রাত_যখন_গভীর Season:02,Part :02,03

0
1665

রাত_যখন_গভীর Season:02,Part :02,03
জান্নাতুল_মাওয়া_মহুয়া
Part :02

অপর প্রান্ত থেকে কল কেটে গেছে। কামাল পাশে তাকাতেই দেখে,রাবেয়া অট্টহাসিতে হেসে দেয়।রাবেয়ার হাসিটা খুব অদ্ভুত লাগছে। এই হাসি যেন খুব রহস্যময়ী।

কামাল চিন্তায় পড়ে যায়। কারণ একজন মায়ের কাছে তার সন্তান অমূল্য রত্মের মতো।সন্তানের কোন বিপদ হলে মায়ের মনে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়।তাছাড়া আজ ৮ দিন হলো রিনির কোন খুঁজ নেয়। পুলিশ যে খবর দিলো মনে হচ্ছে কোন খারাপ খবর! যেখানে খারাপ খবর পাওয়ার আশঙ্কা আছে। সেখানে রাবেয়ার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ার কথা? কিন্তু একি দেখছে কামাল!রাবেয়া অট্টহাসি যেন থাকছে না।
কিন্তু রাবেয়া অট্টহাসি দিচ্ছে কেন?

কি হতে চলছে রাবেয়ার সাথে। কামালের আজ বড্ড অচেনা মনে হচ্ছে এই রাবেয়া কে।তাদের এত বছরের সংসারে রাবেয়ার এই রুপ আজ প্রথম দেখছে।কেমন যেন অদ্ভুত আচরণ করেছে পুলিশের কল কেটে দেওয়ার সাথে সাথে। কামালের মনে হচ্ছে, মৃত মেয়ের দেহটা রিনির বলে অনুমান করছে পুলিশ। তবে এ কথা শুনে রাবেয়া অনেক খুশি। কিন্তু কেন?যদি সত্যি সত্যি ওইটা রিনি হয়?কামাল মরে যাবে। তার রাজকুমারী কে ছাড়া। নিখুঁজ থাকলে একটা সম্ভাবনা থাকে কোন সময় হয়তো ফিরে পবে!বা নিজে ফিরে আসবে তাদের রিনি।কিন্তু
পরপারে পাড়ি জমালে তো কখনো আর ফিরবে না।

কামাল আর কিছু ভাবতেই পারছে না। আবার লক্ষ্য করে রাবেয়ার দিকে। তবে রাবেয়া এখন কান্না করছে। কামাল চিন্তা করে কোন কোল পাচ্ছে না?
কি হয়েছে রাবেয়ার?

কামাল বলেঃ একটা মানুষ এখন হেসে আবার এখন কেমনে কান্না করে?অদ্ভুত

আগে কি অপেক্ষা করছে রাবেয়া ও কামালের জন্য ?

কামাল বলেঃ মেয়ে কে হারিয়ে জীবন অর্ধেক বিনষ্ট হয়েছে। তাহলে কি এখন সহধর্মিণীর ও কোন বিপদ ? এই কথা ভাবতেই কামালের বামপাশে চিনচিন ব্যাথা শুরু করছে।

কামাল বলেঃরাবেয়া এমন করছো কেন?কি হয়েছে? প্রথমে হাসলে এখন কান্না করছো?কি বুঝাই তে চাইছো?নাকি ঢং করছো?

রাবেয়া কিছু বলে না।কান্না থামিয়ে তাকিয়ে আছে কামালের দিকে।এক দৃষ্টি তে।এ দৃষ্টি যেন কামাল কে কিছু বুঝাতে চাচ্ছে।

কামাল বলেঃ পৃথিবীতে সবচেয়ে কষ্টের ব্যাপার হচ্ছে কি জানো রাবেয়া?
সেটা হচ্ছে নীরবতা পালন করা।উত্তর দিবে না এই তো?তাকো চুপ করে।
হঠাৎ,

একথা বলে ১ মিনিট পার হতে না হতেই,
কামাল মাথা ঘুরে পড়ে যায়।

প্রিন্স(ইনতিয়াজ) চোখ জোড়া খুলে দেখে। সে সাগরের অতলে পড়ে আছে।উত্তাল সমুদ্র এখন নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।
সমুদ্র দেখে বুঝার উপায় নেই। কি ভয়ংকর প্রলয়ের সৃষ্টি হয়েছিল।

প্রিন্স সাগরের নিচের দৃশ্য দেখছে। রকমারি মাছ সাথে বিভিন্ন ধরনের লতা, পতা।অসম্ভব সুন্দর লাগছে।

কিছু কিছু ছোট ছোট মাছ।বিভিন্ন রঙের। জড়ো হয়ে আছে প্রিন্সের বোতলের আসে পাশে।

প্রিন্স বলেঃ
বোতলের ভিতর থেকে এত সুন্দর লাগছে,
না জানি বাস্তব রূপে দেখলে কতো সুন্দর হতো এই সাগর তলের ভিতর!!?

এমন সময় প্রিন্স লক্ষ্য করে, একটা বড় মাছ প্রিন্সের বোতলের দিকে এগিয়ে আসছে তিব্র গতিতে। প্রিন্স এ দেখে হতভম্ব হয়ে যাই।

প্রিন্স কিছু করতেও পারছেনা।মাছ টাকে বোতলের কাছে আসা থেকে বিরত করতে পারছেনা। কারণ বোতল বন্দী অবস্থায় প্রিন্সের কোন জাদু কাজে আসবে না।

প্রিন্স বলেঃ মাছের এগিয়ে আসা দেখে মনে হচ্ছে মাছ ব্যাটা,আমাকে সহ বোতল টা পেটে চালান করতে আসছে ।
আমি বাকি জীবন এই মাছের পেটে কাটাতে চাইনা।

প্রিন্স বোতল বন্দী থাকলেও প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য দেখতে পেরে তার ভালোই লাগছিল।বন্দী হয়ে তার কোন আপসোস নেই। তার প্রতিশোধের শাস্তি এটা।সে মেনে নিয়েছে। এমনি নিয়ম এটাই নিয়তি। তার বোন শাম্মি বলেছিল, জীবনে ভুল করলে,জীবন তার আপন নিয়মে ঠিকই শাস্তি দিয়ে দেয়।কথায় আছে না” মাপ তার বাপ কে ও ছাড়ে না”।

তবে প্রিন্স একদম চাইনা ওই মাছের পেটে তার আস্তানা হোক । মাছ যে গতি তে বোতলের দিকে এগিয়ে আসছে দেখে বুঝতে পারা যাচ্ছে মাছ ব্যাটা এক বারে পুরো বোতল নিজের মুখে চালান করবে?

কি হতে চলছে প্রিন্সের সাথে? তাহলে কি সত্যি প্রিন্সের বাকী জীবন মাছের পেটে কাটাতে হবে?? রিনির সাথে তার একটা বার দেখা করার ইচ্ছে কি ইচ্ছেই থেকে যাবে?????

হাবিব বারবার চেষ্টা করছে তার স্ফটিক দিয়ে রিনি কোথায় আছে? কোন অবস্থায় আছে? সেটা অনুসন্ধান করার চেষ্টা চালাচ্ছে ।
কিন্তু বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।তবে স্ফটিক বেশি নাড়াচাড়া করার ফলে আগের কিছু ভিউ ফুটে উঠছে।স্ফটিক তো অতীত দেখায়।তাই স্ফটিকে বেশি বল প্রয়োগ হওয়াতে অতীত তে অল্প অল্প প্রচ্ছদ দেখাচ্ছে। হাবিব ও হেল্প লেস। বাধ্য হয়ে তাকিয়ে আছে।অসহায় দৃষ্টিতে স্ফটিক এর দিকে ।

এমন সময় হাবিব দেখে স্ফটিকের মাঝে হঠাৎ করে শাম্মির একটা ভিউ /চিত্র ভেসে উঠে।এই টা সেদিন মহু,সুমি,অর্ক,রাহাত হুজুর, লাবু,কামাল কে দেখিয়ে ছিল হাবিব।

হাবিব সেদিন শাম্মি কে প্রথম দেখায় মন মন্দিরে ছোট একটা জায়গায় আসন দিয়ে ফেলে এই অপসারী কে।তবে অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করে।

প্রেমে পরার মতো অবস্থা আরকি ?

।হাবিব চাইছে অপসারীর সাথে আবার দেখা হোক।কিন্তু এটা কি সম্ভব?

হাবিব বলেঃ যত দেখি তত মনে হয় কম দেখি তাকে।হাবিবের মনে হচ্ছে শাম্মির কোন এক মায়া আছে। না হলে কেন এত মনে নাড়া দিচ্ছে।তার স্মৃতি ।

হুহ মায়া জিনিস টা আসলেই মারাত্মক। তবে চেহারার মায়ার চেয়ে কথার মায়া আরও বেশি মারাত্মক।

হাবিব শুধু শাম্মির রুপে নই। তার কথার মায়ার মধ্যে ও পড়ে গেছে।যেদিন প্রথম দেখা হয়েছে এর পর প্রতি রাতে স্বপ্নে শুধু শাম্মি থাকে।প্রতিটা মূহুর্তে শাম্মির সেদিনের বলা কথা গুলো কানে এলার্ম এর মতো টুনটুন করে।

ইস মেয়েটার কথায় ও অনেক মায়া।হাবিব তার কল্পনার মধ্যে ডুবে আছে।

হঠাৎ হাবিব শুনতে পাই,পাশের বাসার আয়ান একটা ছড়া কাটছে।

আয়ানের ছড়ার শব্দে হাবিব বাস্তবে ফিরে আসে। আয়ান হচ্ছে হাবিব এর প্রতীবেশি।অসম্ভব মিষ্টি একটা ছেলে।বয়স বেশি না ৮ বছর। শখের বসে কবিতা লিখে। তবে খুব সুন্দর করে আবৃত্তি করতে পারে।
আয়নের ছড়াটা ছিলো,

,,,,, কুয়াশা ভরা সকালে পুষ্প
,,হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আমি
নীল পরী রুপে হয়তো সামনে
,,,,এসে দাঁড়াবে তুমি
সব ভালবাসা প্রকাশ করতে, না পারলেও
তোমাতেই বিভোর হব আমি
তুমি কোন অদৃশ্য মায়ার,
পাহাড় সমান ছায়া,
চাইলেও পারিনা ছাড়তে
তোমার মায়া
কবিতা লেখকঃ(বিজয়)

হাবিব এক মনে কবিতা শুনছিল।
হাবিব বলেঃ আসলেই নীল পরী রুপে সামনে এসেছিল শাম্মি সেদিন। নীল শাড়ি। ইস!

হাবিবের অবশ্য নীল রঙ অনেক প্রিয় ।তার প্রিয় রংয়ের শাড়ি তে এক অপসারী কে দেখে মুগ্ধ হয়ে যাওয়া ব্যাপার টা স্বাভাবিক।

তবে,
হাবিবের এখন শাম্মির জন্য ২ লাইন কিছু বলতে মন চাইছে। অনেক ভেবে হাবিব বলেঃ
tumhein hazar baar
dekh kar
Bhi dil nahi bharta
Har baar lagta hai
Ek baar aur?
Writer :(mohoua)

আসলেই সেদিন দেখে মন ভরেনি হাবিবের। তাই স্ফটিক থেকে সেই অপসারীর মুখখানা মোবাইলে ক্যামেরা বন্দী করে হাবিব।তারপর,
আবার ডুব দেয় শাম্মির স্মৃতির মায়াজালে।হাবিব এর আজকাল এটা একটা প্রিয় কাজ হয়ে গেছে। যখন তখন শাম্মির কথা ভাবা?

এই রাহাত উঠে পড়ো?আর কতক্ষণ ঘুমাবে?রাতে জেগে থাকবে।নামাজ টা পড়ে যে ঘুম দাও একদম ঘুম ভাঙ্গে তোমার দুপুরে।

রাহাত হুজুর বলেঃ আহা!রেশমি।বিরক্ত কর না।আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করছি।তাই রাতে ঘুমাইনা।

এতক্ষণ চলছিল রাহাত হুজুর ও তার বউ রেশমির কথোপকথন।

রাহাত হুজুরের মিষ্টি বউটা তার ঘুম নষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগেছে।

রেশমি বলেঃ উঠবে নাকি বল??
নাকি পানি দিবো?

এককথা শুনে রাহাত হুজুর তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে যাই।

ঠিক সেই মুহূর্তে, রেশমি মাথা ঘুরে পড়তে যাচ্ছিলো।রাহাত হুজুর তার বাহুতে টেনে নিয়ে আসে তার মিষ্টি বউটাকে।কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার রেশমীর চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে গেছে।

রাহাত হুজুরঃবউ ও বউ,উঠ প্লিজ।কি হয়েছে?
রেশমি আমার চিন্তা হচ্ছে কিন্তু।

রাহাত হুজুর ডেকেই চলছে রেশমি কে কিন্তু রেশমির কোন সাড়াশব্দ নেই। রাহাত হুজুর কান্না করছে।

রেশমি তুমি সবাই কে খুশি রাখার চেষ্টা করতে করতে, নিজের জীবন থেকেই খুশি কবে চলে গেছে বুঝতে পারনি।

আমি এতটা কেয়ারলেস কেমনে হলাম।তোমার জীবনে খুশির ঠিকানা আমি। আমি যখন তোমার যত্ন নেই তুমি বল, দুনিয়াতে আমার দেয়া শ্রেষ্ঠ উপহার হচ্ছে আমার তোমার প্রতি যত্ম নেয়া?

।তবে আমার কাজের চাপে তোমার খুশি আমি ঠোঁটে বজায় রাখতে পারিনি।সরি প্রিয়।।

চোখ জোড়া অশ্রু সিক্ত হয়ে গেছে রাহাত হুজুরের।ছেলে রা সহজে কান্না করে না।তবে মনে গহীনে তীব্র আঘাত পেয়ে আহত হলে।কষ্ট টা কান্না হয়ে বের হয়ে যাই।

রাহাত হুজুর বলেঃ রেশমি কথা দিচ্ছি।আমার যতই কাজ থাকুক না কেন!
তোমাকে আমি সময় দিব।এমন ভুল আর হবে না।প্লিজ চোখ জোড়া খুল।

রাহাত হুজুরের কান্না তে রাহাত হুজুর এর মা আসে রুমে। সাথে সাথে চেচামেচি শুনে অর্ক আসে।লাবু বাবার বাড়ি গেছে আজ সকালে। তবে অর্ক, তার প্রিয়তমা কে সকাল থেকে মিস করছে।আসলে পৃথিবীতে সব চেয়ে বেশি যন্ত্রণা দায়ক কষ্ট হলো কাউকে miss করা।

অর্কের ঘুর কাটে রাহাত হুজুর এর ডাকে।
অর্ক দেখ না আমার রেশমির কি হলো????
অর্ক বলেঃদেখি সর।
অর্ক রেশমির শ্বাস ভালো ভাবে চলছে নাকি দেখছে। আর হার্ডবিট কেমন চেক করে দেখে।

অর্ক বলেঃ হাসপাতালে চল
তবে ভাবীর নরমাল মাথা ঘুরছে। তাও নিশ্চিত করতে ডাক্তারের কাছে চল।তবে?

রাহাত হুজুর বলেঃ তবে কি?

অর্ক বলেঃ মনে হচ্ছে এর পিছনে অদৃশ্য কিছুর হাত আছে।অদৃশ্য জিনিস টা মারাত্মক ভাবে ক্ষতি করতে চেয়েছে।তুমি পাশে ছিলেন বলে পারেনি হয়তো।

রাহাত হুজুর বলেঃ কি বলছো অর্ক?
কে সে?
কি চাই?

কি হচ্ছে সবার সাথে?
একের পর এক অদ্ভুত ঘটনার সামনে পড়ছে সবাই?

কি মহা তান্ডব শুরু হতে চলছে তাদের সবার জীবনে?

চলবে……

রাত_যখন_গভীর
জান্নাতুল_মাওয়া_মহুয়া
Season:02
Part :03

কি হচ্ছে সবার সাথে?
একের পর এক অদ্ভুত ঘটনার সামনে পড়ছে সবাই?

কি মহা তান্ডব শুরু হতে চলছে তাদের সবার জীবনে?

মুগ্ধ বলেঃ ভালবাসি জান্নাত অনেক।

জান্নাত বলেঃ I’m sorry. আমি এই বিষয়ে কিছু করতে বা বলতে পারবো না।বরাবর বলতে পারেন, ইচ্ছুক নই।
তাছাড়া আপনি ভালো কাউকে পাওয়ার যোগ্য।
i’m not a perfect girl or life partner for u mister mogdu.

মুগ্ধ বলেঃ
আসলে কেউ কারো জন্য পারফেক্ট হয়ে জন্ম নেয় না।
পারফেক্ট করে নিতে হয় ভালবেসে।
আমি না হয় ভালবাসা দিয়ে সব পারফেক্ট করে দিবো!

আজ প্রায় ১ বছর ধরে মুগ্ধ জান্নাত কে ভালবাসি ভালবাসি বলেই যাচ্ছে বরাবরই একি উত্তর।সেবার অর্কের বাসায় যাওয়া তে খুঁজে না পেয়ে পাগলের মতো মোবাইলে কল দিয়ে গেছে। সুমির মোবাইল ও চেষ্টা করেছে।কিন্তু দু’জন এর মোবাইল অফ করে রাখে মহু।
কি হবে এই অপেক্ষ মান ভালবাসার! মুগ্ধের ১বছর অপেক্ষা কি পূর্ণতা পাবে??

কামাল যখন চোখ জোড়া খুলে দেখে। তখন সে নিজেকে আবিষ্কার করে। সে হাসপাতালের বেডের মধ্যে শুয়ে আছে।সকালের রৌদ্র এসে পড়েছে কামালের উপর।
রাবেয়া তার অশ্রুসিক্ত টলটল করা আঁখি নিয়ে চেয়ে আছে কামালের দিকে।কামাল বেশ বুঝতে পারছে,বড্ড কান্না করেছে।

কামাল নিরবতা ভেঙ্গে বলে উঠেঃআচ্ছা,রাবেয়া তোমার সাথে পরশু দিন অদ্ভুত কিছু হয়েছে না কি মনে করে দেখো?
এমন কিছু যা সচরাচর চোখে পড়ে না বা সবার সাথে ঘটে না।
তোমার কাছে কি এমন কোন কিছু নজরে পড়েছে???

রাবেয়া বলেঃপরশু দিন,আমি মধ্য সকালে,অর্থ্যাৎ সকাল ঠিক ১২ টায়।ছাদে গিয়েছিলাম। ছাদে গিয়ে দেখি কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। লম্বা চুল,পরনে শাড়ী, মার্জিত ঘটন।মুখ দেখা যাচ্ছিলো না।
আমি এগিয়ে যায়, তার দিকে কে দেখার জন্য। কারণ আমাদের ছাদে অপরিচিত কেউ উঠার তো রাস্তা নেই। ছাদে উঠতে গেলে ঘরের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। তাই আমি,
ওনি কে তা জানতে এগিয়ে গেলাম!
মনে মধ্যে অজানা ভয় কাজ করছিল। সূর্য একদম মাথার উপর। তবু ভয় আর সংশয় তোয়াক্কা না করে আমি সামনে যেতে লাগলাম।

কিন্তু যখন আমি অনেকটা কাছে চলে আসি।মেয়ে টা মুখ ফেরাচ্ছে,
তখন হঠাৎ করে আমি মাথা ঘুরে পরে যায় ছাদে।
যখন সেন্স ফিরে তখন,
চোখ খোলে দেখি।কেউ ছিলনা।
সে মেয়ে টা ও নেই। তখন আমার মনে হচ্ছিলো,আমার মাঝে কোন এক দ্বিতীয় সত্তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে।
আমি নর্মালি ছাদ থেকে নেমে রান্না করে ফেলি।রান্নার সময় আগুন জ্বালাতে কেমন জানি লাগছিল। আগুন কে আমার ভয় লাগছিল। কেন তা জানি না!!!
সেদিন থেকে ওয়াশরুমে গেছি গনগন।
কেন জানি ওয়াশরুমে থাকতে অনেক ভালো লাগছিল। আমার প্রিয় জায়গা মনে হচ্ছিল ওয়াশরুম।
তাই কারণে অকারণে,
ওয়াশরুমে যাচ্ছি লাম।
আর এখন ও যায়।

সেদিন বাড়িতে রাখা সব মিষ্টি জাতীয় জিনিস আমি খেয়ে ফেলি।কেন জানি আমার খুব মজা লাগছিল।খুব পছন্দের জিনিস হয়ে যাই ।

কামাল বুঝতে পারে, There’s something wrong.

কামাল বলেঃতোমার না মিষ্টি পছন্দ নই?

রাবেয়া বলেঃকে বলছে?
আমার অনেক পছন্দ তুমি জানো না যে।

কামালের স্পষ্ট জানা আছে। রাবেয়া একদম মিষ্টি খাইনা।মিষ্টি ডিজার্ট কেউ জোর করলে রাবেয়া খুব অল্প একটু খাই।

কামাল বলেঃ রাবেয়া,
তা এখন তুমি সব কেমনে আমাকে বলছো?সেই সত্ত্বা কি তোমাকে এখন ছেড়ে দিছে?
কেমনে ছেড়ে গেল?আর তুমি এতো নিশ্চিত কেমনে হতে পারলে? তোমার মাঝে থাকা দ্বৈত সত্তার সম্পর্কে???

রাবেয়া দ্বৈত স্বরে বলে উঠেঃ হা হাহাহা। কেডা বলছে তুরে আমি চলে গেছি?কাউকে ছাড়বো না।তোদের সবাই কে দেখে নিবো।

এমন সময় রাবেয়া কামালের বেডের কাছে চলে আসে। আচমকা রাবেয়া কামালের গলা টিপে মেরে ফেলতে চেষ্টা করছে। তবে রাবেয়ার হাত কাপছে। কান্না করছে। তবে আবার অট্টহাসি
তে হেসে উঠছে।

দ্বৈত সত্ত্বা ও রাবেয়ার মধ্যে চলছে এক তুমুল যুদ্ধ। রাবেয়া চেষ্টা করছে মারতে?
পরক্ষণেই আবার ছেড়ে দিচ্ছে। এ যেন এক দুটানা পরিস্থিতি।

কামালের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে পৃথিবীতে এটা তার শেষ দিন।মেয়ে টার সাথে আর দেখা পাবে না।কম চেষ্টা তো করেনি মেয়েটাকে খোঁজার।সেদিন যে কেমনে গায়েব হয়ে গেছে আজও রহস্য।

কামাল এর আফসোস হচ্ছে,
ইস।সেদিন যদি রাবেয়া, রিনি কে ঘুরতে যেতে না দিতো।তাদের সাথে এমন কিছু হতো না। আফসুস।ভাগ্যের লিখন হয়তো এমন ছিল।

তখনই হাসপাতালের রুমে টুকা দেয়। রাবেয়া যেন হুঁশ ফিরে পেল। দরজা খুলে প্রবেশ করে জান্নাত ও সুমি।

সালাম ভাবি,
বলে।দু’জনে রুমে প্রবেশ করতে যাবে। এমন সময় । সুমি প্রবেশ করতে গিয়ে কেন জানি অদ্ভুত লাগছিল তার।

সুমি বলেঃ জান্নাত আমার অদ্ভুত লাগছে। মনে হচ্ছে রুমে কিছু আছে।

জান্নাত বলেঃ তোর কি মনে হচ্ছে এখানে ভুতপ্রেত আছে। ঢং করিস না।সবসময় এগুলো চিন্তা করস।তাই এমন হচ্ছে।
চল চল।
এরা কি মনে করবে, এইভাবে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকলে।

রুমে প্রবেশ করে,

সুমি বলেঃ উঠে। কি অবস্থা তুর?

কামাল বলেঃএখন ভালো। তবে তোরা কেমনে জানছিস?

সুমি বলেঃ আধুনিক যুগে কোন খবর পাওয়া। কোন জটিল কিছু না।।জানিস না নাকি।

জান্নাত বলেঃকামাল জানিস,
সেদিন বাসায় ফিরে আসার পর থেকে ,
রিনির চিন্তায় ঘুমাতে পারি না মেয়ে টা যে কই?
কোন খবর কি আছে?

কামাল একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে দেয়।

কামাল বলেঃ আমার সাথে এক জায়গায় যাবি।

জান্নাত ও সুমি জিজ্ঞেসো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

অন্য দিকে রাবেয়া নিস্তেজ হয়ে বসে আছে। তবে জান্নাত এবং সুমি, রাবেয়া যে কামাল কে গলা টিপে মেরে ফেলার চেষ্টা করছিল।সে দৃশ্য টা দেখেনি।রাবেয়া খুব সুন্দর করে সামলে নেই ।

কামাল মনে মনে চিন্তা করেঃ
আচ্ছা, রাবেয়ার মধ্যে বাস করা দ্বিতীয় সত্ত্বা টা কে?
কেন সে বারবার আমার উপর হামলার চেষ্টা করছে?

এসব প্রশ্নের কোন উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না কামাল।
কামাল তাই প্রথমে সিদ্ধান্ত নিল মর্গে যাবে।
তাই জান্নাত ,সুমির উদ্দেশ্য করে।

কামাল বলেঃ পুলিশ কল দিছিলো।তারা একটা মেয়ের লাশ উদ্ধার করছে। ওই দিন রিনি যে কাপড় পড়ে ছিল। পুলিশের মতে সে মেয়ে টার পোশাক ও এক।মর্গে গিয়ে আমাকে নিশ্চিত করতে বলেছেন ওনারা।যে
লাশটা উদ্ধার করছে,সেটা আমার রিনির নাকি???

কামালের চোখে অশ্রু চকচক করছে। জান্নাত এবং সুমি রাজি হয়ে যাই। কামাল কে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়। তার ছোট একটা হার্ট অ্যাটাক
হয়ে ছিল। এখন বিপদ মুক্ত।

সবাই এখন মর্গের সামনে। কামাল ভিতরে প্রবেশ করে। ডাক্তার তাদের কে লাশের পাশে নিয়ে গেল।

কামাল মেয়ে টাকে দেখে,তবে মুখ টা বুঝা সম্ভব হচ্ছে না।মুখটা একদম তেতলে গেছে। তবে পরণের কাপড় টা রিনির।এটা চিনতে কামালের ভুল হচ্ছে না।কামাল লাশটা কে ভালো করে দেখে।

তখন,
কামাল বলেঃ নাহ।এটা আমার মেয়ে না।আমার মেয়ের বাম হাতে একটা তিল আছে। ডান পায়ের তালুতে একটা তিল আছে। আমার মেয়ের চুল অনেক বেশি। এসব এই মেয়ে টার মধ্যে নেই।

একথা শুনে রাবেয়ার মুখ রাগে লাল হয়ে গেছে। এই বিষয় সুমি লক্ষ্য করে।

এরপর সবাই বেরিয়ে আসে। একটা হোটেলে বসে নাস্তা করার উদ্দেশ্যে।

সুমি বলেঃ কামাল,চল তো মেনু তে কি আছে দেখে আসি?

কামাল বলেঃ মেনু কার্ট এখন দিবে তো।

সুমি বলেঃ ওরা কখন দিবে।আমরা যায়।

দুজনে যাচ্ছে। কিছুদূর গিয়ে।

সুমি বলেঃ কামাল,i think,there’s something wrong
.and it’s happening with your wife.
আমি প্যারানরমাল কিছুর অস্তিত্ব টের পাচ্ছি।

কামাল বলেঃ কাল থেকে এমন হচ্ছে। আরেকটা জিনিস কি জানিস, ও ওয়াশরুমে গিয়ে ঘন্টা খানিক পরে বেরিয়ে আসে। তোরা আসার আগে আমাকে মারার চেষ্টা করেছে। এসব,
কি হচ্ছে?
কেন হচ্ছে এমন!
কে করছে?কি দোষ এতে আমাদের?
কিছু বুঝতে পারছিনারে মিসু।

সুমিকে সবাই মাঝে মধ্যে মিসু বলে ডাকে।

কামাল ও সুমি,খাবার
অর্ডার দিয়ে ফেলে। সবাই নাস্তা করছে।তবে সবার মাঝে অদ্ভুত করে খাবার খাচ্ছে রাবেয়া। হাড্ডি জাতীয় খাবার গুলো বেশি খাচ্ছে। মিষ্টি গুলো তো টপাটপ মুখে দিয়ে দিচ্ছে।

হাবিব তার কল্পনা জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে।তবে রিসেন্টলি চেষ্টা করে, শাম্মি কে কম চিন্তা করতে।
এখন সে খুব মনোযোগ দিচ্ছে কাজে।
কারণ এখন মন দিয়ে কাজ করতে হবে। আজ পুরো,১ মাস হলো, রিনি নিখোঁজ। পুলিশ ও কোন কিছু করতে পারছেনা।তাই হাবিব দিন রাত এক করে রিনির খুঁজ চালাচ্ছে। তবে হাবিব কাল রাতে ওয়াশরুমের আয়নায় কাকে জানি দেখেছে?
সে এই বিষয় টা মনে ভুল ভেবে এড়িয়ে গেল।

হাবিব স্ফটিক নিয়ে বসে পড়ে।অনেক চেষ্টার পর হঠাৎ স্ফটিকের মাঝে এমন কিছু দেখতে পাবে কল্পনা করেনি হাবিব!
দীর্ঘ একমাস চেষ্টার ফল পেল সে।

অর্ক, রাহাত হুজুর চিন্তার যেন শেষ নেই।এসব কি হচ্ছে?

রেশমীর অসুখকের কথা শুনে, লাবু বাড়ি চলে আসে।
রেশমি কে ডাক্তার চেকআপ করে, সব টিক আছে বলে।

রাহাত হুজুর বলেঃ হঠাৎ, মাথা ঘুরে পড়ে গেলে কেন?

রেশমী বলেঃ তুমি শুয়া থেকে উঠে যখন যাচ্ছি লে।আমি বিছানায় আরেক টা তুমি দেখতে পেলাম।
আবার পাশে তাকাতেই তোমাকে দেখলাম। তবে বিছানায় বসে থাকা তুমিটা বড্ড রহস্য মাখা হাসি দিচ্ছিল।
এসব দেখে মাথাটা চক্কর দেয়।

অর্ক বলেঃ আচ্ছা ভাবি। আপনি আর লাবু থাকেন।রেস্ট নেন। আমদের একটু কাজ করতে হবে।

রাহাত হুজুর, অর্ক দুজনে চলে যায়। তাদের ওয়ার্কিং রুমে।

রাহাত হুজুর তার অনুগত জীনকে ডাক দেই। অর্ক মন্ত্র উচ্চারণ করে কি যেন দেখার চেষ্টা করছে।
একটু পর জিন এসে হাজির হয়ে যাই।

রাহাত হুজুর বলেঃ আজকে তোমার কিন্তু যেকোন মূল্যে আমাকে সাহায্য করতে হবে।

জিন বলেঃ আমি অবশ্যই চেষ্টা করবো।

রাহাত হুজুর বলেঃ আমাদের সাথে কেন এমন হচ্ছে?
আর রিনি কোথায়?
সে কি বেচে আছে!
রিনি কে কে নিয়ে গেছে?

জিন বলেঃ আপনার সব প্রশ্নের উত্তর আমি জানি না।অবশ্য কিছু যা জানি।তা বলে দিলে,আমার পরিবারের কেউ সুরক্ষিত থাকবে না।মাফ করবেন হুজুর।

রাহাত হুজুর বলেঃ সাহায্য কর।আমরা যে নিরুপাই।কামাল তার মেয়েকে খুঁজতে খুজতে পাগল প্রায়।

জিন বলেঃ রিনি যেদিন গায়েব হয়েছে। সেদিন অদ্ভুত কিছু কি দেখেছেন?
বা রিনি আশে পাশে কোন কিছু কি ছিল?

রাহাত হুজুর বলেঃ না তেমন কিছু ছিল না।
রিনি তো একা বেলকনির পাশে বসে ছিল।খোলা চুলে।নিশ্চুপ হয়ে।

জিন বলেঃ ভালো করে মনে করে দেখেন।এমন কিছু যা আপনি মনে করতে পারছেন না।

অর্ক এবার মন্ত্র উচ্চারণ বন্ধ করে দেয়। জিনের কথা শুনছে।

অর্ক অনেক্ক্ষণ ধরে চিন্তা করে বলেঃ সেদিন সব কাজ শেষ হয়ে যাই। আমরা সবাই আড্ডা দিচ্ছিলাম।
সেদিন মনে হচ্ছে একটা কালো বিড়াল দেখেছি।

রাহাত হুজুর বলেঃ আমিও তো দেখছিলাম।এটা এমন কি?

জিন বলেঃ বিড়াল টা গভীর ভাবে জড়িত রিনির হারিয়ে যাওয়াতে।
আর কিছু বলা সম্ভব নই।তবে আপনাদের বন্ধু যারা ছিল,সবাই কে এক জায়গায় নিয়ে আসেন।না হয় বড্ড বিপদ সামনে।
বাড়ির মহিলা দের সতর্ক ভাবে চলাচল করতে বলুন।ওদের উপর বিপদ আরও বেশি।

রাহাত হুজুর বলেঃ আমার বন্ধু দের সাথে ও তাহলে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটছে?তারা কি ঠিক আছে?

জিন বলেঃ হা হচ্ছে ।সবাই ভালো আছে। তবে,
আপনারা একসাথে থাকলে। এই রহস্য উদ্ধার করতে পারবেন।অতি সহজেই। একথাই বল ।

তবে খুব সম্ভব রিনি কে ও পেয়ে যাবেন।তবে…..

অর্ক বলেঃ তবে কি?

জিন বলেঃ তাড়াতাড়ি একসাথে একজায়গায় না থাকলে আপনারা ও আপনাদের বন্ধু গুলো!!
তাহলে বিপদে পড়বে অনেকে। এমনকি , আশংকা করা যায়, কারো কারো প্রাণ যেতে পারে।

অর্ক একথা শুনে আঁতকে উঠল। রাহাত হুজুর জিনকে বিদায় দেয়।

রাহাত হুজুর বলেঃ কালো বিড়াল?
একটা বিড়াল কেমনে আস্তো একটা মানুষকে অল্প সময়ের মধ্যে গায়েব করে?
প্রাণ কেন যাবে?
হাজার প্রশ্নের মাঝে কোন উত্তর নেই। পরদিন সকালে……

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here