চাদর_জড়ানো_চিরকুট #পর্বঃ- ১৬

0
1403

#চাদর_জড়ানো_চিরকুট
#পর্বঃ- ১৬

লতাকে অজ্ঞান করে গাজীপুরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বৃদ্ধ এসিস্টেন্ট এখনো নিজের ইচ্ছে পূরণ করতে পারেনি। মাঝখানে সাজু নামের ছেলেটার কল পেয়ে সব এলোমেলো হয়ে গেছে। দাদাজান হঠাৎ করে এভাবে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে এটা যেন কল্পনা করেনি বৃদ্ধ এসিস্টেন্ট।

সাজু ভাই কল দিয়ে তাকে ছোট্ট করে হুমকি দেয়। তারপর কল কেটে গেলে বৃদ্ধ এসিস্টেন্ট দাদাজান এর কাছে কল দিয়ে সবটা খুলে। সবকিছু শুনে দাদাজান চুপ করে থাকে।

তারপর বলেন,
– লতাকে মারার দরকার নেই, তুমি লতাকে নিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে পরো। তাড়াতাড়ি!

– কিন্তু কেন দাদাজান?

– লতার মৃত্যু যদি বিতর্কিতভাবে হয়, তার খুনের ঘটনা নিয়ে যদি আমাদের দিকে আঙ্গুল ওঠে তাহলে একটা টাকাও ভোগ করতে পারবো না। উল্টো নিজেদের বিপদ ঘনিয়ে আসবে তাতে বিন্দু পরিমাণ সন্দেহ নেই।

– তাহলে এখন কি করবো?

– লতাকে বাঁচিয়ে রেখে ওর বাবাকে মেরে ফেলি।

– তাকেই মেরে ফেলবেন? বলেন কি?

– ডিবি পুলিশ আর হারাম/জাদা সাজু যদি এটা নিয়ে তদন্তে নামে তাহলে ওকে নিয়েও বিপদের শেষ থাকবে না।

– দাদাজান, আমি ভাবছি যে এরকম বারবার কেন আমরা ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছি?

– কারণ পরিকল্পনা অনুযায়ী লোকজন কাজ করতে পারছে না। একটা কাজও সফলভাবে শেষ হচ্ছে না তাই শুধু বিপদ বাড়ছে।

– হ্যাঁ তা ঠিক। ফিরোজ মারা গেল, মিজনদের সব গুলো মেরে দিল। রবিউলকে ধরে নিয়ে আসার সময় পালিয়ে গেল, এতগুলো ব্যর্থতা।

– ঘাবড়ানোর কিছু নাই, নতুন করে প্ল্যান করছি। যেভাবেই হোক প্রশাসনের কাছে নেগেটিভ হওয়া চলবে না। সেজন্য লতাকে সেইভ করে বাকিটা করতে হবে, কিন্তু তাকে এমনভাবে রাখো যেন কোনো হুঁশ জ্ঞান না থাকে।

– ঠিক আছে।

– আর সাজু তোমার যে নাম্বারে কল করেছে সেই সিম বন্ধ করে দাও। ওই পুঁচকে ছেলে তোমার নাম্বার ট্রাকিং করে তোমার কাছে পৌঁছে যাবে। আর যদি পৌঁছে যায় তাহলে লতাকে কিন্তু আর পাওয়া যাবে না।

– আমি এখনই পরিবর্তন করে দিচ্ছি।

কল কেটে দিয়ে বৃদ্ধ এসিস্টেন্ট তার বাকি দুজন সহযোগী নিয়ে দরজা ধাক্কা দিল। লতা জেগেই ছিল কিন্তু কোনো শব্দ করলো না। বৃদ্ধ এসিস্টেন্ট প্রথমে লতা মা, লতা মা বলে ডাকলো। মিনিট পাঁচেক পরে সে দরজা ভাঙ্গার নির্দেশ দিলেন। লতা তখন অসহায় হয়ে গেল, রুমের মধ্যে এমন কিছু নেই যেটা দিয়ে নিজেকে বাঁচাবে।

মোবাইল বন্ধ হয়ে গেছে, রবিউলের কোনো খবর নেই। সবকিছু মিলিয়ে চারিদিকটা ফাঁকাফাঁকা মনে হচ্ছে তার কাছে। লতা ভয়ে কুঁকড়ে গিয়ে ঠিক বিছানায় বসে রইল। বাহিরে দরজা জোরে জোরে ধাক্কার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। একটু পরেই হয়তো ভেঙ্গে যাবে, তারপর সঙ্গে সঙ্গে তাকে মেরে ফেলবে কিনা কে জানে।

বিছানায় বসে বসে আবারও আল্লাহর নাম নিয়ে বারবার প্রার্থনা করতে লাগলো। আরো মিনিট দুই পার হয়ে গেল তখনই দরজা খুলে গেছে। লতার বুক কেঁপে ওঠে, এই বুঝি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হবে।

বৃদ্ধ বললো,
– কী ব্যাপার তুমি দরজা খুলছিলে না কেন?

– ঘুমে ছিলাম।

– মিথ্যা বলার আর যায়গা পাও না তাই না?

লতা চুপ করে রইল, কারণ সে যেভাবে বসে আছে তাতে বোঝা যাচ্ছে সে ঘুমে ছিল না।
শুধু শুধু মিথ্যা বলে লাভ নেই।

লতা বললো,
– আপনারা আমাকে মেরে ফেলবেন তাই না?

– কেন মারবো? আমরা তো তোমাকে বাঁচানোর জন্য এখান থেকে নিয়ে যেতে এসেছি। রবিউল যেকোনো সময় এখানে চলে আসবে, তাই তোমার জন্য এই বাড়ি একদমই নিরাপদ নয়।

– আমি কোথাও যাবো না, এখানেই থাকবো।

– তুমি বললেই তো হবে না। তোমার বাবার নির্দেশ তুমি এখানে থাকতে পারবে না।

– আমি বাবার সঙ্গে কথা বলতে চাই।

– ঠিক আছে বলবে গাড়িতে উঠে, এখন তুমি তাড়াতাড়ি চলো আমার সঙ্গে।

বৃদ্ধ এসিস্টেন্ট লতার একটা হাত ধরলেন। লতা উপায় না দেখে পিস্তল হাতে দাড়িয়ে থাকা দুজন ব্যক্তির একজনের হাত থেকে খপ্ করে পিস্তল নিয়ে গেল। লতা এভাবে পিস্তল কেড়ে নেবে এমন আশা কেউ করেনি।

কিন্তু সবসময় কলম নিয়ে থাকা লতা জানে না কীভাবে পিস্তল চালাতে হয়। তবুও সে দুবার করে চেষ্টা করলো কিন্তু কোনো বুলেট বের হলো না। তৃতীয় বারে যখন বের হয়েছে তখন গুলিটা লেগেছে একজনের হাতে। মুহূর্তের মধ্যে হাত দিয়ে টপটপ করে রক্ত পড়তে লাগলো।

মাত্র মিনিট খানিকের মধ্যে এই কান্ড। ততক্ষণে যার হাত থেকে পিস্তল নিয়েছে সে লতাকে কাবু করে ফেললো। লতার হাতটা চেপে ধরে পিস্তল ছিনিয়ে নিয়ে গেল। বৃদ্ধ এসিস্টেন্ট লতার গালে তিনটা চড় মারলো।

দুটো পিস্তলেই সাইলেন্সর লাগানো ছিল। যেহেতু এটা আবাসিক এলাকার বাড়ি, তাই দাদাজান বেশ বুদ্ধি করে সাইলেন্সর লাগানো পিস্তল নিয়ে এদের পাঠিয়েছে।

বালিশের পাশে বাটন মোবাইল দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো বৃদ্ধ এসিস্টেন্ট। লতাকে আরেকটা চড় মেরে মোবাইলটা আছাড় মারলেন। তারপর সেই মোবাইল থেকে সিমটা বের করে পকেটে নিলেন।

লতাকে এবার জোর করে ধরে মুখে একটা রুমাল চাপা দিল। লতা সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারলো যে চট্টগ্রামের মতো আবারও তাকে অজ্ঞান হতে হবে। চট্টগ্রামে অজ্ঞান হবার পরে যখন জ্ঞান ফিরেছে তখন সে রবিউলকে পেয়েছিল। এবার যদি তাই হয় কতই না ভালো হবে।

ফ্লোরের রক্ত মুছে হাতটা বেঁধে নিয়ে লতার নিস্তব্ধ দেহটা নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে তিনজনে। লিফট থেকে বের হয়ে গাড়িটা লিফটের সামনে নিয়ে এলো বৃদ্ধ এসিস্টেন্ট। তারপর দ্রুত গাড়ির মধ্যে লতাকে ঢুকিয়ে দিয়ে বাকি দুজন উঠে গেল। হর্ন বাজিয়ে গাড়িটা গেইট দিয়ে বের হয়ে গেল।
আর ঠিক এর ১৫/২০ মিনিট পরে পাশের বাসার ছাদে এসেছিল রবিউল।
তারপর রবিউল যখন সব বাঁধা পেরিয়ে রুমের মধ্যে প্রবেশ করে ততক্ষণে এরা হাওয়া হয়ে যায়।

লতার অচেতন শরীরের দিকে বারবার লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বৃদ্ধ এসিস্টেন্ট। গাজীপুরে যে বাড়িতে এখন নিয়ে যাচ্ছে সেখানে অনেক বেশি নিরাপদ। এতকিছু ঘটছে তবুও লোকটার কুমতলব পরিবর্তন হচ্ছে না।

★★★

এদিকে রবিউল যখন হাবিবকে রেখে ছাদে চলে গেল তার পাঁচ মিনিটের মধ্যে বাড়ির মালিকের স্ত্রী বিষয়টা বুঝতে পেরেছে।

হাবিবকে ড্রইং রুমে বসিয়ে রেখে কাজের মেয়েটা ভিতরে গিয়ে মালিকের স্ত্রীর কাছে বললো,

– উনি বসে আছে, বলছি যে আপনি নাস্তা করে তারপর যাবেন।

– তুই তাদের দুজনকে দুকাপ চা দিয়ে আয়।

– দুজন নয় তো আম্মা, একজন এসেছে।

– একজন? কিন্তু দারোয়ান যে বললো দুজনকে পাঠিয়েছে।

– তা তো জানি না, একজন ঢুকেছে ঘরে।

মহিলা তখন দারোয়ানের কাছে কল দিলেন আর দারোয়ান তাঁকে বললো যে সে নাকি দুজনকেই পাঠিয়েছে। মহিলা সঙ্গে সঙ্গে চিন্তায় পড়ে গেল, দুজন মিলে বাসা দেখতে এসেছে তাহলে অন্য আরেকজন কোথায় গেল।

মহিলা এবার নিজে ড্রইং রুমে চলে গেল। তাকে দেখে হাবিব দাঁড়িয়ে সালাম দিল।

মহিলা বললো,
– আপনাকে একটু অপেক্ষা করতে হবে, আমার সন্ধ্যা থেকে পেটে ব্যথা করছে তাই একটু আগে গ্যাস্টিকের ওষুধ খেলাম৷ দশ মিনিট পরে নাস্তা করে আপনাকে নিয়ে বাসাটা দেখাবো।

হাবিব মনে মনে আনন্দ পেল। সে তো এটাই চায় যে দেরি হোক, অনেক দেরি হোক সমস্যা নেই। কিন্তু তারা যে অলরেডি সন্দেহ করতে শুরু করে দিয়েছে হাবিব বুঝতে পারেনি। তার বুঝতে পারার কথা নয়, কারণ সে রবিউলের মতো এতটা বুদ্ধি নিয়ে চলে না। দ্বিতীয়ত সে জানে এদের সঙ্গে তার বা রবিউলের কোনো পরিচয় নেই সুতরাং কোনো সমস্যা হবে না।

হাবিব বললো,
– সমস্যা নেই আপনি ফ্রী হয়ে আসুন, ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করছি।

– আপনাকে চা দিতে বলেছি। আচ্ছা আপনার সঙ্গে আর কেউ আসেনি? মানে আপনি একাই বাসা দেখবেন?

– আপাতত আমি একা দেখবো, পরে মা-বাবা দেখবে।

মহিলা আর কথা বাড়ালেন না। হাবিব মিথ্যা কথা বলছে সেটা বুঝতে পেরেছেন। কাজের মেয়েটা চা নিয়ে এলো, মহিলা নিজের ঘরে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে 999 এ কল দিলেন। পুলিশ আসতে বেশি সময় লাগবে না তিনি তা জানেন। কারণ থানার দুরত্ব তার বাসা থেকে মাত্র ৮/১০ মিনিটের পথ৷

দারোয়ানকে কল দিয়ে সাবধান হতে বলে দিয়ে ভিতরে অপেক্ষা করতে লাগলেন। আর পুলিশ এলেই তাদের নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বাসায় আসতে বললেন মালিকের স্ত্রী।

পুলিশ এলো পনের মিনিটে। রবিউল ছাদে যাবার পরে এ পর্যন্ত প্রায় পঁচিশ মিনিট পেরিয়ে গেছে। ড্রইং রুমের দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে কতগুলো পুলিশ ধুমধাম করে প্রবেশ করলো। হাবিব কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় তারা।

মহিলা তখন সামনে এসে বলে,
– আপনার সঙ্গে আরেকজন লোক বাড়ির মধ্যে এসেছে তিনি কোথায়?

হাবিব এবার ঘাবড়ে গেল। একরকম বিস্ময়কর কিছু তার কল্পনাতে ছিল না। রবিউল কি পেরেছে এতক্ষণে উপরে যেতে, সে নিজে এখন কি করবে সেটাই তো বুঝতে পারছে না।

হাবিব চুপ করে রইল। কিন্তু পুলিশ তাকে ছাড়ার পাত্র নয়। হাবিবের পকেট থেকে মোবাইল নিয়ে গেল। তারপর সেই মোবাইলের কললিস্টে একটা নাম্বার পেল সেভ করা।
হাবিবের ভুল ছিল এটাই। রবিউলের নাম্বারটা সে রবিউল ভাই লিখে সেভ করে রেখেছে। বিকেল থেকে এই সিমটাই ব্যবহার করেছে রবিউল। হাবিব সেভ করে এখন পুলিশ পরিষ্কার বুঝতে পেরেছে এটাই হয়তো সেই সন্ত্রাসী রবিউল।

পুলিশের দল উপরে যেতে লাগলো আর প্রতিটি ফ্ল্যাটে কলিং বেল বাজিয়ে তাদের জিজ্ঞেস করছে। দুজন চলে গেছে ছাদে। তারা উপরে গিয়ে জানালো যে ছাদের দরজা ছাদ থেকে বন্ধ করা। সবাই তখন নিশ্চিত হয়ে গেল যে দ্বিতীয় ব্যক্তিটা ছাদে উঠেছে।

রবিউল ছাদে উঠে সত্যি সত্যি প্রথমে ছাদের দরজা বন্ধ করেছিল। কারণ বিল্ডিংয়ের কেউ যদি হঠাৎ করে ছাদে আসে তাহলে বিপদ হতে পারে। এই ভেবে সে দরজা বন্ধ করেছিল, আপাতত সেই কারণে পুলিশ থমকে গেছে।

লোহার দরজা কীভাবে খুলবে সেই পথ খুঁজতে লাগলো পুলিশ। ভেঙ্গে প্রবেশ করা যাবে না। তাই যেভাবেই হোক দরজা কাটতে হবে।

★★★

হাসানের বাইক নিয়ে বের হয়ে সাজু হঠাৎ করে ভাবলেন যে ওই বৃদ্ধ এসিস্টেন্ট কোথায় আছে সেখানে যাওয়া যাক। বাইক দাঁড় করিয়ে হাসানের কাছে কল দিলেন সাজু ভাই। কিন্তু হাসান সাহেব ব্যস্ত থাকায় রিসিভ করতে পারলো না।

সাজু এবার মোবাইলে একটা মেসেজ ডেলিভারির নোটিফিকেশন দেখে চমকে গেল। রবিউল যেই নাম্বারটা মেসেজ করে দিয়েছিল সেই নাম্বার একটা ছোট্ট মেসেজ দিয়েছিল সাজু ভাই। যদি নাম্বার চালু করে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে যেন জানতে পারে সেজন্যই এটা করেছিল সে।

ততক্ষণে হাসান কলব্যাক করেছে। সাজু তাকে দ্রুত ওই নাম্বারটা ট্রাকিং করে লোকেশন বের করার অনুরোধ করলো। হাসান সাহেব মাত্রই অফিস থেকে বের হবেন ভাবছিলেন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সাজুর কথা মতো নাম্বারটা সার্চ করার জন্য চলে গেলেন।

সাজু বাইক দাঁড় করিয়ে হাসানের কলের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। এরপর হাসান কল দিয়ে বললো,

– সাজু এই নাম্বার তো কোনো গাড়ির মধ্যে মনে হচ্ছে কারণ এটা তো চলছে।

– বলেন কি?

– হ্যাঁ, মিরপুর ১২ নাম্বার পার হয়ে গেছে। গতি দেখে মনে হচ্ছে উত্তরার দিকে যেতে পারে, আবার যেকোনো সময় থামতেও পারে।

– ঠিক আছে আপনি নজর রাখেন আমি যাচ্ছি।

– মানে কি? তুমি কোথায় যাবে?

– হাসান ভাই ওইটা লতার নাম্বার, রবিউল এই নাম্বার আমাকে দিয়েছিল।

– তুমি আবারও রবিউলের কথা বিশ্বাস করো?
কতবার মিথ্যা বলেছে জানো না?

– জানি ভাই, তবুও আমি চাই ওখানে কে আছে সেটা জানতে।

– ঠিক আছে তুমি এগিয়ে যাও আমি বলতেছি।

গাড়ি মধ্যে বসেই লতার কাছে পাওয়া মোবাইলের সিমটা চালু করে বৃদ্ধ এসিস্টেন্ট। তার সঙ্গে যারা ছিল তাদের মধ্যে যার গুলি লেগেছে সে চলে গেছে হাসপাতালে। বাকি আরেকজনের মোবাইল নিয়ে সেটাতেই সিম চালু করেন। কারণ তিনি জানতে চায় যে এটা কার সিম, লতার কাছে এটা কীভাবে এসেছে?
তবে সিম নিয়ে এলেও মেমোরি কার্ডটা আনতে পারেনি বৃদ্ধ। আছাড় খেয়ে মেমোরি ছিটকে দুরে চলে গেছে তাই চোখে পড়েনি।

★★★

ছাদের দরজা খুলে পুলিশ যখন ছাদে উঠে গেল রবিউল তখন ফ্ল্যাটের মধ্যে চারিদিকে কিছু পায় কিনা সেটা খুঁজে বেড়াচ্ছে। এমন কিছু যদি পাওয়া যায় যেটা সম্বল করে লতার কোনো খোঁজ মিলতে পারে।

পুলিশ ছাদে উঠে চারিদিকে লাইট ধরে ধরে দুটো অস্বাভাবিক জিনিস পেল। বিদ্যুৎের তার চলে গেছে পাশের বিল্ডিংয়ের অষ্টম তলায়। আর সেই তলায় একটা চিকন রশি ঝুলছে। সাত আটজন পুলিশ মিলে সবাই তাদের হাতের টর্চের আলো বেলকনিতে ফেললো। কাটা গ্রীল স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না, কিন্তু ওখানেই কিছু একটা করেছে সেটা বোঝা যাচ্ছে।

রবিউল ড্রইং রুম থেকে দেখতে পেল বেলকনিতে আলোকিত হয়ে গেছে। সে লতার রুমে এসে দেখে নিচ থেকে কারা যেন বেলকনিতে আলো ধরেছে।
রবিউল আস্তে আস্তে সামনে গেল, লতার ওড়না এখনো ঝুলানো আছে। নিচু হয়ে সে সামান্য চোখ দুটি বের করে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে কতগুলো টর্চ বেলকনিতে মারছে।

রবিউলের আত্মা শুকিয়ে গেল। পুলিশ কীভাবে জানলো তার কথা? তাও আবার এতো তাড়াতাড়ি চলে এসেছে। তারমানে কি হাবিব ধরা পড়েছে?

রবিউল দ্রুত রুমের মধ্যে চলে গেল। ফ্ল্যাটের মেইন দরজা বাহির থেকে বন্ধ করা তাই সেখান থেকে বের হবার উপায় নেই। তাছাড়া পুলিশ নিশ্চয়ই দুটো বাড়িই ঘিরে ফেলেছে।

লতার কথা মনে পড়ে গেল। মেয়েটা বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে সে জানে না। তাকে বাঁচানোর জন্য এতকিছু করে এখন সে নিজেই মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে আছে। পুলিশ তাকে ধরতে পারলেই যদি সঙ্গে সঙ্গে ক্রসফায়ার করে দেয়?

বহুদিন পর আজ রবিউলের চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো। পাশের ছাদ ভর্তি পুলিশ আর এই ফ্ল্যাটের মেইন দরজা বাহির থেকে বন্ধ। এখান থেকে বের হবার কোনো উপায় তার রইল না।
রবিউল মনে মনে বললো,
” হে আল্লাহ আমি তো খারাপ, আমার যা কিছু হয়ে যাক কিন্তু ওই মেয়েটাকে তুমি বাঁচিয়ে দিও। যেভাবেই হোক সে যেন বাঁচতে পারে। ”

#চলবে….

লেখাঃ- মোঃ সাইফুল ইসলাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here