রাত_যখন_গভীর Season:02,Part :16,17

0
1022

রাত_যখন_গভীর Season:02,Part :16,17
জান্নাতুল_মাওয়া_মহুয়া
Part :16

প্রিন্স এর উঠানের পাশে করে কদম ফুলের গাছ আছে। ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে, কদম ফুল এর মন মাতাল করা ঘ্রাণ, সামনে আছে প্রিন্স এর মন ঘায়েল করা বৃষ্টি বিলাসী।

প্রিন্স এখন অনেকটা কাছাকাছি আছে রিনির।এমন সময় প্রিন্স (ইনতিয়াজ) আলতো করে রিনির কোমরে স্পর্শ করে। রিনি একটু কেঁপে ওঠে। রিনি পিছনে ফিরে দেখে প্রিন্স(ইনতিয়াজ)।

প্রিন্স রিনির ঘাড়ে ঠোঁট জোড়া স্পর্শ করে দেয়। রিনি অবিরত কেঁপে চলছে। প্রিন্স তার হাত দিয়ে রিনির চুল গুলো খোপা করে দেয়।

প্রিন্স বলেঃ এ চুল আমাকে মাতাল করে দেয়। খোলা চুল, আর তোমার মায়াবী চাহুনি আমাকে অস্থির করে দেয় রিনি।তাই বলেছি চুল গুলো খোলা না রাখতে। আমি যে প্রতিশোধ এর নেশা তে ভুল কাজ করেছি। চাইছিনা এমন কিছু আবার হোক।
তবে এমন কিছু হবে তোমাকে হালাল ভাবে অর্জন করার পর।

এমন সময়, প্রিন্স এর মুখ রিনির কানের কাছে নিয়ে গেল। প্রিন্স এর নিশ্বাস এসে লাগছে রিনির কাঁধে।প্রিন্স বলে উঠেঃ
“ঝুম বৃষ্টি,
মাতাল করা ফুলের ঘ্রাণ,
বৃষ্টিতে ভেজা,
লেপ্টে থাকা শাড়ি,
চোখের চেপ্টে যাওয়া কাজল,
চুল এর শেষ প্রান্তের জলের বিন্দু,
পাগল করে রে মায়াবতী ,
পাগল করে।
এ রূপ মারাত্মক বল ভয়ংকর বল।
হৃদয়ে সৃষ্টি করছে
নাম না জানা,
অন্য এক ঝড়।”
(কবিতাঃলেখিকা জান্নাতুল মাওয়া মহুয়া)

রিনির শরীর জুড়ে বিদ্যুৎ খেলে যাচ্ছে।একে তো বৃষ্টি তার উপর থেমে থেমে ঠান্ডা স্রোত। আর এখন প্রিন্স এর এমন আকষ্মিকভাবে স্পর্শ।

প্রিন্স রিনি কে ছেড়ে দেয়। প্রিন্স এর নজর গেল মাটিতে পড়ে থাকা একটা বস্তুর উপর।

প্রিন্স মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে যাই জিনিস টা কি ভালো ভাবে দেখতে লাগলো।

প্রিন্স বলেঃ আরে এটা তো রিনি তোমার নুপুর।
নাচানাচি করতে করতে ফেলে দিছো আরকি?

প্রিন্স নুপুর টা তুলে নেই। রিনির পা টা প্রিন্সের উরুর উপর রাখে।রিনির শরীর কাঁপুনি দিচ্ছে।রিনি কাতুকুতু ও লাগছে। প্রিন্স পা ধরেছে তাই।
প্রিন্স নুপুর টা রিনির পায়ে পড়িয়ে দিল।

এবার প্রিন্স দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে,
অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রিনির মুখে পড়া বৃষ্টির পানি গুলো দিকে।
সেই পানি গুলো রিনির গায়ে
খুব সুন্দর করে সমান তালে পড়ছে । বৃষ্টি ফোটা গুলো রিনির শরীর বেয়ে নেমে আসছে। বৃষ্টির পানিতে ভিজে রিনির সৌন্দর্য আরও দ্বিগুণ
বেড়ে গেছে।

প্রিন্স এভাবে কতক্ষণ তাকিয়ে ছিল সে জানে না।তবে বেশ কিছু সময় পর,

প্রিন্স বলেঃ রিনি চল।আর কতো ভিজবে? বেলা তো অনেক হয়েছে। রাত হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া, কাল না হয় পরশু আমাদের পৃথিবীতে যেতে হবে।যদি তোমার ঠান্ডা লেগে যাই তাহলে তো সমস্যা?

রিনি তো প্রিন্স এর কোন কথা শুনছে না।প্রিন্স তাই বাধ্য হয়ে রিনিকে কোলে তুলে নেই। রিনির শরীর থেকে টপটপ পানি পড়ছে। প্রিন্স বেচারা কাক ভেজা ভিজে গেছে।

এমন সময় রিনি বলেঃআন্না আমি যাবো না।আমি আরও ভিজবো।আ আ আ আ…….

প্রিন্স বলেঃ মেজাজ টা খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু এমন করলে।ভালো মত চুপচাপ হয়ে থাকো।এখন বাসায় ঢুকে যাবো।

রিনি বলেঃ তাহলে, ওই যে কদম ফুল এর ঘ্রাণ আসছে। আমার কদম ফুল চাই।আ আ আ আপনি ফুল নিয়ে দিন! আমি সত্যি আর ভিজবার বাইনা করবো না।প্লেজ।

প্রিন্স অসহায় দৃষ্টিতে রিনির দিকে তাকিয়ে আছে। বেচারার একদম বৃষ্টি পছন্দ না।তার উপর ভিজে একাকার হয়ে গেছে। প্রিন্স মনে মনে বলছেঃ এই মেয়ে যে খচ্চর। ফুল না নিয়ে দিলে জ্বালিয়ে ছাড়বে।

তাই প্রিন্স রিনিকে কোল থেকে নামিয়ে গাছে উঠে ফুল নেয়। রিনি খুশি হয়ে ফুল নিতে দৌড়ে প্রিন্স এর কাছে যাই।প্রিন্স খেয়াল করে নি রিনি এসেছে।কারণ রিনিকে বাসার দরজা তে রেখে এসেছিল।

প্রিন্স বেশ কিছু ফুল নিয়ে একটা লাফ দেয়। বাস খেল খাতাম।রিনির গায়ের উপর গিয়ে পড়লো প্রিন্স।

রিনি বলেঃ মা….. গু।
আমি যে মরে গেলাম। শেষ আমি আজকে।

প্রিন্স আশা করেনি এই পাগল টা এখানে চলে আসবে।তাই,প্রিন্স কেবলা কান্তের মতো ভেবলেষ হিনভাবে তাকিয়ে আছে রিনির দিকে।
প্রিন্স উঠে দাড়িয়ে যায়। রিনি উঠার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা।তাই,প্রিন্স,
রিনিকে আবার কোলে তুলে নেয়।

দুজনে বাসায় প্রবেশ করে। প্রিন্স ফ্রেশ হতে গেল।কিন্তু যাওয়ার আগে বলে গেছে, রিনি তুমি ও কাপড় টা পাল্টে নাও।তুমি যে রুমে ছিলে সে রুমে কাপড় রাখা আছে। প্রিন্স চলে গেল।

রিনি আছে নিজের তালে।
কে শুনে কার কথা।রিনি তো কদম ফুল গুলো পেয়ে মহা খুশি। ভিজে কাপড়ে বসে আছে। ফুল গুলো নিয়ে সুগন্ধি নিচ্ছে । এই ফুল গুলো বড্ড প্রিয় রিনির।

প্রিন্স এসে যখন দেখে রিনি এখনো বসে আছে। তার মেজাজ টা খারাপ হয়ে যায়।

প্রিন্স বলেঃ এই এখনো কাপড় না পাল্টে কি করছো ঠান্ডা লাগলে কি করবে?

রিনি কোন কথাতে পাত্তা দিল না।আপন মনে ফুল গুলো থেকে সুগন্ধি নিয়ে যাচ্ছে।
প্রিন্স এবার ধৈর্য হারিয়ে ফেলে। রিনিকে আবার কোলে তুলে নেই। রিনি চটফট করছে।নক দিয়ে আঁচড় ও দিছে।প্রিন্স তো নাছোড় বান্দা। এক ফোটা ও ছাড়লো না কোল থেকে। সিড়ি বেয়ে উঠতে লাগলো।

রিনি বলেঃ কি করছেন?
আবার কোলে নিলেন কেন?

প্রিন্স কোন উত্তর না দিয়ে। সোজা সিড়ি দিয়ে উপরে উঠেই চলছে ।মেইন ছাঁদে উঠে পড়ে।

প্রিন্স এর বাড়ির ছাদের উপর একটা ফুল বাগান আছে। তার পাশে একটা সুইমিং পুল আছে।

প্রিন্স টাস করে কোল থেকে রিনি কে ফেলে দেয় সুইমিং পুল এর মধ্যে।

প্রিন্স বলেঃ তাকো এবার ভিজে ভিজে। উপরের বৃষ্টি আর সুইমিংপুল এর পানি।মজা বুঝ।

রিনি বে বে কান্না করছে।রিনি সাঁতার জানে না।তাছাড়া রিনির সুইমিং পুলের মধ্যে ভয় করে।
রিনির মনে হয়, সুইমিংপুলের মধ্যে কেউ তার পা টানে।তাই বড্ড ভয় পাই।

তবুও,
রিনি আস্তে আস্তে সুইমিংপুল এর সিড়ি টা ধরে।এইটুকু আসতে কই বার যে নাকানি চুবানি খাইয়েছে সে জানে আর আল্লাহ জানে।

প্রিন্স তাকিয়ে আছে রিনির দিকে। রিনি আস্তে করে প্রিন্স এর পা টা ধরে। আর হাত দিয়ে একটা টান দেয়।প্রিন্স চিন্তা করেনি।এই পাগল এমন কিছু করে বসবে।টান দেয়ার ফলস্বরূপ, প্রিন্স ও পড়ে যায় সুইমিংপুলে।

এবার প্রিন্স এর আরও রাগ ফেঁপে উঠলো।রিনির কোমরটা স্পর্শ করে।একটানে প্রিন্স এর গায়ের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে। রিনি কাপঁচে প্রিন্স স্পষ্ট বুঝতে পারছে।তবুও সেদিকে দৃষ্টি পাত না করে সুইমিংপুলের মাঝ বরাবর নিয়ে গেল রিনিকে।

তখনই, প্রিন্স…….

জান্নাত,
I love you yesterday,
I love u still
I always Have.
I always will.

এই কথা টা বলে মুগ্ধ, আরো কিছু টা কাছে আসে জান্নাত এর। মুগ্ধ, জান্নাত এর কাঁধে একটা ভালবাসার স্পর্শ অংকন করে দিল।
জান্নাত এর ভয়ে নাজেহাল অবস্থা।

এমন সময় জান্নাত বলেঃ আরে রানি(লোভা) আপনি?

এটা বলতেই, মুগ্ধ ছেড়ে দেয়। জান্নাত কে আর পাই কে। দেয় একটা দৌড়।

মুগ্ধ অট্টহাসি দেয়। আর বলেঃ
“পালিয়ে পালিয়ে রবে কদিন,
ফিরতে হবে এই নীড়ে,
অপেক্ষাই গুনছি প্রহর,
আসবে কবে এই নীড়ে।
(কবিতা লেখিকাঃজান্নাতুল মাওয়া মহুয়া)

জান্নাত রুমে প্রবেশ করে হাফ ছেড়ে বাঁচল। এমন সময় হাবিব চিৎকার দিয়ে উঠে।

শাম্মি স্তব্ধ হয়ে পাশে বসে আছে। সবাই সেখানে উপস্থিত হয়।

সবাই বলেঃ কি হ’য়েছে?
ঘুমের মধ্যে তোমার এমন চিৎকার শুনে ভয়ে আছি।কি হয়েছে বল।

হাবিব স্ফটিক এর দিকে দেখিয়ে দেয়। সবাই তাকিয়ে আছে। তবে, রাজা,রানী(লোভা),রাজকুমারি(শাম্মি) কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় নি।

বাকি সবাই ভয়ে চুপসে গেছে।

এমন সময়,
রাজা(রশিদ) বলেঃমানুষের মধ্যে যেমন ভালো খারাপ আছে। তেমন জিনদের মধ্যে ও আছে। তবে অনেকে জিনের অস্তিত্ব নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে।
কুরআনের বাণী তে আছে,
And the jinn we create before from scorchingfire.
And we did certainly create man out of clay From an altered blake Mud.

কুরআনের মধ্যে জিন ও মানব জাতি নিয়ে ভালো ভাবে ব্যাখা দেয়া আছে।

তাছাড়া আমাদের মধ্যে খারাপ জিন আছে। যেমনটা মানুষের মধ্যে আছে,
কিছু মানুষ রুপি অমানুষ।

যে খারাপ জিনের ছবি স্ফটিক এর মধ্যে দেখতে পেলে।সে ই খুব সম্ভব সুমি কে নিয়ে গেল ।জানিনা সুমিকে আর ফিরে পাবে কিনা।ওরা সবচেয়ে খারাপ জিন।তারা সবসময় বিভিন্ন পশুর রুপ ধারণ করে। তবে বেশির ভাগ ধরে, কালো বিড়াল এর রুপ।আমরা সবসময় ওদের এড়িয়ে চলতাম।

সবাই মন মরা হয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে।
মুগ্ধ সবাই কে মনোবল দিচ্ছে এমন কিছু হবে না।সব ঠিক হয়ে যাবে।

কামাল, অর্ক,রাহাত হুজুর, হাবিব সবাই একটু শান্ত হলো।

আসলে,কিছু সম্পর্ক রক্তের, কিছু সম্পর্ক মানুষের তৈরি। আর কিছু সম্পর্ক স্রষ্টার তরফ থেকে পাওয়া উপহার।

এমন একটা মুহূর্তে, সবাইকে শান্ত করেছে মুগ্ধ তাই তাদের মনে হচ্ছে, তাদের সাথে মুগ্ধের এমন একটা সম্পর্ক আছে বা সম্পর্ক সৃষ্ঠি হয়ে গেছে। যা তাদের জন্য আল্লাহর দেয়া উপহার।

সবাই এবার রিনিকে ও প্রিন্স কে খুঁজড়ে মনোযোগ দিল।কারণ, প্রিন্স এর কাছে শক্তি আছে। যা দিয়ে খুব সম্ভব সুমি কে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে!!!!

চলবে…….

রাত_যখন_গভীর
জান্নাতুল_মাওয়া_মহুয়া
Season:02
Part :17
************
তখনই,

প্রিন্স বলেঃ রিনি আজকের যে শিক্ষা টা দিবো তা আজীবন মনে থাকবে তোমার।আমার কথার তো কোন দাম নাই,,?তাইনা?
এখন বুঝতে পারবে,বাচা কত ধানে কত চাল।।।

রিনির বড্ড ভয় লাগছিল। একেতো সুইমিংপুলের মাঝখানে নিয়ে গেল। তার উপর প্রিন্স এর রাগী মুখ খানা।তার উপর ঝুম বৃষ্টি। মাঝে মাঝে বিজলী চমকে উঠছে।সব মিলিয়ে একটা অদ্ভুত পরিবেশ এর সৃষ্টি হয়েছে। তাই,
রিনি বেকুব এর মতো তাকিয়ে আছে প্রিন্স এর দিকে।

প্রিন্স রিনির কোমর থেকে হাতটা ছেড়ে দেয়। ফলে রিনি টাস করে পড়ে যায় পানি গভীরে।রিনি ডুবে যাচ্ছে সুইমিংপুলের ভিতর। প্রিন্স আবার কোমরে হাত দিয়ে এক ঝটকায় তুলে নেই পানির ভিতর থেকে ।

আবার, একটু পর টাস করে ফেলে দেয়।সুইমিংপুলের ভিতর।যার ফলে, রিনি আবার সুইমিংপুলের ভিতর ডুবে যায়। প্রিন্স আবার হাতটা ধরে টান দেয়। রিনির কোমরটা ঝাপটে ধরে শক্ত করে।

রিনি নিশ্বাস নিচ্ছে।জোরে জোরে। আরেকটু হইলে রিনির দম বন্ধ হয়ে যেতো।ভাগ্যিস প্রিন্স তুলে নিয়েছে।
রিনির জন্মের মতো শিক্ষা হয়ে গেছে।

রিনি বলেঃ প্লিজ আমাকে আর ছেড়ে দিয়েন না।আমি আর কখনো এমন অবাধ্য তা করবো না।শক্ত করে ধরেন।সুইমিংপুল থেকে উঠিয়ে নেন।আ আ আ…..আম্মু…….

প্রিন্স(ইনতিয়াজ) বলেঃ মনে থাকবে তো?নাকি আরেক বার নাকানি চুবানি খাওয়া বো?আমাকে কি তোমার আম্মুর মতো লাগছে নাকি?আর এতো ভে ভে কান্না করো কেন?
চোখের মধ্যে মনে হয় জল বেশি আছে????

রিনি বলেঃ প্লিজ আর না।আমার ধম বন্ধ হয়ে যাই। আমি তো সাতার ও জানি না?
আমার পানিকে ভয় লাগে। সো কান্না না করে কি হা হা করে হাসবো নাকি?
আমার চোখে অশ্রু বেশি। আপনার কোন কি সমস্যা আছে নাকি! আজব।।।

প্রিন্স আলতো করে বুকের সাথে শক্ত করে রিনি ধরে।আস্তে আস্তে সাঁতার কেটে সুইমিংপুলের সিঁড়ির কাছে চলে আসে। রিনি কে ধরে বসিয়ে দেয় সিড়িতে।

প্রিন্স ও রিনির পাশে বসে।দুজনের পা জোড়া ডুবিয়ে রাখে পানিতে।

বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা ছিল। এমন সময় প্রিন্স নিরবতা ভেঙ্গে কিছু একটা বলার চেষ্টা করে।।

প্রিন্স বলেঃ আচ্ছা। রিনি, তোমার মতে আমি কেমন ব্যাক্তিত্বের?

আমি কি তোমার সারাজীবনের সঙ্গী হবার যোগ্য তা রাখি?

আমি যা করিছি তার জন্য সত্যি অনুতপ্ত। তবে আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি তা বুঝতে পারবো না।কারণ, সত্যি জানি না। কেমনে যে বহিঃপ্রকাশ করবো?

রিনি বলেঃ আমার কিছু সময় দরকার। আপনার প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই।
তাছাড়া,
আমাকে সবাই হাতের পুতুল বানিয়েছে।যার যখন মন চেয়েছে সেটাই করেছে?
আমার মন কি চাই?
আমার অনুভূতি কি?তা তো কেউ জানতে চাইনি?

প্রিন্স বলেঃ রিনি তোমাকে আমি জোর করবো না।তোমার সিদ্ধান্ত আমি মাথা পেতে নিবো।তবে একটা কথা মনে রাখবে।তোমার প্রতি বিন্দু পরিমাণ ভালোবাসা আমার কমবে না।আমি চাই, আমার ভালোবাসার সাতটি রং ধনুর রঙে তোমাকে রাঙিয়ে দিতে। রিনি,তোমাকে মনে প্রাণে চাইতাম,
এখনো চাই,
সামনে ও চাইবো।

রিনি বলেঃ আমি সময় চাই।আমার মন বলছে এক কথা, মস্তিষ্ক বলছে অন্য কথা।

প্রিন্স বলেঃসময় নাও।তবে,আরেক টা কথা,

রিনি তুমি যদি অন্য কাউকে চাও তাহলে আমি হাসি মুখে তার হাতে তুলে দিবো তোমাকে।

তখন নিজেকে এই বলে বুঝাবো সব ভালোবাসা পূর্ণতা পাই না।কিছু ভালোবাসার জন্ম হয় শুধু দাহনের জন্য।

নিজেকে তখন আমার সামলাতে হবেই।
কারণ তোমার সাজানো জীবন আমি নষ্ট করে দিছি।তবে, আমার জীবনে আর দ্বিতীয় কেউ আসবে না।কারণ,আমার জীবনে তুমিই প্রথম ও শেষ প্রিয়তমা।রিনি

” এইবেলা ভালবাসা নাও প্রিয়,
পরে সুযোগ নাও পেতে পারো,
এই বেলা অবহেলা করে নিও,
পরের বেলা আমি নাও থাকতে পারি…..

রিনির,এই প্রিন্স কে বড্ড অচেনা লাগেছে। একটু আগে রাগান্বিত প্রিন্স টার সাথে এই শান্তশিষ্ট প্রিন্স এর কোন মিল নেই। রিনি এখনো পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেনি প্রিন্স কে।

আরো কিছু সময় পর,
প্রিন্স বলেঃ চল।রাত অনেক হয়েছে। তাছাড়া ভেজা কাপড়ে ঠান্ডা লেগে যাবে। নাকি এখন ও কাপড় চেঞ্জ না করে বাহানা করবে?

রিনি বলেঃ একদম ই বাহানা করবো না।আবার সুইমিংপুলের গভীরে যেতে চাইনা।সুইমিংপুলের সেই স্বাদ হীন পানি পান করতে চাই না।

এই বলে তাড়াতাড়ি ছাদের থেকে নামতে লাগে রিনি।পিছু পিছু প্রিন্স ও নামতে লাগলো।

দুজনে রুমে প্রবেশ করে। রিনি কাপড় চেঞ্জ করে নেই। প্রিন্স বলেঃ চল।রাতের খাবার টা খেয়ে নি।

রাতের খাবার শেষ করে।

প্রিন্স বলেঃ রিনি যাও ঘুমিয়ে পড়ো।

রিনি বাধ্য মেয়ের মতো
ঘুমোতে গেল।কারণ প্রিন্স যে থেরাপি দিছে আজকে ।এরপর প্রিন্স এর কথা অমান্য করা রিনি স্বপ্নে ও ভাবতে পারে না।কিন্তু প্রিন্স ঘুমাতে যাই নি।প্রিন্স,
বারান্দায় বসে আছে।

প্রিন্স এর বড্ড মন খারাপ। জীবনের একটা ভুল শেষ করে দিচ্ছে তার জীবন।আসলে, পাপ তার বাপকে ও ছাড়েনা।
হয়তো, প্রিন্স এর পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে রিনিকে হারিয়ে ফেলবে প্রিন্স।

প্রিন্স আজ ভালবাসার মানুষ টার কাছে ও অপরাধী।

প্রিন্স এর মনে অশান্ত স্রোত অতিবাহিত হচ্ছে। তাই,
প্রিন্স নিজের রুম থেকে গিটার টা নিয়ে আসে।রাত অনেক হয়ছে। রিনির রুমে উঁকি দিয়ে দেখেছে প্রিন্স। রিনি বাচ্চা মেয়ের মতো ঘুমিয়ে আছে। তাছাড়া, চাদর টা গায়ে জড়িয়ে ঘুমিয়েছে।

প্রিন্স আবার চলে আসে বারান্দায়।
প্রিন্স তাকিয়ে আছে আঁধার কালো আকাশের দিকে।বৃষ্টি নেই। তবে,ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস বইছে। প্রিন্স অনুভব করছে,
চারপাশ থেকে একটা খুব সুন্দর মিষ্টি ঘ্রাণ আসছে। আসলে, বৃষ্টি হলে, মাটির থেকে একটা খুব সুন্দর সুঘ্রাণ বের হয়।

হঠাৎ করে প্রিন্সের চোখ দিয়ে দু ফোটা অশ্রু বেরিয়ে আসে। এই নিরব পরিবেশ মনের অশান্ত স্রোত কে চোখের জল বানিয়ে বের করে দিচ্ছে!!!

প্রিন্স বলেঃ আচ্ছা রিনি কি জানে একটা পুরুষের চোখের জল কখন আসে? ও হয়তো জানবে না।
হুহ,একটা পুরুষের চোখের জল তখনি আসে যখন আপন কেউ আঘাত দেয়। তবে, রিনি আঘাত দেয় নি কিন্তু আজ ওর বলা কথা গুলো তীরের মতো আক্রমণ করেছে, হৃদয়ে।হৃদয় টা ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেছে আজ।

প্রিন্স আর কিছু চিন্তা করতে পারছে না।তাই, প্রকৃতির রূপে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চেষ্টা করছে।

প্রিন্স চোখ জোড়া বন্ধ করে। লম্বা একটা শ্বাস নেই।যখন কেউ কোন কিছু নিয়ে চিন্তার মধ্যে থাকে তখন একটা লম্বা করে নিশ্বাস নিলে অনেকটা প্রশান্তি আসে। শরীর ও মন উভয়ের মধ্যে।

এরপর প্রিন্স,
গিটার টা বাজাচ্ছে। আজ অনেক দিন পর গিটার হাতে প্রিন্স এর । প্রিন্স এর খুব পছন্দের একটা গানের সুর তুলে।আর, আপন মনে গান গাইছে,

Mene ki e mohabbat,
Tone ki bebhofa e,
Taqdeer a hamari,
Kis moud peh le aa e,
Tothe hain is tara dil
Awaz thak na aaye,
Ham jece ji rehain koi e,
Jike toh bataia..

প্রিন্স গান গাইছে, সঙ্গী হয়েছে রাতের কালো আঁধার, সাথে মন ভালো করে দেওয়া মৃত্তিকার ঘ্রাণ।

কি হবে এই অবুঝ রিনি ও প্রিন্স এর?

?

?

?

সুমি অনেক্ক্ষণ ধরে বসে আছে। এখনো বিয়ের আসরে।সবাই বউয়ের মুখ দেখতে চাইছিল।

রাহমান প্রিন্স বলেঃ সবাই কাল দেখবে।আজ আমার রিনি কে শুধু আমি দেখবো।
আর সবার প্রথমে দেখবো।

সবাই আজ জোরাজোরি করেনি।শয়তান রহমান জিন এর কথা মেনে নেই। আর যে যার মতো চলে যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।

রহমান জিন,মহিলাকে অনেক খুঁজে ও পাইনি।তাসনিয়া কে ও পাচ্ছে না।

এমন সময় একটা দাসী কে দেখতে পেল রহমান।রহমান বলেঃ নতুন বউকে রুমে দিয়ে আস।

দাসী বলেঃ আচ্ছা ঠিক আছে রহমান প্রিন্স।

সুমি কে বসিয়ে রাখা হয়েছে একটা ফুল দিয়ে সাজানো বিছানা তে।তার মুখ এখনো কেউ দেখেনি।লম্বা ঘোমটা পড়ে আছে। তাসনিয়া এসে, এক গ্লাস দুধ রেখে গেছে।

তাসনিয়া অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু কোন খবর পাইনি প্রিন্স এর।রহমান অবশ্য, জিজ্ঞেস করে ছিলঃ কই ছিল? দেখেনি কেনো?
তাসনীয়া বলেছে, বন্ধু দের সাথে মজা করছিল। রহমান অবশ্য বিশ্বাস করেছে।

অন্য দিকে,
সুমির মন খুব আনচান করছে।তার মনে হচ্ছে, সে কিছু একটা ভুলে গেছে। ভুলে গেছে জীবন এর খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা পাতা।কিন্তু সেটা কি সে মনে করতে পারছে না!

সুমি মাথা নিচু করে অনেক্ক্ষণ ধরে বসে আছে। তবে ততটা খারাপ লাগছে না।কারণ, চারপাশে হরেক রকম ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। যার ফলে অসাধারণ সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়ে সম্পূর্ণ রুমে।

কিছু সময় পর, সুমি বুঝতে পারে তার রুমে কেউ একজন প্রবেশ করেছে। সুমির বুকে দুপদুপ শব্দ করছে। হার্টবিট বেড়ে গেছে।

কেউ একজন বলে উঠেঃ অবশেষে আমার করে পেলাম তোমাকে রিনি।রিনি আমাকে সালাম কর।বিয়ের প্রথম রাতে, জামাই রুমে প্রবেশ করতেই পায়ে ধরে সালাম করতে হয়।

সুমি বিছানা থেকে নেমে সালাম করে।আবার যথা স্থানে বসে যাই।

রহমান জিন সুমির পাশে বসে। তারপর আস্তে আস্তে ঘোমটা টা তুলছে।

ঘোমটা খুলে সুমির চোখ পড়ে রহমানের চোখে। রহমানের চোখ, মুখ লাল হয়ে গেছে।

সুমির মনে হচ্ছে, সামনের মানুষ টা রেগে গেছে। কিন্তু কেন?????মুখ টা পছন্ড ভয়ংকর দেখাচ্ছে।

তখনই, রীতিমতো চিৎকার এর স্বরে,
রহমান জিন বলেঃ কে তুই?
আমার রিনি কই?
তুই কেন বউ সাজে?
তোর সাহস কেমনে হলো এই রুমে আসার? এই বিছানার মধ্যে এইভাবে বসে থাকার?
তুই জানিস আমি জিন? তোকে এক আচারে মেরে ফেলতে পারবো?
কে তুই তাড়াতাড়ি বল??

চলবে……

[ গল্প কেমন হচ্ছে জানাবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here