#তোমাতে_আবদ্ধ_আমি,পর্বঃ- ৩
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
–আব্বু ওই আন্টিটা কি রাতে আমাদের পাশে ঘুমিয়েছিল.?
তামিম ঘুম থেকে উঠতেই হঠাৎ মাইশা তাকে এমন প্রশ্ন করে বসে। মাইশার প্রশ্নের জবাবে তামিম বলে উঠলো…
তামিমঃ হ্যাঁ মামনি। আর উনাকে এখন থেকে আম্মু বলে ডাকিও।
মাইশাঃ কিন্তু আমার আম্মু তো মারা গেছে।
তামিমঃ এটা তোমার আরেকটা আম্মু মামনি।
মাইশাঃ এই আম্মুটা আগের আম্মুর মতো মারা যাবে না.?
তামিমঃ না মামনি.?
মাইশাঃ কেন.?
তামিমঃ কারণ তোমার আগের আম্মু আমাদের কাছে এই আম্মুটাকে পাঠিয়েছেন। তোমার আম্মু ছাড়া থাকতে কষ্ট হয় যে তাই।
মাইশাঃ সত্যি.?
তামিমঃ হ্যাঁ মামনি।
মাইশাঃ তাহলে আমি আজকে স্কুলে গিয়ে সবাইকে বলবো যে আমার আগের আম্মু আমার জন্য আরেকটা আম্মু পাঠিয়েছেন।
তামিমঃ আচ্ছা বলিও, তা তোমার ওই আম্মুটা কই এখন.?
মাইশাঃ আম্মু তো রান্নাঘরে আমাদের জন্য নাস্তা বানাচ্ছে।
তামিমঃ ওহ তাই চল তো গিয়ে দেখে আসি তোমার আম্মু কি নাস্তা বানাচ্ছে আমাদের জন্য (বলেই মাইশাকে কোলে নিয়ে রান্নাঘরে চলে আসলো)।
তামিম রান্নাঘরে এসে দেখলো মায়া আলোর পরোটা বানাচ্ছে।
তামিমঃ একি তুমি এসব করতে আসলে কেন.? আমায় ডাক দিতে আমি করে নিতাম।
মায়াঃ এখন থেকে তো আমার কাজই এগুলা তো করলে সমস্যা কি.? তা ছাড়া পরিবারটা তো আমারই (মুচকি হেসে)।
তামিমঃ তারপরও প্রথম প্রথম এইসব করতে আসছ তাই
মায়াঃ বাসায় তো আমি প্রায়ই আম্মুর সাথে নাস্তা বানাই। সেই থেকেই এইসব শিখে ফেলেছি। যাও এখন তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও আমি টেবিলে নাস্তা দিচ্ছি।
তামিমঃ আচ্ছা, মামনি তুমি আম্মুর কাছে থাক (বলেই মাইশাকে কোল থেকে নামিয়ে সে ফ্রেশ হতে চলে গেল)।
মাইশাঃ আম্মু তুমি আমার আগের আম্মুর মতো আমাদের ছেড়ে চলে যাবে না তো.? (মায়ার পাশে গিয়ে বসে)
মায়াঃ না মামনি যাব না তোমাদের ছেড়ে।
মাইশাঃ জান আম্মু, আমাদের স্কুলের সব বাচ্চাদেরকে তাদের আম্মু স্কুলে নিয়ে যায় কিন্তু আমার আম্মু নাই বলে আমাকে সবসময় আব্বু স্কুলে নিয়ে যায়।
মায়াঃ এখন থেকে আমিই তোমাকে স্কুলে নিয়ে যাব মামনি।
কিছুক্ষণের মধ্যেই তামিম ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে এসে বসে পরল। অতঃপর মায়া সবার জন্য বানানো নাস্তা টেবিলে এনে রাখল। তামিম আর মায়া নাস্তা খেয়ে নিল সাথে মাইশাকেও নাস্তা খাইয়ে দিল। এরপর মায়া মাইশাকে স্কুলের জন্য তৈরি করে দিল। তারপর তাঁরা বাসা থেকে বেরিয়ে প্রথমে একটা ব্যাংকে এসে মায়া ২ লাখ টাকা তুলে সেগুলো তামিমকে দিয়ে দিল।
তামিমঃ তুমি তাহলে অফিসে চলে যাও আমি মাইশাকে তাঁর স্কুলে দিয়ে একটু হাসপাতালে যাব গিয়ে আম্মুর চিকিৎসার টাকাগুলো জমা দিয়ে আসি।
মায়াঃ আমিই মাইশাকে ওর স্কুলে নিয়ে যাব তুমি বরং হাসপাতালে চলে যাও টাকাগুলো নিয়ে।
তামিমঃ আচ্ছা ঠিক আছে। মামনি তুমি আম্মুর সাথে চলে যাও কেমন।
মাইশাঃ আচ্ছা আব্বু।
তারপর মায়া মাইশাকে নিয়ে তাঁর স্কুলের দিকে চলে গেলা আর তামিম সেখান থেকে হাসপাতালে চলে আসলো।
তামিমঃ ডাক্তার সাহেব আমি টাকা ম্যানেজ করে ফেলেছি আপনি আজকেই আমার আম্মুর অপারেশন শুরু করেন (ডাক্তারের কেবিনে ঢুকে)।
–আচ্ছা তাহলে আজ রাত ১০ টায় অপারেশন করা হবে। কারণ দিনে আমার কাছে এতো সময় নেই।
তামিমঃ আচ্ছা ঠিক আছে আমি তাহলে এখন আসি (বলেই সেখান থেকে তাঁর আম্মুর কাছে চলে আসলো)।
তামিমঃ আম্মু আজ রাত ১০ টায় তোমার অপারেশন করা হবে ডাক্তার বলেছে।
তামিমের আম্মুঃ বাবা আমার খুব ভয় করছে যদি আমি মারা যাই তাহলে আমার দাদুটার কি হবে.? ও একা একা কিভাবে থাকবে.?
তামিমঃ এইভাবে বল না আম্মু আল্লাহ অবশ্যই তোমাকে শিফা দান করবেন। আমি এখন অফিসে গেলাম সন্ধ্যায় আবার আসবো নে তুমি থাক কেমন।
তামিমের আম্মুঃ আচ্ছা বাবা সাবধানে যাস।
তারপর তামিম সেখান থেকে অফিসে চলে আসলো।
এদিকে মায়া মাইশাকে নিয়ে তাঁর স্কুলে এসে মাইশাকে ক্লাসে দিয়ে চলে যাওয়ার সময় মাইশা বলে উঠলো…
মাইশাঃ আম্মু তুমি স্কুল ছুটি হলে আমাকে আবার নিতে আসবে তো.?
মায়াঃ আমি তো তখন কাজে থাকব মামনি, আমি না আসলে হবে না.? আমি একটা আংকেলকে পাঠিয়ে দিব উনি এসে তোমায় নিয়ে যাবেন।
মাইশাঃ আচ্ছা আম্মু।
মায়াঃ আচ্ছা তাহলে আমি গেলাম (বলেই মাইশার গালে একটা চুমু খেয়ে সেখান থেকে অফিসে চলে আসলো)।
দুপুরবেলা…
লাঞ্চ টাইমের বিরতি পেয়ে অফিসের সকল স্টাফরা নাস্তা করতে অফিস কেন্টিনে চলে গেল। তামিমের এখনো কাজ শেষ হয়নি তাই সে এখনো বসে বসে কাজ করছে। হঠাৎ তাঁর ফোনটা বেজে উঠলো, ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে মায়া কল দিয়েছে।
তামিমঃ হে বল.? (কল রিছিভ করে)
মায়াঃ এখনো কাজ করছ.? লাঞ্চ টাইম তো হয়ে গেছে খাবা না কিছু.?
তামিমঃ হে আরেকটু কাজ বাকি রয়েছে শেষ হলেই খেতে যাব।
মায়াঃ অনেক কাজ করেছ আর করতে হবে না। তাড়াতাড়ি আমার কেবিনে চলে আস ৩ জন মিলে খাবার খেয়ে নিব।
তামিমঃ মাইশা এখনো কিছু খায়নি.?
মায়াঃ তোমাকে ছাড়া খাবে না বলছে।
তামিমঃ তোমার কেবিনে এসে খাবার খেলে যদি কেউ দেখে তাহলে কি না কি ভাববে। কারণ কেউ তো আর জানে না যে আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে।
মায়াঃ জানে না তো কি হয়েছে একদিন তো সবাইকে জানিয়ে দিব ই। তুমি চলে আস এখন সবাই খেতে গেছে কেউ দেখবে না।
তামিমঃ আচ্ছা ঠিক আছে আসছি।
তারপর তামিম তাঁর ডেক্স থেকে উঠে মায়ার কেবিনে চলে আসলো।
তামিমঃ আসতে পারি.? (বাহির থেকে)
মায়াঃ অনুমতি নেওয়ার কি আছে আস।
তামিমঃ তুমি তো আমার বস অনুমতি না নিয়ে আসলে বেয়াদবি হয়ে যায়না.?
মায়াঃ বস হওয়ার পাশাপাশি আমি কিন্তু তোমার স্ত্রীও।
তামিমঃ মামনি তুমি খাওনি কেন.? (প্রসঙ্গ পালটানোর জন্য)
মাইশাঃ তোমায় ছাড়া আমি কোনোদিন খেয়েছি.? (বড়দের মতো)
তামিমঃ ওরে আমার আম্মুটারে আমি তো ভুলেই গেছিলাম যে আমার মামনিটা আমায় ছাড়া খায় ই না (বলতে বলতে মাইশাকে কোলে উঠিয়ে নিল)।
মায়াঃ খেতে আস এবার তোমরা।
তামিম টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখল সেখানে ২ প্লেট বিরিয়ানি রাখা।
তামিমঃ বিরিয়ানি কিসের জন্য আনলে.?
মায়াঃ মাইশার নাকি বিরিয়ানি খেতে খুব পছন্দ তাই এনেছি।
তামিমঃ ওহ, আসলে আম্মুর বিষয় নিয়ে এই কয়দিন অনেক ঝামেলায় ছিলাম তাই মাইশাকে এতোদিন বিরিয়ানি খাওয়ানো হয়নি নাহলে সপ্তাহে দুই দিন ওর জন্য বাসায় বিরিয়ানি বানাতাম।
মায়াঃ মাইশা আমায় বলেছে এটা, এবার হাত ধুয়ে এসে বাবা মেয়ে খেতে বস।
তারপর তাঁরা ৩ জন মিলে দুপুরের খাবার খেয়ে নিল। খাওয়া শেষে তামিম আবার তাঁর ডেক্সে চলে আসলো। সারাদিন কাজ শেষে সন্ধ্যাবেলায় যখন অফিস শেষ করে তাঁরা আবার বাসায় চলে আসলো। বাসায় এসে রাতের খাবার খাওয়ার পর তামিম মায়াকে ডেকে বললো…
তামিমঃ আম্মুর অপারেশন রাত ১০ টায় করা হবে আমি এখন হাসপাতালে যাচ্ছি তুমি মাইশাকে নিয়ে বাসায় থাক।
মায়াঃ আমিও আসি তোমার সাথে.? মাইশাকেও নিয়ে যাব আমাদের সাথে।
তামিমঃ না না তুমি গিয়ে কি করবা, আম্মু যদি তোমাকে আমার সাথে দেখে তাহলে জিজ্ঞেস করবে তুমি কে তখন আম্মুকে কি বলবো.? আম্মু তো আর জানে না যে আমি তোমায় বিয়ে করেছি। আম্মু পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বাসায় আসলে উনাকে এই বিষয়ে বলবো এর আগে উনাকে এইসব জানানো যাবে না। তা ছাড়া মাইশার সকালে স্কুলও আছে, ওইখানে গেলে ও ঘুমাতে পারবে না।
মায়াঃ তুমি কখন আসবা তাহলে.?
তামিমঃ আম্মুর অপারেশন শেষ হলে আম্মুর পাশে তো থাকা লাগবে নাকি.? আমি ভোর হলেই চলে আসবো। তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করিও না মাইশাকে নিয়ে ঘুমিয়ে পর।
মায়াঃ আচ্ছা ঠিক আছে। আর কোনো সমস্যা হলে আমায় কল দিও।
তামিমঃ আচ্ছা আমি যাই এখন।
তামিম চলেই যাচ্ছিল এমন সময় মাইশা তাকে উদ্দেশ্য করে বললো…
মাইশাঃ আব্বু কোথায় যাচ্ছ তুমি.?
তামিমঃ আমি তোমার দাদুর কাছে যাচ্ছি মামনি। তুমি আম্মুর সাথে ঘুমিয়ে যাও আমি সকাল হলেই চলে আসবো।
মাইশাঃ আমিও যাব তোমার সাথে।
তামিমঃ না মামনি তুমি গেলে ডাক্তার আংকেল তোমার দাদুর চিকিৎসা করবে না। তাই তুমি থাক আব্বু যাই।
মাইশাঃ আচ্ছা
তারপর তামিম বাসা থেকে বেরিয়ে একটা রিক্সা নিয়ে হাসপাতালে চলে আসলো। রাত ১০ টা বাজার পর তামিমের আম্মুকে ওটিতে নেওয়া হলো অপারেশনের জন্য। তামিম বাহিরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাঁর আম্মুর জন্য মনে মনে দোয়া করতে লাগলো। প্রায় ঘন্টাখানিক পর ওটি থেকে একজন ডাক্তার বের হয়ে আসলো। ডাক্তারকে বের হতে দেখেই তামিম দৌড়ে উনার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল…
তামিমঃ ডাক্তার আমার আম্মু কেমন আছেন.? উনি ঠিক আছেন তো.? (অস্থির হয়ে)
–Yes, Now She Is Out Of Danger.
ডাক্তারের কথা শুনে তামিমের চোখে আনন্দে পানি চলে আসলো আর সে অন্তর থেকে রবের শুকরিয়া আদায় করে বলে উঠলো ‘আলহামদুলিল্লাহ’।
.
.
.
.
.
Loading…….