ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়,পর্ব-২,৩

0
1100

#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়,পর্ব-২,৩
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_দুই

” বাবা আমি তো ভুল কিছু বলিনি, তোমরা একটু ভেবে দেখো আমি ওকে নিয়ে কি করে সংসার করবো?
কি আছে ওর মধ‍্যে? স্নিগ্ধা শ্রাবণের পাশে ছিল, শ্রাবণের সঙ্গে দাড়িয়ে ছিল বলে দুজনের হাত একসঙ্গে ছিল। স্নিগ্ধা শ্রাবণের হাতে একটা জোরে চিমটি কেটে দিল।
শ্রাবণ স্নিগ্ধার দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে চাইতেই। স্নিগ্ধা কেদে উঠলো –

–” নানাভাই, আমি ওর সঙ্গে থাকবো না,”

–” কেন? কি সমস‍্যা?কি করে ভুলে গেছো সব তোমরা?”

–” নানা ভাই, ওই সময় আমরা দুজনে খুব ছোট ছিলাম।”

–“তোমাদের স্পর্ধা আর বেয়াদবি দেখে আমি অবাক হচ্ছি। এর শাস্তি তোমাদের পেতেই হবে। কি ভেবেছো এভাবে ছেড়ে দেবো দুজনকে? কখনোই না! সেকান্দার আলি খান আর যাইহোক অন‍্যায় আর বেয়াদবি ক্ষমা করে না! এই স্পর্ধার জন‍্য তোমাদের শাস্তি হিসেবে দুজনকে একসাথে থাকতে হবে।”

–” নানাভাই প্লিজ! এমনটা করো না, আমার কথাটা শুনো। শ্রাবণ ভাই আর আমি তখন খুব ছোট ছিলাম, বাবা ও তখন খুব অসুস্থ ছিল। সেই মুহূর্ত তোমরা রাজি হয়েছো বলে এখন আমাদের বিয়ে দিয়ে এক করে রাখতে পারো না। আমি মানছি আমার বাবা নেই, মা নেই, বোন নেই তাই তোমরা আমাকে আগলে রাখতে শ্রাবণ ভাইয়ার সাথে বিয়ে দিয়েছো। কিন্তু এটাও তো ভাবতে হবে যে সুখের জন‍্য তোমরা আমাকে শ্রাবণ ভাইয়ার সাথে বিয়ে দিয়েছো সেই দাম্পত্য জীবনেই যদি আমরা সুখী না হই? ”

“আজ দুজন নাহয় একসঙ্গে থাকলাম তোমাদের কথা রাখতে বাধ‍্য হয়েই রইলাম। ভবিষ্যতে যদি আমরা আলাদা হয়ে যাই?”

–” যত বড় মুখ নয়,তত বড় কথা! লাই দিয়ে দিয়ে তোমাকে মাথার উপর উঠিয়ে ফেলেছে সবাই। আমাদের উপর কথা বলছো তুমি। এত কথা যেহেতু বলছো তাহলে শুনো শ্রাবণের সঙ্গে তুমি কালকের মধ‍্যে ঢাকা যাচ্ছো। শ্রাবণ আমি যদি শুনি তুমি ওর সঙ্গে কোন খারাপ আচরণ করেছো তোমাকে আমি বাড়ি থেকে বের করে দিব। এই বাড়ির দরজা দুজনের জন‍্য সারাজীবনের জন‍্য বন্ধ! তোমার পড়াশুনা থেকে শুরু করে তোমার থাকা খাওয়া সব বন্ধ, বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ফূর্তি করা বন্ধ হয়ে যাবে তোমার।”

শ্রাবণ চমকে গিয়েছে দাদুর কথায়, স্নিগ্ধার দিকে রাগি চোখে তাকাতেই, স্নিগ্ধা একটা হাসি দিল যদিও সেটা সবার আড়ালে। শ্রাবণ স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে শুনতে লাগল সব, রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে।

–“আর স্নিগ্ধা তোমাকে ও বলে রাখছি, তুমি যদি এই সম্পর্ক না রাখো তোমাকে ও আমরা জায়গা দিব না।”
স্নিগ্ধা মনে মনে ভাবছে না রাখলেই ভালো, সে তার ফুফুমনি রিদ্ধিতার কাছে চলে যাবে। স্নিগ্ধা কিছু বলার আগেই শ্রাবণ বলে উঠলো –

–“আমি রাজি তোমাদের কথায়, ” শ্রাবণের কথায় স্নিগ্ধা অবাক হয়েগেল, কি বলছে সে? এইতো কিছুক্ষণ আগেই দুজন ঝগড়া করলো। একসঙ্গে থাকবে না। আর এখনই মত বদলে ফেলেছে!

–” দাদু আমি স্নিগ্ধার সঙ্গে থাকবো, তোমরা চিন্তা করো না! ওকে নিয়েই থাকবো।”

–” এই তো কিছুক্ষণ আগে বললে,ওর সঙ্গে থাকা সম্ভব নয়!”

–” বাবা আমি বলেছিলাম ঠিকই কিন্তু পরে মনে হল দাদুর কথাটা মেনে নিয়ে দেখি কি হয়।”

–” ভেরি গুড মাই সান ” ইটস্ গুড ডিসিশন ফর ইউর লাইফ!” অপরদিকে স্নিগ্ধা ভাবছে শ্রাবণ কেন এমন করলো? এত সহজে তো দুজন কখনোই মিলে না। আজ এত সহজে দাদুর কথা শুনে তাকে নিয়ে সংসার করতে চাইছে?”

–” তোমরা এখন যেতে পারো, আর শুনো শ্রাবণ কালকেই তুমি ওকে নিয়ে ঢাকায় যাবে। সেখানে তোমাদের দেখে রাখবে সাজ্জাদ খান! সাজ্জাদের বাড়িতে দুজন থাকবে, কি বলেছি বুঝতে পারছো?”
শ্রাবণের মাথায় যেন বাজ পরলো, স্নিগ্ধা যাবে তার সাথে? এই মেয়েতো তাকে এমনিতেই জ্বালিয়ে মারে। শাস্তির ভয়েই তো সে রাজি হলো এখন দুজনকে সেই আবার ও একসাথে থাকতে হবে!

–” দাদু ও কেন যাবে শুধু, শুধু! ”

–” ও যাবে, তোমরা সাজ্জাদের কাছে থাকবে স্নিগ্ধার সব দায়িত্ব তোমার উপর!”

–” ঠিক আছে দাদু,”

–” যাও এখন,” দুজনে মিলে যার যার রুমে চলে এলো।
স্নিগ্ধা রুমে ঢুকেই শ্রাবণের সামনে রাগী চোখে তাকিয়ে বলল

–” এটা কি হলো?”

–” কোনটা?”

–“বুঝতে পারছিস না তুই? কেন বললি আমরা একসাথে থাকবো?”

–” আরে ওটাতো দাদুর শাস্তির কথা শুনে, তুই ভাব আজ যদি আমি ঐ কথাটা বলতাম দাদু আমাকে আর তোকে বাড়ি থেকে বের করে দিত তখন আমরা কি করতাম? তুই মাত্র মাধ‍্যমিক দিয়েছিস, আর আমি গ্রেজুয়েশন ও কমপ্লিট করতে পারেনি! কোথায় যেতাম আমরা বলতে পারিস?”

–“স্নিগ্ধা শ্রাবণকে ধাক্কা দিয়ে বলল -তোর জন‍্য আমার কানাডায় যাওয়ার পথ বন্ধ হয়েগেল। রিদিতা ফুফি আমাকে বলেছিল আমাকে নিয়ে কানাডা চলে যাবে। আর আজ তোর বোকামির জন‍্য আমার সব প্ল‍্যান স্পয়েল হয়েগেল।”

–” তুই শুধু তোর নিজের একার কথাটা ভাবলি স্নিগ্ধা একবার আমার দিকটা ভাবলি না! আমি যেটা ভেবেছি সেটাই ঠিক, তুই একবার ভাব আমরা এখনো নিজের পায়ে দাড়াতে পারিনি, সেই জায়গায় কিভাবে দাদুর কথা অমান‍্য করি?”

–” তুই এখন এই মুহুর্তে এখান থেকে যাবি, আমি তোর কোন কথা শুনতে চাই না!”

–” বুঝার চেষ্টা কর,,, স্নিগ্ধা হাত উচু করতেই শ্রাবণ রূম থেকে বেরিয়েগেল।

খুব ছোটবেলা থেকেই দুজন এই বাড়িতে এলে কখনোই একসাথে থাকতো না। দুজনে ঝগড়া বাধিয়ে দিত, স্নিগ্ধার মা মারা যায় একটা দূর্ঘটনায় তার কয়েক বছর পরই স্নিগ্ধার বাবা ও মারা যায়। মারা যাওয়ার আগে শশুরের হাতে ধরে বলে গিয়েছিলেন তার ছোট্ট মেয়েটিকে যেন তিনি দেখে রাখেন। আর যদি বিয়ে দেন তবে এই বাড়ির ছেলের বউ হিসেবেই যেন তাকে রেখে দেয়। তার মতে দাদুর বাড়ির লোকজন থেকে নানুর বাড়ির লোকজন তাকে আগলে রাখবে। স্নিগ্ধার বাবা মারা যাওয়ার পর সত‍্যিই কখনোই তার নানাভাই আর মামারা তাকে কখনোই এতিমের নজরে দেখেনি সব সময় তাকে এই বাড়ির মেয়ে হিসেবে আগলে রেখেছিল।

স্নিগ্ধা তার বাবার ছবিটা কোলে নিয়ে দেখতে লাগল আর বলল -” চলেগেলে তো গেলে একদম দুজনই চলেগেলে, একবার ভাবলে না এই অভাগীর কথা?
কেন আমাকে জন্ম দিলে? যদি একা করে রেখে যাও?
খুব কি অপরাধ করেছিলাম? স্নিগ্ধার গাল বেয়ে পানিগুলো ঝরঝরিয়ে পরছে। সেগুলোকে মুছে বলল –

-” যখন ঐ নীল আকাশে যাবো না, তোমাদের সঙ্গে আর কথা বলবো না! ঐ পাড়ে দুজনে মিলে তখন আঙ্গুল চুষো! আর আমি তোমাদের কাচঁকলা দিব!”

–“ছিহ! স্নিগ্ধা কি বলছিস এগুলো, মুখেও আনতে নেই এগুলো মা! তুই কেন চলে যাবি? এগুলো বলতে নেই মা, নানাভাইয়ের উপর রাগ করে মৃত্যু নিয়ে কথা বলছিস!”

–” মামি আমি উনাদেরকে বলছি, এই যে আমাকে একা ফেলে দুজন চলে গিয়েছে, আমি ও যখন উপরে যাবো আমি ওদের সঙ্গে কথা বলবো না!” স্নিগ্ধার ছোটমামি তাকে বুকে টেনে কপালের চুলগুলোকে সরিয়ে আদর করে বললেন –

–” আমার মেয়ের কারোর সঙ্গে কথা বলতে হবে না। আমি আছি না, আমি আমার মেয়েটাকে দেখে রাখবো। তুই জানিস না তোর কিছু হলে তোর এই মায়ের কষ্ট হবে। আমার তো তুই ছাড়া কেউ নেই! তুই ও যদি চলে যাস আমি কি করবো! আমার মত নিসন্তানের তো তুই সব!”

–” কে বলেছে তুমি নিসন্তান মামি? তোমার কাছ থেকে যে আমি গন্ধ পাই! মা, মা, গন্ধ মামী! এই গন্ধ যে একজন মায়ের কাছ থেকেই পাওয়া যায় তুমি জানোনা?” আবেগে পুষ্পিতার চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগল। সেই চোখের পানিগুলোকে মুছে, স্নিগ্ধার কপালে, গালে অজস্র চুমু দিতে লাগলেন তিনি।

চলবে।

#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_তিন

–” আমার মেয়ের কারোর সঙ্গে কথা বলতে হবে না। আমি আছি না, আমি আমার মেয়েটাকে দেখে রাখবো। তুই জানিস না তোর কিছু হলে তোর এই মায়ের কষ্ট হবে। আমার তো তুই ছাড়া কেউ নেই! তুই ও যদি চলে যাস আমি কি করবো! আমার মত নিসন্তানের তো তুই সব!”

–” কে বলেছে তুমি নিসন্তান মামি? তোমার কাছ থেকে যে আমি গন্ধ পাই! মা, মা, গন্ধ মামি! এই গন্ধ যে একজন মায়ের কাছ থেকেই পাওয়া যায় তুমি জানোনা?” আবেগে পুষ্পিতার চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগল। সেই চোখের পানিগুলোকে মুছে, স্নিগ্ধার কপালে, গালে অজস্র চুমু দিতে লাগলেন তিনি। পুষ্পিতাকে কেউ দেখলে বলবে এ যেন পূর্ণ জননী! পরম মমতায় স্নিগ্ধাকে বুকে আগলে রেখেছেন তিনি।

সাজ্জাদ সাহেব এসেছিলেন স্নিগ্ধার সঙ্গে কথা বলতে।এসেই দেখলেন তার সহধর্মিনী এখানে এসে আবার কাদছে। উফফ, এই বউটাকে নিয়ে সে আর পারেনা। সব সময় তার চোখে পানি থাকবেই, মেয়ে মানুষের এই এক সমস‍্যা সারাদিন কোনকিছু হলেই শুধু কেদেঁ কেটে ভাসিয়ে দেয়।

–“কি ব‍্যাপার তুমি এখানে কি করছো? আর ভাগ্নি তুই স‍্যরি এখন তো আমাদের বাড়ির বউ, তা তুমি এখানে কেন বউমা ? শাশুড়ি আর দাদি শাশুড়ির সঙ্গে দেখা করে আসো। কাল তো আবার ঢাকায় ফিরতে হবে, এখন
কথা বলে আসো।”

–” তোমার কি সব জায়গায় মজা করতেই হবেই?”

–” ওমা! মজা করলাম কোথায়? ও তো বউমা হয় আমাদের তাই না? বউমা যাও এক কাপ চা বানিয়ে আনো!”

–” এই খবরদার,তুমি আমার মেয়েকে চা বানাতে বলবে তো! এই তুই যাবি না,আমি বানিয়ে নিয়ে আসছি। বলেই
চা বানাতে চলেগেলেন তিনি।

–” ও মা তুই কাদছিস, সর্বনাশ করেছে! এতবার চোখের জল ফেলিস কি করে?”

–” তোমার ও মা, ডায়োলগ থেকে কমই চোখের পানি ফেলি!”

–” ও মা তাই নাকি? তা মামনি কান্নাকাটি একটু বন্ধ করো, তোমার নানা যা করেছে ভেবেই করেছে, তোমাদের ভালোর জন‍্যই করেছে মা!”

–” আমি জানিনা মামা ”

–” না জানলেও তোমাকে জানতে হবে। তুমি সবই জানো আমরা এখন কি একটা পরিস্থিতিতে। বাবা কখনো কোন ওয়াদার খেলাপ করে না, ওয়াদা ভঙ্গ করা কখনোই তিনি পছন্দ করেন না। তাই তিনি তোমাদের সম্পর্ক ভাঙ্গতে ও দিবে না, আশাকরি আমার আদরের ভাগনী ও আমাদের বাড়ীর নববধূ হিসেবে বলবো অহেতুক সম্পর্কটা ভাঙ্গনের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করবে না!” চায়ের কাপ নিয়ে স্নিগ্ধার রুমে প্রবেশ করলেন পুষ্পিতা, স্বামীর উদ্দেশ্যে এক কাপ চা এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন –

–” তোমার কি কাজ নেই আজ?” চমকে উঠে পুষ্পিতার দিকে তাকালেন সাজ্জাদ সাহেব।

–” তা কেন হবে না?”

–” তো চা খেয়ে কাজে যাও, আমি আমার মেয়ের সঙ্গে কিছু কথা বলবো।” পুষ্পিতার মুখে এমন কথা শুনে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন সাজ্জাদ সাহেব তারদিকে, তারপর উঠে চলেগেলেন, পুষ্পিতার এখন এমনই দশা তার সামনে যদি একটা ছোট্ট বাচ্চা এনে দেয় সে সারাদিন সেই বাচ্চা নিয়ে পরে থাকবে। স্নিগ্ধা তার কাছে থাকলে মনে হয় দুনিয়ার কিছুই তার লাগবে না। দীর্ঘ দশ বছরের সংসার তাদের, প্রথম অবস্থায় এমন ছিল না পুষ্পিতা, খুব সংসারি ছিলেন তিনি। সংসার জীবনের দশ বছরে ও যখন কোন সন্তান জন্ম নেয়নি তখন থেকেই পুষ্পিতা কেমন হয়েগেছে। দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে এলো তার, পুষ্পিতার এমন বদলে যাওয়া তার ভালো লাগে না। খুব ইচ্ছে করে তাকে আগের মত দেখতে।
____________________

ফোনে কথা বলছেন স্নিগ্ধার শাশুড়ি নাজমা বেগম।
স্নিগ্ধাকে তিনি আদর করেন, মেয়েটাকে তার ভিষণ ভালো লাগে, কিন্তু তা সম্পূর্ণ ভাগনির নজরেই, কিন্তু শশুর আর শাশুড়িকে বলতে পারেননি এইসব কথা, চুপ করে সব শুনেছেন। তাই তিনি এখন তাদের সবার উপর রেগে আছেন। বোনের সঙ্গে কথা বলছেন তিনি। নাক টেনে টেনে কেদেঁ কেদেঁ বলছেন –

–” শ্রাবণের বাবাকে কত করে বললাম, স্নিগ্ধার সাথে বিয়ে দিও না, মেয়েটাও ছোট ছেলেটাও কত ছোট, এখনো নিজের পায়ে দাড়াতে পারল না। তা নয় মেয়েটাকে আমার ছেলেটার ঘাড়েই চাপাতে হবে? জানো আপা শ্রাবণের বাবার সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলায় সে কি বলেছে?”

–” কি বলল সে?”

–” কি বলবে আমি এই কথা বলতেই আমাকেই বলে উঠলো – দোহাই লাগে বিবি! আর যাই বলো বাবার বিরুদ্ধে কিছু বলো না। তুমি তো চেনো বাবাকে,বাবা এক কথার মানুষ আর একরোখা মানুষ।

–” শাজাহান কিছুই বলল না?”

–” তুমি তো জানোই ও বাইরে রাগারাগী করে জোর গলায় চিৎকার করলেও। বাবার সামনে মেনি বিড়াল হয়ে যায়!”

–” আহারে তুই যেমন তোর জামাই তেমন। কত করে বললাম সংসারের বড় বউ তুই, একটু শক্ত হও,হাল ধর না একদম ছেড়ে দিলি। কি বোকা তুই, পুরুষ মানুষকে ভয় পাস?” মোবাইল ফোনের স্পিকার থেকে শুনা যাচ্ছে দৈত‍্যাকার কন্ঠে তার দুলাভাই বলছে –

“নাফিসের মা তোমার এত বড় সাহস, তুমি নাফিসকে আমার অঘোচরে দু শ টাকা দিছো!”
পাশ থেকে নাজমা বেগমের বড় বোন অত‍্যন্ত ছোট স্বরে বলে উঠলেন রাখি রে নাজমা।
“তোর দুলাভাই আবার টিভির রিমোট হারিয়ে ফেলছে।”
নাজমা বেগম বলে উঠলেন -” হ‍্যা যাও, দুলাভাইয়ের রিমোট খুজে দিয়ে আসো। বলেই নিজেই বলতেই লাগলেন আপা তোমার আর বড় বড় কথা গেল না।
___________________________

পানের বাটা নিয়ে বসেছে স্নিগ্ধার নানু, বুড়ো বুড়ি দুজন একসাথেই বসেছে। বুড়োর এখনো তেজ কমেনি, বড্ড অদ্ভুত ব‍্যাপার হলো, এত রাগী হওয়ার পরও তার ছেলে মেয়ে কেউই তার মত হয়নি। সবগুলো কেমন তার মত হয়েছে। বড় জনের রাগ হলো লোক দেখানো, ভিতরে কিছুই নেই, ছোটজন তার সারাদিন লোক হাসিয়ে বেড়ায়। আর এই বুড়ো! সারাদিন বুক ফুলিয়ে বেড়াবে আর ফোসফোস করতে থাকবে। খানিকটা সাহস সঞ্চার করে বলে উঠলেন –

–” ছেলে মেয়েগুলোকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া কি খুব দরকার ছিল? বিয়ে যখন দিয়েছেন একদিন না একদিন মায়া ঠিকই বসেযেত। ঢাকায় গেলে ওরা আমাদের আড়ালে, এক সাথে থাকবে বলে মনে হয় আপনার?”

–” আমি যা করেছি ঠিকই করেছি, সাজ্জাদের বাসায় থাকলে দুজনের চালচলনের উপর নজর দেওয়া যেত।”

–” তা বুঝেছি, কিন্তু এত তারাতারি বিয়েটা দেওয়া কি প্রয়োজন ছিল?”

–” প্রয়োজন ছিল মানি? আলবাৎ ছিল, এখনকার যুগের ছেলেমেয়েরা কি তোমার আর আমার জন‍্য বসে থাকবে? কখন কি ঘটিয়ে বসে দুজনে মিলে। সেদিন রফিক মিয়ার ক্লাস এইটের মেয়ে একটা ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গেছে, জানো তুমি? নানা ও দাদা হওয়ার থেকে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব আমার নাতি নাতনিদের অভিভাবক হওয়া।
তাই আমি বুঝেই করেছি।”

–” তাই বলে বিয়ে পর্যন্ত এগিয়ে যাবে? ওদের আকদ পর্যন্ত করিয়ে রাখতে মানি আকদ করিয়ে রেখে কয়েক বছর পর বিয়ে দিতে।”

–” কি বলতে চাইছো গিন্নি? আমি কি ভুল কিছু করেছি?
বুড়োর চোখে মুখে রাগ ভেসে উঠেছে। বুড়ি ঢোক গিলে উঠলো। এই বুড়োর চোখ রাঙ্গানো দেখলে তার পেটের ভাত সব হজম হয়ে যায়।
____________________

শ্রাবণ রেডি হচ্ছে, কাল তার ঢাকায় ফিরতে হবে, আবারও ইউনিভার্সিটির ঝামেলায় জড়াতে হবে। যেকদিন ছুটি কাটাতে এসেছে এর মধ‍্যেই ওর বিয়ের বন্ধোবস্ত করে ফেলেছে দাদু, শ্রাবণ শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে ভাবছে। ছুটি না নিয়ে ঢাকায় থাকতো তাই ভালো হতো।
বন্ধুদের মধ‍্যে হতে কয়েকজন ফোন করে বলতে লাগল সে যেন আগেই চলে আসে। শ্রাবণ তাই তারাতারি করে রেডি হয়ে নিচ্ছে। আয়নায় মুখ দেখে ঘুরে ঘুরে, দেখছে না ভালোই লাগছে। হঠাৎ তার মুখটা কেমন শুকিয়ে এই টুকু হয়েগেল। কারন সে ভুলেই গেছে, আজ বাড়িতে দাদু আছে। আর দাদু তাকে বের হতে দিবে না। সব ভাবনাকে ফেলে সে পাশে জিমানো রঙ্গনকে ডেকে উঠলো –

–” রঙ্গণ,উঠ! একটু দেখ গিয়ে দাদু কি করছে। দাদু যদি ড্রয়িং রুমে থাকে ইশারা করিস আমি চলে আসবো রুমে।
আর যদি রুমে থাকে বলিস আমাকে ঠিক আছে!”

–” আচ্ছা ঠিক আছে!”

রঙ্গন দাদুর রুমে গিয়ে দেখল দাদু বা দাদি কেউই নেই।
এবার সে ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখল। বুড়ি আর বুড়ো দুজনে মিলে কথা বলছে।

বুড়ি পান বানাতে বানাতে বলছে –

–” আরে রাগ করছেন কেন? আমি কি সেই কথা বলছি।
আপনি যা করেন তা ভেবেই করেন। এখন যা হওয়ার হয়েগেছে। নিন পানটা খেয়ে নিন! বলেই বুড়োর হাতে এক খিলি পান এগিয়ে দিল। রঙ্গন দাদা-দাদির রুম থেকে বের হতেই তার মোবাইলে মেসেজ এলো, চেক করে দেখল বন্ধুর। বন্ধুর সঙ্গে কিছুক্ষণ চ‍্যাট করার পর, শ্রাবণের রুমে এসে বসল তারপর।

–” কিরে দাদুর খোজ করতে গিয়ে এতক্ষণ লাগে?”

–” দাদি দাদুর জন‍্য পান বানিয়ে দিচ্ছে আর দাদু খাচ্ছে। ভাই তুই বাসা থেকে বের হয়, মনে হয় দাদু ঘন্টা খানেক পর কথা বলে বের হবে।
শ্রাবণ রুম থেকে বেরিয়ে দরজার কাছে গিয়ে দাড়ালো রঙ্গণ দরজা বন্ধ করতে গেলে বলে দাদু আমাকে ডাকলে বলিশ!

–” তুই চিন্তা করিস না, দাদু এখন দাদির সাথে গল্প করছে। বুড়ো-বুড়ি দুজন ভালোই প্রেম করছে বলতেই কানে এলো কেউ বলে উঠলো –

“এই হতচ্ছাড়া বুড়ো কাকে বলছিস?”

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here