তোমাতে_আবদ্ধ_আমি,পর্বঃ- ২

0
1480

#তোমাতে_আবদ্ধ_আমি,পর্বঃ- ২
#লেখকঃ- Tamim Ahmed

–আব্বু তুমি কি এই আন্টিকে বিয়ে করেছ.?

হঠাৎ মাইশার এমন কথা শুনে তামিম কিছুটা অবাক হয়ে গেল। কিন্তু সাথে সাথে সে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো…

তামিমঃ হে মামনি তুমি বুঝলে কিভাবে.?

মাইশাঃ আমি তিন্নিদের (তামিমদের পাশের বাসার মেয়ে) বাসার টিভিতে দেখছিলাম যে একটা নায়ক আর নায়িকা এইভাবে কবুল বলে বিয়ে করেছে।

তামিমঃ তোমায় কে বললো যে এইভাবে বিয়ে হয়.?

মাইশাঃ তিন্নি ই বলেছে। আচ্ছা এই আন্টি কান্না করছে না কেন.? তিন্নিদের বাসার টিভিতে তো দেখলাম ওই মেয়েটা কবুল বলার সময় কান্না করছিল।

তামিমঃ জানি না মামনি।

মায়াঃ আমায় আন্টি কেন বলছ মামনি.? আমি তো এখন থেকে তোমার আম্মু হই, আমায় আম্মু বলে ডাক (মাইশার কাছে এসে)।

মাইশাঃ কিন্তু আমার আম্মু তো অনেক আগেই মারা গেছেন তাহলে আপনি আমার আম্মু হলেন কি করে.?

মায়াঃ এই যে আমি এখন তোমার আব্বুকে বিয়ে করলাম তাহলে তো আমি তোমার আম্মু ই হই তাইনা.?

মাইশাঃ তাহলে কি আব্বু এখন থেকে শুধু আপনার সাথেই কথা বলবেন.? আমার আগের আম্মুর সাথে আর কথা বলবে না.?

মায়াঃ মানে.?

মাইশাঃ আমি অনেকদিন দেখেছি আব্বু আমার আম্মুর একটা ছবি হাতে নিয়ে প্রায়ই একা একা উনার সাথে কথা বলেন আর মাঝেমধ্যে একা একা কান্নাও করেন। কিন্তু আমি আব্বুর সামনে গেলেই আব্বু কান্না থামিয়ে নেন।

মাইশার এমন কথা শুনে মায়া একবার তামিমের দিকে তাকাল। তামিম কিছুটা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো।

মায়াঃ চলেন এখন আমরা বাসায় যাব।

তামিমঃ কার বাসায়.?

মায়াঃ আপনার বাসায় আর কার.? আব্বু দাও তো মাইশাকে আমার কুলে (বলেই তাঁর আব্বুর থেকে মাইশাকে টেনে কুলে নিয়ে নিল)।

–তুমি একজন বিবাহিত পুরুষ তার উপর তোমার একটা মেয়েও আছে। তারপরও আমি কিভাবে তোমার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি হলাম এটা হয়তো তোমার ভাবনায় আসছে না। তুমি ৩ মাস ধরে আমাদের কোম্পানিতে কাজ করে আসছ। ১ মাসের মধ্যেই আমি তোমার চলাফেরা দেখে বুঝে ফেলেছি তুমি অনেক ভালো মনের মানুষ। তা ছাড়া আমি কোম্পানির বস থাকাকালীন তুমি একদিনও অফিস মিস দেওনি আর মায়াও কখনো তোমার নামে আমার কাছে অভিযোগ করেনি বরং সে উল্টো আমার কাছে তোমার কাজের প্রসংশা করেছে। জানি না আমার মেয়ে তোমার মধ্যে কি দেখেছে যে সে তোমায় বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে উঠেছিল। তবে আমি আমার মেয়েটাকে অনেক ভালোবাসি আর ওকে অনেক বিশ্বাসও করি আর এটাও মানি যে জীবনে ও কখনো কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের লাইফটা নষ্ট করবে না। তাই সে যখন আমার কাছে এসে তোমায় বিয়ে করার কথা বললো তখন আমিও অনেক ভেবেচিন্তে ওর কথায় রাজি হয়ে যাই। সমাজের মানুষরা এখন আমাকে বা আমার মেয়েকে নিয়ে কি ভাবলো সেটা আমার দেখার বিষয় না। ও যদি তোমার সাথে সারাজীবন সুখী থাকতে পারে তাহলেই আমি খুশি কারণ ওর খুশিতেই আমার খুশি। তুমি ওকে কখনো কষ্ট দিও না বাবা (তামিমের এক হাত উনার দুই হাত দ্বারা জড়িয়ে ধরে)।

তামিমঃ আপনি চিন্তা করবেন না স্যার, আমি উনাকে কখনো কষ্ট দিব না কথা দিলাম আপনাকে।

–এখন আর স্যার নয়, আমায় বাবা বলেই ডাকবা।

তামিমঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

মায়াঃ এখন তাহলে আমরা যাই আব্বু, কালকে একবার অফিস শেষে বাসায় আসবো নে উনাকে নিয়ে।

–আচ্ছা ঠিক আছে।

তারপর তামিম মাইশা আর মায়াকে নিয়ে বাসায় চলে আসলো। বাসায় ঢুকেই মায়া চারপাশে তাকিয়ে বলে উঠলো…

মায়াঃ বাহ আপনাদের বাসাটা তো খুব সুন্দর।

তামিমঃ জী।

মায়াঃ আচ্ছা আম্মু এখন কোন হাসপাতালে আছেন.?

তামিমঃ _____ এই হাসপাতালে।

মায়াঃ রাতের রান্না কি করা আছে নাকি করতে হবে.?

তামিমঃ সকালেই সব করে ফেলি আর যাওয়ার সময় ফ্রিজে রেখে চলে যাই।

মায়াঃ ওহ।

–––––––

রাতের খাবার খেয়ে মায়া মাইশাকে নিয়ে তামিমের রুমে চলে আসে আর তামিম এদিকে সব থালা বাসন পরিষ্কার করতে লেগে যায়। মায়া অবশ্য বলেছিল যে সে এইসব করে নিবে বাট তাকে করতে দেয়নি। কিছুক্ষণ পর তামিম সব পরিষ্কার করে রুমে এসে দেখল মায়া মাইশাকে কুলে নিয়ে হাটাহাটি করছে।

তামিমঃ ওকে এতো রাত পর্যন্ত কুলে নিয়ে হাটাহাটি

মায়াঃ এই আস্তে কথা বলুন নাহলে মেয়েটা জেগে যাবে। দেখেন তো ও ঘুমিয়েছে কি না।

তামিমঃ হে ঘুমিয়ে গেছে (মাইশার দিকে তাকিয়ে)। কিন্তু আপনি ওকে ঘুম পাড়ালেন কিভাবে.?

মায়াঃ এইতো ওকে কুলে নিয়ে গল্প করছিলাম আর রুমের মধ্যে হাটাহাটি করছিলাম এর মধ্যেই হঠাৎ হয়তো ঘুমিয়ে গেছে।

তামিম মায়ার কথা শুনে বেশ অবাক হলো। কারণ মাইশাকে সে আজ পর্যন্ত এতো তাড়াতাড়ি কখনো ঘুম পাড়াতে পারেনি, ঘুম পাড়াতে গেলেই মাইশা একবার তাকে এই প্রশ্ন তো আবার সেই প্রশ্ন করে তাকে ঝালিয়ে রাখে না। অথচ মায়া আজ তাকে এতো তাড়াতাড়ি ঘুম পাড়িয়ে দিল.! হয়তো মায়ার থেকে মাইশা আজ মায়ের ভালোবাসা পেয়েছে আর তাই সে এতো তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেছে।

মায়াঃ দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি ভাবছেন ঘুমাবেন না.?

তামিমঃ হে, আপনি মাইশাকে নিয়ে এই রুমে ঘুমিয়ে যান আমি আম্মুর রুমে ঘুমাতে গেলাম।

মায়াঃ খাট তো অনেক বড় এইখানে আমরা ৩ জন আরামসে ঘুমাতে পারবো। মাইশাকে মাঝখানে রেখে দিচ্ছি আপনি এসে একদিকে ঘুমিয়ে পরেন।

তামিমঃ আরে নাহ আপনি মাইশাকে নিয়ে ঘুমিয়ে পরেন, আমি

মায়াঃ আচ্ছা আপনি একটু বারান্দায় আসেন আপনার সাথে কিছু কথা আছে আমার (বলেই মাইশাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে সে বারান্দায় চলে আসলো)।

মায়ার কথামতো তামিমও বারান্দায় আসলো। বারান্দায় ২টা চেয়ার রাখা আছে একটা চেয়ারে মায়া বসে পরল আর অপরটায় তামিমকে বসতে বললো।

মায়াঃ এখন থেকে তো আমরা স্বামী-স্ত্রী তাইনা.?

তামিমঃ জী (নিচু কণ্ঠে)।

মায়াঃ আপনি কি প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন.?

তামিমঃ হ্যাঁ।

মায়াঃ বুঝেছি তাহলে আপনি এখনো উনাকে ভালোবাসেন। আর আমাকে হয়তো কখনো উনার মতো ভালোবাসতে পারবেন না। কিন্তু আমার একটা কথা তো রাখতে পারবেন নাকি.?

তামিমঃ কি কথা বলুন রাখার মতো হলে অবশ্যই রাখবো।

মায়াঃ উঁহু এইভাবে বললে হবে না, কথা দেন যে আমার কথাগুলো রাখবেন.? ভয় নেই, আমি আপনার সাধ্যের বাহিরে কিছু বললো না।

তামিমঃ আচ্ছা ঠিক আছে রাখবো বলেন আপনি.?

মায়াঃ এখন থেকে আমরা দুজন একে অপরকে ‘তুমি’ করে বলবো।

তামিমঃ আচ্ছা ঠিক আছে। তবে আমার একটা প্রশ্ন আছে আপনার কাছে সরি তোমার কাছে।

মায়াঃ কি প্রশ্ন বল.?

তামিমঃ আমার ব্যাপারে সবকিছু জেনেও তুমি কেন আমায় বিয়ে করলে.?

মায়াঃ কারণ তুমি মানুষটা অনেক ভালো তাই।

তামিমঃ আপনি কিভাবে বুঝলেন এটা.?

মায়াঃ তোমার পাশের ডেক্সে একটা মেয়ে কাজ করে নাম তাঁর ইতি। আমি অফিসে জয়েন হওয়ার পর একদিনও তোমায় ওর দিকে তাকাতে দেখিনি তবে মাঝেমধ্যে ও নিজ থেকে কিছু জিজ্ঞেস করলে কথা বলতে দেখেছি। তা ছাড়া মেয়েদের প্রতি তোমার বিন্দু পরিমাণও কুনজর বা লোভ লালসা নেই থাকলে তুমি এতদিন ধরে একা থাকতে না। তুমি আমার দেখা একজন শ্রেষ্ঠ পুরুষ।

তামিমঃ আচ্ছা কালকে কি আমায় টাকাগুলো দিতে পারবেন.? আসলে ডাক্তার বলেছে আম্মুর অবস্থা এখন ভালো পর্যায়ে নেই যত দ্রুত উনার চিকিৎসা করানো হবে ততই উনার জন্য ভালো হবে।

মায়াঃ কালকে অফিসে যাওয়ার সময় ব্যাংক থেকে তুলে দিব নে।

তামিমঃ আচ্ছা অনেক রাত হয়েছে এবার ঘুমাতে যান।

মায়াঃ তুমি এই রুমেই খাটের একদিকে ঘুমিয়ে পর আর আমিও একদিকে ঘুমিয়ে যাচ্ছি। নাহলে সকালে মাইশা ঘুম থেকে উঠে যদি তোমাকে দেখতে না পেয়ে আবার কান্নাকাটি করে।

তামিমঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

তারপর মায়া আর তামিম রুমে এসে মাইশার দু পাশে তাঁরা দুজনে ঘুমিয়ে পরল।
.
.
.
.
.
Loading…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here