ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়,পর্ব:২২,২৩

0
1180

#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়,পর্ব:২২,২৩
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_বাইশ
[#সারপ্রাইজ]

–” আমি কারো ঋণ রাখি না! কেউ আমাকে এক টাকা দিলে আমি তাকে দু টাকা নয় দশ টাকা দিয়ে দেই!
যেহেতু বেড়াতে এসেছি, জামা ভিজিয়ে ঋণ শোধ করতে চাইনা। আমার জিনিস অন‍্যরা দেখুক তা অন্তত চাইনা!”

স্নিগ্ধা অবাক হয়ে চেয়ে আছে, এই ছেলে একদম শুধরাবে না। ছুড়েছে পানি, আর শুনালো কি না এতগুলো কথা!
শ্রাবণ স্নিগ্ধার দিকে ভ্রু কুচকে হাসলো।

স্নিগ্ধা তাকে আবার ভেংচিকেটে দিল। তা দেখে শ্রাবণ অট্টোহাসিতে ফেটে পরল। পানিগুলো কাছে পেয়ে স্নিগ্ধার দিকে ছুড়ে মারলো। স্নিগ্ধাও কম যায় না সে ও শ্রাবণের গায়ে পানিগুলো ছুড়ে মারতে লাগল। দুজনে কিছুক্ষণ দুষ্টুমি করল।

প্রায় ঘন্টাখানেক পর স্নিগ্ধারা জাফলং ঘুরাঘুরি করে সিলেট শাহজালাল ও শাহপরাণ মাজারে ঘুরে তারা,
সেখান থেকে আবার রিসোর্টে ফিরে সবাই।
শ্রাবণ স্নিগ্ধাকে তার পাশের সীটে বসিয়ে দিল।রিসোর্টে যাওয়ার পর ক্লান্ত হয়ে যে যার রুমে চলেগেল।

পরেরদিন যথারীতি সবাই বিছনাকান্দিতে ঘুরে আসলো তবে স্বর্ণা আর শ্রাবণের সঙ্গে কথা বলেনি। স্নিগ্ধার সঙ্গে ও সে কথা বলেনি অন‍্যদের সঙ্গে কথা বলে ওদের সাথে একসঙ্গে ঘুরাফেরা করেছে। এসবের মাঝে স্নিগ্ধার কিছুটা হলেও স্বর্ণার জন‍্য খারাপ লাগল। স্বর্ণা যতটাই পাগলামো করুক সেতো তার ভালোবাসার মানুষের জন‍্যই করেছে। আর তাছাড়া স্নিগ্ধাকে নিয়ে স্বর্ণার হিংসাত্মক কথাবার্তা স্নিগ্ধা তেমন একটা গায়ে মাখেনি। তবু্ও মনের কোণে একটু হলেও কেমন যেন একটা চিন্তা থেকে যায়।

একদিন স্বর্ণা মৃত্তিকার সঙ্গে বসে কথা বলছিল। স্নিগ্ধা স্বর্ণার সামনে গিয়ে দাড়ালো। স্বর্ণা তখন স্নিগ্ধাকে দেখে সেখান থেকে উঠে যেতে চাইলে স্নিগ্ধা তার হাত ধরে বসিয়ে দিল।

–” আপু প্লিজ উঠবেন না!”

স্বর্ণা স্নিগ্ধার কথা শুনে বসে পরল। তবে মুখটা অন‍্যদিকে
ফিরানো।

–” আপু তুমি কি আমার উপর রেগে আছো?”

–” তোমার উপর রাগ করতে যাবো কেন? কে হও তুমি আমার? তুমি বেড়াতে এসেছো আমি ও এসেছি।”

–” তাহলে এরিয়ে যাচ্ছো কেন?”

—” আমার ভালো লাগছে না তাই!”

—” আপনার ভালো না লাগাটাও নিশ্চয়ই আমি?
হয়তো আমিই, আসলে আমিই কারন আমার মত ছন্নছাড়া মেয়েদের ভালো না লাগাটাই স্বাভাবিক। আমার এতে খুব একটা খারাপ লাগে না আপু। ছোটবেলা থেকেই আমি এগুলো তেমন একটা গায়ে মাখিনা। কেউ আমাকে নিয়ে যা ইচ্ছে তাই বলুক তাতে আমার খারাপ লাগেনা।
তবে কখন খারাপ লাগে জানেন? যখন কেউ আমাকে এরিয়ে যায়। কেউ যখন আমার সাথে কথৃ বলে না।
জানেন তখন আমার খুব কষ্ট হয়। আমি সহ‍্য করতে পারিনা। কোথাও একটা আমি তোমাকে বড় বোনের জায়গা দিয়েছিলাম। তুমি আমাকে কি ভাবো আমি জানিনা, তবে আমি তোমাকে কখনো নিজের প্রতিদ্বন্দ্বি ভাবিনি। ”

স্বর্ণা কিছুটা নড়চড়ে বসল। তারপর স্নিগ্ধার দিকে ফিরে বলল –

–” আমি তোমার উপর রেগে নেই, সেদিন যদি শ্রাবণ আমাকে কিছু না বলতো আমি হয়তো অন‍্যায়টা করতাম।
আমারই ভুল আমি তোমাকে হেয় করতে পারতাম না।
আমার দরকার ছিল এটার। ইটস্ ওকে স্নিগ্ধা, আমি তোমার উপর রেগে নেই। এতদিন যা ছিল তা আমার অপরাধবোধ ছিল। হাসি দিয়েই কথাটা বলল স্বর্ণা।”
স্নিগ্ধার সঙ্গে সেদিন থেকেই স্বর্ণার কথা বলা আবার শুরু।

সিলেটে প্রায় একসপ্তাহ ঘুরার পরই সবাই ঢাকায় চলে এলো। বাসায় এসেছে প্রায় তিনদিন, নানাভাই নাকি আবার অসুস্থ তাই কাল বিকেলে ছোটমামা আর মামি চট্টগ্রামে ফিরে গিয়েছে। স্নিগ্ধা ও যাবে তবে সে আজ কলেজ থেকে বেড়িয়ে বাসায় এসে চট্টগ্রাম যাবে। তাই স্নিগ্ধা কলেজের জন‍্য রেডি হয়েছে, আজ কলেজে যেতে হবে তার, প্রায় সপ্তাহ খানেক পর কলেজে যাবে সে।
আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুলগুলোকে ঠিক করে ক্রসবেল্টের উপর রেখে বিনুনীটা আবার ঠিক করেনিল।
আয়নায় চোখ পরতেই দেখল একজন বই হাতে নিয়ে বইটার আড়াল থেকে বারবার তারদিকে তাকাচ্ছে। স্নিগ্ধা কপট রাগ দেখিয়ে পিছনে ফিরতেই শ্রাবণ তারদিক থেকে সরে অন‍্যদিকে ফিরে তাকালো।

স্নিগ্ধা শ্রাবণের সামনে গিয়ে তার হাত থেকে বইটা টান মেরে বলল –

–” কি করছিলেন আপনি? আমার দিকে এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে তাকাচ্ছিলেন কেন?”

–” আমি তো বই পড়ছিলাম, উফফ বইটা দে তাড়াতাড়ি এখন‍ো পড়া বাকি আছে।”

–” বই পড়ছিলেন না আমাকে দেখছিলেন? কোনটা করছিলেন?”

–” তোর এইসব ফালতু কথা আমাকে বলবি না। যেই না চেহারার শ্রী! ”

–” তাই? এখন আর আমাকে ভালো লাগেনা?”

–” শোন আমি তাহসানের মত না! তোর সাথে ডং করব!
যা সর!”

–” কি বললে? ও স্বর্ণা আপুকে খুব ভালো লাগে?
শ্রাবণ আমাকে নিলে না? শ্রাবণ আমাকে জানালে ন?
শ্রাবণ আমি কি তোমার কাছের মানুষ না? খুব ভালো লাগে স্বর্ণা আপুর ডংগী মার্কা কথা শুনতে?”

–” হ‍্যা আমার খুব ভালো লাগে, বাই দা ওয়ে তোর এত জ্বলে কেন? তোর কি হিংসে হয় নাকি রে? তাহলে তো একটা গান গাইতে হয়রে তোর জন‍্য! কি যেন গানটা?

আমার কেমন লেগেছিলো!
আমার কেমন লেগেছিলো!
তুমি যখন অন্যের হয়েছিলে
তোমার কেন জলেরে বন্ধু?
তোমার কেন জলে?
আমি কারো হলে,
তোমার কেন জলেরে বন্ধু?
তোমার কেন জলে?

–” হুহ, আমি অন‍্যকারো হয়েছি কবে? আমি তো কাউকে সেই সুযোগ দেইনি। ”

–” তোর বিএফ? তুই তো বললি তোর প্রেমিক আছে। ”

স্নিগ্ধা এই কথার পরিবর্তে স্নিগ্ধা কিছুই বলেনি। শ্রাবণ স্নিগ্ধাকে নিজের কাছে টেনে বসিয়ে দিল তারপর তার ঘাড়ে মাথাটা রেখে। স্নিগ্ধার হাত ধরে বলল –

–” স্নিগ্ধা!,

–” হুহ,

–“ভালোবাসিস আমাকে?”

–” বলতে পারবো না,”

–” কেন?”

–” জানিনা!”

–” আমি যদি তোকে ছেড়ে চলে যাই তখন বলবি?
ধর আমার কিছু হয়েগেল তখন? তুই তখন আমাকে হাজার খুজঁলেও আমাকে পাবি না!”

স্নিগ্ধা শ্রাবণের কথায় অবাক হয়ে তাকালো। কি বলছে এগুলো শ্রাবণ? স্নিগ্ধা শ্রাবণকে কিছু বলবে তার আগেই শ্রাবণ বেড়িয়ে গেল ঘর থেকে। শ্রাবণ একদম একরোখা কোন কথাই ঠিকভাবে শুনেনা। স্নিগ্ধা শ্রাবণের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ব‍্যাগটা কাধে ঝুলিয়ে নিল। রুম থেকে বেড়িয়ে বুঝল শ্রাবণ তাকে ফেলেই নিচে চলেগেছে।
স্নিগ্ধা ও মেইন দরজায় লক করে বেড়িয়েগেল।
নিচে দেখল শ্রাবণ গাড়িতে বসেছে কানে তার হেডফোন দেওয়া। স্নিগ্ধা গাড়িতে বসার পরই হাই স্পিডে গাড়ি চালাতে লাগল। স্নিগ্ধা একবার ডাক দিল শ্রাবণ শুনলো না। প্রায় কিছুক্ষণ সময় কাটার পর কলেজের সামনে নামিয়ে দিল শ্রাবণ। স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে একবার ফিরে তাকালো কিন্তু শ্রাবণ তারদিকে ফিরে তাকালো না।
এই ছেলেটা এমন কেন?এর মেজাজ এত চড়া যে একটু থেকে একটু হলেই রেগেমেগে একাকার হয়ে যায়।
স্নিগ্ধা কলেজের ভিতর চলেগেল।

____________________________________

বাসায় এসেছে স্নিগ্ধা কলেজ থেকে ফিরে গোসল করেনিল সে। মামীর সঙ্গে ফোনে কথা বলে বিছানায় বসল। আজ চোখ দুটো কেমন ঘুমে টাল হয়েগেছে।
শ্রাবণ তাকে কলেজ থেকে বাসার নিচে নামিয়ে চলেগেছে আবার কোথায় যেন। স্নিগ্ধা শ্রাবণের সকালে বলা কথাগুলো ভাবতে লাগল।শ্রাবণের ঐ একটা কথা তার খুব খারাপ লেগেছে। এভাবে সে বলতে পারল? স্নিগ্ধার বুঝি খারাপ লাগে না এমন কথা শুনতে?

ঘুম ঘুম চোখে বিছানা থেকে উঠে পরল স্নিগ্ধা। চোখের দু পাতা যেন খুলতে পারছেনা সে খুব কষ্ট করে চোখদুটো খুলে দেখল চারদিক থেকে মসজিদের আজানের শব্দ আসছে। বেলকনির দরজা খুলে দেওয়া পর্দাগুলো উড়ে উড়ে দক্ষিণের শীতল হাওয়া ছড়িয়ে দিচ্ছে। এত সন্ধ‍্যা হয়েগেল অথচ শ্রাবণ কোথায়? হাতে ফোনটা নিয়ে দেখল সত‍্যিই সন্ধ‍্যা ছটা বাজে। স্নিগ্ধা রুম থেকে বেড়িয়ে পুরো ঘর জুড়ে দেখল না কোথাও নেই শ্রাবণ। হাতের ফোনটা নিয়ে কয়েকবার ফোন করতেই বুঝল ফোনটা সুইচড অফ! কি হয়েছে আবার? সুইচড অফ কেন ফোন টা?
স্নিগ্ধা সারাঘর ময় হাটতে লাগল ব‍্যস্ত হয়ে, কাকে জানাবে সে? শ্রাবণ কোথায়? কে বলবে তাকে?”

হঠাৎ তার মনে হলো তাশদীদকে ফোন করে জেনে নেওয়া যাক। দুবার রিং হওয়ার পর অপর পাশ থেকে ফোনকল রিসিভ হলো। স্নিগ্ধার হাত থেকে ফোনটা পরে যাওয়ার উপক্রম। নিজেকে সামলেই বলে উঠলো –

–” কোন হসপিটালে?”

চলবে।

#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_তেইশ

হঠাৎ তার মনে হলো তাশদীদকে ফোন করে জেনে নেওয়া যাক। দুবার রিং হওয়ার পর অপর পাশ থেকে ফোনকল রিসিভ হলো। স্নিগ্ধার হাত থেকে ফোনটা পরে যাওয়ার উপক্রম। নিজেকে সামলেই বলে উঠলো –

–” কোন হসপিটালে?”
–” কখন এরকম হয়েছে?”
–” এখন জানালেন আপনি আমাকে?”
–” আশ্চর্য নাম্বার না থাকলে ওর ফোন থেকে কল করে জানাতেন! স্নিগ্ধা তাশদীদের সঙ্গে কথা বলে হসপিটালের ঠিকানা জেনেই নাম্বারটা কেটে দিয়েছে স্নিগ্ধা।

হাসপাতালের অর্থপেডিক ওয়ার্ডের বেডে শুয়ে আছে শ্রাবণ। ডান হাতে ব‍্যান্ডেজ করা চোখদুটো বন্ধ করে শুয়ে আছে, কপালের খানিকটা ব‍্যান্ডেজ করা। ওয়ার্ডের ভিতরে ড্রেসিং করানোর পর ভিআইপি কেবিনে শীফট করা হয়েছে। স্নিগ্ধা তাশদীদকে ফোন করে জেনে নিল কেবিন নাম্বার। কেবিন দুশো পাচঁ নাম্বার কেবিনে ঢুকে দেখল শ্রাবণ ভাঙ্গা হাতটা বাম হাত দিয়ে ধরে রেখেছে।
চোখ দুটো বন্ধ থাকলেও কুচঁকে রয়েছে। স্নিগ্ধা বুঝতে পারল শ্রাবণের ঘুম আসেনা চোখের উপর আলো পরলে। সে চোখের উপর হাত দিয়ে ঘুমায়। স্নিগ্ধা অন‍্যদের দিকে তাকিয়ে দেখল তারা সবাই কথা বলছে। স্নিগ্ধাকে দেখে উঠে পরল উৎপল, স্নিগ্ধা শ্রাবণের সামনে গিয়ে তার চোখের উপর হাত দিল। ছায়া পেয়ে চোখ জোড়া খুলে ফেলল জট করে শ্রাবণ। আলো পরলে ঘুম আসে নাকি?
ছায়া পরাতে চোখ খুলে স্নিগ্ধাকে একবার দেখে আবার চোখ বন্ধ করল। বন্ধ করেই বলল –

–” কখন এলি?”

–” এইতো এখন এলাম, কি করে হলো এসব? গাড়ি চালাচ্ছেন, রাগ দেখাবেন ভালো কথা তাই বলে হাই স্পিডে? একবার নিজের কথা ভাবলেন না? নিজের না ভাবুন মামির কথা ভাবলেন না? পরিবারের কারো কথা ভাবলেন না? আচ্ছা আজ যদি এক্সিডেন্টে কোন পরিবারের কোন মানুষ মারা যেত?”
উৎপল এগিয়ে এসে বলল শ্রাবণকে না বকাবকি করতে,
শ্রাবণের কোন দোষ নেই, গাড়ি থেকে নেমে রাস্তা পেরিয়ে অপর প্রান্তে আসতে নিলেই, একটা বাস দ্রুত গতিতে এসে ধাক্কা দিয়ে যায় শ্রাবণকে। ডানপাশের হাতে গাড়ির ধাক্কায় হাড়ের জয়েন্ট নড়েগেছে,ধাক্কায় পরে গিয়ে শ্রাবণের কপাল ছিলে গেছে খানিকটা।

–” আপনি জানেন না উৎপলদা আজ উনি গাড়ি হাইস্পিডে চালিয়েছেন। একটু ও কেয়ার করেন না উনি কারোর!”

–” আচ্ছা বুঝেছি সব দোষ ওর! তুমি এখন জিড়িয়ে নেও, ওকে দেখে রাখো। আমরা দেখে আসি ডাক্তার কি বলেন। বেশী কিছু তো আর হয়নি, এইতো কিছু ঔষধ দিয়ে দিবে। এইতো কয়েক দিন তারপর সব ঠিক, এত চিন্তা করোনা তুমি!হাতটা ধরে টান মেরে দিয়েছে ব‍্যাস ব‍্যাটা দুদিন পরেই দেখবে এই হাত দিয়ে ব‍্যাডমিন্টন খেলতে পারবে। আচ্ছা দুজনে মিলে একটু গল্প গুজব করো। এই চল সবাই।”

স্নিগ্ধা শ্রাবণের সঙ্গে বেডে বসেছে, শ্রাবণ এখনো কথা বলেনি। স্নিগ্ধা শ্রাবণের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল –

–” কেন এভাবে হাটতে গেলেন আপনি? একটু সাবধানে দেখে চলতে ও তো পারতেন! মামি-মামা, নানা-নানু ও তো কত টেনশন করতো বলুন, সবাইকে আমি কি জবাব দিতাম? আমাদের কথা একবার ও ভাবলেন না?”
শ্রাবণ এখনো দুম ধরে বসে রয়েছে। চোখদুটো খিচেঁ বন্ধ করে রয়েছে। শুধু তার উপরের কষ্টগুলোই দেখেগেল ভিতরের কষ্টগুলো কি দেখতে পেলো না? শ্রাবণকে চুপ করে শুয়ে থাকতে দেখে, নিজের চোখের পানিগুলোকে মুছে তার সামনে থেকে উঠেগেল স্নিগ্ধা। কেবিন থেকে বেড়িয়ে দেখল সবাই কেবিনের বাইরে দাড়িয়ে আছে সে ও তাদের সামনে গেল। স্নিগ্ধা তাদের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করল –

–” ডাক্তার কি বলেছে? ওনাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া যাবে?”

–” হ‍্যা, তবে সাবধানে,একটু রেস্ট নিক তারপর নাহয় ওকে নিয়ে যেয়ো!”

–” হুম,”
কথার মাঝেই স্নিগ্ধাকে ডেকে উঠলো মহিমা। স্নিগ্ধাকে একপাশে নিয়ে দাড় করিয়ে দিল সবার থেকে আলাদা করে।

–“আচ্ছা স্নিগ্ধা শ্রাবণের সঙ্গে তোমার কিছু হয়েছে? মানি তোমাদের মধ‍্যে সম্পর্কটা কি ঠিক হচ্ছে না?”
মহিমার কথায় কিছুটা অবাক হয়ে চেয়ে আছে স্নিগ্ধা।

–” দেখ স্নিগ্ধা আমার মনে হয়, তোমাদের সম্পর্কটাকে আরেকটু আগানোর দরকার। তুমি কি মনে করো আমি জানিনা, তবে আমার মনে হয়। শ্রাবণের ভালোবাসায় কোন খুত আমি দেখিনি। একটা মানুষকে যতটুকু সম্মান দিয়ে আগলে রাখা যায় তার সবটুকু না হোক কিছুটা হলেও শ্রাবণ তোমাকে দেওয়ার চেষ্টা করে । জীবনে হাজারো মানুষ আসবে, কিন্তু এমন ভালোবাসার মানুষ এমন আগলে রাখার মত মানুষ কেউ আসবে না,কখনো! আচ্ছা শ্রাবণের প্রতি কি তোমার মনে একেবারেই কোন অনুভূতি হয়নি?
আমার জানামতে একটা মানুষের প্রতি যখন অপর আরেকটা মানুষ কেয়ার করে তাকে আগলে রাখে তার প্রতি সেই মানুষটার কিছুটা হলেও আবেগ অনুভূতি থাকে। তোমার কি তেমন কিছু কখনো মনে হয়নি? স্নিগ্ধার চোখ দিয়ে পানি পরছে, সে বেঞ্চে বসে পরেছে।

–” স্নিগ্ধা তুমি কি শ্রাবণকে ভালোবাসো?”

–” আপু আমি যেটুকু বুঝেছি,
ভালোবাসা জিনিসটা না কেউ মুখ ফুটে স্বীকার করে কেউ তা বুকের ভিতর আগলে রাখে,
পৃথিবীতে দুই প্রকৃতির মানুষ হচ্ছে এরা! আমায় আর শ্রাবণ ভাইকে সেই স্তরে অনায়াসেই রাখতে পারো তুমি।
আমি এসব প্রেম ভালোবাসা কিছুই বুঝতাম না। হঠাৎ করে একদিন বুঝলাম ওনার সানিধ‍্য পেলে আমি ভালো থাকি! ওনার হুটহাট করে কাছে আসা, রাতের বেলকনিতে হাতে গিটার নিয়ে পাগলামি করা! চকোলেট ভর্তি বক্সগুলো টেবিলেরড্রয়ারে লুকিয়ে রাখা। সব কেমন আমার কাছে অন‍্যরকম লাগে। সবচেয়ে বড় কথা কি জানো? তার গলার স্বরটাও আমায় খুব টানে। এই যে হঠাৎ তার এই এক্সিডেন্টের মাধ‍্যেই আমার মনে হলো আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো যদি কোন খারাপ কিছু হয়ে যায় ওনার। আমি না অন‍্য মানুষের মত হেটে হেটে, প্রতিটা মুহুর্তে ভালোবাসি কথাটা বলতে পারিনা! তা আমার দ্বারা হয় না আপু, আমি এতটাই অকর্ম তার কাছে প্রকাশ ও করতে পারিনা আমিও তাকে ভালোবাসি, তারমত করে না
আমার ভালোবাসা প্রতিমুহুর্তের চঞ্চলা প্রেমিকার মত নয়। নিরবে ভালোবাসি!

—” বুঝেছি, চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে। হয়তো তুমি আর শ্রাবণ দুজন দুই মেরুর। দিন শেষে দুজন ই দেখো সবার থেকে আলাদা হবে, সব ঠিক হয়ে যাবে।
জানো তো স্নিগ্ধা যারা কেউ কেউ না ভালোবাসার খুব কাঙ্গাল থাকে। তাদের মধ‍্যে ভালোবাসার গভীরতাটা খুব গভীর থাকে। তাই বলবো একটু মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করো, তুমি ও ওর মত করে ওর পাগলামি আর আবেগ অনুভূতিতে সারা দাও দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
__________________________

ডাক্তারের পরামর্শে শ্রাবণকে নিয়ে স্নিগ্ধা গাড়িতে করে বাসায় ফিরেছে। বাসায় এসে তাশদীদের সাহায‍্যে রুমে শুইয়ে দিল শ্রাবণকে। শ্রাবণই বলেছে তাকে তার রুমে শুইয়ে দিতে। তাশদীদকে আর উৎপলকে বিদায় করে স্নিগ্ধা শ্রাবণের জন‍্য সুপ গরম করে নিয়ে আসলো।
বেড সাইড টেবিলের উপর রেখে, শ্রাবণকে উঠিয়ে বসানোর চেষ্টা করতে চাইলে শ্রাবণ হাত সরিয়ে ফেলল।
স্নিগ্ধা জোর করে শ্রাবণকে ধরে উঠিয়ে বসিয়ে দিল। খুব কষ্ট হচ্ছিল স্নিগ্ধার শ্রাবণকে ধরে উঠাতে। ভারী শরীরের অধিকারী লম্বাটে একটা ছেলেকে উঠানো তার সাধ‍্যে নেই।
শ্রাবণ ও কিছুটা চেষ্টা করল নিজ থেকে। স্নিগ্ধা শ্রাবণকে বসিয়ে বলল –

–” সুপটুকু খেয়ে নিন, ”

–” আমি খাবো না,”

–” না শুনবো না,”

–” আমার কাউকে খাইয়ে দেওয়া লাগবে না,দয়া দেখিয়ে খাওয়াতে আসবেন না।”

–” এখানে দয়ার কথা আসছে কেন?”

–” আমি অসুস্থ বলে আমাকে দয়া দেখিয়ে খাইয়ে দিতে এসেছেন তাই বললাম।”

–” আজেবাজে কথা বন্ধ করে সুপটা খেয়ে নিন। পুরো বাসাটা কিন্তু খালি, ক‍থা না শুনলে ভাঙ্গা হাতে এমন চেষ্টা চাপ দিব না। একদম বাপ বাপ করে চিল্লানি দিলেও কেউ আসবে না! তাই কথা কম কাজ বেশী, সুপটা খেয়ে ফেলুন। আর তাড়াতাড়ি করে সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করুন।
কত ভার আপনার শরীরের সেটা দেখেছেন?”

–” আমার ভার বেশি? ইউ মিন, আই এম সো ফ‍্যাট?”

–” আমি তা বলিনি, তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন, আপনার মত প্রাপ্তবয়স্ক একটা যুবককে আমার মত আধমরা মেয়ের পক্ষে টানা সম্ভব না!”

–” তাহলে তোর আমাকে ধরে উঠাতে হবে না, ইভেন তোর কোন সাহয‍্য লাগব‍ে না। ”
স্নিগ্ধা শ্রাবণের কোন কথা না শুনে সুপের বাটি থেকে জোর করে শ্রাবণকে সুপ খাইয়ে দিল।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here