#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়,পর্ব_অন্তিম
#লেখিকাঃতামান্না
–” তাহলে তোর আমাকে ধরে উঠাতে হবে না, ইভেন তোর কোন সাহয্য লাগবে না। ”
স্নিগ্ধা শ্রাবণের কোন কথা না শুনে সুপের বাটি থেকে জোর করে শ্রাবণকে সুপ খাইয়ে দিল।
–“দেখলেন কিভাবে আমি খাইয়ে দিলাম! তাই চুপচাপ খেয়েনিন, এইসব নাটক বন্ধ করেন। যত না খেতে চাইবেন তত জোর করে খাইয়ে দিব আমি! কোন লাভ নেই বুঝলেন! এখন থেকে আমি আপনাকে খাইয়ে দিব।
আর আপনি শুয়ে শুয়ে সহ্য করবেন।”
স্নিগ্ধা এটা বলেই সুপের বাটি নিয়ে উঠেগেল।
রাত প্রায় বারোটা বেজে পঞ্চান্ন মিনিট! স্নিগ্ধা ঘরের সবকিছু গুছিয়ে শ্রাবণের রুমে এলো। রুমে এসে দেখল শ্রাবণ ঘুমিয়ে আছে। শ্রাবণের সামনে দাড়িয়ে বলল-
–” কিছু লাগবে? বলুন আমি নিয়ে আসছি।”
–” না,”
–” তাহলে উঠছেন কেন?”
–” ওয়াশরুমে যাবো,”
–” আমাকে বলুন,”
–” তুই পারবিনা,”
–” আরে দেখি আপনি যেতে পারবেন নাকি? সেই অবস্থায় আপনি নেই, আরও আঘাত বাড়িয়ে দিবেন। ”
স্নিগ্ধা শ্রাবণকে ধরে উঠিয়ে দিল। শ্রাবণের ডান হাতটা নড়েগেলেও, বাম হাতটা কিছুটা ঠিক আছে। বাম হাতে কিছুটা টান পরেছিল, ব্যাথা খুব বেশি একটা নেই তবে একটু হাতে জোর দিলেই ব্যাথা বেড়ে যায় তার।
ওয়াশরুমের সামনে দাড় করিয়ে দিল শ্রাবণকে স্নিগ্ধা।
ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে বিছানার সামনে যেতেই স্নিগ্ধা তাকে ধরে শুইয়ে দিল। শ্রাবণ শুয়ে পরার পর স্নিগ্ধা শ্রাবণের অপরপাশে শুয়ে পরল খুব সাবধানে যেন শ্রাবণের হাতে না লাগে। কয়েকমিনিট পর স্নিগ্ধা শুনতে পারল শ্রাবণের ভারী নিশ্বাসের শব্দ, ঘুমিয়ে পরেছে শ্রাবণ।
স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে ফিরে তাকালো। ফর্সা হলেও অনেক সময় অনেকের চেহারা তেমন সুন্দর হয় না। কিন্তু শ্রাবণের একটা জিনিস স্নিগ্ধা খেয়াল করল। ছেলেটার চেহারায় একটা মায়া কাজ করে যা অন্যদের মধ্যে পাওয়া যায় না। স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে চোখ বুজে ফেলল।
_____________________________
ক্লাস টিচারকে ফোন করে জানিয়ে দিল স্নিগ্ধা। এই কয়েকদিন আসতে পারবে না সে। পুরো সপ্তাহ খানেক লেগেছে শ্রাবণের কিছুটা সুস্থ হতে। এই কয়েকদিন শ্রাবণের দিকে খুব ভালোভাবে খেয়াল রেখেছে স্নিগ্ধা।
পুষ্পিতাকে রেখে ঢাকায় চলে এসেছেন সাজ্জাদ সাহেব প্রায় চারদিন হলো। ঢাকায় এসেই দেখলেন ভ্রাতুষ্পূত্র হাত ভেঙ্গে বিছানায় পরে আছে। আর তাকেই কিনা দিনরাত সেবা করে যাচ্ছে হাটুর বয়সি তারই ভগিনী কন্যা। সাজ্জাদ সাহেব দুজনের সাহস দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছেন।
একটা এক্সিডেন্ট ঘটিয়ে দুজন এই শহরে পরে আছে তাদের জানায়নি পর্যন্ত। এত সাহস আজ কালকার ছেলে মেয়েদের, বাড়ি থেকে এসে এই অবস্থা দেখে অনেক বকাবকি করেছেন দুজনকে। জবাবে এলো দাদুর এই অবস্থায় এমন কথা শুনানো মানেই চিন্তা বাড়িয়ে দেওয়া।
সাজ্জাদ সাহেব আর কিছুই বললেন না এদের কথার বাইরে।
ক্রমশ দিনগুলো কিভাবে যেন চলে যাচ্ছে। এইতো কদিন আগেই শ্রাবণের উপর দিয়ে কত বড় বিপদ গিয়েছিল। দেখতে দেখতে কাছের মানুষটা আবার সুস্থ হয়ে গিয়েছে।
এই মানুষটার কিছু হলে যে নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে না। প্রায় মাসখানেক লেগেছিল শ্রাবণের হাত পুরোপুরি ঠিক হতে।
রেজাল্ট বের হচ্ছে আজ স্নিগ্ধার। একপাশে ছোট্ট মামাতো ভাই সামিকে কোলে নিয়ে বসে আছে মামি। আরেক পাশে রেজাল্টের চিন্তায় কম্পিউটারের মনিটরে সজোরে আঘাত করছে শ্রাবণ। রেজাল্ট দেখার জন্য প্রায় আধাঘন্টা ধরে কত চেষ্টা করল। কিন্তু ফলাফল শুন্য! বাড়ি থেকে ফোন করছে সবাই, স্টেডিয়াম, আর বাংলাদেশের রেজাল্টের সময়টা খুব টানটান মুহুর্তের হয়।স্নিগ্ধা টেনশন নিয়ে দাড়াতে পারছে না। টেনশনে সে এক জায়গায় স্থির হয়ে বসতে পারছে না। একবার উঠে তো আরেকবার বসছে। সার্ভারে সমস্যার কারনে রেজাল্ট দেখতে পারছে না শ্রাবণ। কম্পিউটার টেবিল থেকে উঠে পিছন ফিরে দেখল চাচিআম্মু দাড়িয়ে আছে। স্নিগ্ধাকে খুজে দেখল না নেই মেয়েটা। কোথায় গেলো? খুব ভয় পেয়েছে মনে হয়।
দৌড়ে চলেগেল স্নিগ্ধার রুমে, রুমের কোণায় বসে আছে স্নিগ্ধা। শ্রাবণ স্নিগ্ধার কাছে বসে বলল –
–” এখানে বসে আছিস কেন?”
—–
–” টেনশন করিস না, সবঠিক হয়ে যাবে! ভবিষ্যতের ডাক্তার না হলে কি হয়েছে আমি আছি না। আমার উপর তুই ট্রিটমেন্ট করবি। তোর ভালোবাসার ট্রিটমেন্ট করবি, আর আমি সুস্থ হয়ে যাবো।”
মুখে হাজারো চিন্তার ছাপের মাঝেই হেসে ফেলল স্নিগ্ধা,
শ্রাবণের বুকে মাথা রাখল। প্রাণ ভরে নিশ্বাস ছাড়লো।
শ্রাবণ স্নিগ্ধাকে বুকে জড়িয়ে ধরল। প্রায় বিশমিনিট পর শ্রাবণ স্নিগ্ধাকে ছেড়ে দিয়ে নিজের রুমে আবার আসলো।
রেজাল্ট চেক করে দেখল, প্রায় দশমিনিট পরেই রেজাল্ট বের করে সে নিজেই চিৎকার করে উঠলো। স্নিগ্ধা আসতেই তাকে জড়িয়ে ধরে বলল –
–” তোর স্বপ্ন পূরণের সময় হয়েগেছে স্নিগ্ধা! দেখেছিস তুই? কেমন রেজাল্ট করলি! দাড়া চাচ্চুকে ফোন করে জানাচ্ছি।”
–” হ্যালো চাচ্চু, স্নিগ্ধার রেজাল্ট বেড়িয়েছে। ”
–” গোল্ডেন এ প্লাস এসেছে, মিষ্টি কিন্তু বেশি আনতে হবে!”
স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে দেখল ভিজা ভিজা চোখ নিয়ে দাড়িয়ে আছে। কতটা সময় দুজনে ব্যায় করেছে।
স্নিগ্ধার পড়ার দিকে খেয়াল রাখতে গিয়ে শ্রাবণ নিজের পড়ায় ও মনোযোগ দিতে পারেনি। সারাটা বছর স্নিগ্ধার পিছনে দিয়ে নিজের পরিক্ষায় টানটান পাশ করে এসেছে। নিজের পরিক্ষায় এমন করেছে। স্নিগ্ধা যদি কিছু বলতো তাহলে বলতো, আমি চাকরি দিয়ে কি করবো? আমার বাবার এত ফ্যাক্টরী কে চালাবে?
সিরিয়াসলি? শ্রাবণের কথা শুনে স্নিগ্ধা মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যায়। এটাও কোন কথা? দাদা আর বাবার কোম্পানি দেখবে বলে টানটান পাশ করছে। আর বউকে ডাক্তার বানানোর জন্য জোর দিচ্ছে।
পুরো বিল্ডিংয়ে নিজে হাতে মিষ্টি বিতরণ করেছে শ্রাবণ।
বিকেল বেলায় পূরবী ও অন্যান্য বান্ধবীদের একাংশ এসেছে। পূরবী এ প্লাস পেয়েছে, স্নিগ্ধার রেজাল্ট শুনেই পূরবী খুশিতে জড়িয়ে ধরেছে। দুজনের খুশির সীমা নেই তবে খুব কষ্টের বিষয় ও বটে। হয়তো দুজনের আর একসঙ্গে চলা হবে না। পূরবীর ভাই আরমান আর তার বাবা পূরবীকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি করিয়ে দিবে।
পূরবী ও সিধান্ত নিল সে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ঢুকে পরবে।
সামির সঙ্গে কিছুক্ষণ দুষ্টুমি করে রুমে এসেছে স্নিগ্ধা।
সামির বয়স প্রায় তিনমাস! টুক্কর টুক্কর চোখ করে মাকে খুজে আর মাঝে মাঝে রেগে গিয়ে স্নিগ্ধার চুল টেনে ধরে।
স্নিগ্ধা সামিকে খুব করে আদর করে দেয়। পুতুলের মত দেখতে সামি, নিষ্পাপ মুখটা নিয়ে ও যখন তাকিয়ে থাকে সত্যি খুব ভালো লাগে স্নিগ্ধার। পুষ্পিতার কোলে সামিকে দিয়ে রুমে এসে দেখল শ্রাবণ লাইট বন্ধ করে রেখেছে।
স্নিগ্ধা লাইট জ্বালাতে গেলে তার হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে বলল –
–” হুশশ, লাইট জ্বালাবি না!”
–” কেন?”
–” যা বলেছি তা কর।”.
–” কেন?”
–” এত কেন কেন করছিস কেন?”
–” চুপচাপ দাড়িয়ে থাক,”
হঠাৎ করে স্নিগ্ধার দুচোখ বন্ধ করে বলল –
–” আয়,”
–” কোথায়?” কিসের জন্য?”
–” এত প্রশ্ন করিস না, হাটতে থাক!” বিছানার কাছে নিয়ে দাড় করিয়ে দিল শ্রাবণ। লাইট বন্ধ থাকা অবস্থায় চোখের উপর ওড়না দিয়ে গিট দিয়ে দিল। অন্ধকার অবস্থায় হাতের মুঠোয় কিছু একটার আভাস পেয়েছে স্নিগ্ধা। হুট করে সব আলো জ্বালিয়ে দিল শ্রাবণ। রুমের দরজা বন্ধ করে দিল। স্নিগ্ধা আর দাড়িয়ে থাকতে পারলো না। চোখে বাধা ওড়না সরিয়ে ফেলল জট করে। বিছানায় লালগোলাপের পাপড়িসেপ দিয়ে আকা লাভ ইউ ওয়াইফি! হাতের মুঠোয় রাখা চিরকুটে তাকিয়ে দেখল খুব সুন্দর করে লেখা।
প্রিয়া!
” জীবনে প্রেম নিয়ে কখনো কোন ভাবনা ছিল না জানো।
মনে আছে? বিয়ের আগে তোমার আর আমার সম্পর্কটা?
দুজনেই জানতাম একদিন না একদিন আমাদের বিয়ে হবে। কিন্তু কখনোই কেউ কাউকে তেমন একটা পাত্তা দিতাম না। সারাদিন দুজনে মিলে ঝগড়া করতাম। আমার থেকে তুমিই ঝগড়া করতে বেশি, পায়ে পায়ে ঝগড়াটা অবশ্য তুমিই করতে। আমি ও রেগে যেতাম দু চোক্ষের বিষ ছিলে তুমি। সেই বিষকে মধুতে রুপান্তর করতে দাদু আমাদের দুজনকে এক করে দিলেন। তখন বেশ রাগ হতো দাদুর উপর কেন দাদু এমন করলো? কেন আমাদের বিয়ে দিয়ে দিল? আমাদের কথাটা অন্তত একবার ভাবতে পারতো? দাদুর উপর রাগটা যেমন বেড়েছিল, তেমনি সেই রাগটা কমেগিয়েছিল। তোমার মনে আছে দাদির বলা কথাটা? দুজন মানুষযখন একসঙ্গে থাকবে তখন ঠিকই দুজনের মায়া বেড়ে যাবে। এই জিনিসটা আমার মাথায় বাড়ি দিলেও আমি মাথায় আনিনি। কিন্তু আস্তে আস্তে করে পুরোটা সময় এই কথাটা আমার মাথায় গেথেগেল।
সত্যিই আমার ক্ষেত্রেও কেমন জিনিসটা মিলে গেল ও একদম। তোমার কাছে আসা, তোমাকে একটু চোখের আড়াল হতে দেখলেই আমার কেমন যেন লাগতো। দাদু সত্যিই বলেছিলেন -” সম্পর্কটা না অনেক সময় এমনি হয়ে যায়। তোমার সঙ্গে কাটনো প্রতিটা মুহুর্ত আমার কাছে কেমন স্বপ্নের মত মনে হয়েছিল। ভয় হতো তুমি যদি আমাকে এই গভীর ভালোবাসার মুহুর্তে আমার হাত ছেড়ে দাও তখন? কিন্তু সেই মুহুর্তে আমার আশার বাতি জ্বলে উঠেছিল। যখন আমি অসুস্থ হয়ছিলাম। কিভাবে জানো? যখন তুমি আমাকে আমার অসুস্থতার সময় মাঝেমাঝে আমার কপালে চুমু দিয়ে সঙ্গে অপাশ ফিরে শুয়ে যেতে।
কখনো বা খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে আমার কপালের চুলগুলো সরিয়ে বলতে ভালোবাসি। কিন্তু কখনোই এই কথাটা তুমি আমার সামনে সরাসরি বলতে না। অন্যদের মত জোর গলায় দাবি করতে না। আমি তখন থেকে বুঝলাম তুমি ভালোবেসে স্বিকার করার মানুষ নও তুমি হৃদয়ের গভীরে রাখা ভালোবাসার উদাহরণ মাত্র! ভালোবাসি আমার প্রিয়তমাকে! যে আমাকে হাজার বার মুখে ভালোবাসি না বলে হৃদয় থেকে ভালোবাসে !
“ইতি তোমার প্রেমিক স্বামী!”
চিঠিটা পড়ে স্নিগ্ধার মুখটা কেমন লজ্জায় লাল হয়েগেছে।
শ্রাবণের দিকে তাকাতে পারছে না। চিঠিটা বেড টেবিলের উপর রেখে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে দেখল সে বারান্দায় দাড়িয়ে আছে। শ্রাবণের সামনে দাড়াতেই শ্রাবণ স্নিগ্ধার দিকে ফিরে তাকালো, আর স্নিগ্ধা ফ্লোরে। স্নিগ্ধা আবার উপরে তাকালো সব লজ্জা ভুলে শ্রাবণকে জড়িয়ে বলল –
–” এত কেন ভালোবাসেন?”
–” জানিনা,”
–” যদি হারিয়ে যাই?”
–” হারাতে দিব না!”
–” কি করবেন?”
–” শেকল দিয়ে বেধে দিব!”
–” কষ্ট পাবো যে!”
–” এ শেকল লোহার শেকল নয়, ভালোবাসার শেকল!”
–” ভালোবাসার শেকল?”
–” হুম ভালোবাসার শেকল, বাণ চিনিস? প্রেমের যেমন বাণ থাকে তেমনি ভালোবাসার শেকল থাকে যা তোকে আমার কাছে টেনে আনবে। কোন বাধা ছুতে পারবে না।”
শ্রাবণের কাধে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে মিশে আছে স্নিগ্ধা। শ্রাবণ স্নিগ্ধাকে নিয়ে রুমে চলেগেল। ভালোবাসার নতুন অধ্যায় যে আজ থেকে তাদের শুরু। নতুন করে দুজনের ভালোবাসার ও শুরু।
_____________________________________
“অনকোলোজি বিভাগটা কোথায় ম্যাডাম?”
–” এই তো সামনে গিয়ে সিড়ি দেখতে পারবেন। সিড়ির ঠিক হাতের বামে তিনতলায় গিয়ে দেখবেন অনকোলোজি ডিপার্টমেন্ট।”
–” ধন্যবাদ,”
–” কাউকে খুজঁছেন?”
–” আমার স্ত্রীকে খুজতেঁ এসেছি। ”
–” ওহ, রোগীর কোন সমস্যা হয়েছে?”
–” ম্যাডাম উনি রোগী নন উনি ডাক্তার।”
–” ওহ, ”
___________________________
“ক্যান্সার শিশু ওয়ার্ডের বাচ্চাগুলোকে দেখে এসেছে স্নিগ্ধা। বাচ্চাগুলোর দিকে তাকালে তার খুব খারাপ লাগে।
তার নিজের ঘরেও এখন দুসন্তান! একজনের বয়স চার বছর একজনের বয়স মাত্র দেড়মাস! পিচ্চিটার ছবি মোবাইলের লক অপশনে দেওয়া। লক খুলতে গিয়েই বারবার ছেলেটার ছবি চোখে পরে। বাচ্চাগুলো সারাদিন দাদি আর ছোটদাদির কাছে থাকে। মায়ের থেকে বাবা তাদের কাছে খুব প্রিয়। ছবিগুলোতে হাত বুলিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। ব্যাগ ঘুছিয়ে উঠতে যাবে এমন সময় দরজা খুলে প্রবেশ করল বছর ছত্রিশের একজন যুবক প্রবেশ করল। চোখে চশমা পরা , হ্যাংলা পাতলা লম্বাটে ধরনের ছেলেটা এখন একদম বলিষ্ট রুপ ধারণ করেছে। দরজায় নক দিয়ে নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। ফিরে তাকালো ডাঃ স্নিগ্ধা! ষোড়শ পেরিয়ে এখন তার ত্রিশ বছর হলো তার। শ্রাবণকে দেখে বলে উঠলো –
–” তুমি হঠাৎ এখানে? রৌদ্রি কোথায়?
–” বাসায় পৌছে দিয়েছি। তোমাকে নিতে এলাম”
–” ওহ, হ্যা আমি তো আগেই তৈরী হয়ে আছি বের হবো বলে। চলো!”
বাসায় আসার পর স্নিগ্ধার কোলের উপর লাফিয়ে উঠলো তার ছেলে সূর্য। আর মেয়ে রৌদ্রি দৌড়ে এলো মায়ের কাছে। স্নিগ্ধা তাদের দুজনকে নামিয়ে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলেগেল। ফ্রেশ হয়ে সূর্যকে খাইয়ে দিল তারপর রৌদ্রিকে ও খাইয়ে দিল। রাত প্রায় তখন দশটা বাজে প্রায়। স্নিগ্ধা হব কাজ সেরে কফি বানিয়ে এসে শ্রাবণের কাছে এসে দাড়িয়ে বলল-
–” কি ভাবছো?”
–” ভাবছি, মানুষটা আমাদের খুব সহজে এক করে দিল তাই না? ”
–” হুম, দেখতে দেখতে আমাদের সংসারের আজ তেরো বছর। দু সন্তান হলো, আমরা আমাদের পথ বেছে নিলাম।
কত সময় পেরিয়ে গেলো তাই না?”
–“হুম, শ্রাবণ স্নিগ্ধার হাত থেকে কফি নিয়ে বলল। জানো একটা জিনিস না আমি আজও বুঝি না। ”
–” কি?”
–” সবাই বুড়ো হয়ে যায়, সবার বয়স বাড়ে! কিন্তু..
–” তোমার বাড়ে না?”
–” এক্সাকলি, এই কথাটাই বলতে চাইছিলাম, কাহিনী কি বলো তো?”
–” সারাদিন অফিসে দৌড়াচ্ছো রঙ্গনকে একটু দৌড়াতে দাও। একটু জিম করে শরীর ফিট রাখো তা তো করবে না এখন বুঝো। অবশ্য, তুমি এতটাও ভুড়ি ওয়ালা হওনি!”
–” আমার ভুড়ি বের হয়েছে?”
–” ভুড়ি এই যে এটুকু দেখেছো কেমন টিশার্ট টপকে বের হয়েগেছে। আগে কি হ্যাংলা ছিলে আর এখন কি হয়েগেলে। ”
–” তাই?”
–“হুম,”
–” তাহলে আর থাকছো কেন? চলে যাও!”
–” ওমা রাগছো কেন বাবুর বাবা? তুমি জানো না? পৃথিবীর যত সুদর্শন পুরুষ আসুক না কেন আমার কাছে আমার বাবুর বাবাই সেরা।”
–” সত্যিই?”
–” সত্যি!” তুমি আমার কাছে শ্রেষ্ঠ পুরুষ! আমার প্রাণ প্রিয়।”
–” আর তেল মেরো না, এত তেল মারলে মমের মত গলে যাবো পরে নিঃশেষ হয়ে যাবো।
–” এই একটা গান শুনাও না বাবুর বাবা!
তোমার হুটহাট রাত করে গান গাওয়া স্বভাব টাকে খুব মিস করি আমি। প্লিজ একটা গান গাও!”
শ্রাবণ প্রিয়তমার দিকে একবার তাকিয়ে গেয়ে উঠল তার পছন্দের গান।
এখন অনেক রাত
তোমার কাঁধে আমার নিঃশ্বাস,
আমি বেঁচে আছি তোমার ভালোবাসায়!
ছুঁয়ে দিলে হাত
আমার বৃদ্ধ বুকে তোমার মাথা চেপে ধরে টলছি কেমন নেশায়!
এখন অনেক রাত
তোমার কাঁধে আমার নিঃশ্বাস,
আমি বেঁচে আছি তোমার ভালোবাসায়!
ছুঁয়ে দিলে হাত
আমার বৃদ্ধ বুকে তোমার মাথা চেপে ধরে টলছি কেমন নেশায়!
স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে হেসে দিল। আর শ্রাবণ জোৎস্নার আলোয় প্রেয়সীর হাস্যজ্জ্বল মুখে চেয়ে আছে।
বছর পেরিয়ে যায় দিন গড়িয়ে যায় তবু ফুরায় না অনন্ত এই প্রেম আর ভালোবাসা।
______________সমাপ্ত______________