কালো মেঘ,পার্ট:4

0
965

#কালো মেঘ,পার্ট:4
#লেখক:আঃরব।

চোখ খোলার পর যেটা আমি দেখলাম,সেটার জন্য একদম প্রস্তুত ছিলাম না।

আমার গায়ের পশম গুলো দাঁড়িয়ে গিয়েছে!চোখ জুড়া স্থির হয়ে গিয়েছে!বুকের ভিতর টা ধুক বুক করছে!মনে হচ্ছে জানটা এবার বের হয়ে যাবে!কলিজা শুকিয়ে কাট হয়ে গেল!বুকের ছাতি ফেটে যাচ্ছে পানি পিপাসার কারণে!

কারন,যেটা আমি দেখলাম.
আমি একটা কঙ্কালের হতের উপর সুয়ে আছি।
আর কাল রাতে যেটা হসপিটাল ছিল,সেটা এখন একটা পুড়ো বাড়ি হয়ে গিয়েছে দেখছি!মাথার উপর টিনের চাল বা ছাদ কিছুই নেই।সূর্যের আলোটা সরাসরি আমার চোখে এসে পড়ছে।

কিন্তু গত রাতে এটাতো একটা হসপিটাল ছিল।আর আমি সোহান কে এখানে ভর্তি করেছিলাম।
তাহলে আজ সেই হসপিটালটা কোথায় গেল?আর সোহান ই বা কোথায় গেল?

না!এগুলো কি হচ্ছে আমার সাথে?মনে হচ্ছে এবার পাগল হয়ে যাব!এ কেমন ঘটনা ঘটছে আমার সাথে?আর কেনই বা এসব হচ্ছে?

আমি পুড়ো বাড়িটার বাইরে বের হয়ে আসলাম।গতকাল রাতে আমি হসপিটালের বাইরে যে ভ্যানটি রেখে ছিলাম সেটাও তো দেখছি না।

ভ্যানটার জন্য আমার চিন্তা হতে লাগলো।ভ্যানটা আবার কোথায় গেল?চাচাকে এখন আমি কি বলবো?এমনিতেই চাচা গরিব মানুষ। ভ্যান চালিয়ে কোন রকম দিন কাটে।এখন আমি ওনাকো কি জবাব দিব?

না!এগুলো হচ্ছেটা কি?আমিতো পাগল হয়ে যাব মনে হচ্ছে।

আগে চাচাদের বাসায় যেতে হবে।চাচাকে সব সত্যি কথা গুলো বোলতে হবে।জানিনা ভ্যান হারিয়ে যাওয়ার কথা শুনলে চাচার অবস্থা কি হবে?

আমি হতাশ হয়ে চাচার বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম।
বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর চাচার বাড়িতে পৌঁছালাম।

তারপর চাচাকে ডাক দিলাম।চাচা ঘরের ভিতর থেকে বের হয়ে আসলো।

চাচা:কি হলো বাবা এতো সকাল সকাল ডাকাডাকি করছো কেন?
আমি:আসলে চাচা!না মানে বিষয় টা হলো,,,,
চাচা:কি হলো বাবা কিছু বলবে নাকি?
আমি:হুম চাচা।
চাচা:বলো কি বলতে চাও?
আমি:চাচা আসলে আপনার ভ্যানটা,,,,,,,
চাচা:আমার ভ্যানের আবার কি হয়েছে?
আমি:আসলে চাচা আপনার ভ্যানটা হারিয়ে গিয়েছে।
চাচা:কি!আমার ভ্যান হারিয়ে গিয়েছে মানে?
আমি:আসলে চাচা কাল রাতে আপনার ভ্যানটা যে নিয়ে গিয়েছিলাম।তারপর ওটা হারিয়ে যায়।
চাচা:কি বলছো এসব?তুমি আবার আমার ভ্যান কখন নিয়ে গিয়েছিলে?
আমি:চাচা গত কাল রাতে যে আপনাকে বলে নিয়ে গেলাম।
চাচা:দেখ এই সকাল সকাল আমার সাথে মশকারি করো না তো।
আমি:চাচা আমি মশকারি করছি না।আমি সত্যিই বলছি।
চাচা:ওহ,তুমি সত্যি বলছো।তাহলে আমার সাথে এসো।

আমি চাচার পিছনে পিছনে গেলাম।চাচা বাইরের একটা ঘরের দরজা খুললো।

ওমা এটা কি!!

ভ্যানটা তো দেখছি এখানে আছে!

চাচা:আমার ভ্যান যদি হারিয়েই গিয়ে থাকে তাহলে এটা কি হুম?
আমি:চাচা কিন্তু,,
চাচা:কোন কিন্তু নয়।আমি এখন ভাড়া মারতে যাব।আমার মনে হয় তুমি কোন খারাপ স্বপ্ন দেখেছো।এখন বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম নাও।

আমি আর কিছু না বলেই চলে আসলাম।কিন্তু এগুলো কি হলো?আমিতো কাল রাতে চাচাকে বলেই ভ্যান নিয়ে গেলাম।তাহলে চাচার কিছু মনে নেই কেন?

আচ্ছা আমি কি সত্যিই কোন স্বপ্ন দেখছি।নাকি আমার সাথে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটছে।

আমি চিন্তার সাগরে হাবুডুবু খেতে খেতে বাসায় পৌঁছালাম।
বাসায় পৌঁছিয়ে একটু ফ্রেশ হলাম।খুব ক্ষিধাও লেগেছে।

খাবারের টেবিলে বসে পড়লাম।
আম্মু খাবার দিল।
আম্মু:কি রে তোকে খুব চিন্তিত বলে মনে হচ্ছে?
আমি:না আম্মু তেমন কিছুই নয়।
আম্মু:তুই হয়তো সোহানের কথা ভাবছিস?আমার খুব খারাপ লাগছে।ছেলেটা এমন একটা কাজ করলো কেন কে জানে।আল্লাহ ও-কে ক্ষমা করুক।
নে বাবা এখন একটু খেয়েনে ।

আম্মু চলে গেল।আমি রুটি খাচ্ছি। কয়েকবার রুটির টুকরো মুখে দিতেই আমার একটা কথা মনে পড়লো।

আমি হাত ধুয়ে বাইক নিয়ে বের হয়ে পড়লাম।

গোরস্থানের সামনে এসে বাইকটা দাঁড় করালাম। হাঁটতে হাঁটতে সোহানের কবরের কাছে পৌঁছালাম।
কিন্তু এটা কি!সোহানের কবরতো খোঁড়া! আর এখানে সোহানের বডিও নেই।তাহলে কাল রাতে আমি কোন স্বপ্ন দেখিনি।ওটা সত্যিই ছিল।

আচ্ছা ওটা যদি সত্যিই থাকে তাহলে ওই চাচা কেন কাল রাতের ঘটনা অস্বীকার করলো?

আচ্ছা একবার সোহানদের বাসায় গিয়ে দেখি।
আমি বাইক নিয়ে সোহানদের বাসায় চলে গেলাম।কিন্তু সোহানদের বাসায় তালা মারা।আমি আন্টিকে ফোন দিলাম।কিন্তু ফোন বন্ধ।

এই আন্টি আবার কোথায় গেল?আর ফোনটাই বা কেন বন্ধ করে রাখছে?

এখন কি করা যায়?
আচ্ছা আমি এখন সৌরভ কে খুঁজতে ওই জঙ্গলে গেলে কেমন হয়?

মনে হচ্ছে ওই জঙ্গলের ভিতরেই সব রসহ্যের সমাধান আছে।

আমি বাইক নিয়ে ওই কালো মেঘের মায়া জঙ্গলের দিকে রওনা দিলাম।কিছুক্ষণ পর সেখানে পৌঁছালাম।

জঙ্গলের ভিতরে পা রাখতেই কালো মেঘ এসে সূর্যটাকে গ্রাস করে নিল।রাতের মতো চার দিকে অন্ধকার ছেয়ে গেল।আমি পকেট থেকে ফোন বের করে ফোনের আলো জ্বালালাম।তারপর সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলাম।

একটা পুরানো বাড়ী দেখা যাচ্ছে।বাড়িটা দেখে মনে হচ্ছে হয়তো আগে কখনো আগুনে পুড়ে গিয়েছিল।বাড়ির গায়ে এখনো পোড়ার কালো কালো দাগ আছে।

আমি ওই বাড়িটার ভিতরে প্রবেশ করলাম।বাড়ির ভিতরটা কেমন যেন গা ছমছমে পরিবেশ।বুকের ভিতর প্রাণটা কাঁপা-কাঁপি করছে।আমি তবুও ভিতরে যাচ্ছি।

তখন ই বিদ্যুৎ চমকিয়ে একটা আলো ফুটে উঠলো!আর সেই আলোতে আমি দেখতে পেলাম সৌরভ বসে আছে।সৌরভের সারা গায়ে রক্ত,আর হাতে একটা মানুষের হাড়!চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে। মনে হচ্ছে ও আমাকে চোখ দিয়েই গিলে খাবে।

সৌরভ একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,”এসো ভাইয়া এসো।ও তোমার জন্যেই ওয়েট করছে।ও ফিরে এসেছে!

ঠিক তখন ই,,,

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here