#দ্যা_লিফট
#পর্ব_১০,১১
#Writer_Shanta_islam
পর্ব_১০
অভির ঘুম আসছে না। এপিঠ ওপিঠ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ইশার সাথে মিসবিহেব করার পর কিছুই ভালো লাগছে না। এর মধ্যে জেনি অনেকবার কল করেছে। কয়েকটা রিসিভ করলেও অধিকাংশ ইচ্ছে করেই ইগনোর করেছি। কিছুতেই মনকে শান্ত করতে পারছি না। নিজের সার্থের জন্য মেয়েটা এতো জঘন্য কাজ করতে পারলো?কিন্তু ওর উদ্দেশ্য যদি খারাপি হয়ে থাকে তাহলে ব্লাক স্টন ওকে কেনো বাছাই করলো। আচমকা অভি সোয়া থেকে উঠে বসে। এটা সে আগে ভাবেনি কেনো? অভি দৌড়ে ডাইনিংয়ে যেয়ে ব্লাক স্টনের সেই বইটি খুজতে থাকে। যখন যে জিনিসটি প্রয়োজন তখন সে জিনিসটি চোখের সামনে থাকলেও খুজে পাওয়া যায় না। আমার অবস্থাও তাই হয়েছিলো। বইটি টেবিলের সামনে রেখে আমি পুরো দুনিয়া খুজেছি। বইটা হাতে নিয়ে চেয়ারে বসে পড়লাম। সকালে তেমন ভালো ভাবে তিনটে পেজ পড়েছিলাম বলে মনে হয় না। জেনি যেই চিল্লাচিল্লি করেছিলো। বইটা পড়তে পড়তে আট নাম্বার চাপ্টারে চলে গেলাম। ইম্পসিবল এখানে লিখা আছে স্টন শুধু তাকে বাছাই করে যার মন সাফ,উদ্দেশ্য সৎ, যে কখনো স্টনের পাওয়ার খারাপ উদ্দেশ্য ব্যবহার করবে না। ইশার যদি খারাপ উদ্দেশ্য থেকে থাকে তাহলে স্টন ওকে বাছাই করলো কেনো? অভি কিছুক্ষণ ভেবে আবার বই পড়া শুরু করলো। স্টন তার শক্তি বহনকারী ব্যক্তি নিজ থেকে বাছাই করবে। হ্যাঁ আমার এখনো মনে আছে স্টন তারাই দেখতে পায় যাদের স্টন বাছাই করে। জেনি আর আমি স্টনটা দেখতে পেয়েছিলাম কারণ স্টন নিজ থেকে আমাদের বাছাই করেছিলো। স্টন তাকেই বাছাই করে যার উদ্দেশ্য সৎ,যদি ইশার উদ্দেশ্য সতি হয়ে থাকে তাহলে ও আমাকে মিথ্যে কথা বললো কেনো? কেনো আমার কাছ থেকে সবকিছু লুকালো?
-কারন মিস ইশা নিজেও জানে না যে তার কাছে স্টনের পাওয়ার আছে। কন্ঠটা অভির পিছন থেকে ভেসে এলো। অভি পিছু তাকালো কিন্তু কাওকে দেখতে পেলো না। আমি ওখানে নেই মি.অভি কন্ঠটা এবার অভির সামনে থেকে ভেসে আসছে৷ অভি সামনে তাকাতেই দেখে লোকটা তার ফেস টু ফেস চেয়ারে বসে আছে।
-ভয় পেলেন নাকি মি.অভি?
-তুমি?
-হ্যা আমি, এটা আর কেও না সকালের সেই ওয়াইট কোট পড়া লোকটা।
-তুমি এখানে কীভাবে আসলে?
-সকালে আপনি আমার কোনো কথা না শুনেই চলে গেলেন। তাই উপায় না পেয়ে আমাকে আবার আসতে হলো।
-তুমি আমার বাসায় ডুকলে কীভাবে?বাসা তো ভিতর থেকে বন্ধ।
– মি.অভি এখন এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার থেকে বেশি প্রয়োজন সত্যিটা জানা।
-কীসের সত্যি?
-আপনি কি জানেন ব্লাক স্টন গায়েব হয়নি বরং সেটা নিঃশেষ হয়ে গেছে।
-ওয়াট? নিঃশেষ হয়ে গেছে মানে কি বুঝাতে চাইছো?
-আপনি যখন ব্লাক স্টন ব্যবহার করেছিলেন তখন আপনার মনে কি চলছিলো একটু বলতে পারবেন?
অভি কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো- টুসির শরীরের আঘাতের চিহ্ন দেখে মাথা ঠিক ছিলো না। টুসির প্রতিটা আঘাতের বদলা নিতে চেয়েছিলাম। যে কোনো মূল্য আমি ওই রিমাসটাকে শেষ করতে চাইছিলাম।
-আর মূল্যটা কী ছিলো?
-তুমি কি বলতে চাইছো?
-আমি শুধু জানতে চাইছি রিমাসকে মারার জন্য আপনার মনের মধ্যে কী চলছিলো?
-কয়বার বলবো যেকোনো কিছুর মূল্য রিমাসকে মারতে চেয়েছিলাম।
-আর সেই যেকোনো মূল্যটা কি ছিলো?
– স্টনের শক্তি?
-হ্যা এবার ঠিক বলেছেন। আপনি স্টনের পুরো শক্তি রিমাসকে মারার জন্য লাগিয়ে দিয়েছিলেন। এই জায়গায় আপনি ভুল করেছেন।
-মানে?
-রিমাসকে মারার জন্য আপনি ভেবেছেন স্টনের পুরো শক্তি লাগিয়ে দিবেন। আর সেটাই করেছেন। স্টনের পুরো শক্তি একটা রিমাসকে মারতে কাজে লাগিয়েছেন। যেটা সব থেকে বড় ভুল ছিলো। স্টন নিজ থেকেই এতোটা পাওয়ারফুল ছিলো যে ওটা লক্ষ লক্ষ রিমাসকে এক নিমিষেই শেষ করে ফেলতো।
-তার মানে তুমি বলতে চাইছো আমি স্টনের শক্তি সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারিনি।
-হ্যা আপনি স্টনের শক্তি ব্যবহার করতে পারেননি। বরং পুরো শক্তি নষ্ট করতে যাচ্ছিলেন। তাই স্টন নিজ থেকেই গায়েব হয়ে আবার রিওয়ার্ল্ডে ফিরে আসে।
-রিওয়ার্ল্ড মানে?
-রিমাসদের ওয়ার্ল্ড। যেখানে রিমাস জাতি বাস করে।
অভি লোকটার কথা শুনে অনেকটা অবাক হলো। রিমাসদেরও ওয়ার্ল্ড আছে?
-আপনি যেই বিল্ডিংয়ের দেয়াল ছেদ করে অদ্ভুত জায়গায় প্রবেশ করেছিলেন সেটা ছিলো রিমাস ওয়ার্ল্ডের একটা ছোট অংশ। বাস্তবে রিমাস ওয়ার্ল্ড দেখতে কেমন সেটা মিস ইশা অনেক কাছ থেকে দেখেছে।
-ইশা যদি রিমাস ওয়ার্ল্ডকে কাছ থেকে দেখেই থাকে তাহলে ও ব্লাক স্টন সম্পর্কে সব কিছু জানতো। সব কিছু জানা সত্ত্বেও ও আমার কাছ থেকে লুকিয়েছে।
-লুকিয়েছে কোথায় মিস ইশা তো আপনাকে সবকিছু বলেছে।
-কিহ?
-কেনো উনি আপনাকে লিফটের ঘটনাগুলো বলেনি।
-হ্যা বলেছে কিন্তু লিফটের সাথে রিওয়ার্ল্ডের কী সম্প,,ওহ সিট তার মানে লিফটের মাধ্যমেই ইশা রিমাস ওয়ার্ল্ডে প্রবেশ করেছিলো।
-যদি বলি হ্যাঁ! তখন লিফট ছিলো রিমাস ওয়ার্ল্ডের প্রবেশ দোয়ার।
-এতো কিছু তুমি জানো কীভাবে? কে তুমি? লোকটা আমার প্রশ্ন শুনে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়।
-আপনার কী মনে আছে মিস ইশা দুটো বাচ্চার কথা উল্লেখ করেছিলো?
-হ্যা মনে আছে। যেই বাচ্চাদুটো লিফটে খেলছিলো।
-সেই বাচ্চা দুটো আমার ছিলো। আমি ওদের বাবা।
-কিহ?
-আমার বাচ্চাগুলো ভুল করে রিমাস ওয়ার্ল্ডের সাথে এ দুনিয়ার প্রবেশদার খুলে ফেলে। আসলে ওরা এখনো অনেক ছোট, মাত্র শিখছে।
-এক মিনিট তুমি কি বলতে চাইছো? তোমার বাচ্চা রিমাস ওয়ার্ল্ডের দরজা খুলেছে? কিন্তু ওটা তো শুধু রিমাসদের পক্ষেই,,কথাটা বলতে যেয়ে অভি থমকে যায়। তার মানে?
অভি দৌড়ে রান্না ঘরে যেয়ে কিছু একটা খুজতে থাকে।
-কোথায় গেলো এখানেই তো ছিলো,,
-আপনি মনে হয় লাইটার খুজছেন মি.অভি।
অভি দুকদম পিছু হেটে যায়।
-মি.অভি ভয় পাবেন না। আমি আপনার কোনো ক্ষতি করবো না।
-তোমাদের আমার ভালো করে চেনা আছে। প্রথমে জাল বিছাও এর পর শিকার করো।
-হ্যাঁ কিন্তু এখন আপনাকে আমার উপর বিশ্বাস করতে হবে। কারণ এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আপনি এতোক্ষনে হয়তো বুঝেই গেছেন আমার বাচ্চাগুলো রিমাস ছিলো এবং আমিও একজন রিমাস।
-এর জন্যই ইজিলি তুমি আমার বাসায় প্রবেশ করেছো তাই না?
-দেখুন মি.অভি আমি কি এবং আমার পরিচয় কী এটা এখন ভাববার বিষয় নয়। এখন ভাববার বিষয় হলো যেভাবেই হোক ব্লেক রিমাসদের থামাতে হবে। নাহলে অনর্থ হয়ে যাবে।
-ব্লেক রিমাস?
ইশা গোসল করে বের হতেই দরজার সামনে সাদকে দেখতে পায়। সাদ বড়দের মতো পায়চারি গলায় প্রশ্ন করলো- কি হয়েছে তোর?
হঠাৎ সাদের মুখে এমন প্রশ্ন শুনে অনেকটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম। এই ছেলের আবার কি হলো? উত্তরে বললাম-কই আমার কি হয়েছে?
-মিথ্যা বলবি না। রক্ত মাখা অবস্থায় আমি তোকে বাসায় ডুকতে দেখেছি।
-কোথায় রক্ত? কীসের রক্ত? তোর মাথা ঠিক আছে?
-আমার মাথা ঠিকি আছে। তোর মাথায় কি চলছে আমাকে সব খুলে বল।
-দেখ সাদ রাগ উঠাবি না। যা এখান থেকে।
– কথা ঘুরাস না। তোর কাপড়ে আমি স্পষ্ট রক্তের দাগ দেখেছি। শুধু কাপড়ে নয় হাত মুখেও লেগে ছিলো।
-আরে ওগুলো,,ওগুলো তো রং ছিলো। রেগডের জন্য সবাই রং নিয়ে মাখামাখি করেছে।
-কিন্তু আমি যতটুকু জানি তোদের রেগডে গতমাসে হয়ে গেছে। দেখ আপু তুই এখন সত্যিটা আমাকে খুলে বলবি নাহলে আমি এখনি মাকে কল করবো।
ইশার মা তার ভাইয়ের বাড়ি বেড়াতে গেছে। ইশা জানতো বাসা ফাকা,তাই এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে নিরভয়ে বাসায় ডুকে পরলেও ইশা সাদের চোখ এরাতে ব্যর্থ হয়। সাদ পকেট থেকে ফোন বের করতেই ইশা ওর হাত ধরে ফেলে।
-দেখ সাদ এমনটা করিস না।
-আমার জায়গায় মা হলে ঠিক একি প্রশ্ন করতো। তখন তুই মার প্রশ্ন কীভাবে এরাতি?
আচমকা ইশার চোখ থেকে পানি ঝড়তে থাকে। ইশা কান্না করতে করতে ফ্লোরে বসে পরে।
-আপু কি করছিস উঠ? এভাবে কান্না করছিস কেনো?
-আমি কি করবো বল? দিন দিন আমি অমানুষে রুপান্তর হচ্ছি। আমি জানোয়ার হয়ে যাচ্ছি।
-এসব কি বলছিস আপু?
-ঠিকি বলছি,ওই রক্তগুলো কীসের ছিলো জানিস? একজন মানুষ রুপি জানোয়ারের রক্ত ছিলো। যার রক্ত খেয়ে এসেছি।
ইশার কথা শুনে সাদ কিছুক্ষণ চুপ হয়ে যায়।
-আচ্ছা আপু তুই শান্ত হ, বিছানায় বস। আমি তোর জন্য পানি নিয়ে আসছি।
সাদ দু-পা বাড়াতেই ইশা কান্না জড়িত কন্ঠে বললো-তুই এখন রুম থেকে বের হয়ে মাকে ফোন দিবি। দু-মিনিট মার সাথে কথা বলে বাবাকে কল করে বলবি আমার কন্ডিশন ভালো না। যত তারাতাড়ি সম্ভব বাসায় ফিরে আসতে। ডাইনিংয়ের ডান পাশের বাক্সে একটা ঘুমের ওষুধ আছে। ওটা এনে আমাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করবি। তোর মধ্যে ভয়ের থেকে বেশি আমার জন্য চিন্তা হচ্ছে। তুই ভাবছিস আমি মানুষিক ভাবে অসুস্থ।
সাদের পা থমকে যায়। ইশা এসব কথা কীভাবে বলছে। সাদ পাশে থাকা পানির গ্লাস থেকে এক ঢোক পানি খেয়ে আস্তে আস্তে ইশার সামনে এসে দাঁড়ায়।
-আ,,আ,,আপু,,তু,,তুই
-অবাক হচ্ছিস,প্রচন্ড অবাক হচ্ছিস আমি তোর মাইন্ড কীভাবে রিড করলাম? শুধু তোর মাইন্ড নয় আমার আশেপাশে থাকা প্রতিটা মানুষের মাইন্ড রিড করতে পারবো। এখন তোর আগ্রহ হচ্ছে আমি এসব কীভাবে করছি? তুই সত্ত্য জানতে চাস,সত্ত্য কী শুনবি সেদিন তোর রক্তের প্রতি আমি আসক্ত হয়েছিলাম। সত্ত্য কি শুনবি আমি বাবা মা এমনকি তোর জন্যও ক্ষতিকর হয়ে উঠছি। সত্ত্য কি শুনবি আমি মানুষ্যত্ব হারাচ্ছি।
আমি জানি না আমার সাথে এসব কি বা কেনো হচ্ছে। কিন্তু এতোটা জানি আমার জন্য আমার পরিবার হুমকির মুখে পড়তে চলেছে। বিশেষ করে তুই।
চলবে,,,
#দ্যা_লিফট
#পর্ব_১১
#Writer_Shanta_islam
–তো তুমি বলতে চাইছো মানুষদের মধ্যে যেমন ভালো মন্দ রয়েছে রিমাসদের মধ্যেও ভালো রিমাস খারাপ রিমাস রয়েছে?
-কালের বিবর্তনে মানুষ যেমন উন্নত হয়েছে,রিমাসজাতীও কালের বিবর্তনে নিজেদের উন্নত করেছে। মানুষ যেমন আগুনের ব্যবহার,কৃষিকাজ,কাচা মাংসের বদলে রান্না করা মাংস খাওয়া সাস্থ্যকর এসব আবিষ্কার করেছে। তেমন রিমাস জাতীও নিজেদের উন্নত করে রক্তের বদলে পানির উপর জীবিকা নির্বাহ করা শিখেছে। মানুষের মতো সাধারণ খাদ্য খেয়ে বেচে থাকা শিখেছে। নিজেদের পিপাসার প্রতি কন্ট্রোল করা শিখেছে। রিমাস জাতী উন্নত হয়েছে ঠিকি কিন্তু সব রিমাস নয়। ব্লেক রিমাস মানুষ এবং মানুষের রক্ত খেয়ে বেচে থাকে। ওদের রিমাস কিং অনেক বার সতর্ক করার পরও ওরা গনহারে মানুষ খুন করেছে। তাই রিমাস কিং রিওয়ার্ল্ড থেকে ব্লেক রিমাসদের বহিষ্কার করে। রিওয়ার্ল্ড থেকে বহিষ্কার হওয়ার পরও ওরা থেমে থাকেনি, ব্লেক রিমাস নিজেদের মধ্যে আলাদা জাতী তৈরি করে। তারা অন্য রিমাসদের থেকে নিজেদের আলাদা করে নেয়। রিমাসদের মধ্যে দুই জাতী তৈরি হওয়ায় দু-জাতীর আলাদা নাম দেওয়া হয় ব্লেক রিমাস আর ওয়াইট রিমাস।
একটু আগে অভি যাকে আগুন জ্বালিয়ে মারতে চাইছিলো এখন সে তার সামনে বসে রিমাসদের হিস্ট্রি শুনছে। অনেক আগ্রহের সাথে অভি ওয়াইট কোট পড়া রিমাসের কথাগুলো শুনছে। হঠাৎ অভি কিছু একটা ভেবে প্রশ্ন করে-তাহলে কী তুমি ওয়াইট রিমাস?
-হ্যা আমি ওয়াইট রিমাস। আমরা পৃথিবী আর রিওয়ার্ল্ডে সহজে যাতায়াত করতে পারি। কিন্তু ব্লেক রিমাসরা তা পারে না। রিমাস কিং তাদের থেকে সেই শক্তি কেরে নিয়েছে। যাতে তারা পৃথিবীতে এসে মানুষ খুন করতে না পারে।
-সবি বুঝলাম কিন্তু এসবে ইশা জড়ালো কীভাবে?
-ভালো প্রশ্ন করেছেন, আমি এখনি আপনাকে মিস ইশা সম্পর্কে বলতে যাচ্ছিলাম। মিস ইশা এখন রিওয়ার্ল্ডের নতুন কুইন।
কথাটা শুনা মাত্র অভি বসা থেকে ওঠে দাড়ায়-কিহ? কি বলতে চাইছো তুমি? ইশা কীভাবে কুইন হয়?
-মি.অভি আমি এখন যা যা বলতে যাচ্ছি আপনাকে একটু ধৌর্য সহকারে শুনতে হবে। আপনি শান্ত হয়ে বসুন প্লিজ।
-তুমি আমাকে শান্ত হয়ে বসতে বলছো? তোমার জন্য আজ আমি ইশাকে ভুল বুঝে ওর সাথে রুড বিহেভ করেছি। আর এখন তুমি,,
-প্লিজ মি.অভি, আমি আপনাকে মিস ইশার ব্যাপারে সবটা খুলে বলছি। কিন্তু তার আগে আপনাকে শান্ত হয়ে বসে সব কিছু শুনতে হবে। অভি আবার বসে পরলো।
-কিছু জায়গা আপনাকে জানানো হয়নি যেগুলো আপনাকে আরো আগে জানানো উচিৎ ছিলো।
-কী?
-ব্লেক রিমাসরা রিমাস কিংকে মেরে রিমাস ওয়ার্ল্ডে রাজ্যত্ত্ব করতে চেয়েছিলো। তাই রিমাস কিং মারা যাওয়ার আগে একটা স্টনের মধ্যে রিওয়ার্ল্ডের সব শক্তি অর্পণ করে দেয়। যেটা ছিলো ব্লাক স্টন। ব্লেক রিমাসরা কিংকে মেরে ফেললেও সব শক্তি হাসিল করতে পারেনি। স্টনের মধ্যে সব শক্তি লুকানো ছিলো। তাই ব্লেক রিমাসরা কিংকে মারার পর স্টনের দিকে নজর দেয়। একবার ওদের হাতে ব্লাক স্টন চলে গেলে রিওয়ার্ল্ড থেকে পৃথিবীতে যেতে ওদের কেও আটকে রাখতে পারতো না।
-ওরা যদি পৃথিবীতে এসে পরতো তাহলে তো অনর্থ হয়ে যেতো।
-হ্যা,ওদের উদ্দেশ্য ছিলো শুধু মানুষ আর মানুষের রক্ত। স্টনকে সুরক্ষিত রাখতে আমরা ওয়াইট রিমাসরা মিলে স্টনকে পৃথিবীতে নিয়ে আসি। কিন্তু সমস্যা হয়ে দারায় স্টন এতোটাই শক্তিশালি ছিলো যে এটা নিজের অস্তিত্ব নিজে খুজে নেয়।
-মানে?
-মানে স্টন নিজের শক্তি বহনকারীকে নিজে খুজে নেয়। সর্বপ্রথম স্টন মার্ক ওয়াটসনকে বাছাই করে যাতে উনি স্টনের শক্তি ব্যবহার করতে পারে। উনি স্টনের শক্তি ভালো কাজে ব্যবহার করে এবং ব্লেক রিমাসদের পৃথিবীতে আসা থেকে আটকিয়েছিলো। উনার পর আপনি স্টনের শক্তি ব্যবহার করেন এবং এর পর মিস ইশা। আপনি স্টনের শক্তি ভালো ভাবে ব্যবহার করতে পারেনি, যার কারনে স্টনের শক্তি নষ্ট হতে শুরু করে এবং স্টন নিজ থেকে গায়েব হয়ে আবার রিওয়ার্ল্ডে ফিরে আসে। ব্লেক রিমাসদের স্টনের প্রতি অনেক আগে থেকেই নজর ছিলো। যখন স্টনের শক্তি একেবারে নিঃশেষ হয়ে যাবে তখন রিমাস ওয়ার্ল্ডের উপর প্রলয় নেমে আসবে। তাই স্টনের শক্তি বাচাতে আমরা সেই শক্তি একটা ডিমের মধ্যে সংগ্রহ করে রাখি। যাতে সেটা ব্লেক রিমাসরা খুজে না পায়।
-মাথায় কিছুই খেলছে না,এখানে ইশা জড়ালো কীভাবে?
-আমার বাচ্চাগুলো সবে মাত্র শিখছে। সেদিন খেলতে খেলতে ওরা লিফটকে রিওয়ার্ল্ডের প্রবেশ দোয়ারে কনভার্ট করে ফেলে। আর ঠিক সেই সময়ই মিস ইশা ওখানে উপস্থিত হয়। একটা মানুষের পক্ষে এমন কিছু দেখা স্বাভাবিক নয়। তখন মিস ইশার উচিৎ ছিলো সেখান থেকে দৌড়ে পালানো। কিন্তু তিনি তা না করে লিফটের মধ্যে ডুকে রিওয়ার্ল্ডে প্রবেশ করে। যেখানে সে ভুলে ব্লেক রিমাসদের এরিয়ায় চলে যায়। আমার বাচ্চাগুলো ব্যাপারটা বুঝতে পেরে উনাকে খুজে বের করে। কিন্তু ততোক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছিলো। মিস ইশার যেসব জিনিস না দেখার কথা ছিলো তিনি ওগুলো দেখে ফেলেন। অতপর আমার বাচ্চাগুলো উনাকে বাচাতে ওয়াইট রিমাসদের জোনে নিয়ে আসার চেষ্টা করে। ব্লেক রিমাসরা ব্লাক স্টনের পাওয়ার সংগ্রহকারী ডিমটা চুরি করে তাদের জোনে নিয়ে যায়। যেখানে মিস ইশা আর আমার বাচ্চাগুলো লুকিয়ে ছিলো। কো-ইনসিডেন্টলি মিস ইশার হাত সেই ডিমের মধ্যে ডুকে যায় আর সাথে সাথে স্টনের সব পাওয়ার উনার মধ্যে ডুকে পড়ে। এরপর থেকে কি কি হয়েছে আপনি সব জানেন।
-এর জন্যই ইশার সাথে সেই অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিলো। শক্তি ইশার মধ্যে থাকায় রিমাসদের মতো ওরও রক্তের প্রতি আসক্তি বারতে থাকে। যার জন্য ও বার বার নিজেকে জানোয়ার বলছিলো।
-মিস ইশাকে নিজের প্রতি কন্ট্রোল করা শিখতে হবে। এর থেকে বড় কথা এখন থেকে উনাকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ ব্লেক রিমাসরা জেনে গেছে স্টনের পাওয়ার সব উনার মধ্যে। ওরা উনাকে মেরে সব পাওয়ার ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে। চিন্তার বিষয় এটাই যে মিস ইশা নিজের মধ্যে পাওয়ার কন্ট্রোল করতে পারবে কি না।
-কিহ ইশাকে মারার চেষ্টা করবে? এটা আমাকে আগে বলোনি কেনো? আমাকে এখনি ইশার কাছে যেতে হবে। অভি দ্রুত ইশাদের বাসায় যাওয়ার জন্য রেডি হয়। পিছন থেকে ওয়াইট রিমাস প্রশ্ন করে-কিন্তু এখন উনার বাসায় উনার পরিবার থাকতে পারে। যদি প্রশ্ন করে এতো রাতে আপনি উনাদের বাড়িতে কেনো এসেছেন? উনারা ব্যাপারটা খারাপ ভাবতে পারে। অভি টি শার্ট গেঞ্জির উপর পরতে পরতে গম্ভীর সরে বললো-কে কী প্রশ্ন করবে বা কে কী ভাববে তাতে আমার কিছু যায় আসে না। যেখানে ইশার জীবন মৃত্যুর কথা জড়িত সেখানে আমি ওকে একা ছাড়তে পারবো না।
ওয়াইট রিমাস কিছু একটা ভেবে বললো-এতোটা বুঝেছি যে আপনারা স্টনের টানে একজন আরেকজনের সাথে দেখা করেছেন। কিন্তু এটা কখনোই স্টনের টান হতে পারে না।
-ঠিক বলেছো এটা কোনো স্টনের টান নয়,এটা হয়তো অন্য এক অনুভূতি যেটা আমাকে ওর প্রতি টানছে। যে অনুভূতি এতোদিন অন্য কারো প্রতি অনুভব করিনি। কথাটা বলে অভি রুম থেকে বের হয়ে যায়। অভির পিছু পিছু ওয়াইট রিমাসও ইশাদের বাসায় যায়।
চারোদিকে রক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সাদ ফ্লোরে বেহুশ হয়ে পড়ে আছে। আর ইশা খাটের এক কোনায় বসে মুখ লুকিয়ে কান্না করছে। অভি বেল দেওয়ার পরও কেও দরজা খুলছে না।
-আপনি একটু পেছনে দাড়ান। আমি দরজা এখনি খুলে দিচ্ছি। অভি পিছু দাড়াতেই ওয়াইট রিমাস চোখের পলকে দরজার লক খুলে ফেলে।
-তোমাদের সবাইকেই কী ওয়াইট রিমাস ডাকতে হয়?
রিমাস একটু মুচকি হেসে বললো- পৃথিবীতে মানুষদের মতো আমাদেরও নাম আছে। আপাতত আমার নাম ডেবিড। আপনি আমাকে ডেবিড বলে ডাকতে পারেন।
-ওকে ডেবিড থ্যাংকিউ। এখন তুমি যেতে পারো।
– সরি মি.অভি আমার বাচ্চাদের জন্য আজ মিস ইশার উপর এতো বড় বিপদ নেমে এসেছে। তাই উনাকে রক্ষা করার দায়িত্বও আমার। আমি থাকলে হয়তো আপনাদের কিছুটা সাহায্য করতে পারবো।
অভি ডেবিডের কথায় সায় জানিয়ে দুজন এক সাথে বাসায় ডুকলো। ইশাদের বাসায় কেও নেই,ডান সাইডের রুমটা থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। অভি ডান সাইডের রুমটায় প্রবেশ করতেই দেখলো সাদের শরীর ফ্লোরে পরে আছে। আশেপাশে রক্তের ছিটেফোঁটা লেগে আছে। আর ইশা বিছানার এক কোনায় বসে মাথা নিচু করে কান্না করছে। অভি দৌড়ে ইশার পাশে যেয়ে ডাক দিলো-ইশা,
অভির আওয়াজ পেয়ে ইশা মাথা উচু করে।
-ইশা তুমি ঠিকাছো? অভি ইশার গালে হাত রাখতেই ইশা এক জটকায় অভির হাত সরিয়ে ফেলে।
-আপনি,,আপনি এখানে কি করছেন? চলে যান এখান থেকে,কেনো এসেছেন এখানে? আমি এখন আর মানুষ নই,আমি এখন পশু। পশুতে পরিনত হয়েছি আমি।
অভি একটু ঘাবড়ে যায় ইশা সাদের কিছু করে ফেললো না তো। অভি সাদের পাশে যেয়ে নাকের কাছে আঙুল রেখে নিশ্বাস চেক করছে। নাহ সাদ ঠিকাছে। বেহুশ হয়েছে শুধু। তাহলে এ রক্ত কীসের? হঠাৎ ডেবিড দৌড়ে এসে বললো-মি. অভি বেলকুনিতে একটা ব্লেক রিমাসের লাশ পড়ে আছে।
-ওটাকে আমি মেরেছি। পিছন থেকে ইশার কন্ঠে কথাগুলো ভেসে এলো। অভি আর ডেবিড দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে সবটা বুঝতে পারে। একটু আগে ব্লেক রিমাস ইশার বাসায় হামলা করেছিলো। ইশা সাদ আর নিজেকে বাচানোর জন্য ওর শক্তি ব্যবহার করে। অভি ইশার পাশে দাড়াতেই ইশা অভির কাছ থেকে সরে কান্না করতে করতে বললো,,
– দূরে থাকুন সবাই, আমার কাছ থেকে দূরে থাকুন, নাহলে আমি আপনাদেরও ক্ষতি করে ফেলবো।
অভি ইশাকে টান দিয়ে বুকের মধ্যে জরিয়ে ধরে
-আমি তোমাকে বিশ্বাস করি। তুমি কারো ক্ষতি করতে পারো না।
চলবে,,,