#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়,পর্ব২০,২১
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_বিশ
[#প্রকৃতি]
–” সকাল সকাল মানুষ হেসে দিন শুরু করে আর তুমি কিনা সকালটা মন খারাপ দিয়ে শুরু করলে।”
–” মন যা ভালোছিল তা আপনাকে দেখে খারাপ হয়েগেছে। কথাটা হেসে বলে দিল স্নিগ্ধা।
—” কি বললে?”
–” বললাম হাসি জিনিসটা একটা অনুভূতির প্রকাশ সব সময় যে হাসি হাসি ভাব থাকবে বা মন ভালো থাকবে তেমন কোন কথা নেই। আসলে শত হলেও আমি মানুষ সব সময় যে প্লাস্টিকের হাসি ঝুলিয়ে রাখতে পারবো তা ও নয়। আশা করি বুঝতে পেরেছেন বিষয়টা!”
–” হয়তো তোমার মুডসুইং হচ্ছে, ব্যাপার না আসলে এই সময়কার মেয়েদের হুট করে মুডসুইং হয়।
ইটস্ নরমাল! কিন্তু তোমার উচিৎ কারোর সঙ্গে মন খুলে কথা বলার। আইমিন, কোন ভালো সঙ্গি খুজেঁ তাকে সব শেয়ার করা। এই ক্ষেত্রে তুমি আমাকে সব বলতে পারো বন্ধু ভেবে।” বলেই হেসে স্নিগ্ধার দিকে ফিরে তাকিয়ে দেখল স্নিগ্ধা পাশে নেই। আশেপাশে তাকিয়ে দেখল সে,
চোখ পরল মহিমা আর উৎপলের দিকে। স্নিগ্ধা উৎপলের সঙ্গে দুষ্টুমি করছে। উৎপল মহিমার চুল ধরে টেনে দিচ্ছে।
আয়মান নিজের মনে হেসে দিল মেয়েটা যতটা গম্ভীর দেখায় সে আসলে ততটা গম্ভীর না।
উৎপল দুষ্টুমি করে মহিমার হাত ধরে বলল –
–” প্রিয়া আমায় ছেড়ে যে ও না কখনো, ভুলে যেও না প্রিয়া! তোমার বিরহে আমার হৃদয়ের দমনীগুলো রক্ত সঞ্চালনা বন্ধ করে দেয়। বুক তখন ধক ধক করে!
একবার এই বুক ছুয়ে দেখো, মোবাইলের ভাইব্রেটের থেকেও বেশি গতিতে ভাইব্রেট করছে।”
স্নিগ্ধা উৎপলকে প্রশ্ন করল
–” কোন দিকে করছে?”
–” এইদিকে করছে, মনটা ঠিক যেন বলছে
—” বুক চিনচিন করছে হায়
মন তোমায় কাছে চায়!
তুমি ছুয়ে দিলে হায়
আমার কি যে হয়ে যায়!”
বুকের বা দিকটায় হাত দিয়ে দেখিয়ে উৎপল ভঙ্গিমার সাথে নেচে চলেছে। উৎপলের সাথে তাল মিলিয়ে স্নিগ্ধা ও উৎপলের সঙ্গে দুষ্টুমি করছে।
শ্রাবণ দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে আর হাসছে, স্বর্ণা ও এলো তাদের মধ্যে। স্বর্ণা শ্রাবণের সঙ্গে নাচতে চাইলে ও শ্রাবণ নাচতে চাইলো না। পরে বাধ্য হয়ে স্বর্ণার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাচলো তবে তা সম্পূর্ণ এমনি দুষ্টুমি করে। যাকে বলে নাচতে না জানলে উঠুন বাকাঁ। স্নিগ্ধার দিকে দুয়েকবার চোখ পরতেই শ্রাবণ চোখ টিপ দিল।
আর স্নিগ্ধা তাকে ভেংচি কেটেদিল,শ্রাবণ প্রতি উত্তরে হেসে দিল।পুরোটা সকাল সবাই মিলে দুষ্টুমি করার পর যে যার রুমে গিয়ে তৈরি হয়ে নিল। কারন একটু পরেই আবার তাদের জাফলং যেতে হবে।
শ্রীমঙ্গলকে বলা হলো বাংলাদেশের চায়ের রাজধানী।
প্রতিবছর এই অঞ্চলে হাজারো পর্যটক আসে।
শ্রী মঙ্গল যে শুধু চা বাগান তাই নয়, এক টুকরো স্বণীয় উদ্যানের সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি। আহা নয়নাভিরাম সবুজে ঘেরা এই অঞ্চলটিতে চোখ জুড়িয়ে যায়।
দুটো গাড়ি এক সঙ্গে চলছে, গাড়ির জানালা খুলে রাখায় সাই সাই করে বাতাসের শব্দ গুলো কানে কানে কত কিছু বলে যায়। শব্দগুলো বোবা হলেও এর শব্দের ধরণ গুলো যেন বলছে –
–” এসো হারিয়ে যাও আমাতে!
ডুবে যাও গভীরে
অতল স্পর্শে !
রাঙ্গিতে নেও নিজেকে
ছাড়ো গভীর থেকে বিষাক্ত নিশ্বাস
এসো আমার বক্ষে!”
স্নিগ্ধা পুরোটা সময় জানালার বাইরের দৃশ্যগুলো দেখতে ব্যাস্ত ছিল। প্রকৃতির এই দৃশ্য তার মন ভরছে না মনে হচ্ছে আরও হারিয়ে যেতে, ছুয়েঁ দিতে ইচ্ছে করছে তার।
এত মধুর দৃশ্য! এত মায়া!
প্রায় ঘন্টা খানিক বাদেই তারা সবাই জাফলং গিয়ে পৌছাল। জাফলং এর পথটা খুব একটা সুন্দর না হলেও এর পরের দৃশ্যটা সব সময় মনে পরবে স্নিগ্ধার।
উচুনিচু টিলার পাশেই স্নিগ্ধার নজর পরল।
জাফলংয়ের পাশে ভারতের শেষ সীমানা। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের উচু উচু পাহাড় দেখা যাচ্ছে চোখ ঘুরিয়ে স্নিগ্ধা সামনে তাকালো টুরিস্টরা যে যার মত দোকান থেকে কেনাকাটা করছে। শ্রাবণের ডাক শুনে তার সামনে যেতেই শ্রাবণ তাকে বলল –
–” কি কিছু কিনবি?”
–” না, ”
–” তাহলে সময় নষ্ট করিস না, এই তোরা সবাই আয়। ঘুরে তারপর আবার রিসোর্টে ফিরতে হবে। ”
খাড়া খাড়া সিড়ি বেয়ে নিচে নামছে সবাই, মহিমার পাশে তাশদীদ, শ্রাবণ হাটতে হাটতে গলায় ঝুলানো ক্যামেরাটা নিয়ে বেশ কয়েক ছবি তুলে নিচ্ছে। স্নিগ্ধা সিড়িগুলোতে খুব সাবধানে নেমে যাচ্ছে।
স্নিগ্ধা হঠাৎ নামতে গিয়ে থেমে গেল সিড়িতে। শ্রাবণ ছবি তুলতে তুলতে হঠাৎ নিচে তাকিয়ে দেখল সবাই নিচে নেমেগেছে, তাদের সবাইকে দেখে স্নিগ্ধাকে খুজলো ওদের মধ্যে। ওদের কারোর মধ্যেই স্নিগ্ধা নেই। শ্রাবণ চিন্তিত হয়ে উপরে তাকাতেই দেখল স্নিগ্ধা উপরে দাড়িয়ে আছে।
শ্রাবণ স্নিগ্ধাকে একবার ডাকলো। স্নিগ্ধা নিজের ড্রেসটাকে সেটিয়ে এক জায়গায় চুপ করে দাড়িয়ে আছে।
শ্রাবণ স্নিগ্ধার সামনে এসে বলল –
–” এখানে দাড়িয়ে আছিস কেন?”
—-
–” কিরে বল, নিচে চল, সবাই অপেক্ষা করছে !”
–” আমি যেতে পারবো না,”
–” কেন?”
—-
–” বলবি তো কেন? কেন যেতে চাস না?”
–” আমার আসলে শরীর খারাপ,”
–” এই তো আসার সময় দিব্বি ঠিক ছিল, এখন কি হলো?”শ্রাবণ স্নিগ্ধার হাত ধরতে চাইলে স্নিগ্ধা সরিয়ে নিল। শ্রাবণ স্নিগ্ধার ড্রেসে হাত দেওয়া হাতটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপরই তার টনক নড়ল।
স্নিগ্ধার মুখটা কেমন ছোট হয়েগেছে। শ্রাবণ স্নিগ্ধার গায়ে জড়ানো ওড়নাটাকে ভালো করে ওর শরীরে পেচিয়ে স্নিগ্ধার পিছনে দাড়িয়ে বলল
–” তুই হাটতে থাক, আমি তোর পিছন পিছন আসছি। কেউ দেখবে না, এত এত পাকা কথা বলিস এই টুকু জিনিস হাসবেন্ডকে বলতে পারিস না? কোন যুগে পরে আছিস কে জানে। নিচ থেকে সবাই শ্রাবণ আর স্নিগ্ধাকে ডেকে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি আসার জন্য, দেরী হয়ে যাবে।
পাশের একটা রিসোর্টের একটা রুমে ম্যানেজারকে বলে স্নিগ্ধাকে রুমের ব্যবস্থা করে দিল। কিছুক্ষণ বাদে দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করে প্যাকেটে কিছু নিয়ে এসে স্নিগ্ধার হাতে ধরিয়ে দিল। স্নিগ্ধার সামনে না দাড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল সে। হাতে ধরে রাখা প্যাকেটটি নিয়ে স্নিগ্ধা খুব লজ্জায় পরেগেল। বিনা কথায় মানুষটা দূর থেকেই তার উপর নজর রেগেছে। আবার তাকে আলাদা করে নিজের সমস্যা উপস্থাপন করতে হয়নি নিজেই বুঝে নিয়েছে।
” ভালোবাসার মানুষগুলো বুঝি এমনই হয়?
না সম্পর্ক এবং দায়বদ্ধতার কারনে এমন দায়িত্ববান হয়ে পাশে দাড়ায় মাত্র?
সব সময় কি এমন ভাবে আগলে রাখে? না সময় ফুরানোর সাথে সাথে ভালোবাসার মানুষটির কেয়ার গুলো পাল্টে যায়?”
মনের মধ্যে একটানা যুদ্ধ করে সে হাতে থাকা ন্যাপকিনের প্যাকেটটার দিকে তাকালো। জীবনে হয়তো প্রত্যেকটা মেয়ে তার মতই এমন স্বামী চাইবে নয় সবাই চায়।
আচ্ছা এই ছোট ছোট কেয়ার করা, সবার সঙ্গে মিষ্টি হেসে কথা বলা মানুষটিকে সে কি নাম দিবে? স্নিগ্ধা মনটাকে শক্ত করে রেডি হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে দেখল শ্রাবণ দাড়িয়ে আছে বাইরে।
শ্রাবণের সামনে দাড়াতেই শ্রাবণ হেসে বলল –
–“কিছু খাবি? জুস,ডাবের পানি?”
–” না,”
–” না বললে তো শুনবো না, চল খেয়েনি,”
অগত্যা বাধ্য হলো স্নিগ্ধা শ্রাবণের কথা শুনতে। দোকান থেকে একটা জুসের বোতল হাতে ধরিয়ে দিল স্নিগ্ধার।
শ্রাবণ স্নিগ্ধার দিকে চেয়ে দেখল স্নিগ্ধা মাথা নিচু করে রেখেছে। শ্রাবণের মনে হলো নারীর লজ্জায় রাঙ্গা মুখটি ও পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য! আর তা অবশ্যই প্রিয়তমার।
দুজনে মিলে নিচে নামতেই স্বর্ণা সবাইকে পিছনে ফেলে একদম সিড়ির কয়েক ধাপ উপরে উঠে বলল –
–” উফফ শ্রাবণ এত লেট করলে কেন?”
–” স্নিগ্ধার পিরিয়ড ছিল, হঠাৎ করেই এমন হয়েছে। ”
–” এটা কোন কথা? এই মেয়ে তুমি ডেট জানোনা?
আশর্চয্য এতটা নির্বোধ ও আজকাল কোন মেয়ে হয়?
স্মার্টনেস বলে ও তো কিছু আছে? পিরিয়ড যখন তখন তো হয়না, ডেট অনুযায়ী হয়। তুমি কি সব সময় এরকম যেখানে সেখানে..
–” স্বর্ণা এটা পাবলিক প্লেস, পিরিয়ড যে শুধু ডেট দেখেই হবে তেমন কোন কথা না। বিভিন্ন কারনে মান্থ মিস হতেই পারে। ও হয়তো দূর্বল তাই মান্থ মিস গিয়েছে।
–” তাই বলে…
–” যাস্ট সাট আপ! তোমার কি কোন সেন্স নেই? কোথায় কি বলো সব ভুলে যাও? আর তাছাড়া ওর দোষ কোথায় আমাকে বলতে পারো? মান্থ মিস টা অনেক কারনে হয় স্বর্ণা এটুকু তুমি অবশ্যই জানতে। না জানার মত কিছুই নয় এটা। হরমোনাল প্রবেলেমের কারনে এমন হয়। বেশির ভাগ সময় রক্তশূন্যতার ফলে মান্থ মিস হয়।
এই বিষয়গুলো নিয়ে দোষারোপ করাটা তোমার মত স্মার্ট এডুকেটেড মেয়ের থেকে আশা করা যায় না স্বর্ণা।
খুব স্মার্ট তুমি কিন্তু এখনো স্মার্টনেসটাকে আয়ত্ত করতে পারলে না। ভেরি সেড! একটা কিশোরী মেয়ের সঙ্গে যেভাবে রুড বিহেভ করেছো তুমি, আমাকে খুব ভাবাচ্ছে তুমি কি আসলে কোন সুস্থ স্বাভাবিক মেয়ে? নাহলে মেয়ে হয়ে একটা মেয়েকে নিয়ে এই ধরনের মন্তব্য করতে?”
চলবে।
#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_একুশ
[#প্রকৃতি]
একটা কিশোরী মেয়ের সঙ্গে যেভাবে রুড বিহেভ করেছো তুমি, আমাকে খুব ভাবাচ্ছে তুমি কি আসলে কোন সুস্থ স্বাভাবিক মেয়ে? নাহলে মেয়ে হয়ে একটা মেয়েকে নিয়ে এই ধরনের মন্তব্য করতে?”
লজ্জা করল না? মাথায় একবার ও আসলো না একটা মেয়েকে নিয়ে যে মন্তব্য আজ আমি করছি। ঠিক সেম প্রবলেমে আমি নিজে ও পরতে পারি! স্বর্ণা স্নিগ্ধাকে তুমি খুব একটা লাইক করো না তা আমি তোমার এই ব্যাবহার গুলো দেখেই বুঝেছি। কিন্তু এখন যা করলে তা একদম বেশি করেছো তুমি।
তুমি জানো এখন যে কথাগুলো বলেছো তাতে আমার মনে হয় লোয়ার ক্লাসের মেয়েদের কাতারে ফেললেও একদম লোয়ার কোয়ালিটির মেন্টালিটি তোমার!
তোমার মধ্যে শিক্ষিত সমাজের শিক্ষিত বীজই তো নেই।
হাতে পায়ে বড় তো হয়েছো, পড়াশুনা করছো তবে যে শিক্ষায় একজন আদর্শ মানুষ হওয়া যায় তাই তো রপ্ত করতে পারোনি! মানুষকে সম্মান দিয়ে কথা বলাই তোমার মধ্যে নেই, তুমি সম্মানের কি বুঝবে? আঘাতের কি বুঝবে? এত গুলো মানুষের সামনে তুমি ওকে অপমান করছো, এই জিনিসটা ভেবে দেখলে না তোমার ও এমন একটা মুহূর্ত আসতে পারে। তুমি ও তো ওর মত মেয়ে,আজ ওর যা হয়েছে তা যদি একশোর মধ্যে আশি শতাংশ মানুষ যদি স্বাভাবিক ভাবে, স্বাভাবিক প্রক্রিয়া মেনে নেয়। তবুও তোমাদের মত কিছু আতেল আর অসভ্য, মূর্খরা জায়গায় দাড়িয়ে অপমান করে এই কথাটা বলবে। কারন তারা নিজেদের জ্ঞানীভাবে, আসলে জ্ঞানী লোকেরা মানুষের ভুল সামনে বা অপমান করে নয়।
সুন্দর ভাবে তাকে বুঝিয়ে দেয়। আফসোস, এইসব সমস্যায় বেশির ভাগই আতেলদের সামনে ভুগতে হয়!”
–” শ্রাবণ তুমি আমাকে এত গুলো কথা বলতে পারলে?
আমি লোয়ার কোয়ালিটির গার্লস থেকেও খারাপ?
আমার মাঝে তুমি অসভ্যতা খুজেঁ পাও? আমার মধ্যে তুমি কোন ভালোদিক কি কখনোই পাওনি?তার মানে তুমি আমাকে কখনোই একজন মানুষ ভালো মানুষ হিসেবে, দূর একজন কাছের মানুষ হিসেবে ভাবোনি?যেখানে তুমি আমার বন্ধু হিসেবে আমার সম্পর্কে এত খারাপ ধারণা নিজের মধ্যে পুষে রেখেছো সেখানে নিশ্চয় আমাকে কখনোই কাছের মানুষ ভাবোনি!নাহলে অন্তত এতগুলো কথা তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারতে না! আচ্ছা শ্রাবণ তুমি কি কখনোই আমাকে ভালো বন্ধু বা কাছের মানুষ বা এর থেকেও খুব কাছের কেউ কখনোই ভাবোনি?”
–” আমি তোমাকে সবসময় বন্ধু ভেবেছি,কখনোই কাছের মানুষ ভাবিনি,”
–” ও, এই স্নিগ্ধা তোমার খুব আপন?”
–” ও আমার কাজিন, ওর সাথে আমার সম্পর্কটা বন্ধুত্ব থেকে ও বেশি। স্নিগ্ধাকে নিয়ে আজেবাজে কিছুই বলার তোমার রাইট নেই। স্নিগ্ধা যদিওবা আমার কাজিন হয়, তুমি আমার কে?”
–” আমি তোমার কে হই শ্রাবণ?”
–” আমি তোমাকে প্রশ্ন করছি,কে হও আমার? কে হও তুমি আমার?যে আমার কাজিনের সমন্ধে এমন মন্তব্য করো?ভার্সিটিতে দু একদিনের পরিচয়ে কথা বলতে শুরু করেদিলে। কথা বলতে বলতে একদিন হুট করে এসে বললে পছন্দ করো আমাকে! আমি নিষেধ করার পর তুমি সুইসাইড নোট সাজিয়ে, সুইসাইড করতে তোমার বাড়িতে গলায় ওড়না প্যাচিয়ে ফ্যানে ঝুলতে চেষ্টা করলে।
অথচ তুমি সেই মেয়ে যে কিনা কোনদিন মাথায় ওড়না দেওয়া বাদদিলাম গলায় ওড়না ও ঝুলাতে না।তোমার ঐ পাগলামোর ভয়ে আমি আমার বন্ধুদের প্ররোচনায় পরে এইসব সহ্য করে যাচ্ছি!”
স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে অবাক হয়ে চেয়ে আছে। আরেকবার
স্বর্ণার দিকে ফিরে তাকালো সে। স্বর্ণার ছলছল চোখ এখন ঝর্ণার মত বেয়ে চলেছে। স্বর্ণা হয়তো কল্পনা ও করতে পারেনি শ্রাবণ এইভাবে তাকে অপমান করবে আর
কথা শুনিয়ে যাবে। স্বর্ণা না জানলেও স্নিগ্ধা জানে শ্রাবণ এমনিতে এতটা সিরিয়াস না হলেও রাগলে মুখে যা এসে পরে তাই বলেদেয় সে। হয়তো এর থেকে কম রাগ হলে গালে দু চার চড় থাপ্পর মেরে দিয়ে পরে কথা বলতো।
পিছনে তাকিয়ে দেখল আয়মান, মৃত্তিকা, উৎপল, মহিমা দাড়িয়ে আছে। কারো মুখে কোন কথা নেই, এরা ঝগড়া দেখেও কিছু বলছে না সব শুনেই যাচ্ছে আর তামাশা দেখে যাচ্ছে।
স্বর্ণা শ্রাবণের এইসব মন্তব্য নিজের নামে শুনে লজ্জায় দৌড়ে উপরে চলে যাচ্ছে। সবার মুখ কেমন থমথমে হয়েগেছে। কেন শ্রাবণ এতগুলো কথা শুনিয়েছে স্বর্ণাকে কেউ বুঝতে পারছে না। স্নিগ্ধাকে কিছু প্রশ্ন করেও কেউ বের করতে পারল না। স্নিগ্ধা ও লজ্জায় পরেগেছে শ্রাবণের হঠাৎ করে এমন রিয়েক্ট দেখে। স্বর্ণাকে শ্রাবণ এতগুলো কথা শুনিয়ে দিবে সে ভাবতে পারেনি।
তাশদীদ শ্রাবণের কাছে গিয়ে দাড়ালো, বুঝতে পারল শ্রাবণ প্রচন্ড রেগে আছে। কিছু বলার আগেই শ্রাবণ সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো-
–” তোরা কি এখানে দাড়িয়ে থাকবি? না এখন ঘুরতে যাবি?”
–” স্বর্ণা কাদছে কেন? ওকে তুই কি বলেছিস?”
–” তোর এতকিছু জানতে হবে না, তুই তোর কাজ করতে যা, ঘুরতে এসেছিস ঘুরতে যা। ওর জন্য চিন্তা করে লাভ নেই।”
–” কেন চিন্তা করে লাভ নেই ? সবাই ঘুরতে এসেছি আমরা। এখন আমাদের মধ্যে একজন মন খারাপ করে বসে থাকলে ভালো লাগবে বল? ”
–” তাহলে তুই গিয়ে ওর মান ভাঙ্গা! আমি গেলাম ওদেরকে নিয়ে আমার ভালো লাগেনা এসব! সব সময় তামাশা লাগিয়ে রাখে।”
তাশদীদ আর কিছু বলল না। সে চুপচাপ গিয়ে নৌকায় চড়ে বসল। তাশদীদ বসতেই সবাই মিলে নৌকায় বসে পরল। স্নিগ্ধা বসতে চাইল না, শ্রাবণ স্নিগ্ধার সামনে গিয়ে দাড়ালো। স্নিগ্ধা তখন ও মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। ভিষণ খারাপ লাগছে তার একই সাথে বেড়াতে এসেছে স্বর্ণা কিন্তু এখন স্বর্ণার এইভাবে দল থেকে বেড়িয়ে যাওয়া তার ভালো লাগছে না। স্বর্ণা তাকে প্রতিদ্বন্দ্বি ভাবলেও স্নিগ্ধা তো তাকে ভাবেনি।
–” এখন কি তুই শোক পালন করবি?”
–” কি? শোক পালন করব?”
–” শোক না পালন করে, নৌকায় গিয়ে বস!”
–” স্বর্ণা আপু?”
–” স্বর্ণার কথা তোর ভাবতে হবে না! স্বর্ণার বাপ ওকে একবার না পঞ্চাশবার এখানে ঘুরিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।
কিন্তু আমরা পারবো না, তোর হাতে সময় কম আমার হাতেও সময় কম! দুজনই ব্যাস্ত!”
–” এটা কেমন স্বার্থপরের মত কাজ হলো না?”
–” এটা স্বার্থপরতা হয়নি, এটা ওর জন্য শাস্তি !
এরপরের বার আমরা বিছনাকান্দি ঘুরে আসবো তখন ওকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবো। আজ ও এই রিসোর্টে থাকুক!”
হালকা হালকা শীত এখনও পুরোপুরি শীতের ছোয়া লাগেনি। এই সময় পানিটা বেশ পরিষ্কার থাকে। জুন জুলাই মাসে এই অঞ্চলে বৃষ্টি খুব বেশি হয়, তাই এখানকার পানিগুলো বেশ ঘোলাটে হয়, বৃষ্টির পানিতে পাহাড়ি ঝর্ণার স্রোত আর পাহাড়ের পলি মাটিগুলো পানিতে মিশে একদম ঘোলাটে বর্ণ ধারণ করে। সেই তুলনায় শীত মৌসুমে একদমই পরিষ্কার থাকে। তবে ঝর্ণাগুলোর আকৃতি একদমই কম হয়ে যায়। পানি কম এবং সচ্ছ বলে নিচের পাথর গুলোও বেশ পরিষ্কার দেখা যায়। নৌকা থেকে কিছুটা দূরেই ভারতের মেঘালয়রাজ্যের ডৌকি নদীর ব্রীজ! পাহাড়ের খাজে আর সৌন্দর্য বৃদ্ধি যেন আরও বেশি হয়েছে এই ব্রীজটির কারনে। দুই দেশের সীমানায় ডৌকি নদীর সৌন্দর্য খুব সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে। চলন্ত নৌকা থেকে ডৌকি ব্রীজের কিছুটা সামনে নেমে পরল সবাই, এই অংশটা ভারত বাংলাদেশের সীমানায় পরেছে। একটু এগুলে বিএসএফ ঘাটি! এটাই বাংলাদেশের শেষ সীমানা প্রাচির।
বড় বড় পাথর আর সচ্ছ জলগুলো বেয়ে আসছে এইদিকে।
ঠান্ডা পানিতে হাত ডুবিয়ে একদম কেপেঁ উঠলো স্নিগ্ধা। শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে দেখল শ্রাবণ এখনও কেমন ধুম ধরে বসে বসে আছে নৌকায়। স্নিগ্ধার ভালো লাগছে না শ্রাবণের এমন চুপচাপ বসে থাকা ।স্নিগ্ধা হাতে থাকা পানিগুলোর দিকে তাকিয়ে একবার ভাবলো ছুড়ে মারবে। মারলে যদি আবার তার উপর চড়াও হয়? না ছুড়েই দেখি! সব জল্পনা কল্পনাকে ফেলে স্নিগ্ধা শ্রাবণের গায়ে হাতের মুঠোয় থাকা পানিগুলো ছুড়ে মারল।শ্রাবণ প্রথমে এদিক ওদিক তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করল কে মেরেছে পানিগুলো, সামনে তাকিয়ে দেখল স্নিগ্ধা ওদিকে ফিরে বসেছে তারদিক থেকে। শ্রাবণ নৌকা থেকে উঠে পরল, স্নিগ্ধা ভাবলো শ্রাবণ তার উপর রাগ করেছে। স্নিগ্ধা তাই সেখান থেকে মহিমার কাছে ফিরতে গেলেই স্পষ্ট বুঝতে পারল তার পিছনে পানির ছিটা পরছে।পিছন ফিরতেই শ্রাবণ হেসে বলল–
–” আমি কারো ঋণ রাখি না! কেউ আমাকে এক টাকা দিলে আমি তাকে দু টাকা নয় দশ টাকা দিয়ে দেই!
যেহেতু বেড়াতে এসেছি, জামা ভিজিয়ে ঋণ শোধ করতে চাইনা। আমার জিনিস অন্যরা দেখুক তা অন্তত চাইনা!”
স্নিগ্ধা অবাক হয়ে চেয়ে আছে, এই ছেলে একদম শুধরাবে না। ছুড়েছে পানি, আর শুনালো কি না এতগুলো কথা!
শ্রাবণ স্নিগ্ধার দিকে ভ্রু কুচকে হাসলো।
চলবে