এক_ফালি_চাঁদ #পর্ব_৯

0
1415

#এক_ফালি_চাঁদ
#পর্ব_৯
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
____________________
মাঝরাতে অনুর ঘুম ভাঙলে সে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করে। বিছানার পাশে মোবাইল হাতড়েও মোবাইল পেল না। উঠে দাঁড়াতেও অলসতা লাগছে। শরীরে মনে হচ্ছে শক্তি নেই। কিছু্ক্ষণ ঝিম মেরে বিছানাতেই বসে থাকে। খোলা চুলগুলো হাত খোঁপা করে বিছানা থেকে নামে। লাইট জ্বালিয়ে দেখে গলু ফ্লোরের এক কোণায় গুটিশুটি হয়ে শুয়ে রয়েছে। এই ঠান্ডার মধ্যে বেচারাকে কষ্ট দিচ্ছে ভেবে অনুর নিজেরই খারাপ লাগছে। গলুর জন্য ছোট্ট বাক্সে আলাদা বিছানা বানিয়েছিল অনু। ওকে তুলে নিয়ে সেই বাক্সের বিছানায় শুইয়ে দেয়। ওর জন্য বানানো ছোট্ট ল্যাপটা গায়ে জড়িয়ে দিল। গলু একবার চোখ মেলে তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে। অনু ওর মাথা চুলকে দেয় কিছু্ক্ষণ। বারান্দায় গিয়ে দেখে তিতুস খাঁচার মধ্যে ঝিমুচ্ছে। ওর খাবার প্রায় শেষ। ঘর থেকে খাবার আর পানি দিয়ে যায়। তখন দৃষ্টি চলে যায় অনলের ঘরের দিকে। এখনও ওর ঘরে আলো জ্বলছে। অনুর মনে পড়ে যায় ছাদের ঘটনাটির কথা। অনলের নিষ্ঠুরতার কথা ভাবতেই এক দলা ভারী মেঘ এসে জমা হয় চোখের কার্ণিশে। যার শেষ ফলাফল হিসেবে নেত্রপল্লব অশ্রুতে ভিজে ওঠে। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে অনু ঘরে ফিরে আসে। ওয়ারড্রব থেকে জামা-কাপড় বের করে শাড়িটা আগে খুলে ফেলে। তারপর ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।

সকালে অনুর ঘুম ভাঙে আমেনা বেগমের ডাকে। চোখ না মেলেই অনু বলে,’বলো।’
‘ইউসূফ এসেছে তোর সঙ্গে দেখা করতে।’
‘এত সকালে?’
‘এত সকাল কোথায় পেলি? এগারোটা বাজতে চলল।’
অনু নিশ্চুপ। আবার ঘুমিয়ে পড়েছে নির্ঘাৎ। তিনি কাঁধে ধাক্কিয়ে আবার ডাকেন,’উঠ রে অনু। ছেলেটা সেই কখন থেকে বসে আছে।’
‘উহ্! যাও। আসছি।’
‘তাড়াতাড়ি।’

আমেনা বেগম চলে যাওয়ার প্রায় পাঁচ মিনিট পরে অনু ওঠে। আরও পরে উঠত। যদি না তিনু এসে ডেকে যেত। অনু ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংরুমে আসে। ড্রয়িংরুমে কেউ নেই। রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে দেখে আমেনা বেগম রান্না করছেন। সম্ভবত দুপুরের রান্না করছেন। আয়োজন বেশ ভালোই।

‘উনি কোথায়?’ জিজ্ঞেস করে অনু।
আমেনা বেগম পেছনে ফিরে বলেন,’তোর আক্কেল জ্ঞান কবে হবে বলতে পারিস? কখন থেকে এসে অপেক্ষা করছে।’
‘কোথায় সে?’
‘ছাদে।’
‘আচ্ছা।’
অনু চলে যাওয়ার সময় আমেনা বেগম পিছু ডেকে দুই মগ কফি এগিয়ে দিয়ে বলেন,’খালি মুখে কথা বলবি নাকি? কফি নিয়ে যা।’
অনু কোনো প্রত্যুত্তর করল না। শুধু নিরব হয়ে কফির মগদুটো হাতে নিয়ে ছাদে চলে যায়।

ছাদের রেলিং ধরে ধীরপায়ে এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত হাঁটছে ইউসূফ। কুয়াশা থাকলেও মৃদু রোদও রয়েছে। পরিবেশটা ওর বেশ ভালোই লাগছে।
‘আপনার কফি।’
অনুর কণ্ঠ শুনে পেছনে তাকায় ইউসূফ। হাত বাড়িয়ে কফির মগ নিয়ে বলে,’থ্যাঙ্কিউ।’
‘ওয়েলকাম।’
‘হুট করে চলে আসায় বিরক্ত হওনি তো?’
‘বিরক্ত হলে কি চলে যাবেন?’

ইউসূফ অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। অনু মেকি মৃদু হেসে বলে,’জাস্ট কিডিং। ডোন্ট বি সিরিয়াস।’
অনুর হাসিতে তাল মেলালেও ইউসূফের কেন জানি খটকা লাগছে। ঘাপলা অন্যকিছু মনে হচ্ছে।
‘কফিটা কেমন হয়েছে?’ প্রশ্ন করে অনু।
‘অসাধারণ। তুমি বানিয়েছ?’
‘না। মা বানিয়েছি। আমি এত ভালো কফি বানাতে পারি না।’

দুজনই নিশ্চুপ। অনুর দৃষ্টি মাঠের দিকে। এলাকার বাচ্চাদের সঙ্গে ফুটবল খেলছে অনল। বাচ্চাদের মতোই হাসছে। কত খুশি ছেলেটা! অনুর ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যকর হাসি ফুঁটে ওঠে।
‘অনু।’
‘হু?’
‘তুমি এই বিয়েতে রাজি তো?’
অনু এবার শব্দ করেই হেসে ফেলে। হাসতে হাসতে বলে,’এই প্রশ্নটা কি আরও আগে আমাকে করা উচিত ছিল না?’
‘অনু তোমার সঙ্গে রিলেশন করার মতো কোনো ইন্টেনশন আমার ছিল না। আমার ইচ্ছে ছিল আমি তোমায় বিয়ে করে বউ করব। এজন্য বাবাকে দিয়ে ডিরেক্ট বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছি।’

‘সমস্যাটা এখানেই। আমার পরিবার আপনার পরিবারের মতো নয়। আপনার পরিবারে আপনার অনেক গুরুত্ব রয়েছে, ইচ্ছের দাম রয়েছে। যেটা আমার পরিবারে আমার নেই। এমনকি একটাবার আমায় জিজ্ঞেসও করা হয়নি আমি কী চাই? আমি বিয়েতে রাজি কী-না!’
‘তাহলে কি তুমি বিয়েতে রাজি নও?’
‘না হলেও বা আপত্তি কোথায়? বিয়ে তো হবেই। বাবা-মা’য়ের ইচ্ছে বলে কথা।’
‘বাবা-মা বললেই হবে নাকি? সংসার আমরা করব। আমাদের মতামত দরকার সবার আগে। তুমি আমায় ক্লিয়ার করে বলো তুমি এই বিয়েতে রাজি?’

অনু কিছু্ক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর চোখে চোখ রেখেই বলে,’না।’
ইউসূফ কী বলবে বুঝতে পারছে না। বাকশক্তি লোপ পাওয়ার জোগার। গোপনে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে,’তাহলে এই বিয়ে হবে না। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে করার মতো ছেলে আমি নই। আমি বাড়িতে গিয়ে বাবাকে বলব। যাচ্ছি এখন।’
‘দুপুরের খাবারটা খেয়ে যান। মা আপনার জন্য রান্না করছে।’
‘অন্য একদিন খাব অনু। আজ আসি।’

ইউসূফ সরাসরি নিজেদের বাড়ি চলে যায়। যাওয়ার আগে আমেনা বেগমের সঙ্গেও দেখা করে যায়নি। তাহলে এভাবে না খেয়ে কখনোই আসতে দিতেন না। অন্যদিকে অনুর এমন চটপটে স্বীকারোক্তি ওকে পীড়া দিচ্ছে। ভুলটা নিজেরই মনে হচ্ছে। সে যদি নিজেই একবার অনুকে জিজ্ঞেস করতো!

ইউসূফ চলে যাওয়ার পরও অনু কিছু্ক্ষণ ছাদে পায়চারি করে। লুকিয়ে লুকিয়ে অনলকেও দেখে। অনলের দৃষ্টি যে ছাদের দিকে নেই তা কিন্তু নয়! ও নিজেও খেলার ছলে একটু পরপর ছাদের দিকে তাকাচ্ছে। ইউসূফের সঙ্গে অনুকে দেখে কষ্ট হলেও সরে যেতে পারছিল না। অনু রাতে ঘুমিয়েছিল কী-না তার জানা নেই। কিন্তু তার চোখের পাতায় ঘুম সারারাতে একবারও আসেনি। অনু ইউসূফের বউ হবে এটা ভাবতেই যেন বুকটা মোচর দিয়ে ওঠে। অজানা, অদৃশ্য কষ্টরা জেঁকে ধরে। অনুও ভালোবাসাটা আগে ফিল করতে পারেনি। হয়তো অনলও নয়। তবে এখন যেই অনুভূতি হচ্ছে তার নাম কী? ভালোবাসা?

অনু ছাদ থেকে নেমে আসে। আজ ভার্সিটিতে তো যাওয়া হলো না। তবে একটু হেঁটে আসা যায়। সেও কাউকে কিছু না বলে একাই হাঁটতে বের হয়। মাঠের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অনল দৌঁড়ে আসে। হাঁপাচ্ছে সে। অনু কিছু বলছে না। চুপচাপ হেঁটে চলেছে শুধু।
‘কেমন আছিস অনু?’

অনু নিরুত্তর। অনল প্রশ্ন করে,’কথা বলবি না?’
এবারও অনু কোনো উত্তর দিল না। একটা রিকশা ডেকে চুপচাপ উঠে পড়ল। এমনকি একটাবার অনলের দিকে ফিরেও তাকায়নি। অনুর এহেন ব্যবহারে বুকের ভেতর কেমন যেন চিনচিন করে ওঠে অনলের। অসহায় লাগে। অনু তো এমন নয়!
______________
পুরো বাড়িতে পিনপতন নিরবতা চলছে। এমনকি ফ্যানের ভনভন করা শব্দটাকেও প্রকট মনে হচ্ছে এখন। অনুর সামনেই চোয়াল শক্ত করে ক্রুব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে খালেদ রহমান। হাঁটতে যাওয়ার সময় মাঝরাস্তাতেই খালেদ রহমানের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। তার অগ্নিবর্ণ দৃষ্টিই বলে দিচ্ছিল ঠিক কতটা রেগে আছেন তিনি। কিন্তু রাস্তায় কিছুই বলেননি। অনুকে সঙ্গে করে বাড়িতে নিয়ে এসেছেন। এতক্ষণ ক্ষুব্ধ হয়ে চুপচাপ থাকলেও এবার তিনি কষে থাপ্পড় বসান অনুর গালে। টাল সামলাতে না পেরে কয়েক কদম পিছিয়ে যায় অনু। সঙ্গে সঙ্গে মনে হয় গাল কয়েক ইঞ্চি ফুলে গেছে। এতটা ব্যথা হচ্ছে যে মনে হচ্ছে গাল ফেঁটে এখনই রক্ত বের হবে। গাল চেপে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে অনু। ঠোঁট কামড়ে ধরে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে।

খালেদ রহমান বাজখাঁই গলায় বলেন,’তোমায় এত সাহস কে দিয়েছে বিয়ে ভাঙার? কোনদিক থেকে ইউসূফকে তোমার অপছন্দ বলো?’
নিরবে চোখের অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে অনু। আমেনা বেগম কাছে আসার আগেই খালেদ রহমান চিৎকার করে বলেন,’খবরদার মাঝখানে আসবে না তুমি। এখানে আমি আর অনু কথা বলছি। আজ আমার সব প্রশ্নের উত্তর ওকে দিতে হবে।’

এবার তিনি অনুকে জিজ্ঞেস করলেন,’তুমি কেন বিয়ে ভেঙেছ? চুপ করে থাকবে না অনু। মাথায় রক্ত চেপে আছে এমনিতেই। ইউসূফকে তোমার কেন পছন্দ নয়?’
‘আমি এখনই বিয়ে করতে চাচ্ছি না আব্বু। সবাইকে ছেড়ে এতদূরে আমি থাকতেও পারব না।’ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলল অনু। অনলের কথা বলতে গিয়েও বলতে পারল না। যেখানে অনল অনুকে ভালোবাসে না সেখানে বাবার সামনে এ কথা বলার বৃথা মানে হয় না। রাগে গিজগিজ করছেন খালেদ রহমান। চোয়াল শক্ত করে বলেন,’বড়ো হয়ে সাহস বেড়ে গেছে। নিজের ভালো বুঝতে শিখেছ। করো নিজের ভালো। তোমার কোনো ব্যাপারে আমি আর নেই।’

কথা শেষ করে নিজের ঘরে গিয়ে ধিরিম করে দরজা বন্ধ করে দেয় খালেদ রহমান। অনু আর এক সেকেন্ডও দাঁড়িয়ে না থেকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। তিনু, আমেনা বেগম অনেকবার ডাকলেও পিছু ফিরে দাঁড়ায়নি।
.
.
‘অনিক আমি কেন জানি অনুর বিয়ে নিয়ে খুশি হতে পারছি না।’ বলল অনল। অনিক কম্পিউটারে গেমস খেলছিল। অনলের এ কথা শুনে সচকিত হয়ে তাকিয়ে বলে,’কেন?’
‘এই কেন’র উত্তরই তো আমার কাছে নেই।’
‘তুমি কি অনুকে ভালোবাসো?’
‘কাল রাতে অনু ছাদে এসেছিল।’
‘কেন?’
‘আমার কাছে।’
‘কী বলেছে?’
‘অনু আমায় ভালোবাসে। বিয়ে ভেঙে দিতে বলেছে। কান্নাকাটি করেছে অনেক। আমার মনে হয় আ…’

অনলের পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই অনিকের ফোন বেজে ওঠে। তিনু ফোন করেছে। ‘একটু ওয়েট ভাইয়া।’ বলে অনিক ফোন রিসিভ করে। ওপাশ থেকে তিনু প্রায় কেঁদেই ফেলবে সেভাবে বলে,’অনিক!’
‘কী হয়েছে তিনু? আর ইউ ওকে?’
‘অনিক, আপু বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে।’
‘মানে? কেন?’
‘ইউসূফ ভাইয়াকে আপু বিয়ে করবে না বলেছে। বিয়ে ভেঙে দিয়েছে বলে আব্বু খুব রেগে গেছে। আপুকে মেরেছে আর বকেছেও অনেক।’
‘কখন বের হয়েছে?’
‘এই এখনই। তুমি আর অনল ভাইয়া একটু খুঁজে দেখো না।’
‘আচ্ছা তুমি চিন্তা কোরো না। আন্টিকে চিন্তা করতে বারণ করো। আমি দেখছি।’

অনিকের সব কথাই অনল শুনেছে। চিন্তিত হয়ে বলে,’কী হয়েছে রে?’
‘ভাইয়া অনু বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে।’
‘মানে কী! কেন?’
‘বিয়ে ভেঙে দিয়েছে অনু। এজন্য আঙ্কেল মেরেছিল।’
অনল কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলে,’আমি গিয়ে অনুকে খুঁজছি। তুই মাকে নিয়ে ওদের বাসায় যা। ওদেরকে চিন্তা করতে বারণ কর।’
‘ঠিকাছে।’
অনল বাড়ি থেকে বের হওয়ার পথে জেসি আর শুভাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে ওদের বাড়িতে গেছে নাকি। যখন শুনল সেখানে যায়নি তখন ওদের বলল যেন বাকি বান্ধবীদের ফোন করে আপডেট নিয়ে একটু জানায়। ওরা বলল জানাবে। এবার অনল রাজীব এবং এনামুলকে কল করে কিছু এড্রেস দিয়ে সেখানে অনু আছে নাকি খুঁজতে বলল।

অনু যেসব জায়গায় যেতে পারে সেসব জায়গাতেই খুঁজছে। এবং ভাগ্য ভালো থাকায় ধারণা সত্যি হয়। কতগুলো বাচ্চাদের মাঝে অনু উদাস হয়ে বসে আছে। বাচ্চারা অনুর রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করছে। সবগুলো বাচ্চাকেই অনল চেনে। এরা এখানে ফুল, খাবার বিক্রি করে। অনেকবার অনুর সঙ্গেই এখানে আসা হয়েছিল। অবশেষে অনুকে পেয়ে যেন প্রাণ ফিরে পেল। ঠোঁটের কোণে শান্তির হাসি। অনলও ওদের দিকে এগিয়ে গিয়ে মাঝখানে জায়গা করে বসে। অনলকে দেখে অনু ভ্রু কু্ঁচকে ফেলে।

‘তোমাদের আপামনি এভাবে গাল ফুলিয়ে আছে কেন বাচ্চারা?’ জিজ্ঞেস করল অনল। ওরা সমস্বরে বলল,’জানি না।’
সত্যি বলতে অনলকে এখন অনুট বিরক্ত লাগছে। অসহ্য লাগছে। সে বাচ্চাদের থেকে বিদায়ও নিল না। বসা থেকে উঠে হনহন করে হাঁটা শুরু করে। পিছু পিছু অনলও আসে। পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বলে,’কী সমস্যা অনু? আমার সঙ্গে কথা কেন বলিস না?’
‘কথা বলতে ভালো লাগে না তাই বলি না।’
‘কেন ভালো লাগে?’
‘কোনো কারণ নেই।’
‘অবশ্যই কারণ আছে। সব কিছুর পেছনেই কোনো না কোনো কারণ থাকে।’

অনু থেমে যায়। দু’হাত জড়ো করে বলে,’দয়া করে আমায় একটু একা থাকতে দিন। আমি একা থাকতে চাই।’
‘তুই নাকি বিয়ে ভেঙে দিয়েছিস?’
‘এজন্য মনে হচ্ছে আপনার খুব অসুবিধা হয়ে গেল? ভয়ের কোনো কারণ নেই। আপনাকে ভালোবাসার কথা কাউকে বলব না। আর আপনাকেও বিরক্ত করব না। কাল রাতের জন্য সরি।’
অনু কথা শেষ করে হাঁটা শুরু করে। এর মাঝেই নির্জনতা ছেড়ে দুজনে লোকালয়ে চলে এসেছে। চারপাশে লোকজনের সমাগম। অনল পেছন থেকে বলে,

‘সরি বললেই তো এখন আর কিছু হবে না অনু। আমি তোকে একা-ও থাকতে দেবো না। কারণ আমি তোকে ভালোবাসি। আই লাভ ইউ!’
শেষের দুইটা লাইন কানে পৌঁছাতেই অনু থমকে দাঁড়ায়। চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে। ভালোবাসা পাওয়ার যেই আনন্দ, সেই আনন্দের রেখা ঠোঁটের কোণে। অনলের দিকে এবার ঘুরে দাঁড়ায় অনু।

পাশ থেকে তখন দৌঁড়ে আসে কিছু লোক।তখনই একটা মেয়ে ধাক্কা দিয়ে যায় অনুকে। সম্ভবত দৌঁড়াতে গিয়েই অনুর সঙ্গে ধাক্কাটা খায়। ধাক্কাটা এত জোড়েই লেগেছে যে টাল সামলাতে পারেনি। অনু ঘুরে পড়ে যাওয়ার মুহূর্তে তরল জাতীয় কিছু ওর মুখ বরাবর এক সাইডে এসে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে গগনবিদারী চিৎকার করে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে অনু। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে। গালের এক সাইড এবং গলার মাংস ঝলসে যেতে শুরু করে মুহূর্তেই। পুরো ঘটনাটা এত দ্রুত ঘটল যে অনল বুঝে উঠতেই পারল না ঠিক কী হলো! দু’হাতে মুখ ঢেকে রাস্তায় গড়িয়ে গড়িয়ে কাঁদছে অনু। ছটফট করছে। যখন বুঝে উঠতে পারে অনুর শরীরে এসিড পরেছে ততক্ষণে অনল উদভ্রান্তের মতো ছুটে আসে। কিছুদূর থেকে আরও একটা মেয়ের গগনবিদারী আর্তনাদ শোনা যায়। আশেপাশের লোকজন কয়েকটা ছেলেকে ধরে ফেলে। অনলের দম বন্ধ হয়ে আসছে!

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here