অবাধ্য_মন,পর্ব_৬

0
958

#অবাধ্য_মন,পর্ব_৬
#শোভা_আক্তার(লাভলী)

কিছুদিন পর…..
কল টনের শব্দে স্নিগ্ধ নড়েচড়ে উঠলো। রাত জেগে প্রাকটিকাল বানিয়েছে। এখন ঘুমে ডিসটার্ব হচ্ছে বলে ঘুমের ঘোরেই সে রাগে গজগজ করছে। একবার কল বেজে কেটে গেল। কিছুক্ষণ পর আবার কল আসলো। স্নিগ্ধ এবার দ্রুত উঠে বসলো। খুব রাগ হচ্ছে তার। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে অচেনা নাম্বার ভাসছে স্ক্রিনে। স্নিগ্ধ এক হাত দিয়ে চোখ ডলতে ডলতে রিসিভ করে কানে ধরলো-
“হ্যালো কে বলছেন?”
“নমস্কার মিস্টার স্নিগ্ধ রায়। আপনাকে আজকাল খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। কারণটা জানতে পারি?”
“কে বলছেন?”
“আর ইউ কিডিং উইথ মি স্নিগ্ধ? আমার কন্ঠ তুমি চিনতে পারছো না।”
“আমি সত্যি চিনতে পারছি না। কে আপনি?”
“বলবো না। চিনতে পারলে চিনে নাও।”
স্নিগ্ধ চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে থেকে কন্ঠটা কার হতে পারে ভাবতে লাগলো। তার খুব চেনা মনে হচ্ছে কন্ঠটা। কিন্তু মনে করতে পারছে না। স্নিগ্ধ হার মেনে বলল-
“মাফ করবেন আমি সত্যি চিনতে পারছি না।”
“উফফো স্নিগ্ধ, আমি অর্পিতা বলছি।”
“ওহ শিট আমি কিভাবে ভুললাম তোমার ভয়ংকর কন্ঠ?”
“স্নিগ্ধ, আমি তোমাকে কাছে পেলে কাঁচা গিলে খাব বলে দিলাম।”
স্নিগ্ধ শব্দ করে হেসে বলল-
“কেমন আছো?”
“অনেক ভালো, তুমি কেমন আছো? আর আংকেল আন্টি কেমন আছে?”
“আমরা সবাই ভালো আছি। হঠাৎ এতদিন পর আমার কথা কিভাবে মনে করলে?”
“গুড নিউজ, আগামীকাল মাসে আমার বিয়ে।”
“ও মাই গড, সত্যি বলছো?”
“একদম, আমি তোমার নামের কার্ড পাঠিয়ে দিয়েছি। তোমাকে আসতেই হবে বলে দিলাম।”
“তোমার বিয়ে আমি না এসে পারবো? আমি ১ সপ্তাহ আগে থেকে আসবো।”
“আমি ধন্য হলাম আপনার কথা শুনে। অপেক্ষায় থাকবো। রাখছি এখন।”
“ওকে ভালো থেকো বাই।”
“বাই”
অর্পিতা কল কেটে দিলো। স্নিগ্ধ কান থেকে মোবাইল সরিয়ে লম্বা নিশ্বাস ফেলল। ঘুমিয়ে থাকলে তার ভালো লাগে। চোখ দুটো খুলে প্রকৃতি দেখতেই চোখে যেন বিষ ছেয়ে যায়। তখন কিছু ভালো লাগে না।

অন্যদিকে…..
জানভি বই খাতা গুছাচ্ছে। রাত জেগে সেও প্রাকটিকাল করেছিল। এখন ঘুমে চোখে ভালো মতো দেখছে না। এক বই এর বদলে আর এক বই রাখছে ব্যাগে। আবার ভালো মতো দেখে বিরক্ত হয়ে খাটে বসলো। ইদানীং বেশ মনভুলা-ও হয়ে যাচ্ছে সে। কোনো কিছু ঠিক মতো মনে রাখতে পারছে না। রোগটা ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে। আজকাল সে মিনিটে মিনিটে জিনিসপত্র কোথায় রাখে ভুলে যায়। ব্যাগ গুছিয়ে জানভি আয়নার সামনে দাঁড়াল। উঁচু করে জুটি বেঁধে মাথায় কাপড় টেনে নিলো। ব্যাগ নেয়ায় জন্য ফিরে আসতেই মোবাইল বেজে উঠলো। মোবাইলের স্ক্রিনে অচেনা নাম্বার ভাসছে। খাটের এক কিনারায় বসে রিসিভ করে কানে ধরলো।
“হ্যালো কে বলছেন?”
“আমার কথা ছাড়ুন আমি কি দেবজানির সাথে কথা বলছি?”
“জি, আপনি কে?”
“সবার কি হলোহ্যাঁ? মাত্র ২ বছর হবে শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরেছি সবাই আমাকে ভুলে গিয়েছে।”
“অর্পিতা?”
“ফাইনালি, কেও তো আমাকে মনে রেখেছে।”
“কিভাবে ভুলি তোমাকে? এক সময় আমরা বেস্টফ্রেন্ড ছিলাম।”
“আজও আছি, শুধু আমরা ব্যস্ত হয়ে গিয়েছে।”
“ঠিক বললে, কেমন আছো তুমি?”
“ভালো, তুমি কেমন আছো?”
“আমিও ভালো”
“আচ্ছা শুনো তোমার বাসায় কার্ড পাঠিয়েছি। না আসলে খবর আছে বলে দিলাম।”
“কিসের কার্ড?”
“ভেবে দেখো”
“তোমার বিয়ের কার্ড নয় তো?”
অর্পিতা শব্দ করে আসলো জানভির কথা শুনে। জানভি বেশ খুশী হলে অর্পিতার বিয়ের খবর জেনে। দুজন কিছুক্ষণ গল্প করলো। জানভি কল কেটে ঘড়িতে দেখে তার ভার্সিটির ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। সে দ্রুত বাসা থেকে বের হলো।

স্নিগ্ধ ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে তাকিয়ে আছে। যখন জানভিকে প্রপোজ করেছিল এই ব্ল্যাকবোর্ডে বড়ো করে আই লাভ ইউ লিখেছিল। তখন সব কিছু নাটক ছিলো। যেটা জানভি বিশ্বাস করেছিল। কিন্তু আজ সত্যি স্নিগ্ধ জানভিকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু জানভি তাকে অবিশ্বাস করছে। হঠাৎ স্নিগ্ধর বন্ধু পেছন থেকে বলল-
“তারা দুজন আসছে”
“তুই প্রতিদিন আমাকে এসে এই খবর দিস কেন বল তো?”
“তোকে সতর্ক করি। যাতে তারা আসার আগে তুই নিজেকে সামলিয়ে নিতে পারিস।”
স্নিগ্ধ তালিচ্ছ্যের হাসি দিয়ে বলল-
“আমি নিজেকে অনেক আগেই সামলিয়ে নিয়েছিল।”
তখনই জানভি আর রঞ্জন ক্লাসে আসলো। স্নিগ্ধ টের পেয়ে ঘুরে নিজের বেঞ্চের দিকে গেল। জানভি স্নিগ্ধকে এক নজর দেখে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। কিছুক্ষণ পর স্যার আসলেন ক্লাসে। রঞ্জন জানভিকে বলল স্যারকে বলে ছুটি নিয়ে নিতে। সেদিকে স্নিগ্ধও ভাবছে স্যারকে আজই বলে ছুটি নিয়ে নিক। অর্পিতার বাড়ি গ্রামে। বিয়ের কিছুদিন আগে গিয়ে ঘুরে আসছে। এতে মন ভালো হবে তার। স্নিগ্ধ জানভি দুজনই একসাথে দাঁড়াল। পুরো ক্লাস তাদের দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। জানভি স্নিগ্ধ একে অপরকে দেখে ভ্রু কুঁচকালো। স্যার তাদের দুজনকে দেখে বললেন-
“কি সমস্যা তোমাদের? কিছু বলবে?”
জানভি বলল-
“জি স্যার আমার কিছু বলার আছে।”
“আর স্নিগ্ধ তুমি?”
স্নিগ্ধ স্যারের প্রশ্ন শুনে বলল-
“স্যার আমারো কিছু বলার আছে।”
“বলো তোমরা”
“আগে ও বলে নিক।”
জানভি ভ্রু কুঁচকে বলল-
“না, আগে ওকে বলতে বলুন।”
“আমি এখন বলবো না আগে ও বলুক।”
স্যার টেবিলে দুবার বারি দিয়ে বললেন-
“স্টপ, জানভি তুমি আগে বলো।”
জানভি স্নিগ্ধর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবার স্যারের দিকে তাকিয়ে বলল-
“স্যার, আমার বেস্টফ্রেন্ডের বিয়ে আগামী মাসে৷ আমি ১ তারিখ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত ছুটি চাই।”
“বেস্টফ্রেন্ডের বিয়ে কিন্তু এতদিন ছুটি করবে কেন? জানো না মাত্র ২ মাস বাকি ফাইনাল এক্সামের।”
“জি স্যার, আসলে ফ্রেন্ড তো গ্রামে থাকে। আসা যাওয়া যাবে না। সেখানে থেকেই বিয়ে এটেন্ড করতে হবে।”
“ঠিক আছে, আগামীকাল অফিস রুমে একটা দরখাস্ত জমা দিয়ে দিও।”
জানভি মাথা নাড়িয়ে বসে পরলো। স্নিগ্ধ পাথরের মতো জমে আছে। সেও তো ফ্রেন্ডের বিয়ের কারণে ছুটি নিতে। সেও যদি এই কথা বলে সবাই মিথ্যে ভাববে। স্যার স্নিগ্ধকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন-
“এখন কি তুমি দাঁড়িয়ে থাকবে না-কি বলবে?”
“স্যার আসলে, আসলে আমারো ছুটি লাগবে।”
“তোমারো কোনো ফ্রেন্ডের বিয়ে?”
“হ্যাঁ, না স্যার না।”
“তো?”
“আসলে…”
স্নিগ্ধ কনফিউজ হয়ে গিয়েছে কি বলবে। সে আড়চোখে জানভির দিকে তাকাল। জানভি মিটিমিটি হাসছে। স্নিগ্ধ রেগে গেল জানভিকে দেখে। স্যারের দিকে তাকিয়ে বলল-
“স্যার আমি থাকবো না।”
“মানে?”
পুরো ক্লাস হেসে উঠলো স্নিগ্ধর কথা শুনে। স্নিগ্ধ পুরো ক্লাসে চোখ বুলিয়ে বলল-
“ঘুষি দিয়ে সব দাঁত ফেলে দিব যদি হাসির শব্দ বন্ধ না হয়।”
সবাই চুপ হয়ে গেল। স্যার বিরক্ত হয়ে বললেন-
“হয়েছে থ্রেড দেয়া? এখন বলো কোথায় চলে যাবে?”
“কলকাতা, ফিরে এসে একেবারে এক্সাম দিব।”
“কি কারণে যাবে?”
“সেটা বাবা মা জানে৷ আপনি বললে আমি বাবাকে বলবো নি আপনাকে কল দিয়ে বলতে।”
“আমাকে না হেডমাস্টারকে বললেই হবে। কিন্তগ স্নিগ্ধ, এক্সাম সামনে ভালো মতো পড়াশোনা করতে ভুলো না।”
স্নিগ্ধ মুচকি হেসে মাথা নাড়াল।

ছুটির পর সবাই ক্লাস থেকে বের হলো। জানভি একা বসে আছে। রঞ্জন তারাতাড়ি বাসায় চলে গিয়েছে কিছু কাজ আছে বলে৷ স্নিগ্ধ কেন যাচ্ছে জানভি বুঝতে পারছে না। যদি সারাজীবনের জন্য চলে যায়? জানভি তার সম্পর্কে ভাবতে চায় না। কিন্তু ভাবতে সে বাধ্য। তার অবাধ্য মন মানতে চায় না। ধীরে ধীরে বই খাতা সব ব্যাগে রেখে উঠে দাঁড়াল। ভীষণ খারাপ লাগছে তার। ক্লাস থেকে বের হতেই জানভি স্নিগ্ধর চিৎকারের শব্দ শুনলো। দ্রুত রেলিং এর সামনে গিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে স্নিগ্ধ তার বন্ধুদের মারার জন্য তাদের পেছনে দৌড়াচ্ছে। জানভি হাসলো, ছেলেটা কথায় কথায় কেন রেগে যায় সে বুঝতে পারে না। জানভি দ্রুত হেটে নিচে আসলো৷ স্নিগ্ধ তার বন্ধুর কলার ধরে রেখেছে৷ কি বলছে দূর থেকে জানভি শুনতে পেলো না। তার বন্ধু নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড়ে এসে জানভির পেছনে লুকালো। জানভি থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। স্নিগ্ধ এসে রাগে কটমট করতে করতে বলল-
“সাহস থাকলে সামনে আয়।”
“আসবো না, বৌদি বাঁচাও আমাকে।”
জানভি বলল-
“আমি বাঁচাবো কিভাবে? আমি কি এখন তোমার বন্ধুর সাথে মারামারি করবো।”
“না, তুমি বললে সে আমাকে মাফ করে দিবে।”
স্নিগ্ধ উঁচু স্বরে বলল-
“কখনো না, তোকে আজ কেও বাঁচাতে পারবে না আমার কাছ থেকে।”
জানভি বিরক্ত হয়ে বলল-
“কি করেছে ও? তুমি ওকে মারতে চাচ্ছো কেন?”
“তোমাকে বলা যাবে না। সরো সামনে থেকে।”
জানভি ঘাড় ঘুরিয়ে স্নিগ্ধর বন্ধুর দিকে তাকিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে। সে মাথা নিচু করে বলল-
“তোমাকে বলা যাবে না।”
জানভি তার সামনে থেকে সরে হাঁটতে হাঁটতে বলল-
“স্নিগ্ধ ওকে মেরে ধুলোর সাথে মিশিয়ে দাও আমি যাচ্ছি।”
“বৌদি এটা ঠিক…”
সে পুরো কথা শেষ করার আগেই স্নিগ্ধ গিয়ে তার মুখ চেপে ধরে বলল-
“চুপ, মারবো না তোকে। আর কখনো যদি বলিস জানভিকে ভুলে যাওয়ার কথা সত্যি মারতো মারতে মেরে ফেলবো।”
“আমাদের ফ্রেন্ডশিপ ছোটোবেলার। একটা মেয়ের জন্য তুই..”
“চুপ অনেক হলো। এখন আমি বাসায় যাই জামা কাপড় গুছাতে হবে।”
“কালই চলে যাবি?”
“না, পরশুদিন। কিন্তু আগামীকালও আসবো না ভার্সিটি।”
“ভালো থাকিস”
স্নিগ্ধ মুচকি হেসে তার বন্ধুকে জড়িয়ে ধরলো। জানভি দূর থেকে তাদের দেখে মুচকি হেসে ঘুরে আবার হাঁটা ধরলো।

পরেরদিন…..
আজ স্নিগ্ধ আসে নি। সে না আসলে জানভির মন বসে না পড়ায়। তার দৃষ্টি বার বার স্নিগ্ধর বেঞ্চের দিকে যাচ্ছে৷ বেঞ্চটা খালি থাকলে তার হৃদয়ও খালি খালি মনে হয়। রঞ্জন জানভির ভাবসাব দেখে বলল-
“এক্সামের পর আমাদের বিয়ে। আর তোমার দৃষ্টি বার বার তাকে খুঁজে।”
জানভি রঞ্জনের দিকে তাকাল। রঞ্জনের কথার উত্তরে সে কী বলবে বুঝতে পারছে না। মাথা নিচু করে ফেলল তারাতাড়ি। রঞ্জন জানভির হাত ধরে বলল-
“তোমার বাবাকে রাজি করাতে পারব? উনি রাজি হলে তোমার আর স্নিগ্ধর বিয়ে কেও থামাতে পারবে না।”
“রঞ্জন, বার বার এসব কথা আমাকে বলবে না।”
“তো তুমি ওর কথা ভাবা কবে থামাবে?”
জানভি রঞ্জনের দিকে তাকিয়ে বলল-
“হয় তো কোনোদিন।”
“ঠিক আছে, আমি দেখবো সেদিন কবে আসবে।”

পরেরদিন…..
ভোর ৭ টায় স্নিগ্ধ উঠে গেল। আজই সে অর্পিতাদের গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবে। কিন্তু স্নিগ্ধর মন বলছে জানভিও সেখানেই যাবে। কারণ জানভি তো অর্পিতারই বেস্টফ্রেন্ড। স্নিগ্ধর সাথে তার পরিচয় পরে হয়েছিল। স্নিগ্ধ আর একবার ব্যাগ চেক করে নিলো সব ঠিক আছে কিনা। সবকিছু চেক করে স্নিগ্ধ ঘর থেকে বের হলো। ছেলে যাবে বলে মা ভোর বেলা উঠে স্নিগ্ধর জন্য রান্না করে টিফিনবক্সে ভরে দিয়েছে। স্নিগ্ধর পৌঁছাতে সন্ধ্যা হবে। এর মাঝে বাহিরের খাবার খেলে সে অসুস্থ হয়ে পরবে। ছেলের সুস্থতা নিয়ে বেশ চিন্তিত মা। স্নিগ্ধ গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলো। মায়ের মন খারাপ হচ্ছে ভীষণ।
“নিজের খেয়াল রাখবে তো?”
“রাখবো, অনেক খেয়াল রাখবো অনেক। তুমিও আমাকে প্রমিজ করো আমি যাওয়ার পর বেশী চিন্তা করবে না। আমি প্রতি ঘন্টায় তোমাকে কল দিবো।”
“ভুলবে না তো?”
“একদম না।”
মা স্নিগ্ধর মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু দিলো। স্নিগ্ধ মায়ের গালে চুমু দিয়ে বলল-
“এখন যাই”
“যাই না বাবা, বল আসি।”
“ওকে মা আসি। বাবার সাথে তো দেখা হলো না।”
তখনই বাবার কন্ঠ ভেসে আসলো-
“কে বলল? ছেলে কিছুদিনের জন্য চলে যাচ্ছে বাবা দেখা না করে ঘুমাবে?”
স্নিগ্ধ বাবাকে দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। এখন তার মনে হচ্ছে আজকের সকাল খুব সুন্দর। বাবা স্নিগ্ধর গাল ধরে টেনে বলল-
“খুব এনজয় করবি বুঝলি?”
“ওকে ড্যাডি, এনিথিং এল্স?”
“খাবার ঠিক মতো খেতে হবে।”
“ওকে, আর?”
“আর আমাদের কাছে দ্রুত ফিরে আসতে হবে।”
“ঠিক আছে ঠিক আছে, এখন আমি যাই? মানে আমি আসি?”
বাবা হেসে মাথা নাড়াল। বাবা মা থেকে বিদায় নিয়ে স্নিগ্ধ বাসা থেকে বের হলো। বাবা বলেছিল গাড়ি নিয়ে যেতে কিন্তু স্নিগ্ধর ইচ্ছে সে বাস দিয়ে যাবে প্রকৃতি অনুভব করতে করতে। বাসা থেকে বের হয়ে স্নিগ্ধ বাসস্ট্যান্ডের রিকশা নিলো।

অন্যদিকে…..
জানভি বাসের টিকিট হাতে নিয়ে চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে। একা কখনো এতদূর যায় নি। ভয় করছে তার। সুস্থ সবল অর্পিতার বাসায় পৌঁছাতে পারলে সে শান্তি হবে। বাসে উঠে সিট খুঁজে বসে পরলো। চারপাশে অচেনা মানুষের ভীর। জানভি বাসের জানালার সাথে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। কিছুক্ষণ পর তার মনে হলো কেও তার পাশে বসেছে। চোখ খুলে দেখে একজন মাঝবয়েসী লোক বসেছে। জানভি বর একটু নড়েচড়ে বসলো। লোকটা তাকে দেখে হেসে আবার সামনের দিকে তাকাল। জানভির বিরক্ত লাগছে। কিছুক্ষণের মধ্যে বাস ছেড়ে দিলো। ধীরে ধীরে বাস এগিয়ে যাচ্ছে৷ লোকটা বার বার জানভির দিকে তাকাচ্ছে। জানভির মোটেও বিষয়টা পছন্দ হলো না। কিন্তু এখন পাবলিক প্লেসে সিন ক্রিয়েট করে লাভ নেই। যদি বেয়াদবি করে তাহলে সবাইকে বলবে। জানভি জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাল। বাস চলছে নিজের মতো। হঠাৎ তার মনে হলো কেও বাসের পেছনে দৌড়াচ্ছে। জানভি বাস থেকে উঁকি দিয়ে পেছনে তাকাল। স্নিগ্ধ দৌড়াচ্ছে। জানভির চোখ বেরিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। স্নিগ্ধ জানভিকে দেখে উঁচু স্বরে বলল-
“জানু ড্রাইভারকে বলো গাড়ি থামাতে।”
“কিন্তু তুমি এখানে কি করছো?”
“আব্বে থামাতে বল আগে আর দৌড়াতে পারবো না।”
জানভি রেগে গেল। কিন্তু স্নিগ্ধ ক্লান্ত হয়ে পরবে। ওর কষ্ট জানভি সহ্য করতে পারবে না। জানভি দাঁড়িয়ে সে লোকটাকে সাইড হতে বলে বের হলো। ড্রাইভারকে রিকুয়েস্ট করে বাস থামালো। স্নিগ্ধ দৌড়াতে দৌড়াতে এসে বাসে উঠলো। বাসের সিঁড়িতেই বসে সে জিহ্বা বের করে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে। ড্রাইভার বলল-
“ভাই রে ভাই এত দেরি করেন ক্যান আপনেরা?”
স্নিগ্ধ ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে বলল-
“চুপচাপ বাস চালা নাহলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো এমনিতেই ক্লান্ত লাগছে।”
জানভি ধমকের স্বরে বলল-
“স্নিগ্ধ, ব্যবহার ঠিক করো।”
স্নিগ্ধ মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। কিছুক্ষণ বসে থেকে বিশ্রাম করে উঠে দাঁড়াল। জানভির সামনে এসে বলল-
“অর্পিতার বিয়েতে যাচ্ছো?”
“হ্যাঁ, কিন্তু তুমি এখানে কেন? আজ তো তোমার কলকাতা যাওয়ার কথা।”
বাসচালক বলল-
“আপনেরা সিটে গিয়া বহেন। রাস্তা উঁচা নিচা পইরা যাইবেন।”
স্নিগ্ধ আর জানভি তার কথা শুনে এগিয়ে গেল। জানভির এখন ভয় করছে না৷ স্নিগ্ধ চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলল-
“জায়গা নেই, আমি পেছনের সিটে গিয়ে বসি৷ তুমি তোমার জায়গা গিয়ে বসো।”
বলেই স্নিগ্ধ গিয়ে পেছনের সিটে বসে পরলো। জানভি কি করবে এখন ভেবে পাচ্ছে না। তার সিটের লোকটার দিকে তাকাল। লোকটা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। জানভির রাগ হচ্ছে ভীষণ। সে এগিয়ে গিয়ে লোকটার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল-
“সাইড হোন।”
লোকটা দাঁত বের করে হেসে সরে বসলো। জানভি তার ব্যাগ নিয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে বলল-
“এখন আরাম করে বসুন।”
বলেই এগিয়ে গেল স্নিগ্ধর দিকে। স্নিগ্ধ জানভিকে দেখে ভ্রু কুঁচকালো। জানভি মাথা নিচু করে বলল-
“সেই লোকটা বাজে দৃষ্টিতে তাকায়৷ আমার ভয় করছে।”
“আমি তোমার দিকে ভালো দৃষ্টিতে তাকাই এটার গ্যারান্টি কি? ঘৃণা করো আমাকে তো আমার উপর ভরসা কেন করছো?”
স্নিগ্ধ তার উপর ভীষণ রেগে আছে জানভি বুঝতে পারলো। জানভি মায়াবী চেহারার সামনে স্নিগ্ধ শক্ত থাকতে পারে না। সে কিছুটা সরে বলল-
“বসো”
জানভির মুখে হাসি ফুটে উঠলো। স্নিগ্ধর পাশে বসে সে স্নিগ্ধর দিকে তাকাতেই স্নিগ্ধ বলল-
“মুখ বন্ধ রাখো লাগবে না তোমার ধন্যবাদ।”
জানভির মন খারাপ হয়ে গেল। ছেলেটার ভালোবাসা যতটা সুন্দর ঘৃণা তার থেকেও বেশী ভয়ংকর।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here