তকে পছন্দ করার কথাও। ওর দূর্বল পয়েন্ট জেনে নিহা আর প্রশান্ত পরিকল্পনা করে।
নিহা সাফাকে বোঝাতে থাকে সে নিজের সাফার কথা দিগন্তকে জানাবে। ওদের একজোড়া করেই ছাড়বে। তার দুইদিন পর, নিহা জানায় দিগন্তকে সে সাফার কথা জানিয়েছে। দিগন্ত নাকি রাজি।
সেও সাফাকে পছন্দ করে।সাফা খুশিতে গদগদ।
প্রশান্ত দিগন্তের নামে আইডিও খোলে ‘ওয়াসিম আহমাদ দিগন্ত।’ পরে ওই আইডি দিয়ে সাফাকে রিকুয়েস্ট পাঠায়। এসব এত দ্রুত হওয়াতে সাফা নিহাকে শুভাকাঙ্ক্ষী ভাবতে থাকে।শিফাকে কম সময় দিতে থাকে। ওদের তেমন কথাও হতো না। শিফা ফোনে দিলে কাজের ব্যস্ততা দেখাত।আর শিফা বাসায় আসলে; ওকে বসিয়ে রেখে সাফা
নিহার কাছে চলে যেতো। শিফা তখনো নিহাকে চিনত না। সে আবার আগ বাড়িয়ে কারো সঙ্গে মিশতে পারে না। সাফারও নিহার সম্পর্কে কিছু বলেছিল না। তারপর থেকেই প্রশান্তর সঙ্গে ওর কথা বলা আরম্ভ হয়েছিল। একদিন প্রশান্ত ওকে বলেছিল,

-‘সাফা, বাইরে আমাকে দেখলেও ঢং করবে না। কেউ যেন না বুঝে আমাদের সম্পর্ক আছে।মনে রোখো! আর তোমার ওই বান্ধবীকেও কিছু বলবা না। আমরা ওকে সারপ্রাইজ দিবো।’

-‘শিফাকে কিছু না বললে আমার শান্তি লাগে না। ওকে আমি প্রচন্ড ভালোবাসি। সে কলিজার বান্ধবী।’
-আর আমি? আমাকে বাসো না?’

সাফা লজ্জায় রাঙাবতী হয়ে রিপ্লাই করেছিল,
-‘খুব৷’
-‘তাহলে আমার কথা রাখতে হবে মানে, হবেই।’
তোমার ভালোবাসার কসম!’
-আচ্ছা।’

এভাবেই ওদের সম্পর্ক চলছিল। এরপর দিগন্তও অফিসের কাজে অন্য জেলাতে চলে গেল। এটা খুব ভালো হয়েছিল। এরপর সাফা রোজ ওদের বাসাতে আসত। নিহার সঙ্গে গল্প করে ওর সময় কাটত। নিহাও সাফাকে কিছু না কিছু রান্না করে খাওয়াত। আর খাবারের সাথে একটা মেডিসিন মিশিয়ে দিতো। প্রতিদিন। কারণ ওদের অজানা নয়, সাফার সর্বশেষ পরিণতি মৃত্যু। তাই তখন থেকে সেই পরিকল্পনা। নয়তো ফেঁসে যাবে। এটা হতে দেওয়া যাবে না। তারপরে, সাফা প্রশান্তদের বাসাতে কিছু খেলেই ঘুমিয়ে যেতো। কড়া ঘুমের ওষুধের প্রভাবে। আর প্রশান্তও ফায়দা উঠাতো।ওর কাজ হয়ে গেলে চলে যেতো। আর সাফাকে ঠিকঠাক করে নিহা ওর পাশে শুয়ে পড়ত। সাফা জেগে নিহাকে ঘুমাতে দেখে আস্তে করে উঠে চলে যেতো। আর নিহা হাসত। মেয়েটা খু্ব’ই বোকা!
এভাবে দিনগুলোও চলত লাগল। আর সাফার অবস্থাও খারাপ হতে লাগল। প্রশান্ত প্রথমদিকে প্রোট্রেকশন ব্যবহার করলেও, পরে করতো না।
সাফা নিজেও বুঝতো ওর সঙ্গে কিছু ঘটছে।তবে লজ্জায় জিজ্ঞাসা করতে পারত না। আবার কি ঘটছে মনে করতে পারত না। ততদিনে ওষুধে ওর অনুভূতিশক্তি অকেজো করতে সক্ষমও হয়েছে।
সাফা একদিন বলেছিল,

-‘নিহা আপু, আমি ঘুমালে কেউ আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়?’

-‘তোমার উনি খুব আবেগী হয়ে লিপ্ত হয়েছিল।
পরে এখন আফসোস করছে।’

সেদিন দিগন্ত দুইদিনের জন্য বাসায় এসেছিল।
তাই নিহাও বুদ্ধি করে দিগন্তের নামটা বলেছিল।
পরে প্রশান্ত ইনবক্সে অভিনয় করে বারবার ক্ষমা চেয়েছিল। আর দিগন্ত পাতালঘরে কাজের জন্য একসপ্তাহ ছিলো। তখন দিগন্তের নামে প্রশান্ত’ই সঙ্গমে লিপ্ত হতো। বেচারা অবচেতন সাফা। সে
ক্ষুণাক্ষরে টেরও পায় নি। মৃত্যু আগ পর্যন্ত সাফা জেনেছিল, দিগন্ত ওর কাছে এসেছিল। একথাটা কাউকে বলতেও পারত না। ততদিনে নিহা ওকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেছিল। প্রশান্তও কার্যশেষে কম কথা বলতো। সাফারও বেগতিক অবস্থা।
কারো সাথে শেয়ার করবে এটাও মস্তিষ্কে আসত না। চোখে কম দেখা, বমি আসা, ভুলে যাওয়া, মস্তিস্ক কাজ করাও বন্ধ করে দিতো। সে খেতেও
পারত না। ওকে হসপিটালে ভর্তি করাও হলো। তখনো ওর সঙ্গে ফোনও ছিল। প্রশান্ত’ই ফোনটা সরিয়েছিল। যাতে প্রমাণ না থাকে। তবে প্রশান্ত এটা জানত না, সাফার আইডিটা শিফাই খুলে দিয়েছিল। পরে সাফাও নিজের প্রতি অকারণে বিরক্ত হয়ে আত্মহত্যা করেছিল। আর শিফাকে শেষবার বলেছিল,

-‘প্রিয় আমার প্রাণ নিয়েছে। হ্যাঁ ওই, ওই প্রিয়’ই প্রাণ নিয়েছে।’

শিফা আর শুনতে পারল না। সে মাটিতে বসেই চিৎকার করে কেঁদে উঠল। সাফার মৃত্যুর পর;সে এই প্রথম চিৎকার করে কাঁদছে। শিফা সবাইকে সামলানোর দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে কাঁদতেও পারত না। কষ্টগুলো আর বুক ঠিঁকতে বেরিয়ে আসতে চাইতো। তবুও নিজেকে যথেষ্ট শক্ত রাখত। সে
কলিজার বান্ধবীকে হারানোর ব্যথা মানতে পারে না। কষ্ট হয়! দম আটকে আসে। অদূরে দাঁড়িয়ে হাসিবও কাঁদছে। একটুপরে, শিফা উঠে নিহাকে এসিডে ঝলসানোর ইশারা করল। ওর কঙ্কালটা
প্রশান্তের নামে পার্সেল করে পাঠাতে বলল। যেন সেও কিছুটা আঁচ করে। নিহার আঁকুতিতে কারো মন গলল না। দিনশেষ হাসিবও তাই’ই করল।

দুইদিন পর,

শিফা আর প্রশান্ত মুখোমুখি বসে আছে। কোনো এক নামীদামি রেস্টুরেন্টে। দু’জনের মুখে কুটিল
হাসি। চোখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি! অপ্রকাশিত কথা হচ্ছে; তাও চোখে চোখে। নিহার কঙ্কালটা পেয়ে প্রশান্ত খুব হেসেছে। ওর চাল ওকে’ই দেখাচ্ছে। মেয়েটা
সত্যিই বোকা। নয়তো এইরকম বোকামিটা কেউ করে? আর নিহাকে খুঁজছিল, একটা পাসওয়ার্ড জানতে। কারণ ওর মনে পড়ছিল না। তাছাড়া কিছু নয়। নিহা মরলেই কি আর বাঁচলে কী? সে কেবল খেলার ঘুঁটি ছিল। তখন প্রশান্ত শিফার শরীরে চোখ বুলিয়ে বলল,

-‘তোমার ওই ঠোঁটজোড়া আমাকে খেতে দাও। যতক্ষণ না আমার তৃপ্তি মিটবে। নয়তো….!’

পাশের টেবিলে থেকে দিগন্ত ফোনে গেম খেলতে খেলতে উত্তর দিলো,

-‘হজম করতে পারবে? ভেবে নিও। বেস্ট অফ লাক।’

To be continue………!!

-‘সাঁঝক বাতি-‘
নূরজাহান আক্তার (আলো)
[১৭]

-‘হজম করতে পারবে? ভেবে নিও। বেস্ট অফ লাক।’

দিগন্তের একথায় প্রশান্ত শব্দ করেই হেসে উঠল। যেন হাস্যকর জোক্স শুনেছে। হাসিও থামছে না। হাসতে হাসতে ওর চোখের পানি বেরিয়ে আসার উপক্রম। দিগন্ত ফিরেও তাকাল না। সে ফোনে গেম খেলতে মগ্ন। খেলাতে টানটান উত্তোজনা। অন্যদিকে তাকালে হেরে যাবে।সে হারতে অভ্যস্ত নয়। হার জিনিসটা পছন্দও না। ওর ভাষ্যমতে,
মরে যাওয়া ভালো। তবুও হার মানব না। কারণ
হার স্বীকার মানে ;অন্যের বুড়ো আঙ্গুল দেখা। এটা গ্রহন করা ওর কর্ম নয়। এরচেয়ে মৃত্যু ঢের ভালো। তখন প্রশান্ত ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

-‘ভাই, জ্বলছে নাকি?’
-‘উহুম না, জ্বলতে নই জ্বালাতে পছন্দ করি।’
-‘বৈধ বউ বলে কথা!’
-‘শুধু বউ না বৈধ শত্রুও।’
-‘কাজ শুরু করি?’
-‘করো তবে পুনরায় ভাবো। পরিণতি ভয়ংকর।’

প্রশান্ত পুনরায় শব্দ করে হাসল। দিগন্তের কথায় না হেসেও পারছে না। দিগন্ত খেলা কমপ্লিট করে ঘুরে বসল। সফল হয়েছে। সে পাস্তা মুখে নিয়ে শিফার দিকে তাকাল। মেয়েটা অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। যেন ভষ্ম করে দিবে। দিগন্ত এক চামচ পাস্তা তুলে বলল,

-‘খাবে? নয়তো এভাবে তাকিও না আমার ব্রণ উঠতে পারে।’

-‘পিপীলিকার পাখার গজায় মরিবার তরে। তো তোরাও দেখি উড়তে শুরু করেছিস। সময় বুঝি ঘনিয়েই এসেছে।’

দিগন্ত উঠে শিফার পাশের চেয়ারে বসল।আদুরে
স্পর্শে নাকটা টেনে দিলো। ঠোঁটে ফিচেল হাসি।
প্রশান্ত সামনে বসে ভাইয়ের অভিনয় দেখছে।সে পারেও বটে। ভাইও হয়েছে তার মতোই অভিনয়ে
পারদর্শী। তখন দিগন্ত প্রশান্তকে বলল,

-‘আমি তোমাদের খেলার রেফারি। এই খেলার সমাপ্ত আমার সামনেই করিও। আমিও দেখতে চাই; ভাইয়ের দম বেশি নাকি বউয়ের।’

শিফা নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে অমানুষ দেখছে। ওর
অমানুষ দেখার শখ পূরণ হয়েছে। নয়তো এরা এসব বাক্য উচ্চারণ করতেও পারত না। সম্পর্ক কী? সম্পর্কের মানেও তো বুঝে না। অমানুষের জাত! দিগন্ত শিফার দিকে তাকিয়ে হাসল। যেন
বিশ্বজয় করা কাজ করেছে। সচারচর অহেতুক হাসে না সে।মেয়েটাকে দেখতে বেশ লাগছে। ওর আদুরে গালদু’টোতে আদর দিতে ইচ্ছে করছে।
ওর স্পর্শে মেয়েটা আরো সুন্দর হয়ে গেছে। আর সুদর্শন মানুষটা স্পর্শ করেছে। সুন্দর তো হবেই। তেজী শিফাকে দেখে দিগন্তেরও ভালো লাগছে।
বাঘিনীকে বাঘিনী রুপেই মানানসই। আর
বাঙালি মেয়েরা সত্যিই খুব অদ্ভুত।এরা স্বামীকে হয়তো সুপারম্যান ভাবে। যেন সব অন্যয় কাজে স্বামীদের ঢাল হতে হবে। কেন স্বামীদের কি কাজ নেই? ওর তো অনেক কাজ। কাজে চাপেই বউকে ঠিকঠাক প্যারা দিতে পারছে না। বউকে চাপে না রাখলে সে কেমন ধাঁচের স্বামী? এই এখন যেমন
কঠিন গেমটা খুব কষ্ট করে খেলল। জিতলোও। এজন্য ওর কষ্ট করতে হলো। কষ্ট করে খেলছিল বিধায় বউকে তখন সাপোর্ট দিতেও পারল না।
আহারে, বউটা রাগ করেছে। এবার কি করবে?
প্রশান্ত যতটুকু বলার বলেছে, শিফা রেগে এদিকে তাকিয়ে আছে। যেন সব অপরাধ তার। অথচ সে কিচ্ছু করে নি। কিছু করলেও ওর দোষ; না করলেও। দিগন্ত ছোট খাটো কাজ করেও না।
শিফা হাসিবের কল পেয়ে উঠে চলে গেল। কিছু কাজ আছে। অহেতুক বসে থাকারও সময় নেই। শিফা কয়েকপা এগিয়ে আবার ফিরে এসে মৃদু স্বরে বলল,

-‘কুকুররা ভালো খাবার সহজে পায় না। আর পেলেও টানাটানি করা ওদের স্বভাব। তোরা ঠিক ওদেরই মতো।’

প্রশান্ত রেগে তাকাল। শিফার মরার সময় ঘনিয়ে এসেছে। ওকে আর সহ্য হচ্ছে না। একটু বেশিই কথা বলে। দিগন্ত পাস্তা খেতে ব্যস্ত। খুব টেস্টি
পাস্তা! সে শিফার কথাটা যেন শুনেও শুনে নি।
শিফার চোটপাটে অভ্যস্ত। তাই কিছু মনে করল না। পাগলে প্রলাপ বকবেই শোনার কী ওর সময়
আছে? না নেই! ওর সময়ের দাম আছে। দিগন্ত
বরাবর সময়ের মূল্য বুঝে। শিফা ততক্ষণে স্থান ত্যাগ করেছে। অনাকাঙ্খিতভাবেই প্রশান্তের সঙ্গে দেখা হয়ে গেছে। ঘৃণায় মুখ ফিরালে,প্রশান্ত কথা বলতে এসেছিল। এতটাই লাজহীন সে! দিগন্তের উপস্থিতি আশ্চর্যজনক ছিল। সে এখানে কেন?
কাজে এসেছিল নাকি অকাজে? হয়তো দু’জনেই
কাজে এসেছিল। পাবলিক প্লেসে কথা বাড়ানোর প্রয়োজন মনে করে নি শিফা। এজন্য প্রশান্তর নোংরা কথা হজম করল। তবে জবাবটাও তোলা রইল। সুযোগ বুঝে দিবে। গলার জোর দেখিয়েও লাভ নেই। যা করার কাজে করেই দেখাতে হবে।
দিগন্ত পাস্তাটুকু গিলে বলল,

-‘সাফার সঙ্গে আমাকে না জড়ালেও পারতে?’
-‘এত ভালো মানুষ কবে হলি, ভাই?’
-‘যেদিন বেইমান চেনা শিখেছি।’
-‘শিফাকে ভালোবাসিস?’
-‘সেটা আবার কি?’
-‘অনুভূতি।’
-‘না।’

তারপর দু’জনেই উঠে চলে গেল। তমা পেছনের টেবিলে বসা। ওদেরই কথা শুনছিল। বোরকাতে নিজেকে আবৃত করা। এজন্য কেউ খেয়াল করে নি। শিফা ওর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল।তবে পারল না। শিফা ইশারায় ওকে আসতে নিষেধ করেছে। কারণ প্রশান্ত আর দিগন্তও আছে। ওরা দেখলে সন্দেহ করত। আর তমার পেছনে লোক লাগাত। তমাকে আর বিপদে ফেলতে চাচ্ছে না।
তনয়ের কম ক্ষতি ওরা করে নি। তবুও তমা মুখ ফিরিয়ে নেয় নি। অভিযোগও করে নি। বরং সে শিফার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সাফার মতো বান্ধবী হয়ে।

প্রশান্ত আস্তানায় এসেছে। এখানকার কথা কেউ জানে না। এটা ওর একান্ত আস্তানা। জায়গাটা কেমন জানি। ভুতুরে পরিবেশ। প্রশান্তর পাপকর্ম গুলো এখানেই করা হয়। ওর পাপকর্মের স্বাক্ষীও এই জায়গাটা। প্রশান্ত, শিফার মামার কঙ্কালের দিকে তাকিয়ে বিশ্রী একটা গালি দিলো। তারপর বলল,

-‘তোর ভাগ্নীর শরীরে খুব তেজ। শরীরের ভাঁজে ভাঁজে তেজ জমিয়েছে। ব্যাপার না, আমি পরখ করে নিবো। ওর তেজযুক্ত নগ্ন শরীরে চোখ আর হাত বুলিয়ে দেখব ;ওর তেজের পরিমাণটা ঠিক কতখানি।’

কথাটা বলে প্রশান্ত বিশ্রীভাবে হাসল। শিফার মামাকে সেই মেরেছে। তাও নিজের অাস্তানায়।
তারপর রয়েল হসপিটাল দিগন্তের নামে দলিলও
করিয়েছিল। যাতে কেস খেলে দিগন্ত খায়। কিন্তু দিগন্ত ঢের ধূর্ত। পরে, সব ঝামেলাগুলো মিটিয়ে ফেলেছিল। টাকা আর ওর তীক্ষ্ণ বুদ্ধির জোরে।
আর তখন থেকেই হসপিটাল তার নামেই রয়ে গেছে।

প্রশান্ত ওর সহকারীকে ডেকে কিছু বুঝিয়ে বলল। সে আপাতত হসপিটালে যাচ্ছে। এসে যেন দেখে কাজ হয়ে গেছে। নয়তো সহকারীকে কঙ্কাল করে ঝুলিয়ে রাখবে। আস্তানা ভর্তি কঙ্কাল।চারদিকে
ঝুলিয়েও রাখা। মৃদু বাতাসে নড়ছেও। ভয়ংকর লাগছে দেখতে। যাদেরকে অপছন্দ তাদেরকে সে কঙ্কাল করে। ওদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই।
ওরা ঝামেলা। মানুষ মারার চেয়ে সহজ কাজও আর নেই। মারতেও বেশ লাগে। হাত-পা বেঁধে এসিডের কূপে ফেলে দেয়। ব্যস, হয়ে গেল। মৃত
লাশ নিয়ে ঝামেলা নাই। আগে লাশ নিয়ে খুব বেশি ঝামেলা হতো। তাই কোটি টাকা খরচ করে এসিডের কূপ তৈরি করেছে। তবে এসিড দেখতে যতটা সাধারণ কাজটা কিন্তু অসাধারণ। কয়েক সেকেন্ডেই ঝলসে ফেলে। এই কাজটা ওর বাবার থেকে শিখেছে। ওদের বাসার পাতালঘরেও ওর বাবা তাই করতেন। ব্যবসা এমনি এমনি বড় হয় নি। তাও এত অল্প সময়ে। এজন্য অনেক মানুষ মারতে হয়েছে। প্রশান্তের বাবা ভদ্রলোকের বেশে থাকেন। অথচ উনার জন্যও মেয়ে আসে। উনি নিহার সঙ্গেও সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছে। নিহাও রাজি ছিল। টাকা পেলে বুড়ো আর যুবক সব সমান।
পুরুষ তো পুরুষই! এমনকি, নিহা সাফার সঙ্গে লিপ্ত হতেও সাহায্য করেছিল। তাও অনেকবার।
প্রশান্তর কাজ সেরে চলে যেতো। তখন ওর বাবা আসতেন। অবচেতন সাফা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকত। এসবের বিনিময়ে নিহা টাকাও পেতো।
আর উনি এই বয়সেও যৌবনপূর্ণ শরীরের মজা লুটতেন। নিহা কিংবা দিগন্তের মা’ও কিছু মনে করতে না। ওই পরিবারে এসব সাধারণ ব্যাপার।
বরং হাসি-ঠাট্টা করে খিলখিল করে হাসতেন আর বলতেন,
-‘দম শেষ? বাপ্রে, তা আর লাগবে?’
-‘রাতে লাগবে ডালিং, তোমরা দু’জনই এসো।’

উনার একথা শুনে নিহা ও দিগন্তের আম্মু হেসে গড়িয়ে পড়তেন। যেন খুবই মজার কথা। মস্তিষ্ক বিকলাঙ্গদের বিবেকবোধ থাকে না। এরাও তাই।

রাত তখন দুইটা সাত। স্বপ্নীলের সামনে দিগন্ত বসে আছে। স্বপ্নীল তিনদিন কিছু খায় নি।তাকে জোর করেও খাওয়ানোও যায় নি। তার একটাই কথা, ছেড়ে দাও নয়তো মেরে দাও। দিগন্ত রেগে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটাকে মেরে দিতে মন চাচ্ছে। এরা সবাই প্যারা। মার খেয়েও খেতে রাজি হচ্ছে না। এটাও শিফার মতো ঘাড়ত্যাড়া।
এতদিন স্বপ্নীল দিগন্তের কাছে ছিল। তাও সুখুর বাড়িতে। নির্জন জায়গায়।এজন্য শিফা পুনরায় দিগন্তের পিছনে লোক লাগিয়েছিল। তবুও কিছু জানতে পারে নি। স্বপ্নীল চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় কাতরাচ্ছে। সুখু ওকে প্রচন্ড মেরেছে। হকিস্টিক দিয়ে। দিগন্ত সিগারেটে সুখ টান দিয়ে বলল,

-‘ভাই, তোর প্রেমিকা আর ভার্জিন নেই। আমি
এই পূর্ণের কাজটা করে ফেলেছি। এই কিছুক্ষণ আগেও খুব আদর দিয়ে আসলাম। উফ, শরীর তো নয় যেন মাখন। কেঁদে মিনতি করে ছাড়তে বলছিল। ছাড়ি নি। বরং যতটা কষ্ট দেওয়া যায়
দিয়েছি।’

স্বপ্নীল দু’চোখ বন্ধ করে নিলো। শুনতে পারছে না আর! বুকের ভেতরে খুব জ্বালাপোড়া করছে।
অদৃশ্য রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ওর শিফা ভালো নেই।
একটুও না, এক কিঞ্চিৎও না। সেও দগ্ধ হচ্ছে।
এসব ভেবে স্বপ্নীলের চোখের কোণা বেয়ে অশ্রু ঝরছে। একই বাক্য, হৃদয় জ্বলছে বিধায় দু’চোখ কাঁদছে। আর স্বপ্নীলের চোখে অশ্রু দেখে দিগন্ত হাসছে।

To be continue………..!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here