#শুভ্র_নীলের_প্রেমপ্রহর,পর্ব ২
লেখক- এ রহমান
সূর্যের প্রখরতা হঠাৎ করেই নরম হয়ে গেলো। রোদ্রজ্জল ঝলমলে দিন কেমন বিষাদময় হয়ে উঠলো। আকাশে এক পাশে কালো মেঘ জমেছে। আর এক পাশে শুভ্র মেঘের আনাগোনা। সেই শুভ্রর বুকে নীল মাথা গুঁজে লুকিয়ে আছে। আবছা দর্শন পাওয়া যাচ্ছে তার। এ যেন শুভ্র নীলের প্রেমপ্রহর চলছে। এতক্ষন তপ্ত গরমে ক্লান্তির রেশে অশান্তি লাগছিল ঈশার। এখন বাতাসের উত্তপ্ত ভাবটা কমে গিয়ে শিতলতা ছড়াচ্ছে কিছুটা। গরমে ঘেমে থাকা শরীরে হালকা বাতাস বেশ শীতল অনুভুতি দিচ্ছে। রিকশা থেকে নেমে দাড়িয়ে আছে সেই চিরচেনা রেস্টুরেন্টের সামনে। এখানে বেশ কয়েকবার এসেছে সে। ইভানের সাথেই এসেছে। কখনও জিজ্ঞেস করা হয়নি। কিন্তু তার মনে হয়েছে ইভানের এই জায়গাটা খুব পছন্দ। ইভান দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে ফোনে কি যেন করছে। ঈশা এক পাশে দাড়িয়ে অপেক্ষমাণ দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে তার শাড়ির আচল আঙ্গুলে পেচিয়ে আবার খুলছে। বাকি সবার জন্য অপেক্ষা। একটু আগেই চলে এসেছে দুজন। ঈশা বিরক্ত হয়ে হাত থেকে আচলটা ছেড়ে দিতেই দেখল সবাই এক এক করে রাস্তা পার হয়ে আসছে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সে। ব্যস্ত ইভান এবার নিজের কাজ ছেড়ে লিফটের সামনে দাড়িয়ে বাটন প্রেস করলো। কিন্তু ঠিক সেই সময় তার ফোনে একটা রিং বাজল। খানিক দূরে দাড়িয়ে সে ফোনটা রিসিভ করলো। লিফটের দরজা খুলতেই সবাই ধিরে ধিরে লিফটে উঠছে। কিন্তু ঈশা ঠায় দাড়িয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছে। ঘনঘন নিঃশ্বাস পড়ছে তার। লিফটে মারাত্মক রকমের ফোবিয়া আছে তার। উঠলেই মাথা ঘুরে যায়। আর প্রচণ্ড রকমের ভয় পায়। কেউ হাত না ধরলে নিজে থেকে লিফটে উঠার সাহস সে কখনই পাবে না। লিফটের দরজা বন্ধ হওয়ার আগেই সায়ান আরেকবার বাটন প্রেস করে ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–চলে আসো ঈশা।
পা বাড়িয়েও আবার পিছিয়ে গেলো সে। চোখ বন্ধ করে শ্বাস ফুলিয়ে নিজেকে শক্ত করে নেয়ার চেষ্টা করে আবার পা বাড়ানোর আগেই একটা শক্ত পোক্ত হাত তার হাতের ভাজে স্পর্শ করলো। বন্ধ চোখেই গভির ভাবে অনুভব করলো সে। এ যেন এক ভরসার হাত। কোমলভাবে চোখ মেলে পাশে তাকাতেই দেখল ইভান খুব ব্যস্ত ভঙ্গিতে এক হাতে ফোন ধরে টাইপ করছে আর এক হাত ঈশার হাতের ভাজে। ঈশাকে এক প্রকার টেনে নিয়েই ভিতরে ঢুকল। একদম পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো দুজনে। লিফটের দরজা বন্ধ হতেই ঈশা চোখ মুখ খিচে ইভানের বাহু দুই হাতে শক্ত করে চেপে ধরল। ইভান মুচকি হেসে ফোন থেকে চোখ সরিয়ে ঈশাকে দেখছে। চোখ মুখ খিচে ভীত হরিণীর মতো তাকে আঁকড়ে ধরে আছে। এই ভীত চেহারাটাই তাকে ভীষণ করে আকর্ষণ করে। এক অন্য রকম মায়া কাজ করে। লিফট এসে থামল। দরজা খুলতেই ঈশা ইভান কে ছেড়ে দিলো। সরে দাঁড়ালো। লিফট থেকে নেমে কয়েক কদম যেতেই রেস্টুরেন্ট। সবাই ভিতরে ঢুকে পাশাপাশি দুইটা টেবিলে বসে পড়ল। ঈশার বাম পাশে ইরিনা বসেছে কিন্তু ডান পাশের চেয়ারটা ফাকা। সামনে তাকিয়ে দেখল সেই সুন্দরি মেয়েটা সায়ানের পাশে বসেছে। ইরিনার দিকে চেপে গিয়ে মৃদু গলায় বলল
–ওই মেয়েটা কে?
–সায়ান ভাইয়ার বোন।
ইরিনা ফিসফিস করে বলতেই ঈশা খেয়াল করলো সবাই আছে কিন্তু ইভান নেই। সায়ান সবার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলো
–কি খাবে অর্ডার করো।
সবাই নিজ নিজ পছন্দের খাবারের অর্ডার করলো। কিন্তু ঈশা এখনো বসে আছে। সায়ান শান্ত কণ্ঠে বলল
–ঈশা তুমি কি খাবে?
ঈশা একটু নড়েচড়ে বসে বলল
–আমি আইস্ক্রিম খাব।
ঈশার জন্য তার পছন্দের আইস্ক্রিম অর্ডার করা হল। কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আর কি। খাওয়া কপালে না থাকলে চাইলেই কি আর পাওয়া যায়। আইস্ক্রিমের চামুচটা মুখে তুলতেই কেউ একজন পাশ থেকে হাত ধরে ফেলল। ঈশা মুখ হা করে তার হাতের আইস্ক্রিমের দিকে তাকিয়ে আছে। বাকি সবার দৃষ্টি সেই মানুষটার দিকে স্থির। ইভান মাথাটা ঝুকিয়ে ঈশার হাতে ধরা চামুচটা নিজের মুখে ঢুকিয়ে দিলো। তারপর হাত থেকে চামুচটা নিয়ে পাশের চেয়ারটা টেনে বসে পড়লো। আইস্ক্রিমের বাটিটা নিজের সামনে নিয়ে খেতে শুরু করে দিলো আনমনে। ইভানের এমন আচরনে সবাই স্বাভাবিক থাকলেও সায়ান খুব বিরক্ত হল। মুখে বিরক্তিকর ভঙ্গি রেখেই বলল
–এটা কি ইভান? ওটা ঈশার জন্য ছিল। তুই খেতে চাইলে তোর জন্য আলাদা অর্ডার করতে পারতিস। অযথা মেয়েটার আইস্ক্রিম নিয়ে নিলি। দেখ মন খারাপ করে বসে আছে।
ইভান কোন উত্তর দিলো না। এক হাতে আইস্ক্রিম খেয়েই যাচ্ছে আর আরেক হাতে ফোনে মনোযোগ দিয়ে দেখছে। মনে হচ্ছে কারও কথা তার কানেই যাচ্ছে না। সায়ান ইভানের আচরন সম্পর্কে বেশ অবগত। তার যদি মনে হয় যে উত্তর দিবে না তাহলে সেটার উত্তর আশা করা বোকামি। তাই আর কথা না বাড়িয়ে ঈশার দিকে তাকাল। আশস্তের সুরে বলল
–তোমার জন্য আমি আবার আইস্ক্রিম দিতে বলছি ঈশা। মন খারাপ করনা।
–ঈশা আইস্ক্রিম খাবে না।
ইভানের কথা শুনে সায়ান বিরক্ত হয়ে আবারো বলল
–কেন খাবে না? ঈশা নিজেই আইস্ক্রিম খেতে চেয়েছে। আমি আবার দিতে বলছি।
ইভান এবার সায়ানের দিকে তাকিয়ে খুব শান্ত ভাবে বলল
–ঈশার টনসিলের ইনফেকশন আছে। ঠাণ্ডা কিছু খেলেই গলায় প্রবলেম হয়। ও তো কোন কিছু না ভেবেই সামনে যা পায় মুখে ঢুকিয়ে দেয়। কিন্তু আমিও তো আর ওর মতো নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিতে পারিনা। মেজ মা তার মেয়েকে ভরসা করে আমার হাতে তুলে দিয়েছে। আমি সেই ভরসা নষ্ট করে তাকে কিভাবে অসুস্থ বানায়ে বাসায় নিয়ে যাই?
ইভানের কথা শেষ হতেই সবাই আবারো ইভানের দিকে তাকাল। ইভান কঠিন চোখে একবার তাকাতেই সবাই চোখ ফিরিয়ে নিয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। এমন ভাব যেন এখানে কিছুই হয়নি। মুখ কালো করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে ঈশা। মাঝে মাঝে আড় চোখে ইভানের দিকে তাকাচ্ছে। সে কোনদিকে না তাকিয়ে খেয়েই যাচ্ছে। ঈশার প্রচণ্ড রাগ হচ্ছিল তার উপরে। এক রাশ অভিমান চোখে মুখে নিয়ে নত দৃষ্টিতে বসে আছে সে। খানিকবাদে ওয়েটার স্যন্ডুইচ এনে ঈশার সামনে দিয়ে গেলো। কিন্তু অভিমানি ঈশা সেদিকে ফিরেও তাকাল না। সে যে আইসক্রিমই খাবে। জেদ! সায়ান স্যান্ডুইচের দিকে তাকিয়ে ইভানের উদ্দেশ্যে শান্ত ভাবে বলল
–আইস্ক্রিম ছাড়া আর কি খাবে সেটা জানতে চাইলিনা একবারও? ঈশা কি এটা খাবে?
–খাবে।
ইভানের আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে সায়ান বেশ অবাক হল। সোজা হয়ে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো শেষটা দেখার জন্য। ঈশা আদৌ এই জিনিসটা খাবে কিনা। সবাই নিজ নিজ খাওয়ায় ব্যস্ত। কেউ আর ঈশার দিকে তাকাবেনা। কারন ঈশার নখরা সম্পর্কে সবার জানা। বেশী সাধলে অযথা চোখের পানি ছেড়ে ভাসিয়ে দিতেও দুই মিনিট ভাববে না। ওকে একমাত্র ইভানই ঠিক ঠাক চালাতে পারে। তা ছাড়া কারও পক্ষে সম্ভব না। ফোনটা পাশে রেখে ঈশার দিকে মনোযোগ দিলো ইভান। প্লেটটা ঈশার দিকে এগিয়ে দিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলল
–এটা তো তোর অনেক পছন্দ। তবুও খাবি না?
ঈশার কোন উত্তর আসলো না। ইভান আশাও করেনি। সে জানে ঈশা কোন কথাই বলবে না। ইভান এবার আইস্ক্রিম খেতে খেতে বলল
–খাস না। এভাবেই বসে থাক। কিন্তু এভাবে অভিমান করে থাকলে যখন নিজের পছন্দের জিনিস গুলা অন্য কেউ নিয়ে নিবে। অন্য কেউ যখন অধিকার দেখাবে তখন মানতে পারবি তো?
ঈশা তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল। ইভান তার দিকে তাকাতেই দাতে দাত চেপে বলল
–সবাই তো আর তোমার মতো না। পছন্দের জিনিস গুলা কেড়ে নেয়।
ইভানের হাতে ধরে রাখা আইস্ক্রিমের চামুচ টার দিকে তাকিয়ে অসহায়ের মতো বলল
–তুমি দুনিয়ার সব থেকে নিষ্ঠুর মানুষ ইভান ভাইয়া। মানুষের পছন্দের জিনিস কেড়ে নিয়ে কষ্ট দাও। তোমার একটুও মায়া হয়না?
ইভান সাভাবিকভাবেই বলল
–আমার মতো কেউ না হলেই ভালো। আমার মতো হোক সেটা আমি চাইনা। আর মনের মধ্যে এতো মায়া রাখলেই সমস্যা। সবার প্রতি মায়া দেখাতে গেলে তখন আবার আরেক প্রবলেম। কাছের মানুষটার কম পড়ে যাবে। তার কষ্ট হবে। সেটা আবার আমি সহ্য করতে পারব না।
বলেই হাতের চামুচটা ঈশার মুখের সামনে ধরে আদুরে কণ্ঠে বলল
–আর কেড়ে নিলেও সেটা তো আমিই তাই না? যতটা কেড়ে নিবো তার থেকে অনেক গুন ফেরত দিবো। ভরসা করতে পারিস।
এমন কথা ঈশার হৃদয় ছুয়ে গেলো। পলকহীন চোখে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন। ইভান ঈশাকে একটু লজ্জায় ফেলতেই মৃদু হেসে বলল
–রাস্তার মেয়েরা আমাকে কেন হা করে দেখে সেটার কারণটা নাহয় বুঝলাম। অনেকদিন পর দেখে তাই মন ভরে দেখে নেয়। কিন্তু তুই তো নিয়ম করে আমাকে দুই বেলা দেখিস। তবুও জখন দেখিস মনে হয় প্রথমবার দেখছিস।
লজ্জার চেয়ে রাগটাই বেশী প্রাধান্য পেলো। মুখে রক্তিম আভা নিয়ে অভিমানি কন্যা নাক ফুলিয়ে বসে থাকলো। এখন সে কিছুতেই খাবে না আর। সবার সামনে এভাবে বলার কোন মানেই হয়না। বারবার এই একটা বিষয়ে লজ্জায় ফেলতে সব সময় প্রস্তুত থাকে ইভান। ঈশাও কেমন নির্লজ্জ। এভাবে তাকানোর কোন প্রয়োজন আছে কি? ঠিকই তো বলেছে নিয়ম করে তাদের প্রায় দুইবেলা দেখা হয়। আবার বাসায় যখন ছোট খাট আড্ডা হয় তখন তো কথাই নাই। ঈশার ভাবনার মাঝেই ইভান আবার তার মুখের সামনে আইসক্রিমটা ধরল। ঈশা মুখ ফিরিয়ে নিতেই ইভান বলল
–আদর করে দিচ্ছি। নিবিনা আদর?
ঈশা আবারো অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। কি ভেবে মুখে নিয়ে নিলো। বুঝতে পারছে ইভান তাকিয়ে আছে। তারও একবার ইচ্ছা করছে ইভানের দিকে তাকাতে। কিন্তু আবার যদি সেরকম কিছু বলে সেটা ভেবেই আর তাকাল না। চোখ ফিরিয়ে একবার ফোনটা হাতে নিয়ে আবার সেটা রেখে দুই হাতে নিজের চুল ঠিক করতে করতে সামনে তাকাল ইভান। সায়ানের দৃষ্টি ভঙ্গি দেখে আটকে গেলো। সায়ান ঠোঁটে বাকা হাসি নিয়ে ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইভান তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকাতেই ভ্রু নাচিয়ে ইশারা করলো। ইভান প্রথমে একটু বিরক্ত হলেও পরে বুঝল এতক্ষন সবাই নিজের মতো ব্যস্ত থাকলেও সায়ান তাদের নিয়ে ব্যস্ত ছিল। ইভান চোখ নামিয়ে হালকা হাসল। সায়ান নিজের হাসিটা প্রশস্ত করে নিয়ে খাবারের দিকে মন দিলো। ইভানের মৃদু হাসি যেন তার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়েছে।
—————-
গোধূলি বেলার আকাশটা নানান রঙ্গে ছেয়ে গেছে। মাথার উপরে কোথাও সাদা কোথাও নীল। আবার সেই দূর দিগন্তে লালচে আভা। সাথে লাল সূর্যটা হেলে পড়েছে দিগন্তের শেষ প্রান্তে ছোট ছোট গাছের পিছনে নিজেকে বিলিন করার উদ্দেশ্যে। রিকশা থামতেই ঈশা হকচকিয়ে নেমে গেলো। মনটা খারাপ হয়ে গেলো তার। সুন্দর মুহূর্ত গুলো এতো তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায় কেন? মন যে সৌন্দর্যের কাঙ্গাল! সবাই রিকশা থেকে নেমে এক জায়গায় দাড়িয়ে গেলো। পরপর চার ভাইয়ের চারটা বাড়ি দাড়িয়ে আছে। সবগুলো একই ডিজাইনে বানানো। আগে সবাই একসাথে একই বাড়িতে থাকতো। কিন্তু পরিবার বড় হয়ে জাওয়ায় সেই বাড়ি ছোট হয়ে যায়। তাই আলাদা করে নিজেদের বাড়ি করে সবাই। প্রথম বাড়িটা ঈশাদের। তার বাবা মেজ। পরেরটা ইভানদের। তার বাবা সবার থেকে বড়। বাকি দুটো বাড়ি পর পর সেজ আর ছোটর। কিন্তু একসাথে থাকার ফলে একান্নবর্তী পরিবারের রেশটা তাদের মধ্যে থেকেই গেছে। আলাদা বাড়িতে থাকলেও সারাদিনে একবার হলেও একসাথে হয় তারা। বড়রা ছোটরা আড্ডা খুনসুটিতে মেতে উঠে নিজেদের মতো। মনেই হয়না যে তারা আলাদা পরিবার। সবাই বিদায় নিয়ে নিজেদের বাড়ির দিকে চলে গেলো। ইভান শুধু দাড়িয়ে থাকলো। সে ঈশাকে বাসায় দিয়ে তারপর যাবে। সিঁড়ি বেয়ে দুজন দোতলায় উঠলো। কলিং বেল চাপতেই ঈশার মা দরজা খুলে ইভান কে দেখে এক গাল হেসে বলল
–তোরা এসেছিস?
ইভান ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল
–এই নাও তোমার মেয়েকে দিয়ে গেলাম। আমার আর দায় ভার নাই।
ঈশার মা ভ্রু কুচকে বললেন
–দিয়ে গেলাম কি রে ভিতরে আয়।
–না মেজ মা। একটু কাজ আছে। বাসায় যাবো।
ঈশার মা আর কথা বললেন না। বলেও লাভ নাই। ইভান এখন কোনভাবেই শুনবে না। তাই তিনি ভিতরে চলে গেলেন। ইভান যাওয়ার উদ্দেশ্যে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াতেই ঈশা নিচু গলায় ডাকল
–ইভান ভাইয়া।
ইভান ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। ঈশা একটু হেসে বলল
–অনেক ধন্যবাদ!
বিষয়টাতে ইভান একটু আশ্চর্য হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে পুরোটা ঘুরে দাড়িয়ে শান্ত কণ্ঠে বলল
–বিশেষ কিছু উপহার পেলে ধন্যবাদ হিসেবেও বিশেষ কিছু জিনিস দিতে হয় যে।
–কি বিশেষ জিনিস?
কৌতূহলী কণ্ঠে ঈশা প্রশ্ন করতেই ইভান হেসে ফেলল। ঠোঁটে হাসি রেখেই বলল
–আজ না! বিশেষ জিনিসটা বিশেষ কোন মুহূর্তের জন্য তোলা থাকলো। তখন বিশেষ মানুষটার কাছ থেকে বিশেষ ভাবে বিশেষ দিনে নিয়ে নিবো।
‘বিশেষ! বিশেষ! বিশেষ!’ এতো বিশেষের মাঝে ঈশার গোছানো চিন্তা ধারা এলোমেলো হয়ে গেলো। তার বোকা বোকা চাহুনির মানে বুঝতে পেরে ইভান শব্দ করে হেসে সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেলো। ঈশা দরজায় হেলানি দিয়ে দাড়িয়ে মুগ্ধ চোখে দেখছে। হঠাৎ সজাগ মস্তিষ্ক অচেতন মনকে প্রশ্ন করে বসলো ‘এই কি তাহলে জীবনের সেই বিশেষ মানুষ?’
চলবে……।