#চাদর_জড়ানো_চিরকুট
#পর্বঃ- ১৫
একটা মাঠের মধ্য দিয়ে রবিউল আর লতা দৌড়ে যাচ্ছে। তাদের পিছনে পুলিশ, পুলিশ বারবার শুধু রবিউলকে দাঁড়াতে বলছে। কিন্তু রবিউল লতাকে নিয়ে একটুও থামছে না৷ হঠাৎ করে একটা গুলির শব্দ হলো। রবিউলের হাঁটার গতি কমে গেল, লতা চৌধুরীর হাত আস্তে আস্তে ছেড়ে দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো রবিউল।
লতা পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে রবিউলের ঠিক মাথার মধ্যে গুলি লেগেছে। কালো চুল ভর্তি সেই মাথা মুহূর্তের মধ্যে রক্তে লাল হয়ে গেল। লতা তাড়াতাড়ি করে মাটিতে বসে পড়লো। তারপর রবিউলের শরীরে হাত দিয়ে কিছু একটা বলতে গেল ঠিক তখনই লতার ঘুম ভেঙ্গে গেল।
লতা ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে। নিজেকে সেই বন্দী রুমে দেখতে পেয়ে বুঝতে পারলো এতক্ষণ স্বপ্নে ছিল। সারাক্ষণ নিজের আর রবিউলের বিপদের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমের মধ্যেও চলে এসেছে।
লতার প্রচুর পানি পিপাসা অনুভূত হলো। বিছানার পাশে একটা পানির বোতল আছে। কিন্তু সেই পানি না খেয়ে লতা ওয়াশরুমের মধ্যে চলে গেল। চোখে মুখে ভালো করে পানি দিল।
সন্ধ্যার আগে রবিউলের সঙ্গে কথা বলার খানিক পরে মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়। বহু চেষ্টা করেও সে মোবাইল চালু করতে পারলো না। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে লতা চারিদিকে তাকিয়ে শুধু রবিউলকে খুঁজতে লাগলো। রবিউল বা সাজু ভাই কেউ তো আসুক তাকে নিয়ে যেতে।
স্বপ্নের কথা আবারও মনে পড়লো। রবিউল মারা যাক এটা সে কিছুতেই কল্পনা করতে পারছে না। লতা যখন বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে মাগরিবের আজান দিয়ে দিল। তখন সে রুমের মধ্যে চলে আসে। মোবাইলের তার নিজেরও খুব ক্ষুধা লেগেছে। পরশু রাতে ঠিকমতো খেয়েছিল লতা চৌধুরী। গতকাল সকালে হালকা খাবার খেয়ে চট্টগ্রাম রওনা দিয়েছিল। তারপর দুপুরে তো আর খাওয়া হলো না, রাতে রবিউলের যে খাবার দিলো সেটা তৃপ্তি পেল না। বরং বমি করে সেগুলো সব ফেলে দিতে হয়েছে এবং শরীর আরও বেশি দুর্বল করে দিয়েছে।
সবমিলিয়ে লতা নিজেও শারিরীকভাবে অনেক অসুস্থ অনুভব করতে লাগলো। তারপর বিছানায় এসে খানিকটা শুয়ে ছিল। কিন্তু কখন যে চোখ বন্ধ হয়ে গেছে বুঝতে পারেনি। ঘুমের মধ্যে সেই ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখে জাগ্রত হয়ে গেল।
রাত আনুমানিক কয়টা বাজে লতা জানে না। মোবাইল বন্ধ, রুমের মধ্যে কোনো ঘড়ির ব্যবস্থা নেই। লতা বেলকনিতে চলে গেল। চাতক পাখির মতো তার দুটো চোখ সেই অন্ধকার শহরের মধ্যে কিছু খুঁজতে লাগলো।
এমন সময় দরজা ধাক্কার শব্দ পেল লতা চৌধুরী। বৃদ্ধ এসিস্টেন্ট লতা মা লতা মা বলে ডাকছে। লতা একটুও শব্দ করলো না। দরজার ওপাশে ফিসফিস শব্দ হতে লাগলো। লতা পা টিপে টিপে আস্তে করে দরজার কাছে গেল।
বাহিরে বৃদ্ধ এসিস্টেন্টের কণ্ঠ শুনতে পাচ্ছে লতা চৌধুরী। বৃদ্ধ এসিস্টেন্ট কাকে যেন বলছে,
” মনে হয় ঘুমিয়ে গেছে, আমি কি অপেক্ষা করবো নাকি দরজা ভেঙ্গে ভিতরে যাবো? ”
★★★
লতার সঙ্গে কথা বলার পরে সাবরিনার কাছে কল দিয়েছিল রবিউল। সাবরিনা রবিউলের কণ্ঠ শুনে আতঙ্কিত গলায় বললো,
– রবিউল তুমি কোথায়? পুলিশ তো তোমাকে পাগলের মতো খুঁজে বেড়াচ্ছে। নিজেকে বাঁচানোর জন্য তোমার তো পালানো ছাড়া উপায় নেই।
রবিউল বললো,
– আমি পালাতে পারি ঠিকই কিন্তু তাহলে লতা ম্যাডামকে বাঁচানো যাবে না। তিথি বিথির মৃত্যুর জন্য দায়ী এখনো দুজন বেঁচে আছে। দাদাজান দিনদিন বড় যন্ত্রণার কারণ হয়ে গেছে।
– কিন্তু ওরা তো তোমার বিরুদ্ধে পুলিশ জনগণ সবাইকে লেলিয়ে দিয়েছে। এমতবস্থায় শহরের মধ্যে ঘোরাঘুরি করা তোমার জন্য বিপজ্জনক। আর জেনেশুনে এরকম করা মানে আত্মহত্যা করা।
– তোমাকে দুটো কারণে কল করেছি।
– বলো।
– তোমার একটা বন্ধু আছে না নাটকের শুটিংয়ে মেকআপম্যান হিসেবে কাজ করে?
– হা আছে।
– তাকে কল দিয়ে আমার কথা বলো, বলবে যে আমি তার কাছে যাচ্ছি। আমাকে আপাতত আজ রাতের জন্য ভিন্ন একটা রূপে সাজাতে হবে। যেন কেউ দেখলে চিনতে না পারে।
– ঠিক আছে আমি কল দিয়ে জানাচ্ছি তোমাকে।
|
দেড় ঘন্টা পর রবিউল নিজের চেহারার বেশ কিছু পরিবর্তন করে মিরপুরে এলো। হাবিব এরমধ্যে খুব ভালো একটা কাজ করেছে। লতার বলা সেই বিল্ডিং খুঁজে বের করেছে, পাশে ছয়তলা সেই বাড়ি আর পাশেই আরেকটা নীল রঙের বাড়ি।
রবিউলকে দেখে হাবিব নিজেও চিনতে পারলো না। রবিউল রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাড়িটা ভালো করে দেখতে লাগলো। ছয়তলা বাড়িটির গেইটের সঙ্গে “ফ্ল্যাট ভাড়া হবে ” বিজ্ঞাপন ঝুলছে। রবিউল আর হাবিব দুজন মিলে দারোয়ানের সঙ্গে কথা বলতে গেল।
রবিউল বললো,
– কত তলায় ফ্ল্যাট ফাঁকা আছে?
– পাঁচ তলায়, আপনি কি পরিবার নিয়ে থাকবেন নাকি ব্যাচেলর?
– পরিবার নিয়ে থাকবো, মালিকের সঙ্গে কথা বলতে পারি?
– স্যার তো বাসায় নাই তবে ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারবেন।
– ঠিক আছে তাহলে তাকে বলেন আমরা বাসা দেখতে এসেছি।
দারোয়ান টেলিফোন করলেন মালিকের কাছে। কথা শেষ করে বললেন,
– সিড়ি দিয়ে উঠে যান, দোতলায় A2।
– ঠিক আছে।
ঘড়িতে রাত আটটা বেজে দশ মিনিট।
রবিউল আর হাবিব দুজন মিলে বাড়ির মধ্যে ঢুকে গেল। হাবিবের কাঁধে একটা ব্যাগ, সেই ব্যাগের ভেতর রড বা লোহা কাটার মেশিন। বেলকনির লোহার গ্রীল কাটার উদ্দেশ্য নিয়ে এটা সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে তারা। কিন্তু পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবহার করা হবে কিনা সেই বিবেচনা করা যাবে। ব্যাগের ভেতর চিকন তবে খুব শক্ত একটা রশি আছে। কখন কোনটা কাজে লাগে বলা তো যায় না।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে লতার নাম্বার বন্ধ। চার্জ নেই নাকি অন্য কোনো সমস্যা হয়েছে রবিউল জানে না। তবে লতা বলেছিল মোবাইল বন্ধ হতে পারে তাই সেটাই ভেবে নিচ্ছে আপাতত।
বাড়ির মধ্যে ঢুকে হাবিবের কাছ থেকে ব্যাগটা নিয়ে গেল রবিউল। তারপর বললো,
– শোনো হাবিব, তুমি মহিলার সঙ্গে ফ্ল্যাটে যাবে। তারপর ঘুরে ঘুরে বাসা দেখবে। আমি ততক্ষণে ছাদে চলে যাবো। তোমার বাসা দেখা শেষ হলে তুমি বের হয়ে যাবে, তোমাকে থাকতে হবে না। তবে চেষ্টা করবে কমপক্ষে আধা ঘণ্টা থাকতে।
– বের হবার সময় যদি দারোয়ান জিজ্ঞেস করে যে আরেকজন কোথায়? তখন কি বলবো?
– সেজন্য বলছি আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করার চেষ্টা করবে। আর যদি দারোয়ান কিছু বলে তখন তুমি যেভাবে হোক বের হয়ে যাবার চেষ্টা করবে। ৩০ মিনিটের মধ্যে আমি এই বিল্ডিং ত্যাগ করে লতার কাছে পৌঁছে যাবো।
– ঠিক আছে ভাই।
দোতলায় এসে রবিউল দ্রুত উপরে উঠে গেল। লিফট আছে কিন্তু সেখানে না উঠে সরাসরি সিড়ি দিয়ে উঠতে লাগলো। হাবিব সেখানে দাঁড়িয়ে কলিং বেল বাজালো।
কাজের মেয়েটা দরজা খুলে হাবিবকে বললো,
– আম্মায় নাস্তা করে, আপনি একটু বসেন।
হাবিব খুশি হয়ে গেল। মনে মনে প্রার্থনা করতে লাগলো যেন সারারাতেও নাস্তা খাওয়া শেষ না হয়।
★★★
রবিউলের পাঠানো নাম্বার বন্ধ পেয়ে সাজু বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। বন্ধ নাম্বারের লোকেশন বের করা সম্ভব না। তাহলে এখন কি করা যায় সেই বুদ্ধি করতে লাগলো সাজু ভাই। হাসান সাহেবের স্ত্রী আরেকবার খাবার জন্য ডাকলো।
সাজু খাবার জন্য না গিয়ে হাসান ভাইয়ের কাছে কল দিল। হাসান বললো,
– কী ব্যাপার তোমার নাম্বার বন্ধ কেন?
– চার্জ ছিল না ভাই।
– কোথায় তুমি?
– আপনার বাসায়।
– রামিশা কোই?
– ওর আপুর বাসায় দিয়ে এসেছি। ভাই জরুরি একটা কাজের জন্য কল দিলাম।
– কী কাজ?
– লতার বাবার নতুন এসিস্ট্যান্টের নাম্বার আছে আপনার কাছে?
– হ্যাঁ আছে, তিনি নিজেই দিয়েছিলেন।
– আমাকে নাম্বারটা দেন। রবিউলের উপর পুলিশ কীভাবে লেগেছে জানেন তো?
– হ্যাঁ জানি। তবে আমার মনে হয় সে এতক্ষণে ঢাকা থেকে পালিয়ে গেছে।
– আপনি আসার সময় লতার বাবার বেশ কিছু ছবি নিয়ে আসবেন। যেকোন ছবি তবে অনেক গুলো হতে হবে, বিভিন্ন ধরনের।
– ঠিক আছে।
বৃদ্ধ এসিস্টেন্ট দাদাজানের কাছ থেকে কল কাটার পর পরই সাজুর কল আসে। অপরিচিত হলেও রিসিভ করেন বৃদ্ধ এসিস্টেন্ট।
– কে বলছেন?
– সাজু, ডিবি অফিসার হাসানের ছোটভাই।
লতা চৌধুরী সাজুকে লাইসেন্সবিহীন গোয়েন্দা বলার পর থেকে নিজের নামে গোয়েন্দা শব্দটা ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাজু ভাই।
– কোন সাজু? পরিচয় কী?
– বললাম তো ডিবি অফিসারের ছোটভাই।
– জ্বি বলেন।
– আপনার দাদাজানকে বলবেন লতার কোনো ক্ষতি হলে তার কিন্তু বিরাট ঝামেলা হবে। কারণ আমি জানি আপনারা লতার জন্য বিপজ্জনক।
– মানে কি এসবের? আমরা লতাকে বাঁচানোর জন্য কতো চেষ্টা করছি আর আপনি উল্টাপাল্টা কি বলছেন?
– ঠিকই বলেছি।
– আপনি হয়তো জানেন না যে লতাকে মারতে চায় সন্ত্রাসী রবিউল। আর তাকে ধরার জন্য কিন্তু পুলিশ আনাচকানাচে তল্লাশি শুরু করেছে।
– পুলিশ তো জানে না যে আসল আসামি কারা। তাই তারা রবিউলের পিছনে ছুটেছে। কিন্তু আমি যেটা জানি সেটাই বললাম। রবিউল ক্রসফায়ারে মারা যাক কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু লতার যদি কিছু হয় তাহলে কিন্তু গর্ত খুঁড়ে সবাইকে আস্তে আস্তে বের করা হবে।
সাজু মোবাইল কেটে দিল। এরকম কথা বলার কারণ হচ্ছে এরা যেন বুঝতে সাজু পারে সরাসরি এদের টার্গেট করেছে। আর রবিউল ক্রসফায়ারে মারা যাক এটা বলার কারণ হচ্ছে সাজু জানে যে রবিউল নিজেকে রক্ষা করবে।
কোনকিছু না খেয়েই সাজু হাসানের বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেল। হাসান সাহেব নিজের গাড়ি ব্যবহার করে তাই বাইক তেমন ব্যবহার হয় না। তাছাড়া সাজু প্রায়ই তার বাসায় আসে তখন বাইকটা সাজু বেশি ব্যবহার করে।
সাজু এখন যাচ্ছে লতার বাবার সঙ্গে দেখা করতে।
★★★
ছাদে উঠে রবিউল লতার ওড়না খুঁজে বের করলো। ছোট্ট একটা লাইট সঙ্গে করে এনেছে। সেই লাইট জ্বালিয়ে বেলকনিটা নিশ্চিত হয়ে ব্যাগ থেকে রশি বের করতে লাগলো।
রাশি এক প্রান্ত নিজের শরীরে খুব ভালো করে বেঁধে নিল। আর বাকি প্রান্ত বাঁধলো লতা যে বিল্ডিংয়ে আছে সেই বিল্ডিংয়ের লতার ওড়না বাঁধা বেলকনি বরাবর নিচের বেলকনিতে। ছয়তলা বাড়ির ছাদে আরেকটা হাফ ছাদ আছে। রবিউল সেই ছাঁদে ওঠার পরে দুরত্ব রইল মাত্র ১৫/১৬ ফিট্।
ঘাড়ে মেশিনের ব্যাগটা নিয়ে রশি বাঁধা অবস্থায় গ্রীলে পা রাখলো রবিউল। রুমের মধ্যে বাতি জ্বলে কিন্তু কাউকে দেখা যাচ্ছে না। রবিউল দ্রুত গ্রিল ধরে উপরে উঠলো। ডানে সম্ভবত বাথরুমের ছোট্ট জানালা দেখা যাচ্ছে। সেই জানালার গ্রীল ধরে রবিউল বহু কষ্টে সপ্তম তলার সেই বেলকনির উপরে ৬” বাড়তি ছাদে পা রাখলো।
নিজের নিশ্বাসের শব্দ নিজেই শুনতে পাচ্ছে। রশির জন্য খানিকটা সাহস পাচ্ছে কারণ হাত ফসকে পড়ে গেলেও সে একদম নিচে পরবে না। রশিতে ঝুলে থাকবে বা খানিকটা আঘাত পাবে।
রবিউল আরেক প্রচেষ্টায় যখন লতার ওড়না টানানো বেলকনিতে হাত রাখলো তখন তার বেশ স্বস্তি হতে লাগলো।
রবিউল তখন আস্তে আস্তে লতার নাম ধরে ডাকা শুরু করে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে লতার কোনো শব্দ পাওয়া গেল না।
রবিউলের মনে চিন্তা এবং হতাশা দুটোই জমাট বেঁধে গেল। লতা কোথায়?
তাছাড়া মেশিন দিয়ে গ্রীল কাটাতে হলে বিদ্যুৎ সংযোগ দরকার হবে। রবিউল ভেবেছিল লতাকে দিয়ে তার রুম থেকে কানেক্ট করবে । কিন্তু লতার তো কোনো পাত্তা নেই।
রবিউল ব্যাগটা গ্রীলে বাঁধলো। তারপর ব্যাগ থেকে বিদ্যুৎের তার বের করে সেটা নিয়ে নিচে নেমে গেল। এটাও নিজে বুদ্ধি করে এনেছিল।
প্ল্যান নাম্বার বি।
যেভাবে উঠেছিল সেভাবেই সাবধানে নামতে লাগলো। তারপর ছাদের এক কিনারে একটা লাইন পেয়ে সেখানে সংযোগ দিল। আবারও গ্রীল ধরে ধরে উপরে উঠলো, চারিদিকে তাকিয়ে বেশ ভয় করতে লাগলো রবিউলের। আশেপাশের কোনো মানুষ যদি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে এসব দেখে তাহলে সব শেষ হয়ে যাবে।
রবিউল লতার বেলকনির সঙ্গে দাঁড়িয়ে কোন কোন যায়গা কাটলে সহজে ভিতরে যেতে পারবে সেগুলো বের করলো। তারপর মাল্টিপ্লাগে মেশিন লাইন লাগিয়ে খুব দ্রুত কাটাতে লাগলো।
মেশিনের শব্দ হতে লাগলো আর রড কারলে লোহার গরম কনাগুলো আগুনের মতো জ্বলে। এটাও আরেকটা বিপদ, কিন্তু রবিউল এসব নিয়ে ভাবছে না। একবার যদি ভিতরে যেতে পারে তবে কোনো চিন্তা নেই। দুই মিনিটের মধ্যে ছয়টা রড কেটে আরেকটা রডকে অনায়াসে ভাজ করতে পারলো রবিউল। তারপর সেই ফাঁক দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো রবিউল ইসলাম রাব্বি।
বেলকনিতে নেমে সে ব্যাগটা ভিতরে নিয়ে গেল। তারপর রশিটা খুলে বেঁধে রাখলো। আর ভাজ করা রডটা আবার সামান্য সোজা করে রাখলো। বাহির থেকে কেউ লাইট জ্বালিয়ে যেন ফাঁকা দেখতে না পায়।
রবিউল আস্তে আস্তে রুমে গেল, কিন্তু রুমের মধ্যে কাউকে দেখতে পেল না। দরজা দিয়ে ড্রইং রুমে উঁকি দিয়েও কারো শব্দ পেল না। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যে জিনিসটা তার কোমড়ে ছিল সেই পিস্তলটা হাতে নিয়ে সে চারিদিকে তাকিয়ে খুঁজতে লাগলো কিন্তু সম্পুর্ন ফ্ল্যাট ফাঁকা।
রবিউল লতার রুমে এসে বাতি জ্বালিয়ে দিল। ফ্লোরে রবিউলের সেই বাটন মোবাইলটা ভাঙ্গা অবস্থায় পরে আছে। আর একটা জিনিস দেখে তার কলিজা কেঁপে উঠল। ফ্লোরে রক্তের দাগ লেগে আছে। মনে হচ্ছে কারো শরীরের অনেক রক্ত পরেছিল, সেই রক্ত কিছু একটা দিয়ে মুছে ফেলা হয়েছে। কিন্তু সম্পুর্ন মুছতে পারেনি।
রবিউল হতাশ হয়ে গেল। এতো কষ্ট করে রুমের মধ্যে এসেও লতাকে পেল না। কার রক্তের দাগ সেটাও বোঝা যাচ্ছে না।
রবিউলের মনে পড়লো সে লতাকে দরজা বন্ধ করে রাখতে বলেছিল। রবিউল দরজা চেক করে দেখে সেটা ছিটকিনি এলোমেলো। তারমানে হচ্ছে বাহির থেকে দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করা হয়েছিল। তাহলে কি লতাকে…?
কোথায় গেল লতা?
লতাকে কি সত্যি সত্যি মেরে ফেলেছে নাকি নতুন কোনো রহস্য আছে এখানে? রহস্য যদি থাকে তাহলে এই রক্তের দাগ কিসের? লতাকে কি সত্যি সত্যি খুন করা হয়েছে নাকি অন্য কোথাও নিয়ে গেছে।
চলবে…
লেখাঃ- মোঃ সাইফুল ইসলাম।