প্রেম_নিবেদন Part- 30

0
1999

story- #প্রেম_নিবেদন Part- 30
Writer- #Nur_Nafisa

.
.
পরের দিন ,
নাফিসা- আজ শুক্রবার। আম্মু আব্বু বাসায় নেই। সকালে আমরা নুডলস নাস্তা করলাম। তারপর দুপুরের জন্য আমি রান্না করলাম। নিসাও হেল্প করেছে।
নিসা- ভাবি, আজকের রান্নাটা মনে হয় অনেক ভালো হয়েছে। অনেক সুন্দর স্মেল আসছে?।
নাফিসা- ? আচ্ছা! গোসল করে নামাজ পড়ে আসো, তারপর খাবে।
নিসা- ওকে?
আরাফ- নামাজ পড়ে রুমে এসে দেখি নাফিসা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল মুছছে। আজ আবার শাড়ি পড়েছে আমার জানপাখিটা?।কেমন ১টা ঘোর কাজ করছে। কখন যে আমি ওর কাছে চলে এসেছি, আমার জানা নেই।
নাফিসা- ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল মুচছিলাম। হঠাৎ আরাফ এসে পিছন থেকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমার ভেজা চুলে মুখ গুজলো।
আমি ওর স্পর্শে একেবারে ফ্রিজড হয়ে গেছি। প্রায় ১মি পর আমাকে ছেড়ে দিয়ে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। হঠাৎ ওর কি হলো কিছুই বুঝতে পারছি না। আজ প্রথম ওর এমন আচরণ লক্ষ করলাম।
আরাফ- নাফিসাকে ছেড়ে আমি দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে ছাদে চলে এলাম। ওফ! কি করতে যাচ্ছিলাম আমি! এখন নাফিসা কি ভাববে!?
নাফিসা- আমি নামাজ পড়ে, আরাফকে মেসেজ করলাম খেতে আসার জন্য।
তারপর দুপুরে ৩জন একসাথে খেয়ে নিলাম। আমি সব কিছু ঘুছিয়ে রুমে এসে দেখি আরাফ খাটে হেলান দিয়ে মোবাইলে কিছু করছে। আমি ওর হাত থেকে এক টানে ফোনটা নিয়ে সোফায় বসে ফেসবুক চালাতে লাগলাম ওর আইডিতেই। আমি আড়চোখে তার দিকে তাকিয়ে দেখি ও মুচকি হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আরাফ- আজ নাফিসার ব্যবহার একটু অন্যরকম লাগছে। ও আমার ফোন নিয়ে নিলে, আমি ড্রয়ার থেকে নাফিসার ফোন বের করে নিলাম।
নাফিসা- হটাৎ Janpakhi নামের আইডি থেকে মেসেজ আসলো ?। ” love you”
আমি সিন করলাম, পেছনের মেসেজ গুলো দেখলাম। এমন অনেক কথা হয়েছে ২আইডিতে, যেগুলো আমি আরাফের সাথে বলেছি! আমি অনেকটা অবাক হলাম। তারপর আরাফের দিকে তাকিয়ে দেখি ও হাসছে আর ওর হাতে আমার ফোন।
ব্যাপারটা ক্লিয়ার করার জন্য আমি এবার আমার ফোনটা ও নিয়ে নিলাম ওর হাত থেকে। যা ভেবেছি ঠিক তাই!? ও আমার ফোন থেকে একা একাই মেসেজ করে। এতোদিন আগের আইডি খোলা, আর আমি খেয়ালই করিনি!
আরাফ- ?
নাফিসা- ? ২ফোন ই ওর কাছে ঢিল মেরে বেরিয়ে গেলাম রুম থেকে।
সন্ধ্যায়,
নাফিসা- রুমে এসে আরাফকে জিজ্ঞেস করলাম,
– রাতের জন্য কি রান্না করবো?
আরাফ- (নাফিসার প্রশ্নে মাথায় একটু দুষ্টুমি নাড়া দিলো)
– রান্না করার দরকার কি! চলো না গো আজ দুজন রেস্টুরেন্টে ডিনারে যাই?
নাফিসা- ওফ! বাচালে তুমি আমায়! আমি এক্ষুনি তৈরি হচ্ছি ☺️।
আরাফ- ? নাফিসা সত্যিই এভাবে রাজি হয়ে যাবে ভাবতেও পারিনি! যাক এতো কিছু ভাবার সময় নেই। আমিও দ্রুত রেডি হয়ে যাই।?
একটু পর,
আরাফ- আমি রেডি হয়ে সোফায় বসে আছি, নাফিসা হিজাব পড়ছে। এমন সময়,
নিসা- ভাবি তোমার হয়েছে? আমি কিন্তু রেডি?
নাফিসা- এইতো আমিও রেডি?
আরাফ- ?আমি তো পুরাই শকড! নিসা বাসায় আছে আমার খেয়াল ই ছিলো না! এজন্যই নাফিসা এতো তারাতাড়ি রাজি হয়ে গেল! ?
নাফিসা- (আরাফের চেহারা দেখার মতো হয়েছে) ??
নিসা- কি হলো ভাইয়া, চলো।
আরাফ- হুম চল?
তারপর ডিনার করে ফেরার সময়,
নিসা- ভাইয়া আইস্ক্রিম খাবো।
নাফিসা- আমিও।
আরাফ- না, ঠান্ডা লাগবে, জ্বর হবে। বাসায় চলো।
নাফিসা- না, আইস্ক্রিম খাবো ?
আরাফ- না বলেছি না। যাও গাড়িতে উঠো ?
ধমক শুনে ২জনেই গাড়িতে উঠলো। মুখ ফুলিয়ে লুচি বানিয়ে রাখছে। কিন্তু আমার কিছু করার নেই।
নাফিসা- আরাফ রুমে চলে গেলো, আর আমি নিসার সাথে নিসার রুমে গেলাম।
নিসা- দেখেছো ভাইয়া কি ফাজিল! ?
নাফিসা- মন খারাপ করো না। কাল আমরা আইস্ক্রিম খাবো। ?
নিসা- কিভাবে? আমার স্কুল তো বন্ধ! আনবে কে?
নাফিসা- আনতে হবে না। আমি বাসায় বানাবো ?
নিসা- সত্যি! ?
নাফিসা- হুম? এখন ঘুমিয়ে পড়ো। good night
নিসা- good night ?
আরাফ- রুমে এসে আমি শুয়ে পড়েছি। একটু পর নাফিসাও এসে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো। কিন্তু আমার দৈনিক কাজটা যে সম্পন্ন হলো না! তাই আমি ঘুমাইনি। কিছুক্ষণ পর যখন আমার সেই কাজটা করতে যাবো, তখনই নাফিসা ঘুমের মধ্যে আমার বুকের উপর মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।? ঘুম থেকে উঠে যদি এই অবস্থায় দেখে, আমার ১২টা বাজিয়ে ফেলবে! তাই সরিয়ে দিতে আমি তাকে ডাকলাম,
– জানপাখি.., জানপাখি…
নাফিসা- আরাফের ডাকে আমি মাথা তুলে ব্রু কুচকে তাকালাম তার দিকে,
– কি হয়েছে? সমস্যা কি??
আরাফ- ? না কিছু না।
নাফিসা- আমি আবার ওর বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম। এবার আমার খুব হাসি পাচ্ছে, ওর চেহারা দেখে ? কারণ আমি ইচ্ছে করেই ওর কাছে এসেছি।
আরাফ- নাফিসাতো সজাগ! তাহলে কি ইচ্ছে করে এসেছে! ? দূর! এতো ভেবে কাজ নেই! আমার ভালোই লাগছে, তাকে জড়িয়ে ধরে আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম।
আরাফ- সকালে আযান শুনে ঘুম ভেঙে গেলো। নাফিসা এখনো আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। আমি তাকে আলতো করে সরিয়ে বালিশে শুইয়ে দিলাম। তারপর ওর গলার তিলটাতে ১টা চুমু দিয়ে উঠে পড়লাম।
নাফিসা- আমার ঘুম ভেঙে গেছে অনেক আগেই। তাও চোখ বুজে ছিলাম। আরাফের কাজে আমার মনে অন্যরকম ঢেউ খেলে উঠলো।?
একটু পর আরাফ ওযু করে এসে আমাকে ডাকলে আমিও উঠে পড়লাম। তারপর নামাজ, কুরআন পড়ে সকালের নাশতা তৈরি করলাম।
সবাই একসাথে নাস্তা করলাম। আরাফ রুমে ডাকলো।
– কি?
আরাফ- বোতাম ছিড়ে গেছে। লাগিয়ে দাও ?
নাফিসা- ছিড়ে গেছে নাকি ছিড়ে ফেলেছো? ?
আরাফ- কি জানি! ?
নাফিসা- ঢং! ? (তারপর বোতাম লাগিয়ে দিলাম। আজ দাতে সুতা কেটেছি)
আরাফ- দাতে কাটলে যে!
নাফিসা- এমনি।
আরাফ- বৃষ্টি হতে পারে। বাইরে বের হবে না। ঠান্ডা লাগবে।
নাফিসা- ? অফিসে দেড়ি হয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ হাফেজ।
আরাফ- আল্লাহ হাফেজ ?
নাফিসা- আরাফ চলে গেলো। দরজা লক করে আমি আর নিসা লেগে গেলাম আইস্ক্রিম বানাতে ?। মিল্ক উইথ ম্যাংগো ফ্লেভার ?।
নিসা- ভাবি এতো কিছু জানো কিভাবে!
নাফিসা- এসব তো সহজ। চেষ্টা করলে তুমিও পাড়বে।
নিসা- আইস্ক্রিম হয়ে গেছে? ?
নাফিসা- ক্রীম হয়েছে, আইসের জন্য ফ্রিজে রাখতে হবে। একটু সময় লাগবে।
তারপর ক্রিম ফ্রিজে রেখে আমি আর নিসা আমার রুমের বারান্দায় বসে গান শুনছি আর ফোনে লুডু খেলছি।
প্রায় অনেক্ষন খেলার পর আম্মু ফোন করলো। আমি আর নিসা ভিডিও কলে আম্মুর সাথে কথা বললাম।
– নিসা, গল্পের বই নিয়ে এসো পড়ি। এমনিতে আর ভালো লাগছে না।
নিসা- আচ্ছা, আমি আসছি।
নাফিসা- হুম।
আরাফ বাসা থেকে গেছে প্রায় ৩ঘন্টার বেশি হয়ে গেছে। আমি আরাফের ফোনে কল করলাম, ব্যাকগ্রাউন্ডের গানটা শুনার জন্য। ওটার মিউজিকটা আমার কাছে খুব ভালো লাগে ?।
একটু বাজতেই রিসিভ করে ফেললো।
আরাফ- হ্যালো জানপাখি ?
নাফিসা- আসসালামু আলাইকুম।
আরাফ- ওয়ালাইকুম আসসালাম। কি করছো?
নাফিসা- বারান্দায় বসে আছি। ফোন রিসিভ করেছো কেন? ? আমি ব্যাকগ্রাউন্ডের মিউজিক শুনার জন্য কল করেছি।
আরাফ- ওহ! আমি তো ভাবছি আমার সাথে কথা বলার জন্য। মিউজিক তো তোমার ফোনেই শুনতে পারো।
নাফিসা- কল দিয়ে শুনতে ভালো লাগে। কল কাটো। আর রিসিভ করবে না।
আরাফ- আচ্ছা।
নাফিসা- তারপর আরও ৩বার কল দিয়ে শুনতে লাগলাম। ৪র্থ বারে আবার রিসিভ করে ফেললো।
আবার রিসিভ করেছো কেন? ?
আরাফ- জানপাখি, তুমি কল করলে আমি রিসিভ না করে থাকতে পারি না ?
নাফিসা- ওকে। আর কলই করবো না ?
আরাফ- না, শুনো…
নাফিসা- কল কেটে দিয়েছি। আরাফ ব্যাক করেছে কিন্তু রিসিভ করিনি।
নিসা বই নিয়ে আসলো, এমনি বাইরে প্রচুর বৃষ্টি নামলো। সাথে সাথে আরাফ ও ফোন করলো।
– কি হয়েছে?
আরাফ- জানপাখি ভুলেও বৃষ্টিতে ভিজবে না। বাইরে বের হবে না।
নাফিসা- আচ্ছা। আল্লাহ হাফেজ।
ফোন কেটে দিলাম।
নিসা- ভাবি চলো বৃষ্টিতে গোসল করি?
নাফিসা- এইমাত্র তোমার ভাইয়া না করে দিলো ?
নিসা- ?
নাফিসা- বই বারবার খুলছি, কিন্তু দৃষ্টি বারবার বৃষ্টির দিকে। মন যে আর বাধা মানছে না।
-নিসা চলো ছাদে যাই।
নিসা- ভাইয়া যে না করলো! তাছাড়া তুমি তো সকালেই গোসল করেছো!
নাফিসা- দূর..! তোমার ভাইয়া আসতে সন্ধ্যা হবে। জানবে না। চলো,
নিসা- ওকে?
নাফিসা- তারপর দরজা বাইরে থেকে লক করে ছাদে চলে এলাম। ২০মি এর বেশি বৃষ্টিতে গোসল করলাম। বৃষ্টি কমে গেছে, তাই আবার রুমে ফিরে আসলাম। জামাকাপড় চেঞ্জ করে ফ্রিজ থেকে আইস্ক্রিম বের করলাম।
– নিসা, হাচ্ছি….?চলো আইস্ক্রিম খাবো। তোমার ভাইয়া ফিরলে খেতে দিবে না।
নিসা- তোমার তো ঠান্ডা লেগে গেলো!
নাফিসা- কিছু হবে না। গরম পানির ভাপ নিয়ে নিবো।
নিসা- আচ্ছা।
নাফিসা- ড্রয়িং রুমে বসে খাওয়া শুরু করলাম। এক বাটিতেই ২চামচ নিয়ে দুজনে খাচ্ছি। অর্ধেক খেতেই কে যেন কলিং বেল বাজালো!
নিসা- এমন সময় আবার কে আসলো!
নাফিসা- কি জানি, সীমা আন্টি আসেনি তো! আচ্ছা আমি দেখছি।
আমি গিয়ে দরজা খুলে দিলাম,
– হাচ্ছি…?….??!
.
.
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here