প্রেম_নিবেদন Part- 27

0
1811

story- প্রেম_নিবেদন Part- 27
Writer- #Nur_Nafisa

.
.
পরদিন, দিনার সাথে ভার্সিটি থেকে ফেরার সময়,
দিনা- নাফিসা, চল আমি একটু হসপিটাল যাবো।
নাফিসা- কেন?
দিনা- কয়েকদিন ধরে শরীর দূর্বল লাগছে। চেকআপ করাবো।
নাফিসা- আচ্ছা চল। দিনা ডাক্তারের সাথে কথা বলছে, আমি দেখলাম ১টা মহিলা অন্য একটা ডাক্তারের কাছে কান্না করে বলছে,
– আমার পোলাডারে বাছান।
ডাক্তার- আমাদের এখানে রক্ত নেই। আপনি রক্ত জোগাড় করে দিন, তাহলে আমরা অপারেশন করবো।
নাফিসা- আমি সেখানে গেলাম। রক্তের গ্রুপ কি?
ডাক্তার- o+
নাফিসা- ১ ব্যাগ হলে চলবে?
ডাক্তার – হ্যাঁ।
নাফিসা- আমি রক্ত দিবো।
ডাক্তার – আচ্ছা চলুন।
এতোক্ষণে দিনা আমার কাছে এসে দাড়িয়েছে,
দিনা- কি বলছিস তুই! কিছু দিন আগে না রক্ত দিলি!
নাফিসা- সমস্যা নেই, প্রায় ৪মাস হবে।
তারপর আমি রক্ত দিয়ে, সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরেছি। নিসা দরজা খুলে দিলো,
নিসা- ভাবি তুমি এসেছো! কোথায় ছিলে?
নাফিসা- একটু কাজ ছিলো। আমি রুমে যাই।
নিসা- আচ্ছা।
নাফিসা- রুমে এসে আমি অবাক! ? দরজার সামনে আমার ফোনটা টুকরো হয়ে পড়ে আছে। আরাফ মাথায় ২হাত চেপে সোফায় বসে আছে। আমার উপস্থিতি টের পেয়ে আমার দিকে তাকালো। ওর চোখ রক্তাবর্ণ হয়ে আছে। আরাফ উঠে এসে দরজা লাগিয়ে দিলো। আমাকে ধরে ঝাকিয়ে চিতকার করে ,
আরাফ- কোথায় গিয়েছিলে? ফোনটা সাথে নিতে পারোনি কেন? কতো জায়গায় খুজেছি তোমায়! কেউযে তোমার অপেক্ষায় থাকে জানোনা তুমি? একবার জানানোর প্রয়োজনবোধ করলে না! আমাকে চিন্তায় রাখতে খুব ভালো লাগে তোমার তাই না! পাগল করে ছাড়বে তুমি আমাকে? ?
নাফিসা- আমি কোনো কথা বলছি না। তারপর আরাফ টেবিল থেকে গ্লাস নিয়ে মেঝেতে আছাড় মারলো। আমি তার আচরণে অনেকটা ভয় পেয়ে গেছি। আমি চুপচাপ বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখি আরাফ বারান্দায় গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছে। এতোক্ষণে খেয়াল করলাম, ও সকালে যে পোশাকে বেড়িয়েছে এখনো সেই পোশাকই পড়ে আছে। আমি গ্লাসের টুকরো গুলো তুলে রুমটা পরিষ্কার করে আরাফের কাছে গিয়ে দাড়ালাম। তার চোখ এখনো লাল! সে বাইরে তাকিয়ে আছে, আর আমি আরাফের দিকে।
আরাফ- (শান্ত গলায়) কোথায় ছিলে?
নাফিসা- দিনার সাথে হসপিটালে।
আরাফ- কেন?
নাফিসা- ও চেকাপ করাতে গেছে।
আরাফ- ফোন করে বাসায় জানাতে পারলে না?
নাফিসা- ভুলে ফোন বাসায় রেখে গেছি।
নিসা- ভাইয়া, ভাবি খেতে আসো।
নাফিসা- ফ্রেশ হয়ে আসো।?
আরাফ- ?(আগুনে পানি ঢেলে দিলো! এই পরিস্থিতিতে আপনি থেকে তুমিতে চলে গেলো ?) আমিও আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।
আরাফ- ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখি নাফিসা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।
– জানপাখি, খেতে চলো।
নাফিসা- আমার ইচ্ছে করছে না। তুমি যাও।
আরাফ- না, ইচ্ছে না করলেও খাবে। চলো,
নাফিসা- আরাফের জোরাজোরিতে যেতে হলো। ২লোকমা মুখে দিতেই মনে হচ্ছে বদহজম হবে। আমি খাবারে পানি ঢেলে উঠে পড়লাম।
আম্মু- কি হয়েছে? খাবি না?
নাফিসা- না আম্মু, আমার ভালো লাগছে না।
আরাফ- নাফিসা, তোমাকে এমনিতেই দুর্বল দেখাচ্ছে। না খেলে অসুস্থ হয়ে পড়বে।
নাফিসা- না, এখন খেলে বদহজম হয়ে বেরিয়ে আসবে। আম্মু, আমি রুমে যাই।
আম্মু- আচ্ছা।
নাফিসা- টেবিল ছেড়ে দরজার কাছে যেতেই মাথাটা ঘুরে উঠলো। সাথে সাথে ফ্লোরে পড়ে গেলাম।
আরাফ- নাফিসায়ায়া….?
নিসা- ভাবি…!?
আরাফ- খাওয়া ছেড়ে দ্রুত উঠে নাফিসাকে কোলে তুলে রুমে নিয়ে গেলাম। সাথে সবাই রুমে এসেছে।
– আব্বু, ডাক্তারকে কল করো।আব্বু- ওকে
নাফিসা- আব্বু, কল করতে হবে না। আমি ঠিক আছি।
আম্মু আমার পাশে বসে,
আম্মু- কি হয়েছে তোর? পড়ে গেলি কিভাবে?
নাফিসা- আম্মু, কিছু হয়নি, মাথাটা একটু ঘুরে উঠলো। বিশ্রাম নিলে ঠিক হয়ে যাবো।
আব্বু- শিউর?
নাফিসা- জ্বি আব্বু।
আম্মু- আচ্ছা তুই বিশ্রাম নে।
তারপর সবাই রুম থেকে চলে গেলো। আরাফ আমার পাশে বসলো,
আরাফ- নাফিসা, তুমি কি সত্যিই ঠিক আছো?
নাফিসা- হুম। আমি ঘুমাবো।
আরাফ- ওকে।
পরদিন,
আরাফ- আযান শুনে ঘুম ভেঙে গেলো, জানপাখি, উঠো। জানপাখি….
নাফিসা- হুম, উঠছি।
আরাফ- আমি ওযু করে এসে দেখি নাফিসা খাট থেকে নেমে দাড়াতে পারছে না। প্রায় হেলেদুলে পড়ে যাচ্ছে। আমি দ্রুত তাকে ধরে ফেললাম।
– একি! তোমার শরীর তো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে! হঠাৎ এমন জ্বর আসলো কেন!
নাফিসা- জানিনা।
আরাফ- বসো এখানে, সকালে হস্পিটাল নিয়ে যাবো।
নাফিসা- প্রয়োজন নেই, এমনি ঠিক হয়ে যাবে।
আরাফ- কোনো কথা না। চুপচাপ যাবে আমার সাথে। ?
নাফিসা- ?
সকাল ৯টার দিকে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বের হলাম।
– ঢাকা কলেজ মেডিকেল যাবো।
আরাফ- সেখানে কেন!?
নাফিসা- এমনি, যেতে হলে সেখানেই যাবো। তা না হলে যাবো না।
আরাফ- আচ্ছা।
তারপর কলেজ মেডিকেল গেলাম নাফিসাকে নিয়ে। ডাক্তার ওকে দেখেই বললো,
– আরে আপনি এখানে কেন? আপনার তো এখন রেস্ট নেওয়া দরকার।
আরাফ- আমিতো অবাক! ডাক্তার কি ওকে চিনে!
নাফিসা- জ্বর হয়েছে, তাই এসেছি।
ডাক্তার- ও আচ্ছা। এমন সময় একটু জ্বর হবেই। মেডিসিন নিলে ঠিক হয়ে যাবে। আপনি আমার চেম্বারে বসুন, আমি আসছি।
নাফিসা- আচ্ছা।
আরাফ- জানপাখি, ডাক্তার কি বললো! এমন সময় মানে!
নাফিসা- কিছু না। আপনি এখানে বসুন আমি আসছি।
আরাফ- না আমিও যাবো তোমার সাথে।
নাফিসা- ? ওকে।
আমি গতকাল যাকে রক্ত দিয়েছি তাকে দেখতে গেলাম। দেখলাম সে ঘুমাচ্ছে। পাশে তার মা বসা।
– আন্টি আপনার ছেলে এখন কেমন আছে?
আন্টি- ভালা আছে। আপনে অনেক ভালা। আপনে রক্ত দিছেন তাই আমার পোলা জীবন পাইছে। আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুক।
আরাফ- আমি তো রীতিমতো শকড! এই জন্য নাফিসার এই অবস্থা! আর হস্পিটালের কথা বলতেই এখানে আসা।?
নাফিসা- তোমার কাছে ৫০০টাকা হবে?
আরাফ- আমি কিছু না বলে ওয়ালেট থেকে টাকা বের করে দিলাম। আমার মেজাজ ভীষণ খারাপ হয়ে আছে। এই মেয়ে এমন কেন! ? নিজের প্রতি একটুও খেয়াল নেই।
নাফিসা- টাকা মহিলার হাতে দিয়ে আমি মেডিসিন নিয়ে আরাফের সাথে চলে আসলাম। আরাফ আমার সাথে একটুও কথা বলে নি। হয়তো রাগ করে আছে। হটাৎ গাড়ি এসে বালুর মাঠে নদীর পাশে থামলো। আরাফ রেগে গাড়ি থেকে নেমে গাড়িতে একটা লাথি দিয়ে পানির কাছে গিয়ে বসে রইল। আমি শুধু তার কান্ড দেখছি!
আমিও গাড়ি থেকে নেমে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে রইলাম। প্রায় ২০মি পর আরাফ গাড়িতে বসে। আমিও গিয়ে বসলাম।
– রাগ করার কি আছে! মানুষের সাহায্য না করতে পারলে আমরা কেমন মানুষ হলাম!
আরাফ- তাই বলে নিজের জীবনের ক্ষতি করে অন্যের জীবন বাচাতে হবে! তুমি তোমার শরীরের অবস্থা দেখেছো! কিছুদিন আগে তুমি আম্মুকে রক্ত দিয়েছো। এখন কি তোমার আবার রক্ত দেয়া ঠিক হয়েছে! ?
নাফিসা- কি হয়েছে! একটু জ্বরই তো। ২/৩ দিনে সুস্থ হয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ। কিন্তু দেখোতো, ১ব্যাগ রক্তের জন্য তো ছেলের জীবন শেষ হয়ে যেতো! সেটা কি ফিরে পেতো!
আরাফ- ? আর কিছু না বলে বাসায় ফিরে এলাম। আজ অফিসে যাই নি। আব্বু গিয়েছিল, দুপুরে ফিরে এসেছে। সবাই একসাথে লাঞ্চ করতে বসেছি। নাফিসা খেতে চাইছিলনা, আম্মু জোর করে খায়িয়ে দিচ্ছে।
আব্বু- ডাক্তার কি বললো, আরাফ?
আরাফ- কাল নাফিসা একজনকে রক্ত দিয়েছে। তাই শরীর দূর্বল। বিশ্রাম নিলে ঠিক হয়ে যাবে।
আম্মু- সেকি! কিছুদিন আগে না আমাকে রক্ত দিলি! এখন কোনো সমস্যা হলে!
নাফিসা- আম্মু ৪মাস হয়ে গেছে। সমস্যা হবে না।
নিসা- আমি তো ভাবছি ভাবি প্রেগন্যান্ট, তাই এমন। ?
আরাফ- নিসার কথা শুনে সাথে সাথে বিষম খেলাম। আব্বু পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো। আব্বু আর আম্মু মুখ চেপে হাসছে, আর নাফিসা আমার দিকে রেগে? তাকিয়ে আছে ? মনে তো চাচ্ছে নিসাকে কয়েকটা মাইর লাগাই! আব্বু, আম্মুর সামনে এমন কথা কিভাবে বলে!
নাফিসা- আমি নিসার কথা শুনে পানি খেয়ে দ্রুত রুমে চলে এলাম। এই আরাফের জন্য আজ আমাকে আব্বু আম্মুর সামনে লজ্জা পেতে হলো! ? আর ওরই বা কি দোষ! বলছে তো নিসা! পাজি মেয়ে, মুখে কিছু আটকায় না!
.
.
চলবে…..

গল্প পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবে 🙂 (Nur Nafisa)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here