কালো মেঘ,পার্ট: 2

0
1219

#কালো মেঘ,পার্ট: 2
#লেখক:আঃরব।

আমি আন্টির কাছে ফোন ব্যাক করলাম।
আন্টি ফোন রিসিপ করে কান্না জড়িত কন্ঠে যেই কথাটা বললো সেটা শুনে আমার হাত থেকে ফোন পড়ে গেল।

ফোনটা নিচে পড়েগেল।কলটা এখনো কাটেনি।ফোনের ওপাশ থেকে আন্টির কন্ঠ ভেসে আসছে!

আমি ফোনটা নিচ থেকে তুলে আন্টি কে বললাম,”আমি যাচ্ছি।

তারপর আমি ওয়াশরুমে গিয়ে গোসল করতে লাগলাম।

মাথার উপর ঝরনার পানি পড়ছে।আর মনে অনেক কালো মেঘ জমা হয়েছে।অনেক প্রশ্ন আছসে।যেগুলোর উত্তর আমার জানা নেই।

সৌরভ আবার কোথায় গেল?তাহলে ওকে কি কেউ কিডনাপ করলো নাকি?কিন্তু ওত টুকু বাচ্চা ছেলে কে কেউ কিডনাপ করবেই বা কেন?আর এমনি তেও সোহানরা ওতো বড়লোকও তো নয়।

নাহ!এগুলো কি হচ্ছে সোহানের পরিবারের সাথে?সোহান কি সত্যিই আত্মহত্যা করেছে? নাকি যেটা আমরা সবাই দেখছি সেটা ভুল।আর যেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি না সেটাই হয়তো সঠিক।হতে পারে সোহান কে কেউ খুন করেছে।তারপর ওই ফ্যানে ঝুলিয়ে দিয়েছে।কিন্তু সোহান কে কেউ কেন খুন করতে যাবে?আমার জানা মতে সোহানের সাথে কারো কোন শত্রুতাছিল না।আর না ওর ফ্যামেলির সাথে কারো শত্রুতা ছিল।তাহলে সোহান কে কেউ কেন খুন করতে যাবে?

আর আংকেল?আংকেলের একসিড্রেনটা কি সত্যিই একটা দূর্ঘটনা ছিল।নাকি আংকেল কে কেউ প্লান করে খুন করেছে?কিন্তু আংকেলের সাথেতো কারো শত্রুতাছিল না।ওনি খুবই ভালো মানুষ ছিলেন।কারো সাথে ঝগড়া করাতো দূরে থাক, কাউকে কখনো উঁচু গলায় কথাও বলতেন না।সব সময় নরম নরম কথা বলতেন।সবার সাথে হাসি খুশি ব্যবহার করতেন।কিন্তু ওনার এরকম মৃত্যু।এটা খুব ই রহস্য জনক।

আর এখন সব থেকে বড় কথা হলো সৌরভ কথায় গেল?ওতো খুব ছোট।ওর সাথেতো কারো শত্রুতা হতেই পারে না।তাহলে ওকে কেউ কেন কিডনাপ করবে?

না!মনে হচ্ছে এই সব সমস্যার সমাধান গুলো কালো মেঘের আড়ালে লুকিয়ে আছে।আমাকে এই কালো মেঘের অন্ধকার সরিয়ে আলো নিয়ে আসতেই হবে।

আমাকে আসল সত্যিটা বের করতেই হবে।

আপনারা সৌরভ কে এখনো চিনতে পারেননি তাই না?
চলুন তাহলে সৌরভের পরিচয়টা জেনে নিই।

সৌরভ হলো সোহানের ছোট ভাই।
একটু আগে আন্টি আমাকে ফোন করে বলেছিল যে,সৌরভ কে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।আন্টি নাকি সব জায়গার ই খোজ করেছে।কিন্তু সৌরভ কে কোথাও খুজে পাইনি।

এমনি তেই আন্টির উপর দিয়ে যেসব যাচ্ছে সে গুলো সয্য করার মতো না।তারপর আবার সৌরভ কেউ কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।আন্টি খুব ই ভেঙে পড়েছে।

আমি খুব ভালো করে গোসল করছি।বার বার সাবান মাখছি।প্রায় ৩০ মিনিট পর গোসল খানায় থেকে বের হলাম।তারপরও গা থেকে কেমন যেন পচা পচা গন্ধ করছে।২বতল ফগ মাকলাম গায়ে।আবার অনেক করে আতরও মেখে নিলাম।এখন গন্ধটা ভালো বুঝা যাচ্ছে না।আমি বাইক নিয়ে সোহানদের বাসায় গেলাম।

আমি আন্টিদের বাসার দরজায় ধাক্কা দিতেই দরজাটা খুলে গেল।

ভিতরটা প্রচন্ড অন্ধকার।রুমের ভিতর থেকে কান্নার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে।আমি আস্তে আস্তে ভিতরে যেতে লাগলাম,কান্নার আওয়াজও ততই বাড়তে লাগলো।।একটু সামনে যাওয়ার পর আমি আন্টি বলে ডাক দিলাম।
সাথে সাথে একটা মোমবাতি জ্বলে উঠলো। আমি অনেকটা চমকিয়ে উঠলাম!

আমাকে দেখে আন্টি কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠলো,”আঃরব তুমি এসেছো।দেখ উপরওলা আমার সব কেড়ে নিয়েও শান্ত হয়নি।এখন আমার ৭বছরের ছোট বাচ্চাটাকেও কেড়ে নিল
আমি:আন্টি একটু শান্ত হন আপনি।আপনি ভালো করে খুজে দেখেছেন তো সৌরভ কে?হতে পারে কোন বন্ধুর বাড়ি আছে সৌরভ।আপনাকে হয়তো বলে যায়নি।
আন্টি:আমি ওর সব বন্ধুর বাসায় দেখেছি।ও কোথায় নেই।তুমি কিছু একটা করো প্লিজ বাবা।
আমি:আন্টি আপনি একটু শান্ত হন।আমি সৌরভ কে খুজে বের করবো।

তখন ই মনে হলো রুমে কোন পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে।

আন্টি:রুমে কি লাইট নেই?
আন্টি:কারেন্ট নেই বাবা।

আমি আন্টির হাত থেকে মোমবাতিটা নিয়ে পাখিটাকে খোজা শুরু করলাম।সোহানের রুমের দরজা খুলতেই ওর খাটের উপর একটা সাদা কবুতর(পাইরা)দেখতে পেলাম কবুতরের গায়ের অর্ধেকটা রক্তের জন্য লাল হয়ে গিয়েছে।কবুতরটা আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন একটা ইশারা করলো।তারপর খাটের উপর একটা কাগজ ফেলে উড়ে চলে গেল।আমি খাটের কাছে গিয়ে কাগজটা তুললাম।

কাগজে লিখাছিল,
সোহান কে কালো মেঘের মায়া বনে(জঙ্গলে)কালি মিয়ার বাড়িতে পাবে তুমি।

আমি আন্টির কাছ থেকে এই বিষয়টা লুকাইলাম।
আমি আন্টি কে বললাম,”আমি সৌরভ কে খোঁজার জন্য এখন যাচ্ছি।

এটা বলে আমি চলে আসলাম।তারপর বাইকে গিয়ে বসলাম।ফোনের নেট চালু করলাম।গুগল ম্যাপে ওই জায়গাটার নাম লিখে সার্চ দিলাম।কিন্তু এমন কোন জায়গা নেই।

আমি হতাশ হয়ে বাইকটা স্টাট করে আন্টিদের বাসায় থেকে বের হলাম।একটু দূর আসার পর ই আমার বাইকের সামনে একটা বুড়ো লোক দাঁড়ালো।আমি খুব কষ্টে বাইককে ব্রেক কষে কোন রকম বাইকটা কন্ট্রোল করলাম।

বুড়ো লোকটা আমার কাছে এসে বললো,”বাবা একটু কষ্ট করে আমাকে বাড়ি পৌঁছিয়ে দেবে?
আমি:আপনার বাড়ি কতদূরে দাদু?
বুড়োলোক:এইতো একটু সামনে।
আমি:আচ্ছা ঠিক আছে বাইকে উঠেন।

বুড়োলোকটা আমার বাইকে উঠলো।আমি বাইক স্টাট করে চলতে শুরু করলারম ওনার দেখানো রাস্তায়।

প্রায় ১৫-২০মিনিট যাওয়ার পর একটা জঙ্গলের মতো জায়গায় ওনি আমাকে নিয়ে এসে থামালো।
আমি:দাদু আপনি একানে কোথায় থাকেন?এটাতো কোন জঙ্গল বলে মনে হচ্ছে।
বুড়ো লোক বাইক থেকে নামতে নামতে বললো,”আমি কোথায় থাকি এটা বড় বিষয় নয়।বড় বিষয় হলো তোমার সৌরভ কে খুজে বের করা।এটাই হলো সেই কালো মেঘের মায়া জঙ্গল।আর এই জঙ্গলের ভিতরেই আছে কালি মিয়ার বাড়ি।

আমি বুড়ো লোকটা কে কিছু জিগ্গাসা করতে যাবো,তার আগেই বুড়ো লোকটা একটা ছন্দ বলে কোথায় যেন হারিয়ে গেল।

ছন্দটা ছিল,
নেমেছে আমাবস্যার অন্ধকার,
চাঁদ নেই আকাকে
বন্ধ কর সবার দুয়ার!
ফিরে এসেছে আবার কালি মিয়া,
সবার প্রাণ নিয়ে যাবে আকাশে উড়াল দিয়া।
কালি মিয়া,কালি মিয়া,কালি মিয়া।

আমি এই ছন্দের কোন মানেই বুঝতে পারলাম না।আর এমনিতেও এইসব ফালতু ছন্দের বিষয়ে আমার কোন আগ্রর নেই।কিন্তু বুড়ো লোকটা কোথায় হারিয়ে গেল?
থাক না,যেখানে হারানোর হারাক। একন আমার সব কিছু ভুলে সৌরভ কে খোঁজাটাই হলো বুদ্ধিমানের কাজ।

আমি বাইক থেকে নেমে জঙ্গলের ভিতরে প্রবেশ করলাম।

কিন্তু জঙ্গলে পা দেওয়ার সাথে সাথেই আমার মাথায় সজোরে কেউ আঘাত করলো।আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম,এবং জ্ঞান হারালাম।

ফোনের রিং টোন শুনে আমার চোখ খুললো।
কিন্তু এটা কি!আমি আমার রুমে খাটের উপর সুয়ে আছি কি করে?!আমিতো ওই কালো মেঘের মায়া জঙ্গলে জ্ঞান হারায় ছিলাম।তাহলে ওখান থেকে আমি এখানে আসলাম কি করে?
আর আমার মাথায় তো কোন কাটা বা ফাটা দেখতে পাচ্ছি না।এতো জোরে কেউ আঘাত করলেতো মাথা ফেটে যাওয়ার কথা।কিন্তু আমারতো কিছুই হয়নি।

ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম আন্টি ফোন দিচ্ছে।
আমি ফোনটা রিসিপ করলাম।
আন্টি:আঃরব বাবা সোহান বেচে আছে।ওকে তুমি বাচাও।
আমি আন্টির এমন কথা শুনে বেশ অবাক হলাম!
আন্টি এগুলো কি বলছে?
সোহান কে তো আমি নিজে হাতে মাটি দিয়েছি।তাহলে সোহান কি করে বেচে থাকবে?

আর আন্টি কি করে জানতে পারলো যে,সোহান বেচে আছে?

আমি:আন্টি আপনি এটা কি বলছেন?সোহানতো মারা গিয়েছে।আর ওকে আমি নজের হাতেই মাটি দিয়েছে।তাহলে ও বেচে থাকবে কি করে?
আন্টি:তুমি খুব বড় ভুল করেছো ওকে মাটি দিয়ে।ও মরেনি।ওর খুব কষ্ট হচ্ছে।ওই মাটির কবরে ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে।বাবা আমি তোমার কাছে হাত জোড় করে বলছি সোহানকে তুমি বাচাও।

টু টু টু। ফোনটা কেটে গেল।

আমি আন্টির ফোনে কয়েকবার ফোন দিলাম কিন্তু ফোন বন্ধ বলছে।ফোনের ঘড়িতে দেখলাম রাত২টা বাজে।

আমি সাত পাঁচ না ভেবে,বাইক নিয়ে সোজা আন্টিদের বাসায় চলে আসলাম।কিন্তু আন্টিদের বাসার দরজার তালা মারা।কিন্তু এটা কি করে?কিছুইতো বুঝতে পারছি না।আন্টি আবার কোথায় গেল?আন্টি আবার সোহানের কবরের ওখানে যায়নি তো?

আমি একটা কোদাল আর বালচা দিয়ে সোহানের কবরের কাছে পৌঁছালাম।চার দিকে ঘন অন্ধকার।তার সাথে আবার কুকুরের ডাক শোনা যাচ্ছে।পরিবেশটা খুব ভয়ংকর হয়ে উঠেছে।

আমি ফোনের ফ্যালাশ লাইটটা জ্বালালাম।তারপর হাতো কোদাল নিয়ে সোহানের কবরে একটা কোপ মারতেই কবরের ভিতর থেকে সোহানের কন্ঠের শব্দ শুনতে পেলাম।

আমাকে বাঁচাও! বাঁচাও আমাকে!আমাকে এই অন্ধকার ঘরে কে বন্দি করে রাখছো?!

আমি সোহানের কন্ঠ শুনে প্রথমে খুব ভয় পেলেও,পরে আন্টির কথা মনে পড়লো।আন্টি বলেছিল সোহান বেচে আছে।
তার মানে আন্টি সত্যিই বলেছিল।

আমি তাড়াতাড়ি করে কবরের সব মাটি তুলে ফেললাম।তারপর বাস গুলো সরিয়ে ফেললাম।

সোহানের মুখটা দেখতে পেলাম।সারা গায়ে কাফন জড়ানো আর মুখটা খোলা।কিন্তু সোহানকে দেখেতো মনে হচ্ছে না সোহান বেচে আছে।তাহলে একটু আগে আমি কার আওয়াজ শুনলাম?

আমি ভালো করে পরীক্ষা করার জন্য সোহানের নাকের কাছে হাত দিলাম।কিন্তু সোহানেরও নিশ্বাস পড়ছে না।তারমানে একটু আগে আমি যেই আওয়াজটা শোনলাম ওটা হয়তো আমার মনের ভুল ছিল।

আমি যখন ই কবর থেকে উঠতে যাব ঠিক তখন ই আমার হাতটা কেউ চেপে ধরলো।আমি ভয়ে ভয়ে সোহানের দিকে তাকাতেই দেখলাম।সোহান বড় বড় চোখ বের করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।ওর চোখ দুটো লাল হয়ে আছে।আর ও-ই আমার হাত ধরে আছে!

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here