প্রেম_নিবেদন Part- 29

0
1808

story- #প্রেম_নিবেদন Part- 29
Writer- #Nur_Nafisa

.
.
নাফিসা- বিকেলে আমি সোফায় বসে টিভি দেখছিলাম। নিসা এসে আমার হাতে ১টা সুই দিলো।
নিসা- ভাবি ভাইয়া তোমাকে ডাকছে, এটা নিয়ে যাও।
নাফিসা- এটা দিয়ে কি করবো?
নিসা- গিয়ে দেখো।
নাফিসা- আমি রুমে এসে দেখি আরাফ ড্রেসিং টেবিলের সামনে শার্টের হাতা ফোল্ড করছে। আমাকে দেখে ড্রয়ার থেকে ১টা বক্স বের করে আমার সামনে আনলো। বক্সে ১০/১২টার মতো বোতাম রাখা। ১টা বোতাম আমার হাতে দিয়ে,
আরাফ- জানপাখি এটা লাগিয়ে দাও।
নাফিসা- শার্ট খুলো, লাগিয়ে দিচ্ছি।
আরাফ- (ওকে টেনে কাছে এনে আমার ২হাত ওর পিছনে জড়িয়ে)
জ্বি না, এভাবেই লাগিয়ে দাও।
নাফিসা- ? (আমি আর কিছু না বলে বোতাম লাগিয়ে দিলাম)
কাচি কোথায়?
আরাফ- কাচি কেন? দাত দিয়ে কাটো।
নাফিসা- ? আমি দাতে সুতা কাটি না।
তারপর ছুড়ি এনে সুতা কাটলাম।
আরাফ- ? আচ্ছা, এই বোতাম গুলো রেখে দাও।
নাফিসা- এতো বোতাম কেন? তাও আবার এক একটা এক এক রকম!
আরাফ- এখানে বিভিন্ন শার্টের বোতাম রাখা আছে। ? যেদিন তোমার প্রেমে পড়ি, সেদিন থেকে বোতাম জমা করে রেখেছি। কারণ বউ যে আমার দর্জি ?
নাফিসা- ? শার্ট গুলো দিয়ে যাও, আমি বোতাম লাগিয়ে রাখবো।
আরাফ- জ্বি না, এখন থেকে প্রতিদিন ১টা করে শার্ট পড়বো, আর তুমি এভাবে লাগিয়ে দিবে।?
নাফিসা- হুহ! এতো ঠেকা পড়েনি আমার ?
আরাফ- আচ্ছা, তাহলে বোতাম ছাড়া শার্ট পড়বে তোমার বর ??
(তারপর বেরিয়ে গেলাম শিহাবের বাইক নিয়ে)
নাফিসা- বক্স ড্রয়ারে রেখে আমি নিসার কাছে গেলাম।
নিসা- ভাবি, ভাইয়া কার বাইক নিয়ে আসছে?
নাফিসা- শিহাব ভাইয়ার।
নিসা- নিজের বাইক স্টোর রুমে লক করে এখন অন্যের বাইক নিয়ে ঘুরে!?
নাফিসা- স্টোর রুমে কেন?
নিসা- তোমার জন্য ☺️
নাফিসা- মানে!?
নিসা- মানে, তোমার প্রেমে পড়ে ভাইয়াও গাড়ি ছেড়ে তোমার মতো হেটে যাওয়া শুরু করে। অফিস যাওয়ার সময় শুধু গাড়িতে যায় ?
নাফিসা- অহ!
সন্ধ্যায়,
আরাফ- বাসায় ফিরে দেখি নাফিসা কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। অনেক দিন পর নাফিসাকে এভাবে হাসতে দেখলাম ?,
নাফিসা- সত্যি…! I’m so exited ?
….
নাফিসা- আচ্ছা, আল্লাহ হাফেজ ?
আরাফ- কি হয়েছে? এতো খুশি কেন?
নাফিসা- হয়নি হবে ?
আরাফ- কি হবে?
নাফিসা- বাবু হবে ☺️
আরাফ- ? জানপাখি, এটা কিভাবে সম্ভব!
নাফিসা- কিভাবে সম্ভব মানে! ? দিনার বিয়ে হয়েছে, বাবু হতেই পারে।
আরাফ- অহ!? আমি তো..
নাফিসা- কি?
আরাফ- না, কিছু না। দিনাকে বলো মিষ্টি পাঠিয়ে দিতে?
নাফিসা- আমি মিষ্টি খাই না, যে খাবে সেই বলুক ?
আরাফ- এজন্যই তো আমার সাথে একটু মিষ্টি করে কথা বলতে পারো না?
নাফিসা- কি!?
আরাফ- কই কিছু না (আমি দৌড়)
নাফিসা- এভাবেই চলছে দিন। আরাফের দুষ্টুমি, আমার বকাঝকা, আর প্রায় প্রতিদিন অফিস যাওয়ার সময় আরাফের শার্টের বোতাম লাগানো, মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে বোতাম ছিড়ে রাখে। প্রতিদিন ভার্সিটি যাচ্ছি, বাসায় পড়ছি, সব কিছুতে আরাফ সাহায্য করছে। কখনো সে ও ভার্সিটি যাচ্ছে ক্লাস করতে। বাসায় বোরিং লাগলে আম্মু ও নিসার সাথে গল্প করি, আমার ১ম বর্ষের এক্সাম ও দিচ্ছি। প্রতিদিন আরাফ নিয়ে যায় এক্সাম হলে। আবার নিয়ে আসে। আর আমাকে রাত ২/৩ টা পর্যন্ত পড়তে বসিয়ে রাখে ??। কখনো বাইরে, কখনো ছাদে ঘুরতে নিয়ে যায় ১০/১৫ মি এর জন্য। আবার সেই বই সামনে দেয় ?। আর এক্সাম হলে প্রচুর ঘুম পায়,কিন্তু লিখা থামাতে পারিনা ?। ছেলে, ভাই ও স্বামী হিসেবে সে পার্ফেক্ট। আরাফ এতোদিন আমার অভ্যাসে পরিণত হলেও এখন বুঝতে পারছি আমি ওর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছি। কিন্তু ওকে বুঝতে দেই না। এভাবে প্রায় ৪ মাস কেটে গেলো। এই ৪মাসে আমাকে বাবার বাসায়ও যেতে দেয়নি। ১বার গিয়েছি, তাও ২দিন থেকে চলে এসেছি।
.
– আজ আমার রেজাল্ট দিবে। সকাল থেকে চিন্তায় আমি শেষ! ? কি জানি হয় রেজাল্ট! এদিকে আম্মু, নিসা আমাকে শান্তনা দিচ্ছে। কিন্তু এগুলোতে কাজ হচ্ছে না। সকাল থেকে কিছু খাইনি। নামাজ পড়ে কোরআন শরিফ পরেছি অনেক্ক্ষণ। দুপুর ১২টার পরে আরাফ বাসায় আসলো। আমি সোফায় বসেছিলাম। আরাফ তো একেবারে স্বাভাবিক! তার হাতে ১টা কাগজ দেখলাম। নিশ্চিত এটা রেজাল্ট কার্ড হবে ?। আমি দৌড়ে রুমে চলে এলাম। প্রায় ৫মি পর আরাফও রুমে আসলো।
আরাফ- নাফিসা?
নাফিসা- ?সবসময় জানপাখি বলে ডাকে, আর আজ নাফিসা কেন! নিশ্চয়ই রেজাল্ট খারাপ হয়েছে! ?
আমি খাটে বসে ছিলাম, আরাফ আমার সামনে দাড়িয়ে কাগজটা এগিয়ে দিলো।
আরাফ- ধরো।
নাফিসা- আমি কাপা হাতে কাগজটা ধরলাম। রেজাল্ট দেখে তো আমি হায়ায়ায়া……? 1st class পেয়েছি ? এসব আরাফের জন্য সম্ভব হয়েছে। আমার খুশি দেখে কে! আমি এক লাফে উঠে আরাফের গালে ১টা কিস করলাম ? তারপর তাকে জড়িয়ে ধরলাম।
– Thank you so much. তোমার জন্য possible হয়েছে ☺️।
আরাফ- আমি তো নাফিসার কাজে স্থির হয়ে একজায়গায় দাড়িয়ে আছি। ভাবতেও পারিনি এমন কিছু হবে ?।
নাফিসা- তোমার ফোনটা দাও, মাকে কল করবো।
আরাফ- আমি সেভাবেই দাড়িয়ে থেকে পকেট থেকে ফোন বের করে দিলাম।
নাফিসা- আমি ফোন নিয়ে মাকে খবরটা জানালাম, দিনার সাথে কথা বললাম। দিনা ও 1st class পেয়েছে. আরাফ এখনো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে!
-কি হয়েছে? এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
আরাফ- তুমি তো আমাকে স্টেচু করে দিলে!?
নাফিসা- কিভাবে!
আরাফ- ?একটু আগে যে কাজটি করলে!
নাফিসা- কি করেছি! আমি কিছু করিনি তো!
(?আমি আর সেখানে দাঁড়িয়ে না থেকে দ্রুত বাইরে আম্মুর কাছে চলে এলাম)
আম্মু- কি খুশিতো??
নাফিসা- ভীষণ ☺️
নিসা- ?ভাবি, তুমি আবার ফোন নিয়ে ঘুরো কবে থেকে!
নাফিসা- ওহ! তোমার ভাইয়ার ফোন। মাকে কল করেছিলাম। ভুলে গেছি দিতে।
আমি আবার রুমে এলাম ফোন দেয়ার জন্য। কিন্তু আরাফ রুমে নেই। সে আবার কোথায় গেলো! আমি সোফায় বসে আরাফের আইডিতে লগইন করলাম। পাসওয়ার্ড সেভ করা ছিল। কিছুক্ষণ নিউজফিড ঘুরতে লাগলাম। হঠাৎ ১টা পোস্ট দেখে মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল। পোস্টটা ছিল, “আমরা দাত থাকতে দাতের মর্যাদা দিতে জানিনা, হারিয়ে গেলে খুঁজে বেড়াই।”
আমি কি আরাফকে বেশিই অবহেলা করছি! হারিয়ে ফেলবো নাতো আবার! ?
.
তারপর আরাফের প্রোফাইল দেখলাম, অনেক গুলো ছবি আছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সাথে বাইরের ও কিছু দেশের, কিন্তু আমার জানা নেই সেটা কোথায়!
তবে ১টা বিষয় লক্ষ করলাম, এই ছবি গুলো সব বিয়ের আগের হবে। ইদানীং তোলা ২টা ছবি পেয়েছি। ১টা ছবি তার বন্ধুদের সাথে রেস্টুরেন্ট এর, আর ১টা ছবির পেছন সাইডটা পূরো অন্ধকার। আবছা আবছা কিছু দেখা যাচ্ছে কিন্তু অস্পষ্ট , ক্যাপশনে লিখা ” আমার পাখির বাসা ❤️”
-পাখির বাসাটা কোথায়! আর পাখিটাই বা কে!? আমাকে তো জানপাখি বলে ডাকে! আর আমার বাসা তো এমন না!
তারপর আরাফের গ্যালারিতে ঢুকলাম। ওর সব ছবিই দেখলাম, কিন্তু ২টা ফাইল লক করা। ১টার নাম Janpakhi আর ১টা my nest. পাসওয়ার্ড জানা নেই, তাই ছবিগুলো দেখতে পারলাম না। ?
এমনি আরাফ রুমে আসলো।
নাফিসা- কোথায় ছিলে?
আরাফ- কেন?
নাফিসা- ফোন রেখে চলে গেছো তাই।
আরাফ- ওহ! পাখির বাসায় ছিলাম ?
নাফিসা- পাখির বাসা কোথায়? আর পাখি কে?
আরাফ- সেটা জেনে তুমি কি করবে? মামা অসুস্থ, আম্মু আব্বু মামাকে দেখতে যাবে। তোমাকে ডাকছে, যাও।
নাফিসা- ?
(আমি আম্মুর কাছে চলে গেলাম, আম্মুরা বেরিয়ে গেলো ২দিন থাকবে। এখন আমি, আরাফ ও নিসা বাসায় আছি)
.
.
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here