তোমাতে_আবদ্ধ_আমি,পর্বঃ- ১০,১১

0
970

#তোমাতে_আবদ্ধ_আমি,পর্বঃ- ১০,১১
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
#পর্বঃ- ১০

–খালা মনি মায়ার নাকি বিয়ে হয়ে গেছে.? কই আমাকে তো তোমরা কেউ এ বিষয়ে কিছু বললে না.!

সানি মায়াদের বাসায় এসে মায়ার আম্মুকে খুজতে লাগলো। খুজতে গিয়ে দেখল মায়ার আম্মু তাঁর আম্মুর সাথে ড্রয়িংরুমে বসে বসে গল্প করছেন। সানি ড্রয়িংরুমে ঢুকেই মায়ার আম্মুকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলে উঠলো। আজ সকালেই সানি তাঁর আম্মুকে নিয়ে মায়াদের বাসায় বেড়াতে এসেছে। বাসায় এসে মায়াকে না পেয়ে মায়ার আম্মুর কাছে জিজ্ঞেস করতেই জানতে পারল মায়া নাকি অফিসে আর অফিস একদম সন্ধ্যাবেলায় শেষ হয় তাই সে তাঁর আম্মুকে রেখেই মায়াদের অফিসে চলে আসে মায়ার সাথে দেখা করতে। তারপর সে মায়ার থেকে তাঁর বিয়ের কথা শুনে আবার মায়াদের বাসায় চলে আসে মায়ার আম্মুর থেকে সত্যিটা জানার জন্য। মায়ার আম্মু সানির কথাগুলো শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন…

মায়ার আম্মুঃ এ বিষয়ে কাউকে বলার মতো কোনো সুযোগ আমাদের হয়ে ওঠেনি রে বাবা। আর এ বিষয়টা কাউকে বলার মতোও না।

সানিঃ মানে.?

মায়ার আম্মুঃ মায়া যাকে বিয়ে করেছে সে আগে থেকেই বিবাহিত আর তাঁর একটা ছোট্ট মেয়েও আছে। মেয়েটাকে জন্ম দিতে গিয়ে ওই ছেলেটার স্ত্রী মারা যায় তারপর থেকে এতদিন সে নিজেই তাঁর মেয়েকে লালন-পালন করেছে। ছেলেটা মায়ার আব্বুর অফিসেই কাজ করে। হঠাৎ মায়া ওই ছেলেটার মধ্যে যে কি দেখল একেবারে ছেলেটাকে বিয়েকে করতে পাগল হয়ে উঠলো। বিয়েতে আমার একদমই মত ছিল না বিশ্বাস কর। কিন্তু মায়ার আব্বু রাজি থাকায় সে কাউকে না জানিয়েই ওই ছেলেটাকে বিয়ে করে ফেলে। এখন তুই ই বল এমন বিয়ের কথা আমি কিভাবে তোদেরকে বলবো.?

সানিঃ তুমি মায়াকে কখনো বলনি যে তুমি আর আম্মু মিলে আমার আর মায়ার বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলে.?

মায়ার আম্মুঃ ভেবেছিলাম তুই দেশে আসলে তখন এই কথাটা মায়াকে জানাব। কিন্তু তাঁর আগেই তো (বলেই উনি চুপ হয়ে গেলেন)।

সানিঃ এখন কি আর কিছু করা যাবে না.?

মায়ার আম্মুঃ এখন আর কি করতে পারি বল.?

সানিঃ মায়া নাহয় ওই ছেলেটাকে পছন্দ করে কিন্তু ওই ছেলেটা কি মায়াকে পছন্দ করে.?

মায়ার আম্মুঃ এটা তো আমি জানি নাহ।

সানিঃ তাহলে কি ওই ছেলেটা মায়াকে সম্পত্তির লোভে বিয়ে করেছে.?

মায়ার আম্মুঃ এটাই হবে, দেখেছে আমাদের অনেক সম্পত্তি আর যেই মায়া তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিল ওমনি ওই ছেলেটা রাজি হয়ে গেল।

সানিঃ আচ্ছা আমি এ বিষয়ে খুজ লাগিয়ে দেখি কিছু জানা যায় কি নাহ।

মায়ার আম্মুঃ এসব জেনেই বা এখন কি লাভ, তোর সাথে তো আর মায়ার বিয়ে দিতে পারবো না।

সানিঃ সময় হলেই লাভটা বুঝতে পারবে। আগে দেখি ওই ছেলেটা কেন মায়ার প্রস্তাবে তাকে বিয়ে করতে রাজি হলো। তারপর লাভ আর লসের হিসাব করা হবে। আচ্ছা আম্মু আজকে আমরা যাই নাকি.?

মায়ার আম্মুঃ সে কি খাবার না খেয়েই চলে যাবি নাকি.? তোর জন্য আমি সেই সকাল থেকে কতকিছু রান্না করে রেখেছি।

সানিঃ আচ্ছা তাহলে খাবার দাও খেয়ে নেই, খাওয়া শেষে চলে যাব।

মায়ার আম্মুঃ তোরা বস আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি (বলেই উনি ড্রয়িংরুম থেকে বেরিয়ে গেলেন)।

কিছুক্ষণের মধ্যে মায়ার আম্মু টেবিলে অনেক রকমের খাবার এনে রাখলেন আর সানিকে আর উনার বোনকে খেতে ডাকলেন। তাঁরা দুজনে এসে খাবার খেয়ে দিল। খাওয়া শেষে…

সানিঃ আম্মু বাসায় যাবা না.?

–হ্যাঁ যাব তো আরও কিছুক্ষণ বস তারপর নাহয় যাই।

মায়ার আম্মুঃ সে কি আজকে আর না গেলে কি.? থেকে যা না আমাদের এইখানে।

সানিঃ না খালা মনি অন্য একদিন আসলে থাকব।

–হ্যাঁ আপা আজকে নাহয় আমরা যাই আমারও বাড়ি ছাড়া এইখানে থাকতে ভালো লাগছে নাহ।

মায়ার আম্মুঃ তুই অন্তত আজকে থেকে যা না।

–না আপা অন্যদিন আসলে থাকব নে আজকে যাই।

মায়ার আম্মুঃ আচ্ছা তাহলে যা আবার একদিন আসিস কিন্তু (মন খারাপ করে)।

সানিঃ আচ্ছা খালা।

–––––––

মায়াঃ আম্মু খালা মনি কোথায় আব্বু কল দিয়ে বললেন সানি ভাই নাকি খালা মনিকেও সাথে নিয়ে এসেছিলেন.?

সন্ধ্যাবেলায় হঠাৎ মায়া অফিস শেষে তামিমকে বাসায় চলে যেতে বলে সে নিজেদের বাসায় চলে আসে। অফিসে থাকাকালীন মায়ার আম্মু মায়ার ফোনে অনেকবার কল দিয়েছিলেন কিন্তু তখন মায়ার ফোন সাইলেন্ট থাকায় সে এর কিছুই টের পায়নি। তারপর একবার কোনো একটা কাজে ফোনটা হাতে নিতেই দেখল তাঁর আম্মু অনেকবার কল দিয়েছিলেন। মায়া কলটা ব্যাক করতে যাবে ওমনি তাঁর ফোনে তাঁর আব্বুর কল আসে। ফোন রিছিভ করতেই তাঁর আব্বু বললেন তাঁর খালা মনিকে নিয়ে সানি বাসায় এসেছে, সে যেন অফিস শেষে একবার তাদের এসে দেখে যায়। তাই মায়া তাঁর খালা মনিকে দেখতে বাসায় এসে উনাকে খুজতে থাকে। কোথাও খুজে না পেয়ে মায়া তাঁর আম্মুর রুমে চলে আসে আর উক্ত প্রশ্নটা করে। মায়ার আম্মু মায়াকে দেখে কিছুটা রেগে গেলেন আর রাগ দেখিয়েই বললেন…

মায়ার আম্মুঃ না আসলেও তো হতো কে বলেছিল তোকে এইখানে আসতে.? দুপুরে এতবার কল দিলাম একটা কলও ধরলি না এমনকি নিজ থেকেও একটা কল দিলি না। ভেবেছিলাম কল দিয়ে বাসায় আসতে বললে একটাবার তোর খালা মনিকে দেখে যেতে পারতি কিন্তু তুই তো

মায়াঃ আরে আমার ফোন সাইলেন্ট করা ছিল আর কাজের চাপে ফোন হাতে নেওয়া হয়নি। যখন ফোন হাতে নিলাম তখন তোমার কল দেখে ব্যাক করতে যাব ওমনি আব্বু কল দিয়ে বসলেন। ফোন রিছিভ করতেই আব্বু বললেন খালা মনি বাসায় এসেছেন আমি যেন একবার উনাকেই দেখে যাই তাই অফিস শেষ করেই এইখানে চলে আসলাম। এখন বল খালা মনি কোথায়.?

মায়ার আম্মুঃ চলে গেছে তোর খালা মনি (রাগ দেখিয়ে)।

মায়াঃ কবে.?

মায়ার আম্মুঃ দুপুরের খাবার খেয়েই।

মায়াঃ তুমি উনাকে থাকতে বল নি কেন.?

মায়ার আম্মুঃ বলেছি অনেকবার কিন্তু ও শোনেনি, ওর নাকি বাড়ি ছাড়া থাকতে ভালো লাগছে না।

মায়াঃ ওহ, আচ্ছা তাহলে আমি এখন বাসায় গেলাম।

মায়ার আম্মুঃ মায়া শুন।

মায়াঃ কি বল.?

মায়ার আম্মুঃ আমার মনে হয় ওই ছেলেটা আমাদের সম্পত্তির লোভে তোকে বিয়ে করেছে। নাহলে তোর বলাতেই কেন ওই ছেলেটা তোকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেল বল.?

মায়াঃ কারণ (বলেই থেমে গেল)।

মায়ার আম্মুঃ কারণ কি বল.?

মায়াঃ সেটা এখন বলবো না সঠিক সময় আসলেই বলবো। আর তুমি অযথা ওর ব্যাপারে এমন আজেবাজে চিন্তাভাবনা করিও না তো প্লিজ, ও এমন ছেলে না আমি খুব ভালো করেই চিনি ওকে।

মায়ার আম্মুঃ ওর প্রেমে পরে তুই অন্ধ হয়ে গেছিস তাই তুই এমনটা বলছিস।

মায়াঃ হুম ঠিকই ধরেছ। আচ্ছা আমি গেলাম এখন।

কথাটা বলেই মায়া ওইখান থেকে চলে আসলো। পিছন থেকে তাঁর আম্মু অনেক কিছুই বলাবলি করছিলেন যার কোনো কিছুই মায়া শুনতে পায়নি। মায়া তাদের গাড়িটা নিয়ে বাসায় চলে আসলো আর ড্রাইভারকে আবার তাদের বাসায় পাঠিয়ে দিল।

তামিমঃ কোথায় ছিলে এতক্ষণ.?

মায়া বাসায় এসে ঢুকতেই তামিম তাকে দেখে তার উদ্দেশ্যে প্রশ্নটা করে।

মায়াঃ একটু বাসায় গিয়েছিলাম।

তামিমঃ আব্বা কি এখনো সুস্থ হোন নি.? নাকি উনার জন্য ঔষধ নিয়ে গেছিলে.?

মায়াঃ আরে নাহ আব্বু এখন সুস্থই আছেন। আসলে আমার একজন খালা এসেছিল ওই যে সানি ওর আম্মু।

তামিমঃ ওহ আচ্ছা।

মায়াঃ কিন্তু ওরা নাকি দুপুরের খাবার খেয়েই তাদের বাড়িতে চলে গেছে।

তামিমঃ ওহ। ওদের বাড়ি কোন জায়গায়.?

মায়াঃ _____ এই জায়গায়।

তামিমঃ অনেক দূর আছে।

মায়াঃ হুম।

রাতেরবেলা…

খাওয়া দাওয়া শেষে তামিম রুমে এসে ঢুকতেই তাঁর ফোনে একটা মেসেজ আসে। তামিম মেসেজটা সিন করতেই অবাক হয়ে গেল। একটা আননোন নাম্বার থেকে মেসেজটা এসেছে এতে সে আরও অবাক হয়। মেসেজটায় লিখা ছিল…
-খুব শীগ্রই তোমার জীবন থেকে তোমার প্রিয় একটা মানুষ হারাতে চলেছে মিস্টার তামিম। জাস্ট ওয়াচ এন্ড সি।
.
.
Loading…….

#তোমাতে_আবদ্ধ_আমি
#লেখকঃ- Tamim Ahmed (২য় টুইস্ট)
#পর্বঃ- ১১

তামিম বিছানায় শুয়ে মাথার উপর হাত দিয়ে মনে মনে ভাবছে, ‘ওই অচেনা নাম্বার থেকে আসা মেসেজটা কে দিল আর কেনই বা দিল.? আমি কার এমন ক্ষতি করেছি যে কেউ আমাকে এমন মেসেজ দিবে.? নাকি কেউ মজা করে অথবা ভুল করে এই মেসেজটা আমায় পাঠিয়ে দিয়েছে.? না না কেউ ভুল করে এই পাঠায়নি কারণ মেসেজে আমার নামটা উল্লেখ করা ছিল। এর মানে যে এই মেসেজটা পাঠিয়েছে সে নিশ্চয়ই আমাকে চিনে কিন্তু কে সে.? আর আমার প্রিয় মানুষটা বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে.? মাইশাকে নাকি আম্মুকে.? মায়াকে বোঝানো হয়নি কারণ মায়া আমার প্রিয় মানুষ না, আমার প্রিয় মানুষ তো আরও ৬ বছর আগেই আমায় ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছে। কিন্তু এত বছর আমায় কেউ এমন মেসেজ দিল না অথচ মায়ার সাথে আমার বিয়ের এতদিন পর হঠাৎ এই মেসেজটা আসলো এর মানে কি এইখানে আমার প্রিয় মানুষটা বলতে মায়াকে বোঝানো হয়েছে.?

মায়াঃ এই যে শুয়ে শুয়ে এতো কি ভাবছ, ঘুমাবে না.?

হঠাৎ মায়ার কথায় তামিম ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলো।

তামিমঃ হে হে ঘুমাব তুমি ঘুমিয়ে পর।

মায়াঃ কি হয়েছে তোমার.? চিন্তিত মনে হচ্ছে যে।

তামিমঃ নাহ কই কি হবে কিছু হয়নি। তুমি ঘুমিয়ে পর।

মায়াঃ আচ্ছা বলে বিছানায় উঠে একপাশ ফিরে শুয়ে পরল।

তামিমও আর এ বিষয়ে কিছু না ভেবে মায়ার অন্যপাশ হয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পরল।

–––––––

কেউ একজন মায়ার হাত ধরে টেনে তাকে নিজের সাথে নিয়ে যাচ্ছে আর তামিম মাটিতে শুয়ে থেকে অসহায়ের মতো বলে যাচ্ছে, ‘মায়াকে নিয়ে যেও না প্লিজ।’ মায়াকে নিয়ে যেও না। এদিকে মায়াও তামিমের কাছে আসার জন্য বার বার ওই ব্যাক্তিটার থেকে ছুটার চেষ্টা করছে কিন্তু মায়া কিছুতেই ওই ব্যাক্তিটার থেকে ছুটতে পারছে না। ওই ব্যাক্তিটাও অনেক জোরাজুরি করে একসময় মায়াকে নিয়ে সেখান থেকে উধাও হয়ে গেল। আর এদিকে তামিম অনেক কষ্টে মাটি থেকে উঠে দাড়ালো আর চোখের পানি ছেড়ে ‘মায়া’ ‘মায়া’ বলে চিৎকার করতে লাগলো।

হঠাৎ মাঝরাতে তামিমের চিৎকার শুনে মায়া ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে আর তামিমের দিকে তাকিয়ে দেখে তামিম ঘুমের ঘোরে তাঁর নাম ধরে ডেকে যাচ্ছে। তামিমকে এইভাবে তাঁর নাম ধরে ডাকতে দেখে মায়া বেশ অবাক হলো আর সাথে সাথে তামিমকে ধাক্কাতে লাগলো ঘুম থেকে তোলার জন্য।

মায়াঃ এই কি হয়েছে তোমার, এইভাবে চিৎকার করছ কেন.?

হঠাৎ কেউ ধাক্কা দেওয়াতে তামিমের ঘুম ভেঙে যায় আর শুয়া থেকে লাফ মেরে উঠে বসে এদিক সেদিক তাকাতে থাকে। তামিমের চোখে মুখে আতঙ্কের চাপ দেখে পাশ থেকে মায়া তামিমের কাধে হাত রেখে বললো…

মায়াঃ কি হয়েছে তোমার কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছ নাকি.?

তামিম মায়ার কথা শুনে তাঁর দিকে ফিরে তাকাল আর সাথে সাথেই মায়াকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো। তামিমের এমন কাজে মায়া পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে গেল। এই প্রথম তামিম মায়াকে জড়িয়ে ধরলো এতে মায়া অবাক হলেও তাঁর মনের ভিতরে কি যে ভালো লাগা কাজ করছে সেটা প্রকাশ করার মতো নয়। তামিম এবার বলতে লাগলো, ‘প্লিজ মায়া আমাকে ছেড়ে যেও না, তোমায় ছাড়া আমি থাকতে পারবো না।’ মায়া এবার বুঝতে পারলো তামিম কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছে তাই ভয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে আছে। এবার মায়াও আস্তে আস্তে তামিমকে জড়িয়ে ধরলো আর চোখ বুঝে এই সময়টা উপভোগ করতে লাগলো। তামিম যখন দেখলো সে মায়াকে জড়িয়ে ধরে আছে তখন সে সাথে সাথে মায়াকে ছেড়ে দিল আর নিজেকেও মায়ার থেকে আস্তে করে ছাড়িয়ে নিল। তামিমের এমন কাজে মায়া দ্বিতীয়বারের মতো অবাক হলো। নিজেই প্রথমে জড়িয়ে ধরলো আর এখন নিজেই আবার ছেড়ে দিল.!

তামিমঃ সরি আমি আসলে ইচ্ছা করে তোমায় জড়িয়ে ধরি নাই প্লিজ আমাকে ভুল বুঝ না।

মায়াঃ সমস্যা নেই It’s Okay. তুমি কি ঘুমের মধ্যে কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছিলে নাকি.?

তামিমঃ হ্যাঁ না মানে হ্যাঁ দেখেছিলাম।

মায়াঃ কি দেখেছ সপ্নে.? (বলেই মায়া তামিমের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো)

তামিম মনে মনে ভাবলো, সপ্নে যা দেখেছি তা মায়াকে বলা যাবে না নাহলে সে মনে করবে আমি মনে হয় তার বিষয়ে সারাক্ষণ ভেবে চলি তাই এখন সপ্নতেও তাকে দেখতে পাই।

মায়াঃ চুপ করে আছ যে.?

তামিমঃ না মানে কি দেখেছি ঠিক মনে পরছে না সবকিছু ঘুলিয়ে যাচ্ছে।

মায়াঃ আমাকে নিয়ে কোনো সপ্ন দেখেছিলে নাকি.? না মানে ঘুমের ঘোরে তো বার বার আমার নাম ধরে ডাকছিলে তাই বললাম।

তামিমঃ কি দেখেছি মনে পরছে না। তা ছাড়া আগেও আমি অনেক দুঃস্বপ্ন দেখতাম। তখন তো একা ঘুমাতাম তাই কাউকে ঘুমের মধ্যে ডাকতাম না এখন তুমি আমার পাশে থাক তাই মনে হয় ঘুমের মধ্যে তোমার নাম ধরে ডেকেছি।

মায়াঃ হতেও পারে।

–তামিম তোর কি হয়েছে বাবা.? এতো রাতে চিৎকার করছিলি কেন.? (হঠাৎ তামিমের আম্মু তাদের ঘরে ঢুকে উক্ত কথাটা বললেন)।

মায়াঃ আসলে উনি ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখেছিলেন তাই ভয় পেয়ে এইভাবে চিৎকার করছিলেন।

তামিমের আম্মুঃ কিন্তু সে তো এতো বছরে কখনো দুঃস্বপ্ন দেখেনি তাহলে আজ হঠাৎ করে

তামিমঃ আরে আম্মু মানুষ কি আর দুঃস্বপ্ন ইচ্ছা করে দেখে নাকি.? হঠাৎ দেখে ফেলেছি এখন আর এ বিষয়ে কথা বারিয়ে কি লাভ.? তুমি যাও তো ঘুমাও গিয়ে শুধু শুধু ঘুম থেকে উঠে আসলে কেন।

তামিমের আম্মুঃ তোর চিৎকার শুনেই তো উঠে আসলাম তোকে দেখার জন্য। আচ্ছা আমি যাচ্ছি তোরা ঘুমিয়ে পর। আর ডান কাতে ঘুমাস তাহলে আর শয়তান দুঃস্বপ্ন দেখাতে পারবে না (কথাগুলো বলেই তামিমের আম্মু রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন)।

মায়াঃ আচ্ছা এবার তাহলে ঘুমিয়ে পর।

তামিমঃ হুম তুমিও (বলেই ডান কাত হয়ে শুয়ে পরল)।

মায়াও তামিমের কথামতো শুয়ে পরল। শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো, আচ্ছা ও তো বললো ও আগেও অনেক দুঃস্বপ্ন দেখত কিন্তু আম্মু বললো সে আগে কখনো দুঃস্বপ্ন দেখেনি, তাহলে ও কি আমায় মিথ্যা বলেছে.? আর ঘুমের মধ্যে ও যেহেতু আমার নাম ধরে ডাকছিল তাহলে ও নিশ্চয়ই আমাকে নিয়েই সপ্ন দেখেছিলে কিন্তু সে ঘুমের মধ্যে এইভাবে চিৎকার করে উঠলো কেন.?

এদিকে তামিমও শুয়ে শুয়ে শুয়ে ভাবছে, আজ হঠাৎ মায়াকে নিয়ে এমন দুঃস্বপ্ন দেখলাম কেন.? আগে তো কখনো আমি এমন দুঃস্বপ্ন দেখি নি। শুনেছি সপ্নে দেখা অনেক কিছুই বাস্তবে ঘটে তাহলে কি এখন যা কিছু দেখলাম তা আমার জীবনেও ঘটবে.? তার মানে কি মায়া আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাবে.?

–––––––

ইরাঃ এই যে স্যার কাজ রেখে কি এতো ভাবছেন জানতে পারি.? না মানে অনেক্ষণ যাবত লক্ষ্য করছি আপনি কি যেন ভেবে চলছেন।

সকালবেলা তামিম অফিসে এসে নিজের ডেক্সে বসে অফিসের কাজ করছিল কিন্তু হঠাৎ তাঁর মাথায় সেই সপ্নের কথাটা মনে পরে যায়। তামিম অনেক চেষ্টা করেও ওই সপ্নের কথাটা ভুলে কাজে মন দিতে পারছিল না শুধু ভাবছিল এখন সে কিভাবে এই সপ্নের কথাটা ভুলে কাজে মন দিবে। এমন সময় তামিমের পাশের ডেক্সে বসে থাকা ইরা মেয়েটা তামিমকে উদ্দেশ্য করে উক্ত কথাগুলো বললো। হঠাৎ কারও এমন কথা শুনে তামিম আশেপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করল কে এই কথাটা বলেছে। যখন সে বুঝল ইরা এই কথাটা বলেছে তখন তামিম বললো…

তামিমঃ তেমন কিছু নাহ। আর আপনি আমায় মজার ছলে স্যার ডাকছেন নাকি ম্যাডাম আমার ওয়াইফ বলে আমায় স্যার বলে ডাকছেন.?

ইরাঃ আপনি ম্যাডামের হাসবেন্ড তাই।

তামিমঃ কিন্তু আমি এই অফিসের বস না তাই আমাকে স্যার ডাকার কোনো প্রয়োজন নেই।

ইরাঃ আচ্ছা তাহলে ভাইয়া বলে ডাকতে পারি.? কারণ আপনি তো বয়সে আমার অনেক বড় হবেন।

তামিমঃ ওকে ডাকতে পারেন।

ইরাঃ ওকে ভাইয়া।

লাঞ্চ টাইমের সময় হঠাৎ তামিমের ফোনে একটা কল আসে। মায়া ফোন করেছে এটা ভেবে তামিম কল রিছিভ করে ফোনটা কানে ধরলো।।

–কেমন আছেন মিস্টার তামিম.? চিনতে পেরেছ আমায়.?

ফোনের ওপাশ থেকে একটা মেয়েলি কণ্ঠে কথাগুলো ভেসে উঠলো। তামিম অচেনা মেয়েটার কণ্ঠ শুনেই চমকে উঠলো আর বললো…

তামিমঃ বৃষ্টি.!
.
.
.
.
.
Loading…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here