প্রেম_নিবেদন Part- 31

0
2321

story- প্রেম_নিবেদন Part- 31
Writer- #Nur_Nafisa

.
.
নাফিসা- তু,,তুমি এতো তারাতাড়ি চলে এলে যে!?
আরাফ- ঠান্ডা লাগলো কিভাবে? ?
নাফিসা- কই!
আরাফ- হাচি দিলে কেন? বৃষ্টিতে ভিজেছো??
নাফিসা- না তো ?
আরাফ- মিথ্যা বলো কেন! বৃষ্টিতে না ভিজলে চুল ছাড়া কেন?
নাফিসা- ? (তারপর আরাফ আমার মাথার পিছনে চুলের ভেতর হাত দিলো)
আরাফ- চুল ভিজে কেন? মানা করেছিলাম বৃষ্টিতে ভিজতে ?
নাফিসা- তারপর আরাফ রুমে ঢুকলো। সেন্ট্রাল টেবিলের পাশে গিয়ে থেমে গেলো! আল্লাহ জানে আজ কি হয়! কপাল! কে জানে এতো তারাতাড়ি ফিরে আসবে!?
নিসাতো ভয়ে আগেই চুপসে গেছে! আরাফ টেবিল থেকে আইস্ক্রিম এর বক্স হাতে নিলো। নিসার দিকে তাকিয়ে,
আরাফ- এটা এখানে কিভাবে এলো ?
নিসা-……
আরাফ- কি বলছি কানে কথা যায় না? ?
নিসা- আমি আনিনি। ভাবি বাসায় তৈরি করেছে ?
আরাফ- ?
নাফিসা- আরাফ আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আইস্ক্রিমের বক্স খুব জোরে মেঝেতে আছার দিলো। বক্স গুড়ো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লো! ? তারপর ও রুমে চলে গেলো। আমি এখন কি করি!
আমি এসব পরিষ্কার করে রুমে গেলাম। দেখি আরাফ ২হাত পকেটে রেখে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে!
আমি আরাফের কাছে গিয়ে পেছন থেকে ওর পিঠে মাথা রেখে তাকে জড়িয়ে ধরলাম।
– sorry ? হাচ্ছি….!?
আরাফ-…..
নাফিসা- sorry তো। আর হবে না এমন ?
আরাফ আমার হাত সরিয়ে, আমাকে উপেক্ষা করে বাইরে বেরিয়ে গেলো। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে, কিন্তু আরাফ বাসায় আসেনি।
আরাফ- রাত ৮টায় ডিসপেনসারি থেকে ঠান্ডা ও জ্বরের ওষুধ ও রেস্টুরেন্ট থেকে ৩প্যাকেট বিরিয়ানি কিনে বাসায় এসে দেখি নিসা সোফায় বসে আছে।
– নাফিসা কোথায়?
নিসা- রুমে। ?
আরাফ- রান্না করছে?
নিসা- না, দুপুরের খাবার সব আছে।
আরাফ- এগুলো ধর। তোরা ২জন খেয়ে নে। তোর ঠান্ডা লেগেছে ?
নিসা- না।?
আরাফ- এই ওষুধ গুলো নাফিসাকে দিস। তারপর আমি ছাদে চলে এলাম।
নাফিসা- মন খারাপ করে বারান্দায় বসে আছি। এমন সময় নিসা এলো।
নিসা- ভাবি, ভাইয়া খাবার কিনে এনেছে। আর তোমার ওষুধ।
নাফিসা- ওষুধ রেখে যাও এখানে। আর তুমি খেয়ে নাও, আমি পরে খেয়ে নিবো।
নিসা- আচ্ছা।
নাফিসা- আমি আবার আগের মতো বসে আছি। একটু পর ১টা গানের সুর ভেসে আসলো। এটা কি আরাফের গলার সুর! ? আমি আবার একটু শোনার চেষ্টা করলাম। আওয়াজটা উপরের দিক থেকে মানে, ছাদ থেকে আসছে। আমি উঠে বাইরে থেকে দরজা লক করে ছাদের দিকে গেলাম। সিড়িতে লাইট থাকায় ভয় লাগেনি। কিন্তু ছাদের লাইট অফ! যদিও চাদের আলোয় ছাদ আলোকিত ছিলো। আমি সাহস করে ছাদে পা রাখলাম। দেখলাম ছাদের ঘরটির দরজা খুলা। গানের সুর এই ঘর থেকে ভেসে আসছে।
গানটি ছিলো….. ???
.
উরু চিঠি দিলাম তোমায়…!!!!
উত্তর দিও কোন দিন…!!!!
চেনা ঠিকানায় আছি সে আমি…!!!!
বিকশ কালো আধারে বিলীন…!!!!
কেন তুমি মন ভেঙ্গেছো???
আমায় একা করে গেছো…???
তুমি জানো না আমারি ভেতর,
কতোটা আজও জুড়ে আছো…!!!!
শোন তুমি…শোন তুমি…!!!!
আজ তোমার প্রেমে বিভোর আমি…!!!!
শোন তুমি…শোন তুমি…!!!!
এ দুচোঁখে তোমার স্বপ্ন ভূমি…!!!!


[এই মুহূর্তে আরাফের অনুভূতিটা উপলব্ধি করার জন্য আপনারাও গানটি শুনতে পারেন।
Suno tumi by Imran_Mahmudul ❤
নাফিসার কাছেও অসম্ভব ভালো লাগে গানটি?]
.
.
নাফিসা- দরজার সামনে গিয়ে যা দেখলাম, তাতে আমার চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো ?
দেখলাম আরাফ ১টা টুলে বসে গিটার নিয়ে গান গাইছে। তার সামনে দেয়ালে বড় করে আটকানো আমার ১টি ছবি। রুমটি পুরো অন্ধকার, শুধু ওই ছবিটির চারদিকে ছোট ছোট লাইট জ্বলে আছে। আর চাদের আলো দরজা ও জানালা ভেদ করে ঘরে প্রবেশ করছে।
– আ..আরাফফ!!
আরাফ- নাফিসার ছবির দিকে তাকিয়ে গান গাইছিলাম। এমন সময় নাফিসার ডাক শুনতে পেলাম। পিছনে তাকিয়ে দেখি নাফিসা দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। আমি গিটার রেখে দাড়িয়ে গেলাম।
– জানপাখি! তুমি এখানে কেন! ?
নাফিসা- আমি এক দৌড়ে আরাফের কাছে গিয়ে তাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। ?
আরাফ- আমিও নাফিসাকে জড়িয়ে ধরলাম।
-জানপাখি, কি হয়েছে? কান্না করছো কেন?
নাফিসা- sorry Araf. So sorry ?
আরাফ- Janpakhi, stop crying.
নাফিসা- ? I love you. I love you so much ❤️.
আরাফ- ? এটা কি বললো নাফিসা! আজকেই এমন সারপ্রাইজটা দেয়ার ছিলো! ? ওফ্ফ!
আমি দু’হাতে তার মাথা উপরের দিকে তুলে চোখের পানি মুছে দিলাম।
– কি বলছো তুমি? আবার বলো?
নাফিসা- কই কিছু বলিনি তো?
আরাফ- উহুম, বলেছো। আমি যা শুনেছি তুমি কি তা ই বলেছো??
নাফিসা- কি শুনেছো??
আরাফ- তুমি আগে বলো কি বলেছো?
নাফিসা- উহু, তুমি আগে বলো কি শুনেছো?
আরাফ- সব কাজেই তো আমি আগে ছিলাম, এবার না হয় তুমি ই আগে বলো ?
নাফিসা- কোন কাজে তুমি আগে ছিলে??
আরাফ- তোমায় দেখলাম আমি আগে, #প্রেম_নিবেদন ও করলাম, ভালো ও বাসলাম, বিয়ের প্রস্তাবও দিলাম।
নাফিসা- আমি আগে কিস করেছি ?
আরাফ- ?তাই নাকি! …… হাহাহা…. ?
নাফিসা- ?হাসো কেন!
আরাফ- সেটাতেও আমি আগে জানপাখি ?
নাফিসা- কিভাবে! ? আমি তো তোমাকে কাল কিস করেছি। তুমি তো আজ সকালে করেছো?
আরাফ- ? সকালে তুমি জেগে ছিলে?
নাফিসা- হুম☺️
আরাফ- ? তবুও আমি আগে। আমি বিয়ের রাত থেকে প্রতিদিন রাতে তোমার গলার তিলটাতে ১টা করে চুমু দিয়ে ঘুমিয়েছি। কাল তুমি আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়েছো, তাই সকালে দিয়েছি।
নাফিসা- ?চোর, লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে কিসি দিছো!
আমি তার বুকে ২/৩টা কিল দিলাম।
আরাফ- সমস্যা কোথায়! বউকে ই তো দিয়েছি?।
আমি এবার আমার জানপাখিকে জড়িয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলাম। সেও ধরলো।
নাফিসা- I love you.❤️
আরাফ- I love my Janpakhi.❤️
নাফিসা- Janpakhi loves her husband ?
আরাফ- জানো জানপাখি, তারুণ্য জাগরণ প্রোগ্রামে যখন তোমাকে খুব কাছে থেকে দেখি, তখন তোমার এই তিলটায় আমার চোখ আটকে যায়। আর তখন থেকে অপেক্ষা করতে থাকি, কবে তুমি আমার হবে আর কবে আমি এই তিলটা আমার দখলে আনবো। বিয়ের রাত থেকে প্রতিদিন এখানে ঠোঁট না ছোয়ালে আমার ঘুম আসে না।
নাফিসা- (আরাফের বুকে মাথা রেখেই) যেদিন আমি বাসায় থাকিনা, সেদিন ঘুমিয়েছো কিভাবে!
আরাফ- সেদিন আমার পাখির বাসায় এসে এই ছবির তিলে কিসি দিয়েছি ?
নাফিসা- এবার মাথা তুলে তাকালাম,
– ? তাহলে এটা তোমার পাখির বাসা!
আরাফ- হুম?
নাফিসা- ছাড়ো, আগে তোমার পাখির বাসা দেখি!
আরাফ- wait…
নাফিসা- তারপর আরাফ সুইচ অন করলো, সাথে সাথে চারিদিকে ছোট ছোট রঙিন বাতিগুলো জ্বলে উঠলো। ?রুমের চারি দেয়ালে আমার ছবি আটকানো! সবচেয়ে বড় ২টা ছবির মধ্যে ১টা আমার আর আরাফের রিসিপশনের ছবি, আর ১টা তারুণ্য জাগরণ প্রোগ্রামে আমার একা ছবি, যেটাতে তিল্টা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে আর আমি হেসে আছি। সম্ভবত তখন দিনার সাথে কথা বলছিলাম। আর বাকি সব ছবি গুলোই লুকিয়ে লুকিয়ে তোলা। ওইদিন বৃষ্টির সময় পুকুরে তোলা ছবিও আছে, যখন আরাফ আমার নাকে নাক, কপালে কপাল লাগিয়ে দাড়িয়ে ছিলো। এই ছবি তুললো কে!?
.
আরাফ পিছন থেকে আমাকে জড়িয়ে আমার কাধে থুতনি রেখে বললো,
আরাফ- শিহাব তুলেছে এই ছবি।
নাফিসা- ?
আরাফ- বিশ্বাস করো, আমি বলিনি তাকে। ও ইচ্ছে করে লুকিয়ে তুলেছে। তারপর এর জন্য মাইর দিছি, কান ধরে উঠবস করিয়েছি, সাথে ছবিটাও নিয়েছি।?
নাফিসা- হাচ্ছি….!?
আরাফ- ?ওষুধ খেয়েছো?
নাফিসা- না।
আরাফ- চলো নিচে যাই।
নাফিসা- উহু, পরে যাবো।
আরাফ- না এখন যাবে। শরীর গরম হয়ে আসছে! জ্বর হবে। চলো?
নাফিসা- ?
তারপর নিচে চলে এলাম। নিসা ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি রুমে এসে খাটে বসলাম। আরাফ খাবার নিয়ে এলো। আমাকে খায়িয়ে দিলো, সে ও খেলো। তারপর ওষুধ খেয়ে আরাফের কাছে শুয়ে পড়লাম। আরাফ আমাকে কাছে টেনে জড়িয়ে নিলো। আমি আজ খুব কাছে থেকে তাকে প্রান ভরে দেখছি।
আরাফ- কি হলো ঘুমাও।
নাফিসা- উহু, তুমি ঘুমাও।
আমার কপালে চুমু দিয়ে,
আরাফ- না তুমি ঘুমাও, আমি তোমায় দেখবো।
নাফিসা- আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমার গলার তিলটা তে গভীরভাবে চুমু খেলো। আমিও আরাফের বুকে ঘুমিয়ে পড়লাম।
.
.
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here