কালো মেঘ,পার্ট:1

0
1702

কালো মেঘ,পার্ট:1
লেখক:আঃরব

খুব সকাল সকাল আম্মু ডেকে ডেকে তুললো।
আমি ঘুম ঘুম চোখে আম্মুকে বললাম,”কি হলো এতো সকাল সকাল ডাকছো কেন?কি হয়েছে?
আম্মু:সোহান আত্মহত্যা করেছে।

কথাটা শুনে আমার চোখ থেকে সব ঘুম উড়ে গেল।
আমি কম্বলটা গায়ে থেকে দূরে ছুড়ে ফেলে দিলাম।বিছানায় থেকে উঠে বসলাম।

আমি:এটা তুমি কি বলছো আম্মু?তুমি ঠিক জানতো?
আম্মু:আমি সঠিকটাই জানি।তোর সেলিনা আন্টি (সোহানের আম্মু)আমাকে ফোন করে বলেছে।ওনি খুব কান্নাকাটি করছে।

আমি তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে গিয়ে কোন রকম মুখে পানি দিয়ে সোহানের বাড়ির দিকে দৌঁড় দিলাম।

সোহান হলো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।সেই ছোট থেকে ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব। কিন্তু ও সুধু সুধু আত্মহত্যার মতো এতো বড় জঘন্য কাজ কেন করলো?
ও অবস্য একবার একটা মেয়ের কথা বলেছিল।মেয়েটাকে নাকি ও খুব ভালোবাসে।মেয়েটাও ওকে খুব ভালোবাসতো।কিন্তু এখন কোন কারণে মেয়েটা ওর সাথে কোন সম্পর্ক রাখতে চাচ্ছে না।
তাহলে সোহান কি ওই মেয়েটার জন্যেই আত্মহত্যা করেছে?

আমি সোহানের বাড়িতে পৌঁছালাম।ওখানে অনেক গুলো পুলিশ দেখতে পেলাম
।আমি ভিতরে ঢুকতে গেলাম।তখন একটা পুলিশ আমাকে আটকিয়ে বললো,”কে তুমি? আর ভিতরে ঢুকছো কেন?
আমি:স্যার আমি সোহানের বন্ধু।

তখন আন্টি(সোহানের আম্মু)কান্না করতে করতে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
আন্টি কান্না জড়িত কন্ঠে বললো,”সোহান এমন কেন করলো?আমি এখন কি করে বাচবো?আমাদের এখন কে দেখবে?সোহান এই কাজ করার আগে একবারের জন্যেও ভাবলো না এখন ওর এর অভাগি মা আর ছোট ভাইটা কার কাছে থাকবে?কি করে বাচবে?গত মাসে তোমার আংকেলও চলে গেল।এখন আমি কি করবো?

গত মাসে একটা রোড এক্সিডেন্টে সোহানের আব্বু মারা যায়।সেই শোক এখনো সোহানের পরিবার কাটিয়ে উঠতে পারেনি।আর এর ভিতরে সোহানও এমন একটা কাজ করলো!সোহানরা ২ভাই।ওর ভাইটা ছোট।৭-৮বছরের মতো হবে বয়স।

আমি:আন্টি আপনি একটু শান্ত হন প্লিজ।আন্টি সোহানের বডি কোথায় আছে?
আন্টি:সোহানের বডি ওরা নিয়ে গিয়েছে।পোষ্ট মডেম করতে।
আমি:আপনি সাথে যাননি?
আন্টি:কাউকে সাথে যেতে নিষেধ করেছে।
আমি:আন্টি সোহান যেখানে আত্মহত্যা করেছিল ওখানে নিয়ে চলেন আমাকে।
আন্টি:এসো আমার সাথে।

আমি আন্টির পিছু পিছু যেতে লাগলাম।আন্টি আমাকে সোহানের রুমে নিয়ে গেল।
আন্টি:সোহান ওর নিজের রুমেই আত্মহত্যা করেছিল।
আমি:আন্টি ও কোন জিনিসের সাথে দড়ি লাগায়ছিল?
আন্টি:ফ্যানের সাথে।
আমি:আচ্ছা আন্টি। আমি তাহলে এখানে বসছি।আপনি বাইরে গিয়ে বাকি আত্নীয় -স্বজনদের দেখেন।

আন্টি কান্না করতে করতে রুম থেকে বের হয়ে গেল।

আমি পুরো রুমটা খুব ভালো করে দেখতে লাগলাম।খাটের নিচে একটা জুসের বতল দেখতে পেলাম।বতলের অর্ধেক খালি।মানে সোহান হয়তো অর্ধেক জুস খেয়েছে।
কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে,কেউ আত্নহত্যা করতে যাবে,তখন সে কেন ফলের জুস খেতে যাবে?আর সেটাও নাহয় খেল।কিন্তু পুরোটা না খেয়ে অর্ধেকটা কেন রেখে দিল?

আমি আরো ভালো করে রুমটা দেখতে লাগলাম।পুরো রুমটা খুব ভালো করে সাজানো।কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো সোহান তার রুম কখনো এমনভাবে গোছায় না।ওর রুম সব সময় অগোছালো থাকে।আমি কোনদিনও সোহানের রুম এমন পরিপাটি দেখিনি।

তখন ই আমার আসল কথাটা মনে পড়লো।
আমি তাড়াতাড়ি আন্টির রুম থেকে একটা ফিতা নিয়ে এসে নিচ থেকে ফ্যানের দূরত্ব মাফতে লাগলাম।নিচ থেকে ফ্যানের দূরত্ব ৭ফুট ৮ইঞ্চি।কিন্তু সোহান হলো ৫ফুট ৪ইঞ্চি।পাশে একটা চেয়ার রাখা আছে।চেয়ারটাও মেপে দেখলাম,ওটা হলো ২ফুট।

মানে সব মিলিয়ে ৭ফুট ৪ইঞ্চি।তাহলে বাকি ৪ইঞ্চি সোহান কি করে উঠলো?
না হিসাব মিলছে না। ধরে নিলাম সোহান কোন ভাবে পা উঁচু করে ২ইঞ্চি উপরে উঠলো।কিন্তু বাকি ২ইঞ্চি?

এর ভিতরে বাইরে এম্বুলেন্সের শব্দ শুনতে পেলাম।হয়তো সোহানের বডি নিয়ে এসেছে।

আমি তাড়াতাড়ি করে বাইরে আসলাম।
সোহানের বডিটা ওরা নামাচ্ছে।পুলিশগুলো ডাক্তারের সাথে কথা বলে চলে গেল।
সোহানের বডি দিয়ে এম্বুলেন্সও চলে গেল।

সোহানের তেমন আত্নীয় -স্বজনদের দেখছি না।সব মিলিলে ৩০-৪০জন লোক হবে।
সোহানের মুখ থেকে কাপরটা সরালাম।

নিজের অজান্তেই চোখের কোণ দিয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো।

লোকজন বললো,”লাশকে এখনিই কবর দিয়ে দেওয়ার জন্য।এমন লাশ বেশিক্ষণ না রাখার ঠিক।

তাই লাশকে গোসল করার ব্যবস্থা করা হলো।আমি সহ আরো ৩জন সোহানের গোসল দিতে লাগলাম।
তখন ই একটা দূর্ঘটনা ঘটলো।সোহানের মাথার সেলায়টা খুলে গেল।
সোহানের মাথার ঘিলু দেখা যেতে লাগলো।এটা দেখে ২জন লোক বমি করতে করতে ওখান থেকে চলে গেল।আমি আর ওই লোকটা কোন রকম গোসল শেষ করিয়ে কাপন দিয়ে জড়িয়ে লাশটা বাইরে বের করলাম।

তারপরে জানাজার করার জন্য একটা খোলা মাঠে নিয়ে গেলাম।কিন্তু মসজিদের ইমাম সাহেব আসেনি।কারন ওনি বলে দিয়েছেন আত্মহত্যা করা ব্যক্তির জানাজার তিনি পড়াবেন না।
কি আর করা যাবে।বাধ্য হয়ে আমিই জানাজা পড়াতে লাগলাম।
জানাজা নামাজের ভিতরেই আকাশে কালো মেঘ জমে বৃষ্টি হতে শুরু করলো।বেশ কিছু লোক জানাজা নামাজ ছেড়ে ছাউনির নিচে আশ্চয় নিল।

আমি জানাজা নামাজ শেষ করে দেখলাম।পিছনে ৭-৮ জন লোক দাঁড়িয়ে আছে।
সবাই ভিজে গিয়েছে।সোহানের বডিটাও ভিজে গিয়েছে।

আমরা সোহানের লাশটা নিয়ে একটা ছাউনির নিচে গিয়ে দাঁড়ালাম।কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি থেমে গেল।
সোহানের লাশ নিয়ে আমরা কবরস্থানে গেলাম। বৃষ্টি হওয়ার কারনে সব পিছল হয়ে আছে।সোহানের লাশটা আমরা কবরে রাখলাম।মাটি দিতে যাব ঠিক তখন ই একটা দূ্র্ঘটনা ঘটেগেল।কাঁদাতে পিছলিয়ে একটা মুরুব্বিলোক পাশের একটা কবরে পড়ে গেল।পাশের কবরটার লাশটা পচে গিয়েছে।মুরুব্বি লোকটা পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়েছে।কিন্তু ওই কবর থেকে প্রচন্ড দুর্গন্ধ আসতে লাগলো।ওখানে থাকা লোক গুলো প্রায় সবাই ই বমি করতে করতে পালিয়ে গেল।আমি আর আর ২জন মিলে সোহানের কবরে মাটি দিলাম।এখন মুরুব্বি লোকটাকে ওই কবর থেকে তুলতে হবে।কিন্তু কি করে তুলবো?আমিও গন্ধের কারণে এখানে দাঁড়াতে পারছি না।বার বার বমি আসছে।মুখে একটা গামছা বেধে ওই কবরে নামলাম।মুরুব্বি লোকটাকে অনেক কষ্টে উপরে তুললাম।বাকি ২জন উপর থেকে আমাকে সাহায্য করলো।

আমি তাড়াতাড়ি করে ওই কবর থেকে উঠে আসলাম।তারপর আমরা ৩জন মিলে ওই কবরে কোন রকম মাটি দিলাম।

আমি আর থাকতে পারলাম না।কয়েকবার ওক ওক করে বমি করে দিলাম।

তারপর কোন রকম ওই মুরুব্বি লোকটাকে নিয়ে এসে একটা ভ্যানে তুলে দিলাম।ভ্যানওলাকে বললাম ওনার বাড়িতে পৌঁছিয়ে দেওয়ার জন্য।ভ্যানওলা বললো,”ভাই ওনার শরীর থেকে প্রচন্ড গন্ধ করছে। আমি ওনাকে নিয়ে যেতে পারবো না।

আমি পকেট থেকে মানি ব্যাগ বের করে ভ্যানওলার হাতে ১০০০ টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিলাম। ভ্যানওলা চলে গেল।আমিও বাড়ীর দিকে দৌঁড় দিলাম।

কারন,আমার অবস্থাও খুব খারাপ।আমার গায়েও প্রচন্ড গন্ধ করছে।আমার বার বার বমিও হচ্ছে।

নিজের রুমে ঢুকলাম গামছা নেওয়ার জন্য।তখন দেকলাম বালিশের উপরে ফোনটায় আলো জলছে।আমি ফোনটা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম আন্টি(সোহানের আম্মু)৪০বার ফোন দিয়েছে।

আমি আন্টির কাছে ফোন ব্যাক করলাম।
আন্টি ফোন রিসিপ করে কান্না জড়িত কন্ঠে যেই কথাটা বললো সেটা শুনে আমার হাত থেকে ফোন পড়ে গেল।

ফোনটা নিচে পড়েগেল।কলটা এখনো কাটেনি।ফোনের ওপাশ থেকে আন্টির কন্ঠ ভেসে আসছে!

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here