প্রেম_নিবেদন Part- 28

0
1684

story- #প্রেম_নিবেদন Part- 28
Writer- #Nur_Nafisa

.
.
কয়েকদিন পর,
নাফিসা- আরাফ আবার নতুন ফোন কিনে দিয়েছে। কখনো সাথে রাখি, কখনো ভুলে যাই।
আরাফ- আজ আমার অনার্স এক্সামের রেজাল্ট দিবে। নাফিসার ১ম বর্ষের এক্সাম চলে এসেছে, ফর্ম পূরণের জন্য তাকেও যেতে হবে। ২জনেই একসাথে বের হলাম। আব্বু ১গাড়ি নিয়ে অফিসে গেছে, আর নিসা ১গাড়ি নিয়ে স্কুলে। তাই ১টা রিকশা ডেকে নিলাম।
– জানপাখি উঠো।
নাফিসা- না হেটে যাবো আজ।
আরাফ- না, রিকশায় যাবে। উঠো..?
নাফিসা- ? আমিও রিকশায় উঠে পড়লাম। তারপর আরাফ ও উঠলো। আমি ওর কাছ থেকে অন্যদিকে একটু চেপে বসলাম। এবার আরাফ আমার কোমড় টেনে একদম ওর সাথে লাগিয়ে বসালো। আর আমাকে ১হাতে জড়িয়ে রাখলো।
– ?
আরাফ- ছোট রিকশা, ভাঙা রাস্তা পড়ে যাবাতো।?
নাফিসা- ?
তারপর ২জনে একসাথে যাচ্ছি, আমি আজ বোরকা না পড়ে, থ্রিপিস সাথে হিজাব পড়ছি, আর আরাফ সাদা টিশার্ট সাথে লাল জেকেট পরেছে। অনেক সুন্দর লাগছে, তাইতো মেয়েরা ওর পিছু নেয়? আমারও ভালোই লাগছে আরাফের কেয়ারনেসগুলো। ওকে ভালো না বাসি, তাও এতোদিন একসাথে থাকতে থাকতে আরাফ আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
ভার্সিটিতে পৌছে গেলাম। রেজাল্টের কারণে আমাদের ফর্ম পূরণের সময় দুপুর ১টার পর দিলো! আমি দিনার সাথে ভার্সিটির ২তলার বারান্দায় বসে কথা বলছি। হঠাৎ আরাফ দৌড়ে আসলো। আমি কিছুটা অবাক হলাম, হয়তো রেজাল্ট দিয়েছে,
– কি হয়েছে?
আরাফ- কোথায় কি হয়েছে?
নাফিসা- দৌড়ে আসলে কেন? রেজাল্ট কি হয়েছে?
আরাফ- 1st class ?
নাফিসা- আলহামদুলিল্লাহ ?
দিনা- ওয়াও ভাইয়া। এবার তো ট্রিট দিতেই হবে।
আরাফ- অফকোর্স ?। জানপাখি, কোনো গিফট চাও।
নাফিসা- কিসের গিফট!
আরাফ- আজ আমি অনেক খুশি, যে কোনো কিছু চাও।
নাফিসা- আমার কিছু লাগবে না। আব্বু, আম্মুকে জানিয়েছো?
আরাফ- হুম☺️। কিছু তো নিতেই হবে, তাড়াতাড়ি বলো কি চাও?
দিনা- ওহ,হো নাফিসা, সুযোগ মিস করছ কেন!
নাফিসা- আমার ফর্ম পূরণের কাজ গুলো করে দিলেই হবে।? আমার দৌড়াদৌড়ি করতে ভালোলাগে না।
আরাফ- এটা তো এমনিতেই করবো। অন্যকিছু চাও।
নাফিসা- প্রয়োজন হলে চেয়ে নিবো।
আরাফ- আচ্ছা ?
নাফিসা- ফর্ম পূরণের সব কাজ আরাফ ই করলো, যেই ভার্সিটি থেকে বের হতে যাবো তখনই প্রচুর বৃষ্টি নামলো।আবার দৌড়ে বারান্দায় দাড়ালাম।
আরাফ পাশেই তার বন্ধুদের সাথে কথা বলছে। তার বন্ধুরা সবাই আরাফকে নিয়ে হিংসা আর দুষ্টুমি করছে, কারণ বাকিরা সবাই 2nd class পেয়েছে।
আর আমি দিনার সাথে কথা বলছি আর বৃষ্টির পানিতে হাত ভেজাচ্ছি।
দিনা- খুব ভালো লাগছে।
নাফিসা- হুম, আমি বাসায় থাকলে এখন বৃষ্টিতে গোসল করতাম ?
আরাফ- নাফিসার কথা শুনে আমার টিশার্টের উপর থেকে জেকেট খুলে, আর ফোন, ওয়ালেট শিহাবের কাছে দিয়ে নাফিসার হাত ধরে টেনে বাইরে বেরিয়ে গেলাম।
শিহাব, নিলয় আরও অনেকে আমাদের দেখে সিটি বাজাচ্ছে,
নাফিসা- হঠাৎ এমন কিছু হবে ভাবতেও পারি নি।
– আরে আরে হচ্ছে কি!
আরাফ- জানপাখি, বৃষ্টিতে ভিজবো। পুকুর পাড়ে চলো।
নাফিসা- আমাকে টেনে পুকুর পাড়ে নিচের সিড়িতে আনলো।
– এখানে আনলে কেন!
আরাফ- তোমার তো বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছিলো, তাই।
কথাটা বলে সাথে সাথে নাফিসাকে নিয়ে পুকুরে ঝাপ দিলাম। মাঝখানে নিয়ে আসলাম। কিন্তু নাফিসার হাত ছাড়িনি।
নাফিসা- যদিও ভালো লাগছে বৃষ্টির মধ্যে পুকুরের পানিতে, কিন্তু আমি এসবের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। আমিও এবার এক ঝটকায় আমার হাত ছাড়িয়ে ডুব দিলাম।
আরাফ- হঠাৎ নাফিসা আমার হাত থেকে হাত ছাড়িয়ে নিলো।? এটা কি হলো, ও তো সাতার জানে না। আমি এখন কোথায় খুজি! আমি ডোবাতে শুরু করলাম। কিন্তু পাচ্ছি না।
নাফিসা- আমি একডুবে সাইডে এসে সিড়িতে বসে আরাফের কান্ড দেখছি। যা ভেবেছি তাই হয়েছে। ও খুব ভয় পাচ্ছে। এবার আমি জোড়ে হেসে দিলাম ?
আরাফ- হাসির শব্দ পেয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি নাফিসা বসে আছে। আমিও ডুব দিয়ে সেখানে গিয়ে নাফিসাকে টান দিয়ে পানিতে নামিয়ে কাছে টেনে নিলাম।
– তুমি সাতার জানো,তাহলে ওইদিন ডুবে যাচ্ছিলে কেন?
নাফিসা- ? ওইদিন আম্মুকে রক্ত দেয়ার কারণে অসুস্থ ছিলাম তাই।
আরাফ- এবার আমি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নাকের সাথে নাক আর কপালের সাথে কপাল লাগিয়ে, জানপাখি, তুমি অনেক দুষ্ট হয়ে গেছো। তুমিতো আমার জানই বের করে নিচ্ছিলে।
নাফিসা- আরাফকে এতো কাছে দেখে আমার খুব লজ্জা হচ্ছে। বৃষ্টির পানি আরাফের মাথা বেয়ে আমার নাকে মুখে লাগছে। কেমন একটা ঘোর কাজ করছে। প্রায় ১০মি হয়ে গেছে এভাবেই দাড়িয়ে আছে।
– কি করছো!
আরাফ- #প্রেম_নিবেদন করছি। কবে মঞ্জুর করবে? জানপাখি, ১ম যেদিন আমাকে এই পুকুরে ফেলেছো তখন খুব রাগ হয়েছে। আর তখন প্রতিজ্ঞা করি তোমাকেও এই পুকুরে ফেলবো, ২য় বার যখন সেই কাজটা করতে যাই তখন তোমার প্রেমে পড়ি আর ৩য় বার আজ তোমায় ভালোবেসে পুকুরে নেমেছি।❤️
নাফিসা- ছাড়ো। কেউ দেখলে কি ভাববে!
আরাফ- বৃষ্টির মধ্যে কেউ আসবে না এখানে।
নাফিসা- ওর ঘোর কাটাতে, ওকে ধাক্কা দিয়ে।
– এখন বাসায় যাবো কিভাবে ?
হাচ্ছি….?
আরাফ- ?এইটুকুতে ঠান্ডা লেগে গেলো!
নাফিসা- ?
আরাফ- উপরে উঠে দাড়াও, আমি আসছি।
তারপর শিহাবের কাছে গেলাম।
শিহাব – দোস্ত, হেব্বি রোমান্টিক তুই ? ভাবি কই?
আরাফ- দূর, এতো কথা বলার সময় নেই। জেকেট আর ফোন দে। তোর বাইকটা ও দে আজকের জন্য, সন্ধ্যায় দিয়ে যাবো।
শিহাব- আচ্ছা, যা।
আরাফ- আমি বাইক নিয়ে পুকুর পাড়ে আসলাম। নাফিসা সিড়িতে বসে আছে।
– জানপাখি..
নাফিসা- আরাফের ডাকে উপরে গেলাম।
আরাফ- বাইকে উঠো।
নাফিসা- রাস্তায় কতো মানুষ, এখন বাইকে কিভাবে যাবো!
আরাফ- আমি জেকেটটা নাফিসাকে পড়িয়ে দিলাম। বৃষ্টির সময় বেশি মানুষ থাকে না। চলো…
নাফিসা- আমিও উঠে পড়লাম।
আরাফ- শক্ত করে ধরে বসো। পড়ে যাবে।
নাফিসা- ? তারপর ১হাতে আরাফকে জড়িয়ে ধরে অন্য হাত বাইকে রাখলাম। রাস্তায় আমি হাচি দিতে দিতে শেষ! আরাফও কয়েকটা হাচি দিয়েছে। বাসায় আসলে আম্মু দরজা খুললো।
নাফিসা- হাচ্ছি…
আম্মু- কিরে একি অবস্থা! বৃষ্টিতে ভিজতে হবে ? জ্বর হলে!
নাফিসা- আম্মু, সব..
হাচ্ছি…
সব তোমার ছেলের দোষ, ইচ্ছে করে ভিজিয়েছে।
আরাফ- সরি, বুঝতে পারিনি ?
নিসা- ?হাহাহা… হাউ রোমান্টিক! ভাইয়া ২বার পুকুরে আর আজ বৃষ্টিতে!
আম্মু- এবার ভেতরে আয়, কাপড় চেঞ্জ কর আগে।
আরাফ- নিসা, এবারও পুকুরে ছিলো ?
নাফিসা- ?
নিসা- ?
নাফিসা- রুমে এসে ভেজা কাপড় চেঞ্জ করে নিলাম। আম্মু এসে গরম পানি দিয়ে গেল ভাপ নেয়ার জন্য।
আরাফ- sorry জানপাখি, আর হবে না এমন ?
নাফিসা- হাচ্ছি? …?
.
চলবে….


গল্প পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবে 🙂 (Nur Nafisa)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here