তোমাতে_আবদ্ধ_আমি,পর্বঃ- ১২,১৩

0
1070

#তোমাতে_আবদ্ধ_আমি,পর্বঃ- ১২,১৩
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
#পর্বঃ- ১২

তামিম নিজের ডেক্সে বসে আছে আর বৃষ্টির কথা ভাবছে। এতো বছর পর মেয়েটা তাঁর নাম্বার কিভাবে পেল আর তাকে কেনই বা কল দিল এটাই সে ভাবছে। অবশ্য বৃষ্টি তাকে তেমন কিছুই বলেনি শুধু কল কেটে দেওয়ার আগে একটা কথাই বলেছে, “খুব শীগ্রই তোমার সাথে আমার দেখা হবে।”

বৃষ্টি হচ্ছে নীলার বেস্ট ফ্রেন্ড। নীলার বেস্ট ফ্রেন্ড হওয়াতে বৃষ্টির সাথে তামিমেরও একটা ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তাঁরা সবাই একই কলেজে পড়েছে। বৃষ্টি অবশ্য তামিমকে মনে মনে ভালোবাসতো কিন্তু কখনো সেটা তামিমকে বলতে পারেনি। এর কারণ হলো নীলা। বৃষ্টি যখন জানতে পারে তামিম আর নীলা একে অপরকে ভালোবাসে তখন বৃষ্টি মনে খুবই আঘাত পায় আর তাঁর মনের কথা মনেই চেপে রাখে। কারণ সে নিজের ভালোবাসার কথা প্রকাশ করে নীলার মনে কষ্ট দিতে চায়নি। তামিম আর নীলার বিয়ের এক মাস পর বৃষ্টি হুট করে সেই শহর ছেড়ে কোথায় যেন চলে যায়। তারপর থেকে আর বৃষ্টির সাথে তাদের কখনো দেখা হয়নি।

ইরাঃ ভাইয়া আপনার ফোনে কল এসেছে কলটা রিছিভ করছেন না কেন.?

হঠাৎ কারও এমন কথায় তামিম ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলো আর ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো মায়া কল করেছে। তামিম কিছু না ভেবেই কলটা রিছিভ করলো।

তামিমঃ হে বল.?

মায়াঃ আজ লাঞ্চ করবা না নাকি.?

তামিমঃ লাঞ্চ টাইমের সময় হলে না লাঞ্চ করবো, আগে লাঞ্চ টাইমের সময় হোক।

মায়াঃ ঘড়িতে তাকিয়ে দেখ তো কয়টা বাজে।

তামিম মায়ার কথামতো অফিসের দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ২ঃ১০ বেজে গেছে। লাঞ্চ টাইম শুরু হয় ২ টার সময় আর এখন ২ঃ১০ বাজে.! এতো সময় চলে গেল অথচ আমি টেরই পেলাম না কি আজব.!

মায়াঃ তাড়াতাড়ি কেবিনে চলে আস এবার (বলেই কলটা কেটে দিল)।

তামিমও আর দেড়ি না করে নিজের ডেক্স থেকে উঠে সোজা মায়ার কেবিনে চলে আসলো। কেবিনে ঢুকে হাত ধুয়ে এসে একটা চেয়ার টেনে মায়ার সামনা-সামনি বসে পরল।

মায়াঃ আচ্ছা তুমি এতক্ষণ ধরে কি এতো ভাবছিলে যে লাঞ্চ টাইম হয়ে গেল অথচ তার টেরই পেলে না.?

তামিমঃ কই কি ভাবছিলাম আমি তো কাজ করছিলাম।

মায়াঃ আমার কেবিন থেকে কিন্তু তোমার ডেক্স ভালো করেই দেখা যায় তাই আমার কাছে অযথা মিথ্যা বলবা না। আর একটু আগে তোমায় কে কল দিয়েছিল.? কল রিছিভ করতেই দেখলাম অনেকটা চমকে উঠলে।

মায়ার কথাগুলো শুনে তামিম ভাবনায় পরে গেল। সে এখন মায়াকে কি বলবে.? সত্যিটা বললে যদি মায়া অন্যকিছু ভাবে আর মিথ্যাও তো বলা যাবে না বললেই মায়া ধরে ফেলবে। তামিম এ বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বললো…

তামিমঃ আমার খুদা লেগেছে কি খাবার এনেছ দাও তাড়াতাড়ি।

তামিমের কথা শুনে মায়া বুঝতে পারলো সে এখন তাকে এ বিষয়ে কিছু বলতে চাচ্ছে না তাই কথা কাটানোর জন্য এই কথাটা বলেছে। মায়া মনে মনে ভাবলো রাতে বাসায় গিয়ে তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করবে এখন আর এ বিষয়ে কিছু না বলাই ভালো। অতঃপর মায়া তাদের দুজনের জন্য আনা খাবারগুলো দুই প্লেটে নিয়ে একটা প্লেট তামিমের দিকে এগিয়ে দিল আর অন্যটা নিয়ে নিজে খেতে শুরু করলো। তামিমও আর বসে না থেকে খাওয়া শুরু করলো। খাওয়া শেষে তামিম যখন মায়ার ডেক্স থেকে চলে আসতে যাবে তখন মায়া তাকে ডাক দিয়ে দাড়াতে বললো।

মায়াঃ আজকে আর তোমার কাজ করতে হবে না তুমি বাসায় চলে যাও আর গিয়ে রেস্ট নাও।

তামিমঃ বাসায় গিয়ে রেস্ট নিব মানে.! কেন আমি অসুস্থ নাকি.?

মায়াঃ যেটা বলেছি সেটা কর, ভুলে যেও না আমি কিন্তু তোমার বস আর আমি যা বলবো তা তোমায় মানতে হবে।

তামিমঃ কিন্তু

মায়াঃ কোনো কিন্তু নয় আমি যেটা বলেছি সেটাই। তুমি এখনই বাসায় চলে যাবে। আমি ড্রাইভারকে কল দিয়ে বলে দিচ্ছি সে তোমায় বাসায় দিয়ে আসবে।

তামিমঃ আচ্ছা ঠিক আছে গেলাম আমি (বলেই মায়ার কেবিন থেকে বেরিয়ে নিজের ডেক্সে চলে আসলো)।

তামিম নিজের ডেক্সে এসে নিজের ব্যাগপত্র গোছাতে লাগলো। এমন সময় ইরা নিজের ডেক্সে এসে তামিমকে নিজের ব্যাগ গোছাতে দেখে বললো…

ইরাঃ ভাইয়া কোথায় যাচ্ছেন.?

তামিমঃ শরীরটা একটু খারাপ লাগছে তাই বাসায় চলে যাচ্ছি।

ইরাঃ ওহ আচ্ছা যান তাহলে।

তারপর তামিম নিজের ব্যাগ কাধে নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে আসলো আর বাহিরে থাকা মায়ার পারসোনাল গাড়িতে উঠে বসলো। তামিম গাড়িতে উঠার পর ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিয়ে তামিমকে তাদের বাসার সামনে নিয়ে আসলো। তামিম গাড়ি থেকে নেমে বাসার ভিতরে চলে আসলো। এই সময় তামিমকে বাসায় দেখে তামিমের আম্মু বলে উঠলেন…

তামিমের আম্মুঃ কিরে বাবা আজ এতো তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসলি যে।

তামিমঃ আসলে অনেক মাথা ব্যাথা করছিল তাই মায়া বললো বাসায় চলে যেতে তাই চলে আসলাম।

তামিমের আম্মুঃ আচ্ছা তাহলে এখন ঘরে গিয়ে কিছুক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাক দেখবি মাথা ব্যাথা কমে যাবে।

তামিমঃ মাইশা কোথায়.? আর তোমরা দুপুরে খেয়েছ.?

তামিমের আম্মুঃ হ্যাঁ আমরা খেয়েছি আর মাইশা এখন ঘুমিয়ে আছে।

তামিমঃ আচ্ছা তাহলে তুমিও গিয়ে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে পর আমি রুমে গেলাম (বলেই তাদের রুমে চলে আসলো)।

তামিম রুমে এসে অফিসের ব্যাগটা বিছানায় রেখে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল অতঃপর বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ ঘুমানোর চেষ্টা করল।

রাতেরবেলা…

খাওয়া দাওয়া শেষে তামিম আর মায়া তাদের রুমে চলে আসলো। রুমে ঢুকেই মায়া তামিমকে উদ্দেশ্য করে বললো…

মায়াঃ আচ্ছা অফিসে লাঞ্চ টাইমের সময় তোমায় কে কল দিয়েছিল.? আর আমি যতবারই তোমার দিকে তাকিয়েছি ততবারই দেখেছি তুমি কোনো একটা বিষয় নিয়ে ভেবে চলেছ। কি নিয়ে এতো ভাবছিলে বল তো আমায়.?

মায়ার এমন কথায় তামিম আবার ভাবনায় পরে গেল যে এখন সে মায়াকে কি বলবে। অফিসে নাহয় কোনোভাবে বিষয়টা এড়িয়ে চলে এসেছে কিন্তু এখন সে কিভাবে এই বিষয়টা এড়িয়ে যাবে.? তারপরও তামিম বললো…

তামিমঃ আরে তখন একটা কলেজ লাইফের ফ্রেন্ড ফোন দিয়েছিল। এতো বছর পর ফোন দেওয়াতে একটু অবাক হয়ে গেছিলাম যে এতো বছর পর কিভাবে সে আমার নাম্বার খুজে পেল। তাঁর সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে সে বললো সে নাকি কয়দিন আগেই আমাদের এইখানের একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে। ওর কথা শুনে আমি বললাম আমিও এইখানেই থাকি। তারপর ও বললো ওর বউকে নিয়ে নাকি একদিন আমাদের এইখানে বেড়াতে আসবে। আমিও বললাম আচ্ছা আসিস।

মায়াঃ তাহলে তুমি তখন এতো কি ভাবছিলে.?

তামিমঃ আরে ও অনেক বছর বিদেশে ছিল। তো আমাদের এইখানে আসলে যদি আমাদের বাসা বা আমাদের রান্নাবান্না পছন্দ না করে তাই ভাবছিলাম আর কি যে কি করা যায়।

মায়াঃ তুমিও না, এই সামান্য বিষয় নিয়ে কেউ এতো চিন্তা করে.? এইসব নিয়ে আর চিন্তা করিও না আমি সব ম্যানেজ করে নিব। তা কবে আসবে তোমার ওই ফ্রেন্ড.?

তামিমঃ সেটা তো বলেনি তবে আসার একদিন আগে আমায় কল দিবে বলেছে।

মায়াঃ ওহ, আচ্ছা তাহলে এখন ঘুমিয়ে পর আর জেগে থেকে কি করবা।

তামিমঃ হুম।

তামিম ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিবে এমন সময় তাঁর ফোনে একটা মেসেজ আসে। তামিম মেসেজটা ওপেন করে মেসেজটা পড়তেই অবাক হয়ে গেল। মেসেজে লিখা ছিল, “কাল সকাল ১০ টায় ____ এই জায়গায় চলে এস, না আসলে আমি তোমার বাসায় চলে আসবো, আমি বৃষ্টি।”

-বৃষ্টি একবার বলেছিল তাঁর সাথে খুব শীগ্রই আমার দেখা হবে, তাই বলে কালকেই.! কালকে তো আবার অফিস আছে, অফিসে না গিয়ে বৃষ্টির সাথে দেখা করতে যাব নাকি.? না গেলে তো সে আবার আমার বাসায় চলে আসবে আর গেলে তো অফিসে যেতে দেড়ি হবে। দেড়ি করে গেলে মায়া যদি আবার এর কারণ জিজ্ঞেস করে তখন আমি কি বলবো.? আর বৃষ্টি যে বললো আমি ওইখানে না গেলে ও আমার বাসায় চলে আসবে, ও কি আমার বাসা চিনে.? হয়তো চিনে ফেলেছে কারণ ও তো কলেজে থাকাকালীন গোয়েন্দাগিরির জন্য এক্সপার্ট ছিল। কিন্তু ও এতো বছর পর কেন আমার সাথে দেখা করতে চাচ্ছে আর ও আমার খুঁজ পেল কিভাবে.? কালকে তাঁর সাথে দেখা করলেই সবকিছু জানতে পারব এখন আপাতত ঘুমিয়ে পরি।

এদিকে তামিমকে উক্ত মেসেজটা দিয়ে বৃষ্টি নামের মেয়েটা নিজেই নিজের সাথে কথা বলতে লাগলো, অবশেষে এতো বছর পর আমি তামিমের সাথে কালকে দেখা করতে যাচ্ছি.! কালকে ওর সাথে দেখা হলেই ওকে আমার মনের এতো বছরের জমানো কথাগুলো বলে দিব। তারপর যদি সে আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায় তাহলে তাঁর সাথেই আমি আমার বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিব (কথাগুলো বলেই বৃষ্টি মেয়েটা তামিমের একটা ছবি তাঁর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো)।
.
.
.
.
.
Loading…….

#তোমাতে_আবদ্ধ_আমি
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
#পর্বঃ- ১৩
,,
,,
,,
,,
–মায়া আজ আমার অফিসে যেতে একটু দেড়ি হবে। আমার একটা কাজ আছে এখন ওইখানে যাব আর ওই কাজটা শেষ হলে অফিসে চলে আসবো। তুমি মাইশাকে স্কুলে দিয়ে অফিসে চলে যেও।

সকালের নাস্তা খাওয়া শেষে তামিম আর মায়া দুজন রুমে এসে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হতে লাগলো। মায়া রেডি হওয়ার আগেই তামিম ঝটপট রেডি হয়ে নিল আর অফিসের ব্যাগটা কাধে নিয়ে মায়াকে উদ্দেশ্য করে উক্ত কথাগুলো বললো।

মায়াঃ কোথায় কি কাজ করতে যাচ্ছ তুমি.? তুমি আবার অন্য কোনো জায়গায় কাজ করছ না তো.?

তামিমঃ আরে না কি বলছ এইসব, আমি কেন অন্য কোথাও কাজ করবো.? আসলে একটা দরকারে এক জায়গায় যাচ্ছি তাই অফিসে যেতে আমার দেড়ি হবে বলে তোমায় আগেই কথাটা জানিয়ে দিলাম।

মায়াঃ ওহ আচ্ছা তাহলে যাও আর সাবধানে যেও।

তামিমঃ আচ্ছা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে আসে।

তামিম চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর মায়া মাইশাকে নিয়ে তাঁর স্কুলের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বেরিয়ে পরল।

––––––

তামিম আর বৃষ্টি নামের মেয়েটা একটা কফিশপে এসে দুজনের সামনা-সামনি বসে আছে। দু’জনেই কফির কাপে আঙুল ঘোরাচ্ছে, কারও মুখে কোনো কথা নেই। বেশ কিছুক্ষণ পর নিরবতা ভেঙে বৃষ্টি নামের মেয়েটা বলে উঠলো…

বৃষ্টিঃ এতো বছর পর আমি কিভাবে তোমার নাম্বার খুঁজে পেলাম আর কেনই বা তোমায় এইখানে আসতে বললাম, নিশ্চয়ই তোমার মনে এইসব প্রশ্নের ঘুরপাক খাচ্ছে তাইনা.?

তামিমঃ হ্যাঁ।

বৃষ্টিঃ তা আমি এতো বছর কোথায় ছিলাম জিজ্ঞেস করবে না.?

তামিমঃ কোথায় ছিলে তুমি এতো বছর.?

বৃষ্টিঃ আমি লন্ডনে স্টাডি করতে গেছিলাম। পড়াশোনায় ভালো হওয়াতে লন্ডনের একটা মেডিকেলে আমি ভর্তি হতে পারি। ওইখানে ৫ বছর পড়াশোনা করে আরও এক বছর থেকে কয়েকদিন আগেই দেশে আসলাম। আজ আমি একজন ডাক্তার।

তামিমঃ তা আমার খুঁজ কোথায় পেলে আর আমার সাথে দেখা করার কারণ কি.?

বৃষ্টিঃ তোমার খুঁজ কিভাবে পেলাম এটা আমি বলবো না কারণ তুমি ভালো করে জান কলেজে থাকাকালীন আমি গোয়েন্দাগিরিতে এক্সপার্ট ছিলাম। তোমার সাথে দেখা করার কারণটা বলবো শুধু। তুমি হয়তো জান না যে আমি তোমায় সামনা-সামনি দেখতে পেয়ে কতটা খুশি হয়েছি। তুমি হয়তো এটাও জান না যে কলেজে থাকাকালীন নীলা বাদেও কেউ একজন তোমায় প্রচন্ড ভালোবাসতো তবে সেটা গোপনে। তাঁর মনের কথাগুলো কখনো সে তোমার কাছে প্রকাশ করেনি নীলা কষ্ট পাবে বলে। তবে আজও সে তোমায় প্রচন্ড ভালোবাসে আর আগামীতেও বেসে যাবে যদি তুমি তাকে একটা সুযোগ করে দাও। আর আজ সে তোমায় তাঁর এতো বছরের মনের জমানো কথাগুলো বলতে যাচ্ছে। আমিই সেই কেউ একজন যে তোমায় প্রচন্ড ভালোবাসি। আর তোমার সাথে দেখা করার কারণটা হলো আমার মনের কথাগুলো তোমায় জানানো। আমি তোমায় সেই কলেজ লাইফ থেকেই ভালোবাসি তামিম কিন্তু আমি যখন তোমার নীলার ভালোবাসার কথাটা জানলাম তখন আমি আর এ বিষয়ে তোমায় কিছু বলিনি, নীলা কষ্ট পাবে বলে। তাই আমি তোমাদের বিয়ের এক মাস আগেই সেই শহর ছেড়ে লন্ডনে পাড়ি জমাই। এক বছর পর হঠাৎ জানতে পারি নীলা নাকি এক সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছে। আমি জানি তুমি নীলাকে কতটা ভালোবাস আর আমি এটাও জানি তুমি নীলার সুখে এখনো বিয়ে কর নি। দেখ তামিম এক বছর ধরে কিন্তু আমার জন্য অনেক বিয়ের প্রস্তাব আসতেছে। কিন্তু আমি তোমার জন্য এখনো বিয়ে করি নি। তুমি আমায় ফিরিয়ে দিও না প্লিজ। তুমি আমায় বিয়ে করে নাও আমি তোমার মেয়েকে একদম নিজের মেয়ে মনে করেই

তামিমঃ বৃষ্টি এবার থাম প্লিজ আর আমাকে কিছু বলতে দাও।

বৃষ্টিঃ আচ্ছা কি বলবে বল.?

তামিমঃ নীলা মারা যাওয়ার পর আমি আর বিয়ে করিনি মাইশার কথা ভেবে। কারণ ঘরে নতুন কেউ আসলে হয়তো মাইশাকে নিজের মেয়ের মতো করে দেখবে না এটা ভেবে। কিন্তু এক মাস আগে আমার আম্মুর তল পেটে টিউমার ধরা পরে আর উনার চিকিৎসার জন্য আমার ২ লাখ টাকার প্রয়োজন হয় আর ওই ২ লাখ টাকা দেওয়ার বদলে আমার অফিসের বসের মেয়ে আমায় বিয়ের প্রস্তাব দেয়, আর আমিও আম্মুর কথা ভেবে বাধ্য হয়ে ওকে বিয়ে করে ফেলি।

বৃষ্টিঃ তুমি আমার সাথে ফান করছ তাইনা.?

তামিমঃ আমি ফান করছি না সত্যি বলছি।

তামিমের কথাটা শুনে এবার বৃষ্টির চোখে আস্তে আস্তে জল চলে আসলো। বৃষ্টি একবার নিজের চোখের পাতা বুজল আর ওমনি তাঁর দু চোখ থেকে টুপ করে দু ফোটা জল গড়িয়ে পরল। বৃষ্টি এবার ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না শুরু করে দিল। বৃষ্টির কান্না দেখে তামিমের বেশ মায়া হলো আর বললো…

তামিমঃ দেখ বৃষ্টি, আমি হয়তো তোমার ভাগ্যে নেই নাহলে অনেক আগেই তুমি আমার লাইফ পার্টনার হয়ে যেতে। প্লিজ এইভাবে কেদ না নিজেকে শান্ত কর।

তামিমের কথাগুলো শুনে বৃষ্টির মধ্যে কোনো পরিবর্তন এলো না। প্রায় কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি হঠাৎ উঠে দাড়ালো আর চোখের জল মুছতে মুছতে কফি শপ থেকে বেরিয়ে গেল। তামিম তাকে একবারও ডাক দিল না কারণ সে জানে এখন সে তাকে হাজার ডাকলেও সে ফিরে থাকাবে না। বৃষ্টি চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর তামিমও সেখান থেকে অফিসে চলে আসলো।

–––––––

লাঞ্চ টাইমের সময় তামিম মায়ার কেবিনে এসে ঢুকতেই দেখল সানি ছেলেটাও সেখানে এসে বসে আছে আর মায়ার সাথে কি নিয়ে যেন কথা বলছে। তামিমকে কেবিনে ঢুকতে দেখেই তাঁরা কথা বলা বন্ধ করে দেয়।

তামিমঃ আরে আপনি কখন এলেন.? (সানিকে উদ্দেশ্য করে)

সানিঃ এইতো কিছুক্ষণ হলো এসেছি। তা কেমন আছ.?

তামিমঃ আলহামদুলিল্লাহ আপনি.?

সানিঃ ভালোই। ওইদিন তো তোমার সাথে ভালো করে পরিচিত হতে পারলাম না।

তামিমঃ পরিচিত আর কি হবেন আমি তামিম আপনি.?

সানিঃ আমি সানি। বয়সে আমি মায়ার থেকে কয়েক বছরের বড় তাই তোমাকে তুমি করে বললাম, কিছু মনে করলে না তো আবার.?

তামিমঃ আরে নাহ কি মনে করবো। তা আজকে আমাদের সাথে লাঞ্চ করবেন তো নাকি আজকেও চলে যাবেন.?

সানিঃ আমি এইখানে আমার একটা ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে আসছিলাম। তো সে আমাকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে জোর করে তাঁর সাথে খেতে বসিয়ে নেয়। তাই আমি আর খাব না তোমরা খেয়ে নাও।

তামিমঃ আচ্ছা তাহলে আপনি কিছুক্ষণ বসেন আমরা খেয়ে নেই।

তারপর তামিম আর মায়া দু’জনে মিলে লাঞ্চ করে নিল। লাঞ্চ করা শেষে সানির সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে তামিম আবার নিজের ডেক্সে চলে আসে। তামিম চলে যাওয়ার পর সানি আরও কিছুক্ষণ মায়ার সাথে কথা বলে তাঁর কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে আর যাওয়ার সময় তামিমের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে যায়।

রাতেরবেলা…

মায়াঃ আজকে তুমি কি যেন একটা কাজে গিয়েছিলে, সেই কাজ হয়েছে.?

তামিমঃ হুম।

মায়াঃ তা কাজটা কি বললে না যে।

তামিমঃ তা জেনে তুমি কি করবে.?

মায়াঃ কেন আমার জানার অধিকার নেই.?

তামিমঃ আছে কিন্তু এ বিষয়ে আমি তোমায় কিছু বলতে পারবো না তুমি প্লিজ আমায় আর জোর কর না।

মায়াঃ আচ্ছা তা মেয়েটা কে.?

তামিমঃ কোন মেয়ে.?

মায়াঃ যার সাথে আজ কফি শপে দেখা করতে গিয়েছিলে।

তামিমঃ ও নীলার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল সেই সুবাদে আমারও ওর সাথে একটা ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। এতো বছর বিদেশে ছিল কয়দিন আগেই নাকি দেশে এসেছে তাই আমার সাথে দেখা করার জন্য আমায় ওইখানে ডেকেছিল।

মায়াঃ ওহ, তা ওই মেয়েটার নাম কি.?

তামিমঃ বৃষ্টি। তা তুমি এ বিষয়ে কিভাবে জানলে.?

মায়াঃ সেটা এখন অজানাই থাক, সময় হলে এমনিতেই জানতে পারবে। এখন ঘুমিয়ে পর।

কথাটা বলেই মায়া একপাশ ফিরে শুয়ে পরল। তামিমও ঘুমানোর প্রস্তুতি নিবে এমন সময় তাঁর ফোনটা বেজে উঠে, হাতে নিয়ে দেখে বৃষ্টি কল দিয়েছে। এই সময় বৃষ্টি আবার কেন কল দিল.?
.
.
.
.
.
Loading…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here