রাত_যখন_গভীর Season:02,Part :28,29

0
1099

রাত_যখন_গভীর Season:02,Part :28,29
জান্নাতুল_মাওয়া_মহুয়া
Part :28

ঐশী আবার বলতে শুরু করেঃমাহমুদ স্যার হচ্ছেন ভার্সিটির প্রফেসর। তিনি অনেক অমায়িক মানুষ। তার অবদানের জন্য আমার চাচাতো বোন এর ভালোবাসা সফল হয়েছে।স্যার এর কাছে সাহায্য চেয়ে ছিলো।
মাহমুদ স্যার তার দিক থেকে বেস্ট চেষ্টা করছে।

তবে স্যার একা একটা ফ্ল্যাটে থাকে।পরিবারের কাউকে কখনো দেখিনি। স্যার এর জন্য ভার্সিটির অনেক মেয়ে পাগল। মাহমুদ স্যার কাউকে পাত্তা দেয় না।উনি খুব ভালো ছবি অঙ্কন করে। ওহ হা।তার একটা বন্ধু কে দেখেছি। নাম টা জানি না।প্রায় নাকি বন্ধু টা ভার্সিটি যায়।তবে মাহমুদ স্যার গম্ভীর টাইপের মানুষ।

রিনি বলেঃ এতো সব কেমনে জানলি?
তোই তু আর ভার্সিটি তে না।
তোই তো কলেজ এ?

ঐশী বলেঃ আমার আপু বলেছিল। তবে স্যার এর বন্ধু কে আমি দেখছিলাম। একদিন ভার্সিটি তে ঘুরতে গেছিলাম তখন।

রিনি বলেঃ মাহমুদ স্যার কে আমার রহস্য ময়ী লাগলো!
উনি হয়তো এমনা।

রিনির মন বলছে,এটা প্রিন্স কিন্তু প্রিন্স তো তাকে কখনো ইগনোর করে নি।তাহলে???

আবার বলে ঐশী বলেঃ ওহ হা।স্যার তেমন কোথাও যায় না।আমাদের বাসা থেকে রিকোয়েস্ট করছে অনেক। তাই আসছে।
আল্লাহ মালুম তোই কি পেচার করলি রিনি।

রিনি বলেঃ আমি কিছু করিনি বে।

ঐশী বলেঃআচ্ছা স্যার এর কথা বাদ দে তো।আয় বিয়ে তে মজা করি।

গান চলছে। ঐশী ও রিনি নাচতে লাগলো। এমন সময় আরও অনেকে জয়েন্ট হলো।সবাই নাচছে খুব সুন্দর একটা মূহুর্ত।কিন্তু,

হঠাৎ করে, একটা ছেলে রিনির কাছে চলে আসে।

ছেলে টা বলেঃ আমি কি আপনার সাথে নাচতে পারি!মিস

রিনি বলেঃ অকে। u can.

ছেলে টা রিনির হাত ধরে নাচতে লাগলো।দুজনের হাতে হাত স্পর্শ হওয়ার কিছু মুহুর্ত পর, ছেলে টার শরীর অসম্ভাবিত ভাবে ঘেমে যাচ্ছে। রিনি এটা লক্ষ্য করে। আর ভয় পেয়ে যায়।

রিনি বলেঃ কি হয়েছে আপনার?
are u okk?? Mister

রিনি তাড়াতাড়ি হাত ছেড়ে দেয় ছেলে টার। ছেলে টা সোফায় গিয়ে বসে। রিনি লক্ষ্য করে, ছেলে টার হাত ছেড়ে দেয়ার সাথে সাথে ছেলে টার ঘেমে যাওয়া অনেক টা কমে যায়।

রিনি বুঝতে পারছে না এমন কেন হলো!

রিনি আবার নাচতে লাগলো। এমন সময় একটা ঘ্রাণ পেলো রিনি।

রিনি বলেঃআমি চিনি এই ঘ্রাণ। এটা আমার খুব পরিচিত।

রিনি খুজতে লাগলো ঘ্রাণ টা।ঘ্রাণ টা খুঁজতে খুঁজতে রিনির চোখ জোড়া গেলো দূরে একটা জুটির উপর।

সেটা ছিলো,মাহমুদ স্যার ও একটা মেয়ের।
মাহমুদ স্যার একটা মেয়ের কোমরের মধ্যে হাত দিয়ে আছে। আর মেয়ে টা মাহমুদ এর গলায়। দু’জন এর খুশী খুশী চেহারা। গানের তালে তালে দুলছে তারা দুজন।

রিনি বড্ড খারাপ লাগছে। এটা দেখে। রিনির মন এতক্ষণ বলছিল,এটা প্রিন্স। কিন্তু এটা দেখার পর রিনি মন মানতে নারাজ এটা যে প্রিন্স (ইনতিয়াজ)। প্রিন্স কখনো এমন করবে না।রিনির বুকের বা পাশে বড্ড কষ্ট হচ্ছে। রিনির মনে হচ্ছে, বাঁপাশ টা তে কেউ যেনো হাতুড়ি পেটাচ্ছে।

রিনি বলেঃ এটা তো মাহমুদ স্যার।প্রিন্স তো না।মাহমুদ স্যার কে প্রিন্স মনে করলাম। তাই বলে অমন নাচের দৃশ্য সহ্য হচ্ছে না!
এটা দেখে আমার কেন কষ্ট হচ্ছে?
কেন বুকের ভিতর জ্বালাতন কাজ করছে?

রিনি আর ভাবতে পারছে না।নিজের অনিচ্ছার সত্যে ও আবার চোখ দিলো মাহমুদ ও মেয়ে টার দিকে। দুজন হেসে হেসে নেচে যাচ্ছে। রিনির কান্না পাচ্ছে।রিনি আর এক মূহুর্ত ও থাকবে না এখানে ।বাসায় যাবে।

রিনি বলেঃ ঐশী আমি চলে যাবো।আমার খারাপ লাগছে।

ঐশী বলেঃ মেরি জান তোর মুখ এমন হয়ে আছে কেন?
তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
একটু আগে খুশী ছিলি।এখন এই অবস্থা কেন?
কি হয়েছে?

রিনি বলেঃ আমি জাস্ট বাসায় যাবো।প্লিজ তোর পায়ে পড়ি বাসায় যেতে দে।কেনো যাচ্ছি?
কি হলো?
এসব প্লিজ জিজ্ঞেস করিস না।দোহাই লাগে। প্লিজ।

ঐশী বলেঃ আচ্ছা, বউ ও জামাই কে টাটা দিয়ে যা।
আর আমার আম্মুর সাথে দেখা করে নে।আমি ড্রাইভার কে বলছি।আমি নিয়ে যেতাম।কিন্তু এখন আমি বের হলে কেলেঙ্কারি করবে।

রিনি বলেঃ সমস্যা নাই।ড্রাইভার অ্যারেন্জ করে দিলে হবে।তোর অনুষ্ঠানে থাকা প্রয়োজন। আমি বুঝি ঐশী। ধন্যবাদ। আমাকে আনার জন্য।

ঐশী বলেঃ এতো ফরমালিটি কেন মেইনটেইন করচিস?
এবার চল ওদের সাথে দেখা করি।

রিনি সবাই কে বিদায় দিলো।ঐশী কে বলেছে, কাপড় টা পরে দিয়ে দিবে।

রিনি দাঁড়িয়ে আছে গেইটে। ঐশী বাড়ির ভিতরে গেছে গাড়ির ব্যবস্হা ও ড্রাইভার এর ব্যবস্হা করতে।

হঠাৎ করে,
ঐশী এসে বলেঃ সব গাড়ি বুকিং রে।কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।
চিন্তা করছিলাম।

কিন্তু হঠাৎ করে,মাহমুদ স্যার এর নাকি কি কাজ চলে এসেছে। ওনি চলে যাচ্ছে। সোনা প্লিজ আমি ওনাকে রিকোয়েস্ট করছি।তোকে ড্রপ করে দিবে।তোই মানা কনিস না মেরি জান।

রিনি বলেঃ হুম।মানা করবো না।

রিনি মনে মনে বলছে,পালাতে ই চাচ্ছিলাম।কিন্তু একি নিয়তির লিখন?
কেনো এই লোকটার সামনে নিচ্ছে।
আমি ভাবতে চাই না। প্রিন্স এর কথা না আমি ভাবতে চাই মাহমুদ স্যার এর কথা।

গাড়ির টু টু শব্দে রিনির ঘোর কাটে। গাড়ির দরজা খুলে,
রিনি পিছনে বসতে যাচ্ছি লো।

তখনই,
মাহমুদ বলেঃ ঐশী আমাকে কি ড্রাইভার এর মতো মনে হচ্ছে?
কিছু টা রেগে।আমি কি এখানে কারো ড্রাইভার?
একে তো অপরিচিত একজন এর দায়িত্ব নিলাম।তার উপর আমাকে ড্রাইভার বানানো?

ঐশী করুন দৃষ্টিতে রিনির দিকে তাকিয়ে আছে। রিনি বুঝতে পারছে ঐশীর চোখের ভাষা। তাই রিনি আবার সামনের সিটের মধ্যে বসে পড়ে ।

গাড়ি স্টারট দেয়। মাহমুদ একটা গান চালিয়ে দেয়।
“যে পাখি ঘর বুঝে না,
উড়ে বেড়ায় বন বাজারে।
ভুলা মনে মিচি কেনো,
মনের কাঁচায় রাখিস তারে।

ও পাখি ছন্ন ছাড়া,বাঁধন হারা,
মানে না প্রেমের শিখল,
ও পাখি দশ দোয়ারে,
শত মন করে তখন।

পাখিটার এমন স্বভাব,
নিজের অভাব পূরণ করে নিজের মতো,
পাখিটা হাসে খেলে অন্তরালে,
শুনিপুন করে কতো!!!

গানটা শেষ হতে হতে রিনি বলেঃ দাড়ান। আমি পৌঁছে গেছি।

মাহমুদ গাড়ি থামিয়ে দেয়।মাহমুদ একবার এর জন্য ও রিনির দিকে তাকিয়ে দেখে নি।অগুনিত বার রিনি তাকিয়ে ছিলো মাহমুদ এর দিকে।

রিনি গাড়ি থেকে নেমে গেল। তাও মাহমুদ ফিরে তাকাই নি।
রিনি নামতেই, মাহমুদ গাড়ি টা স্টার্ট দেয়।

রিনির কেন জানি কষ্ট হচ্ছে। রিনি বলেঃ আচ্ছা, আমি মাহমুদ স্যার কে প্রিন্স মনে করছি কেন?
আর মাহমুদ স্যার এমন আচরণ গুলো মনের মধ্যে কষ্টের সৃষ্টি করছে কেন?
ওনি তো মাহমুদ স্যার প্রিন্স না।প্রিন্স এমন করলে কি আমি এমন ই কষ্ট পেতাম?
তাহলে কি আমি জিলাস?
আমি কি তাহলে প্রিন্স কে?

না না এটা হতে পারে না। আমি মাহমুদ স্যার কে নিয়ে বেশি চিন্তা করছি।মাহমুদ স্যার ও প্রিন্স হয়তো এক না।আমি হয়তো গুলিয়ে ফেলছি।

রিনি নিজের সাথে কথা বলতে বলতে অর্কের বাড়ির রাস্তা ধরে।

?

?

সুমির চুলের পানি এসে পড়েছে রহমানের মুখে। রহমান যেনো কোন এক ঘোরে চলে যাচ্ছে।হারিয়ে যাচ্ছে কোন এক অজানা সুখের রাজ্যে।
এমন সময়, দরজা তে…..
একটা টুকা পড়ে।

রহমান জিন এর ঘোর কেটে যায়। রহমান জিন বলেঃ সরি সরি।সুমি।আমি বুঝতে পারিনি।

এটা বলে সুমি কে ছেড়ে দেয়।রহমান তাড়াতাড়ি আলমিরা থেকে একটা সাদার ওপর লাল রঙের কাজ করা শাড়ি বের করে দেয়।

রহমান বলেঃ এটা পড়ে নাও।আর কখনো আমার টিশার্ট পড়লে ও।এমন ভাবে আমার সামনে আসবে না।মিস সুমি।

সুমি একদম নিস্তেজ হয়ে গেছে।

সুমি শাড়ি টা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। রহমান দরজা খুলে দেখে এটা তাসনীয়া।

রহমান জিন বলেঃ কি রে?
কি জন্য আসলি?
আমাকে ডাক দিলে তো হতো।

তাসনিয়া(রহমান জিন এর বোন) বলেঃসমস্যা নেই। ভাই আমি ঘুরতে যাচ্ছি। তবে কখন বেক আসবো জানি না।আমার কিছু ভালো লাগছে না।

রহমান বুঝতে পারছে,তাসনীয়ার কষ্ট। রহমান নিজে ও বুঝে।নিজের ভালোবাসা কে অন্য জনের পাশে দেখলে কতটা কষ্ট হয়।

রহমান বলেঃ কোন সমস্যা নেই। যা তোর যখন ইচ্ছে বেক আসিস।আর হা কোন প্রয়োজন হলে, তোর চোখের মধ্যে নীল রঙের আস্তরণ গভীর করিস।আর চোখ জোড়া বন্ধ করে রাখিস।আমি তখন বুঝতে পারবো, তোর কোন হেল্প লাগছে আমার।যা তাসনিয়া, আল্লাহ হাফেজ।

তাসনিয়া বলেঃ সুমি কে ওফ,ভাবিকে একটু বলে যায়। একদম কথা হয়নি তার সাথে।

এমন সময় সুমি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। পরনে তার শাড়ী টা। হালকা পেট দেখা যাচ্ছে। চুল গুলো খোপা করেছে। চোখে মধ্যে কাজল।

তাসনিয়া বলেঃ বাহ বেশ লাগছে ভাবি।সত্যি তুমি অনেক সৌন্দর্যের অধিকারি।
আর হা আমি ঘুরতে যাচ্ছি। কখন বা,কত দিনের মধ্যে ফিরে আসবো জানি না।ভালো থেকো।আমার ভাই টা কঠোর হলে ও মনটা বড্ড ভালো। সালাম।

সুমি বলেঃ ধন্যবাদ। কিন্তু তোমাকে মিস করবো।তাড়াতাড়ি চলে আসিও।আল্লাহ হাফেজ।

তাসনিয়া চলে গেল। আর রহমান জিন চোখের কোণ দিয়ে আড়চোখে সুমিকে দেখছে। সুমি তাকিয়ে আছে তাসনিয়ার চলে যাওয়ার দিকে।

?
জান্নাত, হাবিব,কামাল,রাবেয়া তাদের জিনিস সব গুছিয়ে নিলো।
তারা একটু পর রওনা দিবে।তবে রিনি না আসলে তো যেতে পারবে না।

রেশমি,রাহাত হুজুর এবং অর্ক ও লাবুর সবাই উদাস হয়ে আছে। এতো দিন একসাথে কাটিয়ে সবাই একটা পরিবার এর মতো হয়ে গেছিলো। এখন তাদের ছাড়া থাকতে হবে ভাবতেই তাদের মন খারাপ হচ্ছে।

রাজা মশাই, লোভা রানি,শাম্মি ও রেডি হয়ে যাই। তারা ও আজ চলে যাবে।শাম্মি এখনো কিছু জানায়নি হাবিব কে।শাম্মি অবশ্য হাবিব কে এডিয়ে চলছে।

একটু পর, রশিদ রাজা, লোভা,শাম্মি সবাই কে বিদায় জানিয়ে চলে গেল।

হাবিব তাকিয়ে ছিলো শাম্মির চলে যাওয়ার দিকে।
হাবিব বলে উঠেঃ
“আকাশ ভরা দুঃখ আমার
সাগর ভরা ঢেউ, এত কষ্ট
আমার বুকে,
দেখে নাতো কেউ,
দুঃখ দিয়ে স্বপ্ন বুনি
কষ্ট দিয়ে আকি
স্বপ্ন আমার ভেঙে যায়।
আমি চেয়ে থাকি।
(কবিতা লেখিকাঃ উর্মি)

হাবিব আবার বলেঃ শাম্মি তাহলে কি আমিও ব্যর্থ প্রেমিক এর দলে নাম লিখলাম!!!!!

অন্য দিকে, মুগ্ধ সবাই কে তার পরিচয় লুকানোর জন্য মাফ চাই। সবাই বলেঃ কোন সমস্যা নেই। তবে নিরব ভুমিকা পালন করেছে জান্নাত।

মুগ্ধ অনেক্ক্ষণ ধরে তাকিয়ে আছে জান্নাত এর দিকে। কিছু বলছেনা।মুগ্ধকে ইমারজেন্সি তলব করেছে। তাই তার ও যেতে হচ্ছে।

জান্নাত একবারের জন্য ও তাকিয়ে দেখে নি মুগ্ধের দিকে।
মুগ্ধ একবুক কষ্ট নিয়ে, চলে গেল।

বাকিরা অপেক্ষা করছে রিনির জন্য। কামাল অবশ্য রাবেয়া কে সামলে নিলো।তাই বিয়ে তে যাওয়া তে রিনি কে বকছে না।কিন্তু রিনি যদি ঠিক সময়ে না আসে তাহলে বোমব্লাস্ট করবে রাবেয়া।

এমন সময়, রিনি

চলবে…..

রাত_যখন_গভীর
জান্নাতুল_মাওয়া_মহুয়া
Season:02
Part :29
************
এমন সময়, রিনি ঘরে প্রবেশ করে।

রাবেয়া বলেঃ যা,রিনি ফ্রেশ হয়ে নে।আমরা একটু পর বেরিয়ে যাবো।আজকে বেক করতে হবে।

কামাল বলেঃ আমি গাড়ি টা বের করি।

হাবিবের মন খারাপ। জান্নাত তো একদম কেমন জানি হয়ে গেছে চুপচাপ । রিনির তো মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিছে। রিনির নিজেকে পাগল মনে হচ্ছে।

দুপুরে সবাই গাড়ি তে উঠে পড়ে। লাবু ও রেশমীর চোখে অশ্রু টলটল করছে। অর্ক ও রাহাত হুজুর ও মন মরা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর টাটা দিচ্ছে।

হাবিব গাড়ি চালাচ্ছে। রাবেয়া ও কান্না করছে। রিনি তাকিয়ে আছে গাড়ির জানালা দিয়ে।

হাবিব বলেঃ কামাল ভাই, ভালোবাসা অনেক কষ্ট দেয় তাই না?
মানুষের কেনো অন্য একজন কে এতো ভালো লাগে?
কেনো তাকে ছাড়া সব কিছু বিষন্ন লাগে?
ভালোবাসার প্রকাশ এর পর,তার প্রতি উত্তর না দিলে নিরবতা টা কেনো এতো কষ্ট দেয়?

কামাল বলেঃ আসলে জীবন এমন ই হয়।কারো কাছে ভালোবাসা নিজে এসে ধরা দেয়। আর কারো কারো ক্ষেত্রে ভালোবাসা টা জাগিয়ে তুলতে হয়।
মাঝে মাঝে কিন্তু নিরবতা সম্মতির লক্ষণ হয়ে থাকে।

তারপর সবাই চুপচাপ হয়ে গেছে। রিনির চোখ জোড়া বন্ধ করে রাখে।রিনি কখন যে ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যায় নিজে ও জানে না।।

খুব সুন্দর একটা জায়গা। চারপাশে ফুল।নাকের মধ্যে ফুলের সুগন্ধী আসছে । সামনে একটা নদী। রিনি অনেক সুন্দর একটা শাড়ি পড়ে আছে।রিনি অপলক দৃষ্টি তে একজনের দিকে তাকিয়ে আছে।তার মুখের উপর রিনির হাত দুটো স্পর্শ করে রিনি।
আর চোখে চোখ রেখে রিনি বলছেঃ

প্রিন্স, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।তোমার সাথে সারাজীবন কাটাতে চাই। একসাথে সূর্য উদয ও সূর্যাস্ত দেখতে চাই। আমার প্রতিটা সকাল যেনো তোমার মুখ দেখে শুরু হয়।

প্রিন্স বলেঃ রিনি,অনেক দেরিতে বুঝতে পারলে।তবে দেরি টা একটু বেশি করে ফেললে।তোমার জন্য আমার সব অনুভূতি গুলো কেনো জানি আগের মতো কাজ করে না।রিনি আমি অন্য একজন কে ভালোবাসি।

না না….এমন হতে পারে না।প্রিন্স….

রাবেয়া বলেঃ রিনি…রিনি
কি হলো?

কামাল বলেঃ রিনি রিনি।ঠিক আছিস?চিৎকার করছিস কেন?

রিনি চোখ জোড়া খুলে দেখে,সে গাড়ি তে।কোথায় ফুলের বাগান।আর কোথায় প্রিন্স।

রিনি দেখে তার পাশে একজন বসে আছে।সে আর কেউ নই।
তার পাশে তার প্রিয় মা বসে আছে। রিনি মনে মনে বলে,আল্লাহ শুকরিয়া আপনার।এটা স্বপ্ন ছিলো।এমন স্বপ্ন যেনো আমার ঘুমের মধ্যে আর না আসে আল্লাহ। কিন্তু আমি তো প্রিন্স কে ভালোবাসি না?
তাহলে, স্বপ্নে প্রিন্স এর এমন কথা তে রিয়েক্ট করলাম কেনো?
তাহলে কি আমি!
না একদম অসম্ভব এটা।

রাবেয়া রিনির মাথা তে হাত বুলিয়ে দেয়।সাথে সাথে রিনি তার চিন্তার দুনিয়া থেকে বেরিয়ে আসে ।

রাবেয়া বলেঃ খারাপ স্বপ্ন দেখছিস?
মনে হচ্ছে! এতো টা জোরে চিৎকার দিলি।ভয় পেয়েছি।

রিনি বলেঃ হা মা অনেক খারাপ স্বপ্ন টা।

রাবেয়া আর কিছু বলেনি।তবে,
রিনির মাথা তে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
রিনি আবার জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে। প্রকৃতি কে দেখছে রিনি।আর ভুলতে চেষ্টা করছে তার সেই স্বপ্ন টার কথা।

বেশ কিছুক্ষণ পর,হাবিব বলেঃ কামাল গাড়ি টা থামিয়ে দাও।

কামাল বলেঃ কেন?

হাবিব বলেঃ আমার বাসা এসে পড়েছে।

জান্নাত বলেঃ কিছু দূর তো বাকি?

হাবিব বলেঃ সমস্যা নেই।

হাবিব চলে গেল। জান্নাত চিন্তা করছে কেমনে কাটাবে তার দিন গুলো। সুমি তো রহমানের কাছে। এখন জান্নাত বড্ড একা হয়ে গেছে।

এসব ভাবতে ভাবতে জান্নাত ও পৌঁছে যায় তার বাসায়। জান্নাত কামাল কে বিদায় জানিয়ে বাসায় প্রবেশ করে।

বেশ কিছুক্ষণ পর,রিনি,কামাল, রাবেয়া ও তাদের বাসায় পৌঁছে যায়। তারা বাসায় প্রবেশ করে।

বাসার অবস্হা অনেক খারাপ। ধূলো জমে আছে সারা ঘরে।

রাবেয়া, রিনি ঘর পরিষ্কার করছে।কাজ শেষ করার পর ।রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। কামাল,রাবেয়া ও রিনি।

?

জান্নাত বাসায় প্রবেশ করার পর থেকে একা অনুভব করছে। ঘরের প্রতিটি কোণায় আছে সুমির সাথে কাটানো মূহুর্তে স্মৃতি।

জান্নাত ওয়াশরুমের মধ্যে গিয়ে ঝর্ণা টা ছেড়ে দেয়। জান্নাত এর চোখের জল ও ঝর্ণার জল মিশে এক হয়ে গেছে। বেশ অনেক সময় ধরে গোসল করছে জান্নাত।

জান্নাত এর মা রেহেনা বলেঃ কি রে?
আর কতক্ষণ?
বের হো”
সুমি কই!ওর বাবা কল দিয়ে ছিলো। এবং জানতে চাচ্ছিলো ওর কথা?? ।তাছাড়া সুমি কে ছাড়া ঘর টা শূন্য লাগছে।

জান্নাত একটা গামছা মাথা তে পেচিয়ে দরজা খুলে। জান্নাত বলেঃ মা বিছানা তে বস।মনে আছে, একদিন তুমি বাবা বাসায় ছিলে না।আমি এবং সুমি একা ছিলাম।সেদিন রাবেয়া কে বাসায় এনে ছিলাম।

জান্নাত সমস্ত ঘটনা খুলে বলে। একদম শুরু থেকে শেষ অবধি। জান্নাত এর মা কিছু টা অবাক হয়ে গেছে। নিরবে রুম থেকে বেরিয়ে আসে জান্নাত এর মা।

জান্নাত ও তার ক্লান্ত শরীর বিছানা তে এলিয়ে দেয়।

?

হাবিব অনেক্ক্ষণ রাস্তার মধ্যে হেটে ছে।বেশ রাত করে বাসায় ফিরে আসে। হাবিব এর মা খাবার দেয়। হাবিব চুপচাপ খেয়ে নেই।আর ঘুমাতে চলে গেল। হাবিবের মা লক্ষ্য করছে, তার ছেলে কেমন জানি হয়ে গেছে!
কিন্তু কি হয়েছে???

হাবিব বিছানা টা গাঁ এলিয়ে দেয়। আর তার স্মৃতি গুলো মনে করছে।মনে করছে শাম্মির সাথে কাটানো সময় গুলো। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লো।

?
সুমি দিন দিন রহমানের প্রতিটি কাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই। সুমির কি যেনো একটা অনুভূতি কাজ করে রহমানের জন্য।

আজ রহমান এবং সুমি বেশ কিছু ফুল গাছ লাগিয়েছে বাগানে।সুমি কে রহমানের পরিবার এর সবাই আপন করে নিয়েছে।

রাতে সুমি ও রহমান অনেক ক্লান্ত ছিল। দুজন খাবার খেয়ে রুমে প্রবেশ করে। রহমান ও সুমি ফ্লোরে ঘুমায়। সুমি বিছানার এক পাশে ফ্লোরে আর রহমান বিছানার অন্য পাশে ফ্লোরে।

সুমির কেন জানি ঘুম আসছে না।তাই সুমি আস্তে করে উঠে পড়ে। আর রহমানের কাছে চলে গেল। সুমি দেখে রহমান বেমালুম ঘুমাচ্ছে। সুমি রহমানের দিকে তাকিয়ে আছে।

সুমি বলেঃ এতটা ইনোসেন্ট একটা চেহারা!
যেকোনো মেয়ের মনে ধরে যাবে।এই মায়াভরা চেহারা দেখে আমি এলোমেলো হয়ে যাই রহমান।

সুমি এক নজরে তাকিয়ে আছে রহমানের দিকে।কখন যে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়লো নিজে ও জানে না।

ঘুব সকালে রহমান চোখ জোড়া খুলে দেখে। সুমি তার বুকের ওপর মাথা দিয়ে ঘুমাচ্ছে। রহমান তাকিয়ে আছে সুমির সেই নিষ্পাপ চেহারার দিকে।

রহমান তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে। কারণ সুমি যদি জেগে ওঠে তাহলে রহমান জেগে গিয়ে তাকিয়ে আছে দেখলে লজ্জা পাবে।

এভাবে লুকোচুরি চলছে তাদের মধ্যে। দুজনের ভাঙা হৃদয় এ অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি হচ্ছে।তবে কারো অনুভূতির ব্যাপারে কেউ জানে না।রীতিমতো দুজন ই বেখাবার।

?

রিনি রিনি….
রিনি বলেঃ মা আরেক টু ঘুমাতে দাও।

রাবেয়া বলেঃ কলেজ যাবি না?
তোর কিন্তু সামনে ফাইনাল পরীক্ষা। তোর বাবা স্যারকে ম্যানেজ করে নিয়েছে।বাহানা একটা বানিয়ে দিয়েছে তোর কলেক এ যাতে কথা শুনতে না হয় তোর।

রিনি বলেঃ আচ্ছা মা উঠছি।

রিনি রেডি হয়ে কলেজ চলে গেল। ক্লাস করেছে সব।ভালোভাবে পড়াশোনা করছে।

এইভাবে যেতে লাগলো তার দিন গুলো। কিন্তু একদিন এক্সট্রা ক্লাস এর কারণে রিনির কলেজ থেকে ফিরতে দেরি হয়ে গেছে।

রিনির তাই খিদা লাগলো।বাসায় আসা অবধি অপেক্ষা করতে পারলো না।তাই রিনি একটা রেস্তোরাঁ তে প্রবেশ করে। আর খাবার আনতে বলে।

খাবার খেতে খেতে রিনির চোখ জোড়া স্থির হয়ে যাই কোণার একটা সিটের দিকে তাকিয়ে।

রিনি দেখে,
মাহমুদ স্যার একটা মেয়ের সাথে। তবে রিনি মেয়ে তার চেহারা দেখতে পাচ্ছে না।
রিনি দেখে মাহমুদ স্যার
অনেক হেসে হেসে কথা বলছে।

এক পর্যায়ে,মেয়ে টা কি জেনো বললো।
আর মাহমুদ মেয়ে টার চোখে কি পড়েছে তা দেখছে। রিনি বুঝতে পারলো মেয়ে টা হয়তো বলেছে,চোখে কিছু পড়েছে।

রিনির এসব দেখে একদম খিদে চলে গেছে। রীতিমতো পালিয়ে গেছে। তুক্কো খিদে মরে গেছে বলা যায়।

রিনি আর বেশিক্ষণ থাকতে পারে নি।উঠে চলে আসে রেস্তোরাঁ থেকে । রিনির মনে হাজার প্রশ্ন। কিন্তু উত্তর জানা নেই।

রিনি নির্জন রাস্তা ধরে হাঁটছে।রিনি বলছে,আচ্ছা ওনি তো মাহমুদ স্যার। প্রিন্স তো না।যদি প্রিন্স হতো আমার উপস্থিতি টের পেতো।সময় নষ্ট না করে হয়তো আমার কাছে আসতো?

কিন্তু আমি কেনো এতো প্রিন্স ও মাহমুদ স্যার কে নিয়ে চিন্তা করছি???
আমি তো অতীত টা ভুলতে চাচ্ছি তবে কেনো বারবার হানা দিচ্ছে???

রিনি বকবক করতে করতে বাসায় ফিরে আসে। রিনির মা খাবার দিলো।
রিনি বলেঃ মা জানো,
কলেজ কিছু দিন বন্ধ থাকবে।

রাবেয়া বলেঃ বাহ ভালো তো।

রিনি ছুটির দিন কাটাচ্ছে।একদিন সকালে,
রিনি বসে বসে টিভি তে ডোরেমন দেখছিলো।এমন সময়, রিনির মোবাইলে কল আসে।

রিনি মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে…..

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here