#তোমাতে_আবদ্ধ_আমি,পর্বঃ- ১৪,১৫
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
#পর্বঃ- ১৪
–কি হলো কল রিছিভ করছ না কেন.? অনেক্ষণ ধরেই তো ফোন বেজে চলছে।
মায়ার কথা শুনে তামিম সেখান থেকে উঠে বারান্দায় চলে আসলো আর কলটা রিছিভ করলো।
তামিমঃ এতো রাতে কল দিয়েছ কেন.?
বৃষ্টিঃ আমি আজ রাতে আবার লন্ডন চলে যাচ্ছি।
তামিমঃ তো আমাকে কল দেওয়ার কারণটা কি.?
বৃষ্টিঃ ওইখানে গিয়ে হয়তো কাজের চাপে তোমার সাথে আর কথা বলতে পারবো না। তাই শেষ বারের মতো তোমার সাথে কথা বলার জন্য কল দিলাম।
তামিমঃ আচ্ছা কথা তো হয়েছে, এবার তাহলে রাখি নাকি.?
বৃষ্টিঃ নিশ্চুপ।
তামিমঃ দেখ আমি এখন আমাদের বাসার বারান্দায় এসে তোমার সাথে কথা বলছি। রুমের ভিতরে মায়া শুয়ে আছে তাই আমি বারান্দায় এসে তোমার কলটা রিছিভ করেছি। তাই এখন কলটা রেখে দিলে
টুট টুট টুট…
তামিম তাঁর পুরো কথাটা শেষ করার আগেই অপর পাশ থেকে বৃষ্টি কলটা কেটে দিল। তামিম আর বারান্দায় দাঁড়িয়ে না থেকে রুমের ভিতরে চলে আসলো।
মায়াঃ কে কল দিয়েছিল এতো রাতে.?
তামিমঃ বৃষ্টি।
মায়াঃ কেন কল দিয়েছে উনি.?
তামিমঃ আজ রাতে নাকি সে আবার লন্ডনে চলে যাচ্ছে। এই কথাটা বলার জন্যই কল দিয়েছিল।
মায়াঃ ওহ। আচ্ছা একটা কথা বলি যদি কিছু মনে না কর।
তামিমঃ কি কথা বল.?
মায়াঃ না থাক, অন্য একদিন বলবো আজ না। অনেক রাত হয়েছে এবার ঘুমিয়ে পর (বলেই একপাশ হয়ে শুয়ে পরল)।
তামিমও আর দাঁড়িয়ে না থেকে রুমের লাইট অফ করে বিছানার একপাশে শুয়ে পরল। শুয়ে শুয়ে তামিম ভাবতে লাগলো, ‘আচ্ছা আমি যে বৃষ্টির সাথে আজ দেখা করতে গিয়েছিলাম এটা মায়া জানল কিভাবে.? কেউ কি তাকে এই বিষয়টা জানিয়েছে.? কে জানাতে পারে, মায়ার খালাতো ভাই সানি নয়তো.? কিন্তু সানির বাসা তো অনেক দূরে, সে কিভাবে আমার আর বৃষ্টির দেখা করার বিষয়টা জানবে.? নাকি মায়া কোনো ভাবে আমাকে আর বৃষ্টিকে ওই কফিশপে দেখে ফেলেছে.? এরকম অনেক প্রশ্ন ভাবতে ভাবতে তামিম একসময় ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেল।
সকালবেলা…
প্রতিদিনের মতো মায়া সবার আগে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা বানিয়ে একে একে সবাইকে ঘুম থেকে জাগাতে লাগলো। সবাই ঘুম থেকে উঠে পরলে সবার জন্য টেবিলে নাস্তা এনে সাজিয়ে রাখা হলো। নাস্তা খাওয়া শেষে তামিম রেডি হয়ে অফিসের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরল। আর মায়া মাইশাকে নিয়ে তাঁর স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
তামিম বাসা থেকে বেরিয়ে কোনো রিক্সা না পেয়ে হেটে হেটেই অফিসে যাওয়ার পরিকল্পনা করলো। অর্ধেক পথ আসতেই হঠাৎ একটা কার দ্রুতগতিতে এসে তামিমকে ধাক্কা মেরে সেখান থেকে চলে যায়। মুহুর্তের মধ্যেই তামিমের চারপাশ অন্ধকার হতে শুরু করলো। আস্তে আস্তে তামিমের চোখটা নিস্তেজ হতে লাগলো। এক পর্যায়ে তামিম জ্ঞান হারিয়ে রাস্তার একপাশে পরে রইলো।
–––––––
জ্ঞান ফিরলে তামিম নিজেকে হাসপাতালের বেডে দেখতে পেল। তাঁর পাশেই একটা মেয়ে বেডে মাথা রেখে একটা চেয়ারে বসে আছে। তামিম বুঝতে পারলো এটা মায়া। তামিমের মাথাটা ভিষণ ব্যাথা করছে তাই সে কিছুটা নড়েচড়ে উঠলো। তামিমের জ্ঞান ফিরেছে এটা বুঝতে পেরে মায়া মাথা তুলে তাঁর দিকে তাকাল আর কিছু না বলেই তামিমকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পরল।
তামিমঃ আরে কান্না করছ কেন.? আমার কিছু হয়নি, আমি ঠিক আছি তো।
মায়া কেঁদেই চলছে।
তামিমঃ উফফ কান্না থামাবে তুমি.?
মায়াঃ আজ একদিন পর তোমার জ্ঞান ফিরেছে। এই একদিন যে তোমায় ছাড়া আমি কিভাবে কাটিয়েছি নিজেই জানি না। আমি তো প্রথমে ভয় পেয়ে গেছিলাম তোমার জ্ঞান ফিরছে না দেখে। কিন্তু আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী যে আজ তোমার জ্ঞান ফিরেছে।
মায়ার কথা শুনে তামিম ভেবাচেকা খেয়ে যায়। একদিন পর তাঁর জ্ঞান ফিরেছে এটা তামিম বিশ্বাসই করতে পারছে না। তারপরও তামিম নিজেকে সামলে নিয়ে মায়াকে জিজ্ঞেস করল…
তামিমঃ তাঁর মানে আমি এই একদিন অজ্ঞান অবস্থায় ছিলাম.?
মায়াঃ হ্যাঁ।
তামিমঃ আম্মু আর মাইশা কোথায়.? ওরা কি জানে না আমার এক্সিডেন্টের কথা.?
মায়াঃ হ্যাঁ জানে। ওরা এতক্ষণ এইখানেই ছিল। একটু আগে আমি ওদেরকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি।
তামিমঃ আমার মাইশা
মায়াঃ ও তো একেবারে কেঁদে কেঁদে শেষ তোমার এমন অবস্থা দেখে। এর জন্যই আমি আম্মুকে বলে মাইশাকে উনার সাথে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি। মেয়েটা কাল সারারাত ধরে না ঘুমিয়ে কাটিয়েছে। তাই সকালে ওকে কোনো রকমে ঘুম পাড়িয়ে আম্মুর সাথে বাসায় পাঠিয়ে দেই। আচ্ছা তুমি শুয়ে থাক আমি ডাক্তারকে তোমার জ্ঞান ফিরে আসার কথাটা জানিয়ে আসি (কথাগুলো বলেই মায়া রুম থেকে বেরিয়ে গেল)।
প্রায় কিছুক্ষণ পর মায়া আবারও চলে আসলো সাথে একজন ডাক্তারকে নিয়ে। ডাক্তার এসে তামিমকে কিছুক্ষণ চেকআপ করে কিছু ঔষধ লিখে দিয়ে সেগুলো টাইম টু টাইম খাওয়াতে বলে আবার চলে গেল। ডাক্তার চলে গেলে মায়া এসে তামিমের পাশে বসলো।
মায়াঃ এখন কেমন লাগছে.?
তামিমঃ ভালোই।
মায়াঃ মাথা কি ব্যাথা করছে.?
তামিমঃ কিছুটা।
মায়াঃ আচ্ছা আমি টিপে দিচ্ছি (বলেই তাঁর মাথা টিপে দিতে লাগলো)।
২ দিন পর…
আজ তামিমকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাসায় আনা হয়েছে। এক্সিডেন্টের ফলে তামিমের পায়ে একটু আঘাত লেগেছে যার কারণে সে আগের মতো ভালো করে হাটতে পারে না। তাই ডাক্তার তাকে দুই সপ্তাহ রেস্টে থাকতে বলেছে।
রাতের খাবারটা তামিম নিজের রুমে বসেই খেয়েছে। আর বাকিটা ডাইনিং টেবিলে বসে খেয়েছে। সবার খাওয়া শেষে মায়া থালাবাসন গুলো ধুতে লেগে পরল। ওইসময় তামিমের আম্মু তামিমের রুমে গিয়ে ঢুকলেন। তিনি দেখলেন মাইশা আর তামিম বসে বসে একে অন্যের সাথে গল্প করছে। তিনি গিয়ে তামিমের পাশে বসলেন।
তামিমের আম্মুঃ ঔষধ খেয়েছিস.?
তামিমঃ নাহ মায়া আসলে খেয়ে নিব।
তামিমের আম্মুঃ তুই এক্সিডেন্ট করেছিস এটা শুনে আমাদের যে কি একটা অবস্থা হয়েছিল। মাইশা তো তোকে হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা অবস্থায় দেখেই ‘আব্বু’, ‘আব্বু’ বলে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দেয়। আর মায়ার কথা আর কি বলবো। মেয়েটা তো সারাক্ষণ তোর পাশেই বসে থাকতো। এই বুঝি তোর জ্ঞান ফিরে আসবে এটা ভেবে। মেয়েটা আসলেই অনেক ভালো রে। একদম আমার নীলা মা’য়ের মতো। আচ্ছা যাক গে আমি এখন যাই তোরা গল্প কর (কথাগুলো বলেই তিনি রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলেন)।
মাইশাঃ আচ্ছা আব্বু তোমাকে এমন ব্যাথা কে দিয়েছে.?
তামিমঃ আমি তো জানি না মামনি। হেটে হেটে অফিসে যাচ্ছিলাম, অর্ধেক পথ যেতেই হঠাৎ একটা গাড়ি এসে আব্বুকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়।
মাইশাঃ তোমার পায়ে অনেক ব্যাথা করছে তাইনা.?
তামিমঃ একটু একটু।
মাইশাঃ আমি তোমার পা মালিশ করে দেই.?
তামিমঃ লাগবে না মামনি। তুমি এখন দাদুর কাছে গিয়ে ঘুমিয়ে পর, কালকে না তোমার স্কুল আছে।
মাইশাঃ আচ্ছা আব্বু (বলে তামিমের গালে একটা চুমু দিয়ে সেখান থেকে চলে গেল)।
মাইশা চলে যাওয়ার পর তামিম বালিশে হেলান দিয়ে শুয়ে রইলো, এমন সময় হঠাৎ তামিমের ফোনে একটা মেসেজ আসে। পাশেই তাঁর ফোনটা পরে ছিল। তামিম ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেজটা ওপেন করে মেসেজটা পড়েই চমকে উঠলো। মেসেজটায় লিখা ছিল, ‘এইবারের যাত্রায় তো বেঁচে গেলে, কিন্তু পরের যাত্রায় আর বাঁচতে পারবে না। খুব শীগ্রই তোমাকে তোমার আপনজনদের থেকে আলাদা করে দিব আমি। এখন আপাতত কয়েকদিন রেস্ট নিয়ে কিছুটা ভালো হও আর আমি এ কয়দিনে তোমাকে মারার জন্য আরেকটা নতুন ফন্দি বের করি। তবে পরের যাত্রায় তোমার সাথে আমার সামনা-সামনি দেখা হবে। সো রেডি হয়ে নাও মিস্টার তামিম, গুড বাই।’
.
.
.
.
.
Loading…….
#তোমাতে_আবদ্ধ_আমি
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
#পর্বঃ- ১৫
,,
,,
,,
,,
–শুয়ে শুয়ে এতো কি ভাবছ.? আর তোমায় এতো চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন.? এই কথা বলছ না কেন.? (তামিমকে হালকা ধাক্কা দিয়ে)
হঠাৎ কেউ ধাক্কা দেওয়াতে তামিম ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলো। সামনে তাকিয়ে দেখলো মায়া তাঁর দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
তামিমঃ হ্যাঁ কি যেন বলছিলে তুমি.?
মায়াঃ বলছি তোমাকে এতো চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন.? কিছু হয়েছে নাকি কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত.?
তামিমঃ নাহ কই কি হবে। এমনিই শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম আমার এক্সিডেন্ট হওয়াতে তোমাদের সবার কত কষ্ট হয়েছে।
মায়াঃ এইখানে কষ্টের কি আছে আজব.!
তামিমঃ আচ্ছা আমার যেখানে এক্সিডেন্ট হয়েছিল সেখান থেকে আমায় হাসপাতালে কে নিয়ে গেল.?
মায়াঃ আমিই নিয়ে গেছিলাম। মাইশাকে স্কুলে দিয়ে অফিসে আসার পথে হঠাৎ তোমাকে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তার একপাশে পরে থাকতে দেখে আমি আর ড্রাইভার মিলে তোমাকে গাড়িতে উঠিয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসি।
তামিমঃ একটা প্রশ্ন করি তোমায়.?
মায়াঃ হ্যাঁ কর।
তামিমঃ বিয়ের প্রথম রাতে আমি তোমায় জিজ্ঞেস করেছিলাম যে তুমি আমার ব্যাপারে সবকিছু জেনেও কেন আমায় বিয়ে করলে। উত্তরে তুমি বলেছিলে আমি মানুষটা অনেক ভালো তাই। এখন আমার প্রশ্নটা হলো আমি মানুষ ভালো হওয়ার কারণেই কি তুমি আমায় বিয়ে করেছ নাকি অন্য কোনো কারণ আছে.?
মায়াঃ আসলে তোমার চলাফেরায়, তোমার কথাবার্তায় আর তোমার চরিত্রে আমি মুগ্ধ হয়ে তোমার প্রেমে পরে গেছিলাম। সারাক্ষণ শুধু তোমার কথাই ভেবে চলতাম। এমনকি ঘুমাতে গেলেও তোমার মুখ খানা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠতো। আর আমি অফিসে জয়েন হওয়ার কিছুদিন পর আম্মুর মুখ থেকেই তোমার ব্যাপারে অনেক কিছু শুনেছিলাম। তাই আমি অনেক ভেবেচিন্তে দেখলাম তোমার মতো একটা মানুষকে যদি আমি জীবনে পাই তাহলে হয়তো আমার জীবনটাই ধন্য হয়ে যাবে। তাই আমি ঠিক করলাম তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিব। কিন্তু আমি জানতাম তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তুমি কিছুতেই রাজি হবে না। তাই আমি একটা মাধ্যম খুঁজতে ছিলাম তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার। অবশেষে তুমি নিজে থেকেই একটা মাধ্যম নিয়ে আমার কাছে এসে হাজির হলে। তাই আমি ওই মাধ্যমটা কাজে লাগাই। তোমার মতো একটা শ্রেষ্ঠ পুরুষ আর মাইশার মতো একটা মেয়ে আর একজন ভালো শ্বাশুড়ি পেয়ে আমি সত্যিই ধন্য। যা পেয়েছি এতেই আমি খুশি, আমার আর কিছু লাগবে না। বাকিটা জীবন তোমার সাথেই যেন কাটাতে পারি এই একটাই চাওয়া আমার।
তামিম এতক্ষণ ধরে মায়ার দিকে তাকিয়ে চুপ করে মায়ার কথাগুলো শুনে যাচ্ছিল। মায়ার বলা প্রতিটা কথাই তামিমের বিশ্বাস হয়েছে। কারণ মায়া যখন কথাগুলো বলছিল তখন তামিম তাঁর চোখের দিকে তাকিয়েছিল। মায়ার চোখ দেখে তামিমের মনে হয়নি যে মায়া একটা কথাও মিথ্যা বলেছে।
তামিমঃ আচ্ছা এবার এসে ঘুমিয়ে পর। এই কয়দিন তো আবার আমার জন্য ভালো করে ঘুমাতেও পার নি।
মায়াঃ খাওয়ার পরের ঔষধগুলো খেতে হবে না.?
তামিমঃ হ্যাঁ ভুলেই তো গেছিলাম।
মায়াঃ বস নিয়ে আসছি (বলেই ঔষধ আনতে চলে গেল)।
কিছুক্ষণের মধ্যে মায়া ঔষধগুলো নিয়ে এসে তামিমকে খাইয়ে দিল। তারপর রুমের লাইট অফ করে বিছানার একপাশে এসে শুয়ে পরল। বিছানায় পরার কিছুক্ষণের মধ্যেই মায়া ঘুমিয়ে পরল। কিন্তু তামিমের কিছুতেই ঘুম আসছে না। তামিম শুয়ে শুয়ে শুধু ওই মেসেজটার কথাই ভাবছে। কে দিল ওই মেসেজটা। আর কেউ কেনই বা তাকে মারতে চায়। সে তো কারও কোনো ক্ষতি করেনি বা করেছে বলেও মনে হয়না। এসব কথা ভাবতে ভাবতে তামিম একসময় ঘুমিয়ে পরল।
সকালবেলা…
আজ তামিমের একটু তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে গেছে। ঘুম থেকে উঠে তামিম পাশে তাকিয়ে দেখে মায়া নেই। হয়তো মায়া আরও অনেক আগেই উঠে পরেছে আর এখন সে রান্নাঘরে সবার জন্য নাস্তা বানাচ্ছে। তামিম দেয়াল ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো ৮ টা বাজে। অফিস শুরু হয় ৯ঃ৩০ টায়। কোনোভাবে একটা রিক্সা নিয়ে অফিসে যেতে পারলেই হয়ে যাবে। আসার সময় তো মায়ার সাথে গাড়িতে করেই চলে আসবে। তামিম এসব কথা ভাবছিল এমন সময় মায়া রুমে এসে ঢুকলো। তামিম ঘুম থেকে উঠে গেছে এটা দেখে মায়া বলে উঠলো…
মায়াঃ আরে তুমি কখন উঠলে.?
তামিমঃ এইতো মাত্রই উঠলাম।
মায়াঃ তোমার কি ক্ষুধা লেগে গেছে.?
তামিমঃ নাহ লাগেনি।
মায়াঃ তাহলে উঠে বসে আছ কেন শুয়ে পর আবার।
তামিমঃ না আর ঘুমাব না। এখন উঠে আস্তে আস্তে রেডি হয়ে নাস্তা করে অফিসে চলে যাব।
মায়াঃ পাগল হয়েছ নাকি.? অফিসে যাবে মানে.? এই অবস্থায় তুমি কিভাবে অফিসে যাবে.?
তামিমঃ একটা রিক্সা করে
মায়াঃ কোনো দরকার নেই অফিসে যাওয়ার। যতদিন না পর্যন্ত পুরোপুরি সুস্থ হচ্ছ ততদিন তোমার অফিসে যাওয়া লাগবে না।
তামিমঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
মায়াঃ তুমি তাহলে থাক আমি মাইশাকে আর আম্মুকে ডেকে আসি (বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল)।
তারপর মায়া মাইশাকে আর তাঁর দাদুকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তাদেরকে নাস্তা খেতে দিল। নাস্তা খাওয়া শেষে মাইশাকে রেডি করিয়ে মায়া নিজেও রেডি হয়ে নিল। এরপর মাইশাকে নিয়ে তাঁর স্কুলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরল। যাওয়ার আগে তামিমের জন্য একটা প্লেটে করে নাস্তা এনে তাদের বিছানার পাশে থাকা একটা ছোট্ট টেবিলে নাস্তাগুলো রেখে গেল। যাতে তামিমের ক্ষুধা লাগলে কাউকে ডাকতে না হয়।
এইভাবেই দেখতে দেখতে কেটে গেল ১৫ দিন। এই ১৫ দিনে মায়া সারাক্ষণ তামিমের দেখাশোনা করেছে। আর এখন তামিম পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেছে। কিন্তু মায়া তামিমকে এখনো অফিসে যেতে দিচ্ছে না। তবুও তামিম আজ মায়াকে না জানিয়েই অফিসে এসেছে, যখন মায়া মাইশাকে নিয়ে তাঁর স্কুলের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। কারণ তাঁর নাকি বাসায় বসে থাকতে থাকতে আর ভালো লাগছে না।
এতদিন পর অফিসে আসাতে অফিসের সকলেই তামিমকে এতদিন না আসার কারণটা জিজ্ঞেস করেছে। তামিমও সবাইকে এক কথায় বলে দিয়েছে তাঁর একটা ছোট্ট এক্সিডেন্ট হয়েছিল তাই এতদিন অফিসে আসতে পারেনি।
তামিম নিজের ডেক্সে বসে বসে কাজ করছে আর মাঝেমধ্যে মায়ার কেবিনের দিকে তাকিয়ে দেখছে মায়া এসেছে কি না। কিন্তু না ১০ টা বেজে গেল অথচ মায়া এখনো আসেনি। হঠাৎ তামিম দেখলো মায়া চলে এসেছে। মায়ার সাথে একটা ছেলেও এসেছে। ছেলেটাকে তামিমের চেনা চেনা লাগছে কিন্তু সে ছেলেটাকে চিনতে পারছে না। ছেলেটার হাতে একটা বড় টিফিন বক্সও দেখা যাচ্ছে। মায়া তামিমের ডেক্সের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ তামিমের উপর নজর পরল। তামিমকে দেখেই মায়া কিছুটা অবাক হলো আর বললো…
মায়াঃ তুমি অফিসে এলে কখন.? তোমায় না নিষেধ করেছিলাম অফিসে না আসতে। আরও ক’দিন পরে আসলে কি সমস্যা হতো.?
তামিমঃ বাসায় বসে থাকতে থাকতে ভালো লাগছিল না তাই চলে এসেছি।
মায়াঃ আচ্ছ ঠিক আছে। তাহলে লাঞ্চ টাইমের সময় কেবিনে চলে এস কেমন।
তামিমঃ আচ্ছা।
তারপর মায়া চলে গেল আর তামিম তাঁর কাজে মন দিল। তখন পাশ থেকে ইরা মেয়েটা তামিমকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো…
ইরাঃ ভাইয়া ওই ছেলেটা কি ম্যাডামের ফ্রেন্ড নাকি.?
তামিমঃ ঠিক জানি না। কেন.?
ইরাঃ না মানে অনেকদিন ধরে ওই ছেলেটা ম্যাডামের সাথে দেখা করতে আসে আর একেবারে লাঞ্চ করে যায়।
তামিমঃ ছেলেটা কি প্রতিদিন এই টাইমেই আসে.?
ইরাঃ মাঝেমধ্যে এই টাইমে আসে আবার মাঝেমধ্যে ১২ টার দিকে আসে।
তামিমঃ ওহ।
–––––––
লাঞ্চ টাইমের সময় হলে তামিম লাঞ্চ করার জন্য মায়ার কেবিনে চলে আসলো। এসে দেখলো মায়া আর ওই ছেলেটা বসে বসে গল্প করছে। তামিম ভিতরে ঢুকতেই তাঁরা গল্প করা বন্ধ করে দেয়।
–কেমন আছেন.? আর আপনার শরীর কেমন আছে এখন.? (ছেলেটা)
তামিমঃ জী ভালোই। কিন্তু আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না।
–আরে আমাকে চিনেন নাই.? আমি রনি, একবার না আপনার সাথে এইখানে দেখা হয়েছিল মনে নেই.?
তামিমঃ ওহ আচ্ছা আপনি তাহলে রনি। তাইতো বলি আপনাকে তখন চেনা চেনা লাগছিল কেন।
মায়াঃ অনেক কথা হয়েছে এবার সবাই হাত ধুয়ে এসে বসে পর। রনির আম্মু রনিকে দিয়ে আমার জন্য বিরিয়ানি পাঠিয়ে দিয়েছেন। খেয়ে দেখ কেমন হয়েছে।
তারপর তাঁরা দুজনে হাত ধুয়ে এসে খেতে বসে পরল। খাওয়া শেষে রনি টিফিন বক্স নিয়ে চলে গেল। তামিমও আর বসে না থেকে তাঁর ডেক্সে চলে আসলো।
সন্ধ্যাবেলায়…
তামিম আর মায়া অফিস থেকে বেরিয়ে মায়ার গাড়িতে উঠে বসে। এমন সময় তামিম লক্ষ্য করে কিছুটা সামনে একটা কালো গাড়ি রাখা। গাড়িটার পিছনের নাম্বার দেখেই তামিম চমকে উঠলো। কারণ এটা সেই গাড়ি যেটা কয়েক সপ্তাহ আগে তামিমকে ধাক্কা মেরেছিল। ধাক্কা মেরে গাড়িটা কিছুদূর গিয়ে কয়েক সেকেন্ডের জন্য থেমেছিল তখন তামিমেরও এক পলক গাড়িটার দিকে চোখ পরেছিল। সেই গাড়িটার সাথে এই গাড়িটার অনেকটাই মিল দেখা যাচ্ছে হয়তো গাড়ির নাম্বারে কম বেশ থাকতে পারে। কিন্তু তামিমের মন বলছে এটাই সেই গাড়ি যে গাড়িটা তাকে কয়েক সপ্তাহ আগে ধাক্কা মেরেছিল। তামিম আবার গাড়ির দিকে ভালো করে তাকাতে গেলেই গাড়ির ড্রাইভার তাদের গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে সেখান থেকে তাদেরকে অনেকটা পথ দূরে নিয়ে চলে আসে।
.
.
.
.
.
Loading…….